বেদের কৃষ্ণ কি অসুর ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

11 May, 2023

বেদের কৃষ্ণ কি অসুর ?

ইদানীং কিছু অল্পজ্ঞ বেদে শ্রীকৃষ্ণকে খোঁজে পেয়েছে এবং তাদের দাবী শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন অসুর বা অনার্য। তারা প্রচলিত বাংলা বেদ থেকে এই তথ্যের প্রমাণও দেখিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ সনাতনীদের মনে এই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে যে, যদি বেদে শ্রীকৃষ্ণ অসুর/অনার্য হয়, তাহলে সে সারাজীবন আর্যত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিলেন কেন? যদি তিনি নিজেই অনার্য হয়ে থাকেন তাহলে গীতার জ্ঞান প্রদানকালে অর্জুনের অজ্ঞানময় যুক্তি শুনে কেন তাকে ‘অনার্য’ শব্দে সম্বোধন করেছিলেন (২/২)?

বস্তুত “শ্রীকৃষ্ণ অসুর”—এই তথ্যটি উদ্ভাবনের পিছনে অন্যতম মূল অবদান রেখেছে সায়ণাচার্যের ভুল বেদ ভাষ্য। সায়ণাচার্য বেদে ইতিহাস পেয়েছেন, অথচ বেদকে বলা হয় শাশ্বত জ্ঞান। শাশ্বত জ্ঞানের মধ্যে কীভাবে ইতিহাস আসে সেটা পাঠকগণ বিচার করবেন। আমরা ২টি সামবেদমন্ত্র (কিঞ্চৎ পাঠভেদে ঋগ্বেদেও এগুলো রয়েছে) আলোচনা করব, যেখানে সায়ণাচার্য শ্রীকৃষ্ণ নামক অসুর খোঁজে পেয়েছেন।
সামবেদ: ৩৮০ (ঋগ্বেদ: ১/১০১/১ [১])

প্র মন্দিনে পিতুমদর্চতা বচো যঃ কৃষ্ণগর্ভা নিরহন্নৃজিশ্বনা।
অবস্যবো বৃষণং বজ্রদক্ষিণং মরুত্বন্তং সখ্যায় হুবেমহি॥

এই মন্ত্রের ঋষি: কুৎস, দেবতা: ইন্দ্র, ছন্দ: জাগতী এবং স্বর: নিষাদঃ। মন্ত্রটিতে পরমাত্মা এবং আচার্যের গুণ-কর্মের বর্ণনা করা হয়েছে। এই মন্ত্রের পদার্থ দুইটি পক্ষে গ্রহণযোগ্য—১। পরমাত্মা পক্ষে এবং ২. গুরু-শিষ্যের পক্ষে। প্রথমে পদার্থ (পদার্থে অনুবাদের সূত্রসহ উল্লেখ করা হবে), পরে সরলার্থ এবং ভাবার্থ উল্লেখ করছি। পদার্থ পড়তে না চাইলে পদার্থ অংশটি এড়িয়ে সরাসরি সরলার্থ ও ভাবার্থ পড়তে পারেন। প্রথমবন্ধনীতে ‘()’ পদার্থ, দ্বিতীয় বন্ধনীতে ‘{}’ অনুবাদসূত্র এবং তৃতীয় বন্ধনীতে ‘[]’ টিপ্পনীর নাম্বার দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ আর্টিকেলের শেষে তৃতীয় বন্ধনীর নাম্বার থেকে টিপ্পনী মিলিয়ে নিবেন।
পদার্থ: প্রথম—পরমাত্মার পক্ষে।
