মহাপ্রলয় - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

12 March, 2023

মহাপ্রলয়

 সৃষ্টির মধ্যে উৎপন্ন পদার্থের কখনও না কখনও নিজের কারণ রূপ পদার্থে লয় অবশ্যই হয়। সৃষ্টির অন্তিমে মনস্তত্ত্বও নিজের মূল উপাদান কারণ প্রকৃতিতে বিলীন হয়ে যায়। মহাপ্রলয়ের প্রক্রিয়া পূর্ণ ব্যবস্থিত, ক্রমবদ্ধ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হয়, এই প্রক্রিয়া মোটেও উচ্ছৃঙ্খলভাবে হয় না। এই সৃষ্টিরও এক দিন বিনাশ হয়ে যাবে আর এটা নিজের মূল উপাদান কারণে লীন হয়ে যাবে।

সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান বর্তমান বিজ্ঞান দ্বারা স্বীকৃত মূলকণা, প্রকাশাণু, আকাশ তত্ত্ব তথা ডার্ক পদার্থ প্রায়শঃ সম্পূর্ণ সৃষ্টি কাল পর্যন্ত বজায় থাকে। কিছু মূলকণা উৎপন্ন বা নষ্ট হতে থাকে, কিন্তু এই প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ সৃষ্টি কাল পর্যন্ত যথাযত চলতে থাকে। সম্পূর্ণ সৃষ্টি এদের দিয়েই নির্মিত হয়, কিন্তু এই তত্ত্বও মন, বাক্, প্রাণাদি পদার্থ থেকে উৎপন্ন হয় আর এই কারণ-কার্যের (cause and effect) শৃঙ্খলা মূল উপাদান প্রকৃতি তত্ত্বের উপর সমাপ্ত হয়। এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে সাধারণত সৃজন বিনাশের চক্র চলতে থাকে। যথা - তারার বিস্ফোরণ হয়ে পদার্থের ছড়িয়ে যাওয়া, কোথাও তারার সৃজন, গ্রহ-উপগ্রহের সৃজন-বিনাশ, বিভিন্ন কথিত মূলকণার উৎপত্তি প্রলয় আদি ক্রম নিরন্তর চলতে থাকে। বিভিন্ন বনস্পতি, প্রাণী-শরীর, নদী, পর্বত, দ্বীপ আদির সৃজন ও বিনাশ, অণু, কোষিকারও এইভাবে সৃজন-বিনাশ দেখা যায়। এতকিছু হয়ে যাওয়ার পরেও এই খেলা কথিত মূল কণা, ঊর্জা, আকাশের অন্তর্গতই এদের মধ্যে এদেরই দ্বারা চলে। শেষে এই খেলা মহাপ্রলয় কালে বন্ধ হয়ে যায়। এইসব ক্রিয়া হল ক্রমশঃ সৃষ্টি ও প্রলয়েরই লঘু রূপ, যা চক্রের মতো সর্বদা চলতে থাকে।

