বেদ জ্ঞান ও সৃষ্টিনির্মাণ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

01 January, 2023

বেদ জ্ঞান ও সৃষ্টিনির্মাণ

 

ইশাবাস্যমিদ্ঁ সর্বম্ য়ত্কিঞ্চ জগত্যাম্ জগত্"
(য়জু০ ৪০|১)
অর্থাৎ - সেই ঈশ্বর এই সম্পূর্ণ জগতে ব্যাপ্ত হয়ে তাকে আচ্ছাদিত করে আছে। কঠ উপনিষদের ঋষি বলেছেন -
"অণোরণীয়ান্ মহতো মহীয়ান্"
(কঠ০ উপ০ ২|২০)
অর্থাৎ - সেই পরমাত্মা হল সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম আর মহান থেকে মহান্। এই কারণে তিনি হলেন সর্বব্যাপক।ঈশ্বর তত্বের পরিভাষা করে মহর্ষি পতঞ্জলি জী বলেছেন -
"ক্লেশকর্মবিপাকাশয়ৈপরামৃষ্টঃ পুরুষবিশেষ ঈশ্বরঃ"
(য়োগ দর্শন ১|২৪)
অর্থাৎ - অবিদ্যাদি ক্লেশ, পাপ-পুণ্য আদি কর্ম এবং তার ফল, বাসনা হতে পৃথক্ পুরুষ অর্থাৎ সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডে শয়নকারী অর্থাৎ ব্যাপ্ত বিরাজমান চেতন তত্বটিকে ঈশ্বর বলে। এইকারণেই তিনি হলেন সর্বদা আনন্দ স্বরূপ। এইজন্য মহর্ষি দয়ানন্দও ঈশ্বরকে সচ্চিদানন্দ বলেছেন।
বেদের সমস্ত ছন্দকে এক সাথে মিলিয়ে প্রাণ রশ্মি বলা হয় এবং
১| বেদ মন্ত্র কম্পন স্বরূপ।
২| বেদ মন্ত্র ছন্দ স্বরূপ।
৩| ছন্দ হচ্ছে পদার্থ ।
৪| ছন্দ প্রাণ রশ্মি ।
৫| ছন্দকেই বেদ বলা হয়।
৬| বেদ রশ্মি স্বরূপ।
৭| বেদ প্রাণ রশ্মি স্বরূপ ।
৮| বেদ মন্ত্র হচ্ছে পদার্থ ।
ছন্দকে রশ্মি বলা হয় ও ছন্দ মন্ত্রকে বলা হয়। তাই বস্তুত বেদ মন্ত্রকে রশ্মি বলা হয়। এ রশ্মি প্রাণ স্বরূপ হয় তাই একে প্রাণ রশ্মিও বলা হয়। অতএব মন্ত্রকেই পদার্থ বলা হয় , ছন্দকেই পদার্থ বলা হয় , ছন্দই মন্ত্র ও মন্ত্রই ছন্দ ।
*ছন্দের প্রাণ রশ্মি হওয়ার প্রমাণ:-*
১|প্রাণ বৈ ছন্দাংসি ( কৌশিক ব্রাহ্মণে ১৭|২)
অর্থাৎ ছন্দ প্রাণ রূপে হয় ।
এবার , প্রাণ নিয়ে মহর্ষি বেদ ব্যাস বলেছেন:-
২|প্রাণা কম্পনাত্ ( ব্রহ্ম সূত্র ১|৩|৩৯)
অর্থাৎ কম্পন করবার জন্য প্রাণ বলা হয়।
৩|প্রাণা রশ্ম্যঃ ( তৈতরীয় ব্রাহ্মণ ৩|২|৫|২)
অর্থাৎ রশ্মিকে প্রাণ বলা হয়।
তাই ইহার দ্বারা সিদ্ধ হচ্ছে যে ছন্দ হচ্ছে কম্পন স্বরূপ প্রাণ যা রশ্মি (অর্থাৎ প্রাণ রশ্মি)।
৪|প্রাণ এবঃ রজ্জু ( কাণবীয় শতপথ ব্রাহ্মণ 3/¼/2)
অর্থাৎ প্রাণ হচ্ছে রজ্জু (দড়ি) । রজ্জু কোনো অন্য পদার্থকে নিয়ন্ত্রণ করে তাই প্রাণ রশ্মি বলা হয়। অর্থাৎ বেদ মন্ত্র কোনো দ্বিতীয় পদার্থ, রশ্মি , কণ আদিকে নিয়ন্ত্রণ করে এ জন্য বেদ মন্ত্র রজ্জু , রশ্মি বলা হয় অর্থাৎ বেদ মন্ত্রকেই প্রাণ রশ্মি বলা হয়।
ঋষি দয়ানন্দের যজুর্বেদ ভাষ্যে "ছন্দ " এর অর্থ করে লিখেছেন :-
(i) পরিগ্রহণম্ (যজুর্বেদ ভাষ্য 14/5)
(ii) বলম্ (যজুর্বেদ ভাষ্য 14/9)
(iii)বলকারী, প্রযত্নম্ (যজুর্বেদ ভাষ্য 14/18)
(iv)ঊর্জানম্ , প্রকাশনম্ (যজুর্বেদ ভাষ্য 15/4)
(v)প্রকাশনম্ , প্রকাশরূপ (যজুর্বেদ ভাষ্য 15/5)
(vi)স্বচ্ছন্দতা (যজুর্বেদ ভাষ্য 19/74)
এই প্রমানের দ্বারা সিদ্ধ হলো ছন্দ রশ্মি স্বচ্ছন্দ রূপে বিচরণ করতে করতে বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিকে সব দিক থেকে গ্রহণ করে নেয় ও বল, প্রকাশ ও ঊর্জা উত্পন্ন করতে করতে নানা পদার্থ কে ধারণ ও সক্রিয় করে । এই ছন্দের দ্বারাই ব্রহ্মাণ্ডে বিভিন্ন প্রকারের কণ উত্পত্তি হয়।
অতএব ঋষি দয়ানন্দের এ প্রমাণ দ্বারা সিদ্ধ হইতেছে যে ছন্দ পদার্থকে বলা হয়। ছন্দ অর্থাৎ পদার্থ অর্থাৎ বেদ মন্ত্র ।
ছন্দ বিষয়ে অন্যান্য ঋষি গণের প্রমাণ:-
১| ছন্দাংসি অচ্ছাদনাত্ ( নিরুক্ত ৭|১২)
অর্থাৎ ছন্দ কোনো কণকে, কোনো পদার্থকে, কোনো কিরণকে লোক- লোকান্তরে আচ্ছাদিত করে , এজন্য ছন্দকে পদার্থ বলা হয়।
২| ছন্দ উহা যা সবাইকে আচ্ছদন করে । ( দৈবত ব্রাহ্মণ ৩|১৯)
অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডে উপস্থিত সমস্ত পদার্থ, কণ, ধাতু, দ্রব্য, গ্যাস, ইলেকট্রনস্, প্রোটোনস্, কোয়ারকস্, অগ্নি, বায়ু, জল, আকাশ, অন্তরিক্ষ, গ্রহ, উপগ্রহ, সৌরমন্ডল, সূর্য, চন্দ্র, তারা, উল্কা- পিন্ড , ধূমকেতু আদি সমস্ত পদার্থ ছন্দের দ্বারা আচ্ছাদিত । আমাদের শরীরের এক এক কোষ ছন্দের দ্বারা আচ্ছাদিত । ইহার সব নির্মাণ বেদ মন্ত্র অর্থাৎ ছন্দের দ্বারা হয়েছে । ও এ ছন্দ কী? ছন্দ হচ্ছে পদার্থ যা বেদ মন্ত্র ।
এই প্রকারেই ছন্দ বিষয়ে অন্য ঋষিদের প্রমাণ :-
১| ছন্দ স্তোতৃণাম ( নিঘন্টু 3/16)
২| ছন্দতি অর্চতিকর্মা ( নিঘন্টু 3/14)
৩| ছন্দাংসি ছন্দয়নতীতী বা ( দৈবত ব্রাহ্মণ 3/19)
৪| ছন্দাংসি বৈ বাজিন: ( গোপথ ব্রাহ্মণ 1/20)
৫| ছন্দাংসি বৈ ধুরঃ ( জৈমিনী ব্রাহ্মণ 3/210)
৬| ছন্দোবীর্যজ্ঞস্থয়তে ( জৈমিনী ব্রাহ্মণ 2/431)
৭| উপবরহণম্ দদাতি । এতদৈ ছন্দাংসি রূপম্( কপিষ্ঠল সংহিতা 44/4)
৮| ছন্দোভিহীদঃ সর্ব বয়ুনং নদ্ধম্ ( শতপথ ব্রাহ্মণ 4/2/2/4)
এই প্রমানের দ্বারা ছন্দ রশ্মির বহু গুণ স্পট হয় :-
(ক) ছন্দ রশ্মি প্রকাশ কে উত্পন্ন করে।
(খ) ছন্দ রশ্মি কোনো কণ, পরমাণু, আদিকে সমস্ত দিক থেকে আচ্ছাদন করে।
(গ) ছন্দ রশ্মি বলের সংযোজিকা ও উতপাদিকা
(ঘ) ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন কণ, ও সমস্ত লোকের আধার রূপকে ধারণ করে।
(ঙ) ছন্দ রশ্মি সমগ্র সৃষ্টির সংযোগ- বিয়োগ আদি ক্রিয়াকে সম্পাদিত ও সমৃদ্ধ করে ছড়ায় ।
(চ) সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ড ছন্দ রশ্মি দ্বারা বাধিত।
বেদ থেকে সমগ্র মহাবিশ্ব এবং এই মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তুর সৃষ্টির প্রমাণ
শৈলীর দৃষ্টিতে বেদ ৩টি আর বিষয়ের দৃষ্টিতে বেদ ৪টি।
শৈলীর দৃষ্টিতে বেদ ৩টি যথা-
ঋক
যজু:
সাম
বিষয়ের দৃষ্টিতে বেদ ৪টি যথা-
ঋগ্বেদ
যজুর্বেদ
সামবেদ
অথর্ববেদ
অর্থাৎ ঋগ্বেদের সমস্ত মন্ত্রে ঋক রশ্মি থাকে, আর তাই ঋগ্বেদের দ্বিতীয় নাম ঋক। যজুর্বেদের সমস্ত মন্ত্রে যজু: রশ্মি আছে, তাই একে যজু:। সামবেদের সমস্ত মন্ত্রে সাম রশ্মি আছে, তাই একে সাম আর অথর্ববেদের সমস্ত মন্ত্রে এই তিন প্রকার রশ্মি (ঋক, যজু:, সাম) রয়েছে। এই কারণে ঋষিদের প্রায় সকল গ্রন্থে ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ লেখার স্থানে আমরা সর্বত্র ঋক, যজু:, সাম-কেই দেখতে পাই ।
(১) ऋग्भ्यो जाताँ सर्वशो मूर्तिमाहुः। (তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/১২/৯/১)
অর্থাৎ, এই সৃষ্টির সমস্ত মুর্তিমান পদার্থ এবং জড় পদার্থ সবই ঋক রশ্মি (ঋগ্বেদ মন্ত্র) থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
(২) ऋक् अर्चनी । (নিরুক্ত ১/৮)
ঋক রশ্মি সূক্ষ্ম দীপ্তি যুক্ত হয়ে থাকে।
(৩) জৈমিনী ব্রাহ্মণ (২/৩৮০) – ব্রহ্মাণ্ডে যতগুলো অপ্রকাশিতলোক আছে, সূক্ষ্ম কণা আছে, অসুর তত্ব (Dark Matter) আছে, এদের মধ্যে ঋক রশ্মির প্রাধান্য রয়েছে।
(৪) ज्योतिस् तद् यद् ऋक् (জৈমিনী ব্রাহ্মণ ১/৭৬)
ঋক রশ্মি জ্যোতি স্বরূপ হয়ে থাকে।
(৫) কাঠক সংহিতা (২৩/৩) - ঋক রশ্মি যখন অপ্রকাশিত আর সঘন রূপ ধারণ করে তখন তার মধ্যে আকর্ষণ বলের প্রধানতা হয়।
(৬) কাঠক সংহিতা (২৭/১) - যেকোনো পদার্থরকে সংমিশ্রণে যজু: রশ্মির (যজুর্বেদমন্ত্রের) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
(৭) নিরুক্ত (৭/১২) – পদার্থের সংযোজন-বিয়োজনে যজু: রশ্মির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