হে মানবজাতি! তোমরা (মন্দিনে) আনন্দযুক্ত তথা আনন্দপ্রদাতা সেই জগদীশ্বরের জন্য (পিতুমৎ) শ্রদ্ধারূপ রস যুক্ত {“তব ত্যে পিতো রসা রজাংস্যনু বিষ্ঠিতাঃ। ঋগ্বেদ: ১/১৮৭/৪” ইতি শ্রুতেঃ, তত্রৈব “য়ৎ তে সোম। ঋগ্বেদ: ১/১৮৭/৯” ইত্যুক্তেশ্চ পিতুর্বৈ রসময়ঃ সোমঃ; “পিতুঃ প্যায়তো” নিঘন্টু: ৯/২৪} (বচঃ) স্তুতিবচনকে (প্র অচত) প্রেরিত করো, (যঃ) যে জগদীশ্বর (ঋজিশ্বনা) সোজাসুজি চলমান কিরণের সাথে যুক্ত সূর্যের দ্বারা (কৃষ্ণগর্ভাঃ) অন্ধকারপূর্ণ রাত্রিকে (নিরহ) নষ্ট করেন। এসো, (অবস্যবঃ) রক্ষা আকাঙ্ক্ষী তোমরা আমরা {‘ক্যাচ্ছন্দসি’ অষ্টাধ্যায়ী: ৩/২/১৭০} (বৃষণম্) মেঘ হতে বৃষ্টির বর্ষণকারী অথবা সুখের বর্ষণকারী, (বজ্রদক্ষিণম্) ন্যায়দণ্ড যাঁর প্রতাপকে বৃদ্ধি করে, {‘দক্ষতিঃ সমৰ্দ্ধয়তিকর্মা' নিরুক্ত: ১/৬} তেমন (মরুত্বন্তম্) প্রশস্ত প্রাণযুক্ত জগদীশ্বরের (সখ্যায়) মিত্রতার জন্য (হুবেমহি) আহ্বান করি {‘হুবেম য়েম’ নিরুক্ত: ১১/৩১}।
সরলার্থ: হে মানবজাতি! তোমরা আনন্দযুক্ত তথা আনন্দপ্রদাতা সেই জগদীশ্বরের জন্য শ্রদ্ধারূপ রস যুক্ত স্তুতিবচনকে প্রেরিত করো, যে জগদীশ্বর সোজাসুজি চলমান কিরণের সাথে যুক্ত সূর্যের দ্বারা অন্ধকারপূর্ণ রাত্রিকে নষ্ট করেন। এসো, রক্ষা আকাঙ্ক্ষী তোমরা আমারা মেঘ হতে বৃষ্টির বর্ষণকারী অথবা সুখের বর্ষণকারী, ন্যায়দণ্ড যাঁর প্রতাপকে বৃদ্ধি করে, তেমন প্রশস্ত প্রাণযুক্ত জগদীশ্বরের মিত্রতার জন্য আহ্বান করি।
পদার্থ: দ্বিতীয়—গুরু-শিষ্যের পক্ষে।

হে সহপাঠিগণ! তোমরা (মন্দিনে) আনন্দদাতা তথা বিদ্যার ঐশ্বর্যযুক্ত আচার্যের জন্য (পিতুমৎ) উৎকৃষ্ট অন্নের সাথে {“পিতুরিত্যন্ননাম, পাতের্বা পিবতের্বা প্যায়তের্বা” নিরুক্ত: ৯/২৪] (বচঃ) আদরপূর্ণ প্রিয়বচন (প্র অর্চত) উচ্চারণ করো, (যঃ) যে আচার্য (ঋজিশ্বনা [২]) সরল শিক্ষাপদ্ধতি দ্বারা (কৃষ্ণগর্ভাঃ) অন্ধকার অজ্ঞান যার গর্ভে আছে, এমন অবিদ্যারূপ রাত্রিকে (নিরহ) নষ্ট করেন। (অবস্যবঃ) বিদ্যার আকাঙ্ক্ষাকারী তোমরা আমরা (বৃষণম্) সদ্গুণের বর্ষণকারী, (বজ্রদক্ষিণম্ [৩]) কুপথ দূরকারী বিদ্যা আর {“বজ্রঃ বর্জয়তীতি সতঃ” নিরুক্ত: ৩/১১} (মরুত্বন্তম্ [৪]) বিদ্যাযজ্ঞের ঋত্বিক প্রশস্ত বিদ্বান অধ্যাপক যার কাছে আছেন, {“মরুত ইতি ঋত্বিজ্নাম” নিঘন্টু: ৩/১৮} তেমন আচার্যকে (সখ্যায়) মিত্রতার জন্য (হুবেমহি) স্বীকার করি। [৫]
