যজুর্বেদ অধ্যায় ১ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

31 July, 2023

যজুর্বেদ অধ্যায় ১

যজুর্বেদ অধ্যায় ১
॥ অথ প্রথমাধ্যায়ারম্ভঃ ॥
অথোত্তমকর্মসিধ্যর্থমীশ্বরঃ প্রার্থনীয় ইত্যুপদিশ্যতে ॥
প্রথম অধ্যায়ের প্রথম মন্ত্রে উত্তম উত্তম কর্মের সিদ্ধি হেতু মনুষ্যদিগকে ঈশ্বরের প্রার্থনা অবশ্য করা উচিত – এই তথ্যের প্রকাশ করা হইয়াছে –

ইষে ত্বেত্যস্য পরমেষ্ঠী প্রজাপতির্ঋষিঃ । সবিতা দেবতা । ইষে ত্বেত্যারভ্য ভাগপর্য়্যন্তস্য স্বরাড্বৃহতীছন্দঃ । মধ্যমঃ স্বরঃ । অগ্রে সর্বস্য ব্রাহ্ম্যুষ্ণিক্ ছন্দঃ । ঋষভঃ স্বরঃ ॥


ও৩ম্ ই॒ষে ত্বো॒র্জে ত্বা॑ বা॒য়ব॑ স্থ দে॒বো বঃ॑ সবি॒তা প্রার্প॑য়তু॒ শ্রেষ্ঠ॑তমায়॒ কর্ম॑ণ॒ऽ আপ্যা॑য়ধ্বমঘ্ন্যা॒ऽ ইন্দ্রা॑য় ভা॒গং প্র॒জাব॑তীরনমী॒বাऽ অ॑য়॒ক্ষ্মা মা ব॑ স্তে॒নऽ ঈ॑শত॒ মাঘশ॑ꣳসো ধ্রু॒বাऽ অ॒স্মিন্গোপ॑তৌ স্যাত ব॒হ্বীর্য়জ॑মানস্য প॒শূন্পা॑হি ॥ ১ ॥

পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ! তিনি (সবিতা) সর্ব জগতের উৎপাদক সম্পূর্ণ ঐশ্বর্য্যযুক্ত, (দেবঃ) সর্ব সুখ প্রদাতা এবং সর্ব বিদ্যার প্রসিদ্ধকারী পরমেশ্বর । সুতরাং (বঃ) তোমাদের, আমাদের এবং স্বীয় মিত্রদিগের যে (বায়বঃ) সব ক্রিয়াগুলি প্রতিপন্ন করাইবার জন্য যে স্পর্শগুণযুক্ত প্রাণ, অন্তঃকরণ এবং ইন্দ্রিয় সকল (স্থ) বিদ্যমান, তাহাদিগকে (শ্রেষ্ঠতমায়) অতি উত্তম (কর্মণে) করিবার যোগ্য সর্বোপকারক যজ্ঞাদি কর্ম হেতু (প্রার্পয়তু) সম্যক্ প্রকার সংযুক্ত করিবে । আমরা (ইষে) অন্নাদি উত্তম – উত্তম পদার্থ এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে অনুসন্দ্ধিৎসা এবং পরাক্রম অর্থাৎ উত্তম রসের প্রাপ্তি হেতু (ভাগম্) সেবা করিবার যোগ্য ধন ও জ্ঞানপূর্ণ (ত্বা) উক্ত গুণযুক্ত এবং (ত্বা) শ্রেষ্ঠ পরাক্রমাদি গুণগুলির প্রদাতা আপনার সর্ব প্রকারে আশ্রয় লাভ করি । হে মিত্রগণ ! তোমরাও এইরূপ হইয়া (আপ্যায়ধ্বম্) উন্নতি করিতে থাক তথা আমরাও করিতে থাকি । হে ভগবন্ ! জগদীশ্বর ! আমাদিগকে (ইন্দ্রায়) পরমেশ্বর্য্য প্রাপ্তি হেতু (প্রজাবতীঃ) যাহার অনেক সন্তান তথা যাহারা (অনমীবাঃ) ব্যাধিগ্রস্ত নহে এবং অয়ক্ষ্মা যাহার মধ্যে রাজযক্ষ্মা ইত্যাদি রোগ নেই তাহারা (অঘ্ন্যা) যে যে গাভি ইত্যাদি পশু উন্নতি করিবার যোগ্য, যাহারা কখনও হিংসা করিবার যোগ্য নয়, যে সব ইন্দ্রিয় সকল বা পৃথিবী ইত্যাদি লোক আছে, তাহাদেরকে সর্বদা (প্রার্পয়তু) নিশ্চিত করুন । হে জগদীশ্বর ! আপনার কৃপাবলে আমাদিগের মধ্য হইতে দুঃখ দেওয়ার জন্য কোনও (অঘশংসঃ) পাপী অথবা (স্তেনঃ) চোর-ডাকাত (মা ঈশত) উৎপন্ন না হয় তথা আপনি এই (য়জমানস্য) পরমেশ্বর এবং সর্বোপকার ধর্মের সেবনকারী মনুষ্যের (পশূন্) গাভি, অশ্ব ও হস্তী ইত্যাদি তথা লক্ষ্মী ও প্রজার (পাহি) সবসময় রক্ষা করুন যাহার ফলে এই সব পদার্থ হরণ করিতে পূর্বোক্ত কোনও দুষ্ট মনুষ্য সক্ষম না হইতে পারে (অস্মিন্) এই ধার্মিক (গোপতৌ) পৃথিবী ইত্যাদি পদার্থের রক্ষাকামী সজ্জন মনুষ্যের সমীপ (বহ্বীঃ) উক্ত বহু পদার্থ (ধ্রুবাঃ) নিশ্চল সুখ হেতু (স্যাত) হউক । এই মন্ত্রের ব্যাখ্যা শতপথ ব্রাহ্মণেও করা হইয়াছে । তাহার ঠিকানা পূর্ব সংস্কৃত ভাষ্যে লিখিয়া দিয়াছি এবং পরেও এইরকমই ঠিকানা লিখিত হইবে । যিনি দেখিতে চাহিবেন তিনি তথায় দেখিয়া লইবেন ।

ভাবার্থঃ- বিদ্বান্ মনুষ্যদিগকে সর্বদা পরমেশ্বর ও ধর্মযুক্ত পুরুষার্থের আশ্রয়ে থাকিয়া ঋগ্বেদ পাঠ করিয়া গুণ ও গুণী সম্বন্ধে যথার্থ জ্ঞাত হইয়া সর্ব পদার্থের সম্প্রয়োগ দ্বারা পুরুষার্থের সিদ্ধি হেতু অতি উত্তম ক্রিয়াযুক্ত হওয়া উচিত যাহাতে পরমেশ্বরের কৃপাবলে সব মনুষ্যের সুখ ও ঐশ্বর্য্যের বৃদ্ধি হয় । সব লোকদের উচিত যে, ভাল ভাল কর্মে প্রজার রক্ষা তথা উত্তম উত্তম গুণ দ্বারা পুত্রাদির শিক্ষা সর্বদা করিবেন যাহাতে প্রবল রোগ, বিঘ্ন এবং চোরের অভাব হইয়া প্রজা ও পুত্রাদি সব সুখের প্রাপ্তি হইবে । এই শ্রেষ্ঠ কর্ম সর্ব প্রকার সুখের খনি । হে মনুষ্যগণ! আইস, যিনি এই সংসারে আশ্চর্য্যজনক পদার্থ-রচনা করিয়াছেন সেই জগদীশ্বরকে সর্বদা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি । সেই পরম দয়ালু ঈশ্বর স্বীয় কৃপাবলে উক্ত কর্মগুলি করিয়া সর্বদা মনুষ্যদিগের রক্ষা করিয়া থাকেন ।


বসোঃ পবিত্রমিত্যস্য ঋষিঃ স এব । য়জ্ঞো দেবতা । স্বরাডার্ষী ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ । ধৈবতঃ স্বরঃ ॥

বসোঃ॑ প॒বিত্র॑মসি॒ দ্যৌর॑সি পৃথি॒ব্য᳖সি মাত॒রিশ্ব॑নো ঘ॒র্মো᳖ऽসি বি॒শ্বধা॑ऽ অসি । প॒র॒মেণ॒ ধাম্না॒ দৃꣳহ॑স্ব॒ মা হ্বা॒র্মা তে॑ য়॒জ্ঞপ॑তির্হ্বার্ষীৎ ॥ ২ ॥

পদার্থঃ- হে বিদ্যাযুক্ত মনুষ্য! তুমি যে (বসোঃ) যজ্ঞ (পবিত্রম্) শুদ্ধির হেতু (অসি)(দ্যৌঃ) যাহা বিজ্ঞানালোকের হেতু এবং সূর্য্য-কিরণে স্থির থাকে, যাহা (পৃথিবী) বায়ু সহ দেশদেশান্তরে বিস্তীর্ণ হয়, যাহা (মাতরিশ্বনঃ) বায়ু কে (ধর্মঃ) শুদ্ধকারী, যাহা (বিশ্বধাঃ) সংসারের ধারক তথা যাহা (পরমেণ) উত্তম (ধাম্না) স্থান হইতে (দৃহস্ব) সুখ বৃদ্ধিকারক, এই যজ্ঞকে (মা) না (হ্বাঃ) ত্যাগ করিও । তথা (তে) তোমার (য়জ্ঞপতিঃ) যজ্ঞের রক্ষাকারী যজমানও তাহাকে (মা) না (হ্বার্ষীৎ) ত্যাগ করে । ধাত্বর্থের অভিপ্রায়ে যজ্ঞ শব্দের অর্থ তিন প্রকার হয় অর্থাৎ প্রথম যাহা ইহলোকও পরলোকের সুখের জন্য বিদ্যা, জ্ঞান ও ধর্মের সেবনের ফলে বৃদ্ধ অর্থাৎ বড় বড় বিদ্বান্, তাহাদের সৎকার করা । দ্বিতীয় ভাল প্রকার পদার্থগুলির গুণের সহযোগিতা ও বিরোধিতার জ্ঞান দ্বারা শিল্পবিদ্যা প্রত্যক্ষ করা এবং তৃতীয় নিত্য বিদ্বান্দিগের সমাগম অথবা গুভগুণ, বিদ্যা, সুখ, ধর্ম ও সত্যের নিত্য দান করা ॥ ২ ॥

ভাবার্থঃ- মনুষ্যগণ স্বীয় বিদ্যা ও উত্তম ক্রিয়া দ্বারা যে যজ্ঞের সেবন করিয়া থাকে তাহা হইতে পবিত্রতার প্রকাশ, পৃথিবীর রাজ্য, বায়ুরূপী প্রাণতুল্য রাজনীতি, প্রতাপ, সকলের রক্ষা, ইহলোক ও পরলোকের সুখের বৃদ্ধি, পরস্পর কোমলতা পূর্বক ব্যবহার করা এবং কুটিলতা ত্যাগ ইত্যাদি শ্রেষ্ঠ গুণ উৎপন্ন হইয়া থাকে এইজন্য সকল মনুষ্যকে পরোপকার তথা স্বীয় সুখের জন্য বিদ্যা ও পুুরুষকার সহ প্রীতিপূর্বক যজ্ঞের অনুষ্ঠান নিত্য করা আবশ্যক ।


বসোঃ পবিত্রমিত্যস্য ঋষিঃ স এব । সবিতা দেবতা । ভুরিগ্জগতী ছন্দঃ । নিষাদঃ স্বরঃ ॥

বসোঃ॑ প॒বিত্র॑মসি শ॒তধা॑রং॒ বসোঃ॑ প॒বিত্র॑মসি স॒হস্র॑ধারম্ । 

দে॒বস্ত্বা॑ সবি॒তা পু॑নাতু॒ বসোঃ॑ প॒বিত্রে॑ণ শ॒তধা॑রেণ সু॒প্বা᳕ কাম॑ধুক্ষঃ ॥ ৩ ॥

পদার্থঃ- যে (বসোঃ) যজ্ঞ (শতধারম্) অসংখ্য বিশ্বের ধারণকারী ও (পবিত্রম্) শুদ্ধিকারী কর্ম এবং যে (বসোঃ) যজ্ঞ (সহস্রধারম্) অনেক প্রকারের ব্রহ্মাণ্ড ধারণকারী এবং (পবিত্রম্) শুদ্ধির নিমিত্ত সুখ প্রদাতা । (ত্বা) সেই যজ্ঞকে (দেবঃ) স্বয়ং প্রকাশস্বরূপ (সবিতা) বসু ইত্যাদি তেত্রিশ দেবতা সকলের উৎপন্নকারী পরমেশ্বর (পুনাতু) পবিত্র করুন । হে জগদীশ্বর ! আপনি আমাদিগের দ্বারা সেবিত (বসোঃ) যজ্ঞ, সেই (পবিত্রেণ) শুদ্ধির নিমিত্ত বেদ-বিজ্ঞান (শতধারেণ) বহু বিদ্যার ধারণকারিণী বেদ এবং (সুপ্বা) সম্যক্ প্রকার পবিত্রকারী যজ্ঞ দ্বারা আমাদিগকে পবিত্র করুন । হে বিদ্বান্ পুরুষ অথবা জিজ্ঞাসু মনুষ্য! তুমি (কাম্) বেদের শ্রেষ্ঠ বাণীর মধ্য হইতে কোন্ কোন্ বাণীর অভিপ্রায়কে (অধুক্ষঃ) স্বীয় মনে পূর্ণ করিতে অর্থাৎ জানিতে চাও ॥ ৩ ॥

ভাবার্থঃ- যে সব মনুষ্য পূর্বোক্ত যজ্ঞের সেবন করিয়া পবিত্র হয় তাঁহাদিগকেই জগদীশ্বর বহু জ্ঞান প্রদান করিয়া অনেক সুখ দিয়া থাকেন । যাঁহারা এমন ক্রিয়া করিয়া থাকেন অথবা পরোপকারী হয়েন তাঁহারাই সুখ প্রাপ্ত করিয়া থাকেন, আলস্যকারী ব্যক্তি কখনও নহে । এই মন্ত্রে (কামধুক্ষঃ) এই পদ দ্বারা বাণী সম্পর্কে প্রশ্ন করা হইয়াছে ।


সা বিশ্বায়ুরিত্যস্য ঋষিঃ স এব । বিষ্ণুর্দেবতা । অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ । গান্ধারঃ স্বরঃ ॥

সা বি॒শ্বায়ুঃ॒ সা বি॒শ্বক॑র্মা॒ সা বি॒শ্বধা॑য়াঃ ।

ইন্দ্র॑স্য ত্বা ভা॒গꣳ সোমে॒নাऽऽ ত॑নচ্মি॒ বিষ্ণো॑ হ॒ব্যꣳ র॑ক্ষ ॥ ৪ ॥

পদার্থঃ- হে (বিষ্ণো) ব্যাপক ঈশ্বর ! আপনি যে বাণী ধারণ করেন (সা) উহা (বিশ্বায়ুঃ) পূর্ণ আয়ু প্রদাত্রী (সা) উহা (বিশ্বকর্মা) দ্বারা সম্পূর্ণ ক্রিয়াকান্ড সিদ্ধ হয় এবং (সা) উহা (বিশ্বধায়াঃ) সব জগৎকে বিদ্যা ও গুণ দ্বারা ধারণ করে । পূর্ব মন্ত্রে যে প্রশ্ন করা হইয়াছে তাহার উত্তরে এখানে তিন প্রকার বাণী গ্রহণ করা উচিত । ইহা দ্বারা আমি (ইন্দ্রস্য) পরমেশ্বরের (ভাগম্) সেবনীয় যজ্ঞকে (সোমেন) বিদ্যা দ্বারা সিদ্ধকৃত রস অথবা আনন্দ দ্বারা (আ তনচ্মি) স্বীয় হৃদয়ে দৃঢ় করি তথা হে পরমেশ্বর ! (হব্যম্) পূর্বোক্ত যজ্ঞ সম্পর্কীয় নেওয়ার – দেওয়ার যোগ্য দ্রব্য বা বিজ্ঞানের (রক্ষ) নিরন্তর রক্ষা করুন ॥ ৪ 

ভাবার্থঃ- তিন প্রকার বাণী হইয়া থাকে অর্থাৎ প্রথম যাহা ব্রহ্মচর্য্যে পূর্ণ বিদ্যা পাঠ বা পূর্ণ আয়ু প্রাপ্ত হেতু সেবন করা হয় । দ্বিতীয় যাহা গৃহাশ্রমে অনেক ক্রিয়া বা প্রচেষ্টা দ্বারা সুখ প্রদানকারী বিস্তারপূর্বক প্রকাশ করা হয় এবং তৃতীয় যাহা এই সংসারে সব মনুষ্যদিগের শরীর ও আত্মার সুখবৃদ্ধি অথবা ঈশ্বরাদি পদার্থ সকলের বিজ্ঞান প্রদাতা বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস আশ্রমে বিদ্বান্দিগের দ্বারা উপদেশ দেওয়া হয় । এই তিন প্রকার বাণী ছাড়া কাহারও সব সুখ প্রাপ্ত হইতে পারে না কেননা ইহা দ্বারা পূর্বোক্ত যজ্ঞ তথা ব্যাপক ঈশ্বরের স্তুতি, প্রার্থনা এবং উপাসনা করা উচিত । ঈশ্বরের আজ্ঞা এই – যে নিয়ম দ্বারা কৃত যজ্ঞ সংসারে রক্ষার হেতু এবং প্রেম, সত্যভাব দ্বারা প্রার্থিত ঈশ্বর বিদ্বান্দিগের সর্বদা রক্ষা করেন তিনিই সকলের অধ্যক্ষ কিন্তু যাঁহারা ক্রিয়া-কুশল, ধার্মিক, পরোপকারী মনুষ্য আছেন তাঁহারাই ঈশ্বর ও ধর্ম জানিয়া মোক্ষ ও সম্যক্ ক্রিয়া সাধনগুলির দ্বারা ইহলোক ও পরলোকের সুখ প্রাপ্ত হইয়া থাকেন ॥ ৪ ॥

অগ্নে ব্রতপত ইত্যস্য ঋষিঃ স এব । অগ্নির্দেবতা । আর্চীত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ । ধৈবতঃ স্বরঃ ॥

অগ্নে॑ ব্রতপতে ব্র॒তং চ॑রিষ্যামি॒ তচ্ছ॑কেয়ং॒ তন্মে॑ রাধ্যতাম্ ।ই॒দম॒হমনৃ॑তাৎস॒ত্যমুপৈ॑মি ॥ ৫ ॥