(৮) अन्तरिक्षं वै यजुषाम् आयतनम् (গোপথ ব্রাহ্মণ প্রথম ২/২৪)
মহাকাশ হচ্ছে যজুঃ রশ্মির আয়তন। অর্থাৎ, মহাকাশ হচ্ছে যজুঃ রশ্মি (যজুর্বেদ মন্ত্র) দ্বারা গঠিত। মহাকাশ হচ্ছে যজু: রশ্মির জাল । মহাকাশ হচ্ছে যজু: রশ্মির এক সম্প্রসারণ। মহাকাশ হচ্ছে যজুঃ রশ্মির বিস্তার।
(৯) अन्वाहार्य्यपचनोऽन्तरिक्षलोको यजुर्व्वेदः। (ষদ্বিংশ ব্রাহ্মণ ১/৫)
যজু: রশ্মি থেকে অর্থাৎ যজুর্বেদের মন্ত্র দ্বারা মহাকাশ সৃষ্টি হয়েছে।
(১০) सर्वा गतिर्याजुषी हैव शश्वत् । (তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/১২/৯/১)
অর্থাৎ এই সমগ্র সৃষ্টিতে যত প্রকার গতি আছে, তার গতির কারণই হচ্ছে যজুঃ রশ্মি।
(১১) শতপথ ব্রাহ্মণ ১০/৫/১/৫ - সূর্যের রশ্মিতে সাম রশ্মি (সামবেদ মন্ত্র) এর প্রাধান্য রয়েছে।
(১২) তৈত্তিরীয় সংহিতা ৭/৫/১/৬ - এই মহাবিশ্বে, সমস্ত ধরণের কণা, কোয়ান্টাস, ক্ষেত্র কণা (Field Particles) এবং মধ্যস্থ কণা (Mediator Particles) এ সাম রশ্মির প্রাধান্য রয়েছে। এই সমস্ত সাম রশ্মি (সামবেদ মন্ত্র) থেকে তৈরি।
(১৩) তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/১২/৯/২ - এই মহাবিশ্বে যত প্রকাশ রয়েছে সেগুলোতে সাম রশ্মি বিদ্যমান রয়েছে, সাম রশ্মি দ্বারাই তারা প্রকাশিত। অর্থাৎ মহাবিশ্বের যত ধরনের তরঙ্গ যেমন বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ (Electromagnetic Waves) ইত্যাদি আছে, সেগুলোতে সাম রশ্মির প্রাধান্য রয়েছে।
(১৪) শতপথ ব্রাহ্মণ ১২/৮/৩/২৩ - সাম রশ্মির ভেদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।
(১৫) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/১/৩/৫ - সাম রশ্মি ঋক রশ্মিদের রক্ষাকারী।
(১৬) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/১/৩/৩ - সাম রশ্মিরা ঋক রশ্মির ভিতর আলোকিত হয়। যেমন ফোটন নিজে আলোকিত হয় না কিন্তু কোনো কণার মধ্যে পড়লেই তা শোষিত হয়, সেই কণাগুলো (Particles) আলোকিত হতে শুরু করে। অর্থাৎ কণাগুলোতে ঋক রশ্মি আর ফোটনে সাম রশ্মি রয়েছে তো ঋক রশ্মির ভিতর সাম রশ্মিরা আলোকিত হয়।
(১৭) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ৬/৪/১৩ - যখন বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গগুলো মহাকাশে গমন করে তো তাতে যে বিকিরণ আসে তা মহাকাশ থেকে সাম রশ্মি গ্রাস করে। অর্থাৎ যত প্রকাশিত কণা আর মূল কণা রয়েছে তারাও সাম রশ্মি গ্রাস করে।
(১৮) নিরুক্ত ৭/১২ - মনস্তত্বতে যখন সূক্ষ্ম প্রকাশ হবে এরূপ মুহূর্তে অর্থাৎ ওম রশ্মি যখন মনস্তত্বকে অনুপ্রাণিত করা শুরু করে তখন যে সর্বপ্রথম স্পন্দন মনস্তত্বতে হয় তাকে গায়েত্রী ছন্দ বলে। অর্থাৎ এই সৃষ্টিতে সর্বপ্রথম উৎপন্ন কম্পনই (স্পন্দন) হলো গায়েত্রী ছন্দ আর সর্বপ্রথম উৎপন্ন কম্পন যেটি হলো ওম সেটিই গায়েত্রী। গায়েত্রী ছন্দ দ্বারাই সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরা ওম রূপ গায়েত্রীই মনস্তত্বকে সামনের অন্য স্পন্দনগুলোকে উৎপন্ন করার জন্য প্রেরিত করতে থাকে আর মনস্তত্বতে যে পশ্যন্তী ওম রশ্মি স্পন্দন করে সেটিও সর্বপ্রথম গায়েত্রী ছন্দ রশ্মিকেই উৎপন্ন করে।
(১৯) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/২/৩/৯ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি অন্য ছন্দ রশ্মিগুলোর তুলনায় সূক্ষ্মতম কিন্তু সর্বাধিক তেজস্বিনী হয়ে থাকে আর এই সাতটি ছন্দতে এর গতিই সবচেয়ে বেশি।
(২০) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ২/১০১ – সৃষ্টি প্রক্রিয়াতে সর্বপ্রথম যে রশ্মিগুলো উৎপন্ন হয় ওসবগুলোই গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি এবং সংযোগ বিয়োগের যে ক্রিয়া হয় তা অকস্মাৎ দ্রুত এর মধ্যেই ঘটে থাকে। সৃষ্টি প্রক্রিয়ার প্রথম চরণে গায়েত্রী ছন্দ রশ্মির সংখ্যা অন্যান্য রশ্মির চেয়ে সর্বাধিক থাকে।
(২১) তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ১৩/৭/২ – সৃষ্টিতে প্রকাশ, বিদ্যুৎ, অগ্নি, উষ্মা, আবেশ ইত্যাদির উৎপত্তি যেখানেই হয় সেখানে অন্য রশ্মির তুলনায় গায়েত্রী ছন্দ রশ্মির প্রধানতা সর্বাধিক থাকে। অর্থাৎ প্রকাশ, বিদ্যুৎ, অগ্নি, উষ্মা, ফোটনে সর্বাধিক মাত্রা গায়েত্রী ছন্দ রশ্মির থাকে। এই সব উৎপন্ন করতে প্রথম ভূমিকা হলো গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি। সৃষ্টিতে যেখানেই কোনো কণার মাঝে সংযোগ বিয়োগ ক্রিয়া হয় আর তাতে যে সৃষ্টিতে প্রকাশ, বিদ্যুৎ, অগ্নি, উষ্মা, আবেশ হয় সেখানে গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি হয়। সৃষ্টিতে যত প্রকাশিত অপ্রকাশিত লোক, পৃথ্বিয়াদি, গ্রহ, উপগ্রহ, তারা, উল্কা-পিন্ড, ধূমকেতু, মহাকাশ আদিতে গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি সর্বত্র সর্বদা এই সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডে বিদ্যমান থাকে।
(২২) ঐতরেয় আরণ্যক ২/১/৬ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি প্রাণ রশ্মিকে ত্বকের নেয় আবৃত করে। অর্থাৎ গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি প্রাণ রশ্মিকে সর্বদা ঢেকে (আচ্ছাদিত) করে রাখে।
(২৩) শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৪/১/২ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি প্রাণ রশ্মিকে চারিদিকে আচ্ছাদিত করে ঢেকে রাখে অর্থাৎ প্রাণ রশ্মি আর ছন্দ রশ্মির (গায়েত্রী আদি) মিথুন (যুক্ত) না হলে সৃষ্টিও হবে না।
(২৪) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ৭/৩/৭ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি হলো অন্য ছন্দ রশ্মি মুখ। অর্থাৎ এটি ছন্দ রশ্মিকে বিভিন্ন ক্রিয়ার জন্য প্রেরিত করে।
(২৫) শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৩/৫/৪ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মিগুলো এই সৃষ্টির বীর্য রূপ কারণ সৃষ্টি তৈরী হতে মনস্তত্বতে এই ছন্দ রশ্মিগুলো অন্য ছন্দ রশ্মিগুলোকে বীজ বোনার ক্রিয়া করে থাকে।
(২৬) শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৩/৪/৬ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মিতে প্রকাশ থাকে আর অন্য ছন্দ রশ্মিকেও প্রকাশিত করে।
(২৭) নিরুক্ত ৭/১২, দৈবৎ ব্রাহ্মণ ৩/৪ – উষ্ণিক ছন্দ রশ্মি গায়েত্রী ছন্দ রশ্মিকে আবৃত করে আর অন্য ছন্দ রশ্মিতে পারস্পরিক আকর্ষণীয় ভাব সমৃদ্ধ করে এবং অধিক কান্তিযুক্ত (প্রকাশময়) বানায়।
(২৮) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ১/৫, কৌষীতকি ব্রাহ্মণ ১৭/২ - উষ্ণিক ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন ছন্দ রশ্মিতে সংযোজকতার গুণ বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ যৌগিক কণা যাই হোক না কেন তাদের ক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করে।
(২৯) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/৬/২/১১ - উষ্ণিক ছন্দ রশ্মিগুলো অন্য ছন্দ রশ্মি থেকে নির্গত যে সকল সূক্ষ্ম ছন্দ রশ্মিগুলো আছে তাদের শোষণ করতে সাহায্য করে।
