বেদ ঈশ্বরীয় গ্রন্থ নাকি কুরআন ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

08 November, 2022

বেদ ঈশ্বরীয় গ্রন্থ নাকি কুরআন ?

 শাস্ত্রার্থ বিষয় : বেদ ঈশ্বরীয় গ্রন্থ নাকি কুরআন ?

স্থান : মজীঠা, জেলা অমৃতসর (পাঞ্জাব)
দিনাঙ্ক : ১৬ অক্টোবর, সন ১৯০৪ ই০
আর্য সমাজের পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্তা :
🟠 স্বামী যোগেন্দ্র পালজী
মুসলমানদের পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্তা :
🟢 মৌলবী সনাউল্লা সাহিব, অমৃতসরী
আর্য সমাজের পক্ষ থেকে মন্ত্রী :
শ্রী পণ্ডিত দূর্গাদত্তজী
মুসলমানদের পক্ষ থেকে মন্ত্রী :
মৌলবী ইমামুল্লদ্দীন সাহিব
শাস্ত্রার্থের প্রধান : সরদার কৃপাল সিংহজী
• শাস্ত্রার্থের পূর্বে •
মৌলবী সনাউল্লা আর্য সমাজ মজীঠের বার্ষিকোৎসবে হাদীসকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল, সেই সময় আমাদের কাছে গ্রন্থ ছিল না, তাই ১৬ অক্টোবর সন ১৯০৪ এ মুবাহিসা (শাস্ত্রার্থ) আর্য সমাজ আর দীনেইসলামের মধ্যে হওয়া নিশ্চিত হয় যার বিষয় ছিল -
"বেদ ঈশ্বরীয় গ্রন্থ নাকি কুরআন?"
এর প্রস্তুতি চার প্রসিদ্ধ ব্যক্তির হাতে ছিল, তাদের নাম হল -
১. সরদার প্রগট সিংহজী, ২. প্রদ্যুম্ন সিংহজী, ৩. কৃপাল সিংহজী এবং ৪. হরনাম সিংহজী
মুসলমান লোকেরা শাস্ত্রার্থের ভয়ে আতঙ্কিত আর নিজেদের পোল খুলছে দেখে আগে থেকেই তাদের ওসানবাখ্তা (সচেতনতা) হারিয়ে ফেলেছিল।
অগর্চে তালীম ইসলামের মধ্যে হাদীস প্রামাণিক পুস্তক ছিল, আর তার উপরও আপত্তি করার অধিকার ছিল, কিন্তু মৌলবী সাহেব এবং তার সঙ্গে থাকা লোকেরা স্পষ্ট ভাবে মানা করে দেয়। আর বলে যে ইসলামের মধ্যে "হাদীস" জড়িতই না। আফসোস!!
দুই দিনের কথাবার্তার পর শাস্ত্রার্থ গতকাল দেড় ঘণ্টা ধরে হয়, অগর্চে শাস্ত্রার্থের উৎসবের বৈঠক ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত হয়, কিন্তু মৌলবী সাহেব চালাকি করে বাকি সম্পূর্ণ সময়টা ব্যর্থ করে দেয়, সেই দেড় ঘণ্টার মধ্যে যা তর্ক হয়েছিল, তারমধ্যে নির্ণয় এইকথার উপর লেখা হয়েছিল যে, মৌলবী সাহেব যে এটা বলেছে - " কুরআনের কোথায় লেখা আছে যে হব্বা আদমের সন্তান ছিল? আর তার পাঁজর থেকে বেরিয়ে ছিল।" এর প্রমাণ আর্য সমাজ দিবে আর বেদের মধ্যে মূর্তি পূজা লেখা আছে, তো সেই মন্ত্রটা যেখানে মূর্তিপূজা আছে, সেটা মৌলবী সাহেব লিখে দিবে। কিন্তু আর্য সমাজের পক্ষ থেকে কুরআন আয়াতের