পদার্থঃ- হে (ব্রতপতে) সত্যভাষণাদি ধর্ম পালনকারী এবং (অগ্নে) সত্য উপদেশকারী পরমেশ্বর! আমি (অনৃতাৎ) যাহা মিথ্যা হইতে পৃথক (সত্যম্) বেদবিদ্যা, প্রত্যক্ষাদি প্রমাণ, সৃষ্টিক্রম, বিদ্বান্দিগের সঙ্গ, শ্রেষ্ঠ বিচার তথা আত্মার শুদ্ধি ইত্যাদি প্রকারে যাহা নির্ভ্রম, সর্বহিত, তত্ত্ব অর্থাৎ সিদ্ধান্তের প্রকাশক হইতে সিদ্ধ হইয়াছে, সম্যক্ প্রকার পরীক্ষা কৃত (ব্রতম্) সত্য বলা, সত্য মানা এবং সত্য করা, তাহার অনুষ্ঠান অর্থাৎ নিয়ম দ্বারা গ্রহণ করার অথবা জানার এবং তাহার প্রাপ্তির ইচ্ছা করি, (মে) আমার (তৎ) সেই সত্য ব্রত কে আপনি (রাধ্যতাম্) সম্যক্ প্রকারে সিদ্ধ করুন যাহাতে আমি উক্ত সত্য ব্রতের নিয়ম পালন করিতে (শকেয়ম) সক্ষম হই এবং আমি (ইদম্) এই প্রত্যক্ষ সত্য ব্রতের আচরণের নিয়ম (চরিষ্যামি) পালন করিব ॥ ৫ ॥

ভাবার্থঃ- পরমেশ্বর সব মনুষ্যদিগকে নিয়ম পূর্বক সেবনীয় ধর্মের উপদেশ করিয়াছেন যাহা ন্যায়যুক্ত পরীক্ষা কৃত সত্য লক্ষণগুলি দ্বারা প্রসিদ্ধ এবং সকলের হিতকারী তথা ইহলোক অর্থাৎ সাংসারিক এবং পরলোক অর্থাৎ মোক্ষসুখের হেতু । এই সব আচরণ করিবার যোগ্য এবং তাহার বিরুদ্ধ যাকে অধর্ম বলা হয় তাহা কাহারও পক্ষে গ্রহণীয় কখনও হইতে পারে না কেননা সর্বত্র তাহার ত্যাগ করিতে হইবে । এই প্রকার আমাদিগেরও প্রতিজ্ঞা করা উচিত যে, হে পরমেশ্বর । আমরা বেদে আপনার দ্বারা প্রকাশিত সত্য ধর্মের গ্রহণ করি তথা হে পরমাত্মন্ । আপনি আমাদের উপর এমন কৃপা করুন যাহাতে আমরা উক্ত সত্য ধর্মের পালন করিয়া অর্থ, কামও মোক্ষরূপ ফলকে সুগমতা পূর্বক প্রাপ্ত হইতে পারি । যেমন সত্যব্রত পালন করায় আপনি ব্রতপতি, সেইরূপেই আমরাও আপনার কৃপা ও নিজস্ব পুরুষকার দ্বারা যথাশক্তি সত্যব্রতের পালক হই তথা ধর্ম করিবার ইচ্ছায় নিজের সৎকর্ম দ্বারা সব সুখ প্রাপ্ত হইয়া সর্ব প্রাণিসকলকে সুখ প্রদান করি – এমন ইচ্ছা সব মনুষ্যদিগকে করা উচিত ॥ শতপথ ব্রাহ্মণের মধ্যে মন্ত্রের ব্যাখ্যায় বলা হইয়াছে যে, মনুষ্যের আচরণ দুই প্রকারের হইয়া থাকে – এক সত্য, দ্বিতীয় মিথ্যা । অর্থাৎ যে পুরুষ বাণী, মন ও শরীর দ্বারা সত্য আচরণ করে তাহাকে দেব বলা হয় এবং যে মিথ্যার আচরণ করে তাহাকে অসুর, রাক্ষসাদি নামে অভিহিত করা হইয়া থাকে ॥ ৫ ॥


কস্ত্বেত্যস্য ঋষিঃ স এব । প্রজাপতির্দেবতা । আর্চীপংক্তিশ্ছন্দঃ । পঞ্চমঃ স্বরঃ ॥

কস্ত্বা॑ য়ুনক্তি॒ স ত্বা॑ য়ুনক্তি॒ কস্মৈ॑ ত্বা য়ুনক্তি॒ তস্মৈ॑ ত্বা য়ুনক্তি ।

কর্ম॑ণে বাং॒ বেষা॑য় বাম্ ॥ ৬ ॥

পদার্থঃ- (কঃ) কে (ত্বাম্) তোমাকে ভাল-ভাল ক্রিয়া সেবন করিবার জন্য (য়ুনক্তি) আজ্ঞা প্রদান করেন? (সঃ) সেই জগদীশ্বর (ত্বা) তোমাকে বিদ্যাদি শুভ গুণসকল প্রকাশ করিবার জন্য বিদ্বান্ অথবা বিদ্যার্থী হওয়ার জন্য (য়ুনক্তি) আজ্ঞা প্রদান করেন । (কস্মৈ) তিনি কোন্ কোন্ প্রয়োজন হেতু (ত্বা) আমাকে ও তোমাকে (য়ুনক্তি) যুক্ত করেন (তস্মৈ) পূর্বোক্ত সত্যব্রত আচরণ রূপ যজ্ঞ হেতু (ত্বা) ধর্ম প্রচার করিতে উদ্যোগী যে জন তাহাকে (য়ুনক্তি) আজ্ঞা প্রদান করেন । (সঃ) সেই ঈশ্বর (কর্ম্মণে) উক্ত শ্রেষ্ঠ কর্ম করিবার (বাম্) কর্ম করে যে জন এবং কর্ম করায় যে জন তাহাদেরকে নিযুক্ত করেন (বেষায়) শুভ গুণ ও বিদ্যাগুলিতে ব্যাপ্তি হেতু (বাম্) বিদ্যা পঠন ও পাঠনকারী তোমাদিগকে উপদেশ প্রদান করেন ॥ ৬ 

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে প্রশ্ন ও উত্তর সহ ঈশ্বর জীবদের জন্য উপদেশ প্রদান করেন । যখন কেউ কাহাকে জিজ্ঞাসা করে যে, আমাকে সত্য কর্মে কে প্রবৃত্ত করেন? ইহার উত্তর এমন দিবেন যে, প্রজাপতি অর্থাৎ পরমেশ্বরই পুরুষার্থ এবং ভাল ভাল ক্রিয়াগুলি করিতে তোমার জন্য বেদ দ্বারা উপদেশের প্রেরণা করিয়া থাকেন । সেইরূপ কোনও বিদ্যার্থী কোনও বিদ্বানের নিকট জিজ্ঞাসা করে যে, আমার আত্মায় অন্তর্য্যামী রূপ হইয়া সত্যের প্রকাশ কে করেন? তাহার উত্তর দিবেন যে, সর্বব্যাপক জগদীশ্বর । পুনরায় সে জিজ্ঞাসা করে যে, তিনি আমাদিগকে কী কী প্রয়োজন হেতু উপদেশ করেন এবং আজ্ঞা প্রদান করেন? তাহার উত্তর দিবেন যে, সুখ ও সুখস্বরূপ পরমেশ্বরের প্রাপ্তি তথা সত্য বিদ্যা ও ধর্ম প্রচারের জন্য । আমি ও আপনি উভয়কে কোন্ কোন্ কাজ করিবার জন্য সেই ঈশ্বর উপদেশ করিতেছেন? ইহার পরস্পর উত্তর দিবেন যে, যজ্ঞ করিবার জন্য । পুনরায় তিনি কোন্ কোন্ পদার্থ প্রাপ্তি হেতু আজ্ঞা প্রদান করেন, ইহার উত্তর দিবেন যে, সব বিদ্যার প্রাপ্তি এবং তাহার প্রচারের জন্য । মনুষ্যের দুটি প্রয়োজনে প্রবৃত্ত হওয়া উচিত অর্থাৎ প্রথম অত্যন্ত পুরুষার্থ এবং শরীরের আরোগ্যতা বলে চক্রবর্ত্তী রাজ্যলক্ষ্মী প্রাপ্ত করা এবং দ্বিতীয় সব বিদ্যাকে ভাল ভাবে পড়িয়া তাহার প্রচার করা কর্ত্তব্য । কোনও মনুষ্যের পুরুষার্থ ত্যাগ করিয়া আলস্যে কখনও থাকা উচিত নয় ॥ ৬ ॥


প্রত্যুষ্টমিত্যস্য ঋষিঃ স এব । য়জ্ঞো দেবতা । প্রাজাপত্যা জগতী ছন্দঃ । নিষাদঃ স্বরঃ ॥

প্রত্যু॑ষ্ট॒ꣳ রক্ষঃ॒ প্রত্যু॑ষ্টা॒ऽ অরা॑তয়ো॒ নিষ্ট॑প্ত॒ꣳ রক্ষো॒ নিষ্ট॑প্তা॒ऽ অরা॑তয়ঃ । উ॒র্ব᳕ন্তরি॑ক্ষ॒মন্বে॑মি ॥ ৭ ॥

পদার্থঃ- আমার উচিত যে, পুরুষকার সহ (রক্ষঃ) দুষ্ট গুণ এবং দুষ্ট স্বভাবযুক্ত মনুষ্যকে (প্রত্যুষ্টম্) নিশ্চয়পূর্বক নির্মূল করি তথা (অরাতয়ঃ) যে রাতি অর্থাৎ দানাদি ধর্মরহিত দয়াহীন দুষ্ট শত্রুগুলি আছে তাহাদের (প্রত্যুষ্টাঃ) প্রত্যক্ষ নির্মূল (রক্ষঃ) অথবা দুষ্ট স্বভাব দুষ্টগুণ বিদ্যাবিরোধী স্বার্থবান্ মনুষ্য এবং (নিষ্টপ্তম্, অরাতয়ঃ) ছলযুক্ত হইয়া বিদ্যা গ্রহণ অথবা দানরহিত দুষ্ট প্রাণীদিগকে (নিষ্টপ্তাঃ) নিরন্তর সন্তাপিত করি । এই প্রকার করিয়া (অন্তরিক্ষম্) সুখসিদ্ধ করিবার উত্তম স্থান এবং অপার সুখ (অন্বেমি) প্রাপ্ত হই ।

ভাবার্থঃ- ঈশ্বর আজ্ঞা প্রদান করেন যে, সকল মনুষ্যের দুষ্ট স্বভাব পরিত্যাগ করিয়া বিদ্যা ও ধর্মের উপদেশ দ্বারা অন্যকেও দুষ্টতাদি অধর্মের ব্যবহার হইতে পৃথক করা কর্ত্তব্য এবং তাহাদিগকে বহু প্রকার জ্ঞান ও সুখ প্রদান করিয়া সব মনুষ্যাদি প্রাণিদিগকে বিদ্যা, ধর্ম, পুরুষকার এবং নানা প্রকার সুখের দ্বারা যুক্ত করিতে থাকিবে ॥ ৭ ॥

বিষয়ঃ অথ সর্ববিদ্যাধারকেশ্বরো বিদ্যাসাধনীভূতো ভৌতিকোऽগ্নিশ্চোপদিশ্যতে ॥

ধূরসীত্যস্য ঋষিঃ স এব । অগ্নির্দেবতা । (নিচৃদ্) অতিজগতী ছন্দঃ । নিষাদঃ স্বরঃ ॥

ধূর॑সি॒ ধূর্ব॒ ধূর্ব॑ন্তং॒ ধূর্ব॒ তং য়ো᳕ऽস্মান্ধূর্ব॑তি॒ তং ধূ॑র্ব॒ য়ং ব॒য়ং ধূর্বা॑মঃ । 

দে॒বানা॑মসি॒ বহ্নি॑তম॒ꣳ সস্নি॑তমং॒ পপ্রি॑তমং॒ জুষ্ট॑তমং দেব॒হূত॑মম্ ॥ ৮ ॥


পদার্থঃ- হে পরমেশ্বর ! আপনি (ধূঃ) সব দোষের নাশক ও জগতের রক্ষক । এই জন্য আমরা এই বুদ্ধি দ্বারা (দেবানাম্) বিদ্বান্দিগকে বিদ্যা, মোক্ষ ও সুখে (বহ্নিতমম্) যথাযোগ্যভাবে উপস্থিত করিবার (সস্নিতমম্) অতিশয় করিয়া শুদ্ধ করিবার (পপ্রিতমম্) সর্ব প্রকার বিদ্যা এবং আনন্দ দ্বারা বিশ্বকে পূর্ণ করিবার (জুষ্টতমম্) ধার্মিক ভক্তদিগের সেবা করিবার যোগ্য এবং (দেবহূতমম্) বিদ্বান্দিগের স্তুতি করিবার যোগ্য আপনাকে নিত্য উপাসনা করি । (য়ঃ) যে কেহ দ্বেষী, ছলনাকারী, কপটাচারী, পাপী, কামক্রোধাদিযুক্ত মনুষ্য (অস্মান্) ধার্মিক ও সবাইকে সুখপূর্বক যুক্তকারী আমাদিগকে (ধূর্বতি) দুঃখ দান করে এবং (য়ম্) যে পাপী মনুষ্যকে (বয়ম্) আমরা (ধূর্বামঃ) দুঃখ দিয়া থাকি (তম্) তাহাকে আপনি (ধূর্ব) শিক্ষা প্রদান করুন তথা যে সকলের সঙ্গে দ্রোহ করে অথবা সকলকে দুঃখ দেয় তাহাকেও আপনি সর্বদা (ধূর্ব) তাড়না করুন । হে শিল্পবিদ্যা জানিতে ইচ্ছুক মনুষ্য! যে পার্থিব অগ্নি (ধূঃ) সকল পদার্থের ছেদক এবং অন্ধকার-নাশক এবং যাহা শিল্প চাতুর্য্যের দ্বারা যান-বাহনাদিতে বিদ্বান্দিগকে (বহ্নিতমম্) সুখ পৌঁছাইবার (সস্নিতমম্) শুদ্ধি করিবার হেতু (পপ্রিতমম্) শিল্পবিদ্যার মুখ্য সাধন (জুষ্টতমম্) কারিগরগণ যাহার সেবন করিয়া থাকে, এবং যাহা (দেবহূতমম্) বিদ্বান্দিগের স্তুতি করিবার যোগ্য অগ্নি, তাহাকে (বয়ম্) আমরা (ধূর্বামঃ) চালনা করি এবং যাহার সেবন যুক্তি পূর্বক না করা হইলে তাহা (অস্মান্) আমাদের পক্ষে (ধূর্বতি) পীড়ার কারণ হয় । (তম্) সেই (ধূর্বন্তম্) পীড়া প্রদানকারী অগ্নিকে (ধূর্ব) যান-বাহনাদির সঙ্গে যুক্ত কর এবং হে বীর পুরুষ! তুমি (য়ঃ) যে দুষ্ট শত্রু (অস্মান্) আমাদিগকে (ধূর্বতি) দুঃখ দান করে (তম্) তাহাকে (ধূর্ব) ধ্বংস কর এবং যে কেহ চোর ইত্যাদি আছে তাহারও (ধূর্ব) নাশ কর ।

ভাবার্থঃ- যে ঈশ্বর সর্ব জগতকে ধারণ করিয়া আছেন, তিনি পাপী দুষ্ট জীবদিগকে তাহাদের কৃত পাপানুযায়ী দন্ড প্রদান করিয়া দুঃখযুক্ত এবং ধর্মাত্মা পুরুষদিগকে উত্তম কর্মানুসার ফল প্রদান করিয়া তাহাদিগের রক্ষা করিয়া থাকেন তিনিই সর্ব সুখ প্রাপ্তি, আত্মার শুদ্ধি করাইবার এবং পূর্ণ বিদ্যা প্রদাতা বিদ্বান্দিগের স্তুতি করিবার যোগ্য এবং প্রীতি ও ইষ্ট বুদ্ধি দ্বারা সেবা করিবার যোগ্য, অন্য কেহ নহে । এবং এই প্রত্যক্ষ পার্থিব অগ্নিও সম্পূর্ণ শিল্পবিদ্যার ক্রিয়াগুলি সিদ্ধ করিতে তথা তাহাদের মুখ্য সাধন এবং পৃথিবী ইত্যাদি পদার্থ সকলের মধ্যে নিজ প্রকাশ স্থাপন করিতে অথবা তাহাদের প্রাপ্তি দ্বারা শ্রেষ্ঠ । কেননা যাহার দ্বারা সিদ্ধকৃত আগ্নেয়াদি উত্তম শস্ত্রাস্ত্রবিদ্যা দ্বারা শত্রুদিগের পরাজয় হয় ইহার ফলে ইহাও বিদ্যার যুক্তি দ্বারা হোম ও বিমান ইত্যাদির সিদ্ধ করিবার জন্য সেবা করিবার যোগ্য ॥ ৮ ॥


অহ্রুতমসীত্যস্য ঋষিঃ স এব । বিষ্ণুর্দেবতা । নিচৃৎত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ । ধৈবতঃ স্বরঃ ।

অহ্রু॑তমসি হবি॒র্ধানং॒ দৃꣳহ॑স্ব॒ মা হ্বা॒র্মা তে॑ য়॒জ্ঞপ॑তির্হ্বার্ষীৎ ।

বিষ্ণু॑স্ত্বা ক্রমতামু॒রু বাতা॒য়াপ॑হত॒ꣳ রক্ষো॒ য়চ্ছ॑ন্তাং॒ পঞ্চ॑ ॥ ঌ ॥

পদার্থঃ- হে ঋত্বিগ্ মনুষ্য ! তোমাকে অগ্নি হইতে বৃদ্ধি প্রাপ্ত (অহ্রুতম্) কুটিলতা রহিত (হবির্ধানম্) হোমের যোগ্য পদার্থকে ধারণ করিতে হইবে । তাহাকে (দৃংহস্ব) বৃদ্ধি কর কিন্তু কোনও সময় (মা হ্বাঃ) উহা ত্যাগ করিও না । ইহা (তে) তোমার (য়জ্ঞপতি) যজমান ও সেই যজ্ঞানুষ্ঠানকে (মা) (হ্বার্ষীৎ) পরিত্যাগ না করে । এই প্রকার তোমরা (পঞ্চ) প্রথম উপর দিকে চেষ্টিত হওয়া, দ্বিতীয় নিম্নদিকে, তৃতীয় চেষ্টা দ্বারা নিজ অঙ্গ-সকলের সংকোচন করা, চতুর্থ তাহাদিগের বিস্তার করা এবং পঞ্চম চলন-বলন ইত্যাদি পাঁচ প্রকার কর্ম দ্বারা হবন যোগ্য যে দ্রব্য উহাকে অগ্নিতে (য়চ্ছন্তাম্) হবন কর । (ত্বা) সেই যে হবন কৃত দ্রব্য তাহাকে (বিষ্ণুঃ) ব্যাপনশীল সূর্য্য (অপহতম্, রক্ষঃ) দুর্গন্ধাদি দোষগুলির নাশ করিয়া (উরুবাতায়) অত্যন্ত বায়ুশুদ্ধি অথবা সুখবৃদ্ধি হেতু (ক্রমতাম্) চালনা করে ॥ ঌ ॥