সরলার্থ: হে সহপাঠিগণ! তোমরা আনন্দদাতা তথা বিদ্যার ঐশ্বর্যযুক্ত আচার্যের জন্য উৎকৃষ্ট অন্নের সাথে আদরপূর্ণ প্রিয়বচন উচ্চারণ করো, যে আচার্য সরল শিক্ষাপদ্ধতি দ্বারা অন্ধকার অজ্ঞান যার গর্ভে আছে—এমন অবিদ্যারূপ রাত্রিকে নষ্ট করেন। বিদ্যার আকাঙ্ক্ষাকারী তোমরা আমরা সদ্গুণের বর্ষণকারী, কুপথ দূরকারী বিদ্যা আর বিদ্যাযজ্ঞের ঋত্বিক প্রশস্ত বিদ্বান অধ্যাপক যার কাছে আছেন, তেমন আচার্যকে মিত্রতার জন্য স্বীকার করি।
ভাবার্থ: পরমেশ্বর আমাদের প্রতি মিত্রভাব পোষণ করেন। তিনি ছাড়া সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে রাত্রির অন্ধকার নিবারণ করতে আর বর্ষণ করতে আমাদের মতো মানবের কি সামর্থ্য হতে পারে? তিনি আমাদের উপকারের জন্য এই ধরণের নানাবিধ কর্ম করলেও আমাদের থেকে কোনো শুল্ক নেননি। সেই আচার্যেরও আমাদের প্রতি মহান উপকার আছে, যিনি সমস্ত অবিদ্যা রাত্রিকে দূর করে জ্ঞানের বর্ষা দিয়ে আমাদের অন্তঃকরণের ভূমিকে সরস করেন। এজন্য পরমেশ্বর ও আচার্যকে আমাদের সর্বাত্মক সম্মান ও সৎকার করা উচিত।
বি. দ্র. এই মন্ত্রের ওপর ভরতস্বামী এই ইতিহাস লিখেছেন যে, এটি গর্ভস্রাবিণী নামক উপনিষদ্। কৃষ্ণ নামক এক অসুর ছিলো, সেই কৃষ্ণ দ্বারা গর্ভবতী হওয়া তার ভার্যাকে ইন্দ্র গর্ভ নষ্ট করার জন্য মেরে ফেলেছিলো। ঋজিশ্বা নামক রাজর্ষি কৃষ্ণাসুরের শত্রু ছিলো, তার ভালোর জন্যই ইন্দ্র কৃষ্ণাসুরকেও বধ করলেন, আর তার যেন পুত্র উৎপন্ন না হয় সেজন্য তার গর্ভবতী ভার্যাদেরও বধ করলেন। সায়ণাচার্য [৬] তার নিজের ভাষ্যে এমনই ইতিহাস লিখেছেন। কিন্তু এটি কল্পনার বিলাস মাত্র, এতে বাস্তবতা কিছু নেই। সত্যব্রত সামশ্রমী সায়ণের ব্যাখ্যাকে অরুচিকর মেনে টিপ্পনী দিয়েছেন যে, “যেখানে বিবরণকারের ব্যাখ্যা অধিক উৎকৃষ্ট, যিনি আধিদৈবিক অর্থ করতে গিয়ে লিখেছেন ‘কৃষ্ণগর্ভাঃ’ শব্দের তাৎপর্য হলো কালো মেঘে গর্ভরূপে থাকা জল, যেগুলোকে ইন্দ্ৰ সেখান থেকে বের করে বর্ষণ করেন। ‘নিরহন্'—এ হন্ ধাতু অন্তর্ণীতণ্যর্থ, যার অর্থ হলো বের করা বা নিচে ফেলে দেয়া”। এভাবেই বেদমন্ত্রের কৃষ্ণবর্ণ রাত্রিকে দূর করে ভোরের সূর্য কিরণের প্রতিষ্ঠা, কালো মেঘকে ভেদ করে বর্ষণকে সায়ণাচার্য হাস্যকরভাবে কৃষ্ণ নামক অসুরকে ইন্দ্র নামক আর্যের হাতে বধ হওয়ার কাল্পনিক পৌরাণিক মনগড়া কাহিনী দাঁড় করিয়েছেন৷

একইভাবে সামবেদের ৩২৩ নং মন্ত্রের ব্যখ্যায় এরকম মনগড়া গল্প হাজির করে শ্রীকৃষ্ণকে অনার্য রাজা বানিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন সায়ণাচার্য।
