তারার নির্মাণ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 May, 2023

তারার নির্মাণ

 অমাবস্যার রাতে ঝিলমিল করতে থাকা তারার সৌন্দর্য দেখতে বড়োই অদ্ভুত লাগে। সামান্য বুদ্ধির ব্যক্তি এটা ভাবতেও পারে না যে তারা কতটা বড়ো হতে পারে? বস্তুতঃ অনেক তারা সূর্যের সমান আয়তনের, কয়েকটা কিছু ছোটো, আবার কিছু অনেক বড়ো আকারের হয়। এই বিশাল আকাশের মধ্যে প্রায় দুই অরব গ্যালাক্সি আর এক-একটা গ্যালাক্সির মধ্যে প্রায় দুই-তিন অরব তারা আছে। এই আকার তো বর্তমান বৈজ্ঞানিকদের দ্বারা দৃশ্য ব্রহ্মাণ্ডের মানা হয়েছে। আসলে ব্রহ্মাণ্ড কত বিশাল, এটা কেউই জানে না আর না জানতে পারবে। এইসব তারা কিভাবে তৈরি হয়? এর উপর বৈজ্ঞানিক দীর্ঘ কাল ধরে অনুসন্ধান করে আসছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা এদের তৈরির প্রক্রিয়াকে খুবই কম জানতে পেরেছে।

দুই প্রকারের লোকঃ

এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে অন্তরিক্ষের অতিরিক্ত প্রধানত দুই প্রকারের লোক আছে। এদের মধ্যে প্রথম লোক হল সেটা যা অত্যন্ত তেজ আর ঊষ্মার পুঞ্জ হয়, যাদের আমরা তারা বলি। এই তারা যখন নির্মিত হতে থাকে, সেই সময় তাদের মধ্যে প্রকাশ আর ঊষ্মার মাত্রা অপেক্ষাকৃত কম থাকে, কিন্তু সময়ের সাথে-সাথে তাদের কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে নাভিকীয় একীকরণের ক্রিয়া প্রারম্ভ হওয়ার পশ্চাৎ ঊষ্মা আর প্রকাশ দুটোর মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। যতক্ষণ তারা জীবিত থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সেই রূপে থাকে। এই তারাগুলো নিজের-নিজের আকাশগঙ্গার কেন্দ্রের মধ্যে অবস্থিত কোনো বিশালতম আর প্রবলতম তারার পরিক্রমা করতে থাকে।
অন্য লোক সেইসব হয়, যেসব নির্মাণাধীন অবস্থায় অগ্নির পিণ্ডের রূপে থাকে, কিন্তু সময়ের সাথে-সাথে সেগুলো ঠান্ডা হয়ে গ্রহ-উপগ্রহ আদিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়। এদের কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে তীব্র তাপ সর্বদা থাকে, কিন্তু তার তীব্রতা এতটা হয় না যে সেখানে নাভিকীয় একীকরণ হতে পারে। সব গ্রহ নিজের নিকটস্থ কোনো তারার গুরুত্বাকর্ষণ বলের দ্বারা বাঁধা অবস্থায় তার নিরন্তর পরিক্রমা করতে থাকে। বিভিন্ন তারা, গ্রহ আর উপগ্রহ আদি লোক নিজের উৎপত্তি কালের সময় থেকে কিছু কাল পশ্চাৎ পর্যন্ত নিজের-নিজের নিকটস্থ বিশাল লোকের পরিক্রমা নিশ্চিত গতির সঙ্গে নিশ্চিত কক্ষের মধ্যে করতে পারে না, বরং তাদের গতি আর মার্গ দুটোই অনিশ্চিত, অব্যবস্থিত আর অস্থির থাকে, কিন্তু সেইসব লোক ধীরে-ধীরে কক্ষ আর নিশ্চিত গতিকে প্রাপ্ত করার জন্য নিরন্তর প্রয়ত্নশীল থাকে।
বেদ বিজ্ঞান আলোক

তারার গঠন
তারার মুখ্য পাঁচটা ভাগ হয়। সেই পাঁচটা ভাগের নাম লোম, ত্বক, মাংস, অস্থি ও মজ্জা বলা হয়েছে।
1. লোম = বৈদিক বৈজ্ঞানিক স্বরূপে তারার বিভিন্ন ছন্দ রশ্মিগুলো হচ্ছে তারার লোম।
2. ত্বক = তার ভিতরে করোনা, তাদেরও আধার রূপ অন্য ছন্দ রশ্মিগুলো রূপ প্রাণ এবং সূত্রাত্মা বায়ু আদি প্রাণের আবরণ সম্পূর্ণ তারাকে ঢেকে থাকে। এটাই তারার ত্বকের সমান হয়। এই ভাগের মধ্যে অসুর তত্ত্ব, যা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আকাশ তত্ত্বের সঙ্গে মিশ্রিত থাকে, এটাও এই ছন্দাদি রশ্মিগুলোর নিকটে হয়। এইসব মিলিত হয়ে তারার পরিধির নির্মাণ করে। এখানে ছন্দ ও প্রাণাদির ঘনত্ব হতে তারার পরিধি অতি উষ্ণ হয়।
