"ধর্ম জিজ্ঞাসমানানাং প্রমাণং পরমং শ্রুতিঃ।।" (মনুস্মৃতি, ২/১৩)
অর্থাৎ— যে ধর্মের বিষয়ে জ্ঞান প্রাপ্ত করতে চায় তাহার জন্য বেদই মূখ্য প্রমাণ।
অর্থাৎ— যে ধর্মের বিষয়ে জ্ঞান প্রাপ্ত করতে চায় তাহার জন্য বেদই মূখ্য প্রমাণ।
মনুমহারাজের মনুস্মৃতিতে বর্ণব্যবস্থা পাওয়া যায় তা জাতি প্রথা নয়। বর্ত্তমান যে জাতিভেদ বা জাতি প্রথা দৃশ্যমান হয় তা তথাকথিত ব্রাহ্মণ সমাজ দ্বারা প্রচলিত। বর্ণ অর্থাৎ বরন করা গুণ-কর্ম্ম-স্বভাব আর জাতি যা জন্ম প্রমূখ হয়ে থাকে। আর মনুস্মৃতিতে যে জাতি বোঝানো হয়েছে তা একজাতি [মনু ২।১২৬, ২।১৬৯, ২।১৭০, ২।১৭২, ২০।৪] ও দ্বিজাতি। একজাতি শূদ্রের যার বিদ্যা জন্ম হয় না, আর অন্য তিন বর্ণ দ্বিজাতি [মনু ২০।৪ ] যারা শিক্ষা প্রাপ্ত দ্বারা দ্বিতীয় জন্ম প্রাপ্ত হয়। মনুস্মৃতিতে জন্মতগ ব্রাহ্মন ক্ষত্রিয়ের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। সেকানে পৃথক পৃথক কর্মের ভিত্তিতে বর্ণ অর্থাৎ বরনের কথা বলা হয়েছে। জাতি ব্যবস্থা হয় না কারন কারো জাতি পরিবর্ত্তন করা যায় না। মনুষ্য জাতি মনুষ্য থাকবে তা বৃক্ষ জাতিতে পরিবর্ত্তন হবে না।
মনুস্মৃতি ১০।৬৫তে গুণ কর্ম্ম স্বভাবে বর্ন পরিবর্ত্তনের কথা পাওয়া যায়। তা ছাড়া মনু ৩৪।৪০..৪।২৪৫..৯।৩৩৫ গীতা ৪।১৩ তেও একিরূপ কর্ম্মের ভিত্তিতে বর্ণের উল্লেখ পাওয়া যায়।
মনু বর্তমান কালের দলিত, অনগ্রসর ও উপজাতীয় জাতিকে শূদ্র বলে অভিহিত করেননি, কিন্তু যিনি পড়াশোনা-অধ্যয়নের পূর্ণ সুযোগ দিয়েও পড়াশোনা করতে পারেননি এবং শুধুমাত্র শারীরিক শ্রম দিয়ে সমাজসেবা করতে পারেননি, তিনিই শূদ্র।
মনু শ্লোক 10.4-এ বৈদিক বর্ণ ব্যবস্থার প্রভাবের কারণে এখনও উচ্চ বর্ণের লোকেরা 'দ্বিজাতি' এবং শূদ্র 'একজাতি' নামে পরিচিত। শূদ্রদের প্রতি কোনো বৈষম্য নেই এবং নেই কোনো উঁচু-নিচু, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি। এটাই ছিল মনুর বর্ণ ব্যবস্থার আসল রূপ।
বৈদিক বর্ণ ব্যবস্থায় সমাজ চারটি সম্প্রদায়ে সংগঠিত, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। যতদিন ব্যক্তিগণ যোগ্যতা ও কর্মের ভিত্তিতে এই সম্প্রদায়গুলিকে নির্বাচন করতে থাকে, ততক্ষণ একে বর্ণ ব্যবস্থা বলা হত। যখন জন্মগত ভাবে ব্রাহ্মণ, শূদ্র প্রভৃতিতে বিশ্বাসী হতে শুরু করে, তখন এটি একটি জাতি প্রথায় বা জাতিব্যবস্থায় পরিণত হয়। বর্ণ শব্দের মূল-প্রত্যয় অর্থ নিজেই নির্দেশ করে যে এই ব্যবস্থা যখন গঠিত হয়েছিল, তখন এটি জন্মগতভাবে নয়, যোগ্যতা-কর্ম-ক্ষমতা অনুসারে নির্বাচিত হয়েছিল।
যোহবমন্যেত তে মূলে হেতুশাস্ত্রাশ্রয়াদ্ দ্বিজঃ।
স সাধুভি র্বহিষ্কার্যো নাস্তিকো বেদনিন্দকঃ।। ২ / ১১ -মনুসংহিতা
অর্থাৎ : যে দ্বিজ হেতুশাস্ত্র অর্থাৎ অসৎ-তর্ককে অবলম্বন ক’রে ধর্মের মূলস্বরূপ এই শাস্ত্রদ্বয়ের (শ্রুতি ও স্মৃতির) প্রাধান্য অস্বীকার করে (বা অনাদর করে), সাধু ব্যক্তিদের কর্তব্য হবে- তাকে সকল কর্তব্য কর্ম এবং সমাজ থেকে বহিষ্কৃত করা (অর্থাৎ অপাংক্তেয় ক’রে রাখা)। কারণ, সেই ব্যক্তি বেদের নিন্দাকারী, অতএব নাস্তিক।
স সাধুভি র্বহিষ্কার্যো নাস্তিকো বেদনিন্দকঃ।। ২ / ১১ -মনুসংহিতা
অর্থাৎ : যে দ্বিজ হেতুশাস্ত্র অর্থাৎ অসৎ-তর্ককে অবলম্বন ক’রে ধর্মের মূলস্বরূপ এই শাস্ত্রদ্বয়ের (শ্রুতি ও স্মৃতির) প্রাধান্য অস্বীকার করে (বা অনাদর করে), সাধু ব্যক্তিদের কর্তব্য হবে- তাকে সকল কর্তব্য কর্ম এবং সমাজ থেকে বহিষ্কৃত করা (অর্থাৎ অপাংক্তেয় ক’রে রাখা)। কারণ, সেই ব্যক্তি বেদের নিন্দাকারী, অতএব নাস্তিক।
"বর্ণঃ বৃণোতে"[নিরুক্ত ২।১৪]=বরণ করনে সে "বর্ণ" কহলাতা হ্যায়।।
কিন্তু জাতি অর্থ "জন্ম" অর্থ মনুস্মৃতি তে মনুজীর বিচার।
দ্বিজাতি (নিরুক্ত ১০।৪)= দ্বিজ, অর্থাৎ দ্বিতীয়বার জন্ম
একজাতি (নিরুক্ত ১০।৪)= শুদ্র, কারন শুদ্রের বিদ্যাজন্ম হয় না, এক জন্মই হয়।
মনুকে যদি আমরা জাতিব্যবস্থাপক মনে করি, তাহলে মনুস্মৃতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য বৃথা হবে, কারণ মনুস্মৃতিতে বিভিন্ন শ্রেণীর জন্য বিভিন্ন কর্মের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন ব্যক্তি জন্ম থেকেই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শূদ্র বলা শুরু করলে, সে বিহিত কাজ করুক বা না করুক, সে সেই বর্ণেই থাকবে। তার জন্য কর্মের নিয়ম অর্থহীন। মনু যে পৃথক কর্ম নির্ধারণ করেছেন তা প্রমাণ করে যে তিনি কর্ম অনুসারে বর্ণ পদ্ধতি অনুসরণ করেন, জন্ম দ্বারা নয়।
বর্ণ ব্যবস্থায় বর্ণ পরিবর্তনের আইন - বর্ণ ব্যবস্থা এবং জাতি ব্যবস্থার মধ্যে একটি বড় পার্থক্য হল যে বর্ণের পরিবর্তন বর্ণ ব্যবস্থায় ঘটতে পারে এবং একজন ব্যক্তির বর্ণ পরিবর্তন করার স্বাধীনতা রয়েছে,
যেখানে জাতিব্যবস্থায় যেখানে একজন জন্মগ্রহণ করেন, সেখানে জীবনপর্যন্ত একই জাতিতে রয়ে যায়। এই বিষয়ে মনুস্মৃতির বিখ্যাত ১০।৬৫ শ্লোক দ্রষ্টব্য
शूद्रो ब्राह्मणताम् एति, ब्राह्मणश्चैति शूद्रताम् ।
क्षत्रियात् जातमेवं तु विद्याद् वैश्यात्तथैव च ।।
মনুস্মৃতি {pdf} Dr. Surendra Kumar
মনুস্মৃতির প্রমাণ
শূদ্রো ব্রাহ্মণতামেতি ব্ৰাহ্মণশ্চেতি শূদ্ৰতাম্ ।
ক্ষত্রিয়াজ্জাতমেবস্তু বিদ্যাদ্বৈশ্যাত্তথৈব চ।।-মনুস্মৃতি ১০।৬৫