একটা সময় এমনও আসে, যখন বিনাশের প্রক্রিয়ার প্রাধান্য থাকে, বিশেষ করে কেবল বিনাশের প্রক্রিয়াই চলে। আকর্ষণ বলের ক্ষয় আর প্রতিকর্ষণ বলের বৃদ্ধি হতে থাকে। অন্যদিকে যখন সৃষ্টির নির্মাণ প্রারম্ভ হয়, সেই সময় আকর্ষণ বলেরই অস্তিত্ব থাকে, প্রতিকর্ষণ বলের উদয় কিছু কালের পশ্চাৎ হয়। যেসব গায়ত্রী রশ্মি থেকে আকর্ষণ ও সৃজন কর্মের বিবেচনা করা হয়েছে, সেই রশ্মিগুলোই কিছু বিকৃতির সঙ্গে বিনাশ কর্মকেও উৎপন্ন করে। অপান রশ্মি ছন্দ রশ্মি থেকে পৃথক থাকা বা হওয়ার পরেও বিভিন্ন রশ্মি ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়। যখন বিভিন্ন প্রাণ রশ্মি বিভিন্ন ছন্দ রশ্মি থেকে বিয়োগ হবে, সেই সময় আসুরী গায়ত্রী ও আসুরী ত্রিষ্টুপ্ ছন্দ রশ্মির সংমিশ্রণের উৎপত্তি হয়, যার কারণে প্রাণ ও ছন্দ রশ্মির বিয়োগ হওয়া শুরু করে। যার ফলে সমস্ত ছন্দাদি রশ্মিও পরস্পর বিযুক্ত হতে থাকে। দৃশ্য পদার্থের পতন তথা ডার্ক পদার্থ ও ডার্ক এনার্জির ভারী উৎকর্ষ হতে থাকে। এই কারণে মূল কণা তথা তরঙ্গাণুর আন্তরিক গঠন থেকে শুরু করে বড়ো-বড়ো লোক লোকান্তরের গঠনের মধ্যে বিক্ষোভ হওয়া প্রারম্ভ হয়। ধীরে-ধীরে সেই লোক লোকান্তর বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে। এদের মধ্যে বিদ্যমান অণু, অ্যাটম ও তাদের থেকেও সূক্ষ্ম কণা ও তরঙ্গের প্রকৃতি ও গঠন অগোছালো হওয়া শুরু করে। বলের স্বরূপ ও স্বভাব পরিবর্তিত হয়ে যায়, যার ফলে আকর্ষণ ও ধারণ বলের হ্রাস, পুনঃ ধীরে-ধীরে পূর্ণ বিনাশ হয়ে যায় তথা প্রতিকর্ষণ ও প্রক্ষেপক বলের মধ্যে নিরন্তর ভারী বৃদ্ধি হতে থাকে।
এদের দ্বারাই তারা, গ্রহ, উপগ্রহ আদি থেকে শুরু করে সূক্ষ্ম কণা পর্যন্ত সমস্ত পদার্থের মধ্যে বিস্ফোরণ ও বিক্ষিপ্তের প্রক্রিয়া প্রারম্ভ হয়ে যায়। অন্ততঃ সম্পূর্ণ সৃষ্টির মধ্যে ডার্ক পদার্থ ও ডার্ক এনার্জিরই সাম্রাজ্য হয়ে যায়। এই কারণে সম্পূর্ণ দৃশ্য পদার্থের অতিরিক্ত সম্পূর্ণ ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জিও নিজের কারণভূত মনস্তত্ত্বের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। সম্পূর্ণ সৃষ্টির আয়ুর মধ্যে মনস্তত্ত্ব সর্বদা একরস তথা নিশ্চিত মাত্রাতেই বিদ্যমান থাকে। এরমধ্যে ন্যূনতা বা অধিকতা আসে না। মনস্তত্ত্বের অনেক বড়ো ভাগ সৃষ্টি রচনার প্রক্রিয়াতে ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি, দৃশ্য রূপ সম্পূর্ণ কণা বা বিকিরণের মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে যায়। সৃষ্টি কালে মনস্তত্ত্ব বিকৃত হয়ে যেখানে পদার্থের ন্যূনতার পূর্তি করতে থাকে, সেখানেই অতিরিক্ত পদার্থকে নিজের মধ্যে বিলয়ও করতে থাকে। সৃষ্টির সূক্ষ্মতম কণা থেকে শুরু করে স্থূলতম লোক তথা তরঙ্গের নির্মাণ ও বিনাশ কর্ম মনস্তত্ত্বের প্রেরণা দ্বারা তারই ভিতরে নিরন্তর হতে থাকে.. শেষে এই মনস্তত্ত্বও সমস্ত পদার্থ জগতের সঙ্গে নিজের বা সম্পূর্ণ জড় পদার্থের মূল উপাদান কারণ প্রকৃতিতে বিলীন হয়ে যায়।
