স্বর্ণমৃগ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

22 May, 2023

স্বর্ণমৃগ

 

শ্রীরাম চন্দ্র কি মাংস খেতেন?


যখন মারীচ স্বর্ণমৃগের রূপে সীতা জী দর্শন করেন আর তিনি শ্রীরাম জী তথা লক্ষ্মণ জীকে সেটা দেখান, দেখার সঙ্গেই লক্ষ্মণ জী বলেন -

"অহম্ মন্যে মারীচম্ রাক্ষসম্ মৃগম্
অনেন নিহতা রাম রাজনঃ কামরূপিণা।"
(অরণ্যকাণ্ড ৩৪|৫,৬)

অর্থাৎ - এটা মৃগের রূপে রাক্ষস মারীচ এসেছে, আমি এমনটা মনে করছি। এই ইচ্ছাধারী রাক্ষসটি অনেক রাজাদের বধ করেছে। সীতা জী তাকে জীবিত ধরে আনতে আগ্রহ করেন, না কি মেরে আনতে বলেন। যদি বলেন যে, জীবিতই ধরা উচিত ছিল, তবে ধনুষ বাণ সঙ্গে নেওয়ার আবশ্যকতা কেন ছিল? এই বিষয়ে আমি মনে করি যে, মৃগকে দৌড়ে হাতে ধরা সম্ভব না, বরং মোহনাস্ত্র (অজ্ঞান করা) আদি দ্বারা বেঁধেই আনা সম্ভব হতে পারে। এই কারণে ধনুষ বাণ সঙ্গে করে নিয়ে যান। এছাড়া ক্ষত্রিয়কে নিরস্ত্র, নিঃশস্ত্র থাকাটাও উচিত নয়। এছাড়া ওনাদের আশঙ্কাও ছিল যে, মৃগটা মারীচ, তখন তো সশস্ত্র হয়ে যাওয়াটা অনিবার্যই ছিল। যদিও বাল্মীকি রামায়ণে তাকে জীবিত না ধরতে পাওয়ার স্থিতিতে মেরে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে আর তার হেতু এটা দেওয়া হয়েছে যে, সীতা জী তার চর্ম দ্বারা আসন বানাতে চেয়ে ছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করছি যে, যদি চর্মের আসন এবং শয্যাতেই প্রীতি হতেন, তবে স্থানে-স্থানে পত্র, ঘাস, পুষ্পের শয্যা বানাতেন না। ওনারা কি জঙ্গলে কোথাও কোনো সুন্দর পশুর দেখাই পাননি। এত সুন্দরও যদি না পান, তবুও জঙ্গলে অনেক সুন্দর হরিণ, বাঘ, চিতা আদি সুন্দর চর্মওয়ালা পশুর দেখা হয়েই থাকবে। তখন কেন তাদের চর্মের জন্য কাউকে মারেনি? শ্রীরাম অনেক স্থানে লক্ষ্মণ জীকে ফুল, ঘাস, কাষ্ঠ, পত্র নিয়ে এসে শয্যা বানানোর আদেশ দিয়েছেন। কেন কোন পশুকে মেরে চর্ম নিয়ে আনতে আদেশ দেননি? তার থেকে আরামদায়ক শয্যা, আসন হতে পারতো। যখন শ্রীরাম জী সেই মৃগের পিছু নিতে উদ্যত হন, তখন তিনি লক্ষ্মণ জীকে বলেন -

"য়দি বায়ম্ য়থা য়ন্মাম্ ভবেত্ বদসি লক্ষ্মণ।
মায়ৈষা রক্ষাসস্যেতি কর্ত্তব্যোঽস্য বধো ময়া।।