সামবেদ: ৩২৩ (ঋগ্বেদ: ৮/৯৬/১৩ [৭])
অব দ্রপ্সো অংশুমতীমতিষ্ঠদীয়ানঃ কৃষ্ণো দশভিঃ সহস্রৈঃ। আবত্তমিন্দ্রঃ শচ্যা ধমন্তমপ স্নীহিতিং নৃমণা অধদ্রাঃ॥
এই মন্ত্রের ঋষি: দ্যুতানো, দেবতা: ইন্দ্র, ছন্দ: ত্রিষ্টুপ্ এবং স্বর: ধৈবতঃ। মন্ত্রটিতে পাপরূপ অসুর দ্বারা আক্রন্ত জীবাত্মাকে কীভাবে উদ্ধার করা যায় তার বর্ণনা করা হয়েছে।
পদার্থ: (দ্রপ্সঃ) জলবিন্দুবৎ অণুর মতো জীবাত্মা (অংশুমতীম্ [৮]) চক্ষু আদি ইন্দ্রিয়, প্রাণ এবং মন দ্বারা যুক্ত দেহপুরকে {প্রাণ এবাংশুঃ, চক্ষুরেবাংশুঃ। মনো হ বাংশুঃ। শতপথ: ১১/৫/৯/২} (অব-অতিষ্ঠৎ) প্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ সঞ্চিত কর্মের ফল ভোগ করার জন্য এবং নতুন কর্ম করার জন্য পরমাত্মা দ্বারা প্রেরিত হয়ে দেহপুরীতে আগমন করে। (কৃষ্ণঃ) অন্ধকাররূপ তমোগুণ {“তমো বৈ কৃষ্ণং, মৃত্যুস্তমো”, “এতদ্বৈ পাানো রূপং য়ৎ কৃষ্ণ, কৃষ্ণ ইব হি পাপ্পা”, “কৃষ্ণো ভবতি, পাপ্পানং এবাপহতে” মৈত্রায়ণী সংহিতা: ২/৫/৬; “কৃষ্ণ ইব পাপ্পা য়ৎ কৃষ্ণঃ” কাঠক সংহিতা: ১৩/২} (দশভিঃ সহস্রৈঃ) দশ হাজার যোদ্ধার সাথে অর্থাৎ নিজের বিভিন্ন প্রকার গণের সাথে বিবিধ প্রকার কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য প্রভৃতি রিপুর সাথে (ইয়ানঃ) সেই আত্মাকে আক্রমণ করে থাকে {“লিটঃ কানজ্‌ বা” অষ্টাধ্যায়ী: ৩/২/১০৬}৷ তখন (ধমন্তম্) বিবিধ স্থানে গমনশীল বা হিংসাকারী {“ধমতিঃ গতিকর্মা বধকর্মা চ” নিঘন্টু: ২/১৪, ২/১৯; “পাঘ্রাধ্মা...” অষ্টাধ্যায়ী: ৭/৩/৭৮} (তম্) সৈন্যসহ সেই তমোগুণকে (ইন্দ্ৰঃ) জীবাত্মার সহায়ক পরমৈশ্বর্যবান পরমাত্মা (শচ্যা) উৎকৃষ্ট জ্ঞান বা কর্মের সাথে {শচীতি প্রজ্ঞানাম কর্মনাম চ। নিঘন্টু: ৩/৯, ২/১} (আবৎ) কাবু করে ফেলেন। তারপর (নৃমণাঃ) সজ্জন ব্যক্তির প্রতি ধ্যান ও প্রেম প্রদানকারী সেই পরমাত্মা (স্নীহিতিম্) তমোগুণের সেই হিংসক সেনাদের {“স্নেহয়তিঃ বধকর্মা” নিঘন্টু: ২/১৯} (অপ) দূর করে দিয়ে আত্মাতে (রাঃ [৯]) সদ্গুণরূপী সম্পত্তির (অধৎ) আধার করে দেন {“ছন্দসি লুলঙ্গিটঃ” অষ্টাধ্যায়ী: ৩/৪/৬}। এর অভিপ্রায় এই যে, যখন যখন দেহধারী জীবাত্মার ওপর তমোগুণরূপ কৃষ্ণাসুর আক্রমণ করে, তখন তখন ঐশ্বর্যবান পরমাত্মা তাঁকে উদ্ধার করে দেন।