যে সূরতনিশার প্রথম আয়াতটি ছিল, সেটা লিখে দেওয়া হয়। যার অনুবাদ হল - সে হল তোমার খুদা যে তৈরি করেছে তোমাকে একটা জীবন থেকে, আর অঙ্গিক্তা (সংকেত) করে সে তার নারীকে" অর্থাৎ একথা কুরআনের মধ্যে স্পষ্ট লেখা আছে যে - "হব্বা আদম থেকে জন্মায়" আর জন্ম হওয়ার কারণে সে তার সন্তান ছিল, ব্যাস্! আদম নিজের আপন কন্যার সঙ্গে বিয়ে করে। মৌলবী সাহেবের আপত্তি ছিল যে বেদ আবাগণনকে মানে তাই পবিত্র বেদ "মা আর বোনের মধ্যে কোনো ভেদ রাখে না"। আমাদের জবাব ছিল যে মৃত্যুর পরে আমাদের শারীরিক সম্বন্ধ থাকে না। মা আর বোনের সম্বন্ধ হল শারীরিক আর সেটা এই মৃত্যুর পরে সমাপ্ত হয়ে যায়। এইজন্য আমাদের উপরে কোনো আপত্তি হবে না তবে হ্যাঁ! কুরআন একই বাপের নিজের বোনের সঙ্গে বিয়ে জায়জ (ন্যায়সঙ্গত) মানে, যেমন আদম আর হব্বার উদাহরণ এখানে উপস্থিত আছে। আর্য সমাজের পক্ষ থেকে লিখে পেশ করা হয়েছিল যে, এর উল্লেখ অমুক আয়াত (কুরআনের) মধ্যে আছে। কিন্তু মৌলবী সাহেব না তো কিছু লিখতে পারলেন আর না কিছু জবাব দিতে পেলেন। এই কারণে তার খুবই খারাপ ভাবে পরাজয় হয়। আর ঘোড়ার গাড়িতে চেপে দ্রুত পালিয়ে যান। মজীঠের ছোটো বড়ো সকলে এই কথার সাক্ষী আর আর্য সমাজের প্রসংশক।
✍️নিবেদক - স্বামী যোগেন্দ্র পাল
• শাস্ত্রার্থ আরম্ভ •
🟢 মৌলবী সনাউল্লা সাহিব -
নিয়মানুসারে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো মুদ্দয়ী (দাবিদার) হবে না, দাবি চলতে পারে না, এর জন্য এটা আবশ্যক যে আমরা বেদ ও কুরআনের সম্বন্ধে তর্ক করে এটা দেখবো যে মুদ্দয়ী (দাবিদার) কে কে? আমার মুখাতিব (বিপক্ষী) বলুক যে বেদ কোন কোন ব্যক্তির উপরে ইলহাম (ঈশ্বরীয় জ্ঞান প্রকাশ) হয়েছিল? হিন্দুরা বলে "চার মুখওয়ালা ব্রহ্মাজীর উপরে ইলহাম হয়েছিল"। আর্য সমাজের লোকেরাও কি তার উপরই ইলহাম বলে নাকি অন্য কিছু বলে? যাই হোক! তাদের যা দাবি আছে সেটা বলুক, আর বেদ থেকেই তার প্রমাণ পেশ করুক। কুরআন বলে যে - "মোহম্মদ রসূলল্লিলাহ", অর্থাৎ মুহম্মদ হল আল্লার রসূল (পয়গম্বর)। এই বিষয়ের এটাই মূল রাস্তা। (টার্ন)
🟠 স্বামী যোগেন্দ্র পালজী -
বেদ হল পরমাত্মার জ্ঞান, য়জুর্বেদের মধ্যে লেখা আছে যে -"তস্মাত্ য়জ্ঞাত্ সর্বহুতঃ ঋচঃ সামানি জজ্ঞিরে", দেখুন য়জুর্বেদ অধ্যায় ৩১ তারপর য়জুর্বেদ ছাড়া অথর্ববেদের মধ্যেও আছে যে য়জুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ হল পরমাত্মার জ্ঞান, দেখুন - অথর্ববেদ কাণ্ড ১৩, এছাড়া মনুস্মৃতির মধ্যেও বলা হয়েছে যে - অগ্নি, বায়ু, আদিত্য আর অঙ্গিরা ঋষিদের হৃদয়ে "বেদ" প্রকাশিত হয়। দেখুন -