এতেন হি নৃশম্সেন মারীচেনা কৃতাত্মনা।
বনে বিচরতা পূর্বম্ হিম্সিতা মুনি পুম্গবাঃ।"
(অরণ্যকাণ্ড ৩৪|৩৮,৩৯)
অর্থাৎ - হে লক্ষ্মণ! তুমি আমাকে যেমনটা বলছ, যদি তেমনটাই এই মৃগটি হয়, যদি রাক্ষসী মায়াই হয়, তবে একে হত্যা করা আমার কর্তব্য। কারণ এই শয়তানটি মুনিদের হত্যা করেছে। এতে স্পষ্ট হচ্ছে যে, শ্রীরাম জী সেই পশুটিকে মারীচ ভেবেছিলেন, না কি স্বর্ণমৃগ। আমাদের এটা ভাবা উচিত যে, লক্ষ্মণ জী ওনার সঙ্গে সেবা হেতুই এসেছিলেন, তিনিই স্থানে-স্থানে কুঠী ও শয্যা তৈরি করতেন, জল, কন্দ, মূল, ফল নিয়ে আসতেন। তখন যদি সেই পশুই ধরা বা মারার হত, তবে কি এই কাজ লক্ষ্মণ জী করতে পাড়তেন না? যেই লক্ষ্মণ জী বড়-বড় যোদ্ধাদের সঙ্গে ঘোর যুদ্ধ করতে সক্ষম ছিলেন, তিনি সেই মৃগকে মারতে বা ধরতে পারতেন না? তবে কেন শ্রীরাম এই সাধারণ কার্য করার জন্য স্বয়ং গেলেন আর লক্ষ্মণ জীকে সেখানে সীতা জীর রক্ষায় নিযুক্ত করেছিলেন? কেন তিনি সর্বদা সেবাতৎপর অনুজ লক্ষ্মণ জীকে এই কার্য করতে দেননি? এতে স্পষ্ট হচ্ছে যে, শ্রীরাম জী স্থিতির গম্ভীরতা বুঝে ছিলেন। মারীচের পরাক্রম ও মায়াকে জেনে, লক্ষ্মণ জীকে পাঠিয়ে, তাকে সংকটে ফেলতে চাননি। তিনি গম্ভীর পরিস্থতিতে নিজের পৌরুষত্বের বিশ্বাস রাখতেন। এই প্রকারের স্থিতি সেই সময়ও এসেছিল যখন খর আর দূষণ ১৪ সহস্র রাক্ষসের সেনা নিয়ে আক্রমণ করেছিল। সেই সময় শ্রীরাম জী লক্ষ্মণ জীকে যুদ্ধের আদেশ না দিয়ে স্বয়ংই যুদ্ধে নেমে ছিলেন আর লক্ষ্মণ জীকে সীতা জীর রক্ষার্থে নিযুক্ত করেছিলেন। সেই প্রকার এখানেও সেই পরিস্থিতি হয়েছিল। এসবের উপর গম্ভীরতার সঙ্গে বিচার করলে পরে এটা সিদ্ধ হচ্ছে যে, শ্রীরাম জী শিকার হেতু নয় বরং তাকে মারীচ জেনেই প্রচণ্ড যুদ্ধ করার জন্য গিয়েছিলেন।

আমরা এই বিষয়ের যথার্থতা জানার হেতু রামায়ণের অন্য প্রসঙ্গের উপরেও যদি দৃষ্টি ফেলি, তবে পাই যে, সেই কালে কোনো প্রকারেই হিংসা হত না, কেবল শয়তান দমনার্থ যুদ্ধকে বাদ দিয়ে। যেসময় মহাত্মা ভরত জী চিত্রকুটে শ্রীরাম জীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন, তখন শ্রীরাম জী দেখার সঙ্গেই কুশলক্ষেরম জিজ্ঞেস করার সঙ্গে রাজনীতির উপদেশ করেছিলেন। সেখানে এক বিন্দু আসে, যেখানে অযোধ্যা "হিম্সাভিরভিবর্জিতঃ" বলেছেন।
(অযোধ্যাকাণ্ড ১০০ সর্গ, শ্লোক ৪৪)
অর্থাৎ - অযোধ্যা হিংসা হতে পূর্ণ মুক্ত ছিল, তাহলে শিকার করা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? যখন শ্রীরাম জীর রাজতিলক হওয়ার ছিল, তখন মহারাজ দশরথ জী শ্রীরাম জীকে উপদেশ দেওয়ার সময় ১৮ ব্যসন থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন, এই ১৮ ব্যসন ভগবান্ মনুপ্রোক্ত কামজ ও ক্রোধজ ব্যসন ছিল, যেখানে শিকার খেলা রাজাদের জন্য প্রথম দুর্ব্যসন বলা হয়েছে। তাহলে শ্রীরাম জী ও দশরথ জীর শিকার খেলা, হিংসা করা কিভাবে সিদ্ধ হতে পারে? এখন যদি কেউ এরকম প্রশ্ন করে যে, যখন শ্রীরাম জী শিকার খেলতেনই না তবে ওনাকে উপদেশ দিয়ে নিষেধ করার আবশ্যকতা কি ছিল? তার উত্তর স্বয়ং দশরথ জীর বচন দ্বারাই পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন -

"কামতস্বম্ প্রকৃত্যৈব নির্ণীতো গুণবানিতি।
গুণবত্যপি তু স্নেহাত্ পুত্র বক্ষ্যামি তে হিতম্।।"
(অযোধ্যাকাণ্ড ৩|৪১)
অর্থাৎ - যেহেতু তুমি স্বভাবেই গুণবান্ আর তোমার বিষয়ে সকলের এটাই নির্ণয়, তবুও আমি স্নেহবশ সদ্গুণসম্পন্ন হওয়ার পরেও তোমায় হিতের কথা বলছি। এতে স্পষ্ট হচ্ছে যে, শ্রীরাম জীর মধ্যে উপযুক্ত ব্যসন না হওয়ার পরেও পিতা হওয়ার হেতু উপদেশ করাটা কর্তব্য ভেবেই এমনটা বলেছিলেন। যদি শ্রবণকুমারের কথনের আশ্রয় নিয়ে শিকারের কথা সিদ্ধ করা হয়, তবে প্রথম তো এটা নিবেদন করছি যে, তিনি হরিণের ভুলে শ্রবণকে মেরে ছিলেন, এই কথা স্পষ্ট করছে যে, আপনি রামায়ণ তথা রামচরিতমানস দুটোই পড়েননি, অন্যথা হাতীর স্থানে হরিণ বলতেন না। রামচরিতমানসে এই কথার সংকেত মাত্র রয়েছে, অন্যদিকে বাল্মীকি রামায়ণে বিস্তারপূর্বক রয়েছে। এখানে দশরথ জীকে "ব্যায়ামকৃতসম্কল্পঃ" বলা হয়েছে। এতে প্রতীত হচ্ছে যে, ব্যায়াম অথবা ধনুর্বিদ্যার অভ্যাস হেতুই তিনি সরযূ নদীর কিনারে যান, না কি মাংসের জন্য। এখানে লেখা আছে -

