জম্বুদ্বীপে ভরতখন্ডে আর্য়াবর্তান্তর্গতে - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

27 June, 2023

জম্বুদ্বীপে ভরতখন্ডে আর্য়াবর্তান্তর্গতে

 পৃথিবীতে সাত দ্বীপের মধ্যে একটি হল জম্বু। সাতটি দ্বীপ যথাক্রমে জম্বুদ্বীপ, প্লক্ষদ্বীপ, শাল্মলীদ্বীপ, কুশদ্বীপ, ক্রৌঞ্চদ্বীপ, শাকদ্বীপ এবং পুষ্করদ্বীপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে [Mahabharata 6.604]।

জম্বুতে ৯টি বর্ষ বা দেশ আছে। এদের নামঃ-
১। ভারতবর্ষ
২। কিম্পুরুষ বর্ষ বা হৈমাৰত বৰ্ষ
৩। হরি বর্ষ
৪। ইলাবৃত বৰ্ষ
৫। কেতুমাল বর্ষ
৬। ভদ্রাশ্ব বর্ষ
৭। শ্বেত বর্ষ
৮। হৈরণ্যক বর্ষ বা হিরন্ময় বর্ষ
৯। ঐরাবৎ বর্ষ
[অমরকোষে বর্ষ শব্দের তিনটি অর্থের একটি হল দ্বীপের অংশ। স্যাদৃষ্টৌ লোকধাত্বংশে বৎসরে বর্ষমন্ত্রয়াম'- অমরকোষ; নানার্থবর্গ, ৬৮৫ অধ্যায়। টাকা- রক্ষাকর শাস্ত্রী - বর্ধ শব্দের অর্থ বৃষ্টি, দ্বীপাংশ ও বৎসর।
জম্বুদ্বীপ নয়টি বর্ষ (অঞ্চল) এবং আটটি উল্লেখযোগ্য পর্বত দ্বারা গঠিত। এর দক্ষিণ ও উত্তরে অবনমিত এবং মাঝখানে উন্নত ও প্রশস্ত। উন্নত স্থানটির ইলাবৃত বা মেরুবর্ষ। ইলাবৃতের কেন্দ্রে রয়েছে পর্বতের রাজা স্বর্ণের পর্বত মেরু। পর্বতের চূড়ায়, ব্রহ্মার বিশাল শহর রয়েছে, যা ব্রহ্মপুরী নামে পরিচিত। ব্রহ্মপুরীর চারপাশে ৮টি শহর রয়েছে - একটি দেবরাজ ইন্দ্রের, সাতটি অন্য দেবতার। মেরু পর্বতটি একটি পদ্মকর্ণিকার মতো জম্বুদ্বীপের কেন্দ্রে অবস্থিত। ব্রহ্মপুরী শহরটি আকাশ গঙ্গা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। গঙ্গা মেরু পর্বত থেকে পতিত হয়ে উত্তর,দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে জম্বুদ্বীপের বিস্তীর্ণ ভূমিতে ভিন্ন ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়। পরে গঙ্গা নদী থেকে বিভিন্ন শাখা নদী উৎপন্ন হয়। সুমেরু পর্বত থেকে গঙ্গা দক্ষিণে পতিত হয়ে অলকানন্দা নামে ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। দ্বীপ বলতে বহু বর্ষসমন্বিত স্থানকে বোঝায় (জম্বু-দ্বীপের ৯টি বর্ষ, অন্যান্য দ্বীপের ৭টি বর্ষ), প্রতিটি বর্ষে একটি বর্ষ পর্বত।
মহাভারতে ভীষ্ম পর্বের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায় হিমালয়, হেমকূট, নিষধ, নীল, শ্বেত ও সর্বধাতুসম্পন্ন শৃঙ্গবান এই ছয় পর্বত একাকার। এসকল পর্বত পূর্ব সমুদ্র থেকে পশ্চিম সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। তন্মধ্যে নানা জনপদ প্রতিষ্ঠিত।