3. মাংস = এর পশ্চাৎ তারার ভিতরের ভাগ (যা কেন্দ্রীয় ভাগের উপর নিরন্তর স্খলিত হতে থাকে) হয়। এই ভাগ মাংস রূপ হয় অর্থাৎ এরমধ্যেই তারার নির্মাণের সম্পূর্ণ সামগ্রী (হাইড্রোজেনের নাভিক অত্যধিক মাত্রায় ভরে থাকে তথা ইলেকট্রনস্ও সেই অনুপাতে থাকে, তবে সেটা মুক্তাবস্থায়) অবস্থিত থাকে তথা তারার অধিকাংশ বল এই ভাগের মধ্যেই কাজ করে। আর এই ভাগের মধ্যেই মাস ও ঋতু বিশেষ্য রশ্মিগুলো অনেক ছন্দাদি প্রাণের সঙ্গে বিদ্যমান থাকে।
4. অস্থি = উপরিউক্ত ভাগের মধ্যে বিভিন্ন প্রক্ষেপণশীল কিরণ অস্থিরূপ হয়, যা সম্পূর্ণ তারাকে যেন ধারণ করে। ত্রিষ্টুপ্ এবং জগতী রশ্মিগুলো এই কাজকে সম্পাদিত করে।
5. মজ্জা = তারার কেন্দ্রীয় ভাগ, যা বিভিন্ন প্রাণ ও কণার ভাণ্ডার হয় তথা জ্যোতির্ময়ী সংযোগ রশ্মিগুলো দিয়ে ভরা থাকে, তাকে মজ্জা বলে। এই ভাগই হল সম্পূর্ণ তারার বলের কেন্দ্র এবং এটাই হচ্ছে জ্যোতির কেন্দ্র। এই ভাগের মধ্যে বহিরাগত পদার্থ, বিশেষ করে হাইড্রোজেনের নাভিক প্রবাহিত হতে থাকে, যা মিশ্রিত হয়ে হিলিয়ামে পরিবর্তিত হয়ে ঊর্জা উৎপন্ন করতে থাকে। অনেক তারার মধ্যে হিলিয়াম আদিও মিশ্রিত হয়ে অন্য বড়ো নাভিকের নির্মাণ করে।
এইভাবে পাঁচ প্রকারের পদার্থ দিয়ে তারা নির্মিত হয়। এখানে অগ্নিই হল সব প্রকাশিত ও আকর্ষণযুক্ত পদার্থের উৎপত্তি ও নিবাস স্থান। যদিও সব তারা প্রধানত অগ্নি তথা সোম, এই দুই প্রকারের পদার্থ দ্বারা মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে, যখন সোমও অগ্নির সমান হয়ে যায়, তখনই তারার স্বরূপ নির্মিত হতে থাকে। বিভিন্ন প্রকারের কণা, যা তারার বিভিন্ন ভাগের মধ্যে দূর-দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে, তারার অতি তেজস্বী কেন্দ্রীয় ভাগের দিকে পৌঁছাতে থাকে। সেখানে পৌঁছে সেটা বিভিন্ন প্রকারের প্রাণের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পরস্পর সঙ্গত হয়ে নানা তত্ত্বের নির্মাণ করতে থাকে।
তারার পাঁচটা ক্ষেত্র
এখানে আমরা যেকোনো তারার আন্তরিক গঠনের অন্য প্রকারে কিছু স্থূল ব্যাখ্যা করবো -
1. এন্ট্রি (কেন্দ্রীয় ভাগ) = এরমধ্যে নাভিকীয় একীকরণের ক্রিয়া হয়ে তীব্র ঊর্জার বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ এবং বিদ্যুদাবেশিত তরঙ্গের উৎপত্তি হয়। এদের মধ্যে সর্বাধিক প্রবল বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বল বিদ্যমান থাকে। এটা হল যেকোনো তারার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভাগ।
2. য়ামী = কেন্দ্রীয় ভাগের বাইরে সেই লঘু ভাগ, যারমধ্যে অগ্নি আর বায়ুর এমন সম্মিশ্রণ বিদ্যমান থাকে, যা কেন্দ্রীয় ভাগ আর বাইরের ভাগের মাঝখানে সুষম বজায় রাখে। এই ভাগের উপরেই তারার দুটো ভাগ পরস্পর স্খলিত হতে থাকে। এই ভাগের পদার্থকে কোনো চাকার মধ্যে বিদ্যমান bearing -এর রূপে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
বেদ বিজ্ঞান আলোক

3. বারুণী = এটা হল bearing রূপী ভাগের উপরের লঘু ক্ষেত্র, যারমধ্যে ঊষ্মার অতি উচ্চ অবস্থা বিদ্যমান থাকে। এই পদার্থ একীকরণ কণাগুলোকে কেন্দ্রের দিকে আকর্ষিত করে আর কেন্দ্রীয় ভাগ থেকে আসা বিভিন্ন তরঙ্গকে বাইরের দিকে নিক্ষেপ করে।
4. সৌমী = এটা হল তারার সবথেকে বিশাল ভাগ, যার ত্রিজ্যা সম্পূর্ণ তারার ত্রিজ্যার প্রায় 75% হয়। এই ভাগের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের পদার্থ আয়নের রূপে বিদ্যমান থাকে। এর থেকেই বিভিন্ন কণা কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে পৌঁছে মিশ্রিত হয়ে নানা প্রকারের পদার্থের মধ্যে পরিবর্তিত হয়। এই ভাগের তাপ অন্য ভাগের তুলনায় সবথেকে কম হয়।
