ইসলামী সিদ্ধান্তের সত্যতা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

08 November, 2022

ইসলামী সিদ্ধান্তের সত্যতা

ইসলামী সিদ্ধান্তের সত্যতা

শাস্ত্রার্থ বিষয় : ইসলামী সিদ্ধান্তের সত্যতা
দিনাঙ্ক : ২১ মার্চ সন ১৯১২ ই০ (অপরাহ্ন ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত)
স্থান : মাক্খনপুর, জেলা মৈনপুরী (উত্তর প্রদেশ)
আর্য সমাজের পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্তা :
🟠 শ্রী ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী আর্য
মুসলমানদের পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্তা :
🟢 শ্রী মৌলবী আবুলফরহ সাহেব, (পানীপতী)
সহায়ক : শ্রী মৌলানা আব্দুল মজীদ সাহেব
শাস্ত্রার্থ প্রধান : শ্রী বাবু রামস্বরূপ গুপ্তাজী
রিটার্ড - তহসিলদার ডাইরেক্টর - গ্লাস মেনুফেক্চারিং - ফ্যাক্টরী লিমিটেড, মাক্খনপুর (উত্তর প্রদেশ)
প্রস্তুতকরণে : আশীষ আর্য
•••শাস্ত্রার্থের পূর্বে •••
শাস্ত্রার্থটির আয়োজন একটি বড়ো খোলা স্থানের মধ্যে করা হয়। বাঁশের প্যান্ডেল দিয়ে ঢাকা ছিল, পনেরো - পনেরো পা দূরে দুই পক্ষ অর্থাৎ ইসলাম আর আর্য সমাজের প্ল্যাটফর্ম খুবই সুন্দর ভাবে তৈরি করা হয়েছিল। দুই প্ল্যাটফর্মের মাঝখানটাতে একদিকে বড়ো মেজ রাখা হয়, যার আগের চেয়ারগুলোতে শ্রীমান প্রধানজী তহসিলদার সাহেব, কোতওয়াল সাহেব, আদি বসে ছিলেন।
প্রত্যেক প্লাটফর্মে শাস্ত্রার্থকর্তার চেয়ারটি মাঝখানে রাখা হয় এবং তার দুই পাশে চার-চারটি, পাঁচ-পাঁচটি চেয়ার আরও রেখে দেওয়া হয়, সেখানে শাস্ত্রার্থকর্তা বাদে অন্য সম্মানিত ব্যক্তি ও অধিকারীগণ এবং অন্য উপদেশক বিরাজমান ছিলেন। আর্য সমাজের প্লাটফর্মে ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী ছাড়াও এক স্বামীজী ও অন্য উপদেশক তথা শ্রী পণ্ডিত শান্তিস্বরূপজীও উপস্থিত ছিলেন। আর ইসলামী প্লাটফর্মে মৌলানা মৌলবী আবুলফরহ সাহেব তথা আব্দুল হামীদ আফজল, মুনাজির (পানীপতী) ছাড়াও অজুমন হিদায়ত লমুসলমীন দেহলীর চার-পাঁচ আলিম ফাজিল মৌলবী সহেব উপস্থিত ছিলেন। শ্রোতার ভীড় চার-পাঁচ হাজারের কম হবে না। আর সম্পূর্ণ ময়দান লোকজনে পুরোপুরি ভরে গিয়েছিল। বাড়ির ছাদগুলোতে স্ত্রীদের দল জমে গিয়েছিল। প্রথমে প্রেসিডেন্ট সাহেব মঞ্চে দাঁড়া হয়ে গম্ভীর আওয়াজে শাস্ত্রার্থের নিয়ম শুনিয়ে দেন। আর কিছু প্রার্থনা করেন যে - শাস্ত্রার্থের নিয়মগুলো পালন করবেন। আর ডক্টর সাহেবকে যার প্রথমে আপত্তি করার ছিল তাকে লেকচার শুরু করতে অর্থাৎ শাস্ত্রার্থ আরম্ভ করার জন্য প্রার্থনা করেন। আর যথা স্থানে বসে যান। - সম্পাদক
••• শস্ত্রার্থ আরম্ভ •••
🟠 শ্রী ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী আর্য -
শ্রীমান প্রধানজী! এবং সম্মানিত অন্য অধিকারীগণ!! ও উপস্থিত সজ্জনগণ!!! আপনারা শাস্ত্রার্থের শর্ত শুনে এটা নোট করে থাকবেন যে কিভাবে আমার প্রিয় বন্ধু মৌলবী সাহেব এই সুযোগে কুরআনকে তর্কের মাঝখান থেকে কিনারা করেছে। আমি চেয়ে ছিলাম যে আজ এই শাস্ত্রার্থের ময়দানে ইসলামের মূল ভিত্তি ও কুরআন শরীফকে পরীক্ষাতে দাঁড় করানো হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে আমার প্রিয় বন্ধু আমার স্বভাব আর কুরআনের দুর্বলতাকে আগে থেকেই অনুভব করে নিয়েছে। এইজন্য কুরআনকে আমার আপত্তি থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি ভেবে চিন্তে আমার সামনে ইসলামের সেই পাঁচটি নিয়ম যার মধ্যে অনেকগুলো আপত্তি আছে তা পেশ করে দিলেন, যার নিস্বত্ মৌলবী সাহেব মনে করেছেন যে আমি হয়তো এর উপর আপত্তি করতে পারি। কিন্তু আমি আমার বন্ধুকে বলে দিতে চাই যে এটা বুঝতেও তিনি বড়ো ভুল করে ফেলেছেন। কারণ যে পাঁচটি নিয়ম আপনি ইসলামের শাস্ত্রার্থের শর্তে আপত্তির জন্য পেশ করেছেন, আমার তার উপরও এরকম প্রচণ্ড আপত্তি আছে যে সেগুলোর উত্তর দিতে আমার বন্ধুর খুবই মুশকিল হবে। আর আমি আমাদের শ্রোতাদের প্রথম বক্তব্যে বিশেষভাবে এটা নোট করিয়ে দিচ্ছি অথবা এটা বলতে পারেন যে আমি আগে আরম্ভ এটা থেকেই করছি, যেসব আপত্তি আমি আজ ইসলামের সেই নিয়মের উপরে করবো, আপনারা বিশ্বাস করুন মৌলবী সাহেব তার উত্তর প্রলয়কাল পর্যন্ত দিতে পারবে না। মন দিয়ে শুনুন - মৌলবী সাহেব সেই পাঁচটি নিয়মের মধ্যে সবার প্রথম নিয়ম "লাইলাহিইল্লিলাহ, মোহাম্মদরসূলল্লিলাহ" বলেছেন, যার অর্থ হল - আল্লাহকে ছাড়া কোনো খুদা নেই, আর মোহাম্মদ হল তাঁর রসূল, এটা হল ইসলামের প্রথম সিদ্ধান্ত। কিন্তু মজার কথা কি বলবো! যে ইসলামের এই সিদ্ধান্তটির উপর সবার আগে আমার আপত্তি আছে। সেটাকে এক মুসলমান শায়রই একটি শের এর ভিতরে কত সুন্দরভাবে প্রকট করেছে, দেখুন -
রসূলো কাসিদো পৈগামোন্ ব নামা হাজিতে নেস্ত।
কি দরম্যান মন বা তু হমীমন্ তু বস এম।।
🟢 শ্রী মৌলবী আবুলফরহ সাহেব -
ডক্টর সাহেবের কাছে অনুরোধ যে তিনি যে এই শেরটি আবার পড়েন।
🟠 শ্রী ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী আর্য -
বক্তব্যের মাঝে কথা বলা শাস্ত্রার্থের সভ্যতার বিরুদ্ধ, (শ্রোতাদের ইঙ্গিত করে) হ্যাঁ, আমি যা বলছিলাম আমার প্রথম আপত্তি এই শেরটির ভিতরেই লুকিয়ে আছে। এর মানে শায়র পরমেশ্বরকে সম্বোধন করে বলছে যে -"যেহেতু আমার আর তোমার মাঝে, তুমি আর আমি আছি, এইজন্য আমার কাছে খবর দেওয়ার জন্য তোমাকে কোনো রসূল (পয়গম্বর) কাসিদ (পত্রবাহক) পৈগাম (সন্দেশ) বা নামা (পত্র) পাঠিয়ে দেওয়ার দরকার নেই"। সোজা কথা হল এই প্রথম নিয়মের উপর আমার সবার আগে আপত্তি আছে আর সেটা হল এই কলমার শেষের অংশে যা বলা হয়েছে যে - "আর মোহাম্মদ হল তাঁর(আল্লার) রসূল বা পয়গম্বর", এটার উপর আমি বলবো যে এটা একদম ভুল। কারণ কোনো বিশেষ স্থান থেকে পত্র পাঠানো বা পাঠিয়ে দেওয়া হল স্থূল বস্তুর কাজ। যখন সেই পরমেশ্বর সবার হৃদয়ের ভিতরে ও বাইরে বিরাজমান আছে তাহলে তাঁকে মুজস্সিম (শরীরধারী) -কে দিয়ে পৈগাম পাঠাতে বা পয়গম্বরের আবশ্যকতা নেই। দ্বিতীয় আপত্তি হল আমার সেই কলমার উপর আছে যার মধ্যে কেবল মোহাম্মদ সাহেবকেই পয়গম্বর মানা হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করছি, যদি আল্লা তআলার কাজ বিনা পয়গম্বর ছাড়া চলেই না, তাহলে পৈগামের জন্য সে