অগ্নিবায়ুরবিভ্যস্তু ত্রয়ম্ ব্রহ্ম সনাতনম্।
দুদোহ য়জ্ঞসিদ্ধ্যর্থমৃগ্যজুঃসামলক্ষণম্।।
(মনুঃ ১|২৩)
ঈশ্বরীয় পুস্তকের জন্য সেটা ইল্ম ইলাহী (ঈশ্বরীয় জ্ঞানের) অনুসারে হওয়াটা আবশ্যক, যেহেতু বেদের জ্ঞান হল ইল্ম ইলাহী (ঈশ্বরীয় জ্ঞানের) অনুসারে, তাই "বেদ হল ঈশ্বরীয় জ্ঞান", কিন্তু কুরআন ইল্ম ইলাহী (ঈশ্বরীয় জ্ঞানের) অনুসারে না, তাই "কুরআন ইলহামী (ঈশ্বরীয়) পুস্তক হবে না"।
Note: এর উপর মৌলবী সনাউল্লা লিখিত রূপে বলেন যে স্বামী যোগেন্দ্র পাল বিষয়ান্তর প্রশ্ন পেশ করেছেন। স্বামীজী বলেন যে, "যেসব শর্ত আমি স্বীকার করেছিলাম তারমধ্যেই এই শর্তটা আছে যে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য বিপক্ষের অধিকার থাকবে অভিযুক্ত জবাব দিবে আর আপত্তি জানাবে, আর ফরীক সানী (অন্য পক্ষের) ঈশ্বরীয় পুস্তকের উপর যে নিজের আপত্তির প্রশ্ন হবে সেটা তহরীর (লিখে) করবে। যদি কেবল জবাব দেওয়া হয় তাহলে সেই পক্ষ যে প্রথমে মৌতরিজ (প্রশ্নকর্তা) হয়েছে সে জবাবের পর জবাব লিখতে থাকবে, সে আপত্তি করার সুযোগ পাবে না।" এর উপর মৌলবী সাহেব অনেক্ষণ ইশরার (আগ্রহের) পর বলেন যে - খুব ভালো! আমার যে ধরনের আর যে বিষয়ের প্রশ্ন হবে সেই মজমুন (বিষয়ের) আর সেই ধরনের প্রশ্ন আমাকে করা হোক।
🟧 আর্য সমাজের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে এর জবাব দেওয়া হয়েছিল -
আমি সমস্ত বিষয়ের প্রশ্ন যা মৌলবী সাহেব পেশ করবেন বা যার উপর তর্ক করবেন, অভিযুক্ত প্রশ্ন ওনার উপর করবো, আর ওনাকে জবাব দিবো।
লিখিত হস্তাক্ষর -✍️"যোগেন্দ্র পাল"
🟩 এর উপর মৌলবী সনাউল্লা লিখে এটা পেশ করেছিলেন -
আমি অভিযুক্ত জবাব যা এই ধরনের হবে, শুনবো আর জবাব দিবো আর গেয়ার মুতল্লিক (বিষয়ান্তরের) উপর আপত্তি করে প্রধানজীর ধ্যান এই দিকে করবো, প্রধানজী নিজে যা নির্ণয় করবেন আমি তা পালন করবো।
লিখিত হস্তাক্ষর - ✍️"সনাউল্লা"
🟫 প্রেসিডেন্ট সাহেব (প্রধান) সরদার কৃপাল সিংহজীর লিখিত আদেশ -
মৌলবী সাহেব! আপনি আপনার এই ফর্মটা ফেরত নিন, যার মধ্যে আপনি শর্তের বিরুদ্ধে নিজের কথা লিখেছেন যে - কুরআনের উপরে আপত্তি, তর্ক সম্বন্ধিত না, আর এটা অনুচিত।
শাস্ত্রার্থ প্রধান -✍️"কৃপাল সিংহ"
🟩 মৌলবী সনাউল্লা সাহিব -