(৩০) ঐতরেয় আরণ্যক ২/১/৬ - বিভিন্ন ছন্দ রশ্মি যেমন গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি রয়েছে যে সকল ছন্দরশ্মিকে ঢেকে রাখার কাজ করে তো এই উষ্ণিক ছন্দ রশ্মি সেই ঢেকে থাকা রশ্মির ওপর লোমের মতো সেই সকল ছন্দ রশ্মিকে নিরাপত্তা প্রদান করতে তাদের আবরণের কাজ করে।
(৩১) শতপথ ব্রাহ্মণ ১০/৩/১/১ - উষ্ণিক ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন ছন্দ রশ্মিকে প্রকাশশীল বানায়।
(৩২) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২০৯ - উষ্ণিক ছন্দ রশ্মি বজ্র স্বরূপ হয় এটি অন্য ছন্দ রশ্মিকে তীক্ষ্ণ বানাতে সাহায্য করে।
(৩৩) নিরুক্ত ৭/১২, দৈবৎ ব্রাহ্মণ ৩/৭ – অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মি অন্য ছন্দ রশ্মিকে অনুকূলতা পূর্বক থামায় অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডে বিভিন্ন ছন্দ রশ্মিগুলো নিজের কাজ করে আর যদি এমন সময় আসে যেখানে সেই রশ্মিগুলোতে শীতলতা আসে বা তাদের বল ক্ষীণ হতে থাকে এরূপ সময়ে অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মিগুলো তাদের সমর্থন করে, তারা তাদের কাজ করতে সাফল্য প্রদান করে।
(৩৪) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ১১/৫/১৭ - অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মিগুলো সকল ছন্দ রশ্মিগুলোর যোনি অর্থাৎ সকল ছন্দ রশ্মিগুলোর এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সকল ছন্দ রশ্মি উৎপত্তি হওয়ার মার্গ।
(৩৫) ঐতরেয় আরণ্যক ২/১/৬, ১/১/৩ - অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মির কোনো পদার্থকে ছেদন করার ক্ষমতা অন্য ছন্দ রশ্মির থেকে অনেক বেশি।
(৩৬) কাঠক সংহিতা ১৯/৩ - অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মি যজ্ঞ রূপ হয়। অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টির সংগতিকরণ, সংযোগীকরণ ও সংঘনাতে এর মূখ্য ভূমিকা থাকে।
(৩৭) কাঠক সংহিতা ১৯/৫ - অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মিগুলোর দ্বারা অগ্নি তত্বকে ধারণ করা হয় ও অগ্নি তত্ব এর মধ্যে বিদ্যমান থাকে। সৃষ্টিতে যেখানেই উষ্ণতা তাপমান আছে সেখানে অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মিগুলোর প্রমুখ ভূমিকা থাকে।
(৩৮) নিরুক্ত ৭/১২ - বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলো অন্য সকল রশ্মিকে, বিভিন্ন জগৎকে, সূক্ষ্ম কণাকে, ফোটনসকে ঘিরে ধরে নিজের বৃদ্ধি করতে থাকে; অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডে যখন এই পদার্থগুলোর নির্মাণ হতে শুরু করে তো প্রাণ আর ছন্দ রশ্মিগুলো ঘনীভূত হতে থাকে তো তাকে সংযোজিত করতে সূত্রাত্মা বায়ুর মুখ্য ভূমিকা থাকে তখন বৃহতী ছন্দ রশ্মি তার মধ্যে সংযোজিত আর ঘনীভূত হয়ে পিন্ডের আকার নির্মাণ করে।
(৩৯) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ৭/৪/৩ - বিভিন্ন রশ্মির যখন সঙ্কোচন ও সংঘাত হয় তো সেই সঙ্কোচনে বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলোর প্রমুখ ভূমিকা থাকে।
(৪০) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ৭/৩/৯ - মহাকাশে (আকাশ মহাভূত) বৃহতী ছন্দ রশ্মির প্রমুখ ভূমিকা থাকে। বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলোর কারণেই মহাকাশ যেকোনো পদার্থকে সংকুচিত করে।
(৪১) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২৯০, ২/৭ শতপথ ব্রাহ্মণ ১০/৫/৪/৬ - ব্রহ্মান্ডে সকল নক্ষত্রের (সূর্যের) ঘনত্বের নির্মাণে বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলোর মুখ্য ভূমিকা থাকে।
(৪২) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/৩১৬, ১/২৫৪ - সকল ছন্দ রশ্মির বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলোর কারণেই একত্রিত হয়ে থাকে, ওই সকল ছন্দ রশ্মিকে বেঁধে রাখার কাজ বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলো করে।
(৪৩) মহর্ষি দয়ানন্দ যজুর্বেদ ভাষ্য ২৩/৩৩, গোপথ ব্রাহ্মণ পূর্বার্দ্ধ ৫/৪, শতপথ ব্রাহ্মণ ১২/২/৪/৬ - পঙ্কতি ছন্দ রশ্মিগুলো ছড়িয়ে উৎপন্ন হয়। এটি নানান প্রকারের ক্রিয়াগুলোকে বিস্তৃত করে। বিভিন্ন রশ্মির ক্রিয়াগুলোকে এটি বিস্তার প্রদান করে তাকে ছড়িয়ে দেয়।
(৪৪) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৫/১৮, ৬/২০ - পঙ্কতি ছন্দ রশ্মি পাঁচ প্রকারের গতিতে যুক্ত থাকে।
(৪৫) মৈত্রায়ণী সংহিতা ৩/৩/৯ - পঙ্কতি ছন্দ রশ্মি যজ্ঞমান স্বরূপ হয়। অর্থাৎ এই রশ্মি পদার্থের মধ্যে সংযোগ বিয়োগ ক্রিয়াকে সম্পন্ন করে।
(৪৬) ঐতরেয় আরণ্যক ২/১/৬ - পঙ্কতি ছন্দ রশ্মি মজ্জার মতো ব্রহ্মান্ডে কার্য করে।
(৪৭) শতপথ ব্রাহ্মণ ১০/৩/১/১, কাঠক সংহিতা ৩৯/৮ - পঙ্কতি ছন্দ রশ্মি অন্য ছন্দ রশ্মিগুলোকে বিস্তার প্রদান করে সংযোগ বিয়োগ আদির ক্রিয়াকে বিস্তৃত করে।
(৪৮) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২৫৪ - ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি অন্য সকল রশ্মির নাভি তুল্য। ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি বৃহতী ছন্দ রশ্মির সাথে মিলে সম্পূর্ণ পদার্থ, ব্রহ্মান্ডকে বেঁধে রাখে।
(৪৯) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৬/১২ - ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি উৎপাদক ক্ষমতায় বিশেষ যুক্ত হয়ে থাকে। ব্রহ্মান্ডে সকল কণা, পদার্থ, লোক লোকান্ত্রের নির্মাণে অন্য রশ্মির যে নিজ নিজ ভূমিকা থাকে সেসব রশ্মিকে ত্রিষ্টুপ রশ্মি বল শক্তি প্রদান করে আর তাদের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।
(৫০) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ৭/৩/৯ - তারার কেন্দ্র ভাগে যে একীকরণ ক্রিয়া হয় ওখানে ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মির ভূমিকা মুখ্য থাকে।
(৫১) শতপথ ব্রাহ্মণ ৬/৬/২/৭, জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/১৩২, ৩/২০৬ - ব্রহ্মান্ডে যে তীক্ষ্ণ বিদ্যুৎ তরঙ্গ (তড়িৎ) হয় ওই বিদ্যুতের বজ্র ও দীপ্তিতে ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মির ভূমিকা থাকে।
(৫২) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ২০/১৬/৮ - যতগুলো ছন্দ রশ্মি আছে তাদের মধ্যে দুটি ছন্দ রশ্মি (ত্রিষ্টুপ ও গায়েত্রী) সব থেকে অধিক বীর্যবান, তেজস্বিনী, ভেদক ক্ষমতা অত্যাধিক আর প্রেরক ক্ষমতা সর্বাধিক আছে।
(৫৩) তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ১/১/৯/৬ - ব্রহ্মান্ডে যেখানেই যত ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি হবে সেখানে ততই প্রকাশ, তেজ, বল, ভেদন শক্তি হবে।
(৫৪) দৈবৎ ব্রাহ্মণ ৩/১৪, ৩/১৫ - ব্রহ্মান্ডে সকল ছন্দ রশ্মি যারা নিজের নিজের কার্য করে তাদের মধ্যে কিছু ছন্দ রশ্মি দুর্বল হতে থাকে তো তাদের ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি সাহায্য করে বল এবং শক্তি প্রদান করে।
(৫৫) নিরুক্ত ৭/১২ - ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন কণা, রশ্মি আর তরঙ্গকে তিন প্রকারে থামিয়ে রাখে।