- অতি উত্তম গুণ কর্ম্ম স্বভাববের জন্য শূদ্রকূলে উৎপন্ন পুরুষ ব্রাহ্মণ হয়। তেমন নিকৃষ্টতম গুণ কর্ম্ম স্বভাব ধারনের জন্য ব্রাহ্মণকূল পুরুষ শূদ্রতা প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ, কেউ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্যকূলে জন্মগ্রহণ করে শূদ্রের গুণ-কর্ম-স্বভাব বিশিষ্ট হলে সে শুদ্র হবে। ব্রাহ্মণ বা শূদ্রের গুণ-কর্ম্ম-স্বভাব প্রাপ্ত হওয়ায় ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও ব্রাহ্মণ ও শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়। বস্তুত, চার বর্ণের মধ্যে যে, যে বর্ণের সদৃশ হবে,সে সেই বর্ণেরই হবে।
ইহা ঋগ্বেদের ৯।১১২।৩ মন্ত্রতে দেখতে পাওয়া যায়।
কারুরহং ততো ভিষগুপলপ্রক্ষিণী নানা।
নানাধিয়ো বসূযবোহনু গা ইব তস্থিমেন্দ্রায়েন্দো পরি স্রব।। [রমেশচন্দ্র দত্ত]
অর্থাৎ-ব্রাহ্মণ বৈশ্য শূদ্র বিভিন্ন কার্যের পরিপেক্ষিতে বিভাজন হয় তা পরিলক্ষিত হয়।
আবার যজুর্বেদ-৩০/৫
ব্রহ্মণে ব্রাহ্মণম্ ক্ষত্রায় রাজন্যম্
মরুদভ্যো বৈশ্যম্ তপসে শূদ্রম্।। যজুর্বেদ-৩০/৫
ব্রাহ্মণের কার্য হয়-ব্রহ্মকার্য অর্থাৎ জ্ঞান ও শিক্ষা দ্বারা সম্বন্ধ সমস্ত কার্য, ক্ষত্রিয়ের কর্তব্য হয়-ক্ষর্ত্রকার্য অর্থাৎ রাষ্ট্র রক্ষা এবং রাষ্ট্রের সকল প্রজাদিগের সুবিধা-অসুবিধা দেখা। বৈশ্যের কার্য হয়-মরুত অর্থাৎ বায়ুর তুল্য সমস্ত স্থান হইতে বস্তু সংগ্রহ এবং তাঁহা যথাস্থানে পৌঁছাইয়া ব্যাবসাদি করা। শূদ্রের কার্য হয়-তপ অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে শ্রমসাধ্য সমস্ত কঠিন পরিশ্রম কর্ম করা।
যথা কাষ্ঠময়ো হস্তী যথা চর্মময়ো মৃগঃ।
যশ্চ বিপ্রোহনধীয়ানস্ত্রয়স্তে নাম বিভ্রতি।।-মনুস্মৃতি ২।১৫৭
--যেমন কাষ্ঠ নির্মিত হাতি ও চামড়ার তৈরি মৃগ তেমনি যে ব্রাহ্মণ বেদ অধ্যয়ন করেন না, ব্রাহ্মন হয়েও অন্যকূল / বর্ণ প্রাপ্ত হয়।
যোহনধীত্য দ্বিজো বেদমন্যত্র কুরুতে শ্রমম্।
স জীবন্নেব শূদ্রত্বমাশু গচ্ছতি সান্বয়ঃ।।-মনুস্মৃতি ২।১৬৮
--- ব্রাহ্মণ আদি তিন বর্ণ, বেদ অধ্যয়ন ত্যাগ করে অন্যান্য কর্ম্মে অত্যন্ত যত্ন করেন তিনি জীবিত অবস্থাতেই অতি শীঘ্র শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হন।
শূদ্রের সাথে কোন বর্ণ বৈষম্য এবং উচ্চ-হীনতা অস্পৃশ্যতার ব্যাপার নেই। এটা মনু মহারাজের বর্ন ব্যবস্থা বা পদ্ধতি। ব্রাহ্মণ কূলে জন্মগ্রহণ করলেই কেউ ব্রাহ্মণ হয় না। ব্রাহ্মণত্ত্ব, গুণ ও কর্ম দ্বারা অর্জিত হত।
স্বাধ্যায়েন ব্রতৈহোমৈস্ত্রৈবিদ্যেনেজ্যয়া সুতৈঃ।
মহাযজ্ঞৈশ্চ যজৈশ্চ ব্রাহ্মীয়ং ক্রিয়তে তনুঃ।।-মনুস্মৃতি ২।২৮
---বেদের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা,হোম ও পঞ্চ মহাযজ্ঞ পালন, ধর্ম অনুসারে সন্তান উৎপাদন ইত্যাদি ব্রহ্মণের কাজ।
বিহিত কর্মের ত্যাগের দ্বারা বর্ণের পরিবর্তন - মনুস্মৃতিতে এমন ডজন ডজন শ্লোক আছে, যেখানে বিহিত কর্মের ত্যাগ এবং খারাপ কাজের কারণে দ্বিজদের শূদ্র শ্রেণীতে গণনা করা হয়েছে [দ্রষ্টব্যঃ ২।৩৭, ২।৪০,২।১০৩,২।১৬৮, ৪।২৪৫ ইত্যাদি শ্লোক]।
এবং শূদ্রদের থেকে শ্রেষ্ঠ কর্ম দ্বারা উচ্চ বর্ণ প্রাপ্তির একই বিধান আছে [মনু০৯।৩৩৫]
মনুস্মৃতি ৯।৩৩৫ - শরীর এবং মন দ্বারা শুদ্ধ - পবিত্র এবং উৎকৃষ্ট লোকের সান্নিধ্যে স্থিত। মিষ্টিভাষী, অহংকার রহিত, নিজ থেকে উৎকৃষ্ট বর্ণের সেবাকারী শুদ্রও উত্তম ব্রহ্ম জন্ম বা দ্বিজ বর্ণকে প্রাপ্ত করতে পারে।
উদাহরনঃ
চন্ডালের ঘরে জন্মগ্রহণকারী এক ঋষি 'মাতঙ্গ'।
ক্ষত্রিয় বংশে জন্মগ্রহণকারী রাজা বিশ্বামিত্র ব্রহ্মর্ষি হন।
অজানা বংশের সত্যকামা জাবাল ব্রহ্মবাদী ঋষি হয়েছিলেন।
দাসীপুত্র বিদুর রাজা ধৃতরাষ্টের মহামন্ত্রী হয়েছিলেন।
ঋষি পুলস্ত্যের বংশধর লঙ্কাধিপতি রাবণকে 'রাক্ষস' বলা হত।
বিশ্বামিত্রের অনেক পুত্রকে শূদ্র বলা হত।
রামের পূর্বপুরুষ রঘুর পুত্র 'প্রবৃদ্ধ' নিচু কাজের কারণে ক্ষত্রিয়দের থেকে বিতাড়িত হয়ে 'রাক্ষস' হয়েছিলেন।
মনুস্মৃতি ৩।১১২ - শুদ্র বা বৈশ্য অতিথি রূপে আসলে ব্রাহ্মণ তাকে সম্মানের সহিত ভোজন করাবেন।
মনৃস্মৃতি ৩।১১৬ - আপন সেবক (শুদ্র) কে প্রথম ভোজন করানোর পর দম্পতি ভোজন করবেন।
মনৃস্মৃতি ৩।১১৬ - আপন সেবক (শুদ্র) কে প্রথম ভোজন করানোর পর দম্পতি ভোজন করবেন।
আমাদের বর্তমান সময়ের প্রশাসনিক ও ব্যবসায়িক ব্যবস্থার তুলনা করুন এবং দেখুন, মনুর বিষয়টি সহজেই বোঝা যাবে এবং জানা যাবে যে মনুর এবং আজকের ব্যবস্থার মধ্যে একটি মৌলিক মিল রয়েছে। সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় চারটি শ্রেণী রয়েছে- ১. প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা, 2. দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা, এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। এর মধ্যে প্রথম দুই শ্রেণির কর্মকর্তা, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী। এই বিভাজন যোগ্যতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং এর ভিত্তিতে তাদের গুরুত্ব, সম্মান ও অধিকার রয়েছে। এই পদগুলির জন্য যোগ্যতার প্রত্যয়ন আগেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (গুরুকুল, আশ্রম, আচার্য) দ্বারা করা হয়েছিল এবং আজও এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি) দ্বারা করা হয়। শিক্ষার কোনো সনদ না থাকায় স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত ব্যক্তি শুধুমাত্র চাকরি ও কায়িক শ্রমের কাজ করে এবং সে শেষ কর্মচারী ক্যাটাগরিতে আসে। আগেও যিনি গুরুর কাছে গিয়ে শিক্ষা পাননি, তিনি একই স্তরের কাজ করতেন এবং তাঁর বিশেষ্য ছিল 'শূদ্র'। শূদ্র শব্দের অর্থ হল- 'আদেশ বাহক' ইত্যাদি নিম্ন মর্যাদার। নরক, চাকর, সেবক, সর্বেট, নিম্ন শ্রেণীর কর্মচারী ইত্যাদি