কি শুধু হজরত মোহাম্মদকেই পেয়েছে? তার মধ্যে এমন কি বিশেষত্ব ছিল যে কারণে খুদা কেবল মোহাম্মদ সাহেবকেই পয়গম্বর হিসেবে বেছে নিয়েছে? অথচ মোহাম্মদ সাহেব ছিলেন একদম উম্মী (অশিক্ষিত)। আর তাছাড়া সেই সময়ে বড়ো-বড়ো আলিম (বিদ্বান) উপস্থিত ছিল। তাহলে খুদা কেন কোনো বিদ্বানকে এই কাজের জন্য মুকর্রর (নিযুক্ত) করেনি? তৃতীয় আপত্তি হল - কলমাতে খুদার নামের সঙ্গে মোহম্মদ সাহেবের নামও যুক্ত করে দেওয়াটা হল "শির্ক" -এর শিক্ষা। চতুর্থ আপত্তি হল - আপনি একথার প্রমাণ দিন যে - "মোহাম্মদ সাহেব খুদার পক্ষ থেকেই পাঠানো হয়েছিল? পঞ্চম আপত্তি হল - যদি মোহম্মদ সাহেবকে প্রেরিত না করা ছাড়া সত্যিই খুদার কাজ চলতো না, অর্থাৎ বিশ্বকে মার্গ দর্শন করার জন্য খুদার কাজ হতো না, তাহলে খুদা কেন তাঁকে সৃষ্টির শুরুতেই উৎপন্ন করে নি? তাহলে পরে হজরত সাহেবের জন্মের পূর্বে যারা মরে গিয়েছিল, তাঁর ব্যক্তিত্ব থেকে লাভ নিতে পারতো। এর অতিরিক্ত আমার এই নিয়মের উপরে আরও অনেক আপত্তি আছে, কিন্তু আমার মনে হয় না যে মৌলানা সাহেব এই পাঁচটি প্রশ্নেরও উপযুক্ত উত্তর দিতে পারবেন।এইজন্য বাকি প্রশ্নগুলো আমি নিজের কাছেই সুরক্ষিত রাখছি।
🟢 শ্রী মৌলবী আবুলফরহ সাহেব -
সজ্জনগণ! ডক্টর সাহেব বলেছেন যে - কুরআনকে আমি এইজন্য তর্কে রাখি নি কারণ আমি ভয় পাই। বাঃ মশাই! এটা আপনি কি বললেন! এখন আমি এই শাস্ত্রার্থের আগে কুরআন মজীদ, ফুরকান হামীদের ইলহামী (ঈশ্বরীয়) হওয়ার উপরে তর্ক করবো। আর এই তর্ক ছয় মাস পর্যন্ত চললেও আমি মোটেও সরে দাঁড়াবো না। বরং কুরআন মজীদকে ঈশ্বরীয় প্রমাণিত করেই দেখাবো, এখনই পুলিশ ও থানার ব্যবস্থা করে দিন, আর মাস - দুই মাস, বছর - দুই বছর যতক্ষণ পর্যন্ত এই তর্ক সমাপ্ত না হচ্ছে না আমি স্বয়ং সরবো আর না আপনাকে সরে যেতে দিবো। আর খুদার কসম যদি আমি কুরআনকে ঈশ্বরীয় প্রমাণিত করে না দেখাতে পারি তাহলে আমার জিভ কেটে ফেলা হবে। ব্যস, আমার আর আপনার তর্ক আগে এই বিষয়ের উপরে হয়ে যাক যে - "ইলহামী পুস্তক হল কোনটি, বেদ নাকি কুরআন?" এক আরব সাতানব্বই কোটি বছরের আগে দুনিয়াতে বেদের কোনো নামচিহ্ন ছিল না। আর বেদকে আর্য সমাজের আগে কেউ জানতও না, কিন্তু কুরআনের মজহব বরাবর দুনিয়ার মধ্যে চলে আসছে। ব্যস! এখন সবার আগে বেদ আর কুরআনেরই তর্ক শুরু করে দিন, আর ডক্টর সাহেব বলছিলেন যে "আমার প্রশ্নের কোনো উত্তরই দিতে পারবে না।" আর আপনি বলেছেন যে শির্ক! শির্ক!! মাজ্জুল্লা! ইসলামের মধ্যে "শির্ক" আপনি আরবীর লুগত (কোষ)কেও এখনও বোঝেন না। অন্যথা এই আপত্তি উৎপন্নই হতো না। কৃপা করে আপনি রসূলের মানেটাই বলে দিন। আর রসূল আর পয়গম্বরের মধ্যে ভেদ বলুন? ভেদ কত প্রকারের হয়? রসূল-পয়গম্বরের সত্য-মিথ্যা যাই বলুন কিছু তো মানে বলুন যে তারমধ্যে কি নিস্বত্ (পার্থক্য) আছে?
Note: এটুকু বলে মৌলবী সাহেব নিজের নিশ্চিত সময়কে পুরো না করে তার আগেই বসে পরেন, আর ডক্টর সাহেব জবাব দেওয়ার জন্য দাঁড়া হলে প্রধানজী মৌলবী সাহেবকে বলেন যে - "না, আমি এই সময় সেই বিষয়ের উপরেই তর্ক করার স্বীকৃতি দিতে পারবো, যা শাস্ত্রার্থের শর্ত আর নিয়মের মধ্যে নির্ধারিত হয়েছিল। যদি আপনি নির্ধারিত করা বিষয়ের উপরে বলতে না চান তাহলে আমি আপনার বাকি সময়টুকু শ্রী ডক্টর সাহেবকে দিয়ে দিচ্ছি"।
এই নির্ণয় শুনে মৌলবী সাহেব দাঁড়া হয়ে পড়েন আর তারপর পুনঃ বক্তব্য শুরু করেন। এই ঝগড়ার মধ্যেই পাঁচ মিনিট ব্যর্থ চলে যায়।
🟢 শ্রী মৌলবী আবুলফরহ সাহেব -
"শির্ক" এর মানে বলুন? শির্ক কত প্রকারের হয়? কোন শির্কটা ইল্ম (জ্ঞান) আর কোনটা ইবাদত (উপাসনা)? মহাশয়! যদি আপনি এইসব বিষয়ের মানে বুঝতে পারবেন তাহলে আপনার কোনো আপত্তি থাকবেই না।
🟠 শ্রী ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী আর্য -
কি সজ্জনগণ! আমার ভবিষ্দ্বাণীর কয়টা সত্য বেরিয়ে এলো? আমি আপত্তি পেশ করার আগেই বলে দিয়েছিলাম যে আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মৌলবী সাহেবের শক্তি আর যোগ্যতার একদমই বাইরে। আমি আগে থেকেই জানতাম যে মৌলবী সাহেব আমার প্রশ্নের কি উত্তর দিবেন আর আপনারা দেখলেন যে আমার প্রিয় বন্ধু আমার আপত্তিগুলোকে স্পর্শ পর্যন্ত করলেন না। বরং আমার প্রশ্নের জবাব দিলেন তো এই যে উল্টো আমার উপরেই প্রশ্ন জুড়ে দিলেন। আমি এখন অবাক যে মৌলবী সাহেবের সঙ্গে ইসলামের সিদ্ধান্তের উপর তর্ক করবো নাকি আপনাকে এখানে বসে আরবী ব্যাকরণ পড়াবো? আমি মনে করেছিলাম যে আমার সঙ্গে তর্কে কোনো পড়াশুনা জানা (আলিম) মৌলবী দাঁড় করানো হবে, যিনি আরবী ও ইসলামী সিদ্ধান্তের খবরাখবর জেনে থাকবেন। যিনি আমার যুক্তিকর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আমি খুবই দুঃখিত যে - "খুদ গলতবুদ আঞ্চে মন্ পন্দা স্তম্", অর্থাৎ যে স্বয়ং ভুল পথে আছে সে আমাকে কি পথ দেখাবে? সজ্জনগণ! আপনাদের মনে থাকবে যে আমি পাঁচটি প্রশ্ন করেছিলাম। আপনারা দেখলেন তো মৌলবী সাহেব আমার কোন-কোনটি প্রশ্নের উত্তর দিলেন!! মৌলবী সাহেব বারংবার আমাকে বলেছেন যে আমি আরবী জানি না। কিন্তু মাশাঅল্লা! আপনি খুব বড়ো আরবী জানেন। দেখুন - লাইলাহিইল্লিহ মুহম্মদ রসূলল্লিলাহ" এর মানে আপনি বলেছেন যে - "নহী সিবায় খুদা কে কোই মাবূদ (কোনো ভগবান্ নেই আল্লাহকে ছাড়া)", আমি জিজ্ঞেস করছি যে মৌলবী সাহেব কি বলতে পারবেন যে মাবূদ এর অর্থ কোন শব্দের মধ্যে আসে? সজ্জনগণ! এর মানে হল তাহকীক নহী হে সিবায় খুদা কে কোই (সন্ধান নেই খুদাকে ছাড়া কোনো)" এখন মৌলবী সাহেব বলুন যে এই বৃথা বাক্যটা কিভাবে ঠিক হবে? কেউ জানে না যে আমরা ছয়-ছয় ফুটের স্বাস্থ্যবান মানুষ উপস্থিত আছি। মশাই! এই টেবিল আছে চেয়ার আছে, ভূমি আছে, এরকম শত-শত জিনিস উপস্থিত আছে। আর তার উপর আপনার এই কলমা বলছে যে কেউই নাই। বাঃ বাঃ!! কি সুন্দর কলমা!! তাছাড়া আমি আরও বলছি যে যদি খুদাকে নিজের প্রজাদের মার্গদর্শনের আবশ্যকতা ছিল তাহলে কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে নিজের পয়গম্বর বা রসূল কেন বানায় নি? সারা বিশ্ব জানে, যে যেই বিষয়ের যোগ্য হয় তাকে সেই প্রকারের স্থান দেওয়া হয়। যদি কোনো ব্যক্তি ডাক্তারির কাজ জানে তাহলে সরকার তাকেই ডাক্তার বানাবে, নাকি কোনো ঘাসকাটাকে?
