মনুস্মৃতি ৫/৬৫ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

09 July, 2023

মনুস্মৃতি ৫/৬৫

 গুরোঃ প্রতস্য শিষ্যস্তু পিতৃমেধং সমাচরণ।

প্রোহারৈঃ সমং তত্র দশরাত্রেণ শুধ্যতি।।_________মনুস্মৃতি-৫/৬৫


এই ৫/৫৮-১০৪ পর্যন্ত শ্লোক নিম্নকাণ দ্বারা প্রক্ষিপ্ত-

( ক)=এই সকল শ্লোক প্রসঙ্গ বিরুদ্ধ হওয়ায় প্রক্ষিপ্ত। ৫/৫৭ শ্লোকে বলা হয়েছে যে "প্রেতশুদ্ধি প্রবক্ষ্যামি দ্রব্যশুদ্ধি তথৈব চ"। অর্থাৎ এর আগে প্রেত-মৃত শরীরের সংস্পর্শে সৃষ্ট অশুদ্ধিকে দূর করার উপায় বলা যাবে। এবং ৫/১০৫-১০৬ শ্লোকে শুদ্ধিকারী পদার্থের পরিমাণ করা হয়েছে। তত্পশ্চাত্ ৫/১০৯ শ্লোকে মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে সৃষ্ট শারীরিক অশুদ্ধির উপায়,মৃত্যুর বিয়োগ দ্বারা দুঃখী মানসিক শুদ্ধির ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই প্রকার ৫/৫৭ শ্লোকের সংগতি ৫/১০৫ থেকে ১১০ পর্যন্ত শ্লোকের সঙ্গে সঠিক ভাবে মিলে যায়। পরন্তু ৫/৫৮-১০৪ পর্যন্ত শ্লোকের সেই ক্রমাগতকে ভঙ্গ করে দিয়েছে এবং এগুলির মধ্যে মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে সৃষ্ট অশুদ্ধিকে এক ধর্মীয় কৃত্যে মানার এক এমনি ব্যবস্থা লিখেছে যে যার দ্বারা পূর্বাপরের ক্রমাগত ত্রুটি হয়ে যায়। অন্যথা আবশ্যক তা এই ছিল যে অশুদ্ধির উপায় বলার জন্য প্রথম শুদ্ধিকারক পদার্থের পরিমাণ করে তারপর এই লেখা উচিত ছিল যে কার মাধ্যমে কাকে শুদ্ধি হয়। এবং শুদ্ধির বিষয়ে কার্যকারণ সম্বন্ধেরও ধ্যান রাখা উচিত ছিল। অতঃপর এই শ্লোক এক ভিন্ন ব্যবস্থার প্রতিপাদক এবং প্রসঙ্গকে ভঙ্গ করেছে।

( খ)= মনুজী প্রেত শুদ্ধির কথা ৫/৫৭ তে বলেছেন এবং তার পরিসমাপ্তি ৫/১১০ শ্লোকে "এষ শৌচস্য চঃ প্রোক্তঃ শরীরস্য বিনির্ণয়ঃ" বলে দিয়েছেন। অতঃপর এর মধ্যে শারীরিক-শুদ্ধির উপায় না বলে "অশৌচ" কে এক ধর্মীয় কৃত্য মনে করে এর পালনের অবিদ্যার নির্মাণ করা হয়েছে। যে প্রতিজ্ঞা তথা সমাপ্তি সূচক বচন দ্বারা অসংগত হয়।