হিমালয়ের উত্তরে হৈমববর্ষ এবং হেমকুটের উত্তরে হরিবর্ষ। নীল পর্বতের দক্ষিণে এবং নিষধ গিরির উত্তরে মাল্যবান পর্বত। সুমেরু গিরি নীল ও নিষধ পর্বতের মধ্যে অবস্থিত। লোকসমূদয় উহার উর্দ্ধ, অধঃ ও পার্শ্বপ্রদেশে অবস্থান করে। অদ্রাশ্ব, কেতুমাল, জম্মু ও উত্তরকুরু; এই চারটি দ্বীপ এর পার্শ্বদেশে অবস্থিত। হিমালয় পর্বতের দক্ষিণে ভারতবর্ষ, উত্তরে হৈমববর্ষ। হেমকূট পর্বতের উত্তরে হরিবর্ষ, নিষধ পর্বতের উত্তরে ইলাবৃতবর্ষ, নীল পর্বতের উত্তরে শ্বেতবর্ষ, শ্বেত পর্বতের উত্তরে হৈরণ্যক বর্ষ। তারপর ঐরাববর্ষ। এই সাতটি বর্ষ ধনুকাকারে অবস্থিত।
হিমালয়, হেমকূট, নিষধ, নীল, শ্বেত ও শৃঙ্গবান পর্বত একাকার। অর্থাৎ এরা আসলে বৃহত্তর হিমালয় পর্বতমালার অন্তর্গত। এইবর্ষগুলি ভারত, চীন ও আফগানিস্তানের অন্তর্গত। কখনই মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া বা সাইবেরিয়া নয়। বলা আছে এই সাতটি বর্ষ ধনুকাকারে অবস্থিত পর্বতগুলির মধ্যে মধ্যে নানা জনপদ অবস্থিত। সুমেরু-র শিখর থেকে ভাগিরথী নিপতিত হচ্ছে। অর্থাৎ গঙ্গোত্রী হিমবাহ হল সুমেরু পর্বতে। এই সুমেরু বর্তমানের সুমেরু (north pole) নয় । সুমেরুর দক্ষিণে অবস্থিত কৈলাস।
সুমের চূড়ায় আছে ব্ৰহ্মপুরী। অলকানন্দা ব্রহ্মার পুরা থেকে দক্ষিণ দিকে দিয়ে হেমকুটি এবং হেমকূট ভেন করে ভারতবর্ষে পতিত হচ্ছে। শৃঙ্গবাদের উত্তরদিকে আছে সাগরপাড়ে ঐরাবতবর্ষ। এখানে দিবাকর উত্তাপ প্রদান করে না। এই সাগর পারে ঐরাববর্ষ বহুদুরে রাশিয়াতে হতে পারে। সুমেরুর উত্তরদিকের পর্বতগুলি (নীল, শ্বেত শুঙ্গবান) বরফ পর্বত নামে খ্যাত। বোঝা যাচ্ছে সুমেরুর দক্ষিণের পর্বতগুলিতে সারা বছর বরফ থাকে না। অর্থাৎ এগুলি শিবালিক রেগু এর অন্তর্গত। সুমেরুর চারিদিকে মানস ইত্যাদি চার সরোবর আছে। বর্তমানে মানস সরোবরের অবস্থান থেকে আমরা সুমেরুর অবস্থান টের পাওয়া যায়। হিমালয়ের শৈলশ্রেণীতে শুধু দেবতারা নন, একই ভূখন্ডে বাস করত যক্ষ, রক্ষ, দৈত্য-দানবরাও। উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তার 'পঞ্চকেদার' গ্রন্থে বলেছেন। হিমালয়ের স্থানীয় অধিবাসীরা বদ্রীনাথ চৌখাম্বাকেই সুমেরু পর্বত বলে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। চৌখাম্বা ও সুমেরু উত্তর কাশী জেলার অন্তর্ভুক্ত। কেদারনাথের পূর্বে বদ্রীনাথ ও তারই সামান্য উত্তর-পূর্বে নন্দনকানন'।