"নিপাতে মহিষম্ রাজৌ গতম্ বাভ্যাগতম্ মৃগম্।
অন্যদ্ বা শ্বাপদম্ কিচিজ্জিঘাম্সুর জিতেন্দ্রিয়ঃ।।"
(অযোধ্যাকাণ্ড ৬৩|২১)
এখানে মহিষ, হাতী, মৃগ তথা শ্বাপদ, এই চারের অনুমান লাগানো হয়েছে। এখানে সামান্য অর্থ নিয়ে দেখলে পরে মহিষ, হাতী, মৃগ (যদি হরিণ মানা হয়) তবে অহিংসক রয়েছে। অন্যদিকে শ্বাপদ অর্থাৎ বাঘ হল হিংসক পশু, তাহলে এদের পরস্পর সমান্তা বসে না। এই কারণে এই চারকেই হিংসক মানতে হবে। মহিষ - জংলী মোষ উপদ্রবী হয়েই থাকে, হাতীও মদোন্মত হতে পারে, কিন্তু হরিণকে উপদ্রবকারী মানা যেতে পারে না, তাহলে মৃগের অর্থ বাঘ সমীচীন হবে। এতে সিদ্ধ হচ্ছে যে, দশরথ জী এই উপদ্রব ও হিংসক পশুদের মারার বিষয়ে ভাবছিলেন, তবুও এমনটা ভেবে নিজেকে অজিতেন্দ্রিয় বলেন অর্থাৎ সেই কর্মকে পাপ তথা রাজাদের সর্বোপরি গুণ জিতেন্দ্রিয়তার প্রতিকূল মেনে নিন্দনীয় অনুভব করছেন। এতে বোঝা যায় যে, শিকার খেলা সেসময় প্রচলিত ছিল না, বরং তাকে খারাপ মানা হত। ধনুর্বিদ্যার অভ্যাস বিনা কাউকে মেরে করা হত। এমন হিংসক ও উপদ্রবী পশু, যা জন সামান্যের জন্য সংকট তৈরি করতো, তাদেরই মারার জন্য রাজা অধিকার দিতো। দশরথ জী বিনা সংকটেই মারার বিচার করেন বা মেরেছেনও, এই কারণে নিজেকে অবগুণী বলছেন।

আমি মানছি যে রামায়ণ ও মহাভারতে অনেকত্র শিকার খেলার বর্ণন এসেছে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাইবো যে, এরকম সব প্রসঙ্গগুলো মধ্যকালীন মাংসভোজীদের দ্বারা প্রক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এর পশ্চাৎ আমার হেতু হল এই যে, শ্রীরাম অথবা সেই সময়ের ক্ষত্রিয় ও অন্য মনুষ্যদের ধর্মাত্মা, বেদব্রতী ও অহিংসক বলা হয়েছে, তারা বেদবিরুদ্ধ অন্যায় কর্ম কিভাবে করতে পারবেন? যেখানে একদিকে শ্রীরাম জীকে "রক্ষিতা জীবলোকস্য" বলা হয়েছে (বাল্মীকি রামায়ণ), তিনি জীবদের হত্যা কিভাবে করতে পারেন? যে শ্রীরাম জী বালীকে বধের সময় উচিত সিদ্ধ করার হেতু ভগবান্ মনুর আদেশের প্রমাণ দিয়েছেন তথা স্বয়ংকে তারই বলা নিয়ম মর্যাদায় বাঁধা বলেছেন, সেই শ্রীরাম জী ভগবান্ মনুর শিকার খেলাকে সর্বোপরি ও সর্বপ্রথম দূর্ব্যসন আর প্রচণ্ড পাপ বলার পরেও কিভাবে শিকার করতে পারেন? যদি করেন তো "রামোদ্বির্নভাষতে" এর কি হবে? অর্থাৎ শ্রীরাম জীর বিষয়ে প্রসিদ্ধ ছিল যে তিনি যেটা বলতেন, সেটাই করতেন। বার-বার বিচার বদলাতেন না। এরকম মহান্ ভগবান্ রামের উপর দোষ উঠানো স্বয়ং এক ভারী পাপ হবে। এই কারণে স্পষ্টতঃ হিংসার প্রসঙ্গগুলো হল প্রক্ষিপ্ত তথা ধূর্তদের শয়তানী।
মূল লেখকঃ আচার্য্য অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক জী  (10) Vaidic Physics - YouTube
[লেখা হিন্দি থেকে বাংলায় আনুবাদ করা হয়েছে]

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