আপনি এমনটা কখনও দেখবেন না যে আমাদের সরকার কোনো ডাক্তারের চেয়ারে কোনো পটবারীকে বসিয়েছে। বা উকিলের জন্য কোনো রাঁধুনীকে বিনা পরীক্ষা নিয়ে কোনো ডিগ্রি (প্রমাণপত্র) দিয়ে দিয়েছে। যখন আমরা এই সাধারণ ধরনের নিয়ম সাংসারিক পরিস্থিতির মধ্যে দেখছি তাহলে এমনটা হতেই পারে না যে খুদার দ্বারে বিনা কোনো যোগ্যতায় এমনি কোনো বিশেষ স্থান দেওয়া হয়। আমার বিপক্ষে দাঁড়ানো মাননীয় শ্রী মৌলবী সাহেবের উচিত যে তিনি যেন সেটা বলে জানিয়ে দেন যে হজরতের মধ্যে এমন কোন বিশেষত্ব ছিল, যার জন্য তাঁকে য়ে ওহদা (পয়গম্বরের স্থান) দেওয়া হয়েছে। আর খুদাকে যদি তাঁকেই পয়গম্বরের রূপে প্রস্তুত করার ছিল তাহলে দুনিয়ার শুরুতে তাঁকে কেন প্রস্তুত করে নি? কারণ এরকমটা না করলে খুদার ন্যায় ব্যবস্থার উপর ধাব্বা আসবে। আপনার সিদ্ধান্তের অনুসারে, মোহাম্মদ সাহেবের পূর্বে আসা সব ব্যক্তি (পয়গম্বর) পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। আর তারা সবাই দোজখ (নরক) যাবে। আপনি অনেকবার রসূলের মানে বলতে বলেছেন, নিন মৌলবী সাহেব! আপনি কি আর মনে রাখবেন, আমি আপনাকে রসূলের মানে বলে দিচ্ছি। রসূলের মানে "প্রেরিত" এর জন্য হয়।
🟢 শ্রী মৌলবী আবুলফরহ সাহেব -
সজ্জনগণ! আমার বিপক্ষ শ্রী ডক্টর সাহেব প্রত্যেকবার চিৎকার করে-করে বলেছেন যে মৌলবী সাহেব উত্তর দিতে পারবেন না! মৌলবী সাহেব উত্তর দিতে পারেন না! আপনার মতলব হল লোকগণ যেন এটাই সত্য মনে করে নেয়, ব্যস! মৌলবী সাহেব উত্তর দিতে পারলেন না। কিন্তু আমি বলছি যে দাবি দুর্বল ব্যক্তিরাই করে থাকে। ইসলামের সত্যতার সামনে আজ সারা বিশ্ব মাথা নত করে আছে। ইউরোপের বড়ো বড়ো ফিলোসফার, বড়ো বড়ো আলিম সমস্যায় মাথা ঝাঁকাতে থাকে, কিন্তু কিছু উত্তর দিতে পারে নি, আপনি আর এমন কি বস্তু? আমি বলছি যে সারা বিশ্বের আলিমও জমা হয়ে যদি ইসলামের উপর আপত্তি করে তাহলে তারা এর কিছুই অবনতি করতে পারবে না। আপনি রসূলের অর্থ করেছেন "প্রেরিত" কিন্তু আপনি ইল্ম (জ্ঞান) রাখেন না। নোট করে নিন, কারণ যার মানে "গশ্তন্-গুফ্তন্" এর ভারের উপর পাঠানো হয়। রসূল সেই পাক জাতকে বলে যে খুদার পক্ষ থেকে প্রেরিত হবে আর গ্রন্থ তার হাতে হবে।
আপনি বড়ো জোর গলায় আপত্তি করছিলেন যে জনাবে হজরত মোহম্মদ সাহেবকে কেন রসূল বানায়? আমি বলছি, এটা কি ধরনের প্রশ্ন হল? আচ্ছা আপনি বলতে পারবেন আদিত্য, অঙ্গিরা, বায়ু আদি ঋষিদের উপরই পবিত্র বেদ আসার কি আবশ্যকতা ছিল? যদি খুদা তালা ইউরোপের মধ্যে কাউকে নিয়ে নিতো আর তাকে নিজের পয়গম্বর বানিয়ে নিতো তাহলে আপনি এটাই বলতেন কি সাহেব একেই কেন বানালেন? যদি আরও অন্য কাউকে নিতো তাহলেও একই প্রশ্ন আসতো। যদি আপনার চয়ন করাকেই খুদা রসূল বানিয়ে দিতো তাহলে তারও বিরুদ্ধে অন্য কেউ এই প্রশ্ন করতো। এর উপর আপনার দ্বিতীয় আপত্তি হল খুদা মোহম্মদ সাহেবকে দুনিয়ার শুরুতে কেন উৎপন্ন করে নি? অজী জনাব! আপনি কি জানেন? আমাদের এখানে এক লক্ষ চুরাশি হাজার নবী এসেছে আর চলে গেছে। শেষে মোহম্মদ সাহেবের যখন নম্বর আসে তো খুদা তাঁকে রসূল বানায়, যে পয়গম্বর যে সময়ে ও যে কৌমের মধ্যে আসে, তার নজাত (মুক্তি) হয়ে গেছে। যেমন পূর্বে লর্ডকর্জন ছিল তারপর জনাব মিন্টো সাহেব আসে, এখন জনাবে হার্ডিগ সাহেব আছে। তবে হ্যাঁ! এখন নবব্বত (নবী বানানোর) ধারাবাহিকতা শেষ হয়ে গেছে, এখনও মুল্ক বা দেশের মধ্যে কোনো নবী আসবে না। এখন কোনো কৌমের মধ্যে নবী এসে থাকলে বলুন, যদি কেউ নবী হওয়ার মিথ্যা দাবি করে থাকে তাহলে তাকে সারা দুনিয়া তো বাদ দিন বরং দশ-বিশটা ব্যক্তিও তাকে নবী মানবে না। আপনি বলেছেন যে মোহম্মদ সাহেব আদি সৃষ্টিতে কেন আসে নি? আমি বলছি দয়ানন্দ আদি সৃষ্টির শুরুতে কেন আসে নি? "উম্মী" র মানে আপনি জানেন না, এটার মানে হল, যে কোনো মকতব (মাদারসা) -এর মধ্যে পড়ে নি, তাই আঁ হজরতকে খুদা মায়ের পেট থেকে পয়গম্বর বানায় আর তার বুকের মধ্যে কুরআন ভরেছে।
🟠 শ্রী ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী আর্য -

সজ্জনগণ! আপনারা শুনে নিয়েছেন যে মৌলবী সাহেব এইবার কি গৌহরঅফসানী (মতি ছড়ানো) করেছেন, খুশির কথা হল এইবার মৌলবী সাহেব আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয় কথা হল তিনি এর উত্তরটা দিতে নাকাময়াব (ব্যর্থ) হয়েছেন। 

🟠 শ্রী ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী আর্য -
আপনি বলেছেন যে, যারা দাবি করে তারা দুর্বল হয় কিন্তু মনে হচ্ছে মৌলবী সাহেবের স্মরণশক্তি খুবই দূর্বল। কারণ সজ্জনগণ আপনারা শুনে থাকবেন যে উনি ওনার প্রথম অভিযোগের মধ্যেই গলা বাড়িয়ে দাবি করেছিলেন যে "আমি ইসলামকে ইলহামী (ঈশ্বরীয়) প্রমাণিত করবোই আর যদি না করতে পারি তাহলে আমাকে ফাঁসিতে দেওয়া হবে", এটা করা হবে সেটা করা হবে! কি মৌলবী সাহেব! দাবি কি দূর্বলেরা করে? যদি এরকমই হয় তাহলে আপনি নিজেই নিজের কথাকে দুর্বল প্রমাণিত করছেন। (জনতার মধ্যে হাসি)
বাকি রইলো বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করার কথা! সো জনাবেমন! পূর্বের ফিলোসফারদের তো আপনি কি আর জবাব দিবেন? যখন আমার মতো এক তুচ্ছই কিছু মিনিটের মধ্যে আপনাকে বড়ো কষ্টে ফেলে দিয়েছে, মানে ধরাশায়ী করে দিয়েছে। সজ্জনগণ! আপনারা দেখলেন যে, মৌলবী সাহেব আমার করা রসূলের মানেটাকে ভুল বলেছেন, তার মানে "মসদরী"র বলেছেন। কিন্তু মজার বিষয় হল, মানেটা আপনিও ব্যর্থ করেছেন। অর্থাৎ "পাঠানো হবে" আর মৌলবী সাহেব আপনি তো আরবীর বাক্ফিয়তের বড়ো-বড়ো কথা বলছিলেন, একবার এটা তো বলুন যে, "গ্রন্থ তার হাতে হবে" এটা কোন কোষের মধ্যে লেখা আছে? আমি তো আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রন্থ হাতে নিয়ে আসতে দেখিনি, বরং যেমনটা আমি জন্মেছি সেরকমই বেচারা নবী এসেছিল আর চলেও গেছে। আগে একটু বলুন তো এই মানেটা আপনি কোথা থেকে নিয়েছেন? আমিও এই কোষটাকে দেখে নিবো, কারণ হতে পারে সেই কোষটা আমার নজরে আসেনি। দ্বিতীয় কথা হল, সজ্জনগণ! আপনাদের মনে থাকবে যে প্রথম ব্যাখ্যানের মধ্যে আমি কি বলেছিলাম যে, যেসব আপত্তি আমি এই সময় পেশ করবো তা কেবল মৌলবী সাহেব একা কেন সারা বিশ্বের মৌলবী মিলেও কায়ামত (প্রলয়কাল) পর্যন্ত মাকুল (ঠিক) উত্তর দিতে পারবে না। আপনারা দেখলেন তো মৌলবী সাহেবও স্পষ্ট শব্দে স্বীকার করেছেন যে আমার প্রশ্ন এমন অসাধারণ যে তার কোনো উত্তর ইসলামের মধ্যে নেই আর সেই প্রশ্ন সর্বদা থেকেই যাবে। মৌলবী সাহেব! আমিও তো শুরুতে আপনাকে একথাই বলেছিলাম যে আমার জিজ্ঞাসা আপনাকে দিয়ে সমাধান হবে না আর সর্বদা কায়েম থাকবে। কিন্তু আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি যে আমার প্রশ্নের উত্তর যতদিন পর্যন্ত আপনি মুসলমান হয়ে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত দিতে পারবেন না। ইসলামকে তিলাঞ্জলি দিয়ে দিন, আমার প্রশ্নের উত্তর কর্মথিওরী (কর্মবিজ্ঞান) দ্বারা সমাধান হয়ে যাবে। আমরা তার ভালো কর্মের ফল বলে মনে করি, কিন্তু আপনি বলুন যে, আঁহজরত কিসের পরিণামের জন্য রসূলের পদবীটা পেয়েছিল?