( গ)= এবং মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে যে অশুদ্ধি হয়,তাতে সপিণ্ড, অসপিণ্ডের ভেদ কেন? যা ছিল মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা, সে অশুদ্ধি থেকে পৃথক হতে পারে না, সে কিনা সপিণ্ড হোক অথবা অসপিণ্ড। তাদের শুদ্ধিতার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা নিষ্কারণই হয়। এবং এটা কতই না নিরর্থক আলোচনা হয়েছে, যে মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেনি এবং অনেক দূর কোথাও অন্য স্থানে রয়েছে, সেও তার বর্ণের লোকের দশ দিন পরও ( ৫/৭৭ এ) মৃত্যুর কথা শুনে অশুদ্ধ হয়ে যায়। যদি এই প্রকার মৃতকের কথা শুনলেই অশুদ্ধি হতে পারে, তবে এতে সপিণ্ড বা অসপিণ্ডের কি সম্বন্ধ? অতঃপর যে কারো মৃত্যুর সমাচার শুনবে, সে অশুদ্ধ হওয়া উচিত। যদি এখানে এই বলে যে মৃত্যুর বিয়োগের দুঃখ কেবল সপিণ্ডরই হবে,অন্যের নয়,তাই আমাদের তাদের নিকট এই প্রশ্ন যে মানসিক দুঃখ থেকে মনের শুদ্ধিই বলা উচিত্ শারীরিক নয়। অতঃপর শরীরের অশুদ্ধির অবধি বলা নির্থকই হয়। এবং ৫/৭৬ শ্লোকে আলোচনা হয়েছে যে এক বছর পরও মৃতের সমাচার শোনার পর জলস্পর্শ করায় শুদ্ধি হয়ে যায়। কি করে এই ভৌতিক জল দ্বারা মানসিক শুদ্ধি হতে পারে? যদিও মনু স্বয়ং ৫/১০৯ শ্লোকে জল দ্বারা কেবল শরীরের শুদ্ধি স্বীকার করেছেন। এইজন্য দূরস্থ ব্যক্তির মৃতক-সমাচার শোনা থেকেই শারীরিক-আশুদ্ধি আলোচনা নিষ্কারণই হয়।

( ঘ)= এবং ৫/৫৭ তে প্রেত-শুদ্ধির প্রতিজ্ঞা করে প্রেত- শুদ্ধিই আলোচনা উচিত ছিল,পরন্তু ৫/৭৭ এ পুত্র জন্ম থেকে সৃষ্ট অশুদ্ধির কথা বলা নিত্যন্ত অসংগতিই হয়। এই প্রকার ৫/৬১,৫/৬২ শ্লোকে জন্ম সম্বন্ধে আশুদ্ধি বলেছে। ( ৫/৬৩) তে গর্ভাধান থেকে সৃষ্ট অশুদ্ধির কথা,৫/৬৬ তে গর্ভপাতের অশুদ্ধি এবং রজস্বলা স্ত্রীর অশুদ্ধির কথা অসংগতই হয়। এবং প্রেত শুদ্ধির প্রতিজ্ঞা করে ৫/৬৮-৭০ শ্লোকে কাকে পোড়ানো উচিত,কাকে নয়, এই এক ভিন্ন প্রসঙ্গই আলোচনা হয়েছে। এবং ৫/৭৩ এ অবিবাহিত স্ত্রীদের মৃত্যুর পর এক বিশেষ অবধির কথা যুক্তিযুক্ত নয়। মৃতক যেই হোক,সে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত তার মধ্যে ভেদ করা নিরর্থকই হয়।

( ঙ)=এবং চারি বর্ণের শরীরের মধ্যে পরমাত্মা কেনো ভেদ করেনি। ব্রহ্মণ হোক অথবা শূদ্র,সকলের সরীর পঞ্চ- ভৌতিকেই হয়। অতঃপর মৃতকের সংস্পর্শে যে অশুদ্ধি থাকবে,এতে বর্ণের ভেদ দ্বারা ( ৫/৮৩) পার্থক্য বিবেচনা করে ১০ দিন,১২ দিন,১৫ দিন তথা এক মাসে শুদ্ধি আলোচনা নিষ্কারণই হয়। এই যেকোনো জন্ম-ভিত্তিক্ বর্ণব্যবস্থাকে মান্যকারীর দূরাগ্রহ-কল্পনাই হয়। কারণ যে মনু কর্মানুসারে বর্ণব্যবস্থাকে স্বীকার করেছেন।

( চ)= এবং একই প্রকার ( ৫/৭(৮০-৮২) পর্যন্ত শ্লোকে আচার্য,আচার্য-পুত্র,আচার্যের পত্নী, বেদপাঠী, মামা, শিষ্য, ঋত্বিক তথা বন্ধুদের মৃত্যুর পর ভিন্ন-ভিন্ন অশৌচের অবধির নির্ধারণও নিষ্কারণই হয়। কারণ যখন তাদের পঞ্চভৌতাক শরীরের মধ্যে কোনো ভেদ নেই,তখন তাদের সংস্পর্শে সৃষ্ট অশুদ্ধিতায় ভেদ কেন?