5. ঊর্ধ্বা = এটা হচ্ছে যেকোনো তারার সবথেকে বহিরাগত পরিধি, যেখানে অগ্নির উঁচু-উঁচু জ্বালাগুলো নিরন্তর উঠতে থাকে। এই ভাগের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের বিদ্যুৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র বিদ্যমান থাকে, যাদের স্থিতিও নিরন্তর পরিবর্তিত হতে থাকে।
তারার ভিতরে পাঁচ প্রকারের বল আর পদার্থ
তারার কেন্দ্রীয় ভাগ নির্মাণের সময় যেমন-যেমনটা করে পদার্থের সংকোচন হয়, তেমন-তেমনটা গুরুত্বাকর্ষণ বল এবং বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বলের মধ্যে বৃদ্ধি হতে থাকে। যে পদার্থের কেন্দ্র যতটা নিকটে থাকে, সেখানে এই বল ততই অধিক প্রবল হয়। এই সময় তারার ভিতরে পাঁচ প্রকারের মুখ্য বল কাজ করে -
1. প্রাণ এবং সূক্ষ্ম বাক্ রশ্মির মাঝে কার্যরত বল
2. প্রাণ এবং বিভিন্ন ছন্দ রশ্মির মাঝে কার্যরত বল
3. বিভিন্ন ছন্দ রশ্মির মাঝে কার্যরত বল
4. বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বল
5. গুরুত্বাকর্ষণ বল
এই তারার ভিতরে বিদ্যমান পদার্থেরও পাঁচটা শ্রেণী আছে -
1. প্রাণ রশ্মি
2. ছন্দ রশ্মি
3. আকাশ রশ্মি
4. বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ
5. বিভিন্ন প্রকারের কণা
এইসব প্রকারের বল আর পদার্থ তারার কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে অত্যন্ত সক্রিয় থাকে। বিভিন্ন প্রকারের রশ্মি যেখানে তারার ভিতরে নানা প্রকারের বলের উৎপত্তি করে উচ্চ তাপ আর চাপকে উৎপন্ন করে, সেখানে কিছু ছন্দ রশ্মি এই তাপ আর চাপকে নিয়ন্ত্রিতও করতে থাকে, যার কারণে নাভিকীয় একীকরণের প্রক্রিয়া ব্যবস্থিত চলতে থাকে। কিছু ছন্দ রশ্মি কেন্দ্রীয় ভাগের পরিধির মধ্যে নিরন্তর সঞ্চারিত হয়ে সেই পরিধিকে সুনিশ্চিত বজায় রাখে, যারফলে কেন্দ্রীয় ভাগ অন্য ভাগ থেকে পৃথক থাকা সত্বেও তারসঙ্গে জুড়ে থাকে।
তারা নির্মাণের প্রক্রিয়া জানার পূর্বে, আমরা এখানে এটা জানার চেষ্টা করবো যে কণা আর প্রতিকণার সংযোগ দ্বারা ঊর্জার উৎপন্ন হওয়ার ক্রিয়া বিজ্ঞানটা কি? বর্তমান বিজ্ঞান কণা আর প্রতিকণা দিয়ে মিলিত তরঙ্গাণুর নির্মাণের কথা তো বলে, কিন্তু তার ক্রিয়াবিজ্ঞানটা কি, এটা তারা জানে না। ধ্যাতব্য হল, তারার নির্মাণের পূর্বে বিভিন্ন কণা এবং অনেক প্রতিকণার নির্মাণ আগে থেকে হয়ে থাকে। নির্মাণাধীন তারার কেন্দ্রের নির্মাণের মধ্যে তাদের সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এই কারণে এদের ক্রিয়াবিজ্ঞান জানাটা অতি আবশ্যক।

কণা ও প্রতিকণার সংযোগ দ্বারা ঊর্জার উৎপত্তির ক্রিয়াবিজ্ঞান
নেব্যুলার নির্মাণাধীন কেন্দ্রের মধ্যে কণা আর প্রতিকণার সঙ্গে মিলিত হয়ে ঊর্জার উৎপত্তি এবং বহিরাগত পদার্থের কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হওয়ার গম্ভীর বিজ্ঞান এখানে দেওয়া হয়েছে। ইলেকট্রন এবং পোজিট্রন, কোয়ার্ক এবং প্রতিকোয়ার্ক আদির সংযোগ দ্বারা ঊর্জা কেন এবং কিভাবে উৎপন্ন হয়? সম্ভবত এই বিষয়ে বর্তমান বিজ্ঞান মৌন আছে। এখানে সেই গুপ্ত বিজ্ঞানের উন্মোচন করা হয়েছে। যখন কোনো কণা আর প্রতিকণা, উদাহরণের জন্য ইলেকট্রন এবং পোজিট্রন পরস্পর নিকটে আসে, তখন নিম্ন ঘটনা ঘটিত হয় -