আমি আবারও বলছি আর জোর গলায় বলছি যে আপনি কেন বরং সারা বিশ্বের মুসলমানরা মিলেও এটার উত্তর দিতে পারবে না। আর আপনি তো স্বয়ংই মেনে নিয়েছেন যে এর কোনো সমাধান নেই। মৌলবী সাহেব! এটার সমাধান কেবল বেদমুক্কদ্দস (বেদানুসার) দ্বারাই হতে পারে। আপনি বলেছেন যে এক লক্ষ চুরাশি হাজার নবী এসেছিল। আমি বলছি যে লক্ষের কথা তো বাদই দিন, কেবল দশ-বিশ হাজার নবীদের নামই যদি গণনা করে বলে দেন তাহলে আমি আপনাকে মর্দ (মনুষ্য) বলে মনে করবো। আপনি বলেছেন যে, স্বামী দয়ানন্দ আদি সৃষ্টিতে কেন হয় নি! এটা ভুল আপত্তি। স্বামীজীকে আমরা মুলহিম (যার উপর ইলহাম হয়েছে) মনে করি না। তারপর আপনি এই প্রশ্নটিকে এই উদাহরণ দিয়ে সমাধান করতে চেয়েছেন যে হিন্দুস্থানের জন্য বাদশাহ যাকে পছন্দ করে তাকে বায়সরায় (রাজ প্রতিনিধি) বানিয়ে পাঠিয়ে দেয়, যেমন লর্ডকার্জন, মিন্টো ও হার্ডিগ আদি একের পরে অন্য একজন আসে। কিন্তু আমার মনে হয় যে মৌলবী সাহেবের মাথা আমার আপত্তির কারণে ক্রমাগত চক্কর খাওয়া শুরু করেছে। তা না হলে তিনি এই উদাহরণ নিজের পক্ষ থেকে পেশ করতেন না কারণ এই উদাহরণটা তো আসলে আমার আপত্তিরই পক্ষে। কারণ দেশের বাদশাহকে যখন হিন্দুস্থানের মধ্যে নতুন রাজ প্রতিনিধি পাঠানোর আবশ্যকতা হয় তো নিজের সাম্রাজ্যের মধ্যে সবথেকে যোগ্যতম ব্যক্তিকে বেছে নিয়ে এই পদবীটা দেয়। আর যেমন করেই হোক সেই বেছে নেওয়া ব্যক্তিটির পূর্বে করে থাকা কাজের উপর বিশেষভাবে লক্ষ্য করার পর তাকে নিযুক্ত করা হয়। না কি আপনার আল্লামিয়ার মতো নির্বিচারে বিনা কোনো যোগ্যতা ও বিনা কোনো সেবা করাতেই কাউকে এমনি ধরে রাজ্য প্রতিনিধির দায়িত্বে পাঠিয়ে দেওয়া হয়! আর বাকি রইলো আপনার এই ফরমানা (ঘোষণা) যে মোহম্মদ সাহেবের পরে যদি কেউ নবব্বতের (পয়গম্বরী) দাবি করেও থাকে তাহলে তাকে দশ-বিশ ব্যক্তিও মানবে না। একথাটা বিষয়ান্তরের, তর্কের ভিতরেই নেই। কিন্তু আমি মৌলবী সাহেবের সব জ্ঞানের মধ্যে আরও বিস্তারপূর্বক বাড়িয়ে বলে দিতে চাই যে, আপনি দূরে কেন যাচ্ছেন? নিজের ঘরের মধ্যেই খোঁজখবর নিন আর সবার আগে আপনি পাবেন "মির্জা কাদয়ানী", যার আজকে লক্ষ-লক্ষ চেলা( অনুগামী) আপনারই ভাই আছে, আর তারা তাকে মসীহ মানে। কিন্তু যাই হোক! এসব কথায় কি যায় আসে! আপনি যদি দিতে পারেন তো আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। (টার্ন)
🟢 শ্রী মৌলবী আবুলফরহ সাহেব -
বাঃ জনাব! কি সুন্দর!! আপনি খুব আপত্তি নিয়ে ঘুরে বেড়ান! এদিক-সেদিকের আপত্তি নিয়ে আর ঈশাইদের গ্রন্থ থেকে পড়া-পড়ে, আপনি খুব জেদি যে মৌলবী সাহেব আমার প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারবে না। কয়ামত পর্যন্ত দিতে পারবে না। আরে বাঃ! আপনি কি এমন প্রশ্নটা করেছেন? যদি আমি কেবল একটা প্রশ্ন করে দেই তাহলে আপনার এখান থেকে সমাজের তাম-তোপড়া তুলে ভাগতে হবে, আপনি তো এখনও বাচ্চা আছেন, আমি হিন্দুস্থানের বড়ো-বড়ো মুনাজিরের সঙ্গে শাস্ত্রার্থ করেছি। পণ্ডিত লেখরামের সঙ্গে আমি শাস্ত্রার্থ করেছি, স্বামী দর্শনানন্দের সঙ্গে শাস্ত্রার্থ করেছি, যখন তিনি পণ্ডিত কৃপারাম ছিলেন। যখন আপনার এরকম বড়ো-বড়ো শাস্ত্রার্থ মহারথীও আমার সামনে পা জমাতে পারেনি তাহলে আপনি কি এমন জিনিস? মনে হচ্ছে ডাক্তার সাহেবের বোঝার মধ্যে কিছু ভিন্নতা আছে। কারণ আমি বলেছিলাম যে রসূল সে হয় যার উপর কিতাব (গ্রন্থ) নাজিল (অবতরিত) হয়। কিন্তু আপনি বলছেন যে নাজিল গ্রন্থ হাতের মধ্যে করে কেউ আসে না। বাঃ ডাক্তার সাহেব! আমি তো আপনাকে অনেক যোগ্যতম ব্যক্তি বলে শুনে ছিলাম। কিন্তু এখন আমাকে আগ্রাতে পৌঁছে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে যে আপনি কত রোগীকে প্রতিদিন মেরে ফেলেন। আর জলসাতে উপস্থিত সব ব্যক্তি একথা বেশ ভালো করে জানে যে আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছি কিন্তু আপনি বারংবার এই প্রশ্নই পুনরাবৃত্তি করছেন। তাছাড়া এটাও কি কোনো বুদ্ধিমত্তার প্রশ্ন হল? আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি যে বলুন, অগ্নি, বায়ু, আদিত্যের উপর কেন বেদ নাজিল হয়? তাদের মধ্যে কি খসূসীয়ত (বিশেষত্ব) ছিল? তাদেরকে ছাড়া অন্য কারও উপর কেন বেদ নাজিল হয়নি? অঙ্গিরা, আদিত্য আদি আপনার ঋষিরা কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়েছিল? আর একই সময়ে একসাথে চার-চারটি ঋষির আবশ্যকতা কি ছিল? এটাও কি আপনার কোনো প্রশ্ন হল যে, মোহম্মদ সাহেবকেই কেন খুদা রসূল নিশ্চিত করেছে, আর অন্যকে কেন করেনি। (মুসলমানদের মধ্যে চতুর্দিকে আমিন...আমিন...) আর খুদানাখাস্তা যদি অন্য কাউকে রসূল করে দিতো তাহলেও আপনি এটাই বলতেন যে তাকে কেন করেছে, অন্য কাউকে কেন করেনি? অর্থাৎ এই প্রশ্নটা তো কখনও শেষই হবে না। খুদাবন্দতালা অন্য কাউকে যদি রসূল বানিয়ে দিতো তাহলে আপনার এই প্রশ্ন বদস্তুর কায়ম থাকতো। কিন্তু এখানে আপনার কোনো দোষ নেই, কারণ এই প্রশ্নটা তো অনেক পুরনো, আর জিজ্ঞাসাবাদীর জ্ঞান না হওয়ার কারণে সবসময় এই প্রশ্নটা করে আসছে।
কুরৈশ (মোহম্মদ সাহেবের জাতি) এর লোকেরাও এই প্রশ্নটাই করেছিল। কিন্তু এখানে আপনার কি দোষ! যদি আপনি পাবলিকের সঙ্গে প্রতারণা না করেন তাহলে আপনার ব্যবসা চলবে না আর আপনি খিদায় মরে যাবেন। আর আপনি যে ঈশাইদের কারণে টুকরো খাচ্ছেন তা দ্রুত কেরে নেওয়া হবে। ইসলামের উপর আপনি কি আর আপত্তি করবেন! ইসলামের বড়ো-বড়ো রাজত্ব এখনও উপস্থিত আছে, আপনার কি আছে? ইসলাম আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। তুরকিস্থান, চিন, তাতার, রাঙ্গুন অর্থাৎ প্রত্যেক মুল্কের মধ্যে ইসলামের সক্রিয়তা জারি আছে। কিন্তু আপনি কেবল এই ভারতের মধ্যেই মরছেন। আমাদের সলতনতরা আছে, বাদশাহরা আছে, বলুন ইসলাম যদি খুদার পক্ষ থেকে না হতো আর সত্য মজহব না হতো তাহলে কিভাবে সম্পূর্ণ বিশ্বের কোটি-কোটি মানুষ তার সামনে মাথা নত করতো? (জনতার মধ্যে হাসি) আপনি ইসলামের মধ্যে "শর্ক" বলছিলেন, (অনেকগুলো আয়ত পড়ে নেওয়ার পরে মৌলবী সাহেব বললেন) ইসলামই শর্কের বড়ো শত্রু। আর মুসলমান আধ্যাত্মকে সবথেকে বড়ো মনে করে, মুসলমানের প্রত্যেকটা বাচ্চা হচ্ছে সরকারের বফাদার (অনুগত)। কারণ মুসলমান খুদাকে ছাড়া কোনো বাদশাহের সম্মুখে পর্যন্ত নত হয় না। আমার কাছে এক লক্ষ নবীদের নাম জিজ্ঞেস করছেন? এক লক্ষ নবীদের নাম কিভাবে লেখা থাকতে পারে! আর এটা আপনি মিথ্যা বলেছেন যে কুরআন এক লক্ষ নবী হওয়ার দাবি করেছে, আর আপনার এটাও একদম মিথ্যা যে মির্জা কাদয়ানী নবব্বত (নবী হওয়ার) দাবি করে। আপনি বারংবার আমাদের রসূলের উপর হামলা করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করছি - আমাদের রসূল কি আপনার ছাগলকে তাড়িয়ে ছিল যে আপনি বারংবার তাঁকে উম্মী (অশিক্ষিত) বলছেন! (টার্ন)