(৫৬) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ২/১৬ - ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি বজ্র রূপ হয়।
(৫৭) জৈমিনীওপনিষদ ব্রাহ্মণ ১/১৭/৩/৩ - ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি মহাকাশে প্রচুর মাত্রায় থাকে। এই রশ্মিগুলো মহাকাশকে আবদ্ধ করে রাখে।
(৫৮) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/৩/৪/১১ – মহাকাশে ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মির প্রধানতা থাকে।
(৫৯) নিরুক্ত ৭/১৩ - জগতী ছন্দ রশ্মি সর্বাধিক দূর গতি কারক হয়ে থাকে আর এর গতি জলের ঢেউ এর মতো হয়। এই রশ্মিগুলি সবার শেষে উৎপন্ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ জগতী ছন্দ রশ্মিগুলির কম্পন দূরগামী হয় কিন্তু এর কম্পন করার গতি অন্য ছন্দ রশ্মির তুলনায় ধীরগতির হয়ে থাকে। অর্থাৎ ব্যাপক কিন্তু ধীর।
(৬০) শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৮/২/১১ - সম্পূর্ণ জগৎ এই জগতী ছন্দ রশ্মিগুলিতে প্রতিষ্ঠিত।
(৬১) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৩/৪৭ - জগতী ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন কণা ও কোয়ান্টজকে আবদ্ধ করে আর সংযোগ ক্রিয়া হেতু তাকে প্রেরিত করে।
(৬২) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ২১/১০/৯ - জগতী ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন পদার্থকে শক্তিশালী করে তোলে। এই রশ্মিগুলি পদার্থের যে সংযোগ ও বিয়োগ করে এটা তাকে অবশোষিত করে তাকে শক্তিশালী করে।
(৬৩) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/৯৩, ষদ্বিংশ ব্রাহ্মণ ২/৩ - জগতী ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন প্রকারের পদার্থের উৎপত্তিতে সহায়ক হয়।
(৬৪) গোপথ ব্রাহ্মণ উত্তরার্দ্ধ ২/৯ - নক্ষত্র আদি (সূর্য) লোকে যে শোষণ-নির্গমনের ক্রিয়া হয় তাতে জগতী ছন্দ রশ্মিগুলির প্রমুখ ভূমিকা থাকে।
(৬৫) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/৬/২/৩, ঐতরেয় আরণ্যক ২/১/৬, মৈত্রায়ণী সংহিতা ৩/১৩/১৭ - সকল প্রকারের কণা ও কোয়ান্টজকে নিয়ে যেতে, তাদের গতি প্রদান করতে জগতী ছন্দ রশ্মির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
(৬৬) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ১৯/৪/২৩ - ঈশ্বর সৃষ্টি নির্মাণের জন্য মনস্তত্ব স্পন্দন উৎপন্ন করেন। সর্বপ্রথম পশ্যন্তী ওম রশ্মির স্পন্দন হয় আর তার তীব্রতা (intensity) বাড়তে থাকে আর তাতে ১২টি পদার্থ উৎপন্ন হয়।
(৬৭) নিরুক্ত ১৩/১২ - বৈদিক শব্দ কখনো ছিন্ন (নষ্ট) হয় না। বৈদিক শব্দ (মন্ত্র/ঋচা/ছন্দ) দ্বারা সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ড তৈরি হয়। আর সেই অক্ষরগুলো দিয়ে উৎপন্ন বিভিন্ন রশ্মির দ্বারা এই সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ড তৈরী হয়েছে।
সৃষ্টির প্রলয়ের পশ্চাতেও যখন কোনো কিছু থাকে না তখনও এই অক্ষর অব্যাক্ত রূপে মূল পদার্থ (প্রকৃতি) তে বিদ্যমান থাকে। অক্ষররের নিবাস বাণীতে হয়। অক্ষর রূপ রশ্মিগুলি সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডের (অক্ষ)আধার হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডে উপস্থিত পদার্থ (সূর্য, চাঁদ, আকাশ, মহাকাশ, উল্কা, ধূমকেতু, গ্রহ, উপগ্রহ, তারা, সৌরজগত) এই বৈদিক অক্ষর (বেদ মন্ত্র)গুলো দ্বারা নির্মিত। তথা এই সমস্ত পদার্থগুলোতে এই বৈদিক অক্ষর সর্বত্র বিদ্যমান রয়েছে।
(৬৮) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ভাষ্য ৩/৫৫/১ - যেটি মহৎ তত্বের অবস্থা ওখানেই অক্ষর হয় অর্থাৎ মহৎ তত্বই অক্ষর রূপ। অক্ষর রূপ পদার্থ হল মহৎ তত্বের এক সূক্ষ্ম অংশ (পরমাণু)।
(৬৯) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৩/৬, গোপথ ব্রাহ্মণ ৩/২, তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/৩/৬/১১, মৈত্রায়ণী সংহিতা ৪/৩/৮ – ব্যাহৃতি রশ্মিগুলি অন্য রশ্মিগুলিকে সুগমতা আর ভালো প্রকারে ধারণ আর নিয়ন্ত্রিত করতে সহায়ক হয়। বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিগুলি এই রশ্মিতে প্রতিষ্ঠিত হয় আর প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই রশ্মি নিজের নিজের কর্ম ভালো প্রকারে করতে সক্ষম হয়। এই রশ্মি অন্য রশ্মি থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে আর তাতে পূর্ণ ব্যাপ্ত হয়ে তাকে আধার প্রদান করিয়ে তার বাইরের ভাগে স্থিত হয়ে যায় আর যেসকল ক্রিয়াগুলি হচ্ছে, তাতে পুর্ন গতি ও বল প্রদান করে।
(৭০) গোপথ ব্রাহ্মণ ৩/২৩, তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ৬/৮/৬, কৌষীতকি ব্রাহ্মণ ৩/২, জৈমিনীওপনিষদ ব্রাহ্মণ ১/৩/৩/৫, ১/১১/১/৯ -
হিম্ তথা ঘৃম্ রশ্মি বিভিন্ন রশ্মির জন্য পুরুষ রূপ ব্যবহার করে। এটা তাদের অনুপ্রাণিত করে আর নিরন্তর তাদের বল প্রদান করতে থাকে তথা দুই ছন্দ রশ্মিকে বাঁধতে (জুড়তে)সহায়ক হয় আর না কেবল সন্ধির কাজ করে অপিতু ওই দুই রশ্মিতে প্রতিষ্ঠান করে তাকে নিরন্তর বল প্রদান করতে থাকে আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই রশ্মিগুলি অন্য রশ্মিগুলিকে সংকুচিত করে ও তাকে বেঁধে কম্পন করতে থাকে যাতে সেটি পৃথক না হতে পারে।
(৭১) তৈত্তিরীয় সংহিতা ২/২/৯/৪, ২/৩/১০/১ মৈত্রায়ণী সংহিতা ১/৬/৮, ২/৩/৪ –
হিম্ তথা ঘৃম্ রশ্মিগুলি পদার্থ থেকে ঝরতে থাকে। এই রশ্মিগুলি তেজ স্বরূপ হয়, এর থেকে তেজ উৎপন্ন হয়।
(৭২) শতপথ ব্রাহ্মণ ৭/৫/১/৩ - হিম্ তথা ঘৃম্ রশ্মি হলো মহাকাশের রূপ। মহাকাশে যে সূক্ষ্ম দিপ্তি (প্রকাশ) আছে তাতে এই রশ্মি বিদ্যমান।
(৭৩) কাঠক সংহিতা ২৭/১, কপিষ্ঠ সংহিতা ৪২/১ - মনস্তত্বের দ্বারাই প্রাণ তত্বকে ধারণ করে আছে। অর্থাৎ মন রূপী মহাসাগরে এই রশ্মি তরঙ্গের রূপে উৎপন্ন হতে থাকে, এর থেকেই সম্পূর্ণ সৃষ্টি হয়েছে।
(৭৪) কাষকৃষ্ণ শতপথ ৩/১/৪/২ - প্রাণই দড়ির সমান। প্রাণই সকলকে বেঁধে রেখেছে, সকলকে নিয়ন্ত্রণ করছে আর তাই প্রাণকেই রশ্মি বলা হয়।
(৭৫) তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/২/৫/২ - প্রাণ রশ্মির হলো রূপ। প্রাণ তরঙ্গ রূপে হয়।
(৭৬) ঐতরেয় আরণ্যক ৩/১/৬ - বাক আর প্রাণ তত্ব সাথে -সাথে থাকে।
(৭৭) শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৪/১/২ - বাক আর প্রাণ তত্ব এক জোড়ায় থাকে। এই দুইয়ের মিথুনেই সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ কেবল ধনাত্মক চার্জ অথবা কেবল ঋণাত্মক চার্জ দ্বারা সৃষ্টি হয় না। এই দুইয়ের মিথুনেই সৃষ্টি হয়।
(৭৮) ব্রহ্মসূত্র ২/৪/৫, ২/৪/১৪ - সাত প্রকারের ভিন্ন ভিন্ন গতির কারণে প্রাণ প্রধানত সাত প্রকারের হয় ও তার গুণ ব্যাবহারও ভিন্ন ভিন্ন রকম হয় আর এই সকল প্রাণ রশ্মি হলো জ্যোতি, বিদ্যুৎ ও প্রকাশের মূল কারণ । এই সৃষ্টিতে যেখানেই প্রাণ রশ্মি আছে ওখানে বিদ্যুৎ আছে আর এই প্রাণ তত্বের কারণেই বিদ্যুৎ চার্জ আটকে আছে আর এই প্রাণ তত্বের কারণেই বিদ্যুৎ চার্জ উৎপন্ন হয় ।
(৭৯) মহর্ষি দয়ানন্দ যজুর্বেদ ভাষ্য ১৭/৩২ - গন্ধর্ব শব্দের অর্থ সূত্রাত্মা বায়ু করেছেন আর তার উৎপত্তি ১০ প্রাণের পূর্বে হয় এমনটা লেখা আছে।