সরলার্থ: জলবিন্দুবৎ অণুর মতো জীবাত্মা চক্ষু আদি ইন্দ্রিয়, প্রাণ এবং মন দ্বারা যুক্ত দেহপুরকে প্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ সঞ্চিত কর্মের ফল ভোগ করার জন্য এবং নতুন কর্ম করার জন্য পরমাত্মা দ্বারা প্রেরিত হয়ে দেহপুরীতে আগমন করে। অন্ধকাররূপ তমোগুণ দশ হাজার যোদ্ধার সাথে অর্থাৎ নিজের বিভিন্ন প্রকার গণের সাথে বিবিধ প্রকার কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য প্রভৃতি রিপুর সাথে সেই আত্মাকে আক্রমণ করে। তখন বিবিধ স্থানে গমনশীল বা হিংসাকারী সৈন্যসহ সেই তমোগুণকে জীবাত্মার সহায়ক পরমৈশ্বর্যবান পরমাত্মা উৎকৃষ্ট জ্ঞান বা কর্মের সাথে কাবু করে ফেলেন। তারপর সজ্জন ব্যক্তির প্রতি ধ্যান ও প্ৰেম প্রদানকারী সেই পরমাত্মা তমোগুণের সেই হিংসক সেনাদের দূর করে দিয়ে আত্মাতে সদ্গুণরূপী সম্পত্তির আধার করে দেন।
ভাবার্থ: দেহে অবস্থিত জীবাত্মাকে কাম, ক্রোধ প্রভৃতি দানব পীড়িত করতে চায়, জীবাত্মার উচিত পুরুষার্থ দ্বারা এবং পরমাত্মার সহায়তা দ্বারা তাদেরকে পরাজিত করা। তবেই সকল প্রকার আধ্যাত্মিক এবং ভৌতিক ঐশ্বর্য প্রাপ্ত করা যাবে।
বি.দ্র. এই মন্ত্রের উপর সায়ণাচার্য এইরকম ঐতিহাসিক অর্থ লিখেছেন—“প্রাচীন কোনো এক সময়ে কৃষ্ণ নামক অসুর দশ হাজার অসুরের সাথে অংশুমতী নামক নদীর পাড়ে অবস্থান করছিল। সেখানে জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত কৃষ্ণাসুরের নিকট ইন্দ্র বৃহস্পতির সঙ্গে পৌঁছেছিল। সেখানে পৌঁছে ইন্দ্র বৃহস্পতির সহায়তায় কৃষ্ণাসুর এবং তার অনুচরদের হত্যা করে [১০]।” এই সমস্ত বৃত্তান্ত অপ্রামাণিক। কেননা বেদে কোনো লৌকিক ইতিহাস নেই। এই ইতিহাসকে যদি আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক, অধিযজ্ঞ বা অধিভূত ব্যাখ্যা দেওয়া যায় তবে সঙ্গতি হয়, যেভাবে এই ভাষ্যে আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নিজের খেয়াল মতো চার বেদের ইংরেজি ভাষায় টিপ্পনীসহ অনুবাদকারী গ্রিফিথ মহাশয় এই মন্ত্রের টিপ্পনীতে লিখেছেন যে, এই মন্ত্রে ‘কৃষ্ণ দ্রপ্স’ হচ্ছে অন্ধকারাবৃত চন্দ্র এবং অংশুমতী অন্তরীক্ষের কোনো রহস্যময়ী নদী, দশ হাজার অসুর অন্ধকাররূপ দানব, যা বধের মাধ্যমে চন্দ্র অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়েছে [১১]। গ্রিফিথের এই ব্যাখ্যা আধিদৈবিক ব্যাখ্যার এক সাংকেতিক দিক প্রদান করেছে। অপপ্রচারকারিগণ বলেন যে, “বর্তমানে সায়ণাচার্যের বেদভাষ্য প্রাচীনতম, তাই তা সর্বমান্য।” কিন্তু এসব ঠুনকো যুক্তি। প্রচীন ভাষ্যও বেদের যথার্থতা নিরূপণে ব্যর্থ হতে পারে এবং তদপেক্ষা অধুনিক ভাষ্যও সর্বমান্য হতে পারে।
