শিবের স্বরূপ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

27 July, 2023

শিবের স্বরূপ

শিবের স্বরূপ

"শিবু কল্যাণে" এই ধাতু হতে "শিব" শব্দ সিদ্ধ হয়। "বহুলমেতন্নিদর্শনম্" দ্বারা "শিব" ধাতু মানা হয়। যিনি কল্যাণস্বরূপ ও কল্যাণকর্ত্তা, সেই পরমেশ্বরের নাম "শিব" [যজুর্বেদ ১৬।৪ ]। পৌরাণিক চিত্রে যেমন শিব দেখা যায় তেমন কোন শিব পরমেশ্বর নন এই চিত্র কাল্পনিক আকারে অঙ্কিত হয়েছে। পরমেশ্বর নিরাকার ব্রহ্ম। এখানে যে রূপ তা সৃষ্টি বিজ্ঞানের রহস্য চিত্রে মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে, যেমন শিব লিঙ্গ, অর্ধনারীশ্বর আদি অদ্ভুত রূপে চিত্রিত করা হয়েছে।  পৌরাণিক চিত্রগুলিতে শিবের অর্ধনারীশ্বর রূপটি সোমাগ্নির একতার এক অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে। অর্ধনারীশ্বর চিত্রে আকাশে (বোম ) অগ্নির স্থিতি কে সূর্যমণ্ডলীতে (নাভীচক্র বা গ্যালাক্সি) তথা সোমের স্থিতিকে তার ওপরে পরমেষ্ঠি মণ্ডল (শূন্য / space) আকারে দেখানো হয়েছে। অগ্নির স্বভাব প্রসরণশীল, কিন্তু সোমের (চন্দ্রের) প্রকৃতি সংকোচনশীল। অগ্নি বিরল ভাব বা তারল্য আর সোম ঘনত্বের ভাব। অগ্নি ভেদক তো সোম সংযোজক অগ্নি উর্ধগামী তো সোম অধোগামী। অগ্নি উর্বরশক্তিময় হয়ে সোমে সমাহিত হয়ে যায় আর সোম অধঃশক্তিময়ী হয়ে অগ্নিকে প্রখরতা প্রদান করে। সোম কে স্ত্রী (শিবা) এবং অগ্নি কে পুরুষ শ্রেনীতে রাখা হয়েছে। বৈদিক যজ্ঞে যখন,সংহারক অগ্নিতে গোঘৃতের আনুপাতিক আহুতি পড়ে তখন বায়ুমণ্ডলে লক্ষলক্ষ গুণ বেশী স্বাস্থ্য-উন্নয়নকারী অক্সিজেন উৎসর্জিত হতে থাকে। শিবা (সোম) হতে শিব (অমৃতাগ্নি) বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাকাল (রুদ্রাগ্নি) নিজ নৈসর্গিক রূপে অনুভুত হতে থাকে যা চিত্রে মহাপ্রলয়ের বর্ণানা করা হয়ে থাকে। এই কারণেই শিবকে (মহাকালী) পৌরাণিক চিত্রগুলিতেও শিবের বুকে অশ্বারোহণ দেখানো হয়েছে যাতে তাদের অবস্থান অনুসারে সমগ্র মহাবিশ্বে বিস্তৃত মৃদু এবং তীব্র জীবন শক্তির সংমিশ্রণকে প্রতীকী আকার দেওয়া হয়। বিদ্যুতীকৃত কণা কখনো কখনো পৃথিবীর চৌম্বক কবজ ভেদ করে তার বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। সৌর বায়ুর এই কণাগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঘর্ষণের কারনে জ্বলে উঠে। পৌরাণিক গ্রন্থে, এই উল্কাগুলিকে ভৌতিক অগ্নি, মহাকাশে প্রবাহিত বিদ্যুতের বিবর্তনকে রুদ্র হিসাবে, বিদ্যুতের প্রভাবে গঠিত প্রোটন এবং ইলেকট্রনের অণুগুলিকে (বা রৌদ্র) মারুত বা রুদ্রের পুত্র (মারুতো রুদ্রপুত্রাসহ) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে বা চিহ্নিত করা হয়েছে। মূর্খতার কারনে পৌরাণিক ভক্তগণ এই সমস্ত চিত্র গুলো কেই ব্রহ্ম, পরমেশ্বর বা শক্তিরূপে ফুল, বাতাসা, ইত্যাদি সহযোগে পূজো করে চলেছেন।

শি॒বেন॒ বচ॑সা॒ ত্বা॒ গিরি॒শাচ্ছা॑ বদামসি ।
য়থা॑ নঃ॒ সর্ব॒মিজ্জগ॑দয়॒ক্ষ্মᳬসু॒মনা॒ऽঅস॑ৎ ॥ যজু০ ১৬।৪ ॥

পদার্থঃ–হে (গিরিশ) পর্বত বা মেঘসমূহ মধ্যে শয়নরত রোগনাশক বৈদ্যরাজ! (সুমনাঃ) প্রসন্নচিত্ত হইয়া আপনি (য়থা) যেমন (নঃ) আমাদিগের (সর্বম্) সকল (জগৎ) মনুষ্যাদি জঙ্গম ও স্থাবর রাজ্য (অয়ক্ষম্) ক্ষয়াদি রাজরোগ হইতে রহিত (অসৎ) করিবেন সেইরূপ (ইৎ) ই (শিবেন) কল্যাণকারী (বচসা) বচন দ্বারা (ত্বা) আপনাকে আমরা (অচ্ছ বদামসি) উত্তম বলি ॥ 

