ভবিষ্য পুরাণে মুহাম্মদ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

28 December, 2022

ভবিষ্য পুরাণে মুহাম্মদ

 ভবিষ্য পুরাণ নামকরণের মধ্যেই স্পষ্ট এই পুরাণের মূল উপজীব্য বিষয় ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত ভাববাণী বা ভবিষ্যদ্বাণী। তবে, এর ভবিষ্যতবাণী নামক বিস্তৃত অংশটি আধুনিক যুগের সংযোজন হওয়ায় এটি প্রকৃতপক্ষে অখণ্ড ভবিষ্যপূরাণের কোন অংশ নয় [Rocher 1986, পৃ. 151-154], K P Gietz 1992, পৃ. 215 with note 1180

বোম্বে সংস্করণে পাওয়া যায়:

ব্রহ্মপর্ব, যার ২১৫টি অধ্যায় রয়েছে।

মধ্যপর্ব, যার মোট ৬২টি অধ্যায় সহ তিনটি বিভাগ রয়েছে,

প্রতিসর্গপর্ব, যার চারটি বিভাগ রয়েছে যথাক্রমে ৭, ৩৫, ৩২ এবং ২৬ অধ্যায়, এবং

উত্তরপর্ব, যার ২০৮টি অধ্যায় রয়েছে।

কিছু পাণ্ডুলিপির পাঠে পর্ব নেই কিন্তু বিভিন্ন সংখ্যক অধ্যায় রয়েছে।[Rocher 1986] ভবিষ্য পুরাণ কয়েকটি পাণ্ডুলিপি অনুসারে এই গ্রন্থটির পাঁচটি পর্ব বা খণ্ড।[Bhavishya Purana I.2.2-3] কিন্তু বর্তমান প্রাপ্ত পাঠভিত্তিক মুদ্রিত সংস্করণে চারটি খণ্ড দেখা যায় ( ব্রাহ্ম, মধ্য, প্রতিসর্গ, ও উত্তর)। এই চারটি খণ্ড বিষয়গতভাবে পৃথক ও ভিন্ন ভিন্ন সময়কালে রচিত।

"ভবিষ্যদ্বাণী"-সম্পর্কিত তৃতীয় অংশ প্রতিসর্গপর্ব-এ উপনিষদীয় ধারণাগুলির সাথে অ-ভারতীয় ম্লেচ্ছধর্মের তুলনামূলক অধ্যয়ন রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দির ইতিহাস। পণ্ডিতদের মতে এটি ১৮ কিংবা ১৯ শতকেও প্রক্ষিপ্ত হয়েছে বলে বিবেচিত হয়।