পোজিট্রন আগ্নেয় তত্ত্ব (প্রাণ) প্রধান হওয়ার কারণে প্রাণের তুলনায় ঘন তথা মরুত্ রশ্মির বিরল রূপ হয় এবং ইলেকট্রন সোম তত্ত্ব প্রধান হওয়ার কারণে প্রাণের বিরল এবং মরুত্ রূপ রশ্মির ঘন রূপ হয়। যখন এই দুই কণা নিকটে আসে, তখন এদের মধ্যে প্রবল আকর্ষণ ক্রিয়া হয়। যখন দুই প্রকারের কণা সমান মাত্রায়, কিন্তু বিপরীত গুণকারক আবেশের অতিরিক্ত দ্রব্যমান আদি গুণের মধ্যেও অসমান হয়, তখন সেই কণা পরস্পর একে-অপরকে বেঁধে অপেক্ষাকৃত একটা স্থূল এবং সংযুক্ত কণার নির্মাণ করে। যেরকম ইলেকট্রন ও প্রোটন সংযুক্ত হয়ে হাইড্রোজেনের নির্মাণ করে। এই ধরনের কণাকে পরস্পর কণা এবং প্রতিকণা বলা যেতে পারে না।
যখন ইলেকট্রন ও পোজিট্রনের মতো সমান মাত্রা, কিন্তু বিপরীত বিদ্যুৎ আবেশের অতিরিক্ত অন্য সব গুণ সমান হয়, তখন সেই কণা পরস্পর কণা প্রতিকণার রূপে পরিচিত হয়। এদের অর্থাৎ ইলেকট্রন, পোজিট্রন আদির সংযোগের প্রক্রিয়া ইলেকট্রন এবং প্রোটনের সংযোগ প্রক্রিয়ার থেকে ভিন্ন হয়। ইলেকট্রন যখন কোনো পোজিট্রনের নিকট যায়, তখন তাদের আকর্ষণের প্রক্রিয়া এতই তীব্র হয় যে সেই দুই কণা পরস্পর পূর্ণ রূপে মিশ্রিত হয়ে যায়। সেই দুইয়ের মাঝে কোনো অবকাশ বা আকাশ তত্ত্ব বিদ্যমান থাকে না, সেই সময় ইলেকট্রনের মরুত্ রশ্মিগুলো এবং পোজিট্রনের ধনঞ্জয় আদি প্রাণ রশ্মিগুলো দ্রুত একে-অপরের দিকে প্রবাহিত হয়ে সম্পূর্ণ পদার্থকে মিশ্রিত করে দেয়। প্রাণ-অপান এবং বাক্ তত্ত্বের দ্বারা গায়ত্রী ছন্দ রশ্মিগুলো থেকে এমন তীব্র ভেদক খদির রূপ তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, যা ইলেকট্রন আর পোজিট্রন অথবা যেকোনো কণা ও প্রতিকণার পূর্ণ মিশ্রিত পদার্থকে একসঙ্গে আচ্ছাদিত করে তরঙ্গাণুর রূপ প্রদান করে। এই তরঙ্গাণু অত্যধিক শক্তি এবং গতি যুক্ত হয়। এই তরঙ্গগুলোর অনুপস্থিতিতে যেকোনো কণা আর প্রতিকণাও তরঙ্গাণুর রূপ ধারণ করতে পারে না।
যখন নিরাবেশিত নিউট্রন আদি কণার সঙ্গে তাদের প্রতিকণার সংযোগ হয়, তখন তাদের বিপরীত ঘূর্ণনের কারণে উৎপন্ন বল দুটোকে পরস্পর জুড়ে দেয়। তারপর তাদের থেকে তরঙ্গাণু তৈরির প্রক্রিয়াও উপরিউক্তানুসারে হয়। এইভাবে গামা কিরণ উৎপন্ন হয়ে অতি ভেদক ক্ষমতার সঙ্গে বহির্গমন করে যায়।
এই প্রক্রিয়াকে নিম্ন চিত্রানুসারেও জেনে নেবেন -
বেদ বিজ্ঞান আলোক

এরপর নেব্যুলার সম্পূর্ণ ভাগের মধ্যে মন, বাক্ বা প্রাণ থেকে এক প্রকারের পলাশ নামক তরঙ্গ উৎপন্ন হয়। এদের উৎপন্ন হলে পরে বিভিন্ন প্রকারের বিদ্যুৎ আবেশিত কণা উৎপন্ন হতে থাকে। এদের সঙ্গে বিল্ব তরঙ্গগুলো যোগ দ্বারা সূক্ষ্মতম বৈদ্যুত আবেশিত কণার সংযোগ হয়ে অন্য স্থূল আবেশিত কণার নির্মাণ হতে থাকে। এই সময় সূক্ষ্ম নাভিকের উৎপত্তি হওয়া শুরু করে। এই কারণে নেব্যুলা বা তারার মধ্যে বিদ্যুৎ আবেশিত কণার সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। কণা প্রতিকণা দিয়ে মিলিত হয়ে ঊর্জা উৎপন্ন করার ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যায় তথা বড়ো-বড়ো বৈদ্যুত-ক্ষেত্র উৎপন্ন হতে থাকে। এই সবের কারণে সম্পূর্ণ পদার্থ অতি তেজস্বী হয়ে ওঠে। যেকোনো নেব্যুলা বা তারার পৃথক-পৃথক শনাক্তকরণ তাদের দ্বারা নির্গত কিরণগুলো দিয়েই হয়। এখনও পর্যন্ত নাভিকীয় একীকরণের মতো ক্রিয়া প্রারম্ভ হতে পারে না। এই তরঙ্গগুলোর প্রভাব নেব্যুলা বা তারার আকর্ষণ বলের উপরেও হয়।
তারার কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে দুই প্রকারের ঊর্জা থাকে। একটা হল সেই ঊর্জা, যা নাভিকীয় একীকরণের প্রক্রিয়া প্রারম্ভ করার পূর্বে উৎপন্ন হয়। সেই ঊর্জা নাভিকীয় একীকরণের প্রক্রিয়া প্রারম্ভ করার জন্য অনিবার্য হয়। তারপর যে ঊর্জা নাভিকীয় একীকরণ থেকে উৎপন্ন হয়, সেই নতুন ঊর্জাও পূর্ব বিদ্যমান ঊর্জার মধ্যে মিশ্রিত হতে থাকে আর একটা বিশেষ সীমার পশ্চাৎ অতিরিক্ত ঊর্জা তারা থেকে বাইরে নির্গত হয়ে যায়। এই কাজের মধ্যে একটা গায়ত্রী ছন্দ রশ্মির বিশেষ অবদান থাকে।