( ছ)= ঘরে যদি মৃতক ব্যক্তি পড়ে থাকে এবং কোনো ব্যক্তি কোনো ব্রত বিশেষ করে থাকে,তখন তার জন্য ৫/৮৮ তে এই ব্যবস্থা দেওয়া যে ব্রতসমাপ্তি পর্যন্ত প্রেতোদকক্রিয়া না করা,ব্রতসমাপ্তি পরে করা,নির্থক এবং অব্যবহারিকই হয়। যদি উদক ক্রিয়ার কোনো সম্বন্ধ হয়,তখন সেই সমস্ত কার্য ত্যাগ করে তৎকালই করা উচিত। এই প্রকার ৫/৮৯,৫/৯০ তে বর্ণসংস্কার, সন্ন্যাসী, আত্মহত্যাকারী, পাখণ্ডি,স্বৈরিণী,গর্ভপাতী, মাতাল স্ত্রীদের উদক ক্রিয়ার নিষেধেও কোনো কারণ নেই। যথার্থে প্রেত- শুদ্ধি প্রকরণে এই উদক আলোচনাই নিরর্থক।

( জ)= এবং ৫/৯২ তে বলা হয়েছে যে,চারি বর্ণের মৃত দেহকে নগরের ভিন্ন-ভিন্ন দ্বারায় নিয়ে যেতে হবে। এই বক্তব্যও নিরাধার তথা পক্ষপাতপূর্ণ। এই জন্ম ভিত্তিক বর্ণব্যবস্থাকে মানলে নিরর্থক কল্পানাই হয়। কারণ মৃতকে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিশা-বিশেষের কোনো সম্বন্ধ নেই। আজকাল কৃহৎ-বৃহৎ মহানগরে দ্বারই নেই,এবং দিশার ভিত্তিতে নিয়ে যেতে অত্যাধিক ব্যার্থ পরিশ্রমই হবে।

(.ঝ)= এবং ৫/৯৩ তে মৃতক-অশুদ্ধি থেকে রাজা,ব্রতী তথা যজ্ঞকারীকে মুক্তিই করে দিয়েছে। এটাও নিষ্কারণই হয়। তাদের শরীর কি পঞ্চভূতের নয,যা অশুদ্ধ ( মৃতের সংস্পর্শে) হয় না? এবং ৫/৯৫ তে যুদ্ধে মৃতক,বিদ্যুতের স্পর্শে মৃত্যু,গো ব্রাহ্মণের জন্য মৃত্যু,এবং যাকে রাজা চায়, তার অশৌচ অবিলম্বে আলোচনাও নিরাধারই হয়। এবং ৫/৯৯ তে পরে জন্ম ভিত্তিক বর্ণ ব্যবস্থাকে মান্য করে বলেছে যে ব্রাহ্মণ জলকে স্পর্শ করে,ক্ষত্রিয় অশ্ব বা অস্ত্রকে স্পর্শ করে,বৈশ্য রাসকে স্পর্শ করে এবং শূদ্র লাঠিকে স্পর্শ করেই শুদ্ধ হয়ে যায়। মৃতকের সংস্পর্শে সৃষ্ট অশুদ্ধির রথ,অস্ত্র,লাঠি রাসাধি থেকে কি সম্বন্ধ,যাকে স্পর্শ মাত্রই শুদ্ধ করে দেয়? একে আপদ্ধর্মও বলা যায় না,কারণ মনুজী আপদ্ধর্মের এক পৃথক অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।

( ঞ)= এবং ৫/৯৩-৯৭ শ্লোকে চন্দ্রাদি আট লোকপালের বক্তব্যও মিথ্যাই বলা হয়েছে। কারণ ইন্দ্র,কুবেরাদি লোকপালের কল্পনা নিরর্থকই হয় যথার্থ নয়। ইত্যাদি শব্দ দ্বারে সূর্যাদি ভৌতিক শক্তির গ্রহণ দ্বারা যদি অভিপ্রায় মানা হয় তবুও ঠিক নয়। কারণ কারণ যারা এই লোকপালের কল্পনা করে তারা স্থান-বিশেষ মনে করে শরীরধারী দেববিশেষ মানে। যথার্থে ভৌতিক দেবতা তো জড়, তারা ঈশ্বরের বিন্যাস অনুযায়ী কাজ করে,তাদরর শুদ্ধি বা অশুদ্ধি দ্বারা মুক্তি মনে করা যায় না। এবং তাদের আশ্রয় দ্বারা রাজার অশুদ্ধির প্রশ্নই হয় না। কারণ রাজার শরীরও অন্য মানুষের মতই। অতঃপর রাজাও মৃতকের সংস্পর্শে অশুদ্ধি এড়াতে পারে না। এই প্রকার তাদের শ্লোকের শৈলী অযুক্তিক,পক্ষপাতপূর্ণ,নিরাধার তথা অসংগত, অতঃপর এই সমস্ত শ্লোক প্রক্ষিপ্ত।।
( ভাষ্য-পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