ভাবার্থঃ- যখন মনুষ্য পরস্পর প্রীতি সহ কুটিলতা ত্যাগ করিয়া শিক্ষা প্রদানকারীর শিষ্য হইয়া বিশেষ জ্ঞান ও ক্রিয়া দ্বারা ভৌতিক অগ্নির বিদ্যা জ্ঞাত হইয়া তাহার অনুষ্ঠান করে, তখনই শিল্পবিদ্যার সিদ্ধি দ্বারা সকল শত্রু দারিদ্র্য ও দুঃখ হইতে মুক্ত হইয়া সর্ব সুখ প্রাপ্ত করে । এই প্রকার বিষ্ণু অর্থাৎ ব্যাপক পরমেশ্বর সর্ব মনুষ্যদিগকে আজ্ঞাও প্রদান করিয়াছেন, যাহার পালন করা সকলের কর্তব্য ॥ ঌ ॥


দেবস্য ত্বেত্যস্য ঋষিঃ স এব । সবিতা দেবতা । ভুরিগ্বৃহতী ছন্দঃ । মধ্যমঃ স্বরঃ ॥

দে॒বস্য॑ ত্বা সবি॒তুঃ প্র॑স॒বে᳕ऽশ্বিনো॑র্বা॒হুভ্যাং॑ পূ॒ষ্ণো হস্তা॑ভ্যাম্ ।

অ॒গ্নয়ে॒ জুষ্টং॑ গৃহ্ণাম্য॒গ্নীষোমা॑ভ্যাং॒ জুষ্টং॑ গৃহ্ণামি ॥ ১০ ॥

পদার্থঃ- আমি (সবিতুঃ) সকল জগতের উৎপত্তিকর্ত্তা, সকল ঐশ্বর্য্যপ্রদাতা তথা (দেবস্য) সংসার প্রকাশক এবং সর্ব সুখদায়ক পরমেশ্বর । আমি (প্রসবে) উৎপন্ন কৃত এই সংসারে (অশ্বিনোঃ) সূর্য্য ও চন্দ্রের (বাহুভ্যাম্) বল ও বীর্য্য দ্বারা তথা (পুষ্ণঃ) পুষ্টিকারক প্রাণের (হস্তাভ্যাম্) গ্রহণ ও ত্যাগ দ্বারা (অগ্রয়ে) অগ্নিবিদ্যা সিদ্ধ করিবার জন্য (জুষ্টম্) বিদ্যা পাঠকারী যে কর্মের সেবা করিয়া থাকে (ত্বা) উহাকে (গৃহ্নামি) স্বীকার করি । এই প্রকার (অগ্নীষোমাভ্যাম্) অগ্নি ও জলের বিদ্যা সংগ্রহ করিয়া (জুষ্টম্) বিদ্বান্গণ যে কর্মের আকাঙক্ষা করিয়াছেন তাহারই পরিণামকে (গৃহ্নামি) স্বীকার করিতেছি ॥ ১০ ॥

ভাবার্থঃ- বিদ্বান্ মনুষ্যদিগের কর্ত্তব্য যে, বিদ্বান্দিগের সমাগম অথবা সম্যক্ প্রকার স্বীয় পুরুষার্থ দ্বারা পরমেশ্বরের উৎপন্ন কৃত প্রত্যক্ষ সৃষ্টি অর্থাৎ সংসারে সকল বিদ্যার সিদ্ধি হেতু সূর্য্য, চন্দ্র, অগ্নি এবং জলাদি পদার্থ সমূহের প্রকাশ দ্বারা সকলের বল, বীর্য্যের বৃদ্ধির অর্থ বহু বিদ্যা পাঠ করিয়া তাহার প্রচার করা উচিত অর্থাৎ যেমন জগদীশ্বর সকল পদার্থের উৎপত্তি এবং তাঁহার ধারণা মতে সকলের উপকার করিয়াছেন সেইরূপ আমাদিগেরও নিত্য প্রচেষ্টা করা উচিত ॥ ১০ ॥


ভূতায় ত্বেতি ঋষিঃ স এব । অগ্নির্দেবতা । স্বরাড্ জগতী ছন্দঃ । নিষাদঃ স্বরঃ ॥

ভূ॒তায়॑ ত্বা॒ নারা॑তয়ে॒ স্ব᳖রভি॒বিখ্যে॑ষং॒ দৃꣳহ॑ন্তাং॒ দুর্য়াঃ॑ পৃথি॒ব্যামু॒র্ব᳕ন্তরি॑ক্ষ॒মন্বে॑মি । পৃ॒থি॒ব্যাস্ত্বা॒ নাভৌ॑ সাদয়া॒ম্যদি॑ত্যাऽ উ॒পস্থেऽগ্নে॑ হ॒ব্যꣳ র॑ক্ষ ॥ ১১ ॥

পদার্থঃ- আমি যে যজ্ঞকে (ভূতায়) প্রাণিদিগের সুখ তথা (অরাতয়ে) দারিদ্র্যাদি দোষগুলির নাশ হেতু (অদিত্যা) বেদবাণী বা বিজ্ঞান প্রকাশের (উপস্থে) গুণগুলিতে (সাদয়ামি) স্থাপনা করি এবং (ত্বা) তাহাকে কখনও (ন) ত্যাগ করি না । হে বিদ্বান্গণ! তোমাদিগের উচিত (পৃথিব্যাম্) বিস্তৃত ভূমিতে (দুর্য়্যাঃ) নিজ গৃহ (দৃং হন্তাম্) বৃদ্ধি করা । আমি (পৃথিব্যাঃ) (নাভৌ) পৃথিবীর মধ্যে যে সব গৃহগুলিতে (স্বঃ) জলাদি সুখজনক পদার্থগুলিকে (অভিবিখ্যেষম্) সর্ব প্রকারে দেখি এবং (উর্বন্তরিক্ষম্) উক্ত পৃথিবীতে অনেক খানি অবকাশ দিয়া সুখপূর্বক নিবাস করিবার যোগ্য স্থানের রচনা করিয়া র(ত্বা) আপনাকে ল (অণ্বেসি) প্রাপ্ত হইয়া থাকি । হে (অগ্নে) জগদীশ্বর । আপনি (হব্যম্) আমাদিগের আদান-প্রদান করিবার যোগ্য পদার্থগুলির (রক্ষ) সর্বদা রক্ষা করুন । ইহা প্রথম পক্ষ হইল । এখন দ্বিতীয় পক্ষ – হে অগ্নে পরমেশ্বর । আমি (ভূতায়) সাংসারিক জীবদিগের সুখ তথা (অবাতয়ে) দারিদ্র্যের বিনাশ এবং দানাদি ধর্ম করিবার জন্য (পৃথিব্যাঃ) পৃথিবীর (নাভৌ) মধ্যে (সকলের) স্বামী ও উপাস্য জানিয়া (স্বঃ) সুখস্বরূপ (ত্বা) আপনাকে (অভিবিখ্যেষম্) প্রকাশ করি তথা আপনার কৃপায় আমার গৃহাদি পদার্থ এবং উহাতে নিবাসকারী মনুষ্যাদি প্রাণী (দৃংহন্তাম্) বৃদ্ধি প্রাপ্ত হউক এবং আমি (পৃথিব্যাম্) বিস্তৃত ভূমিতে (উরু) বহু প্রকার (অন্তরিক্ষম্) অবকাশযুক্ত স্থানে নিবাস হেতু (অদিত্যা উপস্থে) সর্বত্র ব্যাপক আপনার সমীপে সর্বদা (অণ্বেসি) উপস্থিত হইয়া থাকি । কখনও (ত্বা) আপনাকে (ন সাদয়ামি) ত্যাগ করি না । হে জগদীশ্বর ! আপনি আমার (হব্যম্) অর্থাৎ উত্তম পদার্থের সর্বদা (রক্ষ) রক্ষা করুন । ইহা দ্বিতীয় পক্ষ হইল । এবং তৃতীয় অধিকন্তু বলি–আমি শিল্পবিদ্যা সম্পর্কীয় যজ্ঞ করিয়া (ভূতায়) সাংসারিক প্রাণিদিগের সুখ এবং (অরাতয়ে) দারিদ্যাদি দোষগুলির বিনাশ অর্থাৎ সুখপূর্বক দানাদি ধর্ম করিবার ইচ্ছায় (পৃথিব্যা নাভৌ) এই পৃথিবীতে শিল্পবিদ্যার সিদ্ধি হেতু (সাদয়ামি) স্থাপন করি কেননা উক্ত শিল্পবিদ্যা ইহা দ্বারা সিদ্ধ হয় (অদিত্যাঃ) (উপস্থে) তথা অন্তরিক্ষে স্থিত মেঘমন্ডলে (হব্যম্) হোম দ্বারা উপস্থিত উত্তম-উত্তম পদার্থগুলির (রক্ষ) রক্ষা কারী, এইজন্য এই অগ্নিকে (পৃথিব্যাম্) পৃথিবীতে স্থাপন করিয়া (উর্বন্তরিক্ষম্) অত্যন্ত অবকাশযুক্ত স্থান এবং বিবিধ প্রকারের সুখ (অণ্বেসি) প্রাপ্ত হই অথবা এই প্রয়োজন হেতু (ত্বা) এই অগ্নিকে পৃথিবী মধ্যে স্থাপন করি । এই প্রকার শ্রেষ্ঠ কর্ম করিতে থাকিয়া (স্বঃ) বহু সুখকে (অভি বিখ্যেষম্) দেখি তথা আমার (দুর্য়্যাঃ) গৃহ এবং তাহাতে নিবাসকারী মনুষ্য (দৃ হন্তাম্) শুভ গুণ ও সুখপূর্বক বৃদ্ধি প্রাপ্ত হউক এইজন্য এই ভৌতিকাগ্নির ত্যাগ আমি (ন) কখনও করি না ॥ ইহা তৃতীয় অর্থ হইল ॥

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে শ্লেষালঙ্কার ব্যবহৃত হইয়াছে । ঈশ্বর আজ্ঞা প্রদান করিতেছেন যে, হে মনুষ্যগণ ! আমি তোমাদিগের রক্ষা এইজন্য করি যে, তোমরা পৃথিবীর উপর সর্বপ্রাণিদিগকে সুখ পৌঁছাইতে থাক তথা তোমাদিগের কর্ত্তব্য, বেদবিদ্যা ধর্মের অনুষ্ঠান এবং স্বীয় পুরুষকার দ্বারা বিচিত্র প্রকারের সুখ সর্বদা বৃদ্ধি করা । তোমরা সব ঋতুতে সুখ প্রদান করিবার যোগ্য বহু অবকাশযুক্ত সুন্দর গৃহ নির্মাণ করিয়া সর্বদা সুখ সেবন কর এবং আমার সৃষ্টিতে যত গুলি পদার্থ বিদ্যমান তাহা হইতে ভাল-ভাল গুণগুলি অণ্বেষণ করিয়া অথবা বহু বিদ্যাসকল প্রকাশ করিয়া উক্ত গুণগুলি সংসারে সম্যক্ প্রকারে প্রচার করিতে থাক যাহাতে সকল প্রাণিদিগের উত্তম সুখ বর্ধিত হইতে থাকে এবং তোমাদিগেরও উচিত যে, আমাকে সর্বত্র ব্যাপ্ত, সকলের সাক্ষী, সকলের মিত্র সর্ব সুখের বৃদ্ধিকারী, উপাসনার যোগ্য এবং সর্বশক্তিমান মানিয়া সকলের উপকার, বিবিধ বিদ্যার বৃদ্ধি, ধর্মে প্রবৃত্তি, অধর্মে নিবৃত্তি, ক্রিয়া-কুশলতার সিদ্ধি এবং যজ্ঞক্রিয়া অনুষ্ঠানাদি করিতে সর্বদা প্রবৃত্ত থাক । এই মন্ত্রে মহীধর ভ্রান্তিপূর্বক (অভিবিখ্যেষম্) এই পদ (খ্যা প্রকথনে) এই ধাতুর দর্শন অর্থ করিয়াছেন । ইহা ধাতুর অর্থের বিরুদ্ধ হওয়ায় অশুদ্ধ ॥ ১১ ॥

পবিত্রে স্থ ইত্যস্য ঋষিঃ স এব । অপ্সবিতারৌ দেবতে । ভুরিগত্যষ্টিঃ ছন্দঃ ।
গান্ধারঃ স্বরঃ ॥


প॒বিত্রে॑ স্থো বৈষ্ণ॒ব্যৌ᳖ সবি॒তুর্বঃ॑ প্রস॒ব উৎপু॑না॒ম্যচ্ছি॑দ্রেণ প॒বিত্রে॑ণ॒ সূর্য়॑স্য র॒শ্মিভিঃ॑ । দেবী॑রাপোऽ অগ্রেগুবোऽ অগ্রেপু॒বোऽগ্র॑ऽ ই॒মম॒দ্য য়॒জ্ঞং ন॑য়॒তাগ্রে॑ য়॒জ্ঞপ॑তিꣳ সু॒ধাতুং॑ য়॒জ্ঞপ॑তিং দেব॒য়ুব॑ম্ ॥ ১২ ॥


পদার্থঃ- হে বিদ্বান্গণ ! তোমরা যেমন (সবিতুঃ) পরমেশ্বরের (প্রসবে) উৎপন্নকৃত এই সংসারে (অচ্ছিদ্রেণ) নির্দোষ এবং (পবিত্রেণ) পবিত্র করিবার হেতু যে (সূর্য়্যস্য) সূর্য্যের (রশ্মিভিঃ) কিরণ, উহাদিগের দ্বারা (বৈষ্ণবৌ) যজ্ঞসম্বন্ধী প্রাণ ও অপানের গতি (পবিত্রে) পদার্থগুলিকে পবিত্র করিবার হেতু (স্থঃ) হও এবং যেমন উক্ত সূর্য্য কিরণ দ্বারা (অগ্রগুবঃ) ভবিষ্যতে সমুদ্র বা অন্তরিক্ষে চলিতে থাকিবে, (অগ্রেপুবঃ) প্রথম পৃথিবীতে স্থাপিত সোম ওষধির সেবন করা তথা (দেবীঃ) দিব্যগুণযুক্ত (বঃ) সেই (আপঃ) জল পবিত্র হউক । সেইরূপ (নয়ত) পবিত্র পদার্থের হোম অগ্নিতে কর সেইরূপ আমিও (অদ্য) আজকার দিন (ইমম্) এই (য়জ্ঞম্) পূর্বোক্ত ক্রিয়াসম্পর্কীয় যজ্ঞ প্রাপ্ত করিয়া (অগ্রে) যাহা প্রথম (সুধাতুম্) শ্রেষ্ঠ মন ইত্যাদি ইন্দ্রিয় এবং সুবর্ণাদি ধনযুক্ত (য়জ্ঞপতিম্) যজ্ঞের নিয়মানুযায়ী পালক তথা (দেবয়ুবম্) বিদ্বান্ এবং শ্রেষ্ঠ গুণ প্রাপ্ত হওয়ার অথবা উহাদিগের প্রাপ্ত করিবার (য়জ্ঞপতিম্) যজ্ঞের ইচ্ছুক মনুষ্য তাহাকে (উৎপুনামি) পবিত্র করি ॥ ১২ ॥

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে লুপ্তোপমালঙ্কার ব্যবহৃত হইয়াছে । যে সব পদার্থ সংযোগ হইতে বিকার প্রাপ্ত হয় তাহারা অগ্নির নিমিত্ত অতিসূক্ষ্ম পরমাণুরূপ হইয়া বায়ুর মধ্যে স্থিত থাকে এবং কিছু শুদ্ধও হইয়া যায় কিন্তু যেমন যজ্ঞানুষ্ঠান দ্বারা বায়ু ও বৃষ্টি জলের উত্তম শুদ্ধি ও পুষ্টি হইয়া থাকে সেইরূপ অন্য উপায় দ্বারা কখনও হইতে পারে না । সুতরাং বিদ্বান্দিগের উচিত যে, হোমক্রিয়া এবং বায়ু, অগ্নি, জলাদি পদার্থ অথবা শিল্পবিদ্যা দ্বারা ভাল ভাল যান-বাহনাদি রচনা করিয়া বহুবিধভাবে লাভান্বিত হউন । অর্থাৎ স্বীয় মনোকামনা সিদ্ধি করিয়া অপরের কামনাও সিদ্ধি করুন । যে জল এই পৃথিবী হইতে অন্তরিক্ষে উত্তোলিত হইয়া সেখান হইতে ফিরিয়া আসিয়া পুনরায় পৃথিবী ইত্যাদি পদার্থকে প্রাপ্ত হইয়া থাকে তাহারা প্রথম এবং যে সব জল মেঘে বাস করে তাহারা দ্বিতীয় নামে অভিহিত হয় । এইরকম শতপথ ব্রাহ্মণে মেঘের বৃত্র তথা সূর্য্যের ইন্দ্র নাম দ্বারা বর্ণন করিয়া যুদ্ধরূপী কাহিনীর প্রকাশ দ্বারা মেঘবিদ্যা প্রদর্শন করা হইযাছে ॥ ১২ ॥


য়ুষ্মা ইন্দ্রোऽবৃণীতেত্যস্য ঋষিঃ পূর্বোক্তঃ । ইন্দ্রো দেবতা । নিচৃদুষ্ণিক্ ছন্দঃ ।
ঋষভঃ স্বরঃ ॥ অগ্নয়ে ত্বেত্যস্য ঋষিঃ স এব । অগ্নির্দেবতা । ভুরিগার্চী গায়ত্রী ছন্দঃ ।
ষড্জঃ স্বরঃ ॥ দৈব্যায় কর্ম্মণ ইত্যস্য ঋষিঃ স এব । য়জ্ঞো দেবতা । ভুরিগুষ্ণিক্ ছন্দঃ ।
ঋষভঃ স্বরঃ ॥

ऋषिः - परमेष्ठी प्रजापतिर्ऋषिः देवता - इन्द्रो देवता । अग्निः यज्ञो देवता छन्दः - निचृत् उष्णिक्,भूरिक् आर्ची गायत्री,भुरिक् उष्णिक्, स्वरः - ऋषभः

য়ু॒ষ্মাऽ ইন্দ্রো॑ऽবৃণীত বৃত্র॒তূর্য়ে॑ য়ূ॒য়মিন্দ্র॑মবৃণীধ্বং বৃত্র॒তূর্য়ে॒ প্রোক্ষি॑তা স্থ । অ॒গ্নয়ে॑ ত্বা॒ জুষ্টং॒ প্রোক্ষা॑ম্য॒গ্নীষোমা॑ভ্যাং ত্বা॒ জুষ্টং॒ প্রোক্ষা॑মি । দৈব্যা॑য়॒ কর্ম॑ণে শুন্ধধ্বং দেবয়॒জ্যায়ৈ॒ য়দ্বোऽশু॑দ্ধাঃ পরাজ॒ঘ্নুরি॒দং ব॒স্তচ্ছু॑ন্ধামি ॥ ১৩ ॥