প্রতিসর্গপর্ব  পর্বে ১০০টি অধ্যায় রয়েছে, যেখানে রাজা ও ঋষিদের বংশতালিকা এবং ভবিষ্যদ্বাণীর মতো বিষয় নিয়ে বলা হয়েছে। এটি মূলত বিশ্ব ইতিহাস হিসাবে লেখা। এর প্রথম এবং দ্বিতীয় খণ্ডে প্রাচীন কাল, তৃতীয় খন্ড মধ্যযুগ এবং চতুর্থ খণ্ড নবযুগের সাথে সম্পর্কিত। এই পাঠ্যাংশতে দ্বাদশ শতাব্দির পরবর্তী সময়ে ভারত অঞ্চল গঠিত লুণ্ঠন এবং বড় গণহত্যা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে ৩।৪।৬ শ্লোকে তৈমুর-তাম্বুরলং-এর গণহত্যা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে (পাঠ্যটিতে তাকে তিমিরলিঙ্গ বা "অন্ধকারের প্রতিক" বলা হয়েছে)। আলফ হিল্টেবিটেল বলেছেন, ঐতিহাসিক চরিত্রগুলির সাথে যাদের ধারণা রয়েছে এবং রচনাগুলি একাদশ ও চতুর্দশ শতাব্দির মধ্যে ভারতকে প্রভাবিত করেছিল। এতে মুঘল ইতিহাস সম্পর্কে সমালোচনামূলক মন্তব্য রয়েছে (পাঠগুলিতে তাদের "মুকুল" বলা হয়েছে) এবং একজন মুহাম্মদের কথা বলা হয়েছে যিনি ছিলেন আরবের "ম্লেচ্ছ"দের শেষ নবী।এ থেকে বুঝা যায় এই অংশটি চতুর্দশ শতাব্দির পরে ভালভাবে লেখা হয়েছিল। ভবিষ্য পুরাণের এই পর্বের রচয়িতা ইংরেজি বাইবেল এবং আরবি ইসলামী গ্রন্থ উভয়ই জানেন বলে মনে হয় মনে হয়, তবে এখানে ব্যবহৃত অনেক শব্দই আরবি শব্দ ও নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে, ইংরেজি উৎস থেকে তেমন ব্যবহৃত হয়নি। সুতরাং, পাঠ্যের এই অংশটি অবশ্যই মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থানের পর এবং ভারতে আরবি উৎস প্রাপ্তির পর রচিত হয়েছিল। এই অংশটি বহু পণ্ডিতকে ভবিষ্য পুরাণের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পরিচালিত করেছে এবং এই পুরাণগুলি প্রামাণিক ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গৃহীত হয়নি, বরং ইতিহাসের একটি সাক্ষ্য যা ক্রমাগত সংশোধিত হয়েছিল।

আলফ হিল্টেবিটেলের মতে, অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় চতুর্থাংশে মুঘলদের পাঠ্যের ইতিহাসের জন্য একটি শুরু বিন্দু হিসাবে চিহ্নিত করে কারণ এর ৩।৪।২২ শ্লোকে নাদির শাহ (তাকে দৈত্য নাদিরা বলা হয়েছে) এবং মুহাম্মদ শাহের কথা উল্লেখ করেছে। এই অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিসর্গপর্বের প্রথম খন্ড জেনেসিস-এক্সোডাস ক্রমের ক্ষেত্রেও একটি কথা প্রযোজ্য হবে যেখানে এর লেখক আরবি এবং ইংরেজি উভয় সূত্র সম্পর্কে সচেতন। এছাড়াও, রাণী ভিক্টোরিয়ার প্রাসাদ, কলকাতা এবং অষ্টাদশ শতকের বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনার কথা উল্লেখ করে ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে সমাপ্তি বিন্দু স্থাপন করে। হিলটেবিটেল আরও বলেছেন, ভবিষ্য পুরাণের এই অংশটি সম্ভবত ঊনবিংশ শতকে রচিত হয়েছিল।


প্রতিসর্গপর্ব প্রসঙ্গে হাজরা বলেছেন:


ভবিষ্য পুরাণ-এর(এক।১।২-৩) অন্তর্গত হলেও প্রতিসর্গপর্ব আদম, নোয়া, যাকুতা, তৈমুরলঙ, নাদিরশাহ, আকবর (দিল্লীশ্বর), জয়চন্দ্র... ও আরও অনেকের কথা বলে। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের কথাও এ গ্রন্থ জানে, এমনকি কলকাতা ও পার্লামেন্টের কথাও উল্লেখ করে।


এ কে রামানুজন একটি " যথাযথভাবে হালনাগাদকৃত ভবিষ্য পুরাণ" গ্রন্থে খ্রিস্ট, মুসা ও রানি ভিক্টোরিয়ার উল্লেখ পেয়েছেন। একে তিনি এই বলে ব্যাখ্যা করেন যে:


চতুর বক্তব্য ও অনুশাসন প্রয়োগ করার পর পর প্রচেষ্টার পরও বলতেই হয় যে পুরাণগুলি মুক্ত ব্যবস্থার অন্তর্গত।