আমি এই ফর্মটা ফেরত কোনো মতেই নিবো না।
🟫 প্রধান কৃপাল সিংহজী -
আমার কথা মানা হচ্ছে না।
🟩 মৌলবী সনাউল্লা সাহিব -
ঠিক আছে ফেরত নিয়ে নিচ্ছি।
🟢 মৌলবী সনাউল্লা সাহিব -
আমার প্রশ্নের জবাবে আপনি মেনে নিয়েছেন যে বেদের দাবিদার কেউ না, অথবা এভাবে বলুন যে বেদ নিজের দাবিদার কাউকে বলে না, ব্যস! এটার উদাহরণটা ঠিক এইরকম যে, আমি যদি শাসকের কাছে আবেদন করি যে আমার কাছ থেকে এত টাকা অমুকে নিয়েছে, আমাকে অমুক ব্যক্তির কাছ থেকে এত টাকা নিতে হবে অমুক-অমুক ব্যক্তি সাক্ষী আছে, কিন্তু সাক্ষীর যদি নামই না থাকে তাহলে কোন সরকার সেই সাক্ষীর উপরে গুরুত্ব দিবে? বরং সেটাকে আবর্জনার পাত্রে ফেলে দিবে, আপনি এর উপরই সেটাকে বুঝে নিন। কুরআন ঈশ্বরীয় জ্ঞানের অনুসারে, ঈশ্বরীয় জ্ঞানের বিরুদ্ধ এমন কোনো কথা তারমধ্যে নেই। কিন্তু এই সব তহকীক (অনুসন্ধান) করার পর জানা যাবে যে দুই পুস্তকের মধ্যে দাবিদার কোনটি? কুরআন বলছে যে - "লা য়তি কলবাতিল মনয়দীদুল মন খলফা", অর্থাৎ কোনো বাইরের বস্তু তার ডানদিক থেকে বা পিছন থেকে তার কাছে আসে না, আর না কোনো প্রাচীন খোঁজের দ্বারা আর না পরবর্তী সময়ের দ্বারা, কুরআনের তকজীব (মিথ্যা প্রমাণিত) হওয়া সম্ভব। কিন্তু এই সব হল সাক্ষ্যের উপর নির্ভর। আগে আপনি দাবি প্রমাণিত করুন, বিষয়ের ব্যাখ্যা করুন, তথা এটা বলুন যে এই হল আমার দাবি, তারপর সাক্ষী পেশ করুন, আপনি এটা মনে রাখবেন যে, আমি স্বয়ং না তো ন্যায় বিরুদ্ধ চলবো আর না আপনাকে চলতে দিবো। (টার্ন)
🟠 স্বামী যোগেন্দ্র পালজী -
বেদের দাবিদার হল স্বয়ং পরমেশ্বর। এটা আমি আগেও বলেছি, এর প্রসঙ্গে আপনি যে বললেন - বেদ কোনো বিষয় না, এটা ঠিক না। আপনার উদাহরণটাও পুরোপুরি ভুল, কারণ বেদের দাবিদার পরমাত্মা উপস্থিত আছে আর প্রকৃতির নিজাম (প্রবন্ধ) হল তার সাক্ষী। আপনি বলেছেন যে - "বেদের কোনো দাবিদার নেই, বা বেদ নিজের দাবিদার কাউকে বানায় না", এটা ন্যায়কে পুরোপুরিভাবে মেরে ফেলা হবে।
কুরআন পৃথিবীকে বিছানা আর আকাশকে ছাদ বলে, অথচ পৃথিবী হচ্ছে গোল আর আকাশ কোনো বস্তু নয়, আর কুরআনের মধ্যে শয়তানের সঙ্গে খুদার শাস্ত্রার্থের দ্বারা আর শয়তানের যুক্তির সামনে খুদার হার জানা যায় আর খুদা শয়তানকে "বিশ্বকে পথভ্রষ্টকারী" মুকর্রর (নিশ্চিত) করাটা বুদ্ধির বিরুদ্ধ হবে।
