সীতা হরণ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

22 May, 2023

সীতা হরণ

সীতা হরণ

রাবণের খারাপ সময়

প্রথম ঘটনাক্রমে, মারীচের হিতকারক শিক্ষা তো রাবণকে রক্ষা করেছিলো, কিন্তু প্রবাদ রয়েছে..যখন খারাপ দিন আসে তখন কেউ নিজের ভাল-মন্দ দেখতে পায় না। সুর্পনখার অশুভ মন্ত্রনায় লঙ্কাধীপতি রাবণ আারও ঐ কালের আবর্তে পড়ল। 

সুর্পনখা বলে, "হে রাবণ! এটা বড় লজ্জার যে আপনি এখানে নিশ্চিন্তে বসে আছেন। তোমার মত অসাবধান রাজাদের রাজ্য দ্রুত বিনষ্ট হয়। দেখ তো আমার কি অবস্থা ? তোমার জনস্থানের সেনা খর-দুষণকে হত্যা করা হয়েছে এবং তোমার কোন কিছুতেই ধ্যান নেই। 

রাবণ! আপনি বুদ্ধিহীন এবং অন্ধ তথা আপনার দূত (বার্তাবাহক / চর) দুষ্ট প্রকৃতির। তারা আপনাকে কোন সত্য সংবাদ দেয় না এবং আপনি সর্বদা ভোগের আনন্দের লিপ্ত থাকেন। স্মরণ রেখো তোমার মত উদাসীন প্রমাদপ্রেমীদের রাজত্ব শীঘ্রই বিনষ্ট হয়। অবহেলামুক্ত, প্রমাদবিবর্জীত, সর্বজ্ঞ, আত্মনিয়ন্ত্রিত, কৃতজ্ঞ, ধার্মিক, “যে রাজা স্থূল চক্ষুদ্বয় দ্বারা নিদ্রিত কিন্তু নীতিরূপ চক্ষে সদা জাগ্রত, যাঁর ক্রোধ এবং প্রসন্নতার ফল সদা প্রকটিত, তাঁদের রাজ্য চিরকাল স্থায়ী হয় এবং সেই রাজাই জনগণ দ্বারা পূজিত হন। 

অযুক্তচারং দুর্দশমস্বাধীন নরাধিপম্।

বর্জয়ন্তি নরা দূরান্নদীপক্ষমিব দ্বিপাঃ ৷৷ ৩৩।৫

অপ্রমত্তশ্চ যো রাজা সর্বজ্ঞো বিজিতেন্দ্রিয়ঃ।

কৃতজ্ঞো ধর্মশীলশ্চ স রাজা তিষ্ঠতে চিরম্।। ৩৩।২০ 

নয়নাভ্যাং প্ৰসুপ্তো বা জাগর্তি নয়চক্ষুষা।

ব্যক্তক্রোধপ্রসাদশ্চ স রাজা পূজ্যতে জনৈঃ ৷৷ ৩৩।২১ অরণ্যকাণ্ড সর্গ ৩৩

হে রাবণ! দেখ যে রাম সমস্ত রাক্ষসদের হত্যা করেছে এবং

একা কথংচিন্মুক্তাহ পরিভূয় মহাত্মনা।
স্ত্রীবধং শঙ্কমানেন রামেণ বিদিতাত্মনা৷৷ ১২
                                      ___অ০ স০ ৩৪

‘আত্মজ্ঞানী মহাত্মা রাম, স্ত্রীবধজনিত পাপের ভয়ে একা আমাকে কোনও ক্রমে অপমান করে ছেড়ে দিয়েছেন।" তুমি এই রামের জন্য কি করেছো ?
তার স্ত্রী খুব সুন্দরী যে শুধু তোমার যোগ্য। আমার নাক-কান ওর জন্য এই দশা হয়েছে, তো লঙ্কেশ তুমি যাও ওকে হরণ করে নিয়ে এসো। এতে রামও মারা যাবে।

রাবণকে মারীচের শিক্ষা

ভগিনি সুর্পনখার মুখে রাম কর্তৃক খর, দূষণ ও ত্রিশিরা বধ ও বোনের দশার কথা শুনে দশানন রাবণের সর্বাঙ্গে যেন অগ্নিজ্বালা শুরু হলো। নিজ শক্তিসামর্থ্য আর বীরগাথা কীর্তন করে রাবণ সূর্পনখাকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিল। রূপবতী সীতার লোভে মন্দভাগ্য লঙ্কাধিপতি রাবণ সীতার হরণের ইচ্ছায় মারীচের সাহায্য নিতে গিয়ে বললেনঃ-