🟠 শ্রী ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী আর্য -
উপস্থিত সজ্জনগণ! এখন এক ঘণ্টা হয়ে গেছে, অথচ আমি আমার বন্ধু মৌলবী আবুলফরহ সাহেবের সম্মুখ যে পাঁচটি ঐতরাজাত্ (আপত্তি) ইসলামের সিদ্ধান্তের উপর পেশ করেছিলাম, তারমধ্যে কেবল একটি প্রশ্নের সমাধান মৌলবী সাহেব করার চেষ্টা করেছেন। আর বাকি সম্পূর্ণ সময় এদিক-সেদিকের উল্টো-পাল্টা কথা বলে আর হাওয়ায় ফায়ারিং করে তথা আমার উপর নাজায়জ (শাস্ত্র বিরুদ্ধ) ও তহজীব (সভ্যতা বিরুদ্ধ) হামলা করার মধ্যেই বর্বাদ করেছেন। যার উত্তরে আমি ফাজিল মৌলবী সাহেবকে কেবল এটাই বলা যথেষ্ট বলে মনে করি যে মৌলবী সাহেব! আপনি এইসব কথা বলে আমার আপত্তি থেকে সরে যেতে পারবেন না। আর যদি এই উত্তেজনামূলক কথা বলা আর গালাগাল করে আপনার মতলব এই এরকম হয় যে আমিও জবাবে এরকই কথা শোনাবো আর এইভাবেই ঝগড়া করে মুবাহিসা (শাস্ত্রার্থ) থেকে প্রাণ বাঁচাবেন, তাহলে আমার থেকে এরকম আশা করা আপনার ব্যর্থ হবে। কারণ আর্য সমাজ আমাকে কিছু বিষয়ের উপর শাস্ত্রার্থ করার জন্য তাদের উকিল বানিয়ে দাঁড় করিয়েছে, নাকি কোনো গালাগাল বা জাতি হামলার জবাব দেওয়ার জন্য! আর এটা দেখে আমার দুঃখ আরও বেড়ে যাচ্ছে যে আমার আপত্তি মৌলবী সাহেবকে এরকমভাবে চক্করে ফেলে দিয়েছে যে, আমার উপর কোনো মাকূল (ঠিক) জাতি হামল করার শক্তিও আপনার নেই।
আমি অবাক যে এই কয়েক হাজার উপস্থিত ব্যক্তিদের হৃদয়ে মৌলবী সাহেবের মুখ থেকে এসব শুনে কিরকম প্রভাব পড়বে, যে - "যদি ডাক্তার সাহেবের আর্য সমাজ থেকে রুটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তিনি না খেয়ে মরবেন" আদি-আদি, অথচ উপস্থিত লোকজনের মধ্যে বেশিরভাগ লোক ভালো করেই জানে যে আমি কোনো ধার্মিক কাজের জন্য আর্য সমাজ থেকে অর্থ নেই না। ঈশ্বরের কৃপায় আমার হাতের মধ্যে সেই দক্ষতা আছে যে আমি আমার নিজের উপার্জন থেকে আরও দশটা লোককে যত্ন করতে পারবো।
যাইহোক! আমি এসব কথার প্রচার করতে মোটেও চাই না, আর মৌলবী সাহেবের কাছেও প্রার্থনা করছি যে তিনি আমার, স্বয়ং নিজের আর পাবলিকের মূল্যবান সময় এইসব ব্যর্থ মিথ্যা কথার মধ্যে যেন বর্বাদ না করেন। এখন আসছি মজমূন তর্কের বিষয়ে! তা এতক্ষণ তর্কের পর এখানে বসে থাকা জনগন বুঝে গেছে যে আসলেই আমার আপত্তির উপর মৌলবী সাহেব কোনো জবাব দিতে পারবেন না। এতক্ষণ ধরে মাথা খাটিয়ে বেচারা পাঁচটির মধ্যে কেবল একটি প্রশ্নতে হাত লাগিয়েছিল, কিন্তু শেষে তারও উত্তর দিতে সফল হন নি। আর স্পষ্ট শব্দে তিনি বলে দেন যে এই প্রশ্নের তো সমাধানই হবে না বরং সর্বদা এটা কায়েম থাকবে। মৌলবী সাহেব! এটাই তো আমি বলছিলাম যে, আপনি যতদিন পর্যন্ত মুসলমান থেকে এই আপত্তির সমাধান করতে চাইবেন, ততদিন পর্যন্ত আপনার দ্বারা এর সমাধান হবেই না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এর কোনো উত্তর নেই। আপনি বৈদিক ধর্মের শরণে চলে আসুন, বেদ মুক্কদ্দসের সামনে মাথা নত করুন আর এই প্রশ্নের সমাধান পেয়ে যাবেন। কারণ এই প্রশ্নটির সমাধান শুধু কর্ম বিজ্ঞান ও আবাগমনকে না মানলে হবেই না। আর যারা এই দুই বিষয়কে মানে তাদের কাছে তো এটা কোনো কঠিন প্রশ্নই না। উদাহরণস্বরূপ, যে আপত্তি আমি আপনার উপর করেছিলাম, যখন আপনি তার উত্তর দিতে পারছিলেন না তো আপনি চার ঋষির সম্বন্ধে ওই একই প্রশ্ন আমার উপর করে আমার আপত্তি আমাকে দিয়েই সমাধান করলেন। কিন্তু যেহেতু আমার জন্য এটা কঠিন প্রশ্ন ছিল না এইজন্য আমি দ্রুত বলে দেই যে চার ঋষিকে ইলহামের অনুভূতি তাদের পূর্ব কর্মের কারণে তারা পেয়েছে। কিন্তু আপনি তো পূর্বজন্মের কর্মকে মানেনই না আর না আবাগমনকে মানেন! ব্যস! তাই আপনি আমার এই আপত্তির কোনো উত্তর দিতে পারলেন না, আর না আপনি কয়ামত পর্যন্ত দিতে পারবেন, যে - "আল্লা মোহম্মদ সাহেবকেই কেন রসূল কায়েম করেছে?" কিন্তু বার-বার চেষ্টা করার পরেও যখন আপনি নিজের যোগ্যতার অনুসারে আমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না, তো আমি এটাই মনে করছি যে এই আপত্তিকে সর্বদার জন্য আপনার মাথার উপর রেখে আপনার অন্য চারটি ইসলামিক সিদ্ধান্তের উপর আমার আপত্তি পেশ করবো। আপনার পেশ করা ইসলামের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ হজ্জ করার উপর আমার এই আপত্তি আছে যে -
১. প্রথমে তো হজ্জের মধ্যে কাবার তবাফ (পরিক্রমা) করা তথা হজরেঅসবদকে চুমু দেওয়া। এটা কি বুতপরস্তী (মূর্তিপূজা) নয়?
২. হজ্জ করলে পরে কিভাবে পূর্ব পাপ নাশ হয়ে মুক্তি হতে পারে?
৩. তৃতীয় আপত্তি হল, খুদা আপনার কথা অনুসারে নজাত (মুক্তি) দেওয়ার জন্য এই খানা কাবাকে মক্কার মধ্যেই কেন বানিয়েছে?
৪. খুদা ঈশাই ও ইহুদীদের পবিত্র বেতউল্লের মধ্যে এমন কিসের অভাব দেখেছিল যে তার পূর্তি করার জন্য মক্কার মধ্যে নতুন করে ঘর নির্মাণ করতে হল?
৫. যদি এই ঘরকে দর্শন করলে মুক্তি পাওয়া যায় তাহলে খুদা সৃষ্টির শুরুতে এটা কেন বানায় নি? এটা হওয়ার পূর্বে যারা জন্মেছিল আর মরে গেছে, তারাও ক্ষমা চেয়ে জন্নতের মধ্যে দাখিল হতে পারতো।
৬. নামাজের বিষয়ে আপনি আমার কেবল একটা প্রশ্নেরই উত্তর দিন যে, যেভাবে নামাজের মধ্যে আপনি বারংবার উঠ-বস (exercise) করেন, এরকম অবস্থাতে পরমাত্মার ধ্যানে মন কিভাবে লাগতে পারে?