মন্দাকিনী বিধৌত কেদার মন্দিরের পশ্চাৎবর্তী তুষার প্রাচীরটিকে অনেকে সুমেরু পর্বত বলে মনে করেন। কেদার ও বদ্রী অঞ্চলটি অনেক কাল আগে সংযুক্ত ও নিকটবর্তী ছিল। প্রাকৃতিক বিপর্যয় এদুটি স্থান পৃথক ও দূর হয়ে যায়। সুমের অঞ্চল বলতে তাই চৌখাম্বা চত্বরসহ এই দুই অঞ্চলকে বোঝায়। অলকানন্দা ও সরস্বতীর মিলনস্থল হল কেশবপ্রয়াগ নিকটে অবস্থিত ভীমপুল। যুধিষ্ঠিরের স্বর্গারোহণের ঘটনা ঘটে সতোপন্থ তালের কাছে স্বর্গারোহিনীর গা বেয়ে।
পৌরাণিক মতে সতোপন্থ তাল নামক ত্রিকোণাকৃতি হ্রদের তিন দিকে ছিল ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বরের এলাকা। মহাভারত পাঠে আমরা জানতে পারি- পাণ্ডুকেশ্বর অঞ্চলে বনবাসী পাণ্ডু তার দুই স্ত্রী কুন্তী ও মাদ্রীকে নিয়ে দিন অতিবাহিত করছিলেন (পান্ডুকেশ্বর নাম পরবর্তীকালে হয় – তখনকার নাম ছিল শতশৃঙ্গ পর্বতশৃঙ্গ। একদিন পাণ্ডু একদল মুনিকে পার্বত্য পথে গমন করতে দেখলেন। তার জিজ্ঞাসার উত্তরে তারা জানালেন-
'সমবায়ো মহানদ্য ব্রহ্মলোকে মহাত্মনাম।
দেবনাঞ্চ ঋষিনাঞ্চ পিতৃলাঞ্চ মহাত্মনাম্।।
___অর্থাৎ ব্রহ্মলোকে ব্রহ্মার সভাপতিত্বে দেবগণ, ঋষিগণ ও পিতৃগণের এক বিরাট সম্মেলন হবে। মুনিরা সেখানে যোগ দিতে চলেছেন। পাণ্ডু তাদের সাথে যেতে চাইলে তারা নানা কথা বলে তাকে প্রতিহত করলেন। তারা এও জানালেন, ব্রহ্মার সভা অত্যন্ত দুর্গম পার্বত্যপ্রদেশে অনুষ্ঠিত হবে সেখানে পাণ্ডু রাজরানীদের নিয়ে যেতে পারবেন না। তারা আরও জানালেন শতশৃঙ্গের উত্তরে বহু রম্য প্রদেশ আছে, আছে দেব- গন্ধর্ব-অন্দরাদের ক্রীড়াভূমি, আছে কুবেরে উদ্যান, বেশ কিছু দুর্গ। এমন অঞ্চলও আছে যেখানে প্রচন্ড ঠান্ডা, গাছপালা, মৃগপক্ষী কিছুই চোখে পড়ে না।
হিমালয়ের এই বর্ণনা অতিশয় স্বাভাবিক। ৮/১০ হাজার ফুট পর্যন্ত অঞ্চল সারাবছর (শীতকাল ব্যতীত) মনোরম। ১২ হাজার ফুটের ওপরে বৃক্ষ সংখ্যা হ্রাস পায়, মৃগ-পক্ষী বিশেষ দেখা যায় না। বদ্রীনাথের উচ্চতা ১০ হাজার ফিট এবং কেদারনাথের উচ্চতা ১২ হাজার ফিট। বদ্রীনাথের পরবর্তী অঞ্চল বৃক্ষহীন। মহাভারত ও পুরাণাদির রচনার কালে ইলাবৃত বর্ষট সুমেরু (এটি বর্তমান ভৌগলিক সুমেরু-কুমেরু নয়) পর্বতশৃঙ্গকে কেন্দ্র করে অবস্থিত। মানস সরোবর পর্যন্ত এর বিস্তার। এর উত্তরে শ্বেত বর্ষ অঞ্চলে বৈকুণ্ঠ্যলোক অবস্থিত। এখানে পরবর্তীকালে বিষ্ণুর আবাস। দক্ষিণে হনুমানচটা অঞ্চল এবং বর্তমান কিন্নর কৈলাশ অঞ্চল হল কিম্পুরুষ বর্ষ। এর দক্ষিণে অবস্থিত তৎকালীন ভারতবর্ষ। সুমেরুর পূর্বদিকে ভদ্রাশ্ববর্ষটি বর্তমানের তিব্বত ও চীনের পশ্চিমাংশ। কেতুমাল পর্বত উত্তর কাশ্মীর উপত্যকায়। এখানে ছিল কশ্যপ মুনির আবাস।