(৮০) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ভাষ্য ৬/২১/৯ আর যজুর্বেদ ২৭/২৫ - এ ভাবার্থে সূত্রাত্মা বায়ুর জন্য এক বিশেষণের প্রয়োগ করেছেন সর্বধর্ম । অর্থাৎ এই সূত্রাত্মা বায়ু অন্য ১০ প্রাণ রশ্মিকে ধারণকারী তাদের বেস
আর তাদের পালনকারী, তাদের নিরন্তন বল প্রদানকারীও ।

(৮১) মৈত্রায়ণী সংহিতা ৩/৮/৪, কপিষ্ঠ সংহিতা ৩৮/৬, কৌষীতকি ব্রাহ্মণ ১৭/৭, তৈত্তিরীয় আরণ্যক ১০/৬৪/১ - বিভিন্ন প্রাণ রশ্মি রূপী দেবতাদের যজ্ঞান করাতে সর্বোপরি ভূমিকা নেয় আর ওম রশ্মির পশ্চাৎ সম্পূর্ণ সৃষ্টিতে বিভিন্ন রশ্মি এবং কণাকে যুক্ত করতে সর্বোচ্চ ভূমিকা এরই হয়ে থাকে।

(৮২) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ২/৪০ - সূত্রাত্মা বায়ু বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিতে মিশ্রিত। এটি মিশ্রিত হয়েই প্রকট হয়। এবং পদার্থতে মিশ্রিত হয়ে তাকে সংযুক্ত করে।

(৮৩) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ২/৪১ - প্রাণ রশ্মি মহাকাশকে সামর্থবান বানায়।

(৮৪) মহর্ষি দয়ানন্দ প্রাণ শব্দের জন্য অনেক বিশেষণ প্রয়োগ করেছেন। ঋগ্বেদ ভাষ্য ৬/১/৫০ তে শব্দের জন্য প্রিয়ম এর প্রয়োগ করেছেন।
অর্থাৎ প্রাণ নামক প্রাণ রশ্মিতে আকর্ষণ বল হলো প্রধান। সৃষ্টিতে যেখানেই আকর্ষণ বল আছে সেই প্রাণ রশ্মিতে আকর্ষণ বলের প্রধানতা সব থেকে অধিক হয়।

(৮৫) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ১/১৫/৬ এর ভাষ্যে প্রাণের জন্য লিখেছেন সর্বমিত্র বাহ্যগতি। অর্থাৎ এই প্রাণ রশ্মি সকলের মিত্র হয়ে সকলকে আকর্ষিত করে ভেতর থেকে বাহিরে গতি করে।

(৮৬) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২৭২ - প্রাণ রশ্মি থেকে প্রিয় অর্থাৎ আকর্ষণ বল যুক্ত এই স্তরের অন্য কোনো রশ্মি নেই।

(৮৭) গোপথ ব্রাহ্মণ পূর্বার্দ্ধ ১/৩৩, শতপথ ব্রাহ্মণ ১২/৯/১/১৬ - প্রাণই প্রত্যেক পদার্থের প্রেরক আর উত্পাদক।

(৮৮) তৈত্তিরীয় আরণ্যক ৭/৫/৩, তৈত্তিরীয় উপনিষদ ১/৫/৩ - ভূ: রশ্মি প্রচুর মাত্রায় উত্পন্ন হলে তখন প্রাণ রশ্মি উৎপন্ন হয়।

(৮৯) তৈত্তিরীয় সংহিতা ২/৫/২/৪ - প্রাণ রশ্মি বল প্রধান হয় আর অপান রশ্মি হলো ক্রিয়া প্রধান। অর্থাৎ পদার্থে যেখানেই বল অধিক হয় ওখানে প্রাণ রশ্মি হলো প্রধান এবং যেখানে ক্রিয়া অধিক হয় ওখানে অপান রশ্মি হলো প্রধান।

(৯০) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/৩৭ - প্রাণ রশ্মি কোনো রশ্মির বাহিরে এবং অপান রশ্মি কোনো রশ্মির ভেতরে থেকে তাদের বল প্রদান করে। অর্থাৎ প্রাণ রশ্মি প্রত্যেক কণা ও তরঙ্গের ভেতর বাহিরের দিকে স্পন্দিত হয় আর অপান রশ্মি প্রত্যেক কণা ও তরঙ্গের ফোটনের ভেতর স্পন্দিত হয়।

(৯১) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২৫৪, কৌষীতকি ব্রাহ্মণ ১৩/২, তৈত্তিরীয় আরণ্যক ৭/৫/৩, তৈত্তিরীয় উপনিষদ ১/৫/৩ - ব্যাহৃতি আর পঙ্কতি ছন্দ রশ্মি প্রাণ রশ্মির সমান ব্যবহার করে। অর্থাৎ গুরুত্ব বলের প্রধানতা প্রাণ রশ্মি হয়।

(৯২) ছান্দোগ্যপনিসাদ ১/৩/৩ - ব্যান রশ্মি ছাড়া প্রাণ ও অপান রশ্মি পরস্পর জুড়ে থাকতে পারে না।

(৯৩) শতপথ ব্রাহ্মণ ১২/৯/১/১৬ - ব্যান রশ্মি বরুণের সমান হয়। এই ব্যান রশ্মি প্রাণ ও অপান রশ্মিগুলিকে বেঁধে রাখে অর্থাৎ ব্যান রশ্মিগুলি সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডকে ধরে রাখতে সূত্রাত্মা বায়ুকেও সাহায্য করে।

(৯৪) মৈত্রায়ণী সংহিতা ৩/৪/৪, কাঠক সংহিতা ২১/১২ - ব্যান রশ্মি প্রাণ ও অপান রশ্মিগুলিকে তিন প্রকার থামিয়ে ও বেঁধে রাখে আর তাদের তেজ ও বলে সম্পন্ন হতে সাহায্য করে।

(৯৫) তৈত্তিরীয় আরণ্যক ৭/৫/৩, তৈত্তিরীয় উপনিষদ ১/৫/৩ - যখন ব্রহ্মান্ডে স্ব: রশ্মি প্রধান হয় তখন এর উৎপত্তি হয় আর ব্যান প্রাণের অনেক গুণও স্ব: ব্যাহৃতি রশ্মিগুলির গুণের অনুরূপ।

(৯৬) কাঠক সংহিতা ৩৯/৮ - ব্যান রশ্মি অপান রশ্মিগুলিকে ছড়িয়ে দিয়ে কোয়ান্টজ-এর কণের তুলনায় অতি ন্যূন ঘনীভবন প্রদানে সাহায্য করে।

(৯৭) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ভাষ্য ১/১৩১/২- তে বলা হয়েছে - सर्वत्रैव स्वव्याप्तयैकरसम
অর্থাৎ সমান রশ্মি বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিতে সর্বত্র একরস হয়ে ব্যাপ্ত থাকে।

(৯৮) মহর্ষি দয়ানন্দ যজুর্বেদ ভাষ্য ২২/৩২ -তে সমান রশ্মি সম্বন্ধে বলা হয়েছে- समानयति रसं येन सः
অর্থাৎ সমান রশ্মি না কেবল স্বয়ং ছন্দময় হয়ে স্পন্দিত (কম্পিত) করে বরং প্রাণ অপান আদি অন্য রশ্মিকেও ছন্দময় বানিয়ে রাখে।

(৯৯) মহর্ষি য়াস্ক নিরুক্ত ৪/২৫ - সমান রশ্মি বিভিন্ন রশ্মির পরিসীমাতেই সঞ্চিত হয়ে তাকে বানিয়ে রাখতে সহায়ক হয় অর্থাৎ এই রশ্মি বিভিন্ন প্রাণ রশ্মির সীমাতেই থেকে স্পন্দিত হতে থাকে।

(১০০) শতপথ ব্রাহ্মণ ৬/২/২/৬ - উদান রশ্মি অন্যান্য রশ্মিকে নিয়ন্ত্রণ করে, নিয়মিত করে আর একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে অর্থাৎ এই রশ্মি ব্যানকে প্রাণের সাথে তথা ব্যানকে অপানের সাথে সংযোগ স্থাপনে এটি প্রধান ভূমিকা পালন করে।