৭. রোজার উপরও এখন কেবল একটাই প্রশ্ন করবো যে, এক মাস ধরে রাতে খাওয়া আর সারাটা দিন খালি পেটে থাকার দ্বারা মুক্তি কিভাবে পাওয়া যেতে পারে? এছাড়াও আমার এই তিনটি উসূল (সিদ্ধান্তের) উপর আরও অনেক রকমের আপত্তি আছে। কিন্তু যেহেতু আমার মনে হয় না আপনার কাছ থেকে এরমধ্যে একটারও মাকূল (সঠিক) উত্তর পাওয়া যাবে, তাই আমি আপনাকে কেবল এটুকুই প্রশ্ন করছি। (টার্ন)
🟢 শ্রী মৌলবী আবুলফরহ সাহেব -
ডাক্তার সাহেব যে পুরোনো আপত্তিকে বাদ দিয়ে নতুন আপত্তি পেশ করেছেন, এটা হল আপনার চালাকি। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না পূর্ব প্রশ্নের নির্ণয় না হচ্ছে, আমি আপনাকে আগে হার্গিজ-হার্গিজ যেতে দিবো না। আর যেসব আপত্তি আপনি এখন করেছেন, আসলে এসব প্রশ্নের উত্তর হাজার-হাজার গ্রন্থের মধ্যে লেখা পড়ে আছে, যদি ডাক্তার সাহেব সেগুলো দেখে নিতেন তাহলে এই আপত্তি করতেন না। আর খুদার কসম, আমি সত্যি বলছি যে আমি এগুলোর মধ্যে প্রত্যেক প্রশ্নের উপর সারাটা বছর ধরে তর্ক করবো। আর হজ্জের ফিলোসফি একটা সপ্তাহ ধরে চর্চা করবো। ডাক্তার সাহেবের আগে জানা উচিত যে বুত কাকে বলে। বুত তাকে বলে যার চোখ, নাক, কান আদি আছে, আর তার নিকট কেউ খ্বাহিশ(প্রার্থনা) করে। কিন্তু হজরেঅসবদের কোনো চোখ, কান, নাক নেই এইজন্য তাকে বুত বলা হয় না, আর যেহেতু কোনো মুসলমানই তাকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চুমু দেয় না আর না তবাফেকাবার নিকট কেউ প্রার্থনা করে, এইজন্য এটা বুতপরস্তী (মূর্তিপূজা) নয়। হজ্জ হচ্ছে আসলে এক রকম সারা বিশ্বের মুসলমানদের একটা কনফ্রেন্স (সভা) আর পরস্পরের সঙ্গে মেলামেশা করার একটা সুন্দর পদ্ধতি। এরমধ্যে উদ্দেশ্য কেবল এটাই যে আলাদা-আলাদা স্থানে থাকা সারা বিশ্বের মুসলমান বছরে একবার এখানে এসে একত্রিত হবে আর নিজেদের বিচার বিমর্শ করবে। কাবার তবাফ (পরিক্রমা) করার একটা মূল উদ্দেশ্য হল এটাই যে যেই ঘরের পরিক্রমা লক্ষ-লক্ষ লোক করছে তারথেকে বিশ্বের অন্য কৌমের লোক যেন ভয় পায় যে, যেই ঘরের চতুর্দিকে প্রত্যেক বছর লক্ষ-লক্ষ লোকজন চলাফেরা করছে তার দিকে চোখ তুলে তাকাটাও মুশকিল হবে। আর এটাই হল মূল কারণ যে রসূলিল্লাহের সময় থেকে আজ পর্যন্ত কয়েক হাজার ইনকলাব (ক্রান্তি) হওয়ার পরেও কাবা মুসলমানদেরই কব্জাতে আছে। আর হজরেঅসবদকে যারা বোসা দেয় অর্থাৎ চুমু দেয় তারা চুমু এই জন্য দেয় যে আমাদের ইসলামের পয়গম্বর সেটা হাত দিয়ে স্পর্শ করেছিল। আর যেহেতু আমাদের প্রিয় নবীর হাত দিয়ে এই পাথরটা স্পর্শ হয়েছিল এইজন্য স্মৃতি চিহ্ন আর মহব্বতের কারণে মুসলমানরা সেটাকে চুমু দেয়। কিন্তু বোসা (চুমু) দেওয়াতে কোথা থেকে এই মানে বেরোলো যে আমরা তার পরস্তিস (পূজা) করি? আপনি আপনার সন্তানকে বোসা দেন, আপনার স্ত্রীকে বোসা দেন, তাহলে কি আপনি আপনার সন্তান আর স্ত্রীকে পূজা করেন? তারপর আপনি জিজ্ঞেস করেছেন যে মুসলমান সেখানে গিয়ে কি করে? অজী! কি আর করি পশুদের মারি। যাতে অস্ত্র চালানোর অভ্যাসটা থাকে আর সময় এলে শত্রুকে তরোয়াল দিয়ে মেরে ফেলতে পারা যায়। এটা আসলে মুসলমানদের সেখানে জিহাদ করার জন্য তৈরি করা হয়। যাতে আল্লার তরফ থেকে সময় এলে খুব লড়াই করতে পারে। এইজন্য হজ্জ করাটা আবশ্যক ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। কিছু দূরে দুই হাত কাঁধে রেখে যারা চলে, তার মধ্যে মানেটা হল এই যে লোকেরা যেন দেখে নেয় যে মুসমানদের হাত ভাঙ্গা নেই। কাবার হজ্জ থেকে মুক্তি হওয়াটা আমরা মানি না। বাকি রইলো এই প্রশ্ন যে স্থানটা মক্কার মধ্যেই কেন হয়েছে, আর অন্য মুল্কে কেন হয় নি? এটা বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন হল! কারণ কাবা মক্কাতে না হয়ে যদি ফ্রান্সে হতো তাহলে তখনও আপনার এই জিজ্ঞাসাই থাকতো যে ফ্রান্সের মধ্যে কেন হয়েছে? যদি চীনের মধ্যে হতো তাহলেও এটাই প্রশ্ন হতো যে চীনের মধ্যে কেন হয়েছে? অর্থাৎ কাবা বিশ্বের যেখানেই কায়েম হতো তাহলে এটাই জিজ্ঞাসা তার উপর আপনার জারি থাকতো যা কখনো সমাপ্ত হবে না। যেরকম সরকার যাকে চায় তাকে সেখানেই কায়েম করে দেয়, আর কেউ তাকে এটা বলতে পারে না যে তাকে ওখানে কেন কায়েম করেছে, এই মামলাটাও হল সেই রকম। আর কাবা সৃষ্টির শুরু থেকে আছে, আর আপনার জানা থাকাটা দরকার যে সৃষ্টির শুরুতে আবাদি মক্কা থেকেই শুরু হয়েছিল। (টার্ন)
🟠 শ্রী ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী আর্য -
মৌলবী সাহেব মনে করেছেন যে, কোনো কিছুই উত্তর না দেওয়ার চেয়ে নিজের নির্বিচার যুক্তি দিয়ে মুসলমানদের খুশি করাটা ভালো হবে। আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি খুবই নির্বিচারে চর্চা করেছেন। কিন্তু বেচারা মৌলবী সাহেব জানেন না যে আমি কেবল একটা হাদীস পড়েই তার এই সমস্ত পরিশ্রমের উপর জল ঢেকে দিবো।
Note: হাদীস সহী মুসলিম থেকে একটি হাদীস পড়ে ডাক্তার সাহেব মৌলবী সাহেবকে মুখাতিব (উদ্দেশ্য) করে বললেন যে -
🟠 শ্রী ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী আর্য -
মৌলবী সাহেব! দেখলেন তো এই হাদীসটা কি ব্যাখ্যা করছে? আর আপনি কি বলছেন? এই হাদীসটা তো স্পষ্ট শব্দে ব্যাখ্যা করছে যে - "হজ্জ করলে পরে পূর্বের সমস্ত গুনাহ (অপরাধ) ক্ষমা হয়ে মানুষ জন্নতের মধ্যে বৈরঙ্গ অর্থাৎ বিনা কোনো বাঁধায় পৌঁছে যাবে" আর আপনি বলছেন যে হজ্জ করা হল একটা কনফ্রেন্স। এখন আপনিই বলুন যে আমি আপনার কথাকে মানবো নাকি আপনার ইসলামী পয়গম্বরের? ব্যস! আপনার কথন মিথ্যা হল আর আমার প্রশ্ন বরাবর কায়ন রইলো। তারপরে যে কয়েকটা যুক্তি মৌলবী সাহেব বানিয়েছেন, সেইসব শুনে আমার খুবই দুঃখ হয়, যেমন তিনি বলেছেন যে, "মুসলমানরা সেখানে গিয়ে লড়াইয়ে প্রস্তুতির জন্য পশুকে মারে", তাছাড়া আজকাল এরকম অনেক মুসলমান লড়াই-ঝগড়া আর বিষণ্ণতাকে ভালো মনে করে না। কিন্তু যদি লড়াই-ঝগড়া ছাড়া ইসলামের কাজ চলাই কঠিন হয় আর তারজন্য সবসময় তৈরি থাকার প্রাকটিস পশুদের মারার উপরই ভিত্তিক হয় তাহলে আমি জিজ্ঞাসা করছি যে, এত দূরে এই অভ্যাসটা করতে যাওয়ার চেয়ে হিন্দুস্থানের বুচড়খানার (Slaughterhouse) মধ্যে কি এই অভ্যাসটা করা যায় না? তারপর তিনি বলেছেন যে, হজরেঅসবদকে এই কারণে বোসা দেওয়া হয় যে সেটা আমাদের নবীর হাতের সঙ্গে স্পর্শ হয়েছিল। কি মৌলবী সাহেব! আপনি কি অন্য সেই সমস্ত জিনিসকেও বোসা দেন যা সারা জীবনে হজরতের হাতের সঙ্গে সময়ে-অসময়ে স্পর্শ হয়েছিল? (জনতার মধ্যে হাসি) আর স্ত্রী ও বাচ্চাকে বোসা দেওয়ার কথাও আপনি হজরেঅসবদের সমানই বলেছেন। আমি জিজ্ঞেস করছি যে, কোনো ব্যক্তি কি কখনও নিজের স্ত্রী ও বাচ্চাকে এটা ভেবে বোসা করে যে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ্ (অপরাধ) ক্ষমা হয়ে সে জন্নতের অধিকারী হয়ে যাবে? যদি না হয় তাহলে আপনার উদাহরণ ও যুক্তি সব ভুল প্রমাণিত হবে। এখন আসছি আমার আসল প্রশ্নতে যে, কাবা মক্কাতেই কেন হয়েছে? তো এই বিষয়ে আমার মনে হয় না আমাকে বেশি কিছু বলতে হবে কারণ মৌলবী সাহেব স্বয়ং মেনে নিয়েছেন যে আমার এই প্রশ্নের কোনো উত্তর বা সমাধানই নেই আর এই প্রশ্নটা সর্বদার জন্য কায়েম থাকবে।