নাভিকীয় একীকরণ থেকে উৎপন্ন ঊর্জা তারার কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে বিদ্যমান ঊর্জার তুলনায় অতি তীক্ষ্ণ হয়। এই ঊর্জা পূর্ব বিদ্যমান ঊর্জার ক্ষেত্রের মধ্যে নিরন্তর গমন করে আর তারপর সেই ঊর্জার ছেদন করে তারার অন্য ভাগের মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে অন্তরিক্ষের মধ্যে নির্গত হয়ে যায়। এই সম্পূর্ণ কাজের মধ্যে একটা সাম্নী ত্রিষ্টুপ্ ছন্দ রশ্মি বিশেষ উপযোগী হয়। এই দুই প্রকারের ঊর্জার সুষম বজায় রাখতে সহায়ক হয়।
তারার কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে বিদ্যমান দুই প্রকারের ঊর্জা নিজের - নিজের সীমার ভিতর প্রত্যেক কণাকে প্রদীপ্ত করে। এই দুই প্রকারের ঊর্জার মধ্যে সমতা আছে। এই দুটোর মধ্যে অসমতা এই হল যে একীকরণের পূর্বে উৎপন্ন ঊর্জা তারার কেন্দ্রীয় ভাগ পর্যন্ত সীমিত থাকে আর সেখানে বিদ্যমান প্রত্যেক পদার্থকে ব্যাপ্ত করতে থাকে, অথচ একীকরণ থেকে উৎপন্ন ঊর্জা না কেবল কেন্দ্রীয় ভাগ, বরং সম্পূর্ণ তারা মণ্ডলকে ব্যাপ্ত করে। এই দুই ঊর্জাকে সমৃদ্ধ করার জন্য একটা গায়ত্রী ছন্দ রশ্মি ভারী ভূমিকা পালন করে।

তারার নির্মাণ

বস্তুতঃ বিভিন্ন গ্যালাক্সির কেন্দ্র তথা সেগুলোর মধ্যে বিদ্যমান তারা একটা লম্বা আর জটিল প্রক্রিয়ার পশ্চাৎই নির্মিত হয়, এরপর নিজের স্থায়ী কক্ষ আর গতিকে প্রাপ্ত করতে পারে। এই প্রক্রিয়াতে লক্ষ-লক্ষ বছর লেগে যায়, এমনটা নয় যে এই প্রক্রিয়া কোনো চমৎকার দ্বারা অকস্মাৎই হয়ে যায়। যেটা যত বড়ো লোক হয় অথবা যেটা নিজের কেন্দ্রীয় তারা থেকে যতটা অধিক দূরে থাকে, তাকে স্থায়ী কক্ষ প্রাপ্ত করতে ততই সময় লাগে। এদের মধ্যে যেটাই কেন্দ্রীয় আর আধার রূপ তারা হয়, সেটা নিজের অধীনস্থ লোকের তুলনায় আকার, তাপ, প্রকাশ আর দ্রব্যমানের দৃষ্টি দিয়েও অনেক বড়ো হয়।
যখন ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে অগ্নি আর সোম পদার্থ কিংবা ধনাবেশিত বা ঋণাবেশিত কণা সর্বত্র উৎপন্ন হয়ে যায়, সেই সময় কোনো বিশেষ ভাগ অথবা আগামী কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে অকস্মাৎ কিছু এমন বজ্র রূপ রশ্মি উৎপন্ন হয়ে যায়, যা ধনাবেশিত আর ঋণাবেশিত কণার ঊর্জাকে সেই স্তর পর্যন্ত নিয়ে যায়, যেখানে তারা পরস্পর মিলিত হয়ে ঊর্জাতে পরিবর্তিত হতে লেগে যায়। অন্য কণা আর প্রতিকণাও এই প্রক্রিয়াকে পুনরাবৃত্তি করে। যখন এই ঊর্জা সেই নবনির্মিত কেন্দ্রীয় ভাগ থেকে বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়, সেই সময় সেই বজ্র রূপ কিরণগুলোও তার সঙ্গে বহির্গমন করে। তারপর মনুষ্য নামক কণা, যাদের গতি অনিয়মিত হয় তথা যা অল্প প্রকাশবান্ এবং অল্পায়ু হয়, সেগুলো এবং বিভিন্ন ঋষি প্রাণ বজ্র রূপ কিরণের প্রভাব দ্বারা দেদীপ্যমান হয়ে সেই কিরণগুলোকে পুনরায় কেন্দ্রীয় ভাগের দিকে প্রতিবিম্বিত করে দেয় আর তারপর সেগুলো তাদের সঙ্গেই কেন্দ্রীয় ভাগের দিকে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে নেব্যুলার জন্ম কিভাবে হয়? কিভাবে ব্যাপক ক্ষেত্রের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা পদার্থ ঘনীভূত হওয়া শুরু করে? কিভাবে গুরুত্বাকর্ষণ বল অকস্মাৎ কেন্দ্রীভূত হওয়া প্রারম্ভ করে? এই ধরনের অতি গম্ভীর প্রশ্নের অতি গম্ভীর সমাধান এখানে দেওয়া হয়েছে। কণা আর প্রতিকণা দ্বারা মিলিত হয়ে ঊর্জার মধ্যে বদলাতে আর তারপর সেই ঊর্জার নির্গত হওয়ার কারণে হওয়া রিক্ত স্থান সম্পূর্ণ পদার্থকে নিজের দিকে আকর্ষিত করার কারণ হয়ে যায়।