(১০১) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২২৯ - উদান রশ্মি বিভিন্ন প্রকারের পদার্থের গুণে বৃদ্ধি করে অর্থাৎ এই রশ্মি বিভিন্ন পদার্থ যেমন কণা, অণু, পরমাণু, ফোটন, সৌরজগৎ আদি সব পদার্থের গুণে বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়।

(১০২) ষদ্বিংশ ব্রাহ্মণ ২/৭ - উদান রশ্মি বিভিন্ন রশ্মিকে পরস্পর সংযুক্ত হতে সহায়ক হয়।

(১০৩) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ভাষ্য ৬/৫০/১ - তে উদানকে নিয়ে লেখা আছে-
উদান রশ্মিগুলি হলো উৎকৃষ্ট। এই রশ্মি অন্য রশ্মিকে উৎকৃষ্ট বল প্রদানকারী আর অন্য রশ্মির ক্রিয়াগুলিকে উৎকৃষ্ট রূপ প্রদানকারী আর এটি প্রাণ রশ্মি, বিভিন্ন রশ্মি, কণা, অণু, পরমাণুর গতি ও বলকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হয়।

(১০৪) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ভাষ্য ১/২৩/৪ – তে লিখেছেন ऊर्ध्वगमनबलहेतुमुदानं
অর্থাৎ কোনো বলের বিরুদ্ধে কার্য করতে উদান রশ্মির প্রাথমিক ভূমিকা হয়ে থাকে।

(১০৫) মহর্ষি দয়ানন্দ উণাদিকোষ ৫/১ - তে লিখেছেন –
যে জ্বালায় অথবা যে জ্বালান ক্রিয়া করা হয় তা নাগ রশ্মি বলে অর্থাৎ ব্রহ্মান্ডে যেখানেই উষ্মা আছে সেখানে নাগ রশ্মিগুলির প্রধানতা আছে। নাগ রশ্মির স্পন্দন অতি সুক্ষ্ম হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিতে নাগ রশ্মির গতি সব থেকে ধীর হয়ে থাকে। নাগ রশ্মির গতি সব থেকে ধীর হলেও এটি প্রাণ রশ্মিকে বাধাহীন গতি বল প্রদানের ক্ষমতা রাখে এটি তার বিশেষত্ব।

(১০৬) শতপথ ব্রাহ্মণ ৭/৫/১/১ - ব্রহ্মান্ডে কুর্ম প্রাণ রশ্মি রসরূপ হয়ে অপান রশ্মিগুলিকে প্রেরণ ও বল প্রদান করে।

(১০৭) শতপথ ব্রাহ্মণ ৭/৫/১/৫ - ব্রহ্মান্ড নির্মাণে যখন প্রাণ অপান রশ্মি কার্য করতে থাকে তো মনস্তত্ব অন্য সুক্ষ্ম রশ্মিকেও উৎপন্ন করে। ব্যানকে অপানের সঙ্গে সংযুক্ত করতে কুর্ম প্রাণ রশ্মির ভূমিকা আছে।

(১০৮) শতপথ ব্রাহ্মণ ৭/৫/১/৩৫ - কুর্ম প্রাণ অপান রশ্মিকে নিয়ন্ত্রণ করে, অপান রশ্মিকে ব্যানের সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যানের দ্বারা প্রাণ রশ্মিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

(১০৯) তৈত্তিরীয় সংহিতা ৫/২/৮/৫ - কুর্ম প্রাণ মরুদ ও ছন্দ রশ্মিকে তথা সুক্ষ্ম কণাকে পরস্পর সংযুক্ত করতে সহায়ক হয়।

মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা ও সৃষ্টিতত্ত্ব সম্বন্ধে বেদ অর্থাৎ মহাজাগতিক তথা সৃষ্টিতত্ত্ব ধর্ম্মগ্রন্থ অনুযায়ীঃ

মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থায় ছিল শূন্য তাপমাত্রা। জিরো ডেনসিটি নো ফোর্স জিরো নয়েস বা ফ্রিকোয়েন্সি। সুপ্ত অবস্থায় একটি মহাবিশ্ব। পদার্থের সমস্ত বৈশিষ্ট্য ভর সহ নিষ্ক্রিয় ছিল কারণ পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি নিজেই নিষ্ক্রিয় ছিল সুতরাং মহাবিশ্বের সেই অবস্থাটি সনাক্ত করা অসম্ভব, পদার্থের সমস্ত বৈশিষ্ট্য স্লিপিং মোডে ছিল। মহাবিশ্বের শুরুতে পদার্থের প্রাথমিক অবস্থাঃ

১. এটি শূন্য তাপমাত্রা ছিল
২. শূন্য ঘনত্ব
৩. শূন্য বল
৪. অত্যন্ত শান্ত
৫. গতি শূন্য
৬. তখন সময় ও ছিল না
৭. আকাশ ছিল না
৮. তখন দিক ছিল না
৯. এটি সুপ্ত অবস্থায় ছিল
১০. ভর সহ সমস্ত পদার্থের বৈশিষ্ট্য নিষ্ক্রিয় ছিল।

মহাবিশ্বের মূল বিষয় [মূল প্রকৃতি] বা বস্তুগত কারণের ৩ টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে সত্ত্ব ( Force ) রজঃ ( Matter / mass ) তমঃ (Motion), এই তিনটি বৈশিষ্ট্য যা মহাবিশ্বের শুরু হওয়ার সময় নিষ্ক্রিয় থাকে। সত্ত্বঃ, রজঃ, তমঃ এই তিন গুণের সাম্য অবস্থার নামই প্রকৃতি ( সাংখ্য ১/২৬)।। পরমাত্মা ঐ প্রকৃতিতে বাক্ রশ্মি যোগ করে দেয়। পরা ওম্ রশ্মির নাম বাক্ রশ্মি। বাক্ বৈ ভর্গঃ।। বাক্ রশ্মি যোগ হবার সাথে সাথে প্রকৃতির সাম্য অবস্থা ভঙ্গ হয়ে সূক্ষ গতির সঞ্চার হয়ে প্রকৃতিকে ডিষ্টার্ব করে বিভিন্ন রশ্মির নির্মান হতে থাকে সর্বশেষ মলিকুলার স্টেটে গিয়ে আকারবান গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি নির্মান হতে থাকে।। ( অথর্ব ৮/৯/৩) এবং শতপথ (১০/৩/৪/১০)।।

আমরা সকলেই জানি নিউটনের গতির প্রথম আইনটি বলে যে: কোনো নিট বল প্রযুক্ত না হলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় বা সরল পথে চলতে থাকে। গাণিতিকভাবে বলা যায় যে কোনও বস্তুর উপর প্রযুক্ত নিট বল যদি শূন্য হয় তবে বস্তুর গতিবেগ ধ্রুব থাকে। কোনও বাহ্যিক শক্তি প্রয়োগ না করা অবধি একটি বস্তু বিশ্রামেই থাকবে। প্রাথমিকভাবে, এ জাতীয় শক্তি কখনই প্রাকৃতিকভাবে ঘটতে পারে না। এই ধরনের শক্তি কেবল একটি সচেতন সত্ত্বা দ্বারা প্রয়োগ করা যেতে পারে, সচেতন সত্ত্বা ব্যতীত মহাবিশ্ব নিজেকে তৈরি করতে পারে না। সুতরাং এটি পদার্থবিদ্যার মাধ্যমেই ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ। আমরা বলতে পারি ঈশ্বর 'ওম্ রশ্মির' মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থার সূত্রপাত করেছে। 'য়ানি, ত্রীণি বুহন্তি য়েষাং চতুর্থ বিনিযুক্ত বাচম।"-অথ০৮।৯।৩