পদার্থঃ- এই (ইন্দ্রঃ) সূর্য্যলোক (বৃত্রতূর্য়্যে) মেঘের বধের জন্য (য়ুষ্মাঃ) পূর্বোক্ত জলকে (অঘৃণীত) স্বীকার করে যেমন জল (ইন্দ্রম্) বায়ুকে (অবৃণীধ্বম্) স্বীকার করে সেইরূপই (য়ূয়ম্) হে মনুষ্যগণ । তোমরা সেই সব জল, ওষধি, রসকে শুদ্ধ করিবার জন্য (বৃত্রতূর্য়্যে) মেঘের শীঘ্রবেগ (প্রোক্ষিতাঃ) সাংসারিক পদার্থগুলি সিঞ্চনকারী জলকে (অবৃণীধ্বম্) স্বীকার কর এবং যেমন সেই জল (স্থ) শুদ্ধ হইয়া থাকে সেইরূপ তোমরাও শুদ্ধ হও । এইজন্য আমি যজ্ঞের অনুষ্ঠানকারী (দৈব্যায়) সকলকে শুদ্ধকারী (কর্মণে) উৎক্ষেপণ = উৎক্ষেপ করা, অবক্ষেপণ নিম্নে ছুঁড়িয়া ফেলা, আকুঞ্চন = সঙ্কুচিত করা, প্রসারণ = বিস্তার করা, গমন = চলা ইত্যাদি পাঁচ প্রকারের কর্ম, উহাদিগের এবং (দেবয়জ্যায়ৈ) বিদ্বান্ বা শ্রেষ্ঠ গুণ সমূহের দিব্য ক্রিয়া হেতু তথা (অগ্নয়ে) ভৌতিক অগ্নি হইতে সুখ হেতু (জুষ্টম্) ভাল ক্রিয়াগুলির দ্বারা সেবন করিবার যোগ্য (ত্বা) সেই যজ্ঞ (প্রোক্ষামি) করি এবং (অগ্নিষোমাভ্যাম্) অগ্নি ও সোম হইতে বর্ষার নিমিত্ত = জুষ্টম্) প্রীতিদায়ক এবং প্রীতিপূর্বক সেবনীয় (ত্বা) উক্ত যজ্ঞকে (প্রোক্ষামি) মেঘমন্ডলে পৌঁছাই । এই প্রকার যজ্ঞ দ্বারা শুদ্ধিকৃত জল (শুন্ধধ্বম্) সম্যক্ প্রকার শুদ্ধ হইয়া থাকে । (য়ৎ) যে কারণে যজ্ঞের শুদ্ধি দ্বারা (বঃ) পূর্বোক্ত জলের অশুদ্ধি ইত্যাদি দোষের (পরাজঘ্নুঃ) নিবৃত্তি হয় (তৎ) সেই জলের শুদ্ধিকে আমি (শুন্ধামি) ভাল প্রকার শুদ্ধ করি । ইহা এই মন্ত্রের প্রথম অর্থ ॥ হে যজ্ঞকারী মনুষ্যগণ! (য়ৎ) যে কারণে (ইন্দ্রঃ) সূর্য্যলোক (বূত্রতূর্য়্যে) মেঘের বধের নিমিত্ত (য়ুষ্মাঃ) পূর্বোক্ত জল এবং (ইন্দ্রম্) পবনকে (অবৃণীত) স্বীকার করি তথা যে কারণে (বৃত্রতূর্য়্যে) মেঘের শীঘ্রতা নিমিত্ত (য়ুষ্মাঃ) পূর্বোক্ত জলকে (প্রোক্ষিতাঃ) পদার্থ সিঞ্চনকারী (স্থ) করিয়াছেন, ইহাতে (য়ূয়ম্) তোমরা (ত্বা) উক্ত যজ্ঞকে সর্বদা স্বীকার করিয়া (নয়ত) সিদ্ধিকে প্রাপ্ত কর । এই প্রকার আমরা সবাই (দৈব্যায়) শ্রেষ্ঠ কর্ম বা (দেবয়জ্যায়ৈ) বিদ্বান্ এবং দিব্যগুণের শ্রেষ্ঠ ক্রিয়াগুলির তথা (অগ্নয়ে) পরমেশ্বরের প্রাপ্তি হেতু (জুষ্টম্) প্রীতিকর যজ্ঞকে (প্রোক্ষামি) সেবন করি তথা (অগ্নিষোমাভ্যাম্) অগ্নি ও সোম হইতে প্রকাশিত হওয়ার (ত্বা) উক্ত যজ্ঞকে (প্রোক্ষামি) মেঘমন্ডলে পৌঁছাই । হে মনুষ্যগণ ! এই রূপ করিতে থাকিয়া তোমরা সব পদার্থ বা মনুষ্যদিগকে (শুন্ধধ্বম্) শুদ্ধ কর (য়ৎ) এবং যদ্দ্বারা (বঃ) তোমাদিগের অশুদ্ধি ইত্যাদি দোষ সেগুলি সর্বদা (পরাজঘ্নুঃ) নিবৃত্ত হইতে থাকে । সেইরূপ আমি বেদ প্রকাশক তোমাদিগের শোধন অর্থাৎ শুদ্ধি প্রকার (শুন্ধামি) ভাল মত বৃদ্ধি করিতে থাকি ।


ভাবার্থঃ- (এই মন্ত্রে লুপ্তোপমালঙ্কার আছে) পরমেশ্বর অগ্নি ও সূর্য্যকে এইজন্য রচনা করিয়াছেন যে, উহারা সকল পদার্থ গুলিতে প্রবেশ করিয়া উহাদের রস ও জল ছিন্ন-ভিন্ন করিয়া দেয় যদ্দ্বারা উহারা বায়ুমণ্ডলে যাইয়া পুনরায় সেখান হইতে পৃথিবীর উপর আসিয়া সকলকে সুখী ও শুদ্ধ করে । এইজন্য মনুষ্যকে উত্তম সুখ প্রাপ্তি হেতু অগ্নিতে সুগন্ধিত পদার্থে হোম দ্বারা বায়ু ও বৃষ্টি জলের শুদ্ধি দ্বারা শ্রেষ্ঠ সুখ বৃদ্ধি হেতু প্রীতিপূর্বক নিত্য যজ্ঞ করা উচিত যাহাতে এই সংসারের সকল রোগাদি দোষ নষ্ট হইয়া তাহাতে শুদ্ধ গুণ প্রকাশিত হইতে থাকে । এই প্রয়োজন হেতু আমি ঈশ্বর, তোমাদিগের সকলকে উক্ত যজ্ঞের নিমিত্ত শুদ্ধি করিবার উপদেশ প্রদান করিতেছি যে, হে মনুষ্যগণ ! তোমরা পরোপকার করিবার মানসে শুদ্ধ কর্ম নিত্য করিতে থাক তথা উক্ত রীতিপূর্বক বায়ু, অগ্নি ও জলের গুণকে শিল্পক্রিয়াতে যুক্ত করিয়া বহু যান ইত্যাদি যন্ত্র-কলা নির্মাণ করিয়া নিজ পুরুষকার বলে সর্বদা সুখ যুক্ত হও ॥ ১৩ ॥


শর্মাসীত্যস্য পূর্বোক্ত ঋষিঃ । য়জ্ঞো দেবতা । স্বরাড্ জগতী ছন্দঃ ।নিষাদঃ স্বরঃ ॥

শর্মা॒স্যব॑ধূত॒ꣳ রক্ষোऽব॑ধূতা॒ऽ অরা॑ত॒য়োऽদি॑ত্যা॒স্ত্বগ॑সি॒ প্রতি॒ ত্বাদি॑তির্বেত্তু । অদ্রি॑রসি বানস্প॒ত্যো গ্রাবা॑সি পৃ॒থুবু॑ধ্নঃ॒ প্রতি॒ ত্বাদি॑ত্যা॒স্ত্বগ্বে॑ত্তু ॥ ১৪ ॥

পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! তোমাদের গৃহ (শর্ম) সুখপ্রদ (অসি) হউক । সেই গৃহ হইতে (রক্ষঃ) দুষ্টস্বভাবযুক্ত প্রাণী (অবধূতম্) পৃথক কর এবং (অরাতয়ঃ) দানাদি ধর্মরহিত শত্রু (অবধূতাঃ) দূর হউক । উক্ত গৃহ (অদিত্যাঃ) পৃথিবীর (ত্বক্) চর্ম সদৃশ (অসি) হউক । (অদিতিঃ) জ্ঞানস্বরূপ ঈশ্বরের দ্বারা সেই গৃহকে (প্রতিবেত্তু) সকল মনুষ্য জানুক ও প্রাপ্ত হউক তথা যে (বানস্পত্যঃ) বনস্পতির নিমিত্ত উৎপন্ন হওয়ার, (পৃথুবুধ্নঃ) অতিবিস্তারযুক্ত অন্তরিক্ষে নিবাস করার তথা (গ্রাবা) জল গ্রহণ করিবার (অদ্রিঃ) মেঘ (অসি) আছে, সেই এবং এই বিদ্যাকে (অদিতিঃ) জগদীশ্বর তোমাদিগের জন্য (বেত্তু) কৃপা করিয়া জানাইবেন । বিদ্বান্ পুরুষও (অদিত্যাঃ) পৃথিবীর (ত্বক্) চর্মসদৃশ (ত্বা) উক্ত গৃহের রচনাকে (প্রতিবেত্তু) জানিবেন ।

ভাবার্থঃ- ঈশ্বর মনুষ্যদিগকে আজ্ঞা প্রদান করিতেছেন যে, তোমরা শুদ্ধ ও বিস্তারযুক্ত ভূমির মধ্যে অর্থাৎ বহু অবকাশে সব ঋতুতে সুখযোগ্য গৃহ নির্মাণ করিয়া উহাতে সুখ পূর্বক বাস কর তথা তন্মধ্যে নিবাসকারী দুষ্ট স্বভাবযুক্ত মনুষ্যাদি প্রাণী এবং দোষগুলিকে নিবৃত্ত কর । পুনরায় তাহাতে সকল পদার্থ স্থাপন এবং বর্ষার হেতু যে যজ্ঞ তাহার অনুমান করিয়া নানা প্রকারের সুখ উৎপন্ন করা উচিত কেননা যজ্ঞ করিলে বায়ু ও বৃষ্টিজলের শুদ্ধি দ্বারা সংসারে অত্যন্ত সুখ সিদ্ধ হইয়া থাকে ॥ ১৪ ॥


অগ্নেস্তনূরিত্যস্য ঋষিঃ স এব । য়জ্ঞো দেবতা । নিচৃজ্জগতী ছন্দঃ । নিষাদঃ স্বরঃ ।হবিষ্কৃদিতি য়াজুষী পংক্তিশ্ছন্দঃ । পঞ্চমঃ স্বরঃ ॥

অ॒গ্নেস্ত॒নূর॑সি বা॒চো বি॒সর্জ॑নং দে॒ববী॑তয়ে ত্বা গৃহ্ণামি বৃ॒হদ্গ্রা॑বাসি বানস্প॒ত্যঃ সऽ ই॒দং দে॒বেভ্যো॑ হ॒বিঃ শ॑মীষ্ব সু॒শমি॑ শমীষ্ব । 

হবি॑ষ্কৃ॒দেহি॒ হবি॑ষ্কৃ॒দেহি॑ ॥ ১৫ ॥


পদার্থঃ- আমি সর্ব জনের সহিত যে হবি অর্থাৎ পদার্থের সংস্কার হেতু (অসি) আছে (বৃহদ্গ্রাবাসি) বড়-বড় পাথর এবং (বানস্পত্যঃ) কাষ্ঠের মূসলাদি পদার্থ (দেবেভ্যঃ) বিদ্বান্ বা দিব্যগুণ- সমূহের জন্য সেই যজ্ঞকে (দেববীতয়ে) শ্রেষ্ঠ গুণের প্রকাশ এবং শ্রেষ্ঠ বিদ্বান্ বা বিবিধ ভোগ প্রাপ্তি হেতু (প্রতিগৃহ্নামি) গ্রহণ করিয়া থাকি । হে বিদ্বান্ মনুষ্য ! তুমি (দেবেভ্যঃ) বিদ্বান্দিগের সুখের জন্য (সু এমি) ভাল মত দুঃখ শান্ত করিবার (হবিঃ) যজ্ঞ করিবার যোগ্য পদার্থকে (শমীষ্ব) অত্যন্ত শুদ্ধ কর । যে মনুষ্য বেদাদি শাস্ত্রকে প্রীতিপূর্বক পাঠ করেন বা করান তাহাকেই এই (হবিষ্কৃত) হবিঃ অর্থাৎ হোমে আহুতি দিবার যোগ্য পদার্থসকলের বিধানকারী যাহা যজ্ঞকে বিস্তার করিবার জন্য বেদ পঠন দ্বারা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের শুদ্ধ, সুশিক্ষিত ও প্রসিদ্ধ বাণী উহা প্রাপ্ত হয় ॥ ১৫ ॥

पदार्थः

(अग्नेः) भौतिकस्य (तनूः) शरीरवत्तस्य संयोगेन विस्तृतो यज्ञः (असि) भवति। अत्र सर्वत्र पुरुषव्यत्ययः (वाचः) वेदवाण्याः (विसर्जनम्) यजमानेन होतृभिश्च हविषस्त्यागो मौनं वा (देववीतये) देवानां=विदुषां दिव्यगुणानां वा वीतिर्ज्ञानं प्रापणं प्रजनं व्याप्तिः प्रकाशःअन्येभ्य उपदेशनं विविधभोगो वा यस्यां तस्यै। वी गतिव्याप्तिप्रजनकांत्यसनखादनेषु (त्वा) तमिमं सम्यक् शोधितं हवि:समूहम् (गृह्णामि) स्वीकरोमि (बृहद्ग्रावा) बृहच्चासौ ग्रावा च सः (असि) अस्ति (वानस्पत्यः) यो वनस्पतेर्विकारस्तं हविःसंस्कारार्थम् (सः) त्वं यजमानः (इदम्) यत् प्रत्यक्षं हुतं तत् (देवेभ्यः) विद्वद्भ्यो दिव्यगुणेभ्यो वा (हविः) संस्कृतं सुगंध्यादियुक्तं द्रव्यम् (शमीष्व) दुःखनिवृत्तये सुखसम्पादनार्थं कुरुष्व। शमु उपशमे इत्यस्माद्बहुलं छन्दसीति श्यनो लुक्। तुरुस्तुशम्यमः०॥ अ०७। ३।९५॥ इतीडागमः। महीधरेणात्र शपो लुगित्यशुद्धं व्याख्यातम्। (सुशमि) सुष्ठु दुःखं शमितुं शीलं धर्मः पदार्थानां साधुकरणं वा यस्य तत्। शमित्यष्टा०॥अ०३।२।१४१॥ अनेन शमेर्घिनुण्। इदमपि पदमुवटमहीधराभ्यामन्यथैव व्याख्यातम् (शमीष्व) पुनरुच्चारणं हविषोऽत्यन्तसंस्कारद्योतनार्थम् (हविष्कृत्) हविः करोति अनया वेदवाण्या सा हविष्कृद्वाक् (एहि) अध्ययनेनैवैति प्राप्नोति (हविष्कृत्) अत्र यज्ञसंपादनाय ब्राह्मणक्षत्रियवैश्यशूद्राणां चतुर्विधा वेदाध्ययनसंस्कृता सुशिक्षिता वाग् गृह्यते॥ अयं मंत्रः श० १। १। ४। ८-१७ व्याख्यातः॥१५॥


ভাবার্থঃ- যখন মনুষ্য বেদাদি শাস্ত্র দ্বারা যজ্ঞক্রিয়া এবং তাহার ফল জানিয়া শুদ্ধি ও উত্তমতা সহ যজ্ঞ করেন তখন সে সুগন্ধি ইত্যাদি পদার্থ সকলের হোম দ্বারা পরমাণু অর্থাৎ অত্যন্ত সূক্ষ্ম হইয়া বায়ু ও বৃষ্টিজলে বিস্তৃত হইয়া সকল পদার্থকে উত্তম করিয়া দিব্য সুখ উৎপন্ন করে । যে মনুষ্য সর্ব প্রাণিদিগের সুখের অর্থ পূর্বোক্ত তিন প্রকার যজ্ঞ নিত্য করে তাহাকে সকল মনুষ্য হবিষ্কৃত অর্থাৎ এই যজ্ঞের বিস্তারকারী – উত্তম মনুষ্য এইরূপ বারংবার বলিয়া সৎকার করিবে ॥ ১৬ ॥


কুক্কুটোऽসীত্যস্য ঋষিঃ স এব । বায়ুর্দেবতা । (স্বরাড্) ব্রাহ্মী ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ ।
ধৈবতঃ স্বরঃ ॥ দেবো বঃ সবিতেত্যস্য ঋষিঃ স এব । সবিতা দেবতা ।
বিরাড্ গায়ত্রী ছন্দঃ । ষড্জঃ স্বরঃ ॥

কু॒ক্কু॒টো᳖ऽসি॒ মধু॑জিহ্ব॒ऽ ইষ॒মূর্জ॒মা ব॑দ॒ ত্বয়া॑ ব॒য়ꣳ সং॑ঘা॒তꣳসং॑ঘাতং জেষ্ম ব॒র্ষবৃ॑দ্ধমসি॒ প্রতি॑ ত্বা ব॒র্ষবৃ॑দ্ধং বেত্তু॒ পরা॑পূত॒ꣳ রক্ষঃ॒ পরা॑পূতা॒ অরা॑ত॒য়োऽপ॑হত॒ꣳ রক্ষো॑ বা॒য়ুর্বো॒ বি বি॑নক্তু দে॒বো বঃ॑ সবি॒তা হির॑ণ্যপাণিঃ॒ প্রতি॑ গৃভ্ণা॒ত্বচ্ছি॑দ্রেণ পা॒ণিনা॑ ॥ ১৬ ॥