"মারিচ! রাম অত্যন্ত মূর্খ, পাপী, পিতার বহিষ্কৃত, কর্কশ স্বভাব, কামী এবং মর্যাদাহীন। তাকে অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে এবং সীতাকে হরণ করে আনতে হবে।" 

এই কথা শুনে মারিচ বললেন______

“রাবণ! দৃশ্যত রাক্ষসদের সবচেয়ে খারাপ দিন এসেছে, আপনি এই ধরনের চিন্তা ত্যাগ করছেন না এবং আপনার কাছে হিতকর কথা বলার মতো কি কেউ নেই। রাবণ সত্য জেনেঃ

ন চ পিত্রা পরিত্যক্তো নামর্যাদঃ কথংচনঃ। 

ন লুব্ধো ন চ দুঃশীলো ন চ ক্ষত্রিয়পাংসনঃ ৷৷ ৮ 

ন Б ধর্মগুণৈহীন কৌসল্যানন্দবর্ধনঃ। 

ন চ তীক্ষ্ণো হি ভূতানাং সর্বভূতহিতে রতঃ ।। ৯ 

ন রামঃ কর্কশস্তাত নাবিদ্বান্ নাজিতেন্দ্রিয়ঃ। 

অনৃতং ন শ্রুতং চৈব নৈব ত্বং বক্তুমর্হসি ৷৷ ১২

রামো বিগ্রহবান্ ধর্মঃ সাধু সত্যপরাক্রমঃ।

রাজা সর্বস্য লোকস্য দেবানামিব বাসবঃ৷৷ ১৩ - অ० কা० সর্গ ৩৭

রাম তার পিতার পরিত্যক্ত, মর্যাদাহীন, লোভী, অসভ্য ও ক্ষত্রিয় গোষ্ঠী নন এবং তিনি সদাচারী, তীক্ষ্ণ স্বভাব, কর্কশ, মূর্খ, বিদ্যাহীন, অজিতেন্দ্রিয় এবং মিথ্যাবাদীও নন। রাম রাজধর্ম্মের মূর্তি, সাধু, সত্যবাদী, পরাক্রমশালী এবং দেবরাজের মতো সমস্ত জগতের রাজা। অতঃ কারো শক্তি নেই যে তাঁর স্ত্রী সীতাকে কেউ পথভ্রষ্ট বা নাড়িয়ে দিবে। আপনি যদি এই ধারণা ত্যাগ না করেন তবে আপনি সবকিছু কুল সহ ধ্বংস এবং লঙ্কার প্রতিটি বাড়িকে ভস্ম হতে দেখবেন। রাবণ! স্মরণ রাখবেন, যে-

পরদারাভিমর্শাৎ তু নান্যৎ পাপতরং মহৎ। 

প্রমদানাং ভব সহস্রাণি তব রাজন্ পরিগ্রহে। ৩০ 

ভব স্বদারনিরতঃ স্বকুলং রক্ষ রাক্ষসান্।

মানং বৃদ্ধিং চ রাজ্যং চ জীবিতং চেষ্টমাত্মনঃ ৷৷ ৩১

কলত্রাণি চ সৌম্যানি মিত্রবর্গং তথৈব চ । 

যদীচ্ছসি চিরং ভোক্তুং মা কৃথা রামবিপ্রিয়ম্।। ৩২ অ० কা० সর্গ ৩৮

আনয়িষ্যসি চেৎ সীতামাশ্রমাৎ সহিতো ময়া।

নৈব ত্বমপি নাহং বৈ নৈব লঙ্কা ন রাক্ষসাঃ ।। ১৯ 

‘আমাকে সঙ্গে নিয়ে যদি তুমি আশ্রম থেকে সীতাকে নিয়ে আসো, তা হলে না তুমি, না আমি, না লঙ্কা, না | রাক্ষসেরা, – কেউই জীবিত থাকবে না। অরণ্য০ সর্গ ৪১