বস্তুতঃ ভবিষ্য পুরাণের লেখার কোন নির্দিষ্ট সময়কালই নেই। ভবিষ্য পুরাণের কিছু অংশ খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে রচিত। এবং এই রচনাকালের ব্যাপ্তি বিষয়ে একজন বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ মরিজ উইন্টারনিৎজ এর মতে, উদ্ধৃতি হিসেবে গৃহীত লেখ ও পুরাণ উভয় ক্ষেত্রে উল্লিখিত এই শ্লোকগুলি সম্ভবত ধর্মরাষ্ট্রসমূহের পূর্ববর্তী এবং তাই এগুলির ভিত্তিতে কোনো কালানুক্রমিক তালিকা প্রস্তুত সম্ভব নয়। আরেকজন বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ Alf Hiltebeitel এর মতে, খ্রিষ্ঠপূর্ব ৫০০ থেকে শুরু করে উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ভবিষ্য পুরাণ লিখিত এবং পরিমার্জিত হয়েছে। অর্থাৎ, এটি কোন ঐশ্বরিক অবিকৃত গ্রন্থ নয়, বহুল পরিমার্জিত এবং নতুন নতুন বিষয় যুক্তকরণের মাধ্যমেই আজকে যেই ভবিষ্য পুরাণ পাওয়া যাচ্ছে সেটি।


সেই সাথে, এই বিষয়ের স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ Alf Hiltebeitel গবেষণা করে দেখিয়েছেন, লিখিত শ্লোকগুলোর অনেকাংশই রচনা হয়েছিল একদমই সাম্প্রতিক সময়ে। কারণ সেই শ্লোকগুলোর বাক্যগঠন অতীতের বাক্য গঠনের থেকে আলাদা। এর অর্থ হচ্ছে, ভবিষ্য পুরাণে অত্যন্ত চাতুর্য্যের সাথে বর্তমান সময়ের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা অতীতের লেখা ভবিষ্যতবানী হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো আসলে অতীতে লিখিত নয়, বর্তমান সময়েই লিখিত।


এ কে রামানুজন একে ” যথাযথভাবে হালনাগাদকৃত ভবিষ্য পুরাণ” বলে মন্তব্য করে বলেছেন, এইগ্রন্থে খ্রিস্ট, মুসা ও রানি ভিক্টোরিয়ার উল্লেখ পাওয়া গেছে। একে তিনি এই বলে ব্যাখ্যা করেন যে: চতুর বক্তব্য ও অনুশাসন প্রয়োগ করার প্রচেষ্টার পরও বলতেই হয় যে পুরাণগুলি মুক্ত ব্যবস্থার অন্তর্গত। ভবিষ্যোত্তর পুরাণ মুখ্যত কিছু কিংবদন্তি ও লোককথা সম্বলিত ধর্মীয় রীতিনীতির হাতবই।

রাজেন্দ্র হাজরা একে “বিভিন্ন সূত্র থেকে গৃহীত একটি অসংবদ্ধ উপাদানসংগ্রহ” বলে উল্লেখ করেছেন।

সবচাইতে মজার বিষয় হচ্ছে, ভবিষ্য পুরাণে যেই অংশে মহম্মদের কথা বলা আছে, সেখানে ঈশ্বরপুত্র যীশু, ভারতের রাণী ভিক্টোরিয়া, সম্রাট আকবর, এমনকি, হিটলারের কথাও বর্ণিত আছে। আপনি কী তাহলে ঈশ্বরপুত্র যীশুর দাবিটিও মেনে নিচ্ছেন? বা হিটলারকে নবী মানবেন?