পদার্থঃ- যে হেতু এই যজ্ঞ (মধুজিহ্বঃ) মধুর বাণীষুক্ত হয়, তথা (কুক্কুটঃ) চোর বা শত্রুদের বিনাশকারী (অসি) হয় এবং (ইষম্) অন্নাদি পদার্থ বা (ঊর্জম্) বিদ্যাদি বল এবং উত্তমোত্তম রস প্রদান করে, সেইজন্য তাহার অনুষ্ঠান সর্বদা করা উচিত । হে বিদ্বান্গণ । তোমরা উক্ত গুণসকল প্রদানকারী যে তিন প্রকারের যজ্ঞ তাহার অনুষ্ঠান এবং গুণের জ্ঞাতা (অসি) হও, অতএব, আমাদিগকেও তাহার গুণের (আবদ) উপদেশ কর যাহাতে (বয়ং) আমরা (ত্বয়া) তোমাদের সঙ্গে (সংঘাতং সংঘাতম্) যাহাতে উত্তম রীতিপূর্বক শত্রুদের পরাজয় ঘটে অর্থাৎ অত্যন্ত বৃহৎ সংগ্রামকে বারবার (আ জেষ্ম) সর্ব প্রকারে জিতিয়া লই কেননা তুমি যুদ্ধ বিদ্যা বিশারদ (অসি) হও, সেইজন্য সকল মনুষ্য (বর্ষ বৃদ্ধম্) শস্ত্র ও শস্ত্রবিদ্যার বর্ষার বৃদ্ধিকারী (ত্বা) তুমি তথা (বর্ষবৃদ্ধম্) বৃষ্টি বৃদ্ধিকারী উক্ত যজ্ঞকে (প্রতিবেত্তু) জান । এই প্রকার সংগ্রাম করিয়া সকল মনুষ্যকে (পরাপূতম্) পবিত্রতাদি গুণ ত্যাগকারী (রক্ষঃ) দুষ্ট মনুষ্য তথা (পরাপূতাঃ) শুদ্ধি ত্যাগকারী এবং (অরাতয়ঃ) দানাদি ধর্ম রহিত শত্রুগণ তথা (রক্ষঃ) ডাকাইতদের (অপহৃতম্) নাশ হইতে পারে সেইরূপ প্রচেষ্টা সর্বদা করা উচিত । যেমন এই (হিরণ্যপাণিঃ) যাহার জ্যোতি হস্ত, এইরূপ যে (বায়ুঃ) পবন, তাহা (অচ্ছিদ্রেণ) একরস (পাণিনা) নিজ গমনাগমন ব্যবহার দ্বারা যজ্ঞ ও সংসারে অগ্নি ও সূর্য্য দ্বারা অত্যন্ত সূক্ষ্ম হওয়া পদার্থগুলিকে (প্রতিগৃহ্নাতু) গ্রহণ করে । (হিরণ্যপাণিঃ) অথবা যেমন কিরণ হস্ত যাহার সেই (হিরণ্যপাণিঃ) কিরণ ব্যবহারের ফলে (সবিতা) বৃষ্টি বা প্রকাশ দ্বারা দিব্য গুণ উৎপন্ন করিবার হেতু (দেবঃ) প্রকাশময় সূর্য্যলোক (বঃ) সেই সব পদার্থদিগকে (বিবিনক্তু) পৃথক পৃথক অর্থাৎ পরমাণুরূপ করিয়া থাকে সেইরূপ পরমেশ্বর বা বিদ্বান্ পুরুষ (অচ্ছিদ্রেণ) নিরন্তর (পাণিনা) স্বীয় উপদেশরূপ ব্যবহার দ্বারা সকল বিদ্যাগুলিকে (বিবিনক্তু) প্রকাশিত করুন সেইরূপ কৃপা করিয়া প্রীতি সহ (বঃ) তোমাদিগকে অত্যন্ত আনন্দ দান করিবার জন্য (প্রতিগৃভ্ ণাতু) গ্রহণ করেন ॥ ১৬ ॥

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে শ্লেষালঙ্কার ব্যবহৃত হইয়াছে । পরমেশ্বর সকল মনুষ্যকে আজ্ঞা প্রদান করিতেছেন যে, যজ্ঞের অনুষ্ঠান রূপ সংগ্রামে শত্রুদিগের পরাজয়, ভাল ভাল গুণের জ্ঞান, বিদ্বান্দিগের সেবা, দুষ্ট মনুষ্য অথবা দুষ্ট দোষগুলির পরিত্যাগ তথা সকল পদার্থকে স্বীয় তাপ দ্বারা ছিন্ন-ভিন্নকারী অগ্নি অথবা সূর্য্য এবং তাহাদের ধারণকারী বায়ু আছে । এইরূপ জ্ঞান ও ঈশ্বরের উপাসনা তথা বিদ্বান্দিগের সমাগম করিয়া এবং সর্ব বিদ্যা প্রাপ্ত হইয়া সকলের জন্য সর্ব সুখ উৎপন্নকারী উন্নতি সর্বদা করা উচিত ॥ ১৬ ॥


ধৃষ্টিরসীত্যস্য ঋষিঃ স এব । অগ্নির্দেবতা । ব্রাহ্মী পংক্তিশ্ছন্দঃ । পঞ্চমঃ স্বরঃ ॥

ধৃষ্টি॑র॒স্যপা॑ऽগ্নেऽ অ॒গ্নিমা॒মাদং॑ জহি॒ নিষ্ক্র॒ব্যাদ॑ꣳ সে॒ধাऽऽ দে॑ব॒য়জং॑ বহ । ধ্রু॒বম॑সি পৃথি॒বীং দৃ॑ꣳহ ব্রহ্ম॒বনি॑ ত্বা ক্ষত্র॒বনি॑ সজাত॒বন্যুপ॑ দধামি॒ ভ্রাতৃ॑ব্যস্য ব॒ধায়॑ ॥ ১৭ ॥


পদার্থঃ- হে (অগ্নে) পরমেশ্বর । আপনি (ধৃষ্টিঃ) প্রগল্ভ অর্থাৎ অত্যন্ত নির্ভয় (অসি) আছেন । এই কারণে (নিষ্ধব্যাদম্) পক্ব ভস্মাদি পদার্থ ত্যাগ করিয়া (আমাদম্) কাঁচা পদার্থ জ্বালাইবার এবং (দেবয়জম্) বিদ্বান্ বা শ্রেষ্ঠ গুণের সহিত মিলনকারী (অগ্নিম্) ভৌতিক অথবা বিদ্যুৎ অর্থাৎ বিদ্যুৎরূপ অগ্নিকে আপনি (সেধ) প্রতিপন্ন করুন । এই প্রকার আমাদিগের মঙ্গল অর্থাৎ উত্তমোত্তম সুখ হওয়ার জন্য শাস্ত্রের শিক্ষা করিয়া দুঃখকে (অপজহি) দূর করুন এবং আনন্দকে (আবহ) প্রাপ্ত করুন তথা হে পরমেশ্বর । আপনি (ধ্রুবম্) নিশ্চল সুখদাতা (অসি) আছেন, ইহার দ্বারা (পৃথিবীম্) বিস্তৃতভূমি বা তথায় নিবাসকারী মনুষ্যগণকে (দৃংহ) উত্তম গুণগুলি দিয়া বৃদ্ধিযুক্ত করুন । হে অগ্নে পরমেশ্বর ! যে কারণে আপনি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ইহাতে আমি (ভ্রাতৃব্যস্য) দুষ্ট বা শত্রুদিগের (বধায়) বিনাশ হেতু (ব্রহ্মবনি) (ক্ষত্রবণি) (সজাতবনি) ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় তথা প্রাণিমাত্রের সুখ বা দুঃখ ব্যবহার প্রদাতা (ত্বা) আপনাকে (উপদধামি) হৃদয়ে স্থাপন করি ॥ ইহা এই মন্ত্রের প্রথম অর্থ হইল ॥ তথা হে বিদ্বান্ যজমান । যে কারণে এই (অগ্নে) ভৌতিক অগ্নি (ধৃষ্টিঃ) অতিতীক্ষ্ম (অসি) হয় তথা নিকৃষ্ট পদার্থগুলি ত্যাগ করিয়া উত্তম পদার্থগুলি হইতে (দেবয়জম্) বিদ্বান্ বা দিব্যগুণ প্রাপ্ত করাইবার যজ্ঞকে (আবহ) প্রাপ্ত করায় । ইহা দ্বারা তুমি (নিষ্ধব্যাদম্) পক্ব ভস্মাদি পদার্থ ত্যাগ করিয়া (আমাদম্) কাঁচা পদার্থ জ্বালাইবার এবং (দেবয়জম্) বিদ্বান্ বা দিব্যগুণ প্রাপ্ত করাইবার (অগ্নিম্) প্রত্যক্ষ অথবা বিদ্যুৎরূপ অগ্নিকে (আবহ) প্রাপ্ত কর এবং উহা জানিবার ইচ্ছাকারী মনুষ্যদিগকে শাস্ত্রের উত্তমোত্তম শিক্ষা সহ তাহার উপদেশ (সেধ) কর এবং তাহার অনুষ্ঠানে যে দোষ হয় তাহাকে (অপজহি) বিনাশ কর । যে কারণে এই অগ্নি সূর্য্যরূপ হইতে (ধ্রুবম্) নিশ্চল, এই কারণে এই আকর্ষণ শক্তি দ্বারা (পৃথিবীম্) বিস্তৃত ভূমি অথবা তন্মধ্যে নিবাসকারী প্রাণিদিগকে (দৃংহ) দৃঢ় করে, ইহার ফলে আমি (ত্বা) সেই (ব্রহ্মবণি) ক্ষত্রবণি) (সজাতবণি) ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বা জীবমাত্রের সুখ-দুঃখকে ভিন্ন-ভিন্ন করিয়া দেয় এমন ভৌতিক অগ্নিকে (ভ্রাতৃব্যস্য) দুষ্ট বা শত্রুদের (বধায়) বিনাশ হেতু হবন করিবার বেদী বা বিমানাদি যানে (উপদধামি) স্থাপন করি ॥ ইহা দ্বিতীয় অর্থ হইল ॥ ১৭ ॥

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে শ্লেষালঙ্কার ব্যবহৃত হইয়াছে । সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এই ভৌতিক অগ্নি আম অর্থাৎ কাঁচা পদার্থ দহনকারী নির্মাণ করিয়াছেন এই কারণে ভস্মরূপ পদার্থের দাহ করিতে অপারগ । যাহাতে মনুষ্য কাঁচা-কাঁচা পদার্থ রন্ধন করিয়া খায় । (উহা আমাৎ) তথা যাহা করিয়া সব প্রাণিদিগের ভুক্ত দ্রব্যের রন্ধন হয় । (উহা জাঠর) এবং যাহার দ্বারা মনুষ্য মৃত শরীরকে দহন করে । তাহাকে ক্রব্যাৎ অগ্নি বলা হয় এবং যাহার দ্বারা দিব্যগুণ প্রাপ্ত করাইবার বিদ্যুৎ নির্মিত হইয়াছে তথা যাহার দ্বারা পৃথিবীর ধারণ ও আকর্ষণকারী সূর্য্য নির্মিত হইয়াছে । এবং যাহা বেদবিদ্যা জ্ঞাতা ব্রাহ্মণ অথবা ধনুর্বেদজ্ঞাতা ক্ষত্রিয় অথবা সকল প্রাণিমাত্র সেবন করে তথা যিনি সকল মনুষ্যের উপাস্য দেব এবং যে সব ক্রিয়ার সিদ্ধি হেতু ভৌতিক অগ্নি তাহাও যথাযোগ্য কার্য্যদ্বারা সেবন করিবার যোগ্য ॥ ১৭ ॥

অগ্নে ব্রহ্মেত্যস্য ঋষিঃ স এব । অগ্নির্দেবতা সর্বস্য । পূর্বস্য ব্রাহ্মী উষ্ণিক্ ছন্দঃ । ঋষভঃ স্বরঃ । ধর্ত্রমসীতি মধ্যস্যার্চ্চী ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ । ধৈবতঃ স্বরঃ । বিশ্বাভ্য ইত্যুত্তরস্যার্চী পংক্তিশ্ছন্দঃ । পঞ্চমঃ স্বরঃ ॥


অগ্নে॒ ব্রহ্ম॑ গৃভ্ণীষ্ব ধ॒রুণ॑মস্য॒ন্তরি॑ক্ষং দৃꣳহ ব্রহ্ম॒বনি॑ ত্বা ক্ষত্র॒বনি॑ সজাত॒বন্যুপ॑ দধামি॒ ভ্রাতৃ॑ব্যস্য ব॒ধায়॑ । 

ধ॒র্ত্রম॑সি॒ দিবং॑ দৃꣳহ ব্রহ্ম॒বনি॑ ত্বা ক্ষত্র॒বনি॑ সজাত॒বন্যুপ॑ দধামি॒ ভ্রাতৃ॑ব্যস্য ব॒ধায়॑ । 

বিশ্বা॑ভ্য॒স্ত্বাশা॑ভ্য॒ऽ উপ॑ দধামি॒ চিত॑ স্থোর্ধ্ব॒চিতো॒ ভৃগূ॑ণা॒মঙ্গি॑রসাং॒ তপ॑সা তপ্যধ্বম্ ॥ ১৮ ॥

পদার্থঃ- হে (অগ্নে) পরমেশ্বর ! আপনি (ধরুণম্) সকলের ধারক (অসি) হন । আমার (ব্রহ্ম) বেদমন্ত্র দ্বারা কৃত স্তুতিকে (গৃভ্ণীষ্ব) গ্রহণ করুন তথা (অন্তরিক্ষম্) আত্মায় স্থিত যে অক্ষয় জ্ঞান তাহাকে (দৃংহ) বৃদ্ধি করুন । আমি (ভ্রাতৃব্যস্য) শত্রুদিগের (বধায়) বিনাশ হেতু (ব্রহ্মবণি) সকল মনুষ্যদিগের সুখের নিমিত্ত বেদের শাখাশাখান্তর দ্বারা বিভাগকারী ব্রাহ্মণ তথা (ক্ষত্রবণি) রাজধর্মের প্রকাশক (সজাতবণি) যাহারা পরস্পর সমান ক্ষত্রিয়দিগের ধর্মও সাংসারিক মূর্তিমান পদার্থ এই সব প্রাণিদিগের জন্য ভিন্ন-ভিন্ন প্রকাশকারী (ত্বা) আপনাকে (উপদধামি) হৃদয় মধ্যে ধারণ করি । হে সকলের ধারক পরমেশ্বর । আপনি (ধর্ত্রম্) লোক-লোকান্তর ধারণ করেন, কৃপা করিয়া আমাদিগের মধ্যে (দিবম্) অত্যুত্তম জ্ঞান (দৃংহ) বৃদ্ধি করুন এবং আমি (ভ্রাতৃবস্য) শত্রুদিগের (বধায়) বিনাশ হেতু (ব্রহ্মবনি) (ক্ষত্রবনি) (সজাতবণি) উক্ত বেদরাজ্যের পরস্পর সমান বিদ্যা বা রাজ্যাদি ব্যবহারের যথাযোগ্য বিভাগকারী (ত্বা) আপনাকে (উপদধামি) বারংবার স্বীয় হৃদয় মধ্যে ধারণ করি । হে সকলের ধারক পরমেশ্বর ! আপনি (ধর্ত্রম্) লোক-লোকান্তর ধারণ করিয়া আছেন । এইজন্য কৃপা করিয়া আমাদিগের মধ্যে (দিবম্) অত্যুত্তম জ্ঞানকে (দৃংহ) বৃদ্ধি করুন এবং আমি (ভ্রাতৃব্যস্য) শত্রুদিগের (বধায়) বিনাশের জন্য (ব্রহ্মবনি) (ক্ষত্রবণি) (সজাতবণি) উক্ত বেদ রাজ্য বা পরস্পর সমান বিদ্যা বা রাজ্যাদি বা ব্যবহারগুলিকে যথাযোগ্য বিভাগকারী (ত্বা) আপনাকে (উপদধামি) বার বার নিজের হৃদয়ে ধারণ করি । তথা আমি (ত্বা) আপনাকে সর্বব্যাপক জানিয়া (বিশ্বাভ্যঃ) সর্ব (আশাভ্যঃ) দিশা হইতে সুখ হওয়ার নিমিত্ত বারংবার (উপদধামি) স্বীয় মনে ধারণ করি । হে মনুষ্যগণ । তোমরা উক্ত ব্যবহারকে ভাল প্রকার জ্ঞাত হইয়া (চিতঃ) বিজ্ঞানী (উর্ধ্বচিতঃ) উত্তম জ্ঞানযুক্ত পুরুষদিগের প্রেরণা দ্বারা কপালগুলি অগ্নিতে রাখিয়া তথা (ভৃগুণাম্) যাহা দ্বারা বিদ্যাদি গুণসকল প্রাপ্ত হয় এইরকম (অঙ্গিরসাম্) প্রাণের (তপসা) প্রভাববলে (তপ্যধ্বম্) তপ কর ও তপ করাও । ইহা এই মন্ত্রের প্রথম অর্থ হইল ॥ এখন দ্বিতীয়ও বলা হইতেছে ॥ হে বিদ্বান্ ধর্মাত্মা পুরুষ । যে (অগ্নে) পার্থিব অগ্নি দ্বারা (ধরুণম্) সকলের ধারণকারী তেজ (ব্রহ্ম) বেদ ও (অন্তরিক্ষম্) আকাশে নিবাসকারী পদার্থ গ্রহণ বা বৃদ্ধিযুক্ত করা হয় (ত্বা) তাহা তুমি হোম বা শিল্পবিদ্যার সিদ্ধি হেতু (গৃভ্নীষ্ব) গ্রহণ কর (দৃংহ) বা বিদ্যাযুক্ত ক্রিয়াসকলের দ্বারা বৃদ্ধি করাও এবং আমিও (ভ্রাতৃব্যস্য) শত্রুদিগের (বেধায়) বিনাশ হেতু (ত্বা) সেই (ব্রহ্মবণি, ক্ষত্রবণি) (সজাতবণি) সাংসারিক মূর্ত্তিমান পদার্থের প্রকাশক অথবা রাজগুণের দৃষ্টান্তরূপে প্রকাশকারী পার্থিব অগ্নিকে শিল্পবিদ্যাদি ব্যবহারে (উপদধানি) স্থাপন করি । এইরকম স্থাপন কৃত অগ্নি আমাদের অনেক সুখকে ধারণ করায় । এইরূপ সকল লোক-লোকান্তরের (ধর্ত্রম্) ধারক বায়ু তথা (দিবম্) প্রকাশময় সূর্য্যলোককে (দৃংহ) দৃঢ় করে । হে মনুষ্যগণ । যেমন তাহাকে আমি (ভ্রাতৃব্যস্য) স্বীয় শত্রুদিগের (বধায়) বিনাশহেতু (ব্রহ্মবণি) (ক্ষত্রবণি) (সজাতবণি) বেদ রাজ্য অথবা পরস্পর সমান উত্তমোত্তম শিল্পবিদ্যাসকলকে যথাযোগ্য কার্য্যে যুক্তকারী সেই পার্থিব অগ্নিকে (উপদধামি) স্থাপন করি সেইরূপ তোমরাও উত্তমোত্তম ক্রিয়ায় যুক্ত করিয়া বিদ্যাবলে (দৃংহ) তাহা বৃদ্ধি কর । হে বিদ্যাকাঙক্ষী পুরুষ । যে পবন, পৃথিবী ও সূর্য্যাদি লোক-লোকান্তরকে ধারণ করিতেছে তাহা তোমরা স্বীয় জীবনাদি সুখ বা শিল্পবিদ্যার সিদ্ধি হেতু যথাযোগ্য কার্য্যে লাগাইয়া তাহার বিদ্যা দ্বারা (দৃংহ) বৃদ্ধি কর তথা যেমন আমরা নিজ শত্রুদের বিনাশ হেতু (ব্রহ্মবণি) (ক্ষত্রবণি) (সজাতবনি) অগ্নির উক্ত গুণের সমান বায়ুকে শিল্পবিদ্যা ইত্যাদি ব্যবহারে (উপদধামি) সংযুক্ত করি সেইরূপ তোমরাও স্বীয় বহু দুঃখের বিনাশ হেতু তাহাকে যথাযোগ্য কার্য্যে সংযুক্ত কর । হে মনুষ্যগণ । যেমন আমি বায়ুবিদ্যার জ্ঞাতা (ত্বা) অগ্নি বা বায়ুকে (বিশ্বাভ্যঃ) সব (আশাভ্যঃ) দিকের সুখের জন্য যথাযোগ্য শিল্পব্যবহারে (উপদধামি) ধারণ করি । সেইরূপ তোমরাও ধারণ কর তথা শিল্পবিদ্যার হোম করিবার জন্য (চিতঃ) (উর্ধ্বচিতঃ) (স্থ) পদার্থ দ্বারা পূর্ণ পাত্র অথবা যাত্রী মধ্যে স্থাপিত কলাযন্ত্রকে (ভৃগুণাম্) যদ্দ্বারা পদার্থগুলিকে পক্ব করি সেই সব (অঙ্গিরসাম্) অঙ্গারের (তপসা) তাপ দ্বারা (তপ্যধ্বম্) উক্ত পদার্থগুলিকে তপ্ত কর ॥ ১৮ ॥