"সত্ত্বরজস্তমসাংসাম্যাবস্থা প্রকৃতিঃ"- সত্বঃ, রজঃ, ও তমঃ স্বরূপ তিন প্রকারের অনাদি নিত্য কারণ সমান সংখ্যক ও সমান শক্তি বিশিষ্ট থাকায় পরস্পর মুক্ত হইতে না পারিয়া পৃথক্ পৃথক্ থাকা অবস্থায় নাম প্রকৃতি যাহা এই সমস্ত সৃষ্ট পদার্থের মূল কারণ। উহা জড় ও ত্রিগুণাত্মক বলিয়া সংযোগ বিয়োগের উপযোগী। যদি কোন জ্ঞাতা নিজ শক্তি দ্বারা সৃষ্টি ও প্রলয় না করিতেন, তবে এই সমস্ত প্রকৃতি বা মূল কারণ নিজ নিজ কারণ বা স্বরূপ অবস্থায় চিরকাল পড়িয়া থাকিত।
সত্বঃ, রজঃ, তমঃ তত্ত্বে পরমাত্মা বাক্ নিযুক্ত করিয়া দেন। বাকের অপর নাম একাক্ষর 'ওম্' রশ্মি। পরমাত্মা 'ওম্' রশ্মি দ্বারা সর্বপ্রথম প্রকৃতির সাম্য অবস্থা ভঙ্গ করে সৃষ্টির নির্মাণ করেন । ওম রশ্মি হ'ল সূক্ষ্মতম স্পন্দিত সত্ত্বা, এটি স্ট্রিংয়ের মতো। স্ট্রিং তত্ত্বটি বলে যে পদার্থের সূক্ষ্ম রূপটি স্ট্রিং আকারে বিদ্যমান। আধুনিক বিজ্ঞানী এই স্ট্রিং তত্ত্বটিকে সন্দেহজনক উপায়ে দেখেন তবে বেদ বিজ্ঞান এই বিষয়টিকে স্বীকার করে যে বিষয়টি স্পন্দিত সত্তার আকারে বিদ্যমান, যদিও বেদে স্বীকৃতি দেয় না সম্পূর্ণ স্ট্রিং তত্ত্বটিকে। এই বিভিন্ন ধরণের স্পন্দিত সত্ত্বা কম্পিউটার প্রোগ্রামের কোডগুলির মতো, যেখানে প্রতিটি কোডের নিজস্ব ভূমিকা থাকে। প্রলয়কাল শেষ হবার সাথে সাথে পরা ওম্ রশ্মির সৃষ্টি হয়। পরা ওম্ রশ্মির অপর নাম কাল রশ্মি। পরা 'ওম্' রশ্মির প্রভাবে প্রকৃতিতে সমায়িত অক্ষরশ্মি সক্রিয় হইবার সাথে-সাথে প্রকৃতি বিভাজিত হইয়া মহত্তত্বে পরিণত হইয়া থাকে। ব্যাঞ্জন অক্ষর রশ্মি এবং স্বর অক্ষর রশ্মির প্রভাবে মহঃ তথ্যের মাঝে বহু লক্ষণ সৃষ্টি হয়। এই সজল লক্ষণ অক্ষর রশ্মি জাত বলিয়া প্রসিদ্ধ হয়। এই সকল রশ্মি একত্র হইয়া বেদ মন্ত্রের সৃষ্টি হইতে থাকে। অক্ষর রশ্মির প্রভাবে মন্ত্র, মন্ত্রোক্ত ঋষি, দেবতা, স্বরঃ এবং ছন্দের সৃষ্টি হইতে থাকে। মন্ত্র, ঋষি,স্বরঃ ছন্দের প্রভাবে সকল পদার্থের সৃষ্টি হয়। মহতত্বে অক্ষরের প্রভাবে প্রকৃতির গুণ জাগ্রত হইয়া থাকে, সর্বপ্রথম মহত্তত্ত্ব হইতে মনস্তত্ব,মনস্তত্ব হইতে সূক্ষ্ম প্রাণরশ্মি এবং মরুত রশ্মি, পরে ইহা হইতে ছন্দরশ্মি এবং কোয়ার্ক> প্রোটন> নিউক্লিয়াস> অ্যাটম> মলিকুল আদির সৃষ্টি হয়। অবকাশ রূপ আকাশে মনস্তত্ত্ব ভরা থাকে, পরাওম্ রশ্মি উৎপন্নের পর পশ্বন্তি ওম্ রশ্মির উৎপন্ন হয়। পশ্বন্তি ওম্ রশ্মির উৎপন্নের ফলে মন সক্রিয় হয়। পশ্বন্তি ওম্ রশ্মির তিব্রতা বাড়ার ফলে অন্য অনেক রশ্মির উৎপন্ন হয়(ঐতঃ ব্রাঃ ১৯।৪।২৩)। প্রাণ মনস্তত্ত্বে উৎপন্ন হওয়া সূক্ষ্ম কম্পন (প্রান কম্পনাতঃ -ব্রহ্মসূত্র ১।৩।৪৯, ২।৪।৭)। মনস্তত্ত্ব অহংকার দ্বারা প্রেরিত, মহত্তত্ত্ব কাল দ্বারা প্রেরিত।



ম রশ্মি সহ এই রশ্মিগুলি বুঝতে আমরা সমুদ্রের তরঙ্গের উদাহরণ ও নিতে পারি। একটি মহাসাগর তরঙ্গে হাজার হাজার তরঙ্গ বিদ্যমান, কিছু বড় তরঙ্গ এবং কিছু ক্ষুদ্রতম বা সূক্ষ্ম তরঙ্গ রয়েছে। সমুদ্রের তরঙ্গগুলির ধরণটি সাবধানতার সাথে বিশ্লেষণ করা দরকার যে আমরা বৃহত্তম তরঙ্গগুলির মধ্যে কিছু ক্ষুদ্রতম তরঙ্গ দেখতে পাই। এই পদ্ধতিতে একটি ম্যাক্রো তরঙ্গের ভিতরে প্রচুর তরঙ্গ বিদ্যমান। একটি মহাসাগর তরঙ্গে ম্যাক্রো তরঙ্গকে সূক্ষ্ম করার একটি প্যাটার্ন বিদ্যমান। একইভাবে, ওম রশ্মি প্রতিটি ম্যাক্রো রশ্মিতে থাকে এবং এটি প্রতিটি রশ্মিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সমস্ত রশ্মির নিয়ন্ত্রকের মতো। এই প্রকার, প্রকৃতি রূপী সমুদ্রে 'ওম' রশ্মি নামক তরঙ্গ, অন্য তরঙ্গকে জন্ম দেয় এবং এইভাবে বিভিন্ন প্রকার তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। প্রকৃতির এই তরঙ্গকে রশ্মি বলা হয়। 
একটি প্রশ্ন উঠতে পারে যে যদি সবকিছু সুপ্ত অবস্থায় থাকত তবে এই ওম্ রশ্মি কোথায় ছিল ? এই রশ্মি কোনও পৃথক সত্ত্বা নয় বরং প্রাথমিক অবস্থারই একটি অংশ।
উদাহরণস্বরূপ এটি বুঝতে আপনি একটি শান্ত পুকুরে পাথর ফেলে দেওয়ার কল্পনা করতে পারেন, পাথরটি পুকুরের বেশ কয়েকটি জলকে আঘাত করে। এটি যেখানে আঘাত করে সেখানে কিছু তরঙ্গ তৈরি করে। শীঘ্রই পুকুরে জলের পুরো তরঙ্গে ভরে যাবে। সুতরাং, এখানে যা ঘটে তা হ'ল পাথরটি জল-পৃষ্ঠের এক বিন্দুতে আঘাত করে এবং এটি সেই সময়ে তরঙ্গ তৈরি করে তবে এই প্রথম তরঙ্গ জলের পরবর্তী চলমান তরঙ্গের কারণ হয়ে ওঠে। কারণ প্রথম তরঙ্গ অন্যান্য সমস্ত তরঙ্গকে সক্রিয় করে। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে অন্যান্য সমস্ত তরঙ্গগুলি এই প্রথম তরঙ্গগুলির দ্বারা উৎপন্ন হয়।
একইভাবে, সর্বব্যাপী ঈশ্বর মহাবিশ্বের শুরুতে পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি সক্রিয় করে বিষয়টি কে কিছুটা ঝাপটান (slight flutter) দেন। এই সামান্য ঝাপটান একই মুহূর্তে অসীম মহাবিশ্বের প্রতিটি জায়গায় তৈরি হয়েছিল। সুতরাং Subtlest কম্পনের মতো প্রথম তরঙ্গ পুরো অসীম মহাবিশ্বে তৈরি হয়েছিল।
"সংহতপরার্থত্বাৎ পুরুষস্য"-সাংখ্য দর্শন ১।৬৬
প্রকৃতি জড় বলিয়া সৃষ্টিকর্ত্তা কিংবা ভোক্তা হইতে পারে না এবং তাহার নিজেরও কোন ভোগের প্রয়োজন থাকিতে পারে না। ভোগ্য ও ভোক্তা এক পদার্থ হইতে পারে না। এই বিচিত্র পদার্থ পরার্থে রচিত হইয়াছে, তাহাতেই ভোক্তাপুরুষের অর্থাৎ জীবাত্মার অনুমান হইতেছে এবং ভোক্তা পুরুষের ভোগের উপযোগী বুদ্ধি ও ইন্দ্রয়াদি করণ, এবং ভোগ্য পদার্থ সমূহের রচনা ও কর্ম্মফলের বিধান দেখিয়া সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্ত্তা পরম পুরুষের অনুমান হইয়া থাকে।
"মূলেমূলাভাবাদমূলং মূলম্"-মূল কারণের কোন কারণ থাকিতে পারে না। কারণ রহিত না হইলে তাহাকে মূল কারণ বলা যায় না মূল কারণ অকারণ অর্থাৎ কারণ রহিত হইয়া থাকে এবং তাহা অনাদি। প্রকৃতি অর্থে যে উপাদান হইতে সমস্ত সৃষ্টি উৎপন্ন হইয়াছে যাহা নিত্য সত্য তাহাই প্রকৃতি।
গোপথ ব্রাহ্মণ পূর্বভাগ কান্ডিকা ১৮
( তস্য) সেই ও৩ম এর ( দ্বিতীয়া স্বরমাত্রায়া) দ্বিতীয় স্বর মাত্রা ( উ) কার হতে ( অন্তরিক্ষম্ বায়ূম্) অন্তরিক্ষ, বায়ূ ( যজুর্বেদম্) যজুর্বেদ তথা সত্য বিদ্যা ( ভুবঃ ইতি) ভুবঃ [ সর্ব ব্যাপক ব্যাহৃত ব্রহ্ম ভুবঃ রশ্মি সৃষ্টি হয়, (ত্রৈষ্টুভম্) তীন সত্বঃ, রজঃ এবং তমের বন্ধকারী ও ত্রিষ্টুভ (ছন্দঃ) আনন্দদায়ক বা পূজনীয় কর্ম এবং ছন্দরশ্মি আদির সৃষ্টি হয়, ( পঞ্চ দশম্) পাচ প্রাণ ও তাহার উপ প্রাণের নির্মাণ হয়। সেই সাথে পঞ্চ তন্মাত্রার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ ১৫ পদার্থের নির্মাণ হয়, (স্তোমম্) স্তুতি যোগ্য ব্যবহার তথা প্রকাশক বলের নির্মাণ হয়, ( প্রতীচীং দিশম্) প্রাচী,প্রতিচী,উদিচী, ধ্রুবাদি আদি দশ দিশা রশ্মির উৎপত্তি হয়, ( গ্রীষ্মম্ ঋতুম্) গ্রীষ্ম ঋতু রশ্মি সৃষ্টি হয়, (আধ্যাত্মম্) আত্মাকে জানিবার যন্ত্র অর্থাৎ ( প্রাণম্) প্রাণরশ্মি সৃষ্টি হয়, ( নাসিকে) প্রাণ ও অপান বলের নির্মাণ হয় ও জীবের জন্য গন্ধতন্মাত্রার সৃষ্টি হয়, (গন্ধ ঘ্রাণম্) জীবের গন্ধ শুকিবার গন্ধ তন্মাত্রার প্রকট হয়, (ইন্দ্রিয়াণি) সকল প্রাণ ও উপপ্রাণের নির্মাণ ও সৃষ্টি নির্মাণ সকল সহায়ক বলের নির্মাণ হয় এবং জীবের জ্ঞান চেতনা এবং সাধনা বলের নির্মাণ হয়। এই সব কিছু ( অন্বভবত্) সেই ( ব্রহ্মা) [বলম বৈ ব্রহ্মা] বলদাতা পরমেশ্বর সৃষ্টি করেছে।
ভাবার্থঃ পরমাত্মা ও৩ম এর উ মাত্রা দ্বারা দিশারশ্মি, দশ প্রাণ, গ্রীষ্ম ঋতু, অন্তরিক্ষ, ভুবঃ নামক ব্যাহৃত রশ্মি ও পঞ্চতন্মাত্রা ও পঞ্চজ্ঞান ইন্দ্রিয়ের নির্মাণ করেছেন।
পরা ও৩ম রশ্মি প্রভাবে ও৩ম এর উ মাত্রার সৃষ্টি হয়। উ মাত্রার প্রভাবে ভুবঃ নামক ব্যাহৃত রশ্মির সৃষ্টি হয়। উক্ত ব্যাহৃত রশ্মি হতে কান্ডিকায় বর্নিত সকল পদার্থের নির্মান হয়। এখানে স্মরণ রাখতে হবে যে, পরমাত্মা পরা ওম্ দ্বারা উ অক্ষরকে জাগ্রত করিয়া যথাক্রমে ভুবঃ নাম অক্ষর রশ্মির সৃষ্টি করিয়া ত্রিষ্টুভ ছন্দরশ্মির নির্মাণ করেন। উক্ত ছন্দের প্রভাবে অন্তরিক্ষ,আকাশ, দিশা ইত্যাদির নির্মাণ হয়। অন্তরিক্ষ তথা আকাশে ত্রিষ্টুভ ছন্দের মাত্রা সব থেকে বেশী থাকে।
পরমাত্মা পরা ওম্ কে প্রকৃতি হতে জাগ্রত করিয়া সকল স্বর ও ব্যাঞ্জন অক্ষর রশ্মিকে জাগ্রত করিয়া কান্ডিকায় বর্ণিত তত্বের নির্মাণ করে। প্রকৃতিকে সহস্রা অক্ষরা বলা হয়। প্রকৃতি উক্ত অক্ষরের জন্মদাতা। পরমাত্মা প্রকৃতিতে ইক্ষণকারী নিমিত্ত কারণ হয়ে জ্ঞানের সিঞ্চন করে প্রকৃতির মাধ্যমে সৃষ্টির সঞ্চালন করে। এখানে উ কার ভুবঃ রশ্মিকে প্রকৃতি হতে জাগ্রত করে অন্তরিক্ষ, বায়ূ তথা আকাশের নির্মাণ করেন।
'তদেজতি তন্নৈজতি তদ্ দূরে তদ্বন্তিকে।
তদন্তরস্য সর্ব্বস্য তদু সর্ব্বস্যাস্য বাহ্যতঃ।।'-যজুর্বেদ ৪০। ৫
-অর্থাৎ ঈশ্বর গতিশূন্য প্রকৃতিতে গতি উৎপন্ন করে কিন্তু স্বয়ং গতিতে আসে না, সেই গতিদাতা পরমেশ্বর অজ্ঞানীর নিকট দূরে বিভিন্ন মঠ মন্দিরে কিন্তু জ্ঞানীর নিকট্ থেকে নিকটে, তিনি ব্রহ্মান্ডের সমস্ত জীব ও জগতের ভিতর ও বাইরে বিদ্যমান। আমাদের সেই সর্বব্যাপক পরমাত্মার উপাসনা করা উচিত।

