রাধা কৃষ্ণ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

25 July, 2023

রাধা কৃষ্ণ

সর্ব্বব্যাপক ব্রহ্মসত্ত্বা, দেশকালের দ্বারা পরিচ্ছিন্ন একটি সীমাবদ্ধ পাঞ্চভৌতিক দেহের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ রূপে এসেছিলেন, এ ধারনা কেবল তাদেরই হ'তে পারে, যারা জ্ঞানবিচারের নামে কানে আঙ্গুল দিয়ে কৃষ্ণ কৃষ্ণ জপ করে! এখন তো আবার কৃষ্ণ ক্ষুধা মেটে না শ্রীকৃষ্ণের চেয়ে রাধা রাধা নাম আর ধেই ধেই করে নাচ করতে থাকে !

বিঃদ্রঃ হরেকৃষ্ণ হরেরামের কলি সন্তরন উপনিষদ কোন প্রামান্য উপনিষদ নয়।

একজন স্বধর্ম্মনিষ্ঠ যোগী গৃহস্থ যেমন সাধনা করেন, নিত্য ক্রিয়ার অনুষ্ঠান করেন শ্রীকৃষ্ণও যে তাই করতেন তা বৈষ্ণবমান্য শ্রীমদ্ভাগবতে দেখতে পাওয়া যায় [শ্রীমদ্ভাগবত ১০।৭০।৫-৭]।

মেগাস্থিনিসের বিবরণে জানা যায়, তিনি যখন গ্রীক রাজদূতরূপে চন্দ্রগুপ্তের রাজসভায় এসেছিলেন তখন অর্থাৎ খৃঃ পূঃ তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত কৃষ্ণের দেবতা জ্ঞানে পূজা গুজরাটের সাত বংশীয়দের মধ্যেই প্রচলিত ছিলো। ভারতের অন্যান্য লোকে কৃষ্ণকে ঐ সময় পর্যস্ত আদর্শ মহামানবরূপেই মানতেন, মানতেন রাজনীতি সমাজনীতি লোকনীতি সববিষয়েই একজন ভূয়োদর্শীরূপে। 

পরে নব অভ্যূষিত বৈষ্ণব প্রভুপাদের মহিমায় কৃষ্ণ একেবারে পূর্ণ অবতারী পুরুষ পরমাত্মারূপে দেখা দিলেন। বেদব্যাসেৰ নাম দিয়ে ভাগবত রচিত হ'ল এবং তাতেই এই বিকৃত প্রচেষ্টা চরমে উঠেছে। চতুভুজধারী বিষ্ণুর সঙ্গে কৃষ্ণ হয়ে গেলেন একাত্ম, কখনও শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী গীতার, আবার কখনও বা দ্বিভূজ মুরলীধারী, কটিতে পীতবসন পীতধড়া, মাথায় শিখিপুচ্ছ কেয়ুরকনককুগুলবান, বক্ষে শ্রীবৎস লাঞ্ছিত কৌস্তূভমণি। রসিকেন্দ্র চূড়ামণির [ ভাগবৎমতে] রসিক ভক্তরা নানা গ্রন্থের মাধ্যমে প্রচার করতে লাগলেন এ সমস্তই নাকি চিণ্ময়! 

ভক্ত-প্রাণতোষিণী সাম্প্রদায়িক বাখ্যা টীকার কথা বাদ দিয়ে, বিবেকবুদ্ধি সহ শাস্ত্র বাক্য আর স্বয়ং কৃষ্ণবাক্য বিচার করে দেখলেই বোঝা যায়, ‘নরাক্বতি পরব্রহ্মত্ব,’ ‘ধড়াচূড়া মূর্ত্তির চিন্ময়ত্ব' ‘মালা তিলক চন্দনের অপ্রাকৃত তত্ত্ব' প্রচারের মূলে কোন সত্য নেই । কেবল স্বতন্ত্র সম্প্রদায় সৃষ্টির একটা অপকৌশল ! 

যদি গীতার অহংকারাদেশ বাক্য ‘মম ময়ি মৎ মাং' থাকার ফলে শ্রীকৃষ্ণের 'পূর্ণ পরমেশ্বরত্ব.. পূর্ণ অবতারত্ব' সিদ্ধ হয়, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের বহু বহু হাজার বছর পূর্ব্বে বেদ এবং উপনিষদের ঋষিরা যে ভূমাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে একই ধরনের 'অহং মাম্' ইত্যাদি বাক্যে বরং আরও উদাত্তসুরে এবং বজ্রগম্ভীর ব্যঞ্জনায় যে উপদেশ দিয়ে গেলেন, তাদেরকে কেন সেজন্য ‘স্বয়ং ভগবান পূর্ণ অবতার' আদি বলা হয় না ? রসিক বৈষ্ণবগণ কেন ঐ সমস্ত বরেণ্য ঋষিদের শ্রীবিগ্রহের পূজা, পাদোদক সেবন, দরবিগলিত অশ্রুধারে নিয়ত তাঁদের নাম সংকীর্তন করেন না ? একি কেবল নিজেদের সম্প্রয়ার বাঁচাবার জন্য কৃষ্ণেই সব কিছু আরোপ করবার অপচেষ্টা নয় ?