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে শ্লেষালঙ্কার আছে ॥ ঈশ্বরের এই উপদেশ যে, হে মনুষ্যগণ! তোমরা বিদ্বান্দিগের উন্নতি তথা মূর্খতার নাশ অথবা সব শত্রুদিগের নিবৃত্তি দ্বারা রাজ্য বৃদ্ধি হেতু বেদবিদ্যা গ্রহণ কর । এবং বৃদ্ধির হেতু অগ্নি বা সকলের ধারক বায়ু, অগ্নিময় সূর্য্য এবং ঈশ্বর ইহাদিগকে সব দিকে ব্যাপ্ত জানিয়া যজ্ঞসিদ্ধি অথবা বিমানাদি যানসকলের রচনা ধর্ম সহ কর তথা এইগুলি সিদ্ধ করিয়া দুঃখ দূর করিয়া শত্রুদিগকে জিতিয়া লও ॥ ১৮ ॥


শর্মাসীত্যস্য ঋষিঃ স এব । অগ্নির্দেবতা । নিচৃদ্ ব্রাহ্মী ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ । ধৈবতঃ স্বরঃ ॥

শর্মা॒স্যব॑ধূত॒ꣳ রক্ষোऽব॑ধূতা॒ऽ অরা॑ত॒য়োऽদি॑ত্যা॒স্ত্বগ॑সি॒ প্রতি॒ ত্বাদি॑তির্বেত্তু । ধি॒ষণা॑সি পর্ব॒তী প্রতি॒ ত্বাদি॑ত্যা॒স্ত্বগ্বে॑ত্তু দি॒ব স্ক॑ম্ভ॒নীর॑সি ধি॒ষণা॑সি পার্বতে॒য়ী প্রতি॑ ত্বা পর্ব॒তী বে॑ত্তু ॥ ১ঌ ॥

পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! তোমরা যে যজ্ঞ (শর্ম) সুখদায়ক (অসি) হয় এবং (অদিতিঃ) নাশরহিত তথা যদ্দ্বারা (রক্ষঃ) দুঃখও দুষ্টস্বভাবযুক্ত মনুষ্য (অবধূতম্) বিনাশ প্রাপ্ত তথা (অরাতয়ঃ) দানাদি ধর্ম রহিত পুরুষ (অবধূতাঃ) নষ্ট (অসি) হইয়া থাকে এবং যাহা (অদিত্যাঃ) অন্তরিক্ষ বা পৃথিবীর (ত্বক্) চর্ম সদৃশ (অসি)(ত্বা) উহা (প্রতি বেত্তু) জান এবং যে বিদ্যাস্বরূপ উক্ত যজ্ঞ দ্বারা (পর্বতী) বহু জ্ঞানযুক্ত (দিবঃ) প্রকাশমান সূর্য্যাদি লোকের (স্কম্ভনী) প্রতিহতকারী (অসি), তথা (পার্বতেয়ী) মেঘের কন্যা অর্থাৎ পৃথিবী তুল্য (ধিস্মণা) বেদবাণী (অসি)(অদিত্যাঃ) পৃথিবীর (ত্বক্) শরীর তুল্য বিস্তার লাভ করে (ত্বা) উহাকে (প্রতিবেত্তু) যথাবৎ জান এবং যে সৎসঙ্গতিরূপ যজ্ঞ দ্বারা (পর্বতী) উত্তমোত্তম ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্তকারী (ধিষণা) দ্যৌ অর্থাৎ প্রকাশরূপী বুদ্ধি (অসি) হইয়া থাকে (ত্বা) উহাকেও জান ॥ ১ঌ ॥

ভাবার্থঃ- মনুষ্যদিগকে নিজ বিজ্ঞান দ্বারা ভাল প্রকার পদার্থগুলি সংগ্রহ করিয়া তদ্দ্বারা যজ্ঞের অনুষ্ঠান করা কর্ত্তব্য । যাহা বৃষ্টি বর্ধক, উহা অগ্নি ও মন দ্বারা শুদ্ধ কৃত সূর্য্যের প্রকাশকে ত্বক্ সমান সেবন করিয়া থাকে ॥ ১ঌ ॥

ধান্যমসীত্যস্য ঋষিঃ স এব । সবিতা দেবতা । বিরাড্ ব্রাহ্মী ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ ।ধৈবতঃ স্বরঃ ॥

ধা॒ন্য᳖মসি ধিনু॒হি দে॒বান্প্রা॒ণায়॑ ত্বোদা॒নায়॑ ত্বা ব্যা॒নায়॑ ত্বা । দী॒র্ঘামনু॒ প্রসি॑তি॒মায়ু॑ষে ধাং দে॒বো বঃ॑ সবি॒তা হির॑ণ্যপাণিঃ॒ প্রতি॑ গৃভ্ণা॒ত্বচ্ছি॑দ্রেণ পা॒ণিনা॒ চক্ষু॑ষে ত্বা ম॒হীনাং॒ পয়ো॑ऽসি ॥ ২০ ॥

পদার্থঃ- যাহা (ধান্যম্) যজ্ঞ হইতে শুদ্ধ উত্তম স্বভাবযুক্ত সুখের হেতু রোগের নাশকারী তথা চাউলাদি অন্ন বা (পয়ঃ) জল (অসি) হয়, উহা (দেবান্) বিদ্বান্ বা জীব তথা ইন্দ্রিয়গুলিকে (ধিনুহি) তৃপ্ত করে । এই কারণে হে মনুষ্যগণ ! আমি যে প্রকার (ত্বা) উহাকে (প্রাণায়) স্বীয় জীবন হেতু অথবা (ত্বা) উহাকে (উদানায়) স্ফূর্তি, বল ও পরাক্রম হেতু অথবা (ত্বা) উহাকে (ব্যানায়) সকল শুভ গুণ, কর্ম বা বিদ্যার অঙ্গ বিস্তার করিবার হেতু তথা বহুদিন পর্য্যন্ত (প্রসিতম্) অত্যুত্তম সুখবন্ধন যুক্ত (আয়ুষে) পূর্ণ আয়ু ভোগ করিবার জন্য (ধাম্) ধারণ করি । সেই রূপ তোমরাও উক্ত প্রয়োজন হেতু উহাকে নিত্য ধারণ কর । যেমন আমাদিগকে (হিরণ্যপাণিঃ) যাহা মোক্ষ প্রদান করাই ব্যবহার এইরূপ সকল জগতের উৎপাদক (দেবঃ) (সবিতা) সকল ঐশ্বর্য্যের দাতা পরমেশ্বর (অচ্ছিদ্রেণ) স্বীয় ব্যাপ্তি অথবা (পাণিনা) উত্তম ব্যবহার দ্বারা (মহীনাম্) বাণীদিগের (চক্ষুষা) প্রত্যক্ষ জ্ঞানের জন্য (প্রত্যনুগৃভ্ণাতু) স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা গ্রহণ করে সেইরূপ আমরাও সেই ঈশ্বরকে (অচ্ছিদ্রেণ) নিরন্তর (পাণিনা) স্তুতি দ্বারা গ্রহণ করি এবং যেমন (হিরণ্যপাণি) পদার্থের প্রকাশক (দেবঃ) (সবিতা) সূর্য্যলোক (মহীনাম্) লোক-লোকান্তরের পৃথিবীগুলিতে নেত্র সম্বন্ধী ব্যবহারের জন্য নিরন্তর তীব্র প্রকাশ দ্বারা (পয়ঃ) জলকে (প্রতিগৃভ্ণাতু) গ্রহণ করিয়া অন্নাদি পদার্থগুলিকে পুষ্টি করে সেইরূপ আমরাও উহাকে (অচ্ছিদ্রেণ) নিরন্তর (পাণিনা) ব্যবহার দ্বারা (মহীনাম্) পৃথিবীর (চক্ষুষে) পদার্থ সকলের দৃষ্টিগোচরতা হেতু স্বীকার করি ॥ ২০ ॥

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে লুপ্তোপমালঙ্কার আছে । যাহা যজ্ঞ দ্বারা শুদ্ধ কৃত অন্ন, জল ও পবনাদি পদার্থ উহা সকলের শুদ্ধি, বল, পরাক্রম ও দীর্ঘ আয়ু হেতু সমর্থ হয় । এইজন্য সকল মনুষ্যগণকে যজ্ঞকর্মের অনুষ্ঠান নিত্য করা উচিত তথা পরমেশ্বরের প্রকাশিত যে বেদ চতুষ্টয়ী অর্থাৎ চতুর্বেদের বাণী, উহা প্রত্যক্ষ করিবার জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহের ইচ্ছা তথা স্বীয় পুরুষকার করা উচিত । এবং যে প্রকার পরোপকারী মনুষ্যদিগের উপর ঈশ্বর কৃপা করেন সেইরূপ আমাদিগেরও সকল প্রাণীদিগের উপর নিত্য কৃপা করা উচিত অথবা যেমন অন্তর্য্যামী ঈশ্বর আত্মা ও বেদে সত্য জ্ঞান তথা সূর্য্যলোক সংসারে মূর্ত্তিমান পদার্থ সকলের নিরন্তর প্রকাশ দান করেন সেইরূপ আমাদের সকল মনুষ্যদিগকে পরস্পর সকলের সুখের জন্য সম্পূর্ণ বিদ্যা মনুষ্যদিগকে দৃষ্টিগোচর করাইয়া নিত্য প্রকাশিত করা উচিত এবং আমাদিগকে তাহার নিকট হইতে পৃথিবীর চক্রবর্তী রাজ্যাদি বহু উৎপন্ন সুখ সকল নিরন্তর উৎপন্ন করা উচিত ॥ ২০ ॥

দেবস্য ত্বেত্যস্যর্ষিঃ স এব । য়জ্ঞো দেবতা সর্বস্য । আদৌ সং বপামীত্যস্য গায়ত্রী ছন্দঃ । ষড্জঃ স্বরঃ । অন্ত্যস্য বিরাট্নিচৃৎ পংক্তিশ্ছন্দঃ । পঞ্চমঃ স্বরঃ ॥


দে॒বস্য॑ ত্বা সবি॒তুঃ প্র॑স॒বে᳕ऽশ্বিনো॑র্বা॒হুভ্যাং॑ পূ॒ষ্ণো হস্তা॑ভ্যাম্ । সং ব॑পামি॒ সমাপ॒ऽ ওষ॑ধীভিঃ॒ সমোষ॑ধয়ো॒ রসে॑ন । সꣳ রে॒বতী॒র্জগ॑তীভিঃ পৃচ্যন্তা॒ᳬ সং মধু॑মতী॒র্মধু॑মতীভিঃ পৃচ্যন্তাম্ ॥ ২১ ॥


পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! যেমন আমি (সবিতুঃ) সকল ঐশ্বর্য্য প্রদাতা (দেবস্য) পরমেশ্বরের (প্রসবে) উৎপন্ন কৃত প্রত্যক্ষ সংসারে সূর্য্যলোকের প্রকাশে (অশ্বিনোঃ) সূর্য্য ও ভূমির তেজের (বাহু ভ্যাম্) দৃঢ়তা পূর্বক (পূষ্ণঃ) পুষ্টিকারী বায়ুর (হস্তাভ্যাম্) প্রাণ ও অপান দ্বারা (ত্বা) পূর্বোক্ত তিন প্রকারের যজ্ঞের (সংবপামি) বিস্তার করি, সেইরূপ তোমরাও তাহার বিস্তার দ্বারা সিদ্ধ কর । যেমন এই উৎপন্ন হওয়া সংসারে (ওষধীভিঃ) যবাদি ওষধি দ্বারা (আপঃ) জল ও (ওষধয়ঃ) ওষধি (রসেন) আনন্দকারক রস দ্বারা তথা (জগতীভিঃ) উত্তম ওষধিসকলের দ্বারা (রেবতীঃ) উত্তম জল এবং যেমন (মধুমতীভিঃ) অত্যন্ত মধুর রসয়ুক্ত ওষধিসকলের দ্বারা (মধুমতীঃ) অত্যন্ত উত্তম রসরূপ জল, এই সমস্ত মিলিত হইয়া বৃদ্ধিযুক্ত হয়, সেইরূপ আমা সকল লোকদিগকেও ওষধি সকলের দ্বারা জল ও ওষধি, উত্তম জল দ্বারা তথা সকল উত্তম ওষধি দ্বারা উত্তম রসযুক্ত জল এবং অত্যুত্তম মধুর রসযুক্ত ওষধি দ্বারা প্রশংসনীয় রসরূপ জল এই সকলকে যথাযোগ্য পরস্পর (সংপৃচ্যন্তাম্) যুক্তি দ্বারা বৈদ্যক বা শিল্পশাস্ত্রের রীতিতে মিশ্রণ করা উচিত ॥ ২১ ॥

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে লুপ্তোপমালঙ্কার আছে । বিদ্বান্ মনুষ্যদিগকে ঈশ্বরের উৎপন্ন কৃত সূর্য্য দ্বারা প্রকাশ প্রাপ্ত এই সংসারে বহুবিধ প্রকারে সংপৃক্ত করিবার যোগ্য পদার্থ সকলের মিশ্রণ যোগ্য পদার্থের সহিত মিলিত করিয়া উক্ত তিন প্রকারের যজ্ঞের অনুষ্ঠান নিত্য করা উচিত । যেমন জল নিজের রস দ্বারা ওষধি সকলকে বৃদ্ধি করে এবং উহারা উত্তম রসযুক্ত জলের সংযোগ দ্বারা রোগনাশ করে বলিয়া সুখকর হয় এবং যেমন ঈশ্বর কারণ দ্বারা কার্য্যকে যথাবৎ রচনা করেন তথা সূর্য্য সকল জগৎ প্রকাশিত করিয়া এবং নিরন্তর রসভেদন করিয়া পৃথিবী ইত্যাদি পদার্থ সকলের আকর্ষণ করে তথা বায়ু রসকে ধারণ করিয়া পৃথিবী ইত্যাদি পদার্থ সকলকে পুষ্ট করে, সেইরূপ আমাদিগকেও যথাবৎ সংস্কারযুক্ত সংযুক্ত কৃত পদার্থসকল দ্বারা বিদ্বান্দিগের সঙ্গ তথা বিদ্যোন্নতি দ্বারা অথবা হোম শিল্প কার্য্যরূপী যজ্ঞ দ্বারা বায়ু ও জলের শুদ্ধি সর্বদা করা উচিত ॥ ২১ ॥

জনয়ত্যৈ ত্বেত্যস্যর্ষিঃ পূর্বোক্তঃ । প্রথতামিতিপর্য়্যন্তস্য য়জ্ঞো দেবতা । স্বরাট্ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ । ধৈবতঃ স্বরঃ । অন্ত্যস্যাগ্নিসবিতারৌ দেবতে । গায়ত্রী ছন্দঃ । ষড্জঃ স্বরঃ ॥

জন॑য়ত্যৈ ত্বা॒ সংয়ৌ॑মী॒দম॒গ্নেরি॒দম॒গ্নীষোম॑য়োরি॒ষে ত্বা॑ ঘ॒র্মো᳖ऽসি বি॒শ্বায়ু॑রু॒রুপ্র॑থাऽ উ॒রু প্র॑থস্বো॒রু তে॑ য়॒জ্ঞপ॑তিঃ প্রথতাম॒গ্নিষ্টে॒ ত্বচং॒ মা হি॑ꣳসীদ্দে॒বস্ত্বা॑ সবি॒তা শ্র॑পয়তু॒ বর্ষি॒ষ্ঠেऽধি॒ নাকে॑ ॥ ২২ ॥

পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! যেমন আমি (জনয়ত্যৈ) সর্ব সুখ উৎপন্নকারিণী রাজ্যলক্ষ্মীর জন্য (ত্বা) সেই যজ্ঞকে (সংয়ৌমি) অগ্নিমধ্যে পদার্থসকল ত্যাগ করিয়া যুক্ত করি, সেইরূপ তোমরাও অগ্নির সংযোগ দ্বারা সিদ্ধ কর । আমাদিগের (ইদম্) এই সংস্কার কৃত হবি (অগ্নেঃ) অগ্নিমধ্যে ত্যাগ করা হয় (ইদম্) ইহা বিস্তার প্রাপ্ত হইয়া (অগ্নীষোময়োঃ) অগ্নি ও সোমের মধ্যে পৌঁছাইয়া (ইষে) অন্নাদি পদার্থ উৎপন্ন করিবার জন্য হয় এবং যাহা (বিশ্বায়ঃ) পূর্ণ আয়ু এবং (উরুপ্রথা) বহু সুখদায়ক (ধর্মঃ) যজ্ঞ (অসি), তাহার যেমন আমি বহু প্রকার বিস্তার করি, সেইরূপ (ত্বা) উহাকে হে পুরুষগণ ! তোমরাও (উরুপ্রথস্ব) বিস্তৃত কর । এই প্রকার বিস্তারকারী (তে) তোমাদিগের জন্য (যজ্ঞপতিঃ) যজ্ঞের স্বামী (অগ্নিঃ) যজ্ঞ সম্পর্কীয় অগ্নি (তে) (সবিতা) অন্তর্য্যামী (দেবঃ) জগদীশ্বর (উরু প্রথাতম্) বহু প্রকার সুখ বৃদ্ধি করুন (তে ত্বচং) তোমাদের শরীরকে (মা হিংসীৎ) কখনও নষ্ট করিও না তথা সেই পরমেশ্বর (বর্ষিষ্ঠে) অতিশয় করিয়া বৃদ্ধি প্রাপ্ত (অধিনাকে) যাহা অত্যুত্তম সুখ তন্মধ্যে (ত্বা) তোমাদিগকে (শ্রপয়ন্তু) সুখপূর্বক যুক্ত করুন ॥ ইহা এই মন্ত্রের প্রথম অর্থ হইল ॥ এখন দ্বিতীয় বলা হইতেছে ॥ হে মনুষ্য! যেমন আমি (বিশ্বায়ু) পূর্ণ আয়ু তথা (উরুপ্রথাঃ) বহু সুখদায়ক (ধর্মঃ) যজ্ঞ (অসি)(ত্বা) সেইযজ্ঞকে (জনয়তৈ) রাজ্যলক্ষ্মী তথা (ইষে) অন্নাদি পদার্থ উৎপন্ন করিবার জন্য (সংয়ৌমি) সংযুক্ত করি তথা উহার সিদ্ধি হেতু (ইদম্) এই (অগ্নেঃ) অগ্নিমধ্যে এবং (ইদম্) এই (অগ্নীষোময়োঃ) অগ্নি ও সোম মধ্যে সংস্কার কৃত হবি (সংবপামি) ত্যাগ করি, সেইরূপ তোমরাও সেই যজ্ঞকে (উরু প্রথস্ব) বিস্তার প্রাপ্ত কর, যে কারণে এই (অগ্নিঃ) ভৌতিক অগ্নি (তে) তোমাদিগের (ত্বচম্) শরীরকে (মা হিংসীৎ) রোগ দ্বারা নষ্ট না করুক এবং যেমন (দেবঃ) জগদীশ্বর (সবিতা) অন্তর্য্যামী (বর্ষিষ্ঠে) অতিশয় করিয়া বৃদ্ধি প্রাপ্ত যাহা (অধিনাকে) অত্যুত্তম সুখ, তন্মধ্যে (ত্বা) সেই যজ্ঞকে অগ্নিমধ্যে পরিপক্ব করেন, সেইরূপ তোমরাও সেই যজ্ঞকে (শ্রপয়তু) পরিপক্ব কর এবং (তে) তোমাদিগের (য়জ্ঞপতিঃ) যজ্ঞের স্বামীও এই যজ্ঞকে (উরু প্রথতাম্) বিস্তারযুক্ত করুন ॥ ২২ ॥