বিশেষ্যের মধ্যে কতটা অর্থ রয়েছে তা আপনি নিজেই দেখুন। পেশার সংজ্ঞাতেও তেমন পার্থক্য নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডাক্তার, আইনজীবী, শিক্ষক প্রভৃতি ডিগ্রি অর্জনের পরই পেশার অনুমতি দেওয়া হয়, তা ছাড়া নয়। প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট নিয়ম ও কর্তব্য আছে। যারা তাদের কথা মানে না তাদের ব্যবসা ও অফিসের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এখন পর্যন্ত কোনো না কোনো কারণে নিজেকে 'শূদ্রকোটি' ভাবে, অথবা তাদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, মনুকে ধর্মগুরু মনে করা এবং মনুর নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণকারী 'আর্য সমাজ' তাকে যে কোনো বর্ণে দীক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানায়। মেধার জন্য এবং তাদের ব্যবহারিক সুযোগ দেয়। আজকের সংবিধান যখন প্রণীত হয়নি, তখন মহর্ষি দয়ানন্দ মনুস্মৃতির আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অস্পৃশ্য [ছুত-অছুত], উঁচু-নিচু, জাতি-পাতি, নারী ও শূদ্রদের শিক্ষা দেননি এমন। বাল্যবিবাহ, অমিল-বিবাহ, বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা, শোষণ ইত্যাদিকে সামাজিক কুফল ঘোষণা করে তিনি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। মহিলাদের জন্য গুরুকুল ও বিদ্যালয় খোলেন। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূদ্রদের ভর্তি করা হয়েছে, ফলে সেখানে শিক্ষিত শত শত দলিত সংস্কৃত ও বেদের পণ্ডিত হয়েছেন। দলিত বর্ণের লোকেরা কেন ভুলে যায় যে তাদের অস্পৃশ্যতা দূর করার জন্য কত আর্য সমাজী নিজেরা 'অস্পৃশ্য' হয়ে গেল,
মনুর অনুসারী ও ঋষি দয়ানন্দের শিষ্যগন তাও সংগ্রাম ছাড়েনি। এই ঘটনাগুলি সম্পর্কে অনিভিজ্ঞ দলিত লেখকরাও আর্য সমাজকে রঙিন চশমা দিয়ে দেখেন। এটা কি তাঁদের অকৃতজ্ঞতা নয়?
দলিত-অনগ্রসরদের শূদ্র বলা হয় না- আজকের যে জাতিগুলোকে দলিত, অনগ্রসর ও উপজাতি বলা হয়, তাদের মনুস্মৃতিতে কোথাও 'শুদ্র' বলা হয়নি। মনুর একটি বর্ণ ব্যবস্থা আছে, তাই সকল ব্যক্তির বর্ণ নির্ধারণ করা হয়েছে যোগ্যতা-কর্ম-ক্ষমতার ভিত্তিতে, বর্ণের ভিত্তিতে নয়। এই কারণেই শূদ্র বর্ণে কোনো বর্ণ গণনা করে বলা হয়নি যে অমুক জাতি 'শূদ্র'। পরবর্তীকালে সমাজ ও প্রশাসকরা সময়ে সময়ে কিছু বর্ণকে শূদ্র নাম দিয়ে শূদ্র শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করেন। কিছু মানুষ ভুল করে এর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে মনুর ওপর। পরবর্তী সমাজ বিকৃত ব্যবস্থার জন্য দোষী, কিন্তু মনু এর জন্য দোষী কি করে হন, কিরূপ দলিত প্রতিনিধিদের ন্যায় ?
বর্ত্তমান মনুস্মৃতি দেখলে দেখবেন শূদ্র সবর্ণ, শূদ্র সহ চার বর্ন কে সবর্ণ দেখানো হয়েছে। পরে পরে শূদ্রদের অসবর্ণ মানা হয়েছে মনু জী বৈশ্য বর্ণের অধীনে কারুশিল্প, শিল্পআদি ইত্যাদি লোকদের বিবেচনা করেছেন [ মনু ৩।৬৪, ৯।৩২৯, ১০।৯৯, ১০।১২০] কিন্তু পরবর্তীকালে সমাজ তাদেরকে শূদ্রকোটিতে নিয়ে আসে। মনু জী কৃষি পশুপালন বৈশ্যদের কাজ হিসাবে বিবেচনা করেছেন (মনু ১।৯০) কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা এই সকল কাল করে তা কি মনুর ব্যবস্থা ?
বর্ণব্যবস্থা বেদানুকূলঃ
[ঋগ্বেদ ১০।৯০।১১-১২]
[যজুর্বেদ ৩১।১০-১১]
[অথর্ব্ববেদ ১৯।৬।৫-৬]
ব্রাহ্মণহস্য মুখসাসীদ্ৰাহ্ রাজন্যঃ কৃতঃ।
উরূ তদস্য অদ্বৈশ্যঃ পদ্ধ্যাং শূদ্রোহঅজায়ত।। যজুর্বেদ-৩১।১১
-যিনি (অস্য) পূর্ণ ব্যাপক পরমাত্মার সৃষ্টিতে মুখের ন্যায় সকলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তিনি ( ব্রাহ্মণঃ) ব্রাহ্মণ। ( বাহু) 'বাহুবৈ বলং' বাহুবৈ বীর্য়্যম্ " শ০ ব্রা০ ৬.৩.২.৩৫। বল বীর্য্যের নাম 'বাহু'।যাহার মধ্যে ইহা অধিক, তিনি ( রাজন্যঃ) 'ক্ষত্রিয়'। ( উরূ) কটির আধোভাগ এবং জানুর উপরিভাগের নাম (উরূ) । যিনি সকল পদার্থের এবং সকল দেশে উরূবলে গমনাগমন এবং প্রবেশ করেন তিনি ( বৈশ্যঃ) 'বৈশ্য'। আর (পদ্ভ্যাম্) যে ব্যাক্তি পদ বা নিম্ন অঙ্গের ন্যায় মূর্খতাদি দুর্গুণ বিশিষ্ট সেই ব্যাক্তি 'শূদ্র'।
'য়স্মাদেতে মুখ্যাস্তস্মানমুখতো হ্যসৃজ্যন্ত' ইত্যাদি। যেহেতু ইহারা মুখ্য অতএব মুখ হইতে উৎপন্ন হইয়াছে এইরূপ বলা সঙ্গত। অর্থাৎ যেমন সকল অঙ্গের মধ্যে মুখ শ্রেষ্ঠ সেইরূপ যে মনুষ্যজাতির মধ্যে সম্পূর্ণাবিদ্যা এবং উত্তম গুণ-কর্ম স্বভাসম্পন্ন তাঁহাকে উত্তম 'ব্রাহ্মণ' বলে। যেহেতু পরমেশ্বর নিরাকার তাঁহার মুখাদি অঙ্গই নাই, অতএব মুখাদি হইতে উৎপন্ন হওয়া অসম্ভব, যথা-বন্ধান স্ত্রীর পুত্রের বিবাহ।
শূদ্যো ব্রাহ্মণতামেতি ব্রাহ্মণশ্চৈতি শূদ্রতাম্।