য়াজুজ-মাজুজ (ফেরেশতাদের নামের) কাহিনী আর অসহাবের (সহচরের) গল্প আর সদ্ সিরকন্দীর গল্প আর য়দ্ বৈজার গল্পের কোনো প্রমাণ ঈশ্বরের ক্রিয়ার মধ্যে আর ইতিহাসের মধ্যে নেই। অর্থাৎ যে কথা বাস্তবিক না, কুরআন তাকে বাস্তবিক বলে এইজন্য সেটা কলামেইলাহী অর্থাৎ "ঈশ্বরীয় জ্ঞান হতে পারে না"।
🟢 মৌলবী সনাউল্লা সাহিব -
খুদাকে বেদের দাবিদার বলে দেওয়াটা তো সেরকম কথা হয়ে গেল যে - যার কেউ নেই তার আমি আছি! খুদা কোথায় বলেছে যে - আমি হলাম দাবিদার? আর তাঁর দাবি কে শুনেছিল? এর জবাব দিন। এইজন্য উপরের দেওয়া আমার উদাহরণটা ঠিক আছে। খুদা ইলহাম (ঈশ্বরীয় জ্ঞান) দেয়, তো তাকে কোন ব্যক্তির দ্বারা প্রকট করা হয়েছিল? কিরকম অদ্ভুত কথা যে, হিন্দু তো ব্রহ্মাজীকে বলছে, আর আর্য সমাজ তার উল্টো বলছে, আর অগ্নি আদিকে বলছে? তারপর এরও ভিতরের হিন্দু তো "ব্রাহ্মণ আর সংহিতা" দুই ধরনের বেদ বলছে, আর আর্য সমাজ তার অর্ধেক বলে, অর্থাৎ কেবল সংহিতা ভাগকে প্রমাণ মানে। দাবির মধ্যে পার্থক্য! দাবিদারের নাম-ঠিকানা অনুপস্থিত!! আর বলতে থাকে যে - "বেদ হল ইলহামী (ঈশ্বরীয় জ্ঞান)"!! বাঃ বাঃ কি সুন্দর! কেউ একজন ঠিকই বলেছিল যে - পীর খুদা বিখ্যাত হয় না বরং তার মুরীদ (ভক্ত) তাকে প্রসিদ্ধ করে। আর বৈদিক ধর্মের শিক্ষা এই হল যে অন্যের ছেলেকে নিজের বানিয়ে নাও যার সঙ্গে কোনো সম্বন্ধই নেই। পৃথিবীকে বিছানা বলাটা এই কারণে ঠিক যে আমরা তার উপরে ঘুমাই, পৃথিবীর গোলাকৃতি যা আপনি বলছেন, সেটা কাউকে ঘুমাতে আটকায় না, আকাশকে আমরা সমান দেখি, য়ুনানের দার্শনিক এটাকে প্রমাণিত করেছে। আপনি কোন যুক্তিতে এটাকে অস্বীকার করছেন? এবং খুদা আর শয়তানের সংবাদ কুরআনের মধ্যে নেই, এটা আর্য সমাজের মিথ্যা কথা, সেটা কেবল তার মারুজ (নিবেদন) ছিল যেভাবে রাজার নিকট প্রজা নিবেদন করে। বাকিটা পরবর্তী টার্নে বলবো, আপনি আগে দাবিদারকে পেশ করুন, সময় কম, প্রধানজীর ইশারা হচ্ছে। দাবিদার না থাকলে, স্বামীজীর "দাবিদার সুস্ত (নিস্তেজ) আর সাক্ষী চুস্ত (কর্মতৎপর)" একথা মাথায় রেখে জবাব দিবেন যাতে দাবিদারও চুস্ত আর মজবুত হয়, দুর্বল আর নকল দাবিদার কোনো মতেই মানা হবে না।
🟠 স্বামী যোগেন্দ্র পালজী -
মহর্ষি মনু বলেছেন যে পরমেশ্বর হল তার দাবিদার -
অগ্নিবায়ুরবিভ্যস্তু ত্রয়ম্ ব্রহ্ম সনাতনম্।
দুদোহ য়জ্ঞসিদ্ধ্যর্থমৃগ্যজুঃ সামলক্ষণম্।।
(মনুঃ ১|২৩)
