আত্মা বা ইদমেক এবাগ্র অসীত্। নান্যত্ কিঞ্চন মিষত্। স ঈক্ষত লোকান্নু সৃজা ইতি।।
ঐতরেয়োপনিষদ-১/১ /১
পদার্থ-( বৈ) নিশ্চয় করে ( ইদম্,আত্মা) এই ব্রহ্ম ( অগ্রে) সৃষ্টির পূর্বে ( একঃ) এক ( এব) ই ( আসীত্) ছিল ( অন্যত্) তাঁর থেকে ভিন্ন ( কিঞ্চন) কিছু ( মিষত্) স্পর্ধাকারী ( ন) ছিল না ( সঃ) তিনি ( ঈক্ষত্) ইচ্ছা করলেন যে আমি ( লোকান্,ইতি) লোক=লোকারন্তকে ( সৃজৈ) রচনা করবো।
ভাষ্য-এই কার্যকর জগত্ থেকে পূর্বে একই পরমাত্মা ছিল , সেই সময় তাঁর থেকে ভিন্ন অন্য কোনো পদার্থ চেষ্টাকারী ছিল না অর্থাৎ সেই সময় পরমাত্মা থেকে ভিন্ন জগত্ নির্মাণের সামর্থ্য অন্য কোনো পদার্থের মধ্যে ছিল না , তিনি জীবের ফলদাবৃত্বের অনুসন্ধান করে এই বিচার করেন যে আমি সৃষ্টিকে রচনা করবো, যেমন-
[ "নাসদাসীন্নো সদাসীত্তদানীম্" ] ঋগ্ব০ ১০/১২৯/১ এবং "ন মৃত্যুরাসীদমৃতম্ ন তর্হি ন রাত্রা অহ্ন আসীৎপ্রকেতঃ" ঋগ্ব০ ১০/১২৯/২ ইত্যাদি মন্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে যে, সৃষ্টির উৎপত্তি থেকে পূর্বে ["ন সদ্রূপ"=এই কার্যরূপ জগত্ ছিল না তথা "ন অসদ্রুপ"]= না নিজে কারণরূপ থেকে বিরাজমান ছিল এবং সেই সময় না মৃত্যু না অমৃত্যু এবং না রাত্রি,দিনের চিহ্ন সূর্য চন্দ্রমা ছিল, সেই সময় জীতী জগতী জ্যোতিঃ যুক্ত একমাত্র পরমাত্মাই ছিল। মায়াবাদি এর এই অর্থ করে যে, সৃষ্টির উৎপত্তি থেকে পূর্বে নামরূপাত্মক না ছিল এবং না সেই অবস্থায় অব্যাকৃত- রূপ প্রকৃতিও এইজন্য এই বলা হয়েছে যে [ "একএবাগ্র আসীত্"] একই ছিল , এই বর্ণনা ঠিক নয়, যদি উক্ত ভাব এই শ্লোকের হয় তবে [ "ন কর্মাবিভাগাদিতি চেত্র, অনাদিত্বাত্"] ব্র০ সূ০ ২/১/৩৫ যদি কেউ এই বলে যে, প্রলকালে কর্ম ছিল না একমাত্র ব্রহ্মই ছিল এই ঠিক নয়,কারণ জীব এবং তার কর্ম অনাদি পাওয়া যায়, ইত্যাদি সূত্রে মহর্ষিব্যাস জীব তথা জীবের কর্মকে অনাদি কদাপি বর্ণনা না করেন , সজাতীয় বিজাতীয় ভেদের অর্থ সর্বথা ভেদশূন্যেরর হয় তবে কর্ম থেকে সৃষ্টির ব্যবস্থা কদাপি না হতে পারে এবং না পরমাত্মা নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ, মুক্তস্বভাব থাকতে পারেন, কারণ অব্যাকৃত কারণ অব্যাকৃত রূপ থেকেও জগদাকার পরমাত্মাকেই থাকতে হবে, ইত্যাদি দোষ থেকে সিদ্ধ হয় যে, সেই সময় জগতের রচনার চেষ্টা- কারী একমাত্র পরমাত্মাই ছিল অন্য কেউ নয়। এবং তারা কি [ "এক"] শব্দ থেকে স্বঙ্গত ভেদের [ "এব"] শব্দ থেকে বিজাতীয় ভেদের তথা [ "ন,মিপত্"] শব্দ থেকে সজাতীয় ভেদের নিবৃত্তি করে এই আশ্রয় নেওয়া হয় যে, ধাতুর অনেক অর্থ হয় এইজন্য [ "মিপত্"] এর অর্থ [ "আসীত"] করা উচিত যে ব্রহ্ম থেকে ভিন্ন এবং কিছু ছিলো না,এটি এইজন্য ঠিক নয় যে,"মিপত" এর অর্থ চেষ্টা করতে হয় যার বিষয় এই হয় যে ব্রহ্ম থেকে ভিন্ন অন্য কোনো পদার্থ সত্তাস্ফুর্তি দানকারী ছিল না, এ থেকে এই ভাব হতে কদাপি অনুসরণ করে না যে অন্য কোনো বাস্তবতা ছিল না, যদি এই ভাব হয় তবে মায়াবাদি ব্রহ্মকে উল্লেখযোগ্য কদাপি বর্ণনা করতে পারে না, কারণ অবিদ্যাকে ব্রহ্ম থেকে উল্লেখযোগ্য বর্ণনা করায় ব্রহ্ম এবং অবিদ্যার ভেদ স্পষ্ট সিদ্ধ হয়, তাহলে এই কিভাবে বলা যেতে পারে যে ব্রহ্ম বিজাতীয় ভেদশূন্য ছিল, বিজাতীয় ভেদ তো অবিদ্যা থেকেও তৈরী হয়, যদি এই বলা হয় হয় যে সৃষ্টি থেকে পূর্বে সজাতীয় ভেদ রহিত এবং নিজ থেকে ভিন্ন জাতি অন্য কোনো পদার্থ সত্তাস্পর্ত্তি দানকারী ছিল না এই অভিপ্রায় থেকে আত্মার একত্ব বর্ণনা করা হয়েছে, এই থেকে আত্মার বিবর্ত্তি উপাদান কারণ এবং জগতের মিথ্যা হওয়া কদাপি সিদ্ধ হতে পারে না,এই স্থলে জীবব্রহ্মের ঐক্য সিদ্ধ করা মায়াবাদিদের সাহস মাত্র।।
ভাষ্যকার-মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত আর্য মুনি পরিব্রাজক
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