বিষয়টি সহজ করে বোঝাচ্ছি। ধরুন, আমি এখন একটি ভবিষ্যত বাণী করলাম, যে ১৯০০-১৯৫০ সালের মধ্যে দু’টি বিশ্বযুদ্ধ হবে। কথাটি লিখে মাটির নিচে পুতে দিলাম, এবং কয়েক বছর পরে সেগুলো মাটি থেকে তুলে বলতে লাগলাম, এই কথাগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সালে লিখিত। কিন্তু কথাগুলোর বাক্যগঠন এবং রচনার ধারা লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, সেগুলো আসলে আমি সাম্প্রতিক সময়েই লিখেছি। এবং এগুলো অতীতে লিখিত ভবিষ্যত বাণী হিসেবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছি।


মরিজ উইন্টারনিৎজ এর মতে, ভবিষ্য পুরাণ শিরোনামে যেসব পুথি আমাদের হস্তগত হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে আপস্তম্বীয় ধর্মসূত্র গ্রন্থে উদ্ধৃত প্রাচীন কীর্তি নয়। আপস্তম্বীয় ধর্মসূত্র-এ একটি উদ্ধৃতি ভবিষ্য পুরাণ -এর নামাঙ্কিত; কিন্তু উক্ত পুরাণের প্রাপ্ত কোনো পাঠে তা পাওয়া যায় না। ভবিষ্য পুরাণ অনুসারে এই গ্রন্থের পাঁচটি পার্বন বা খণ্ড। কিন্তু প্রাপ্ত পাঠভিত্তিক মুদ্রিত সংস্করণে চারটি খণ্ড দেখা যায় ( ব্রাহ্ম , মধ্যমা , মধ্যমা , ও উত্তর)। এই চারটি খণ্ড বিষয়গতভাবে পৃথক ও ভিন্ন ভিন্ন সময়কালে রচিত।

Alf Hiltebeitel তার Rethinking India’s Oral and Classical Epics গ্রন্থে পরিষ্কারভাবেই বলেছেন, this part (যেই অংশে মুহাম্মদের কথা আছে, প্রতিসর্গপর্বন) of the Bhavisya Purana was mostly likely composed in the 19th century.

এবারে আসুন আরেকটি মজার বিষয় লক্ষ্য করি। আপনি যদি ভবিষ্য পুরাণের কিছু অংশ পড়ে থাকেন, পড়লেই দেখবেন, এটি ভবিষ্যতের নানা কথা বর্ণনা করেছে। এবং বর্ণনার সময়, টেন্স হিসেবে ফিউচার টেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্য পুরাণের প্রতিসর্গপর্বন অংশটুকু পড়লেই, মজার বিষয় দেখবেন, মুহাম্মদের বর্ণনা অংশে, সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে পাস্ট টেন্স। অর্থাৎ অতীত কালের বিবরণ। মজার না বিষয়টি? কেউ ভবিষ্যতবাণী করলে কোন টেন্সে লেখে? অতীত কাল হিসেবে বর্ণনা করে বুঝি?

ইসলাম সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী (প্রতিসর্গ পর্ব তৃতীয় অংশ থেকে)

শ্রী সুতা গোস্বামী বলেন: রাজা শালীবন রাজবংশের মধ্যে, দশজন রাজা ছিলেন যারা ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শাসন করার পর স্বর্গীয় গ্রহগুলিতে গিয়েছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে পৃথিবীতে নৈতিকতা ভূলণ্ঠিত হতে লেগেছিল। সেই সময়ে ভোজরাজা ছিলেন পৃথিবীর রাজাদের দশম জন। তিনি যখন দেখলেন যে পৃথিবীতে নৈতিকতা ভূলণ্ঠিত হচ্ছিল তখন তিনি কালিদাসের দশ হাজার সৈন্যবাহিনী দিয়ে তার দেশের চারিপাশের সব দিক জয় করলেন। তিনি সিন্ধুর নদী পার হলেন এবং গান্ধারা, ম্লেচ্ছ, শক, কাশ্মীর, নওড়া ও শঠের উপর জয়ী হন। তিনি তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। তারপর রাজা মহমদদ (মুহম্মদ), ম্লেচ্ছ ধর্মের প্রবক্তা, এবং যিনি মরুভূমিতে ছিলেন, তাকে নিয়ে এবং মহাদেব শিবের অনুসারিদের সাথে গেলেন। তিনি গঙ্গা পানি দিয়ে মহাদেব শিবকে ধৌত করেছিলেন এবং মনপ্রাণ দিয়ে উপাসনা করেছিলেন পঞ্চগভ্য (দুধ, ঘি, দই, গরু এবং গোমূত্র) দিয়ে এবং চন্দনচোপড় ইত্যাদি দিয়ে। তারপরে তিনি প্রার্থণা অর্পণ করে তাকে খুশী করেন।

