নোদ্বাহিকেষু মন্ত্রেষু নিয়োগঃ কীর্ত্যতে ক্বচিৎ।
ন বিবাহবিধাবুক্তং বিধবাবেদনং পুনঃ।।
প্রক্ষিপ্ত শ্লোক মনুস্মৃতি-৯/৬৫
এই দশ ( ৯/৬৪-৭৩) শ্লোক নিম্নলিখিত কারণে প্রক্ষিপ্ত-
১। বিষয়বিরোধ-৯/৫৬ শ্লোক অনুসারে প্রস্তুত প্রসঙ্গ আপাৎকালে স্ত্রী-পুরুষ সংযোগ এবং বিয়োগকালীন ধর্মের বক্তব্য। তদনুসারে ৫৬-৫৯ শ্লোকগুলোতে তার বর্ণনাও হয়েছে। কিন্তু ৬৪-৬৮ শ্লোকগুলিতে সেই বিষয়ের বিরোধ করেছেন এবং ৬৯-৭৩ শ্লোকগুলিতে বিষয় থেকে ভিন্ন দেবর দ্বারা কন্যা-বরণ একজনকে বাগদান করে অন্যকে কন্যা না দেওয়া,ছলনা দ্বারা কন্যা দেওয়ার পর ত্যাগ করা, ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণনা করা হয়েছে। অতএব বিষয় বিরুদ্ধ বর্ণনা হওয়াতে এই শ্লোক প্রক্ষিত।
২। অন্তর্বিরোধ-মনু ৯/৫৬-৬৩ শ্লোকগুলোতে যে নিয়োগ- ব্যবস্থার বিধান করেছেন তার ৯/৬৪-৬৮ শ্লোকগুলোতে নিষেধ করায় এই শ্লোক বিষয় বিরুদ্ধ। নিয়োগ ব্যবস্থাকেই এই উভয় ব্যবস্থায় মৌলিক কি মানা যাবে? এই বিষয়ে নিম্ন প্রসাণই অন্তঃ সাক্ষী-( ক) মনু নিয়োগের বিধান প্রথমে করেছেন। এবং পরে কেউ তাদের খণ্ডনের জন্য শ্লোক যোগ করেছে। ( খ) এবং ৯/৫৬ তে এই বিষয়ের প্রারম্ভের এবং ৯/১০৩ এ এই বিষয়ের সমাপ্তির স্পষ্ট নির্দেশ করেছেন। ( গ) ( ৯/১৪৫-১৪৬) শ্লোকগুলোতে নিয়োগ দ্বারা উৎপন্ন পুত্রকে দায়-ভাগের পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে। ( ঘ) এবং ৯/১৪৭ এ নিয়োগ-বিধিকে ত্যাগ করে যে সন্তান উৎপন্ন হয়,তার সম্পত্তির উপর কোনো অধিকার নেই বলে বিবেচিত হয়। এই প্রকার নিয়োগের বিধান মৌলিক সিদ্ধ হয়। অতএব, যে সকল শ্লোক নিয়োগের খণ্ডনকারী শ্লোক বিষয়বিরুদ্ধ হওয়ায় প্রক্ষিপ্ত।
৩। বেদ-বিরুদ্ধ-মনু ধর্ম বিষয়ে বেদকে পরম প্রমাণ বিবেচনা করেছেন। এইজন্য মনু বেদ বিরুদ্ধ কদাপি বলতে পারেন না। ৯/৬৫ তম শ্লোকে বলা হয়েছে যে, নিয়োগ-ধর্ম কোনো বেদ-মন্ত্রে উল্লেখ নেই। এই প্রক্ষেপের বক্তব্য বেদ মন্ত্র সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা দেখায়। কারণ বেদ মন্ত্রে স্পষ্ট নিয়োগের বিধান রয়েছে। এই বিষয়ে কিছু বেদ মন্ত্র দেখুন-
( ক) ইমাম্ ত্বমিন্দ্র মীঢ়বঃ সিপুত্রাম্ কৃণু ( ঋ০ ১০/৮৫/৫) অর্থাৎ হে ( মীঢ়বঃ ইন্দ্র) বীর্যের সেচনে সমর্থ ঐশ্বর্যযুক্ত পুরুষ! আপনি এই বিবাহিত স্ত্রীকে বা বিধবা স্ত্রীদেরকে শ্রেষ্ঠ পুত্র এবং সৌভাগ্যযুক্ত করুন। ( স০ প্র০ চতুর্থ০)
( খ) উদীর্ধ্ব নার্যভিজীবলোকম্ গতাসুমেতমুষ শেষ এহি। হস্তগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদম্ পত্যুর্জনিত্বমভিসংবভুথ। ( ঋ০ ১০/১৮/৮)" ( নারী) বিধবা আপনি ( এতম্ গতাসুম্) এই মৃত পতির আশা ছেড়ে ( শেষে) অন্য পুরুষদের মধ্য থেকে ( অভিজীব লোকম্) জীবত অন্য পতিকে ( উপৈহি) প্রাপ্ত হোন এবং ( উদীর্ধ্ব) এই ভাবনা বিচার ও দৃঢ় সংকল্প নিশ্চয় রাখেন যে, যিনি ( হস্তগ্রাভস্য দিধিষোঃ) তোমাকে আপনার বিধবার পুনঃ পানিগ্রহণকারী নিযুক্ত পতির সম্বন্ধের জন্য নিয়োগ হবে তখন ( ইদম্) এই ( জনিত্বম্) জন্মগ্রহণকারী বালক সেই নিযুক্ত ( পত্যুঃ) পতির হবে এবং আপনি নিজের জন্য নিয়োগ করেন তখন এই সন্তান ( তব্) আপনার হবে।এমন সংস্কল্প ( অভিসংবভূথ) হোক এবং নিযুক্ত পুরুষও এই নিয়মকে পালন করা। " ( স০ প্র০ চতুর্থ) ইত্যাদি অনেক মন্ত্রে নিয়োগ ধর্মের বর্ণনা করা হয়েছে।
৪। শৈলী বিরোধ-৬৬-৬৭ শ্লোকগুলোতে রাজা বেণুর আলোচনা ঐতিহাসিক। যা এই শ্লোকগুলোকে স্পষ্টরূপে প্রবর্তীতে সিদ্ধ করেছে। মনু এমন ঐতিহাসিক শৈলীতে কোথাও বর্ণনা করেননি।
৫। এতে ৬৯ তম শ্লোক প্রক্ষিপ্ত নয়। কারণ এতে বাগদানের পরই পতির মৃত্যুর পর বিবাহের বিধান করা হয়েছে,পুনর্বিবাহের নয়।।
( ভাষ্যকার-পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