ক্ষত্রিয়াজ্জাতবেমস্তু বিদ্যাদ্ বৈশ্যাত্তথৈব চ।। মনু-১০।৬৫
যদি কেহ শূদ্রকূলে উৎপন্ন হইয়া ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্যের গুণ-কর্ম স্বভাব বিশিষ্ট হয় তবে সে শূদ্র,ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্য হইবে। সেইরূপ, কেহ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, অথবা বৈশ্যকূলে জন্মগ্রহণ করিয়া শূদ্রের গুণ-কর্ম স্বভাব বিশিষ্ট হইলে সে শূদ্র হইবে। এইরূপ কেহ ক্ষত্রিয় বৈশ্যকূলে জন্ম গ্রহণ করিয়া ব্রাহ্মণ অথবা শূদ্র সদৃশ হইলে, ব্রাহ্মণ অথবা শূদ্রই হইয়া যায় । অর্থাৎ যে পুরুষ বা স্ত্রী, চারি বর্ণের মধ্যে যে বর্ণের সদৃশ হইবে, সে সেই বর্ণেরই হইবে।
বর্ণ কেবল চারটাই পঞ্চম কোন বর্ণ হয় না
মনুস্মৃতি ১০।৪
-ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয় বৈশ্য এই তিন বর্ন দ্বিজাতি অর্থাৎ দো জন্ম [মাতা-পিতা দ্বারা শরীর প্রাপ্ত ও পরে গুর পিতা ও সাবিত্রি মাতা দ্বারা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে দ্বিজ]। অন্য এক জাতি শূদ্র ইহ এক জন্মবালা কারণ গুরুর নিকট শিক্ষা প্রাপ্ত হওয়ার পরেও এরা শূদ্র অর্থাৎ মূর্খ বা অন্য বর্ণ প্রাপ্ত হয় না, শূদ্রই থেকে যায়।
সকলে জন্মগত গুণ-কর্ম্ম স্বভাব অনুযায়ী মনুষ্য ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয় শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হয় মনুস্মৃতি ১০।৬৫
যজুর্বেদ-২৬/২ বেদ জ্ঞান সকল মনুষ্যের জন্য কোন নির্দিষ্ট বর্ণের জন্য বা গোষ্ঠির জন্য নয়।
য়থেমাং বাচং কল্যাণীমাবদানি জনেভ্যঃ।
বহ্মরাজন্যাভ্যাং শূদ্রায় চর্য়্যায় চ স্বায় চারণায়।।
-অর্থাৎ পরমাত্মার উপদেশ হয় যে-ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, আর্যজন অনার্যজন সমস্ত মনুষ্য মাত্রের জন্য বেদের উপদেশ করিয়াছি, তদ্রুপ তোমরাও কর। এহীতি সমস্ত মনুষ্য মাত্রের জন্য বেদের উপদেশ করিয়াছি, তদ্রুপ তোমরাও কর।
মনুস্মৃতি প্রক্ষিপ্ত তা বোঝার উপায়
মনু মহারাজ মনুস্মৃতি ২।১৩ তে লিখেছেনঃ-
অর্থকামেষবসক্তানাং ধর্মজ্ঞানং বিধীয়তে।
ধর্মং জিজ্ঞাসমানানাং প্রমাণং পরমং শ্রুতিঃ।। মনুস্মৃতি ২।১৩
অর্থ-যাঁরা অর্থ ও কামে আসক্ত নন,ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান তাঁদেরই হয়।আর, ধর্মজিজ্ঞাসু ব্যক্তিগনের কাছে বেদই সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ।(যেখানে শ্রুতি বা বেদ ও স্মৃতির মধ্যে বিরোধ উপস্থিত হবে, সেখানে শ্রুতি বা বেদের মতই গ্ৰাহ্য।এই কারণে,শ্রুতি বা বেদকে, সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ বলা হয়েছে)
এছাড়া মনুস্মৃতি ২।৮ এ উল্লেখ করেছেন
বিদ্যানদের উচিত ধর্ম্মশাস্ত্রকে জ্ঞান নেত্র ও বেদপ্রমাণ দ্বারা যাচাই করা। যা বেদানূকূল তাই মান্যতা দেওয়া।
মনুস্মৃতি ১২।১০৫ ধর্ম্ম বিষয়ে জানতে হলে অনুমান প্রমান, প্রতক্ষ্য প্রমাণ বিভিন্ন প্রকার আগামশাস্ত্র যাচাই করা উচিৎ।
যা বেদবাহ্যাঃ স্মৃতয়ো যাশ্চ কাশ্চ কুহষ্টয়ঃ।
সর্বাস্তা নিষ্ফলাঃ প্রেত্য তমোনিষ্ঠা হি তাং স্মৃতাঃ।।-(মনুস্মৃতি ১২।৯৫)
অর্থঃ যে সকল স্মৃতি বেদবহির্ভূত, আর যে সকল শাস্ত্র বেদবিরুদ্ধ কুতর্কমূলক, সে সকল শাস্ত্র নিষ্ফল জানিবে, সেই সকল শাস্ত্র তমঃকল্পিত মাত্র।
উত্পদ্যন্তে চ্যবন্তে চ যান্যতোন্যানি কানিচিত।
তান্যর্বাককালিকতয়া নিষ্ফলান্যনুতানি চ।।-(মনুস্মৃতি ১২।৯৬)
-যে সকল শাস্ত্র বেদমূলক নয়, বরং পুরুষ-কল্পিত, কালক্রমে তারা উৎপন্ন হয় এবং বিনষ্ট হয়। আধুনিক এসব শাস্ত্রকে নিষ্ফল ও মিথ্যা বলে জানবে।
সুতরাং, মনুস্মৃতিও প্রক্ষিপ্ত হতে পারে!!! এবং বেদবিরুদ্ধ কোনো শ্লোক প্রকৃত মনুস্মৃতিতে থাকা সম্ভব নয়। আর তাই বেদ বিরুদ্ধ কিছু মনুস্মৃতিতে খুজে পেলে তা অবশ্যই বর্জনীয়।
অষ্টাপাদ্যং তু শূদ্রস্য স্তেয়ে ভবতি কিল্বিষম্।
ষোড়শৈব তু বৈশ্যস্য দ্বাত্রিংশৎ ক্ষত্রিয়স্য চ।।-মনু ৮/৩৩৭
ব্রাহ্মণস্য চতুঃষষ্টিঃ পূর্ণং বাপি শতং ভবেৎ।
দ্বিগুণা বা চতুঃষষ্টিস্তদ্দোষগুণবিদ্ধি সঃ।। -মনু ৮/৩৩৮
পদার্থঃ- (তত দোষগুণবিৎ হি সঃ) যে সামান্য বিবেকি হয়ে (স্তেয়ে) চুরি করে (শূদ্রস্য তু অষ্টাপাদ্যম্) সেই শূদ্রকে চুরির জন্য আট গুণ (বৈশ্যস্য তু ষোড়শ + এব) বৈশ্যকে ষোল গুণ (ক্ষত্রিয়স্য দ্বাত্রিংশৎ) ক্ষত্রিয়কে বত্রিশ গুণ (ব্রাহ্মণস্য চতুঃ ষষ্টিঃ) ব্রাহ্মণকে চৌষট্টি গুণ (অপি বা শতম্) বা শত গুণ (বা) অথবা (দ্বিগুণা চতুঃ ষষ্টি) একশত আটাশ গুণ (কিলিবষং ভবতি) দণ্ড হওয়া উচিত।
অনুবাদঃ- যে সামান্য বিবেকি হয়ে চুরি করে সেই শূদ্রকে চুরির জন্য আট গুণ বৈশ্যকে ষোল গুণ ক্ষত্রিয়কে বত্রিশ গুণ ব্রাহ্মণকে চৌষট্টি গুণ বা শত গুণ অথবা একশত আটাশ গুণ দণ্ড হওয়া উচিত অর্থাৎ যে যতবেশি জ্ঞানী হয়ে চুরি করে সে তত অধিক দণ্ড প্রাপ্ত হবে।
ষোড়শৈব তু বৈশ্যস্য দ্বাত্রিংশৎ ক্ষত্রিয়স্য চ।।-মনু ৮/৩৩৭
ব্রাহ্মণস্য চতুঃষষ্টিঃ পূর্ণং বাপি শতং ভবেৎ।
দ্বিগুণা বা চতুঃষষ্টিস্তদ্দোষগুণবিদ্ধি সঃ।। -মনু ৮/৩৩৮