শ্রী সুতা গোস্বামী বলেন: তার প্রার্থণা শুনে, মহাদেব শিব বললেনঃ হে রাজা ভোজরাজ, তোমাকে মহাকক্ষ্ম নামক স্থানে যেতে হবে। সেই স্থানটিকে বহিকা বলা হয় এবং এখন ম্লেচ্ছদের দ্বারা দূষিত হচ্ছে। সেই ভয়ঙ্কর দেশে আর ধর্ম (ধর্ম বলতে এখানে হিন্দু ধর্ম বোঝানো হচ্ছে) বলে কিছু নেই।

অতীতে একসময় ত্রিপুরা নামক একটি দানবের আবির্ভাব ঘটেছিল, যাকে আমি ইতিমধ্যেই পুড়িয়ে ছাই করেছিলাম। কিন্তু সে আবার বালির আদেশে ফিরে এসেছে। তার কোন সৃষ্টি নেই এবং সে আমার কাছ থেকে একটি বর লাভ করেছে। তার নাম মহাওদা এবং তার কর্ম একটি দানবের মতো। অতএব, হে রাজা, ঐ অশুভ দানবের দেশে যেও না। আমার দয়া দ্বারা আপনার বুদ্ধি শুদ্ধ করা হবে।

এইসব শুনে রাজা ভোজরাজ তার দেশে ফিরে আসেন এবং মহমমদ তাদের এগিয়ে দিতে সিন্ধু নদীর তীর পর্যন্ত এসেছিলেন। তিনি (মহম্মদ) মায়া (ইল্যুশন) প্রসারিত করতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন, এবং খুব আনন্দের সাথে রাজাকে বললেন, ” হে মহারাজ, আপনার ঈশ্বর আমার দাস হয়েছেন। শুধু দেখুন, আপনার ঈশ্বর আমার অবশিষ্টাংশ খাবে, তাই আমি আপনাকে দেখাবো।” তার সম্মুখে এইসব দেখে রাজা বিস্মিত হলেন। তারপর রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে কালিদাস মহমমদকে ধমক দিয়ে বললেন, “হে বদমাশ, তুমি রাজাকে বিদ্রূপ করার জন্য মায়াজ্বাল তৈরি করছো, আমি তোমাকে মেরে ফেলব, তুমি নিকৃষ্টতম …”

(…)

সেই শহরটি তীর্থযাত্রীদের কাছে তীর্থস্থান হিসাবে পরিচিত ছিল, একটি জায়গা যা ছিল মদিনা এবং উম্মত্ততা থেকে মুক্ত। একটি দানব সাথে নিয়ে মোহমায়া সৃষ্টিতে পারঙ্গম মহমমদ রাজা ভোজরাজের সামনে রাতে হাজির হলো এবং বললো: হে রাজা, আপনার ধর্ম অবশ্যই সব ধর্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তারপরেও আমি আমার প্রভুর নির্দেশ মোতাবেক একটি ভয়ঙ্কর এবং অসুরীয় ধর্ম স্থাপন করতে যাচ্ছি। আমার অনুসারিদের লক্ষণ হবে যে, তারা প্রথমে তাদের যৌনাঙ্গ কেটে ফেলবে, কোন শিখা থাকবে না, তবে দাড়ি থাকবে, তারা পাপাত্মা হবে, প্রচুর হট্টোগোল করবে এবং সব খাবে। তারা কোন শুদ্ধ নিয়মনীতিহীন ভাবে প্রাণী হত্যা করে খাবে। ইহাই আমার অভিপ্রায়। আপনি যেমন কুশার সাহায্যে সব পরিশুদ্ধ করেন, তারাও মুশাল্লা বা মশলা দিয়ে শুদ্ধকর্মের কাজ করবে। অতএব, তারা মুসলমান হিসাবে পরিচিত করা হবে, যাদেরকে ধর্মদুষণকারী বলা হবে। এইভাবে আমি একটি অসুরীয়/ ইবলিশি ধর্ম প্রতিষ্ঠা করবো।