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে লুপ্তোপমালঙ্কার জানিতে হইবে । মনুষ্যদিগকে এই প্রকারের যজ্ঞ করা উচিত যে, যাহাতে পূর্ণ লক্ষ্মী সকল আয়ু অন্নাদি পদার্থ রোগ নাশ এবং সকল সুখের বিস্তার হয়, উহাকে কখনও ত্যাগ করা সঙ্গত হইবে না, কেননা তাহাদের বিনা বায়ু ও বৃষ্টিজল তথা ওষধিসকলের শুদ্ধি হইতে পারে না এবং শুদ্ধি বিনা প্রাণীদিগের সম্যক্ সুখ হইতে পারে না এইজন্য ঈশ্বর উক্ত যজ্ঞ করার আজ্ঞা সকল মনুষ্যদিগকে প্রদান করিয়াছেন ॥ ২২ ॥

মা ভের্মেত্যস্যর্ষিঃ স এব । অগ্নির্দেবতা । বৃহতী ছন্দঃ । মধ্যমঃ স্বরঃ ॥

মা ভে॒র্মা সংবি॑ক্থা॒ऽঅত॑মেরুর্য়॒জ্ঞোऽত॑মেরু॒র্য়জ॑মানস্য প্র॒জা ভূ॑য়াৎত্রি॒তায়॑ ত্বা দ্বি॒তায়॑ ত্বৈক॒তায়॑ ত্বা ॥ ২৩ ॥

পদার্থঃ- হে বিদ্বান্ পুরুষগণ! তোমরা (অতমেরুঃ) শ্রদ্ধালু হইয়া (য়জমানস্য) যজমানের যজ্ঞের অনুষ্ঠান হইতে (মা ভেঃ) ভয় করিও না এবং তাহা হইতে (মা সংবিক্থা) পলায়ন করিও না । এই প্রকার (য়জ্ঞঃ) যজ্ঞ করিয়া তোমাদিগের উত্তম হইতে উত্তম (অতমেরুঃ) গ্লানিরহিত শ্রদ্ধাবান্ (প্রজা) সন্তান (ভূয়াৎ) প্রাপ্ত হউক এবং আমি (ত্বা) ভৌতিক অগ্নিকে উক্ত গুণযুক্ত তথা (একতায়) সত্য সুখ হেতু (দ্বিতীয়) বায়ু তথা বৃষ্টি জলের শুদ্ধি তথা (ত্রিতায়) অগ্নি কর্ম এবং হবি হওয়ার জন্য (সংয়ৌমি) স্থির করি ॥ ২৩ ॥

ভাবার্থঃ- ঈশ্বর সকল মনুষ্যদিগকে আজ্ঞা ও উপদেশ প্রদান করিতেছেন যে, কোনও মনুষ্যকে যজ্ঞ, সদাচার এবং বিদ্যা গ্রহণে ভীত বা পলায়নপর কখনও হওয়া উচিত নহে । কেননা মনুষ্যদিগের উক্ত যজ্ঞাদি ভাল ভাল কর্ম দ্বারাই উত্তমোত্তম সন্তান, শারীরিক, বাচিক ও মানসিক বিবিধ প্রকারের নিশ্চল সুখ প্রাপ্ত হইতে পারে ॥ ২৩ ॥

দেবস্য ত্বেত্যস্যর্ষিঃ স এব । দ্যোবিদ্যুতৌ দেবতে । স্বরাড্ব্রাহ্মী পংক্তিশ্ছন্দঃ । পঞ্চমঃ স্বরঃ ॥

দে॒বস্য॑ ত্বা সবি॒তুঃ প্র॑স॒বে᳕ऽশ্বিনো॑র্বা॒হুভ্যাং॑ পূ॒ষ্ণো হস্তা॑ভ্যাম্ । 

আ দ॑দেऽধ্বর॒কৃতং॑ দে॒বেভ্য॒ऽ ইন্দ্র॑স্য বা॒হুর॑সি॒ দক্ষি॑ণঃ স॒হস্র॑ভৃষ্টিঃ শ॒ততে॑জা বা॒য়ুর॑সি তি॒গ্মতে॑জা দ্বিষ॒তো ব॒ধঃ ॥ ২৪ ॥

পদার্থঃ- আমি (সবিতুঃ) অন্তর্য্যামী প্রেরণাকারী (দেবস্য) সর্ব আনন্দদায়ক পরমেশ্বরের (প্রসবে) প্রেরণায় (অশ্বিনোঃ) সূর্য্য - চন্দ্র এবং অধ্বর্য্যুদিগের (বাহুভ্যাং) বল ও বীর্য্য দ্বারা তথা (পূষ্ণঃ) পুষ্টিকারক বায়ুর (হস্তাভ্যাম্) যাহা গ্রহণ ও ত্যাগের হেতু উদান ও অপান তাহা হইতে (দেবেভ্যঃ) বিদ্বান্ অথবা দিব্য সুখের প্রাপ্তি হেতু (অধ্বরকৃতম্) যজ্ঞ দ্বারা সুখকারক (ত্বা) সেই কর্মকে (আদদে) ভাল প্রকারে গ্রহণ করি এবং আমার দ্বারা সম্পন্ন যে যজ্ঞ উহা (ইন্দ্রস্য) সূর্য্যের (সহস্রভৃষ্টিঃ) যাহাতে বহু প্রকার পদার্থ হজম করিবার সামর্থ্য বা (শততেজাঃ) বহু প্রকারের তেজ তথা (দক্ষিণঃ) প্রাপ্তকারী (বাহুঃ) কিরণসমূহ (অসি) আছে এবং যে (ইন্দ্রস্য) সূর্য্য বা মেঘমন্ডলের (তিগ্মতেজাঃ) তীক্ষ্ন তেজ যুক্ত (বায়ুঃ) বায়ু হেতু (অসি) আছে উহা দ্বারা আমাদিগের বহু প্রকারের সুখ তথা (দ্বিষতঃ) শত্রুদিগের (বধঃ) নাশ করা উচিত ॥ ২৪ ॥

ভাবার্থঃ- ঈশ্বর আজ্ঞা করিতেছেন যে, মনুষ্যদিগের সম্যক্ প্রকার প্রতিপন্ন করা যজ্ঞ যাহাতে ভৌতিক অগ্নির সংযোগের ফলে উপর হইতে ভাল ভাল পদার্থ ত্যাগ করা হয় উহা সূর্য্যের কিরণে স্থির হয় এবং পবন উহাকে ধারণ করে এবং উহা সকলের উপকার হেতু সহস্র সুখ প্রাপ্ত করাইয়া দুঃখ সকলের বিনাশ করিয়া থাকে ॥ ২৪ ॥

পৃথিবীত্যস্য ঋষিঃ স এব । সবিতা দেবতা । বিরাড্ব্রাহ্মী ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ । ধৈবতঃ স্বরঃ ॥

পৃথি॑বি দেবয়জ॒ন্যোষ॑ধ্যাস্তে॒ মূলং॒ মা হি॑ꣳসিষং ব্র॒জং গ॑চ্ছ গো॒ষ্ঠানং॒ বর্ষ॑তু তে॒ দ্যৌর্ব॑ধা॒ন দে॑ব সবিতঃ পর॒মস্যাং॑ পৃথি॒ব্যাᳬশ॒তেন॒ পাশৈ॒র্য়ো᳕ऽস্মান্দ্বেষ্টি॒ য়ং চ॑ ব॒য়ং দ্বি॒ষ্মস্তমতো॒ মা মৌ॑ক্ ॥ ২৫ ॥

পদার্থঃ- হে (দেব) সূর্য্যাদি জগতের প্রকাশক তথা (সবিতা) রাজ্য ও ঐশ্বর্য্যদাতা পরমেশ্বর ! (তে) আপনার কৃপাবলে আমি (দেবয়জনি) বিদ্বান্দিগের যজ্ঞ করিবার স্থান (তে) এই যে (পৃথিবি) ভূমি উহার (এবং (ওষধ্যাঃ) যে যবাদি ওষধি সকল তাহাদিগের (মূলম্) বৃদ্ধিকারী মূলকে (মা হিংসিষম্) নাশ না করি এবং আমি (পৃথিব্যাম্) বহু প্রকার সুখদায়ক ভূমিতে (য়ঃ) যে যজ্ঞের অনুষ্ঠান করি উহা (ব্রজম্) জলবৃষ্টিকারক মেঘ (গচ্ছ) প্রাপ্ত হউক, সেখানে যাইয়া (গোষ্ঠানম্) সূর্য্যের কিরণগুলির গুণ দ্বারা (বর্ষতু) বরিষণ করে এবং (দ্যৌঃ) সূর্য্যের প্রকাশ (বর্ষতু) বরিষণ করে । হে বীর পুরুষগণ । আপনারা (অস্যাম্) এই উৎকৃষ্ট পৃথিবীতে (য়ঃ) যে কেহ অধর্মাত্মা ডাকাইত (অস্মান্) সকলের উপকারকারী ধর্মাত্মা সজ্জন আমাদিগের সহিত (দ্বেষ্টি) বিরোধিতা করে (চ) এবং (য়ম্) যে দুষ্ট শত্রুর সহিত (বয়ম্) ধার্মিক শূরবীর আমরা (দ্বিষ্মঃ) বিরোধিতা করি (তম্) সেই দুষ্ট (পরম্) শত্রুকে (শতেন) বহু (পাশৈঃ) বন্ধন দ্বারা (বধান) বাঁধিয়া লহ এবং তাহাকে (অতঃ) এই বন্ধন হইতে কখনও (মা মৌক্) মুক্ত করিও না ॥ ২৫ ॥

ভাবার্থঃ- ঈশ্বর আজ্ঞা প্রদান করিতেছেন যে, বিদ্বান্ মনুষ্যদিগকে পৃথিবীর রাজ্য তথা সেই পৃথিবীতে তিন প্রকারের যজ্ঞ ও ওষধি সকল ইহাদের নাশ কখনও করা উচিত নহে । যজ্ঞাগ্নিতে হবনকৃত পদার্থগুলির ধূম মেঘমণ্ডলে যাইয়া শুদ্ধি দ্বারা অত্যন্ত সুখ উৎপন্নকারী হয়, ইহার ফলে এই যজ্ঞ কোনও পুরুষ কখনও ত্যাগ করিবে না । এবং যেসব দুষ্ট মনুষ্য আছে তাহাদিগকে এই পৃথিবীর উপর বহু বন্ধন দ্বারা বাঁধিয়া লহ এবং তাহাদিগকে কখনও মুক্ত করিবে না যাহাতে তাহারা দুষ্ট কর্ম হইতে নিবৃত্ত হয় । সকল মনুষ্যগণের উচিত যে, পরস্পর ঈর্ষা-দ্বেষ হইতে পৃথক থাকিয়া একে অপরের সর্বপ্রকার সুখের উন্নতি হেতু সর্বদা প্রচেষ্টা করিবে ॥ ২৫ ॥

অপাররুমিত্যস্য সর্বস্য ঋষিঃ স এব । সবিতা দেবতা । পূর্বার্দ্ধে স্বরাড্ব্র্রাহ্মী পংক্তিশ্ছন্দঃ । উত্তরার্ধে ভুরিগ্ব্রাহ্মী পংক্তিশ্ছন্দঃ । পঞ্চমঃ স্বরঃ ॥

অপা॒ররুং॑ পৃথি॒ব্যৈ দে॑ব॒য়জ॑নাদ্বধ্যাসং ব্র॒জং গ॑চ্ছ গো॒ষ্ঠানং॒ বর্ষ॑তু তে॒ দ্যৌর্ব॑ধা॒ন দে॑ব সবিতঃ পর॒মস্যাং॑ পৃথি॒ব্যাᳬশ॒তেন॒ পাশৈ॒র্য়ো᳕ऽস্মান্দ্বেষ্টি॒ য়ং চ॑ ব॒য়ং দ্বি॒ষ্মস্তমতো॒ মা মৌ॑ক্ । অর॑রো॒ দিবং॒ মা প॑প্তো দ্র॒প্সস্তে॒ দ্যাং মা স্ক॑ন্ব্র॒জং গ॑চ্ছ গো॒ষ্ঠানং॒ বর্ষ॑তু তে॒ দ্যৌর্ব॑ধা॒ন দে॑ব সবিতঃ পর॒মস্যাং॑ পৃথি॒ব্যাᳬশ॒তেন॒ পাশৈ॒র্য়ো᳕ऽস্মান্দ্বেষ্টি॒ য়ং চ॑ ব॒য়ং দ্বি॒ষ্মস্তমতো॒ মা মৌ॑ক্ ॥ ২৬ ॥

পদার্থঃ- হে সর্বানন্দ দাতা জগদীশ্বর ! (সবিতঃ) সর্ব প্রাণিদিগের অন্তর্য্যামী, সত্যপ্রকাশকারী, আপনার কৃপা বলে আমরা পরস্পর উপদেশ করি যে, যেমন এই সকলের প্রকাশকারী সূর্য্যলোক এই পৃথিবীতে অনেক বন্ধন হেতু কিরণ সকল দ্বারা আকৃষ্ট করিয়া পৃথিবী ইত্যাদি সব পদার্থকে বাঁধিয়া লয় সেইরূপ তোমরাও দুষ্টদিগকে বাঁধিয়া ভাল ভাল গুণের প্রকাশ কর এবং যেমন আমি (পৃথিব্যৈ) পৃথিবীতে (দেবয়জনাৎ) বিদ্বান্ লোকেরা যে সংগ্রাম হইতে ভাল ভাল পদার্থ অথবা উত্তমোত্তম বিদ্বান্দিগের সংগতি লাভ করেন তদ্দ্বারা (অররুম্) দুষ্ট স্বভাবযুক্ত শত্রুদিগকে (অপবধ্যাসম্) বধ করি সেইরূপ তোমরাও তাহাদিগকে বধ কর তথা যেমন আমি (ব্রজম্) উত্তমোত্তম গুণ প্রকাশকারী সজ্জনদিগের সঙ্গ প্রাপ্ত হইতেছি সেইরূপ তোমরাও উহা (গচ্ছ) প্রাপ্ত হও । যেমন আমি (গোষ্ঠানম্) পঠন-পাঠন ব্যবহার জ্ঞাপনকারী মেঘের গর্জন তুল্য বেদবাণীকে ভাল ভাল শব্দরূপী বিন্দু দ্বারা হরষিত করি সেইরূপ তোমরাও (বর্ষতু) বরিষণ কর । যেমন আমার বিদ্যার (দ্যৌঃ) শোভা সকলে দৃষ্টিগোচর করে সেইরূপ (তে) তোমাদিগেরও বিদ্যা সুশোভিত হউক । যেমন আমি (য়ঃ) যাহারা মূর্খ (অস্মান্) বিদ্যা প্রচারক আমাদিগের সহিত (দ্বেষ্টি) দ্বেষ করে (চ) এবং (য়ম্) যে বিদ্যাবিরোধীজনকে (বয়ম্) আমরা বিদ্বান্গণ (দ্বিষ্মঃ) দুষ্ট মনে করি (তম্) সেই (পরম্) বিদ্যার শত্রুকে (অস্যাম্) এই সব পদার্থের ধারণ করিবার এবং বিবিধ সুখ প্রদাতা (পৃথিব্যাম্) পৃথিবীতে (শতেন) বহু প্রকারে (পাশৈঃ) বন্ধন দিয়া নিত্য বাঁধি, কখনও তাহাকে মুক্ত করি না, সেইরূপ হে বীরগণ । তোমরা তাহাকে (বধান) বাঁধিয়া লহ, কখনও তাহাকে (অতঃ) সেই বন্ধন হইতে (মা মৌক্) মুক্ত করিও না এবং যে দুষ্ট ব্যক্তি আমাদের সহিত বিরোধিতা করে তথা যে দুষ্টের সহিত আমরা বিরোধিতা করি তাহাকে সেই বন্ধন হইতে কোন মনুষ্য মুক্ত করিবে না । এই প্রকার সকলে তাহাকে উপদেশ করিতে থাকিবে যে, হে (অররো) দুষ্টপুরুষ । তুমি (দিবম্) প্রকাশ উন্নতি (মা পপ্তঃ) প্রাপ্ত হইও না তথা (তে) তোমার (দ্রপ্সঃ) আনন্দদাতা বিদ্যারূপী রস (দ্যাম) আনন্দকে (মা স্কন্) প্রাপ্ত করিও না । হে শ্রেষ্ঠ পথগামী মনুষ্যগণ । যেমন আমি (ব্রজম্) বিদ্বান্দিগের প্রাপ্ত হওয়ার যোগ্য শ্রেষ্ঠ মার্গ প্রাপ্ত হই সেইরূপ তোমরাও (গচ্ছ) উহা প্রাপ্ত হও । যেমন এই (দ্যৌঃ) সূর্য্যের প্রকাশ (গৌষ্ঠানম্) পৃথিবীর স্থান অন্তরিক্ষের সেচন করে সেইরূপই ঈশ্বর বা বিদ্বান্ পুরুষ (তে) তোমার কামনাগুলিকে (বর্ষতু) বরিষণ করুন অর্থাৎ ক্রম সহ পূর্ণ করুন । যেমন এই (দেব) ব্যবহারের হেতু (সবিতঃ) সূর্য্যলোক (অস্যাম্) এই বীজ বপনের যোগ্য (পৃথিব্যাম্) বহু প্রজাযুক্ত পৃথিবীতে (শতেন) বহু (পাশৈঃ) বন্ধনের হেতু কিরণগুলির দ্বারা আকর্ষণ সহ পৃথিবী ইত্যাদি সব পদার্থকে বন্ধন করে সেইরূপ তোমরাও দুষ্টদিগকে বাঁধো এবং (য়ঃ) যে ন্যায়বিরোধী (অস্মান্) ন্যায়াধীশ আমাদের সহিত (দ্বেষ্টি) দ্বেষভাব পোষণ করে (চ) এবং (য়ম্) অন্যায়কারীর উপর (বয়ম্) সম্পূর্ণ হিতসম্পাদনকারী আমরা (দ্বিষ্মঃ) দ্বেষ করি (তম্) সেই (পরম্) শত্রুকে (অস্যাম্) এই (পৃথিব্যাম্) উক্ত গুণযুক্ত পৃথিবীতে (শতেন) বহু (পাশৈঃ) সাম, দাম, দন্ড ও ভেদাদি প্রচেষ্টার সহিত বাঁধি এবং যেমন আমি তাহাকে সেই দন্ড দিয়া বাঁধিয়া কখনও মুক্ত করি না সেইরূপ তোমরাও (বধান) বাঁধো অর্থাৎ বন্ধন রূপ দন্ড সর্বদা দাও । কখনও তাহাকে (মা মৌক) মুক্ত করিও না ॥ ২৬