পদার্থঃ- (তত দোষগুণবিৎ হি সঃ) যে সামান্য বিবেকি হয়ে (স্তেয়ে) চুরি করে (শূদ্রস্য তু অষ্টাপাদ্যম্) সেই শূদ্রকে চুরির জন্য আট গুণ (বৈশ্যস্য তু ষোড়শ + এব) বৈশ্যকে ষোল গুণ (ক্ষত্রিয়স্য দ্বাত্রিংশৎ) ক্ষত্রিয়কে বত্রিশ গুণ (ব্রাহ্মণস্য চতুঃ ষষ্টিঃ) ব্রাহ্মণকে চৌষট্টি গুণ (অপি বা শতম্) বা শত গুণ (বা) অথবা (দ্বিগুণা চতুঃ ষষ্টি) একশত আটাশ গুণ (কিলিবষং ভবতি) দণ্ড হওয়া উচিত।
অনুবাদঃ- যে সামান্য বিবেকি হয়ে চুরি করে সেই শূদ্রকে চুরির জন্য আট গুণ বৈশ্যকে ষোল গুণ ক্ষত্রিয়কে বত্রিশ গুণ ব্রাহ্মণকে চৌষট্টি গুণ বা শত গুণ অথবা একশত আটাশ গুণ দণ্ড হওয়া উচিত অর্থাৎ যে যতবেশি জ্ঞানী হয়ে চুরি করে সে তত অধিক দণ্ড প্রাপ্ত হবে।
মনুস্মৃতি ও নারীঃ-
মনু বৈদিক ঐতিহ্যে, নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করে, 'মা'কে প্রথম গুরু হিসাবে সম্মান করা হয়েছিল। মনু একই ঐতিহ্যের অন্তর্গত। মহর্ষি মনু হলেন পৃথিবীর প্রথম মহাপুরুষ যিনি নারী সম্পর্কে এমন এক সর্বোত্তম আদর্শ ঘোষণা করেছেন, যা নারীর মর্যাদা, গৌরব ও সমতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। পৃথিবীর কোন পুরুষ কোন নারীকে এত অহংকার ও সমতুল্য দেয়নি।
যত্র নার্য্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।
যত্রৈতাস্তু ন শোচন্তি তু যত্রৈতা বর্দ্ধতে তদ্ধি সর্বদা।।-মনুস্মৃতি-৩/৫৬
-যে কূলে স্ত্রীলোক আদৃত হন সেকানে দেবতারা প্রসন্ন হয় অর্থাৎ দিব্যগুণ ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি হয়, যেখানে অনাদর সেখানে সৎক্রিয়া নিষ্ফল হয়।।
পদার্থ-( যত্র নার্যঃ তু পূজ্যন্তে) যে গৃহে স্ত্রীদের সম্মান করা হয় ( রমন্তে তত্র দেবতাঃ) সেখানেই দেবতা বাস করেন দেবতা অর্থাৎ ঐশ্বরিক গুণাবলী, ঐশ্বরিক সন্তান, দৈব সুবিধা প্রভৃতি। ( যত্র এতাঃ তু ন পুজ্যন্তে) যেখানে তারা সম্মানিত হয় না ( সর্বাঃ তত্র অফলাঃ ক্রিয়াঃ) সেখানে সমস্ত কর্ম ব্যর্থ হয়।-( ভাষ্য-গঙ্গা প্রসাদ উপাধ্যায়)
এই শ্লোকে যে শুধু নারী জাতির প্রশংসা করা হয়েছে তা নয়; বরং প্রকৃত বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। যে ব্যক্তি মাতৃশক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল বা যে জন গোষ্ঠি তা করে তারা অনেক উচ্চস্থান প্রাপ্তও হয়।। মহর্ষি মনুর এই উপদেশকে অবজ্ঞার পরিনাম যেমন আমরা নিজেরা দেখেছি তেমন আজ ইউরোপ ও মুসলীম রাষ্ট্রগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে নারীর অবমাননা ও তার পরিনাম দেখতে পাই। নারীদের জন্য ব্যবহৃত অনুরূপ এবং সুন্দর বিশেষণ এর চেয়ে আর কোন প্রমাণ হতে পারে না, যা নারীর প্রতি মনুর অনুভূতিকে বোঝায়। তারা বলেন, নারীরা ঘরের সৌভাগ্যের বাহক, সম্মানের যোগ্য, ঘরের আলো, ঘরের সৌন্দর্য, গৃহকর্ত্রী, ঘরের মালিক, ঘরের স্বর্গ এবং পৃথিবীর ভিত্তি।
তস্মাদেতাঃ সদা পূজ্যা ভূষণাচ্ছাদনাশনৈঃ।
ভূতিকামৈর্নরির্নিত্যম্ সত্করেষুত্সবেষু।।-মনুস্মৃতি-৩/৫৯
-স্ত্রীদের সর্ব্বদা সন্মান করা উচিত।।
পদার্থ-(তস্মাত্) অতএব ( এতাঃ সদা পূজ্যঃ) এই স্ত্রীদের সদা সম্মান করা উচিত ( ভূষণ-আচ্ছাদন+অশনৈঃ) গয়না বস্ত্র ও ভোজনে ( ভূতিকামৈঃ নরৈঃ) বিভূতির আকাঙ্খিত ব্যক্তিদের দ্বারা। ( নিত্যম্) সদা ( সত্কাররেষু উত্সবেষু চ) উত্তম কর্ম ও উদযাপনে।।-( ভাষ্য-পণ্ডিত গঙ্গা প্রসাদ উপাধ্যায়)
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সন্তুষ্টির মাধ্যমেই পরিবারের কল্যাণ সাধিত হয়।
যস্মিন্নেব কুলে নিত্যম্ কল্যাণম্ তত্র বৈ ধ্রুবম্। (মনুস্মৃতি ৩।৬০)
यस्मिन्नेव कुले नित्यं कल्याणं तत्र वै ध्रुवम्॥
অর্থ- 'যে পরিবারে ভার্য = স্বামী স্ত্রীর আচরণে সন্তুষ্ট এবং স্ত্রী স্বামীর আচরণে সন্তুষ্ট, সেই পরিবারের অবশ্যই কল্যাণ হয়।'
पितृभिः भ्रातृभिश्चैताः पतिभिर्देवरैस्तथा।
पूज्याः भूषयितव्याश्च बहुकल्याणभीप्सुभिः॥
পিতৃভির্ভ্রাতৃভিশ্চৈতাঃ পতিভির্দেবরৈস্তভিঃ।
পূজ্যা ভূষয়িতব্যাশ্চ বহুকল্যাণমীপ্সুভিঃ।। মনুস্মৃতি-৩/৫৫
-নারীদের সন্মান ও সুখ সুবিধা কল্যাণ করা উচিৎ।। কারনঃ 'নারী সুখী হলেই পুরো পরিবার সুখী হতে পারে। সে অসুখী হলে পুরো পরিবার সুখহীন হয়ে যায়।
পদার্থ-( এতা) যথা ( পিতৃভিঃ) পিতৃগণের দ্বারা ( ভ্রাতৃভিঃ চ) এবং ভ্রাতৃিগণ দ্বারা স্ত্রী ( পতিভিঃ) পতি দ্বারা ( দেবরৌঃ তথা) এবং দেবর দ্বারা ( পূজ্য) পূজার যোগ্য। ( ভুষয়িতব্যাঃ চ) এবং তাদের
পোশাক,ভূষণ ইত্যাদি পরিধান করা উচিত। ( কল্যাণম্ ঈষ্সুভিঃ) কল্যাণ কামনা করে,অর্থাৎ পিতা,ভ্রাতা,স্বামী বা ভগ্নিপতির দ্বারা যারা নিজের মঙ্গল চায়। তাদের উচিত নারীদের সম্মান করা এবং
পোশাক, গয়না ইত্যাদি দিয়ে তাদের সুখী রাখা। -( ভাষ্য-পণ্ডিত গঙ্গা প্রসাদ উপাধ্যায়)
মনুস্মৃতি ৪/১৮০
মাতাপিতৃভ্যাং যামীভির্ভ্রাত্রা পুত্রেণ ভার্য্যয়া।
দুহিত্রা দাসবর্গেণ বিবাদং ন সমাচরেৎ।। -এই শ্লোক সত্যার্থ প্রকাশের চতুর্থ সমুল্লাসে ব্যবহার করা হয়েছে।
অর্থঃ মাতা পিতা ভগিনী পুত্রবধু প্রভৃতি ভ্রাতা পুত্র পত্নী কন্যা ও ভৃত্যবর্গ ইহাদিগের সহিত বিবাদ করতে মানা করা হয়েছে।
মনুস্মৃতি ৯/৪:
‘কালেऽদাতা পিতা বাচ্যো বাচ্যশ্চানুপযন্ পতিঃ।
মৃতে ভর্তরি পুত্রস্তু বাচ্যো মাতুররক্ষিতা।।’
कालेऽदाता पिता वाच्यो वाच्यश्चानुपयन्पतिः ।
मृते भर्तरि पुत्रस्तु वाच्यो मातुररक्षिता ।।