এই সব শুনে শুনে রাজা তার প্রাসাদে ফিরে আসেন এবং সেই পাপাত্মা তার জায়গায় ফিরে গেল।


ভোজরাজা কে ছিলেন??

এবারে আসুন মূল আলাপে। ভোজরাজা(সর্বপ্রথম জন) সম্পর্কে আমরা যা জানি, তা হচ্ছে, উনি শাসন করেছেন ১০১০ থে ১০৫৫ সাল পর্যন্ত। মুহাম্মদের জন্মকাল হচ্ছে ৫৭০ থেকে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ। দুইজনার দেখাসাক্ষাত হয়েছে বা মিল মহব্বত হয়েছে, এরকম কল্পনা শুধু পাগলের মাথায় আসতে পারে। তারপরে লক্ষ্য করুন,  এখানে হযরত মুহাম্মদ পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে পাস্ট টেন্সে ভবিষ্যত বাণী করা হয়েছে যে, সে একটি অসুরীয় ধর্ম প্রতিষ্ঠা করবেন। আপনি বা আপনারা যারা ভবিষ্য পুরাণে মুহাম্মদের নাম আছে জেনেই ধেই ধেই করে নৃত্য শুরু করেছেন, ভবিষ্য পুরাণের রেফারেন্স ধরে মুহাম্মদকে সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে নেমেছেন, তাদের মত কাঠ বলদ মনে হয় আর কেউ নেই। কারণ, আপনারা আসলে মুহাম্মদের পেছনে আইক্কাওয়ালা বাঁশ দেয়ার উদ্দেশ্যেই, মুহাম্মদকে অসুরীয় ধর্মের প্রবর্তক, এই বক্তব্য প্রচার করছেন।

মূল ভবিষ্য পুরান গ্রন্থটি এখানে যুক্ত করা হলো। বইটির ৩৭৬ পৃষ্ঠা থেকে মূল বইয়ের পাতাগুলো তুলে দেয়া হলো আগ্রহী পাঠকের জন্য। বইটির ডাউনলোড লিঙ্ক নিচে পেয়ে যাবেন।

ভবিষ্যপুরাণ
ভবিষ্য 4
ভবিষ্য পুরাণ
ভবিষ্য পুরাণ
ভবিষ্য পুরাণ
ভবিষ্য 12
মহামদ পৈশাচ ধর্ম পালন করবে
ভবিষ্য 14


প্রয়োজনীয় রেফারেন্সঃ

১। Alf Hiltebeitel এর লেখা Rethinking India’s Oral and Classical Epics University of Chicago Press. pp. 217–218. ISBN 978-0-226-34050-0. আগ্রহী পাঠকের জন্য বইটির ডাউনলোড লিঙ্কও দেয়া হলো।

২। পুরাণ সংকলন, ইংরেজিতে। ইসলাম সম্পর্কিত অংশটুকু ৪৮৩ নং পৃষ্ঠায় দেখুন।

৩। মহর্ষি কৃষদ্বৈপায়ন বেদব্যাস বিরচিতম (সন্দেহপূর্ণ) ভবিষ্য পুরান। শ্রীমৎ স্বামী পরমাত্মানন্দনাথ ভৈরব (গিরি) কৃত অনুবাদ এবং সম্পাদনা।  বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ বইটি স্ক্যান করে দিয়েছেন বিশ্ব ব্যাপারী ভাই।

ভবিষ্য পুরাণে ইসলাম মুহাম্মদ
ভবিষ্য পুরাণে মুহাম্মদ



No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