টিপ্পনী:
১. ঋক০ ১/১০১/১, ‘হুবেমহি’ ইত্যত্র ‘হবামহে' ইতি পাঠঃ।
২. ঋজবঃ সরলাঃ শ্বানো বৃদ্ধয়ো যস্মিন্নধ্যয়নে তেন—ইতি ঋক০ ১/১০১/১ ভাষ্যে দ০।
৩. বজ্ৰা অবিদ্যাচ্ছেদিকা দক্ষিণা য়স্মাৎ তম্—ইতি তত্রৈব দ০।
৪. প্রশস্তাঃ মরুতো বিদ্যাবন্তঃ ঋত্বিজোঽধ্যাপকা বিদ্যন্তে য়স্মিংস্তম্—ইতি তত্রৈব দ০।
৫. ঋভাষ্যে দয়ানন্দষিমন্ত্রমেতম্ ‘শালাধ্যক্ষঃ (অধ্যাপকঃ) কীদৃশঃ স্যাদিতি' বিষয়ে ব্যাখ্যাতবান্।
৬. তথা হি—“য়ঃ ইন্দ্ৰঃ ঋজিশ্বনা এতৎসংজ্ঞকেন রাজর্ষিণা সখ্যা সহিতঃ সন্ কৃষ্ণগর্ভাঃ কৃষ্ণো নাম কশ্চিদসুরঃ, তেন নিষিক্তগর্ভাঃ তদীয়া ভার্যাঃ নিরহন্ নিতরামবধীৎ। কৃষ্ণমসুরঞ্চ তৎপুত্রাণামনুৎপত্ত্যর্থং গর্ভিণীস্তস্য ভার্য়া অপি অবধীদিত্যর্থঃ”—ইতি সায়ণঃ।
৭. ঋক০ ৮/৯৬/১৩, ঋষিঃ তিরশ্চীরাঙ্গিরসো দ্যুতানো বা মারুতঃ। “অপ স্নেহিতীর্নৃমণা অধত্তং” ইতি পাঠঃ।
৮. অংশুমতী নাম নদী—ইতি বিবরণকারঃ মাধবঃ, ভাষ্যম্।
৯. অস্মাভিঃ “অধৎ রাঃ' ইতি পদপাঠমনুসৃত্য ব্যাখ্যাতম্। সায়ণস্তু ‘অধদ্রাঃ’ ইত্যস্য স্থানে ‘অপদ্রাঃ’ ইতি মত্বা ব্যাচষ্টে—‘অপদ্রাঃ’ দ্রাতিঃ কুৎসিতগতিকর্মা, সর্বস্য হিংসিত্রীং তস্য সেনাম্ স ইন্দ্রঃ অপগময়ৎ অবধীদিত্যর্থঃ। বিবরণকারস্তু ‘অব’ ইত্যুপসর্গম্ ‘অধৎ’ ইত্যনেন যোজয়ন্ “অব অধৎ আধত্তে, দধাতের্ধারণার্থস্যেদং রূপম্, অবরুদ্ধবানিত্যর্থঃ” ইতি ব্যাখ্যাতবান্। তেন ‘রাঃ’ ইতি পদস্য কিমপি ব্যাখ্যানং ন কৃতম্। ভরতস্তু ‘অধ, দ্রাঃ’ ইতি বিচ্ছিদ্য “অথ তদানীম্ দ্রাঃ দ্রাতিঃ কুৎসিতগতিকর্মা, লুঙি রূপম্”, 'দ্রাঃ’ ইতি। সিপ্ অন্তর্গতণ্যর্থঃ অপগময়তীত্যর্থঃ—ইতি ব্যাচখ্যৌ।
১০. ভরতোঽপ্যাহ—কৃষ্ণনামানম্ অসুরং চ ইন্দ্রঃ জঘান, তৎপ্রকারোঽত্র কীৎর্য়তে—ইতি।
১১. The Black Drop: the darkened Moon. Ansumatic: A mystical river of the air into which the Moon dips to recover its vanished light. Ten thousand: probably, demons of darkness; the numbers are without a substantive—Griffith.

লেখা সংগ্রহ করা হয়েছে

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