অর্থাৎ - সেই পরমেশ্বর বেদকে ঋষিদের হৃদয়ের মধ্যে প্রকট করে, তারপর তারা উপদেশ করে। হিন্দুরা ব্রহ্মার থেকে বলে কি বলে না সেটা এই তর্কের সঙ্গে হিন্দুদের কোনো সম্বন্ধ নেই, কারণ তর্কটা আর্য সমাজের সঙ্গে হচ্ছে, মৌলানা সাহেব! হিন্দুদের সঙ্গে নয়। অন্যথা আমিও বলতে পারি যে - শেখরা বলে যে বর্তমান কুরআন অহলে সুন্নত ও জ্জমাত, ব্যাজ উসমানী অর্থাৎ বর্তমান কুরআন কেবল সুন্নত জমাতীদের, কারণ এটা খলীফা উস্মানের সংগ্রহ করা, দেখুন - "তোহফা অসনা অসরীয়া বো ক্রসফুল অন রুল বসায়র"।
অন্যকে নিজের সন্তান বানানো এটা বিষয়ান্তরে যাওয়া হবে, আপনি নিজের শর্তের নিষেধাজ্ঞা করেন নি, এখন আমি বলছি যে - "মুত্তা" (অন্যের কোনো স্ত্রীকে টাকা দিয়ে এক দুই রাতের জন্য নিজের বানিয়ে নেওয়া) এরকম জঘণ্য প্রথা কুরআনের মধ্যে উপস্থিত আছে, শয়তানের সঙ্গে খুদার মুবাহিসা (শাস্ত্রার্থ) কুরআনের মধ্যে উপস্থিত আছে। দেখুন - "কুরআন সুরত, ঐরাফ অসাদুল্-হজর ব বকর" আরও দেখুন - "মুবাহিসা তকজীব বরাহীন অহমদিয়া জিল্দ ১" আপনি মিথ্যা বলেছেন আর সত্য থেকে সরে পড়েছেন। খুদা শয়তানকে মোহগ্রস্ত করে, শয়তান যখন "ফীহা অগোতেনী" বলে তো খুদা কোনো জবাব দেয় নি, ব্যস খুদা স্বয়ংই হেরে যায়।
আকাশ জিনিসটা কি যাকে আপনি দেখেন? বিজ্ঞানের কোনো পুস্তকের উদাহরণ দিবেন, এর অতিরিক্ত কুরআন দুরাচার আর মদ্যপানের শিক্ষা দেয় যা শরহ ও কবায়দ তবিয়া (স্পষ্টভাবে মানবতার) বিরুদ্ধ। এরমধ্যে না তো তিব্বীয়াত্ (চিকিৎসার) বিবৃতি আছে, আর না আত্মিক জ্ঞান আর না কোনো দার্শনিকতার কোনো কথা আছে অর্থাৎ কুরআন অপরাধ করার শিক্ষা বলপূর্বক দেয়, আর গুনাহগারী (অপরাধের) ইলজাম (দোষ) খুদাকে দেয়। আর কুরআনই হল সমস্ত বদকারীদের মূল, আমি বেদের মন্ত্র আর উদাহরণ পেশ করেছি যে বেদ হল পরমেশ্বরের জ্ঞান। আপনি এর একদম ধ্যান দেন নি আর শরবতের মতো গিলে নিলেন। (জনতার মধ্যে হাসি) আমি আমার প্রত্যেকটা দাবি প্রমাণ সহিত পেশ করি। আর আপনি একথা মাথায় রাখবেন যে লাফ-গজাফ (মিথ্যা কথার) পদ্ধতিটা কুরআনের, আমাদের না। (টার্ন)
Note: যেসময় একথা স্বামীজী বলা শুরু করেছিলেন তো মাঝখানে মৌলবী সাহেব সভ্যতা এবং শর্তের বিরুদ্ধে উল্টো-পাল্টা বলে বিঘ্ন ঘটাতে চান, চুপ করে বসে না শুনে বরং খুব জোরে-জোরে চিৎকার করতে থাকেন। এই বিঘ্ন আর চিৎকার চেঁচামেচি উদ্দেশ্য এটাই ছিল যে স্বামীজীর কথা যেন শ্রোতাগণ শুনতে না পারে, এইজন্য প্রধানজী দাঁড়া হয়ে ওনাকে বলপূর্বক মানা করে চুপ করান। এই সবের মধ্যেই আর্যপক্ষের ১৫ মিনিটের সমস্ত সময়টা সমাপ্ত হয়ে যায়।
(চলবে)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