ছন্দ রশ্মির 7 প্রকারের প্রভাব
যেকোনো বেদ মন্ত্রের (ছন্দ রশ্মি) নিম্নলিখিত প্রভাব থাকে -
1. দেবতার প্রভাব (দেবতা হল সেই পদার্থের নাম, যা কোনো ছন্দ রশ্মির সঙ্গে সবথেকে বেশি প্রভাবিত হয়। যেমন কোনো ছন্দ রশ্মির দেবতা হল ইন্দ্র, এর অর্থ হল সেই রশ্মির সঙ্গে বিদ্যুতের বৃদ্ধি হবে।)
2. ছন্দের প্রভাব (ছন্দের জন্য পরবর্তী অধ্যায় পঠনীয়।)
3. ঋষির প্রভাব (কোনো ছন্দ রশ্মি যে ঋষি রশ্মির সঙ্গে উৎপন্ন হয়, তারমধ্যে সেই ঋষি রশ্মির কিছু গুণ এসে যায়।)
4. স্বরের প্রভাব
5. পদের প্রভাব (অর্থাৎ শব্দের প্রভাব)
6. অক্ষরের প্রভাব
7. সম্পূর্ণ ঋচা/ছন্দ রশ্মি/মন্ত্রের প্রভাব

স্মরণীয় তথ্য
1.সমস্ত মূল কণা এবং বিভিন্ন তরঙ্গাণুর উৎপত্তি বৈদিক মন্ত্রের সংঘনন দ্বারা হয়। এই মন্ত্র এখনও ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে বাণীর পশ্যন্তী রূপে বিদ্যমান আছে।
2. যখন রশ্মিগুলোর সমূহ পৃথক-পৃথক বিচরণ করে স্বতন্ত্র থাকে, তখন সেটা আকাশের রূপ হয়।
3. যখন সেই রশ্মিগুলোর সমূহ কিছু ছন্দ রশ্মির দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত হয়ে অতি সঘন রূপ প্রাপ্ত করে, তখন সেই সমূহই বিভিন্ন প্রকারের মুলকণার রূপ ধারণ করে নেয়।
4. যখন সেই রশ্মিসমূহ এই দুইয়ের মধ্য অবস্থাকে প্রাপ্ত করে, তখন সেটাই বিভিন্ন প্রকারের তরঙ্গাণুর (কোয়ান্টা) নির্মাণ করে।
5. মহত্ তত্ত্ব অক্ষরের কম্পনের রূপেই হয়।
6. কালের উৎপত্তির সময়ে সাম্যাবস্থাতে অক্ষর রশ্মির বীজ রূপ অব্যক্ত রূপে উৎপন্ন হয়, যা "ওম্" রশ্মির পরা রূপে সঞ্চারিত হতেই ব্যক্ত হয়ে যায়।
7. "ওম্" ছন্দ রশ্মি হচ্ছে অন্য সব রশ্মির বীজ রূপ। সমস্ত প্রাণ এবং ছন্দ রশ্মিগুলো এর থেকেই উৎপন্ন ও প্রেরিত হয়।
8. সূক্ষ্মতম ঊর্জাই স্থূল ঊর্জাকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে।
9. যেসব রশ্মি নিজের চারিদিকে অন্য রশ্মিদের বিশেষ রূপে আকর্ষিত করে অথবা তাদের বহন করে, তাকে ব্যাহৃতি রশ্মি বলে। এটা সাত প্রকারের (ভূঃ, ভুবঃ, স্বঃ, মহঃ, জনঃ, তপঃ আর সত্যম্) হয়।
10. সব প্রাণ রশ্মি কখনও স্থির থাকে না অর্থাৎ সতত গমন করতে থাকে। সাত প্রকারের গতির কারণে প্রাণ প্রধানতঃ সাত প্রকারের (প্রাণ, অপান, সমান, উদান, ব্যান, সূত্রাত্মা বায়ু এবং ধনঞ্জয়) হয়।
11. মাস হচ্ছে বিশেষ প্রকারের রশ্মির (মধু, মাধব, শুক্র, শুচি, নভস্, নভস্য, ঈষ্, ঊর্জ্, সহস্, সহস্য, তপস্ আর তপস্য) নাম, যা প্রাণ ও অপানের সংযুক্ত রূপের তিনবার স্পন্দিত হওয়ায় নির্মিত হয়। একটা মাসের মধ্যে তিরিশটা প্রাণ-অপান যুগ্ম থাকে।
12. মাস রশ্মি ছাড়া সৃষ্টি বা সূর্যাদি লোকের নির্মাণ সম্ভব হবে না। এই রশ্মিগুলো বিভিন্ন রশ্মিকে যুক্ত করার কাজ করে।
13. ঋতু হচ্ছে একটা পদার্থ, যা রশ্মির (বসন্তঃ, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত তথা শিশির) রূপে হয়। দুই-দুই মাস রশ্মিদের যুগ্ম ঋতু বলে।
14. ঋতু রশ্মি দিশা উৎপন্ন করে অর্থাৎ এর কারণে বিভিন্ন লোক বা কণার ঘূর্ণনের দিশা নির্ধারিত হতে সহযোগিতা পাওয়া যায়। এই রশ্মিগুলো প্রকাশ উৎপন্ন করতে নিজের বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
15. প্রাণ, অপান, উদান, মাস এবং ঋতু রশ্মির মধ্যে তমোগুণের মাত্রা অত্যন্ত নিম্ন থাকে। এই রশ্মি অন্য সব রশ্মির অপেক্ষায় সতত ও নির্বাধগামিনী হয়।
16. যত অন্তরালে একটা প্রাণ নামক প্রাণ রশ্মির স্পন্দন হয়, সেই অন্তরালকে একটা প্রাণ বা অহন্ বলে।
17. যত সময়ে একটা অপান রশ্মি একবার স্পন্দিত হয়, সেই সময়কে অপান বলে।
18. অনেক ছন্দ রশ্মি, যা এই সৃষ্টির মধ্যে নানা অতিসূক্ষ্ম রশ্মি থেকে উৎপন্ন হয়, তাদের ঋষি রশ্মি বলে।
19. বিভিন্ন প্রাণ রশ্মি অত্যন্ত সূক্ষ্ম আর অস্পষ্ট টুকরো সুতোর সমান আকৃতির হয়, যার দুটি মাথা পৃথক-পৃথক গুণের হয়।
20. স্বরূপের দৃষ্টিতে ছন্দ রশ্মি অনেক সীমিত সংখ্যাতেই বিদ্যমান থাকে, কিন্তু আবৃত্ত হওয়ার কারণে তাদের সংখ্যা এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে অসীমিত হয়।
____________________________________________
© এক প্রাণ আর এক অপান বর্তমান কালের মাপকের মধ্যে কত সময়? এটা এখনও অনুসন্ধানের বিষয়।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