এই প্রক্রিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম তাদের কেন্দ্রের নির্মাণ প্রারম্ভ হয়। তারার কেন্দ্রের নির্মাণের প্রক্রিয়া বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, সেগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম সূক্ষ্ম বিদ্যুৎ আর তার থেকেও সূক্ষ্ম ধনঞ্জয়, ব্যান এবং সূত্রাত্মা বায়ুর দ্বারা কোনো একটা স্থান বিশেষের মধ্যে আকাশের সংকুচণ প্রারম্ভ হয়। এরপর সেই কেন্দ্রের চতুর্দিকে বিদ্যমান পদার্থের মধ্যে হালকা প্রক্রিয়া প্রারম্ভ হয়, যার কারণে বিভিন্ন কণা কম্পিত হওয়া শুরু করে। তার পরবর্তী ধাপে আকর্ষণের প্রক্রিয়া তীব্র হয়, তারপর সেগুলো পরস্পর বিভিন্ন মরুত্, ছন্দ এবং প্রাণ রশ্মির কারণে আবেশিত হয়ে ওঠে আর তাদের পরস্পর সঙ্গম প্রারম্ভ হওয়া শুরু করে। ধীরে-ধীরে গুরুত্বাকর্ষণ বলের প্রভাব বেড়ে গিয়ে পদার্থ আরও দ্রুত ঘনীভূত হতে থাকে আর গুরুত্বাকর্ষণ বলের চাপের কারণে সেই ক্ষেত্রের মধ্যে তাপ এবং চাপ এত বেড়ে যায় যে বিভিন্ন নাভিক পরস্পর মিশ্রিত হয়ে ভারী মাত্রায় ঊর্জাকে উৎপন্ন করা শুরু করে। এই সময় তারার নির্মাণাধীন কেন্দ্রের চতুর্দিকে ভারী কম্পন হয়ে সম্পূর্ণ পদার্থ দ্রুত সেই কেন্দ্রীয় পদার্থের দিকে প্রবাহিত হয়। ডার্ক এনার্জি এবং ডার্ক ম্যাটারের বাধক প্রভাব ধীরে-ধীরে প্রায় সমাপ্ত হয়ে যায়। এই সময় অত্যন্ত গম্ভীর ধ্বনি তরঙ্গও উৎপন্ন হয়। বাইরের দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পদার্থ গ্যাসের রূপে এবং জলধারার সমান দ্রুত কেন্দ্রের দিকে চলে। এই সময় বিভিন্ন ছন্দাদি রশ্মিও তেজযুক্ত হয়ে পরস্পর সঙ্গত আর মিশ্রিত হতে থাকে। এই প্রক্রিয়াতে অনেক প্রকারের নবীন কণা এবং তরঙ্গ তথা ন্যুক্লিওসিন্থেসিস প্রক্রিয়ার দ্বারা অনেক প্রকারের নাভিক বা অণুর নির্মাণও তীব্র গতিতে হয়। এই সময় সূত্রাত্মা বায়ু আর মনস্তত্ত্বের কারণে বিদ্যুৎ বিশেষ সক্রিয় হয়। তারার কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে না কেবল নাভিকীয় মিশ্রণের প্রক্রিয়া হয়, অপিতু বিভিন্ন ছন্দ রশ্মির সংকোচন দ্বারা নানা প্রকারের মূল কণারও উৎপত্তি হয়।
তারা নির্মাণের সময় কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে হওয়া নাভিকীয় মিশ্রণের ক্রিয়াও এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যায়। তারার কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে বিভিন্ন কণার একীকরণের জন্য পৃথক-পৃথক বিশেষ উচ্চ তাপের মাত্রা অনিবার্য হয়। এই মাত্রা থেকে কম তাপ হলে পরে কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে নাভিকীয় একীকরণের ক্রিয়া সম্পন্ন বা প্রারম্ভ হতে পারে না আর আবশ্যক মাত্রা থেকে অধিক তাপ হলে পরে নাভিকীয় একীকরণের প্রক্রিয়া অনেক তেজ হওয়ার জন্যও বিকিরণের চাপ অত্যধিক হতে পারে। এর পরিণামস্বরূপ তারার মধ্যে বিস্ফোরণ হতে পারে। এই কারণে এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে অনেক শ্রেণীর তারা বিদ্যমান আছে, যাদের কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে ভিন্ন-ভিন্ন প্রকারের কণার একীকরণ হয় আর এর জন্য তাদের কেন্দ্রের মধ্যে তাপ আর চাপের মাত্রাও ভিন্ন-ভিন্ন হয়।