এই সৃষ্টির মধ্যে সৃজন-বিনাশের চক্র সর্বদা চলতে থাকে। বিভিন্ন সংযোগ প্রক্রিয়াকে ডার্ক এনার্জি নিজের প্রবল প্রতিকর্ষণ বলের দ্বারা বাধিত করার প্রয়াস করে। এই বাধাকে দূর করার জন্য অনেক রশ্মির উৎপত্তি সর্বদা হতে থাকে। যখন প্রলয় কাল আসে, তখন এই রশ্মিগুলোর মধ্যে বাধা উৎপন্ন হয়। সেগুলো অব্যবস্থিত রূপে উৎপন্ন হয়, যার কারণে তাদের সংযোগ প্রভাব ভ্রষ্ট হয়ে যায়। এই কারণে তারা ডার্ক এনার্জির বাধক প্রভাবকে থামিয়ে রাখতে পারে না। এই কারণে আবেশিত কণার মাঝে আকর্ষণ বল সমাপ্ত হয়ে যায় অথবা আমরা বলতে পারি যে আবেশও সমাপ্ত অথবা উদাসীনতাকে প্রাপ্ত করে ফেলে। বিদ্যুৎ আবেশ যেই রশ্মির কারণে উৎপন্ন হয়, সেটা নিজের প্রভাব হারিয়ে ফেলে। এরফলে বিভিন্ন পদার্থের সৃজন কর্ম সমাপ্ত হয়ে বিনাশ ক্রম উৎপন্ন হয়। আবেশিত কণার মাঝে বল সমাপ্তির জন্য সেই রশ্মিগুলোকে বাধিত করা হয়, যা তার উৎপাদনে সহায়ক হয়।
যখন প্রাণ-অপান আদির মাঝে কার্যরত বল সমাপ্ত করতে হয়, যখন কোনো তরঙ্গাণু ও ইলেকট্রন আদির মাঝে আকর্ষণ বল অথবা বিভিন্ন কণার মাঝে নিশ্চিত দূরত্ব রাখার বল সমাপ্ত করতে হয়, যখন কোনো তরঙ্গাণুর নির্গমন ও শোষণের প্রক্রিয়াকে থামাতে বা সমাপ্ত করতে হয় (এই কারণে বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের নির্গমন, শোষণ বা গমন-আগমনের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়ে ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে অন্ধকারময়ী অবস্থা উৎপন্ন হয়ে যায়), যখন ঊর্জার বিকিরণ রূপকে সমাপ্ত করতে হয়, যখন এদের শক্তিকে (আবৃত্তি) কম করতে হয়, তখন সেই বলগুলোর উৎপাদিকা গায়ত্রী রশ্মিকে উচ্ছৃঙ্খল করা হয়। এই কারণে প্রাণ ও অপান অথবা প্রাণ ও উদানের মাঝে কার্যরত সূত্রাত্মা বায়ু অথবা মনস্তত্ত্ব নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, আকাশ তত্ত্ব দুই সংযোজক কণার (প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত) মধ্য থেকে পৃথক হয়ে যায়, বল সমাপ্ত হয়ে যায়। এরকমটা হলে সেই রশ্মিগুলোর যেসব প্রভাব আছে, সেগুলো থাকতে পারে না।