আর্যাবর্ত্তে সর্বোচ্চ সম্মানীয় পদ হিসাবে ধরা হয় 'ব্রহ্মা'-কে। অনেকটা বর্তমান ভারতের রাষ্ট্রপতি বা বৃটেনের রানীর পদের মতন। তাকে মন্ত্রণা দেবার জন্য সাতজন ঋষিকে নিয়ে তৈরী হল সপ্তর্ষি মণ্ডল। সর্ব প্রথম এই সপ্তর্ষি হলেন পুলস্ত, পুলহ, আরি অঙ্গিরা, ক্রন্তু, মরীচি এবং বশিষ্ঠ। এই সাতজন আবার এই নামে বিশিষ্ট পদের জন্ম দিলেন। ওই ঋষিদের বংশ বা শিষ্য পরম্পরায় যোগ্য ব্যক্তিরা ওই পদে আসীন হতেন। যেমন হাজার বছর ধরে ভারতে শংকরাচার্য পদে নানা ব্যক্তি আসীন হচ্ছেন। তাদের পৃথক নাম থাকলেও সাধারণ মানুষ তাদের শংকরাচার্য বলেই জানেন। সময়ের সাথে সাথে কোনও ঋষি পদে যোগ্য লোক না পাওয়া গেলে অন্য ঋষিগোষ্ঠী থেকে যোগ্য লোককে সপ্তর্ষি পদে নেওয়া হত।
ব্রহ্মার অপর নাম স্বয়ম্ভূ। শুরুর দিকে ইনি বা এই পদে আসীন ব্যক্তিরা প্রবল শক্তিশালী। এই ব্রহ্মা পরবর্তীকালে চার প্রধান জনগোষ্ঠীর (দেব, দানব, দৈত্য ও মানব) প্রধান বা মাথাস্বরূপ। আদিতে ব্রহ্মার চার প্রাজ্ঞ পুত্র সনক, সনন্দ, সনাতন ও সনৎকুমার। এছাড়াও ব্রহ্মার সন্তানতুল্য আরও যারা এলেন, তাদের ব্রহ্মার মানসপুত্র বলা হয়েছে যেমন, পুলস্ত্য, পুলহ, অঙ্গিরা, ক্রতু, মরীচি, ভৃগু, দক্ষ, নারদ আদি। নারদ একটা পদেরও নাম ইনি প্রচার সচিব হয়ে থাকেন। নানা ব্যক্তি নারদ পদে আসীন হয়। ব্রহ্মা গোষ্ঠির অন্যতম প্রবীণ সদস্য হলেন স্বায়ম্ভূব মনু। এগুলি কোন পরম্পরাগত পদ নয়। স্বায়ম্ভূব মনুর পরবর্তী মনু স্বারোচিষ, উত্তম, তামস আদি। এইরূপ বিষ্ণু হলেন মূলত প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধান, দেবরাজ ইন্দ্রপদে কে যোগ্য তা তিনিই অনেক সময় ঠিক করেছেন, সপ্তর্ষিদের ও নির্বাচন করেছেন। এনারা সবাই মিলে মনু নির্বাচন করেন....Cont>
বিঃদ্রঃ ব্রহ্মা স্বয়ম্ভূর পুত্র মনুর পুত্রসন্তান প্রিয়ম্বদা তার পুত্র ছিল অগ্নিধরা, তার পুত্র নাভি এবং নাভির পুত্র ছিল ঋষভ। ঋষভের পুত্র ভরত। ঋষভ পুত্রকে রাজ্যে অভিষিক্ত করিয়া প্রব্রজ্যা অবলম্বন করেন। ঋষভ হিম নামক দক্ষিণবর্ষ ভরতকে প্রদান করেন । র্তাহারই নামানুষারে ঐ বর্ষ "ভারতবর্ষ"।
🌍জম্বুদ্বীপে ভরতখন্ডে আর্য়াবর্তান্তর্গতে..👇 ছবি
জম্বুদ্বীপ