তারার কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে অথবা তাদের দিকে যাওয়া বিভিন্ন প্রকারের কণা অনেক প্রকারের তীব্র ঊর্জা যুক্ত রশ্মিকে শোষণকারী হয়। যখন কোনো কোস্মিক মেঘের ভিতরে কোনো তারার জন্ম হয়, তখন সর্বপ্রথম একটা বিন্দুরূপ কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে বিভিন্ন প্রাণ এবং বাক্ রশ্মি তীক্ষ্ণ বল যুক্ত হয়ে পরস্পর দ্রুত সঙ্গত হতে থাকে। ধীরে-ধীরে সেই বিন্দুরূপ স্থান বিস্তারকে প্রাপ্ত করে কোস্মিক মেঘকে নিজের দিকে দ্রুত আকৃষ্ট করতে থাকে। একইসঙ্গে কোস্মিক মেঘের থেকে রোষে-রোষে অনেক প্রকারের রশ্মি সেই কেন্দ্রীয় ভাগের দিকে আসতে থাকে। ধীরে-ধীরে এই ভাগ অতি তীব্র তপ্ত হয়ে একটা তারাকে জন্ম দিতে থাকে।

কণা আর তারার মধ্যে সমতা
যেকোনো বিদ্যুদাবেশিত কণা অভ্যন্তরীণ গঠনের দৃষ্টিতে একটা তারার সমান হয়, যদিও এই সমতা পূর্ণরূপে নয়, বরং অল্পাংশের মধ্যেই হয়। দুটোর মধ্যেই উত্তরী আর দক্ষিণী ধ্রুব চুম্বকীয় ধ্রুবের মতো ব্যবহার করে। তারা তথা কণার পূর্বাঞ্চলীয় ভাগের মধ্যে প্রাণ-অপান আদি প্রাথমিক প্রাণ রশ্মিগুলো মৃদুরূপে বিদ্যমান থাকে, অথচ দক্ষিণ দিশা অর্থাৎ দক্ষিণী ধ্রুবের দিকে এই প্রাণ রশ্মি অত্যন্ত তীব্র অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। পশ্চিম দিশাতে সংযোগ বল যুক্ত বিভিন্ন ছন্দ রশ্মি বিদ্যমান থাকে। উত্তর দিশাতে কিছু এমন ছন্দ রশ্মি বিদ্যমান থাকে, যাদের কারণে সেই কণা এই দিশাতে বিশেষ ক্রিয়াশীলতা আর ধারণ শক্তিকে ব্যক্ত করে।

তারার উত্তর দিশাতে এই গুণ যুক্ত কণা আর তরঙ্গ অতিরিক্ত থাকে। তারার ভিতরে নাভিকীয় একীকরণ ক্রিয়া দ্বারা যুক্ত কেন্দ্রীয় ভাগ তথা শেষ বিশাল ভাগের মাঝে যে সন্ধি ভাগ বিদ্যমান থাকে, সেখানেই দুটো ভাগ স্খলিত হয়ে গতি করতে থাকে, এরকমই গঠন প্রত্যেক বিদ্যুদাবেশিত কণারও হয়। সেই কণা ইলেকট্রন অথবা কোয়ার্ক যেকোনো হতে পারে। বর্তমান বিজ্ঞান ইলেকট্রনকে অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিদ্যুদাবেশিত কণার মেঘরূপে এখন মানা শুরু করেছে, কিন্তু তারা কোয়ার্কের গঠনের বিষয়ে নিতান্ত অনভিজ্ঞ। বৈদিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এই দুটো কণার গঠন তারার মতোই হয়। এদের মধ্যেও কেন্দ্রীয় ভাগ আর শেষ বিশাল ভাগের মাঝে একটা সন্ধি ভাগ বিদ্যমান থাকে, যার উপর দুটো ভাগ স্খলিত হয়ে ঘুরতে থাকে। এই সন্ধি ভাগ স্থির অথবা অতি ন্যুন গতি যুক্ত হয়। এই ভাগের মধ্যেও বিভিন্ন প্রকারের ছন্দ রশ্মি এই কণা অথবা তারা, দুটোর মধ্যেই বিদ্যমান থাকে। এই রশ্মিগুলোর সুদৃঢ় বল দুই ভাগকে একসাথে থামিয়ে রাখে। দুটোর কেন্দ্রীয় ভাগ বিভিন্ন প্রাথমিক প্রাণ আর মরুত্ রশ্মি দ্বারা বিশেষ সমৃদ্ধ থাকে।
আমাদের সূর্যের কেন্দ্রের ত্রিজ্যা
মহর্ষি ঐতরেয় মহীদাস আমাদের সূর্যের কেন্দ্রীয় ভাগের ত্রিজ্যার মাপেরও বর্ণনা করেছেন -
সহস্রমনূচ্যম্ স্বর্গকামস্য সহস্রাশ্বীনে বা ইতঃ স্বর্গো লোকঃ
(ঐতরেয় ব্রাহ্মণ 2.17.3)
অর্থাৎ সূর্যের কেন্দ্রীয় ভাগের ত্রিজ্যা হল একটা আশ্বীন আর সূর্যের কেন্দ্রের বহিরাগত ভাগ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব হল এক সহস্র আশ্বীন। এইভাবে পৃথ্বী থেকে সূর্যের কেন্দ্রের দূরত্ব 1001 আশ্বীন হবে।
অর্থাৎ সূর্যের কেন্দ্রীয় ভাগের ত্রিজ্যা ত্র*সূর্য= দ*পৃথ্বী -> সূর্য / 1001
এখানে দ*পৃথ্বী -> সূর্য = পৃথ্বীর পৃষ্ঠ থেকে সূর্যের কেন্দ্রের দূরত্ব আছে।
উদাহরণ - যদি সূর্যের উপরের পৃষ্ঠ এখান থেকে প্রায় 15 কোটি কিমি দূরত্বে হয় তথা সূর্যের ত্রিজ্যা 6,96,000 কিমি হয়। তাহলে পৃথিবীর উপরের পৃষ্ঠ থেকে সূর্যের কেন্দ্রের দূরত্ব 15,06,96,000 কিমি হবে। উপরিউক্ত সূত্র দ্বারা সূর্যের কেন্দ্রীয় ভাগের ত্রিজ্যা ত্র*সূর্য= 1,50,545 কিমি.