ঈশ্বর কোন হাত-পা বিশিষ্ট ব্যক্তি বিশেষ নন। সমস্তকিছু কে control করে, যেমন বিদূৎ, আকাশ সর্বত্র ব্যাপক, space একটা পদার্থ সামান্য ফোর্স থাকে। এই সমস্ত কিছুর পেছনে যে বল কাজ করে তা ঈশ্বরীয় বল, অর্থাৎ চেতন সত্ত্বার বল। সেই চেতন সত্ত্বা সর্বশক্তিমান সর্বব্যাপক পরমেশ্বর। স্টিভেন উইলিয়াম হকিং এর ভাষায় “দুনিয়া বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে। এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনো হস্তক্ষেপ করেন না”।[ "Pope sees physicist Hawking at evolution gathering | Science" (ইংরেজি ভাষায়)। রয়টার্স। ২০০৮-১০-৩১]

रू॒पंरू॑पं॒ प्रति॑रूपो बभूव॒ तद॑स्य रू॒पं प्र॑ति॒चक्ष॑णाय। इन्द्रो॑ मा॒याभिः॑ पुरु॒रूप॑ ईयते यु॒क्ता ह्य॑स्य॒ हर॑यः श॒ता दश॑ ॥
ঋগ্বেদ-৬/৪৭/১৮
বিষয়- তাহলে এই জীবাত্মা কেমন, এই বিষয়ে বলেন।
পদার্থ-হে মনুষ্য!যে ( ইন্দ্রঃ) জীব ( মায়াভিঃ) বুদ্ধিতে ( প্রতিক্ষণায়) প্রত্যক্ষ বিবৃতির জন্য ( রূপরূপম্) রূপ-রূপকে ( প্রতিরূপঃ) প্রতিরূপ অর্থাৎ তার স্বরূপে বর্তমান ( বভূব) এবং ( পুরুরূপঃ) বহু শরীর ধারণ করে অনেক প্রকারে ( ঈয়তে) পাওয়া যায় ( তত্) সে ( অস্য) এই শরীরের ( রূপম্) রূপ এবং যা ( অস্য) এই জীবাত্মাকে ( হি) সংকল্প করে ( দশ) দশ সংখ্যাতে বিশিষ্ট এবং ( শতা) শত সংখ্যার জন্য বিশিষ্ট (হরযঃ) অশ্বের ন্যায় ইন্দ্রিয়,অন্ত-করণ এবং প্রাণ ( যুক্তাঃ) যুক্ত হয়ে শরীরে ধারণ করে,এই তার সামর্থ্য।
ভাবার্থ-এই মন্ত্রে বাচকলুপ্তোপমালঙ্কার আছে। হে মনুষ্য! বজ্র পদার্থের অনুরূপ, একইভাবে জীব দেহের সাথে তত্ত্বভাব এবং যখন সে বাহ্যিক বস্তুকে দেখতে চায়, তখন তা দেখে এই জীব তথ্যরূপ জ্ঞান লাভ করে এবং জীবের দেহে যা অগণিত। বজ্রপাত সহ. নাড়ী আছে, সেই নাড়ীগুলি.এসব থেকে বিস্তারিত জানে।।
( ভাষ্যম্-মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)

সৃষ্টির সময় উপস্থিত হলে পরমাত্মা পরমসূক্ষ্ম পদার্থ সমূহকে সন্মিলিত করেন। ঐ সকলের প্রথম অবস্থায় পরমসূক্ষ্ম প্রকৃতিরূপ কারণ অপেক্ষা যাহা কিঞ্চিত স্থূল হয় তার নাম মহত্তত্ত্ব। যাহা মহত্তত্ত্ব অপেক্ষা কিঞ্চিত স্থূল হয়, তহার নাম অহঙ্কার। অহঙ্কার হতে ভিন্ন ভিন্ন পাঁচ সূক্ষ্মভূত শ্রোত্র, ত্বক, নেত্র, জিহ্বা এবং ঘ্রাণ-এই জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং বাক, হস্ত,পদা,উপস্থ ও মলদ্বার-এই পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় এবং একাদশ মন, অপেক্ষাকৃত স্তূলরূপে উৎপন্ন হয়। উক্ত পঞ্চতন্মাত্রা হইতে অনেক স্থূলবস্থা প্রাপ্ত হয়ে ক্রমে ক্রমে যে পঞ্চভূত উ(পন্ন হয়, আমরা ঐ সকল প্রত্যক্ষ করি। স্থূলভূত হতে নানাবিধ ওষধি এবং বৃক্ষাদি উৎপন্ন হয়। ওষধি এবং বৃক্ষাদি হইতে অন্ন, অন্ন হতে বীর্ষ্য এবং বীর্য্য হতে শরীর উৎপন্ন হয়। সর্ব্বপেক্ষা সূক্ষ্ম খন্ড অর্থাৎ যাহা বিভক্ত করা য়ায় না, তার নাম পরমাণু। ষাইট পরমাণু মিলে এক অনু হয়। দুই অণু মিলে এক দ্ব্যণুক হয়। তিন দ্ব্যণুক হতে অগ্নি, চার দ্ব্যণুক হতে জল এবং পাঁচ দ্ব্যণুক হতে পৃথিবী আদি দৃশ্য পদার্থ উৎপন্ন হয়। পরমাত্মা এইরূপ ক্রমানুসারে পরমাণু মিলিত করে পৃথিবী ইত্যাদি নির্মান করেছেন।
ওম্ শম্

তথ্যঃ
ঋগ্বেদ ১০।১২৯।১
সাংখ্য দর্শন ১।৬১,১।৬৬
বেদ বিজ্ঞান আলোক পুস্তক

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