বেদে যিনি মহান্, দেবগণেরও দেব, অর্থাৎ বিদ্বানদের উপরে বিদ্বান্, যিনি সূর্য্যাদি পদার্থের প্রকাশক, সেই পরমাত্মার নাম "মহাদেব" হয়েছে। সেই মহাদেব সুখের কর্ত্তা তাই তিনিই "শঙ্কর" [যজু০ ১৬/৪১]। "রুদির্ অশ্রু বিমোচনে" এই ধাতুর সাথে "ণিচ্" প্রত্যয় যোগে "রুদ্র" শব্দ সিদ্ধ হয়। "যো রোদয়তাণ্যয় কারিণো জনান স রুদ্রঃ" অর্থাৎ যিনি দুষ্কর্মকারীদের রোদন করান, সেই পরমেশ্বরের নাম "রুদ্র" [যজুর্বেদ ১৬।১]।

নম॑স্তে রুদ্র ম॒ন্যব॑ऽউ॒তো ত॒ऽইষ॑বে॒ নমঃ॑ ।
বা॒হুভ্যা॑মু॒ত তে॒ নমঃ॑ ॥ যজুর্বেদ ১৬।১

পদার্থঃ–হে (রুদ্র) দুষ্ট শত্রুদিগকে রোদনকারী রাজন্ । (তে) তোমার (মন্যবে) ক্রোধযুক্ত বীর পুরুষদিগের জন্য (নমঃ) বজ্র প্রাপ্ত হউক, (উতো) এবং (ইষবে) শত্রুদিগের বধকারী (তে) তোমার জন্য (নমঃ) অন্ন প্রাপ্ত হউক (উত) এবং (তে) তোমার (বাহুভ্যাম্) বাহুগুলির দ্বারা (নমঃ) বজ্র শত্রুগুলিকে প্রাপ্ত হউক ।

বিশ্বের করাণভূত শিবকে আলঙ্কারিক রূপে শৈবসিদ্ধানসার অনুসারে "ত্রিশূলধারী"[আধিদৈবিক, আধিভৌতিক, আধ্যাত্বিক ত্রিবিধ দুক্ষঃ নিবারক] "নীলকণ্ঠ" বা "নীলগ্রীবা"  আকারে চিত্রিত করা হয়েছে। নীল আকাশকে সূর্যের গলা বা গ্ৰীবা বলা হয়ে থাকে [যজুর্বেদ ১৬।৮]সহস্রাক্ষ অর্থাৎ সূর্যের বহু রশ্মি। নীলকন্ঠ অর্থাৎ নীল কন্ঠ বা গ্ৰীবা যার অর্থাৎ নীল আকাশ যার কন্ঠ বা গ্ৰীবা অর্থাৎ সূর্য।

মো॑ऽস্তু॒ নীল॑গ্রীবায় সহস্রা॒ক্ষায়॑ মী॒ঢুষে॑ ।
অথো॒ য়েऽঅ॑স্য॒ সত্বা॑নো॒ऽহং তেভ্যো॑ऽকরং॒ নমঃ॑ ॥ যজুর্বেদ ১৬।৮ ॥

পদার্থঃ–(নীলগ্রীবায়) যাহার কণ্ঠ ও স্বর শুদ্ধ, সেই (সহস্রাক্ষায়) সহস্র ভৃত্যদিগের কার্য্য দর্শনকারী (মীঢুষে) পরাক্রমযুক্ত সেনাপতির জন্য আমার দেওয়া (নমঃ) অন্ন (অস্তু) প্রাপ্ত হউক, (অথো) ইহার অনন্তর (য়ে) যে (অস্য) এই সেনাপতির অধিকারে (সত্বানঃ) সত্ত্ব গুণ তথা বলযুক্ত পুরুষ আছে (তেভ্যঃ) তাহাদের জন্যও (অহম্) আমি (নমঃ) অন্নাদি পদার্থসকলকে (অকরম্) প্রতিপন্ন করি ॥

অর্ধ-নারীশ্বর সহ বিভিন্ন মানব রূপক ছাড়াও, শিবের একটি প্রাকৃতিক রূপও গৃহীত হয়। মহাবিশ্বের মতো শিবের এই সবচেয়ে রহস্যময় প্রাকৃতিক রূপটি বিশ্বে 'শিবলিঙ্গ' নামে পরিচিত। যেহেতু সুপ্ত প্রকৃতির সাথে পরম চেতনা থেকে নির্গত দীপ্তির মিলনের ফলে সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে, সেহেতু চৈতন্য বস্তু হিসেবে এবং প্রকৃতিকে ভিত্তি হিসেবে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল উপাদানে সহজেই অনুধাবন করা যায়। এর মধ্যে অর্ধেক হল বীজদাতা এবং ভিত্তি হল বীজের ধারক। এই দুটির সংমিশ্রণেই এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে।

পরমেশ্বর "জগৎপিতা" করুণাময়ী "জগৎমাতা" মূলভুত প্রকৃতিকে চিত্রিত করা হয়েছে যা পরে "শিবলিঙ্গ" রূপে পৌরাণিক মহলে পূজিত হয়। যা মিশরীয় অঞ্চলে "ওসিরিস/ইশা", রোমে "প্রিযোপস/পাশুপাত", গ্রীকে "ওপোলো/কপালী", প্রাক মুহাম্মদ আমলে "লাত/লাট" যা লিঙ্গের এক রূপ হিসেবে উপাসনা হতে থাকে। তুর্কিস্থানের ব্যাবিলনে ১২০০ ফুটের ও জার্মানির (SCHIFFERSTADT) শহরে ৩০০ ফুটের শিবলিঙ্গ পাওয়া যায়....

চলবে >>>

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