(কালে) বিবাহ অবস্থায় (আদাতা) যে মেয়েকে দেয় না, অর্থাৎ যে বিবাহ করে না (পিতা বচ্য) নিন্দনীয় (চ) এবং (অনুপায়না পতিঃ) (বিবাহ ঋতুর পরে) ) যে স্বামী মিলন করে না সে নিন্দনীয়। ঘটবে (ভর্তারি মৃত্যু) স্বামীর মৃত্যুর পর (মাতুঃ + অরক্ষিত পুত্রঃ বচ্যঃ) যে পুত্র মাকে রক্ষা করে না ( ভরণপোষণ ইত্যাদি থেকে) সে নিন্দনীয়।
অর্থঃ বিবাহ-যোগ্য সময়ে পিতা যদি কন্যাকে পাত্রস্থ না করেন, তাহলে তিনি লোকমধ্যে নিন্দনীয় হন; স্বামী যদি প্রাপ্তবয়স্কা পত্নীর সাথে সঙ্গম না করেন, তবে তিনি লোকসমাজে নিন্দার ভাজন হন। এবং স্বামী মারা গেলে পুত্রেরা যদি তাদের মাতার রক্ষণাবেক্ষণ না করে, তাহলে তারাও অত্যন্ত নিন্দাভাজন হয়।কন্যাদের বিবাহের জন্য মনুস্মৃতি ৯।৯০ ও ৯১ বলা হয়েছে বিবাহযোগ্য বয়সে কন্যা তাঁর মত স্বামী বেছে নিতে পারবে [সয়ম্বর ব্যবস্থা]। যদি তার পিতা মাতা বা পরিবার উপযুক্ত বর বাছাই করতে ব্যর্থ হন তবে কন্যা নিজের স্বামী বেছে নিতে অধিকার দেওয়া হয়েছে।
মনুস্মৃতি ৩।৫২ বিবাহের সময় যৌতুক নিতে নিষেধ করা হয়েছে, ৩।৫৩ তে মনু জী এইধরনের বিবাহ কে দনবী বা অসুরী বিবাহ বলেছেন।
अन्योन्यस्याव्यभिचारो भवेदामरणान्तिकः ।एष धर्मः समासेन ज्ञेयः स्त्रीपुंसयोः परः ।।
মনুস্মৃতি ৯/১০১:
অন্যোন্যস্যাব্যভিচারো ভবেদামরণান্তিকঃ।
(অমরন্তিকঃ) মৃত্যু পর্যন্ত (অন্যন্যাস্য + অব্যভিচারঃ ভবেতে)
অর্থঃ স্বামী স্ত্রী ধর্ম্মার্থকামবিষয়ে পরষ্পর মরণ পর্যন্ত একত্রে থাকিবে। ( অর্থৎ, ব্যাভিচার থেকে রক্ষা পেতে স্বামী স্ত্রী একসাথে বসবাস করা কর্তব্য)।
স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই আজীবন একসাথে থাকতে হবে, ব্যভিচার পরিহার করতে হবে, সংক্ষেপে এটাই সকল মানুষের ধর্ম। এই মূলনীতিকে উপেক্ষা করে যে সম্প্রদায়গুলো বহুবিবাহ, সাময়িক বিবাহ এবং যৌনতার দাসত্ব ইত্যাদিকে জায়েজ করে, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পতন ও ধ্বংসের পথে।
মনুস্মৃতি ৯।৫ তে মনু জী নারীদের ও দুর্নীতি পরিহার করতে হবে বলেছেন কারণ নারীরা আচার-আচরণহীন বিপথ গামী হলে পুরো সমাজ ধ্বংস হয়ে যায় বলেছেন।
प्रजनार्थं महाभागाः पूजार्हाः गृहदीप्तयः।
यिःश्रियश्च गेहेषु न विशेषोऽस्ति कश्चन॥ (मनु0 9.26)
মনুস্মৃতি ৯।২৬ – যে মহিলারা সন্তান জন্ম দিয়ে বাড়ির সৌভাগ্য বাড়ায় তারা সম্মানের যোগ্য এবং ঘর আলোকিত করে। শোভা, লক্ষ্মী এবং স্ত্রীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এখানে মহর্ষি মনু জী তাকে বাড়ির লক্ষ্মী বলে সন্বোধন করেছেন।
মনুস্মৃতি ৯।২৮ – নারী সকল প্রকার সুখের দাতা। শিশু হোক, ভালো জনহিতকর কাজ হোক বা বিয়ে হোক বা বয়স্কদের সেবা- এই সব সুখ শুধু নারীর নিয়ন্ত্রণে। একজন নারী জীবনকে আনন্দময় করে তোলে কখনো মা হিসেবে, কখনো স্ত্রী হিসেবে আবার কখনো আধ্যাত্মিক কাজের সঙ্গী হিসেবে। এর মানে হল যে কোন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কাজে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই প্রয়োজনীয়।
মনুস্মৃতি ৮।৩২৩ যেকানে নারী অপহরণকারী দের মৃত্যুদন্ড দিতে রাজা [বিচারক] কে নির্দেশ করেছেন। এবং মনুস্মৃতি ৯।২৩২ যারা স্ত্রী শিশু ও সদাচারী বিদ্যানদের হত্যা করে তাকে খুব কঠোর শাস্তি দেওয়ার বিধান দিয়েছেন। সেরূপ মনুস্মৃতি ৮।৫৩২ তে যারা নারীদের ধর্ষণ করে অথবা উৎপীড়ন করে বা ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তাদেরও ভয়ানক শাস্তি দিতে বলেছেন যাতে অন্যকেউ তদানুরুপ আচরন করতে ভয় পায়।
শ্রদ্দধানঃ শুভাং বিদ্যামাদদীতাবরাদপি।
অন্ত্যাদপি পরং ধর্মং স্ত্রীরত্নং দুষ্কুলাদপি।।-মনুস্মৃতি ২/২৩৮
পদার্থঃ- (শুভাং বিদ্যাং শ্রদ্দধানঃ) উত্তম বিদ্যার প্রতি শ্রদ্ধাশীল পুরুষ (অবরাত্ অপি আদদীত) নিজের অপেক্ষা নিকৃষ্ট ব্যক্তির নিকটেও বিদ্যা পাইলে তা গ্রহণ করিবে (অন্ত্যাদপি পরং ধর্মম্) নীচ জাতি হইতেও উত্তম ধর্ম গ্রহণ করিবে (দুষ্কুলাত্ অপি স্ত্রীরত্নম্) নিন্দনীয় কুল হইতেও উত্তম স্ত্রী গ্রহণ করিবে - ইহাই নীতি।
অনুবাদঃ- উত্তম বিদ্যার প্রতি শ্রদ্ধাশীল পুরুষ, নিজের অপেক্ষা নিকৃষ্ট ব্যক্তির নিকটেও বিদ্যা পাইলে তা গ্রহণ করিবে, নীচ জাতি হইতেও উত্তম ধর্ম গ্রহণ করিবে, নিন্দনীয় কুল হইতেও উত্তম স্ত্রী গ্রহণ করিবে - ইহাই নীতি।
অন্ত্যাদপি পরং ধর্মং স্ত্রীরত্নং দুষ্কুলাদপি।।-মনুস্মৃতি ২/২৩৮
পদার্থঃ- (শুভাং বিদ্যাং শ্রদ্দধানঃ) উত্তম বিদ্যার প্রতি শ্রদ্ধাশীল পুরুষ (অবরাত্ অপি আদদীত) নিজের অপেক্ষা নিকৃষ্ট ব্যক্তির নিকটেও বিদ্যা পাইলে তা গ্রহণ করিবে (অন্ত্যাদপি পরং ধর্মম্) নীচ জাতি হইতেও উত্তম ধর্ম গ্রহণ করিবে (দুষ্কুলাত্ অপি স্ত্রীরত্নম্) নিন্দনীয় কুল হইতেও উত্তম স্ত্রী গ্রহণ করিবে - ইহাই নীতি।
অনুবাদঃ- উত্তম বিদ্যার প্রতি শ্রদ্ধাশীল পুরুষ, নিজের অপেক্ষা নিকৃষ্ট ব্যক্তির নিকটেও বিদ্যা পাইলে তা গ্রহণ করিবে, নীচ জাতি হইতেও উত্তম ধর্ম গ্রহণ করিবে, নিন্দনীয় কুল হইতেও উত্তম স্ত্রী গ্রহণ করিবে - ইহাই নীতি।
যথৈবাত্মা তথা পুত্রঃ পুত্রেণ দুহিতা সমা।
তস্যাং আত্মনি নিষ্ঠন্তাং কথং অন্যো ধনং হরেত্।।(মনুস্মৃতি - ৯/১৩০)
পদার্থঃ- (যথা+এব আত্মা তথা পুত্রঃ) যেমন নিজ আত্মা, তেমনই পুত্র, আর (পুত্রেণ দুহিতা সমা) পুত্র যেমন পুত্রীও তেমন (তস্যাম্+আত্মনি নিষ্ঠন্ত্যাম্) সেই আত্মাস্বরূপ পুত্রী থাকা অবস্থায় (অন্যঃ ধনং কথং হরেত্) অন্য কেহ কিভাবে ধন নিতে পারে? অর্থাৎ পুত্রের অভাব হলে পুত্রীই ধনের অধিকারী হয়।