পরস্ত্রীর প্রতি কুদৃষ্টি দেওয়ার চেয়ে বড় পাপ আর কিছু নেই। অতএব, তুমি তোমার স্ত্রীব্রতে অটল থাক, যদি তুমি তোমার কূল, রাক্ষসগণ, সম্মান, উন্নতি, প্রিয় জীবন, স্ত্রী, সন্তান ও বন্ধুদের রক্ষা করতে এবং রাজ্য ভোগ করতে চাও, তবে রামের বিরোধিতা করো না। আমি এই ধ্বংসাত্মক কাজে আপনাকে সাহায্য করতে সক্ষম নই। 

যদি আমাকে জোর করে নিয়ে যাবে তবে নিঃসন্দেহে আমি মারা যাব। আপনি যদি কোনোভাবে ছলনা করে বা আমার সাহায্যে সীতাকে লঙ্কায় নিয়ে যান, তবুও আপনি বা লঙ্কা বা একটি রাক্ষসও বাঁচতে পারবে না। এই শাস্ত্রীয় উপদেশ শুনেও মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে থাকা রাবণ স্ত্রীমোহে পড়ে ক্ররতা ও মৃত্যুভয় দেখিয়ে মারিচাকে সীতা অপহরণের মতো জঘন্য অপরাধে প্ররোচিত করে নেন।

সীতা হরণ

নিদান রাবণ বড় বড় জিনিসপত্র (বিমান অস্ত্র-শস্ত্রাদি) নিয়ে বনে পৌঁছেছিলেন। সে সেই জিনিসটা মারিচের কাছে কিছু দূরত্বে রাখল এবং নিজেও উপযুক্ত সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগল। যখন ভগবান রাম ও লক্ষ্মণ হিংস্র প্রাণীর শিকার ও কন্দ মূল আদি নিতে আশ্রমের বাইরে গেলেন, তখন দূরাচারী রাবণ সীতার আশ্রমের কাছে পৌঁছে সীতার গুণের প্রশংসা করতে লাগলেন বললেন-

দেবী ! আপনি কে এবং এখানে কেন এসেছেন? সেই পুরুষ ভাগ্যবান যার তুমি ভার্যা ? তুমি কার স্ত্রী ? 

সীতা জী ছদ্ববেশী রাবণকে অতিথি হিসাবে বিবেচনা করে, আর্য পদ্ধতি অনুসারে আসন আদি দিয়ে সৎকার করেন। তাকে অর্ধনমিতভাবে অভিনন্দন জানিয়ে তার সুস্থতার খোঁজ নিলেন এবং তারপর তার কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন আমি রাজা জনকের কন্যা এবং রামের রানী। স্বয়ম্বর রীতিতে যখন আমার বয়স ১৮ এবং রামের বয়স ২৫ বর্ষ তখন আমর বিবাহ হয়। তারপর ১২ বছর নিজ নগর 'অযোধ্যায়' থেকেছেন। ১৩ তম বর্ষে রাজ্যাভিষেকের সময় মা কৈকেয়ীর প্রেরণায়, তাঁর পিতার (রাজা দশরথ) আজ্ঞা পালনের নিমিত্ত, নিজ দেবতূল্য পতি তথা দেবর (বীর লক্ষ্মণ) নিয়ে এখানে বনে এসেছি। মাতা কৈকেয়ী তার পুত্র ভরতকে রাজ্য দিতে চেয়েছিলেন আমাদের চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসী করেছেন।

মম ভর্তা মহাতেজা বয়সা পঞ্চবিংশকঃ। অষ্টাদশ হি বর্ষাণি মম জন্মনি গণ্যতে ৷৷ অ০ কা০ ৪৭।১০ রামেতি প্রথিতো লোকে সত্যবান্ শীলবান্ শুচিঃ ৷৷ অ০ কা০ ৪৭।১১

সীতার কথা শুনে রাবণ ভাবলেন আর দেরি না করে রাম ও লক্ষ্মণ আসার আগেই সীতাকে নিয়ে যাওয়া উচিত। এই বিচার করে রাবণ বললেন, “সীতা! আমি তোমার পুরো ঘটনা শুনলাম. এখন আমার কথা শুন্। দেখো, আমিই সেই লঙ্কাধিপতি রাবণ, রাক্ষসদের রাজা, যার ভয়ে দেবতা, অসুর ও মানুষ সর্বদা ভয়ভীত হয়ে থাকে। এখন আমি তোমাকে লঙ্কায় নিয়ে যাব এবং তোমাকে আমার পটরাণীর স্থান দিব। সেখানে সুখে বাস করতে পারবে এবং সুন্দর সুন্দর ভোগ্য বস্তু ব্যবহার করতে পারবে। একথা শুনে সীতা ক্রোধে আগুন হয়ে বললেন,