এই সৃষ্টির মধ্যে যখন প্রলয় কাল আসে অথবা কোনো ক্ষেত্র বিশেষের মধ্যে প্রবল ও ব্যাপক বিনাশের প্রক্রিয়া প্রারম্ভ হয়, তখন কিছু রশ্মি এরকম উৎপন্ন হয়, যা বিভিন্ন কণার চারিদিকে বিদ্যমান বিভিন্ন ছন্দাদি রশ্মির আবরণকে নষ্ট বা আলাদা করে দেয়। ডার্ক এনার্জির অত্যধিক প্রক্ষেপক বা প্রতিকর্ষণ বলকে যেসব রশ্মি নিয়ন্ত্রিত বা নষ্ট করে বিভিন্ন প্রকারের সংযোগাদি প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করতে সহায়ক হয়, তাদেরও এই রশ্মিগুলো নষ্ট করে দেয়। এই কারণে সব কণা বা তরঙ্গ অসুরক্ষিত হয়ে ডার্ক এনার্জির প্রহার দ্বারা খণ্ড-খণ্ড হতে থাকে। বিভিন্ন পরমাণু বা মূলকণার আকর্ষণ বল নিষ্প্রভাবী হয়ে যায়, যারফলে সব প্রকারের সংযুক্ত কণা বা লোক বিক্ষিপ্ত হতে থাকে আর ধীরে-ধীরে সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ড মূল সাম্যাবস্থার রূপে বিলীন হয়ে যায় অথবা কোথাও ক্ষেত্রীয় স্তরে খণ্ড প্রলয়ের মতো স্থিতি হয়ে যায়। সুপারনোবা আদির বিস্ফোরণের সময়েও অল্পকালের জন্য এই রশ্মিরই প্রাধান্য থাকে। এই রশ্মিগুলো অত্যন্ত বিধ্বংসক হয়।
এখানে এটা ধ্যানে রাখার যোগ্য বিষয় হল যে মহাপ্রলয় বা খণ্ড প্রলয়ের প্রক্রিয়া সেইভাবে পূর্ণ ব্যবস্থিত, ক্রমবদ্ধ এবং বৈজ্ঞানীক পদ্ধতিতে হয়, যেভাবে সৃষ্টি নির্মাণের প্রক্রিয়া ব্যবস্থিত, বৈজ্ঞানিক এবং ক্রমবদ্ধ পদ্ধতিতে হয়। এই কারণে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্যে চেতন সত্তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে, এই প্রক্রিয়া মোটেও উচ্ছৃঙ্খলভাবে হয় না। যখন প্রলয় কাল আসে, তখন রশ্মির মধ্যে বাধা উৎপন্ন হয়। সেগুলো অব্যবস্থিত রূপে উৎপন্ন হয়। এই কারণে -
i. সেগুলো ডার্ক এনার্জির বাধক প্রভাবকে থামাতে
পারে না।
ii. আবেশিত কণার মাঝে আকর্ষণ বল সমাপ্ত হয়ে
যায়।
iii. আবেশ সমাপ্ত অথবা উদাসীনতাকে প্রাপ্ত করে।
iv. বিদ্যুৎ আবেশ যে রশ্মির কারণে উৎপন্ন হয়,
সেগুলো নিজের প্রভাব হারিয়ে ফেলে।
বিভিন্ন বলের উৎপাদিকা গায়ত্রী রশ্মিগুলোকে উচ্ছৃঙ্খল করে। এই কারণে বল সমাপ্ত হয়ে যায়। সুপারনোবা আদির বিস্ফোরণের সময়ে অল্পকালের জন্য বিধ্বংসক রশ্মির প্রাধান্য থাকে।
জগৎ প্রলয় অবস্থায় কারণে লীন থাকে আবার সমবারী কারণের দ্বারা সৃষ্টিতে প্রকাশিত হয় [সাংখ্য০ ৫।১৯]। যার অস্তিত্ব নাই তা হতে কোন পদার্থ উৎপন্ন হতে পারে না। উৎপত্তি ও অনুৎপত্তি কার্য্যকারণ মাত্র। প্রকৃতি হতে মহত্তত্ত্ব, মহত্তত্ত্ব হতে অহংকার ইত্যাদি ক্রম অনুসারে সৃষ্টি রচিত হয়ে থাকে[সাংখ্য০ ৬।৬৬]। এমন একটা সময় আসে, যখন আকর্ষণ বলের ক্ষয় আর প্রতিকর্ষণ বলের বৃদ্ধি হতে থাকে। সৃষ্টি উৎপত্তির সময়ে আকর্ষণ বলেরই অস্তিত্ব থাকে আর প্রতিকর্ষণ বলের উদয় কিছু সময় পশ্চাৎ হয়।
তথ্যঃ বেদ বিজ্ঞান আলোক, সাংখ্য দর্শন

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্য ও য়জ্ঞোপবীত

একাদশ অধ্যায় মেখলা প্রাচীনকালে গুরুকুলগুলোতে বেদের বিদ্বান বেদসংজ্ঞক আচার্য য়জ্ঞোপবীত সংস্কার করাতেন আর তারপর তারা বেদারম্ভসংস্কারের সময়...

Post Top Ad

ধন্যবাদ