সূর্যের কেন্দ্রের ত্রিজ্যা

ব্রহ্মাণ্ডের গুরূত্বপূর্ণ সপ্তক
ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে তারার মোট সাতটা শ্রেণী আছে। বর্তমান বৈজ্ঞানিকও তারার অনেক শ্রেণীকে মানে। এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে কণাও সাতটা শ্রেণীতে বিভাজিত করা যেতে পারে। সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের পদার্থ প্রাথমিক প্রাণ, ছন্দ প্রাণ, আকাশ তত্ত্ব, বায়ু, অগ্নি, জল এবং পৃথিবীর রূপে হয়, যা হচ্ছে বর্তমান বিজ্ঞানের মূলকণার বিভাজনের অপেক্ষায় অধিক ব্যাপক আর মৌলিক। এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে গ্যালাক্সিও সাত প্রকারের হয়, যার উপর বর্তমান বিজ্ঞানকে অনুসন্ধান করা উচিত। এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতুর মতো লোকও সাত প্রকারের হয়। এই সবগুলোর নির্মাণ, নিয়ন্ত্রণ আর সঞ্চালনে প্রধানতঃ সাত প্রকারের ছন্দ প্রাণ এবং সাত প্রকারের প্রাথমিক প্রাণ যেমন - প্রাণ, অপান, ব্যান, উদান, সমান, ধনঞ্জয় এবং সূত্রাত্মা বায়ুর ভুমিকা থাকে।

স্মরণীয় তথ্য
1. তারার মুখ্য পাঁচটা ভাগ, সেই পাঁচটা ভাগের নাম হল লোম, ত্বক, মাংস, অস্থি আর মজ্জা।
2. বিভিন্ন প্রকারের রশ্মি তারার ভিতরে নানা প্রকারের বল উৎপন্ন করে উচ্চ তাপ আর চাপ উৎপন্ন করে।
3. কিছু ছন্দ রশ্মি এই তাপ আর চাপকে নিয়ন্ত্রিতও করে রাখে, যার কারণে নাভিকীয় একীকরণের প্রক্রিয়া ব্যবস্থিত চলতে থাকে।
4. কিছু ছন্দ রশ্মি কেন্দ্রীয় ভাগের পরিধিকে সুনিশ্চিত করে রাখে, যারফলে কেন্দ্রীয় ভাগ অন্য ভাগ থেকে পৃথক থাকা সত্ত্বেও তারসঙ্গে জুড়ে থাকে।
5. যখন দুই প্রকারের কণা সমান মাত্রা, কিন্তু বিপরীত গুণকারী আবেশের অতিরিক্ত দ্রব্যমান আদি গুণের মধ্যেও অসমান হয়, তখন সেই কণা পরস্পর একে - অপরের সঙ্গে বেঁধে অপেক্ষাকৃত একটা স্থূল এবং সংযুক্ত কণার নির্মাণ করে।
6. যখন দুই কণার মধ্যে সমান মাত্রায়, কিন্তু বিপরীত বিদ্যুৎ আবেশের অতিরিক্ত অন্য সব গুণ সমান হয়, তখন তাদের আকর্ষণের প্রক্রিয়া এতই তীব্র হয় যে সেই দুটো কণা পরস্পর পূর্ণ রূপে মিশ্রিত হয়ে পদার্থকে একসঙ্গে আচ্ছাদিত করে তরঙ্গাণুর রূপ প্রদান করে।
7. যখন নিরাবেশিত নিউট্রন আদি কণার সঙ্গে তাদের প্রতিকণার সংযোগ হয়, তখন তাদের বিপরীত ঘূর্ণনের কারণে উৎপন্ন বল দুটোকে পরস্পর জুড়ে দেয়।
8. তারার কেন্দ্রীয় ভাগের মধ্যে দুই প্রকারের ঊর্জা থাকে। একটা হল সেটা, যা নাভিকীয় একীকরণের প্রক্রিয়া প্রারম্ভ হওয়ার পূর্বে উৎপন্ন হয় আর দ্বিতীয়টা হল সেটা, যা ঊর্জা নাভিকীয় একীকরণ থেকে উৎপন্ন হয়।
9. তারা একটা লম্বা আর জটিল প্রক্রিয়ার পশ্চাৎই নির্মিত হয়, তারপর নিজের স্থায়ী কক্ষ আর গতিকে প্রাপ্ত করতে পারে। এই প্রক্রিয়াতে লক্ষ-লক্ষ বছর লেগে যায়।
10. যেটা যত বড়ো লোক হয় অর্থাৎ যেটা নিজের কেন্দ্রীয় তারা থেকে যতটা অধিক দূরত্বে থাকে, তাকে স্থায়ী কক্ষ প্রাপ্ত করতে ততই অধিক সময় লাগে।
11. মনুষ্য নামক কণা অল্প প্রকাশবান্, অল্পায়ু এবং অনিয়মিত গতির হয়।
12. সূর্যের কেন্দ্রীয় ভাগের ত্রিজ্যা ত্র*সূর্য= দ*পৃথ্বী -> সূর্য / 1001 (এখানে দ*পৃথ্বী -> সূর্য = পৃথ্বীর পৃষ্ঠ থেকে সূর্যের কেন্দ্রের দূরত্ব আছে।)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