১১৫০ সালে আর্যাবর্ত্তঃ
১২ শতকে, মঙ্গোলরা, ভারতবংশী ক্ষত্রিয় হুনদের একটি শাখা, চিঙ্গিজ হান বা খানের নেতৃত্বে, চীন দখল করে এবং একটি সুশৃঙ্খল রাষ্ট্র গড়ে তোলে। চেঙ্গিজ হান বা খানের আসল নাম ছিল 'তেমুজিন' বা 'থেমুচিং'। তিনি ছিলেন ভরত বংশের ক্ষত্রিয়। পরে তাকে 'চেঙ্গিস খান' উপাধি দেওয়া হয়, যার 'অর্থ, মহান সম্রাট বা সার্বভৌম সম্রাট খান মঙ্গোলদের একটি ঐতিহ্যবাহী উপাধি, যার অর্থ খাদান বা খনির মালিক বা প্রভু। তেমুজিনের জীবন এবং মৃত্যুর তারিখগুলি শুধুমাত্র অনুমান করা হয়েছে।

তেমুজিনের জীবন এবং মৃত্যুর তারিখগুলি শুধুমাত্র অনুমান করা হয়েছে। ১১৫০ থেকে ১১৬০ সনের মধ্যে কোন এক সময়ে চেঙ্গিজ খান জন্মগ্রহণ করেন। তেমুজিন খান মহাকালের (শিবের) উপাসক ছিলেন এবং অল্প বয়সেই তিনি তীরন্দাজ, ঘোড়সওয়ার এবং অস্ত্রশস্ত্র শিখেছিলেন। তার গোয়েন্দা বিভাগ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তিনি সর্বদা শত্রুদের গতিবিধির উপর নজর রাখতেন। তিনি ছিলেন শত্রুর বিরুদ্ধে নির্মম ও কঠোর রাজা। তিনি শীঘ্রই তুর্কি ও তাতারদের জয় করেন এবং মঙ্গোল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর তাকে 'চেঙ্গিস খান' উপাধি দেওয়া হয়। তিনি একজন চক্রবর্তী সম্রাট ছিলেন এবং ভারতের চক্রবর্তী সম্রাটদের ঐতিহ্য অনুযায়ী শাসন করতেন, ভারতবর্ষ ছাড়া অন্যত্র কোথাও চক্রবর্তী রাজার উল্লেখ পাওয়া যায় না। এ কারণেই সিয়া ও চিন রাজারা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে চক্রবর্তী সম্রাট হিসেবে নিজ নিজ অঞ্চলে শাসন করতে থাকেন।