আর্য্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী স্বামীর মতে শ্রীমদ্ভাগবত "হিমাদ্রি" গ্রন্থ রচয়িতা বোদেবের লেখা [সত্যার্থ প্রকাশঃ, পঃ ৩৭২]। এ কথা নগেন সরকার প্রণীত বাংলা "বিশ্বকোষ" এবং সুবলমিত্রের বাংলা অভিধান (৬ষ্ঠ সংস্করণ) গ্রন্থে উল্লেখ করা আছে। নিজেরা বিচার বিবেচনা করলেই বুঝতে পারা যায়, মহাভারত যিনি রচনা করেছেন সেই ব্যাসদেব অর্ব্বাচীন ভাগবত-গ্রন্থের লেখন ন'ন। ডঃ নীহার রঞ্জন রায় মনে করেন, শাক্ত প্রভাব বশতঃ সেন পর্ব্বের কোন সময়ে কৃষ্ণের শক্তি হিসেবে "রাধা"র কল্পনা এসেছে।

ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ড ৪৮।২৯ শ্লোকে। সেখানে রাধা সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
"দক্ষিণাঙ্গঞ্চ শ্রীকৃষ্ণো বামাঙ্গং সা চ রাধিকা।"২৯
অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের দক্ষিণ অংশ শ্রীকৃষ্ণরূপ হলো এবং বাম অংশের অঙ্গ রাধারূপ ধারণ করেছেন। খ্রীষ্টান ও ইসলামের দৃষ্টিতে যেমন আদমকে সৃষ্টি করার পর তাঁর পাঁজরের হাড় থেকে ইভ বা হবার সৃষ্টি এক হাস্যকর অবাস্তব কল্পনা।
আবার জন্মখণ্ড ১৫।৫৭ "যথা তঞ্চ তথাহঞ্চ ভেদো হি নাবয়োর্ধ্রুবম্।।" সেখানে শ্রীকৃষ্ণই রাধা রাধাই শ্রীকৃষ্ণ।
ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ডম ৪৯।৩৯
অতীতে দ্বাদশাব্দে তু দৃষ্ট্বা তাং নবযৌবনাম্।
সার্দ্ধং রায়াণবৈশ্যেন তৎ সম্বন্ধং চকার সঃ।।______রাধা শ্রীকৃষ্ণের মামি
শুধু তাই নয় ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড ৫।২৫-২৬ সেখানে রাধা শ্রীকৃষ্ণের কন্যা [আবির্বভূব কন্যৈকা কৃষ্ণস্য বামপার্শ্বতঃ]।
রাধা কৃষ্ণ


বেদে যে "কৃষ্ণ" শব্দ এসেছে তার মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণ কিনা দেখুনঃ 

 অহশ্চ কৃষ্ণমহরর্জুনঞ্চ বিবর্ত্তেতে রজসি বেদ্যাভিঃ। 

বৈশ্বানরো জায়মানো ন রাজাবাতিরজ্যোতিষাগ্নিস্তমাংসি।। (ঋগ্বেদ ৬।৯।১)

শব্দার্থ : কৃষ্ণম্ অহঃ (কৃষ্ণবর্ণের দিন অর্থাৎ রাত্রি) চ (এবং) অর্জুনম্ অহঃ (শুক্লবর্ণের দিন) রজসি (রঞ্জিত করে) বেদ্যাভিঃ (প্রাণীদের প্রবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে) বিবৰ্ত্তেতে (পর্যায়ক্রমে আসে); বৈশ্বানরঃ অগ্নিঃ (বৈশ্বানর অগ্নি) জায়মানঃ (উদীয়মান) রাজা ন (রাজা বা সূর্যের মতো) জ্যোতিষা (জ্যোতির দ্বারা) তমাংসি (অন্ধকারকে) অবাতিরৎ (বিনাশ করে)

অনুবাদ : রাত্রি ও দিন সমস্ত জগৎকে রঞ্জিত করে, বেদিতব্য প্রাণীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পর্যায়ক্রমে অবস্থান করে। বৈশ্বানর অগ্নি উদীয়মান রাজা বা সূর্যের মতো নিজের জ্যোতির দ্বারা অন্ধকার দূর করে।

অহশ্চ কৃষ্ণং রাত্রিঃ শুক্লং চাহরর্জুনং বিবৰ্ত্তেতে। 

রজসী বেদ্যাভির্বেদিতব্যাভিঃ প্রবৃত্তিভিঃ।। ঋগ্বেদ ৬।৯।২।

শব্দার্থ : কৃষ্ণম্ অহঃ (কালো রাত্রি)। [ মন্ত্রের ] 'অর্জুনঞ্চাহ বিবর্ভেতে রজনী' (এই অংশের) অর্জুনম্ (শ্বেতবর্ণ) বিবৰ্ত্তেতে (পর্যায়ক্রমে আসে) বেদ্যাভিঃ=বেদিত্যব্যাভিঃ প্রবৃত্তিভিঃ (বেদিতব্য প্রাণী প্রবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে)।

আলোচনা : ‘কৃষ্ণম্ অহঃ' শব্দের অর্থ কালো রাত্রি। 'অর্জুনম্ অহঃ' শব্দের অর্থ শুক্লবর্ণ দিন। তারা দুজনে পর্যায়ক্রমে আসে। তাদের দুইজনের প্রবৃত্তি বিভিন্ন। অর্থাৎ প্রাণীদের দিবাভাগে একপ্রকার প্রবৃত্তি হয়, আবার রাত্রিভাগে ভিন্ন প্রকার প্রবৃত্তি হয়। সমগ্র ভুবনকে রঞ্জিত করে তারা অবস্থান করে।

শ্রীকৃষ্ণকে কলঙ্কিত করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে ভাগবত পুরাণ ১০।৫৮।৩১, ভাগবত পুরাণ ১০।৫৮।৫৬

শ্রীকৃষ্ণের পত্নী
মহাভারত ৫।১১৭।১৭


No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