অনুবাদঃ- যেমন নিজ আত্মা, তেমনই পুত্র অর্থাৎ নিজ আত্মা আর পুত্রে যেমন ভেদ নেই তেমন পুত্র কন্যায় ভেদ নেই, যদি পুত্র না থাকে তাহলে নিজ আত্মাস্বরূপ কন্যাই পিতা-মাতার ধনের অধিকারী হয়।
তস্যাং আত্মনি নিষ্ঠন্তাং কথং অন্যো ধনং হরেত্।।(মনুস্মৃতি - ৯/১৩০)
পদার্থঃ- (যথা+এব আত্মা তথা পুত্রঃ) যেমন নিজ আত্মা, তেমনই পুত্র, আর (পুত্রেণ দুহিতা সমা) পুত্র যেমন পুত্রীও তেমন (তস্যাম্+আত্মনি নিষ্ঠন্ত্যাম্) সেই আত্মাস্বরূপ পুত্রী থাকা অবস্থায় (অন্যঃ ধনং কথং হরেত্) অন্য কেহ কিভাবে ধন নিতে পারে? অর্থাৎ পুত্রের অভাব হলে পুত্রীই ধনের অধিকারী হয়।
অনুবাদঃ- যেমন নিজ আত্মা, তেমনই পুত্র অর্থাৎ নিজ আত্মা আর পুত্রে যেমন ভেদ নেই তেমন পুত্র কন্যায় ভেদ নেই, যদি পুত্র না থাকে তাহলে নিজ আত্মাস্বরূপ কন্যাই পিতা-মাতার ধনের অধিকারী হয়।
কর্ম্মফল বিষয়ে মনুস্মৃতি ১২।৩
শুভাশুভফলং কর্ম মনোবাগ্দেহসংভবম্।
কর্মজা গতয়ো নৃণাং উত্তমাধমমধ্যমঃ।। ১২/৩
অনুবাদঃ- মন, বচন এবং শরীর দ্বারা কৃতকর্ম, শুভ-অশুভ ফল প্রাপ্ত করায় এবং সেই কর্মের অনুসারে মনুষ্য উত্তম, মধ্যম এবং অধম এই তিন গতি প্রাপ্য হয়।
কর্মজা গতয়ো নৃণাং উত্তমাধমমধ্যমঃ।। ১২/৩
অনুবাদঃ- মন, বচন এবং শরীর দ্বারা কৃতকর্ম, শুভ-অশুভ ফল প্রাপ্ত করায় এবং সেই কর্মের অনুসারে মনুষ্য উত্তম, মধ্যম এবং অধম এই তিন গতি প্রাপ্য হয়।
বিঃদ্রঃ বাজারে প্রচলিত মনুস্মৃতি অনেকাংশে প্রক্ষিপ্ত। এর মোট শ্লোক সংখ্যা ২৬৮৫। প্রক্ষিপ্ত অনুসন্ধানের [বিষয় বিরোধ, পুনরুক্তি, শৈলীবিরোধ, বেদবিরোধ, দ্বন্ধের ভিত্তিতে] পর ১৪৭১ টি শ্লোক প্রক্ষিপ্ত পাওয়া গিয়েছে। এবং মৌলিক শ্লোক পাওয়া গিয়েছে ১২১৪ টি। ডঃ সুরেন্দ্র কুমার এই ১২১৪ টি মূল মৌলিক শ্লোক নিয়ে বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি প্রণয়ন করেছেন। মনুস্মৃতির প্রথম সমীক্ষক ন্যায়ধীশ স্যার উইলিয়াম জোন্স ২৬৮৫ টি শ্লোকের ভেতর ২০০৫ টি শ্লোক কে প্রক্ষিপ্ত ঘোষনা করেছিলেন। তাঁর মতে মূল মনুস্মৃতিতে মাত্র ৬৮০ শ্লোক ছিল- মহত্মাগান্ধী তাঁর "বর্ণবিশ্ব" গ্রন্থে স্বীকার করেছেন যে বর্ত্তমান মনুস্মৃতিতে পাওয়া আপত্তিকর জিনিষ গুলো পরবর্ত্তীকালে যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া ভারতের প্রক্তন রাষ্ট্রপতি এবং দার্শনিক পন্ডিত ডঃ রাধাকৃষ্ণান অনুমানগুলি স্বীকার করেন।
মনুস্মৃতির প্রক্ষিপ্তপাঠ
সনাতনীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য স্মৃতি শাস্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনুস্মৃতিকেই ব্যাবহার করে থাকে ম্লেচ্ছ এবং তথাকথিত সনাতনীরা। বিবিধ গ্রন্থাদিতে দেখা যায় যে স্মৃতি শাস্ত্রের মধ্যে মনুস্মৃতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেমন বৃ্হস্পতিস্মৃতিতে বলা হয়েছে-
বেদার্থপ্রতিবদ্ধত্বাত্ প্রাধাণ্যং তু মনো: স্মৃতম্। (বৃহস্পতিস্মৃতি, সংস্কারখণ্ড-১৩)
কিন্তু বর্তমানে উপলব্ধ মনুস্মৃতিতে অসংখ্য শ্লোক বেদ বিরুদ্ধ, পরস্পরবিরুদ্ধ এবং পক্ষপাতপূর্ণ পাওয়া যায়। যার জন্য আর্য সমাজ ও অন্য কতিপয় ব্যাক্তিবর্গ ছাড়া সকলেই মনুস্মৃতির প্রতি অশ্রদ্ধা ও নিন্দিত ভাবনা পোষণ করে। ঋষি দয়ানন্দজীর বচনাদি হইতে প্রেরণা এবং মার্গদর্শন প্রাপ্ত হয়ে, ঋষিদের মান্য মনুস্মৃতিকে এইরূপ অবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য 'হরিদ্বার গুরুকুল কাংড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড.সুরেন্দ্রকুমারজী এই বিষয়ে অনুসন্ধানকার্য্য প্রারম্ভ করেন'। তিনি প্রক্ষিপ্তপাঠ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে পূর্বাগ্রহ বা পক্ষপাত ভাবনা পোষণ করেননি অপিতু এরূপ কিছু মানদণ্ডকে আধারশীলা করেছেন যা বিদ্বানদের নিকট সর্বমান্য। সেই মানদণ্ডগুলো হলো - ১.অন্তর্বিরোধ বা পরস্পরবিরোধ ২.প্রসঙ্গবিরোধ ৩.বিষয়বিরোধ বা প্রকরণবিরোধ ৪.অবান্তরবিরোধ ৫.শৈলীবিরোধ ৬.পুনরুক্তি ৭.বেদবিরোধ।
মনুস্মৃতির সকল শ্লোক যথাস্থানে বা যথাক্রম রেখে, যেথায় প্রক্ষিপ্ত প্রতিত হয়েছে সেখানে পূর্বোক্ত আধারের নামোল্লেখ পূর্বক 'অনুশীলন' নামক সমীক্ষা যুক্ত করে দিয়েছেন, যেন পাঠক স্বয়ম্ বিচার-বিবেচনা করতে পারেন। বর্তমানে উপলব্ধ মনুস্মৃতির শ্লোকসংখ্যা - ২৬৮৫। তিনি প্রক্ষেপানুসন্ধান করে ১৪৭১টি শ্লোক প্রক্ষিপ্ত এবং ১২১৪টি শ্লোক মৌলিক নির্ণয় করেছেন। তাছাড়া প্রায় ৬০০ শ্লোকে 'অনুশীলন' সমীক্ষা দিয়ে তাতে শ্লোকের ভাব, বিবাদ, মান্যতা ও অন্যান্য বিচারণীয় বিষয়ে মনন করে সঠিকটা বুঝানোর প্রয়াস করেছেন। সমীক্ষায় - বেদ, ব্রাহ্মণ গ্রন্থ, স্মৃতি, উপনিষদ, দর্শন, ব্যাকরণ ও সূত্রগ্রন্থ, নিরুক্ত, সুশ্রুত এবং কৌটিল্য অর্থশাস্ত্র সহ অনেক গ্রন্থের প্রমাণ উদ্ধৃত করে মহর্ষি মনুর মান্যতাকে অধিক প্রামাণিক সিদ্ধ করেছেন। এখানে আমি প্রক্ষিপ্ত শ্লোকগুলোর রেফারেন্স উদ্ধৃত করছি তদ্ভিন্ন শ্লোকগুলোকে মৌলিক হিসেবে নির্ণয় করা হয়েছে।
✪প্রথম অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ -
১/৭-১৩, ১/১৭, ১/২৪-২৫, ১ /৩২-৪১, ১/৫০-৫১, ১/৫৫-৫৬, ১/৫৮-৬৩, ১/৬৬, ১/৮১-৮৬, ১/৯২-১০৭, ১/১১১-১১৯।