মৌলবী সাহেব! আমিও তো এটাই বলেছি যে আমার প্রশ্ন আপনাকে দিয়ে কয়ামত পর্যন্তও সমাধান হবে না। আর যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি এক মুসলিম শাস্ত্রার্থকর্তা হিসেবে আমার সামনে দাঁড়াবেন, আপনার জন্য এই প্রশ্নটা সমাধান হওয়ার একদম বাইরে। কি সজ্জনগণ! আপনারা জলসার মধ্যে দেখলেন তো যে আমার আজকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মৌলবী সাহেব কিরকম অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন? নিজের মুখে এটা মেনে নিচ্ছেন যে আমার আগের প্রশ্নের মতো এই প্রশ্নটারও সমাধান হবে না। আপনাদের মনে থাকবে আমি শুরুতেই দাবি করেছিলাম যে মৌলবী সাহেব আমার একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারবেন না। আর আমি খুশি হয়েছি যে মৌলবী সাহেব নিজের মুখে আমার এই দাবির উপর সদাকত (সত্যতার) মোহর লাগিয়েছেন। কারণ এখন পর্যন্ত আমার দশ-পনেরোটা প্রশ্নের মধ্যে তিনি কেবল দুটি প্রশ্নের সমাধান করার বৃথা চেষ্টা করেছেন, আর আপনারা নিজের কানে দুই-দুইবার মৌলবী সাহেবকে স্পষ্ট শব্দে এটা মেনে নিতে শুনেছেন যে এই দুটি প্রশ্নের কোনো সমাধান হবে না আর এই দুটি প্রশ্ন যেমনটা তেমন সর্বদার জন্য থেকে যাবে। কেউ তাদের যতই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন। কিন্তু এর দ্বারা আপনারা এটা মনে করবেন না যে মৌলবী সাহেব খুদা ন খাসতা কোনো অযোগ্যতার কারণে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না বরং মৌলবী সাহেব হচ্ছেন স্বয়ং এক বিদ্বান ও কাবিল ব্যক্তি। কিন্তু বেচারা অসহায়, কারণ ইসলামের দুর্বলতা ও দুর্বল সিদ্ধান্তকে মজবুত প্রমাণিত করতে পারছেন না আর এরমধ্যে বেচারা মৌলবী সাহেবের কোনো কসুর (দোষ) নেই। (টার্ন)
🟢 শ্রী মৌলবী আবুলফরহ সাহেব -
দেখুন ডাক্তার সাহেব আবারও সেই একই কথা বললেন যে, আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না। আমি এক-একটি ইসলামী উসূলের (সিদ্ধান্তের) উপর সারা মাস আর সারাটা বছর তর্ক করতে পারি, ডাক্তার সাহেব যদি দুই-চারটা দিন তর্ক করেন তাহলে সত্যতা বুঝবেন। ইসলামের সিদ্ধান্ত কোনো যেমন-তেমন সিদ্ধান্ত নয়। আজ ইউরোপের বড়ো-বড়ো দার্শনিক এটাকে মানছে আর সারা বিশ্বের মধ্যে ইসলামের আধিপত্য আছে। আপনি বলেছেন যে হজ্জের মধ্যে কাঁধ কেন ঝাঁকায়? পাথর কেন ছোঁড়ে? পাথর ছোঁড়ার কারণ এই হল যে আগেকার দিনে আরবে পাথর দিয়েই লড়াই হতো, তাই পয়গম্বর - খুদা মুসলমানদের হুকুম দেয় যে তোমরাও পাথর ছুঁড়ে মারো। ব্যস, এই পাথর ছোঁড়াই হল পাথর দিয়ে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া। (জনতার মধ্যে হাসি) কাঁধ ঝাঁকানোর মানে এই হল যে, আগে আরবের কাফির যখন হজরত সাহেবের কাছে আসতো তো তারা নিজের আস্তীনের মধ্যে মূর্তি লুকিয়ে-লুকিয়ে নিয়ে আসতো, এর জন্য হজরত কাঁধ ঝাঁকিয়ে খানা কাবার মধ্যে দাখিল হওয়ার হুকুম দেন, যাতে কারও বগলে অথবা আস্তীনের মধ্যে যদি বুত (মূর্তি) লুকিয়ে থাকে তাহলে সেটা নিচে পরে যাবে। আর কাবার তাবাফ (পরিক্রমা) দ্বারা আপনি যে বললেন গুনাহ্ (অপরাধ) ক্ষমা হয়ে যায়, সেটা একদম মিথ্যা। আর হজরেঅসবদকে বোসা দেওয়ার বিষয়ে আমি আগেই বলে দিয়েছি যে কেবল এইজন্য বোসা দেওয়া হয় যে হজরত মোহম্মদ সাহেবের হাত সেই পাথরের সঙ্গে স্পর্শ হয়েছিল। তাই মুসলামানরা সেটাকে মুতবর্রিক (পবিত্র) মনে করে।
আর এটা একটা স্বাভাবিক বিষয় যে নিজের বয়স্কদের সময়ের বস্তু বা চিহ্নকে বিশ্বের সবাই বিশেষ মনে করে। আর আমরা মুসলিমরা এটাকে সম্মানের যোগ্য মনে করে মুখ এই কারণে লাগাই যে হজরত এটাতে হাত লাগিয়ে ছিলেন। আর এটা মিথ্যা কথা যে হজ্জের দ্বারা পাপ ক্ষমা হয়। কোনো বস্তু কারও বোঝা হালকা করতে পারে না, না কাবার কারও পাপ ক্ষমা করতে পারে আর না অন্য কেউ কারও পাপ ক্ষমা করতে পারে।
পাপের শাস্তি প্রত্যেকে অবশ্যই পাবে আর এর থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না, আর এটা তো একটা স্বাভাবিক কথা যে ভালো উৎসবে গেলে পরে মানুষ অপরাধ থেকে বাঁচতে পারে। কারণ যতক্ষণ সে সৎসঙ্গতিতে থাকবে সে খারাপ কিছু করতে পারবে না। আর শিবালয়ের মধ্যে প্রত্যেকটি মূর্তির চোখ, কান, নাক থাকে, বুত তাকেই বলে যার চেহারা আছে। ব্যস! এইজন্য হজরেঅসবদ বুত হবে না। ... (টার্ন)
Note: মৌলবী সাহেব সময় সম্পূর্ণ না করেই বসে পড়েন।
🟠 শ্রী ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী আর্য -
সম্মানিত উপস্থিত সজ্জনগণ! মৌলবী সাহেবের কোনো কথার জবাব দেওয়ার পূর্বে আমি সবার আগে মৌলবী সাহেব এবং তার সমস্ত মুসলমান সঙ্গীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে চাই, কারণ আমরা তো আজ পর্যন্ত এটাই শুনে এসেছি যে এইধরনের তর্ক-শাস্ত্রার্থের দ্বারা কোনো নির্ণয়ই বেরিয়ে আসে না, কিন্তু ভাগ্য ভালো যে কিছু ঘণ্টার শাস্ত্রার্থ থেকে আর কিছু না হোক, অন্তত একটা খুবই ভালো পরিণাম বেরিয়ে এসেছে। সেটা এই হল যে এত দেরির তর্কের পর আমার প্রিয় বন্ধু মৌলবী সাহেব বড়ো বিশাল হৃদয়ের সঙ্গে একটা বড়ো জবর্দস্ত (অসাধারণ) বৈদিক সিদ্ধান্তের সম্মুখে মাথা নত করেছেন। আর সেই বৈদিক সিদ্ধান্তটা এই হল যে পাপকে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু ক্ষমা করাতে পারবে না, যদিও ইসলামের কৌমী সিদ্ধান্ত হল তৌবা পয়গম্বরের শিফাঅত (গুণ) বা হজ্জ আদি দ্বারা পূর্বের করা অপরাধ বা পাপ ক্ষমা হতে পারে। আমি বলবো যে ইসলামের এত বড়ো একটা সিদ্ধান্ত থেকে মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে মৌলবী সাহেবের বৈদিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাটা, সত্যি মৌলবী সাহেবের ইখ্লাখী শক্তির এটা একটা অনেক বড়ো প্রমাণ।
একটা পূর্ণ সভার মধ্যে আর তাও আবার এক মুসলমানী মঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে মৌলবী সাহেবের এই স্বাধীন আর নির্ভয়ের সঙ্গে ইসলামের এক বুনিয়াদী সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করে বৈদিক সিদ্ধান্তের শরণে আসাটা কিছু কম সাহসের কাজ নাকি! (শ্রোতাদের মধ্যে জোড়া করতালির ধ্বনিতে পরিবেশ গুঁজে ওঠে) ব্যস! আমি এই ইখ্লাকী (নৈতিকতা) ও জুর্রুত (বীরত্বের) উপর বিশেষভাবে হকপসন্দী (সম্মান) মৌলবী সাহেবকে জানাচ্ছি আর বাকি সব মুসলমানদের স্বাভাবিকভাবে আন্তরিক মুবারকবাদ দেওয়ার সঙ্গে আশা করছি যে যদি মুসলমানরা এইভাবে সত্যের জন্য আর্য সমাজের সঙ্গে প্রত্যেকবার তর্ক-মুবহিসা (শাস্ত্রার্থ) জারি রাখে তাহলে সেই দিন দূরে নেই যখন আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাই নতুন করে বেদের আলোর সামনে মাথা নামিয়ে আমাদের গলায় আলিঙ্গন করার জন্য প্রস্তুত হবে। এখন বাকি রইলো তর্ক নির্ণয়ের বিষয়টা! আপনাদের সেবাতে আমার এটাই বলার আছে যে প্রথম সময়ে শাস্ত্রার্থের শর্তের অনুসারে আর্য সমাজকে ইসলামের উপরে আপত্তি করার জন্য দেওয়া হয়েছিল, এইজন্য আমি উকিলের দায়িত্বে আর্য সমাজের পক্ষ থেকে ইসলামের উপরে পনেরোটি আপত্তি করেছি, যা আপনারা শুনেছেন, এই তিন ঘণ্টার মধ্যে আমার পনেরোটি আপত্তির মধ্যে কেবল দুটি আপত্তির উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু শেষে নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন অর্থাৎ মেনে নিয়েছেন যে এই আপত্তির কোনো উত্তরই হবে না। আর এই আপত্তি সর্বদাই যেমনটা তেমনই কায়েম থাকবে।