সর্বলক্ষণসম্পন্নং ন্যগ্রোধপরিমণ্ডলম্।

সত্যসন্ধং মহাভাগমহং রামমনুব্রতা ৷৷ ৪৭।৩৪

"সর্বপ্রকার শুভলক্ষণ সমন্বিত, সকলের আশ্রয় ও ছায়াদানকারী বটবৃক্ষের মতো উদার এবং সত্যপ্রতিজ্ঞ মহাত্মা শ্রীরামেরই আমি অনুগতা (পত্নী)।"

ত্বং পুনর্জম্বুকঃ সিংহীং মামিহেচ্ছসি দুর্লভাম্। 

নাহং শক্যা ত্বয়া স্প্রষ্টুমাদিত্যস্য প্রভা যথা ৷৷ ৪৭।৩৭

“তুমি শৃগাল সদৃশ হয়ে, দুর্লভ্যা সিংহী (সদৃশী) আমাকে পেতে চাও ! সূর্যের প্রভা সদৃশী আমাকে তুমি স্পর্শ করতেই সমর্থ হবে না।"

ক্ষুধিতসা সিংহস্য মৃগশত্রোস্তরস্বিনঃ। 

আশীবিষসা বদনাদ্ দংষ্ট্ৰামাদাতুমিচ্ছসি ৷৷ ৪৭।৩৯  

মন্দরং পর্বতশ্রেষ্ঠং পাণিনা হর্তুমিচ্ছসি। 

কালকূটং বিষং পীত্বা স্বস্তিমান্ গন্তুমিচ্ছসি ৷৷ ৪৭।৪০ 

অক্ষি সূচ্যা প্রমৃজসি জিহ্বয়া লেটি চক্ষুরম্। 

রাঘবস্য প্রিয়াং ভার্যামধিগন্তুং তুমিচ্ছসি।। ৪৭।৪১

“তুমি রঘুনাথ রামচন্দ্রের প্রিয়া ভার্যাকে লাভ করতে চাইছ, তাতে মনে হচ্ছে মূর্খ তুমি পশুদের শত্রু ক্ষুধার্ত দ্রুতগামী সিংহের এবং সর্পের মুখ থেকে দন্ত উৎপাটন করতে চাইছ ; অথবা পর্বতশ্রেষ্ঠ মন্দারকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাইছ। কিম্বা কালকূট বিষ পান করে স্বস্তির সঙ্গে হেঁটে চলে যেতে চাইছ। মনে হচ্ছে তুমি সূচ দিয়ে চক্ষু-মার্জন কিম্বা জিহ্বা দ্বারা ক্ষুর লেহন করতে ইচ্ছা করছ।"

অবসজ্য শিলাং কণ্ঠে সমুদ্রং তর্তুমিচ্ছসি। 

সূর্যাচন্দ্রমসৌ চোভৌ পাণিভ্যাং হর্তুমিচ্ছসি ৷৷ ৪৭।৪২

“তুমি যে রামের প্রিয় পত্নীকে বলাৎকার করতে চাইছ, (মনে হচ্ছে) তুমি কণ্ঠে শিলা বেঁধে সমুদ্র উত্তরণ করতে, অথবা সূর্য ও চন্দ্র উভয়কেই দুই হাতে হরণ করতে চাইছ।

যো রামস্য প্রিয়াং ভার্যাং প্রধর্ষয়িতুমিচ্ছসি।

অগ্নিং প্রজ্বলিত দৃষ্ট্বা বস্ত্ৰেণাহুতু মিচ্ছসি৷৷ ৪৭।৪৩

“তুমি যে শ্রীরামের কল্যাণরূপিণী পত্নীকে অপহরণের কামনা করেছ, এতে মনে করি প্রজ্বলিত অগ্নিকে নিশ্চয়ই বস্ত্রাচ্ছাদিত করে নিয়ে যেতে চাইছ।

কল্যাণবৃত্তাং যো ভার্যাং রামস্যাহতু মিচ্ছসি।

অয়োমুখানাং শূলানামগ্রে চরিতুমিচ্ছসি৷৷ ৪৭।৪৪

“তুমি যে শ্রীরামের যোগ্যা স্ত্রীকে অধিকার করতে চাইছ, মনে হচ্ছে তুমি সূচিমুখ লৌহশূলের অগ্রভাগে বিচরণ করতে অভিলাষী হয়েছো।