পরবর্তীতে তিনি তুর্কিদের জয় করেন এবং একটি বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক হন, মঙ্গোল সাম্রাজ্য অধিকৃত স্থানগুলো হল আধুনিক: গণচীন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং কুয়েত। পশ্চিমে তিনি বল্খ ও বুখারা পর্যন্ত দখল করেন। সমরকন্দে সমস্ত শত্রু সেনা চিঙ্গিজ খানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল, কারণ তার নামই শত্রুপক্ষের মধ্যে ভয় জাগিয়েছিল।

তিনি সিন্ধু নদীর উত্তর ও পশ্চিমের সমগ্র অঞ্চল জয় করেন। তার রাজ্য সাইবেরিয়া, কীব, মুস্কবা থেকে কারাকোরাম এবং বেইজিং পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং দক্ষিণে বাগদাদ, হেরাত এবং কাশগর তার রাজ্যের অংশ ছিল। খোতান এবং গোবি মরুভূমিও তাঁর রাজ্যের অংশ ছিল। মঙ্গোল সাম্রাজ্য ২৩ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার ভূমি জুড়ে এবং পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের পারস্য উপসাগর থেকে পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।উত্তরে উত্তর মেরু থেকে আরম্ভ বিন্দু পর্যন্ত তাঁর সৈন্য় শিবির ছিল তাই এলাকাটিকে 'শিভিরা' বলা হত। যা ১৯ শতকে ইউরোপীয়রা 'সাইবেরিয়া' নাম দিয়েছেন। মঙ্গোল এবং তুর্কি উভয়ই তাকে তাদের সেরা শাসক বলে মনে করে, কারণ তারা উভয়েই মূলত ভরত রাজবংশের হুন।

চীন ১২০৬ থেকে ১৩৬৮ খ্রিস্টাব্দ বা ১৬২ বছর পর্যন্ত মঙ্গোলদের অধীনে ছিল। রাশিয়া এবং ক্রিমিয়ার বেশিরভাগ অংশ ছিল মঙ্গোল সাম্রাজ্যের অংশ। সিয়া রাজবংশের চীনা রাজারাও চিঙ্গিজ খানের কাছে পরাজিত হন। তাঁর পারদর্শীর কারন ছিল ভারতীয় বিজ্ঞানের প্রভাব। কুবলায় খানের সময়েই মার্কো পোলো চীন ও ভারত ভ্রমণ করেন এবং দীর্ঘ সময় বেইজিংয়ে অবস্থান করেন। তিনি তার স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন যে কাশ্মীরি পন্ডিত এবং তিব্বতি লামারা কুবলায় খানের সমাবেশে সবচেয়ে বিশিষ্ট ছিলেন। কুবলায় খানও মহাকালের উপাসক ছিলেন এবং প্রতিদিন গঙ্গাজল দিয়ে তাঁর পূজা করতেন এবং শুধুমাত্র গঙ্গাজল পান করতেন ইত্যাদি।

এটা স্পষ্ট যে মঙ্গোলদের সময়েও চীনের ধর্মভূমি ভারতই ছিলো। যদিও সেই সময়ে চীন ও ভারতের মধ্যে আরও অনেক রাজ্য ছিল, যেমনটি ফাহয়ান এবং শুং যুন তথা পরে হুয়েনসাং-এর ভ্রমণ বিবরণে পাওয়া যায়। এই সমস্ত রাজ্যে ভারতের প্রভাব ছিল এবং একই প্রভাব চীন (ঝুয়াংহুয়া) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
প্রকৃতপক্ষে, ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত চীনের প্রাচীন ইতিহাসের কোনো প্রামাণিক প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।


তথ্যঃ
১) মহাভারত (ভীষ্ম পর্ব),
২) বিষ্ণুপুরাণ,
৩) Geographical Data in the Early Puranas. A Critical Study, Dr M. R. Singh: University of Rajasthan/Jaipur. Punthi Pustak, Calcutta. 1972. p. 5
৪) বৈদিক সাহিত্য ও পৌরাণিক বংশাবলী
৫) Pandavas, the famous five
৫) মহাভারত, আদি পর্ব, পণ্ডিত হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ অনূদিত।
©️জ্ঞান-বিকাশ ফাউন্ডশন

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