✪দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ-
২/১৬, ২/১৯, ২/২৪, ২/৫২, ২/৬১-৬২, ২/৬৬-৬৭, ২/৭০, ২/৭৫, ২/৭৯-৮৭, ২/১১৬, ২/১১৮, ২/১২৩, ২/১৩০-১৩৫, ২/১৪৫, ২/১৬৯-১৭৪, ২/১৮১, ২/১৮৭-১৯০, ২/২০১, ২/২০৭-২১১, ২/২২৪-২৩৭, ২/২৪৪, ২/২৪৭-২৪৮।
✪তৃতীয় অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ-
৩/১১-১৯, ৩/২২-২৬, [৩/২৯ শ্লোকটি মহর্ষি মনুর নিজ বিধান নয় কেননা এটির খণ্ডন ৩/৫১-৫৪ শ্লোকে মহর্ষি মনু নিজেই করেছেন] ৩/৩৫-৩৮, ৩/৪৩-৪৪, ৩/৬৩-৬৬, ৩/৮৩, ৩/৯৩, ৩/৯৫-৯৮, ৩/১০০, ৩/১০৯-১১২, ৩/১১৫, ৩/১১৯-২৮৪।
✪চতুর্থ অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ-
৪/৪-১০, ৪/১৮, ৪/২২-২৪, ৪/২৬-২৮, ৪/৩৩-৩৪, ৪/৩৬-৩৯, ৪/৪৩-৬৬, ৪/৬৯-৭৮, ৪/৮০-৯১, ৪/৯৫-১২৭, ৪/১২৯-১৩২, ৪/১৩৫-১৩৬, ৪/১৪০, ৪/১৪২-১৪৪, ৪/১৫০-১৫৩, ৪/১৬৫-১৬৯, ৪/১৮১-১৮৫, ৪/১৮৮-১৮৯, ৪/১৯১, ৪/১৯৭-২০০, ৪/২০২, ৪/২০৫-২২৬, ৪/২২৮-২৩২, ৪/২৩৪-২৩৭, ৪/২৪৭-২৫৪।
✪পঞ্চম অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ-
৫/১-৪, ৫/৬-৭, ৫/১১-২৩, ৫/২৬-৪৪, ৫/৫০, ৫/৫২-৫৬, ৫/৫৮-১০৪, ৫/১০৮, ৫/১১৩, ৫/১২৫, ৫/১২৭-১৪৫, ৫/১৪৭-১৪৮, ৫/১৫৩-১৬২, ৫/১৬৪, ৫/১৬৬, ৫/১৬৮।
✪ষষ্ঠ অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ-
৬/৬, ৬/১৭-২৫, ৬/২৮, ৬/৩১-৩২, ৬/৩৪-৩৫, ৬/৩৭, ৬/৪৪, ৬/৫০-৫১, ৬/৫৩-৫৪, ৬/৫৬, ৬/৬৮-৬৯, ৬/৭৬-৭৯, ৬/৮৩, ৬/৮৬, ৬/৯৪-৯৬।
✪সপ্তম অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ -
৭/৮-১২, ৭/১৫, ৭/২০-২৩, ৭/২৯, ৭/৩২, ৭/৪০-৪২, ৭/৫৮-৫৯, ৭/৭২-৭৩, ৭/৮৩-৮৬, ৭/৮৮, ৭/৯০, ৭/১০৯, ৭/১১৮-১১৯, ৭/১৩৩-১৩৬, ৭/১৩৮, ১/১৪৯-১৫০, ৭/১৮২-১৮৩, ৭/১৯৩, ৭/১৯৯, ৭/২০৫, ৭/২১৮-২১৯।
✪অষ্টম অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ -
৮/২০-২৪, ৮/৩৭-৪১, ৮/৪৬, ৮/৪৮-৫০, ৮/৬০, ৮/৬২, ৮/৬৫-৬৭, ৮/৭০-৭১, ৮/৭৭, ৮/৮২, ৮/৮৫-৯০, ৮/৯২-৯৫, ৮/৯৭-১১৬, ৮/১২৩-১২৫, ৮/১৩৯, ৮/১৪১-১৪২, ৮/১৪৭-১৫০, ৮/১৫২, ৮/১৬৮-১৭৭, ৮/১৯০, ৮/১৯২, ৮/২০৪-২০৫, ৮/২০৬-২০৯, ৮/২১৭, ৮/২২৪-২২৭, ৮/২৪২-২৪৩, ৮/২৫৬-২৫৭, ৮/২৫৯-২৬১, ৮/২৬৭-২৭২। ৮/২৭৬-২৭৭, ৮/২৭৯-২৮৫, ৮/২৮৯-৩০০, ৮/৩০৪-৩০৫, ৮/৩১২-৩১৩, ৮/৩২৫-৩৩১, ৮/৩৩৩, ৮/৩৩৯-৩৪২, ৮/৩৪৮-৩৪৯, ৮/৩৫৩, ৮/৩৫৬, ৮/৩৫৮-৩৭০, ৮/৩৭৩-৩৮৫, ৮/৩৯০-৩৯৭, ৮/৪০৭, ৮/৪১০-৪২০।
✪নবম অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ -
৯/২-৩, ৯/১৪-২৪, ৯/২৯-৩০, ৯/৩৪-৪৮, ৯/৫০-৫১, ৯/৫৪-৫৫, ৯/৬০-৬১, ৯/৬৪-৬৮, ৯/৭০-৭৩, ৯/৭৭-৮০, ৯/৮২-৮৭, ৯/৯২-৯৫, ৯/৯৭-১০০, ৯/১০৬-১০৭, ৯/১০৯, ৯/১১৩-১১৫, ৯/১২০-১২৬, ৯/১২৮-১২৯, ৯/১৩২-১৩৩, ৯/১৩৫-১৩৭, ৯/১৩৯-১৪০, ৯/১৪২-১৪৪, ৯/১৪৮-১৭৫, ৯/১৭৭-১৯১, ৯/১৯৮, ৯/২০৪-২০৫, ৯/২১৯, ৯/২২৯-২৩০, ৯/২৩৫-২৪৮, ৯/২৭৩, ৯/২৮০, ৯/২৯০-২৯৩, ৯/৩১৩-৩২৩, ৯/৩২৭-৩২৮, ৯/৩৩৬।
✪দশম অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ -
১০/১-৩, ১০/৫-৪৪, ১০/৪৬-৫৫, ১০/৫৯-৬৪, ১০/৬৬-১৩০।
✪একাদশ অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ -
১১/১-৪৩, ১১/৪৮-৫২, ১১/৫৪-১৯০, ১১/১৯৩-২০২, ১১/২০৪-২০৮, ১১/২১৫, ১১/২১৮-২২১, ১১/২২৩-২২৪, ১১/২৩৪-২৪৪, ১১/২৪৭-২৬২।
✪দ্বাদশ অধ্যায়ের প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের রেফারেন্সসমূহ -
১২/১-২, ১২/১০-২৩, ১২/৫৩-৭২, ১২/৭৫-৮০, ১২/৮৫, ১২/৮৬-৯০, ১২/১০৩, ১২/১০৭, ১২/১১৭, ১২/১২০-১২১, ১২/১২৬।
1.প্রথম অধ্যায়ে মোট ১১৯টি শ্লোক, তারমধ্যে ৬৩টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৫৬টি মৌলিক।
2.দ্বিতীয় অধ্যায়ে মোট ২৪৯টি শ্লোক, তারমধ্যে ৬৩টি প্রক্ষিপ্ত এবং ১৮৬টি মৌলিক।
3.তৃতীয় অধ্যায়ে মোট ২৮৬টি শ্লোক, তারমধ্যে ২০২টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৮৪টি মৌলিক।
4.চতুর্থ অধ্যায়ে মোট ২৬০টি শ্লোক, তারমধ্যে ১৭০টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৯০টি মৌলিক।
5.পঞ্চম অধ্যায়ে মোট ১৬৯টি শ্লোক, তারমধ্যে ১২৮টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৪১টি মৌলিক।
6.ষষ্ঠ অধ্যায়ে মোট ৯৭টি শ্লোক, তারমধ্যে ৩৩টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৬৪টি মৌলিক।
7. সপ্তম অধ্যায়ে মোট ২২৬টি শ্লোক, তারমধ্যে ৪২টি প্রক্ষিপ্ত এবং ১৮৪টি মৌলিক।
8.অষ্টম অধ্যায়ে মোট ৪২০টি শ্লোক, তারমধ্যে ১৮৭টি প্রক্ষিপ্ত এবং ২৩৩টি মৌলিক।
9.নবম অধ্যায়ে মোট ৩৩৬টি শ্লোক, তারমধ্যে ১৭১টি প্রক্ষিপ্ত এবং ১৬৫টি মৌলিক।
10. দশম অধ্যায়ে মোট ১৩১টি শ্লোক, তারমধ্যে ১২৪টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৭টি মৌলিক।
11.একাদশ অধ্যায়ে মোট ২৬৬টি শ্লোক, তারমধ্যে ২৩৪টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৩২টি মৌলিক।
12.দ্বাদশ অধ্যায়ে মোট ১২৬টি শ্লোক, তারমধ্যে ৫৪টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৭২টি মৌলিক।
মোট শ্লোক- (১৯৯+২৪৯+২৮৬+২৬০+১৬৯+৯৭+২২৬ +৪২০+৩৩৬+১৩১+২৬৬+১২৬) = ২৬৮৫
প্রক্ষিপ্ত শ্লোক - (৬৩+৬৩+২০২+১৭০+১২৮+৩৩+৪২+১৮৭ +১৭১+১২৪+২৩৪+৫৪) = ১৪৭১
মৌলিক শ্লোকসংখ্যা- (৫৬+১৮৬+৮৪+৯০+৪১+৬৪+১৮৪ +২৩৩+১৬৫+৭+৩২+৭২) = ১২১৪
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