বাল্মিকীর রামায়ণের তৃতীয় অরণ্যকাণ্ডের শুরুতেই  হরিণের বর্ণনা করা হয়েছে: যেখানে অতি সুন্দর সোনার হরিণ যার ওপর রয়েছে রূপোলী ছোপ। হরিণটির দ্যুতিতে যেন মনে হয় হাজার হাজার রত্নের ঔজ্জ্বল্য নিয়ে সে চলেছে। পান্না, চন্দ্রকান্তমণি, কালো হিরে (ব্ল্যাক জেট) এবং নীলকান্তমণি এটির নমনীয় সোনালী দেহে খোচিত আছে। আর তাই, রামায়ণ কে পরবর্তীকালে অতিরঞ্জিত ও প্রক্ষিপ্ত করে বলা হয়, এই হরিণটি হল আসলে একটি দানব বা রাক্ষস, যার নাম মারিচ ইত্যাদি, যাকে রামের হাতে তার বোন সুর্পনখার অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য লঙ্কাধিপতি রাবন লঙ্কা থেকে পাঠিয়েছেন। সুর্পনখার নাক এবং কান কেটে লক্ষ্মণ তার কামনার আবেদন প্রত্যাখান করেছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি।মারিচ লাফিয়ে নাচতে নাচতে আশ্রম থেকে অনেক দূরে রামকে নিয়ে যায়, তীব্র প্রচেষ্টায় আর দীর্ঘ পশ্চাদ্ধবনের পর রাম হরিণটিকে হত্যা করে একটি সোনার তীর দিয়ে। মৃতপ্রায় মারিচ শ্রী রাম জীর অনুকরণে ও সীতা! ও লক্ষ্মণ! বলে কাঁদতে থাকে। কিন্তু প্রকৃত বাল্মীকি রামায়ণে অন্যরপে সীতা হরণের বর্ননা রয়েছে। আসলে বিচার্য এই যে হরিণকে দেখে সীতা জী মোহিত হয়েছিল সেটি সোনার ছিল অথবা নিছক সোনালী ছোপ দেওয়া হরিণ ছিল, যেগুলি চিতল নামে জনপ্রিয়। এই হরিণের সত্যতা অনাবিস্কৃত থাকাই শ্রেয়, কারণ পুরাণের ন্যায় সর্বত্র জুড়ে শুধুই রয়েছে বিশ্বাস ও অতিরঞ্জিত।

অনেকের মতে স্বর্ণমৃগ রাবণ নিজের উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করার জন্য তৈরি করেছিলেন, অর্থাৎ মারীচ সোনার হরিণের ছদ্মবেশে গিয়ে ছিলেন। রাম তাকে অনুসরণ করেন এবং তারপর রামের দুঃখী কণ্ঠ 'ত্রাহি-ত্রাহি' শুনে সীতা লক্ষ্মণকে রামকে সাহায্য করতে যেতে বাধ্য করেন। লক্ষ্মণ চলে গেলে সীতা হরণ হয়ে যায়। এই গল্পটি অসত্য তথা অসম্ভব এবং বাল্মীকির রামায়ণও পেছন থেকে মিশ্রিত হয়েছে - কারণঃ-
(১) হেম মৃগ অসম্ভব, তারপর 
(২) রামের মতো জ্ঞানী ব্যক্তির কাছ থেকে এর মৃগ ও হেমমৃগের পার্থক্য লুকানো কঠিন 
(৩) মারিচের মতো চতুর এবং ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে অবগত ব্যক্তির কাছে এই অভিসন্ধি অনুপযুক্ত 
(৪) সীতা এবং লক্ষ্মণের কথোপকথন আর্য ভাবের বিরুদ্ধে 
(৫) রাবণ এবং সীতার মধ্যে বার্তালাপেও এর কোনও গন্ধ নেই 
(৬) এটি বিশ্বাস করলে প্রসঙ্গের মধ্যে মিল থাকে না 
(৭) শ্রী চি০ বি০ বৈদ্যের মতো সমালোচক ও এটা মানেন না। (সম্পাদক "শুদ্ধ রামায়ণ" আচার্য প্রেমভিক্ষু )


No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