এই সব আপনারা নিজের কানে শুনেছেন আর চোখে দেখেছেন। এখন আমি ইন্সাফ (ন্যায়) আপনাদের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি যে আপনারাই বলুন যে ইসলামের উপরে আর্য সমাজের এর থেকে বড়ো পূর্ণ জিত আর কি হতে পারে? আর ইসলামের দুর্বলতা এর থেকে বড়ো আর কি প্রমাণ হতে পারে, যে তার উকিল স্বয়ং আমার প্রশ্নকে লাহল (যার কোনো সমাধান নেই) স্বীকার করছে আর নিজের মুসন্নদ্দ বা মুস্সল্লমা হাদীস মুসলিমের হুকুমের উপর নিজের অযৌক্তিক দলীলকে মান্যতা দেয়। এখন আসছি মৌলবী সাহেবের হজ্জ বিষয়ের মজার যুক্তির উপরে। আসলে আমার উদ্দেশ্য এটাকে তর্কের মধ্যে নিয়ে আসার ছিল না, কারণ এসব তাবীলে (বৃত্তান্ত) হল বানোয়াট আর কোনো একটি বৃত্তান্তের জন্যও মৌলবী সাহেব হাদীস বা আয়ত বা কুরআনের কোনো আয়ত পেশ করেন নি। অথচ আমি এখন পর্যন্ত কোনো কথা বিনা প্রমাণ বলি নি। ব্যস! দরঅসল (আসলে) মৌলবী সাহেবের বানোয়াট বৃত্তান্তের উপরে তর্ক করার কোনো আবশ্যকতা ছিল না, কিন্তু আমি এই মিথ্যা বৃত্তান্তের কব্জি খোলাটা উচিত মনে করেছিলাম কারণ আমার আসল প্রশ্নের তো মৌলবী সাহেব কয়ামত পর্যন্ত জবাব দিতে পারবেন না, অতএব অন্ততঃ এটাই না হয় হোক, পাবলিকের সময় তো ব্যর্থ যাবে না, পাবলিক অন্তত কিছু তো জানতে পারবে, আর আমি খুশি যে এই তাবীলগুলোর উপর তর্ক করাতে আমাদের বড়ো লাভ হয়েছে। মানে সবার আগে তো মৌলবী সাহেব ইসলামের একটা বড়ো সিদ্ধান্তকে এই কয়েক হাজার মুসলমানদের উপস্থিতিতে স্পষ্ট জবাব দিয়ে দিলেন, দ্বিতীয় জিহাদ (লড়াই) -কে যা থেকে আজ সাধারণত মুসলমান এড়িয়ে যেতে চায়, তাকে আবশ্যক মেনে নেন। এখন এটা হল আমার এই শাস্ত্রার্থের অন্তিম তকরীর (বক্তৃতা)। এরপর মৌলবী সাহেব তকরীর করবেন। আর তারপর এর জবাব দেওয়ার সুযোগ আমি পাবো না।
এইজন্য আমি এর জবাব এখনই দিয়ে দিচ্ছি। কারণ আমি আগে থেকেই জানি যে মৌলবী সাহেব আমার এই বক্তৃতার কি জবাব দিবেন।
মন দিয়ে শুনুন! আর নোট করে নিন যে মৌলবী সাহেব এখন নিজের অন্তিম বক্তব্যের মধ্যে আমার কোনো আপত্তির জবাব তো দিবেন না। কারণ যখন তিনি তিন ঘণ্টার মধ্যে একটাও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন নি তো পনেরো মিনিটের মধ্যে কোন তীরটা মারবেন? তবে হ্যাঁ! নিজের এই বক্তব্যের মধ্যে মৌলবী সাহেব কোনো আপত্তির সঠিক জবাব দেওয়ার বদলে বরং দুই-চারটি এদিক-সেদিক কথাই বলবেন। পাঁচ-দশটা মিথ্যা তাবীল গড়বেন, দশ-বিশটা গালি আমাকে দিবেন। আর সময় শেষ করে বসে পড়বেন।
আর এসব কথার উত্তর দেওয়াটা আমি আবশ্যক মনে করি না, আর আপনাদের হক পসন্দী (সঠিক নির্ণয়) ও মুন্সিফ মিজাজী-র (ন্যায় বিশেষতার) উপর এই তিন ঘন্টার তর্কের নির্ণয় আপনাদের উপরে ছেড়ে দিয়ে বসে যাচ্ছি। এখন আপনারা মৌলবী সাহেবের তীর দেখবেন, সেটা কিভাবে চলে!
🟢 শ্রী মৌলবী আবুলফরহ সাহেব -
জনাব! আপনি যাবেন কোথায়! আমি তো আগ্রা পর্যন্ত আপনার পিছু ছাড়বো না আর সেখানে গিয়েও আপনার খবর নিবো। আমি আপনার উপর কেস (case) করবো, আপনি আমাকে চেনেন না, আমার নাম হল আবুলফরহ। আপনি আমাকে জানেন না আর আমি আপনাকে ভালো করে জানি। আপনার কি এমন যোগ্যতা আছে যে আপনি ইসলামের উপর আপত্তি করতে পারেন? অথচ আজ সারা বিশ্ব ইসলামকে লোহা মানছে আর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভূমির উপর ইসলাম ছড়িয়ে আছে, আপনি লেকচার মেরেছেন যে আমার একটা প্রশ্নেরও উত্তর দেওয়া হয়নি, এটাই বলতে-বলতে চলে যাবেন যে আমার প্রশ্নের জবাব পাই নি! জবাব পাইনি!! এতে হবেই বা কি? আপনি কি এমন প্রশ্নটা করেছেন যে তার উত্তর দেওয়া যায় না?
পাবলিক ডাক্তার সাহেবকে ভালো ভাবে দেখে নিয়েছে যে আপনার বাস্তবতা কি? দুই-চারটা গ্রন্থ পড়ে আপনিও আলিম (বিদ্বান) হয়ে বসেছেন। ঈশাইদের গ্রন্থ পড়ে ইসলামের উপরে আপত্তি করতে চলেছেন।
অজী জনাব! আপনি এখনও ইসলামকে বোঝেন নি, যদি কোনো আলিমের (বিদ্বানের) কাছে বুঝে নিতেন তাহলে আপনার কোনো আপত্তিই থাকতো না, আর মাশাঅল্লা! আপনি বলেছেন যে আমি পয়গম্বরের অজমত (মহত্ব) অস্বীকার করেছি। তৌবা তৌবা! আমার তৌবা!! এত বড়ো মিথ্যা!! যদি আপনি জানতেন যে অপরাধ কত ধরনের হয় তাহলে আমার উপর দোষ লাগাতেন না যে আমি অপরাধকে ক্ষমা করা অস্বীকার করেছি। জনাব! গুনাহ্ (অপরাধ) শগীরা (ছোটো) ও কবীরা (বড়ো) দুই ধরনের হয়, এরমধ্যে শগীরা অপরাধ ক্ষমা হতে পারে, কবীরা নয়। আর জিহাদের(লড়াইয়ের) সম্বন্ধে আপনি কেবল ভুল আর পাবলিককে বোকা বানানোর জন্য বলেছেন যে জিহাদ (লড়াই) আমাদের এখানে ইজাজত (অনুমতি) আছে। আমি আপনাকে এক হাজার টাকা পুরস্কার দিবো যদি আপনি কুরআন শরীফ থেকে জিহাদের একটা আয়াতও দেখাতে পারেন।
Note: এমন সময়ে ডাক্তার সাহেব বসে বসেই বললেন যে -
🟠 শ্রী ডক্টর লক্ষ্মীদত্তজী আর্য -
আপনার কোনো কিছুই দেওয়ার দরকার নেই, কিন্তু আমাকে কেবল অনুমতি দিন, আমি এখনই আপনাকে একটা কেন পাঁচ-দশটা আয়াত কুরআনের ভিতর থেকে দেখিয়ে দিতে পারি।
🟢 শ্রী মৌলবী আবুলফরহ সাহেব -
(গর্জন করে) খামোশ! আমার সময়ে আপনার বলার কোনো অধিকার নেই। আপনার মনে রাখা উচিত যে আমি শাস্ত্রার্থের শুরুতেই আপনাকে সেই শেরটা আবার পড়ে শোনানোর জন্য বলেছিলাম, কিন্তু আপনি আমাকে সেই শেরটা শোনানো তো দূর বরং বলতে পর্যন্ত মানা করে দেন, তথা একটা মহত্বপূর্ণ পরামর্শও দিয়েছেন যে "এরকমটা করা সভ্যতার বিরুদ্ধ" এখন কি আপনি আপনার সেকথা ভুলে গেলেন? জলসাতে উপস্থিত সজ্জনগণ! আপনাদের কেবল ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে যে কুরআনের মধ্যে জিহাদ (ধার্মিক লড়াই) এর তালিম আছে। "কুরআনের মধ্যে জিহাদ ও ফিসাদের কোনো তালিম মৌজুদ নেই", বরং মুসলমানরা তো হল সরকারের এক বফাদার (অনুগত) প্রজা আর সরকারের জন্য মুসলমানের প্রত্যেকটা বাচ্চা জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি আছে। ইসলাম সারা বিশ্বের মধ্যে সত্যতার জন্য ছড়িয়েছে না কি জিহাদ আর ফিসাদের জন্য! আমার এই বক্তব্যের সঙ্গে এই মুবাহিসা সমাপ্ত হচ্ছে।
(সমাপ্ত)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