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে লুপ্তোপমালংকার আছে । ঈশ্বর আজ্ঞা প্রদান করিতেছেন যে, হে মনুষ্যগণ ! তোমাদিগের বিদ্যার সিদ্ধকারী কার্য্যের নিয়মে বিঘ্নকারী দুষ্ট জীবকে সর্বদা হত্যা করা উচিত এবং সজ্জনদিগের সমাগম সহ বিদ্যার বৃদ্ধি নিত্য করা উচিত । যে প্রকার বহু প্রচেষ্টা দ্বারা শ্রেষ্ঠদিগের ক্ষতি, দুষ্টদিগের বৃদ্ধি না হয় ইহাই নিয়ম করা উচিত এবং সর্বদা শ্রেষ্ঠ সজ্জনদিগের আদর-যত্ন তথা দুষ্টদিগকে দন্ড দেওয়ার জন্য তাহাদেরকে বন্ধন করা উচিত । পরস্পর প্রীতি সহ বিদ্যা ও শরীরের বল সম্পাদন করিয়া ক্রিয়া ও কলাযন্ত্র দ্বারা অনেক মান রচনা করিয়া সকলকে সুখ প্রদান করা, ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন তথা ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত ॥ ২৬ ॥

গায়ত্রেণেত্যস্য ঋষিঃ স এব । য়জ্ঞো দেবতা । ব্রাহ্মীত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ । ধৈবতঃ স্বরঃ ॥

গা॒য়॒ত্রেণ॑ ত্বা॒ ছন্দ॑সা॒ পরি॑ গৃহ্ণামি॒ ত্রৈষ্টু॑ভেন ত্বা॒ ছন্দ॑সা॒ পরি॑ গৃহ্ণামি॒ জাগ॑তেন ত্বা॒ ছন্দ॑সা॒ পরি॑ গৃহ্ণামি॒ । সু॒ক্ষ্মা চাসি॑ শি॒বা চা॑সি স্যো॒না চাসি॑ সু॒ষদা॑ চা॒সূ্যর্জ॑স্বতী॒ চাসি॒ পয়॑স্বতী চ ॥ ২৭ ॥

পদার্থঃ- যে যজ্ঞের দ্বারা উত্তম পদার্থ সহ (সুক্ষ্মা) এই পৃথিবী শোভায়মান (অসি) হয় (চ) তথা উত্তমোত্তম সুখ সহ এই পৃথিবী (স্যোনা) সুখ উৎপন্ন কারক (অসি) হয় (চ) এবং যাহা হইতে উত্তমোত্তম সুখকারক ইহা (সুষদা) সুখপূর্বক স্থিতি করিবার যোগ্য হয় (চ) তথা যে উত্তম যবাদি অন্ন সহ ইহা (ঊর্জস্বতী) অন্নযুক্ত (অসি) হয় (চ) এবং যে উত্তম মধুরাদি রসযুক্ত ফলের কারণে এই পৃথিবী (পয়স্বতী) প্রশংসা করিবার যোগ্য রসযুক্তা (অসি) হয় । (ত্বা) সেই যজ্ঞকে আমি যজ্ঞবিদ্যার জ্ঞাতা মনুষ্য (গায়ত্রেণ) গায়ত্রী (ছন্দসা) যাহা চিত্ত প্রফুল্লিত করে তাহা দ্বারা (পরিগৃহ্নামি) সর্ব প্রকারে সিদ্ধ করি এবং আমি (ত্রৈপ্টুভেন) ত্রিষ্টুপ (ছন্দসা) যাহা স্বতন্ত্রতা রূপে আনন্দ প্রদাতা তাহা দ্বারা (ত্বা) পদার্থ সমূহকে (পরিগৃহ্নামি) সর্বপ্রকারে সংগ্রহ করি তথা আমি (জাগতেন) জগতী যাহা (ছন্দসা) অত্যন্ত আনন্দের প্রকাশক তাহা দ্বারা (ত্বা) সেই ভৌতিক অগ্নিকে (পরিগৃহ্নামি) ভাল প্রকার স্বীকার করি ॥ ২৭ ॥

ভাবার্থঃ- বেদ প্রকাশক ঈশ্বর আমাদের প্রতি বলেন যে–হে মনুষ্যগণ । তোমরা বেদমন্ত্র পাঠ না করিয়া এবং তাহার অর্থ না জানিয়া যজ্ঞানুষ্ঠান অথবা সুখরূপ ফল প্রাপ্ত করিতে এবং সব শুভ গুণযুক্ত সুখকারী অন্ন, জল ও বায়ু ইত্যাদি পদার্থদিগকে শুদ্ধ করিতে পারিবে না । ইহার দ্বারা এই তিন প্রকার যজ্ঞের সিদ্ধি যত্নপূর্বক সম্পাদন করিয়া সর্বদা সুখেই থাকা উচিত এবং এই পৃথিবীতে বায়ু, জল তথা ওষধিকে দূষিতকারী দুর্গন্ধ অপগুণ ও দুষ্ট মনুষ্য আছে তাহাদের সর্বদা নিবারণ করা উচিত ॥ ২৭ ॥

পুরা ক্রূরস্যেত্যস্য ঋষিঃ স এব । য়জ্ঞো দেবতা । বিরাড্ ব্রাহ্মী পংক্তিশ্ছন্দঃ । পঞ্চমঃ স্বরঃ ॥

পু॒রা ক্রূ॒রস্য॑ বি॒সৃপো॑ বিরপ্শিন্নুদা॒দায়॑ পৃথি॒বীং জী॒বদা॑নুম্ ।

য়ামৈর॑য়ঁশ্চ॒ন্দ্রম॑সি স্ব॒ধাভি॒স্তামু॒ ধীরা॑সোऽঅনু॒দিশ্য॑ য়জন্তে ।

প্রোক্ষ॑ণী॒রা সা॑দয় দ্বিষ॒তো ব॒ধো᳖ऽসি ॥ ২৮ ॥

পদার্থঃ- হে (বিরপ্শিন) মহাশয়, মহাগুণবান্ জগদীশ্বর । আপনি (য়াম্) যে (স্বধাভিঃ) অন্নাদি পদার্থযুক্ত এবং (জীবদানুম্) প্রাণিদিগের জীবনদাতা পদার্থ তথা (পৃথিবীম্) বহু প্রজাযুক্ত পৃথিবীকে (উদাদায়) উপরে উঠাইয়া (চন্দ্রমসি) চন্দ্রলোকের সমীপে স্থাপন করিয়াছেন এই কারণে (তাম্) সেই পৃথিবীকে (ধীরাসঃ) ধীরবুদ্ধি সম্পন্ন পুুরুষ প্রাপ্ত হইয়া আপনার (অনুদিশ্য) অনুকূল চলিয়া ((য়জন্তে)) যজ্ঞের অনুষ্ঠান নিত্য করিয়া থাকেন । যেমন – (চন্দ্রমসি) আনন্দে বর্ত্তমান থাকিয়া (ধীরাসঃ) বুদ্ধিমান পুরুষ (য়াম্) যে (জীবদানুম্) জীবের হিতকারক (পৃথিবীম্) পৃথিবীর ((অনুদিশ্য)) আশ্রিত হইয়া সেনা ও শস্ত্রকে (উদাদায়) ক্রমপূর্বক লইয়া (বিসৃপঃ) যুদ্ধ করিবার পুরুষদিগের প্রভাব দেখাইবার যোগ্য এবং (ক্রূরস্য) শত্রুদের অঙ্গ বিদীর্ণকারী সংগ্রাম মধ্যে শত্রুদেরকে জিতিয়া রাজ্য (ঐরয়ন্) প্রাপ্ত হন তথা যেমন এই উক্ত প্রকারে ধীর পুরুষ (পুরা) প্রথম সময়ে প্রাপ্ত যে সব ক্রিয়াদের দ্বারা (প্রোক্ষণীঃ, উ) ভাল প্রকার পদার্থগুলিকে সিঞ্চন করিয়া তাহাদিগকে (আসাদয়) সম্পাদন করেন সেইরূপই (বিরপ্শিন) মহান্ ঐশ্বর্য্যের ইচ্ছুক পুরুষ । তুমিও উহা প্রাপ্ত হইয়া ঈশ্বর পূজন তথা পদার্থ সিদ্ধি করিবার উত্তমোত্তম ক্রিয়াগুলির সম্পাদন কর । যেমন (দ্বিষতঃ) শত্রুদিগের (বধঃ) নাশ হয় সেইরূপ কর্ম সকল করিয়া নিত্য আনন্দে বর্ত্তমান থাক ॥ ২৮ ॥

ভাবার্থঃ- যে ঈশ্বর ক্রমপূর্বক অন্তরিক্ষে পৃথিবী, পৃথিবীর সমীপ চন্দ্রলোক, চন্দ্রলোকের সমীপ পৃথিবী, একে অন্যের সমীপ নক্ষত্র লোক এবং সকলের মধ্যে অনেক সূর্য্যলোক তথা এই সকলের মধ্যে নানা প্রকার প্রজা রচনা করিয়া স্থাপন করিয়াছেন সেই পরমেশ্বর সকল মনুষ্যদিগের উপাসনা করিবার যোগ্য । যতক্ষণ মনুষ্য বল ও ক্রিয়া সকলের সহিত যুক্ত হইয়া শত্রুদেরকে জয় করেন না ততক্ষণ রাজ্য সুখ প্রাপ্ত হইতে পারেন না কেননা বিনা যুদ্ধ ও বলে শত্রু কখনও ভয় পায়না তথা বিদ্বান্গণ বিদ্যা, ন্যায় ও বিনয় বিনা যথাবৎ প্রজা পালন করিতে সক্ষম হইতে পারেন না । এই কারণে সকলকে জিতেন্দ্রিয় হইয়া উক্ত পদার্থ সম্পাদন করিয়া সকলের সুখের জন্য উত্তমোত্তম প্রচেষ্টা করা উচিত ॥ ২৮ ॥

প্রত্যুষ্টমিত্যস্য ঋষিঃ স এব । য়জ্ঞো দেবতা সর্বস্য । পূর্বার্ধে ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ । ধৈবতঃ স্বরঃ । উত্তরার্ধে ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ । ধৈবতঃ স্বরঃ ॥

প্রত্যু॑ষ্ট॒ꣳ রক্ষঃ॒ প্রত্যু॑ষ্টা॒ऽ অরা॑তয়ো॒ নিষ্ট॑প্ত॒ꣳ রক্ষো॒ নিষ্ট॑প্তা॒ऽ অরা॑তয়ঃ । অনি॑শিতোऽসি সপত্ন॒ক্ষিদ্বা॒জিনং॑ ত্বা বাজে॒ধ্যায়ৈ॒ সং মা॑র্জ্মি ।

 প্রত্যু॑ষ্ট॒ꣳ রক্ষঃ॒ প্রত্যু॑ষ্টা॒ऽ অরা॑তয়ো॒ নিষ্ট॑প্ত॒ꣳ রক্ষো॒ নিষ্ট॑প্তা॒ऽ অরা॑তয়ঃ । অনি॑শিতাऽসি সপত্ন॒ক্ষিদ্বা॒জিনীং॑ ত্বা বাজে॒ধ্যায়ৈ॒ সং মা॑র্জ্মি ॥ ২ঌ ॥

পদার্থঃ- আমি যে (অনিশিতঃ) অতিবিস্তৃত (সপত্নক্ষিৎ) শত্রুদিগের নাশকারী সংগ্রাম দ্বারা (প্রত্যুষ্টং রক্ষঃ) বিঘ্নকারী প্রাণী এবং (প্রত্যুষ্টা অরাতয়ঃ) যাহাতে সত্যবিরোধী ভাল প্রকার দাহ রূপ দন্ড প্রাপ্ত (অসি) হয় অথবা (নিষ্টপ্তং রক্ষঃ) যে বন্ধন হইতে বাঁধিবার যোগ্য (নিষ্টৃপ্তা অরাতয়ঃ) বিদ্যার বিঘ্নকারী নিরন্তর সন্তাপ প্রাপ্ত হইয়া থাকে (ত্বা) সেই (বাজিনম্) বেগাদি গুণযুক্ত সংগ্রামকে (বাজেধ্যায়ৈ) যাহা অন্নাদি পদার্থ দ্বারা বলবান করিবার যোগ্য সেনা, তাহার জন্য যুদ্ধের সাধনকে (সমাজির্ম) ভাল প্রকার শুদ্ধ করি অর্থাৎ উহার দোষগুলি বিনষ্ট করি এবং আমি যে (সপ্তত্নক্ষিৎ) শত্রুদিগের নাশকারী এবং (অশিতা) অতি বিস্তারযুক্ত সেনা দ্বারা (প্রত্যুষ্টংরক্ষঃ) পরসুখ সহ্য না করা মনুষ্য অথবা (প্রত্যুষ্টা অরাতয়ঃ) উক্ত অবগুণযুক্ত বহু মনুষ্য (নিষ্টপ্তংরক্ষঃ) জুয়া খেলা এবং পরস্ত্রীগমন করা তথা (নিষ্টপ্তা অরাতয়ঃ) অন্যান্যকে সর্বপ্রকার দুঃখদানকারী মনুষ্য সম্যক্ প্রকার বাহির করিয়া দেওয়া হয় (ত্বা) সেই (বাজিনীম্) বল ও বেগাদি গুণযুক্ত সেনাকে (বাজেধ্যায়ৈ) বহু সাধন দ্বারা প্রকাশিত করিবার জন্য (সংমাজির্ম) ভাল প্রকার উত্তমোত্তম শিক্ষা দ্বারা শুদ্ধ করি (এটা প্রথম অর্থ হইল) এবং যাহা (অনিশিতঃ) বড় ক্রিয়াগুলি দ্বারা সিদ্ধ হইবার যোগ্য অথবা (সপত্নক্ষিৎ) দোষসকল বা শত্রুদিগের বিনাশকারী (প্রত্যুষ্টং রক্ষঃ) বিঘ্নকারী প্রাণী এবং (প্রত্যুষ্টা অরাতয়ঃ) যাহাতে সত্যবিরোধী ভাল প্রকার দাহরূপ দন্ড প্রাপ্ত (অসি) হয় অথবা (নিষ্টপ্তং রক্ষঃ) যে বন্ধন দ্বারা বাঁধিবার যোগ্য (নিষ্টপ্তা অরাতয়ঃ) বিদ্যার বিঘ্নকারী নিরন্তর সন্তাপ প্রাপ্ত হয় (ত্বা) সেই (বাজিনম্) যজ্ঞকে (বাজেধ্যায়ৈ) অন্নাদি পদার্থসকলের প্রকাশিত হইবার জন্য (সংমাজির্ম) শুদ্ধতাপূর্বক সিদ্ধ করি । এইভাবে যে (সপত্নক্ষিৎ) শত্রুদিগের নাশকারী (অনীশিতা) অতিবিস্তার যুক্ত ক্রিয়া দ্বারা (প্রত্যুষ্টং রক্ষঃ) বিঘ্নকারী প্রাণী ও (প্রতুষ্টা অরাতয়ঃ) দুর্গুণ তথা নীচ মনুষ্য বিনষ্ট হয় (নিষ্টপ্তং রক্ষঃ) কাম, ক্রোধাদি রাক্ষসী ভাব দূর হয় (নিষ্টপ্তা অরাতয়ঃ) যাহাতে দুঃখ তথা দুর্গন্ধাদি দোষ বিনষ্ট (অসি) হয় (ত্বা) সেই (বাজিনীং) সৎক্রিয়াকে (বাজেধ্যায়ৈ) অন্নাদি পদার্থগুলির প্রকাশিত হওয়ার জন্য (সম্মাজির্ম) ভাল প্রকার সিদ্ধ করি । এইভাবে আপনিও এই যজ্ঞ তথা সৎক্রিয়াকে পবিত্রতাপূর্বক সিদ্ধ করুন (ইহা দ্বিতীয় অর্থ হইল) ॥ ২ঌ ॥

ভাবার্থঃ- ঈশ্বর আজ্ঞা প্রদান করিতেছেন যে, মনুষ্যদিগকে বিদ্যা ও শুভ গুণ সকলের প্রকাশ এবং দুষ্টশত্রুদের নিবৃত্তি হেতু নিত্য পুরুষার্থ করা উচিত তথা সর্বদা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা অস্ত্র শস্ত্র এবং সৎপুরুষযুক্ত উত্তম সেনা দ্বারা শ্রেষ্ঠদিগের রক্ষা তথা দুষ্টদিগের বিনাশ করা উচিত যাহার ফলে অশুদ্ধি ইত্যাদি দোষগুলির বিনষ্ট হওয়ায় সর্বত্র শুদ্ধ গুণ প্রবৃত্ত হইতে পারে ॥ ২ঌ ॥

অদিত্যা ইত্যস্য ঋষিঃ স এব । য়জ্ঞো দেবতা । নিচৃজ্জগতী ছন্দঃ । নিষাদঃ স্বরঃ ॥

অদি॑ত্যৈ॒ রাস্না॑সি॒ বিষ্ণো॑র্বে॒ষ্পো᳖ऽসূ্য॒র্জে ত্বাऽদ॑ব্ধেন ত্বা॒ চক্ষু॒ষাব॑ পশ্যামি । অ॒গ্নের্জি॒হ্বাসি॑ সু॒হূর্দে॒বেভ্যো॒ ধাম্নে॑ধাম্নে মে ভব॒ য়জু॑ষে য়জুষে ॥ ৩০ ॥

পদার্থঃ- হে জগদীশ্বর । আপনি (অদিত্যৈ) পৃথিবীর (রাস্না) রসাদি পদার্থ সকলের উৎপন্নকারী (অসি) হয়েন (বিষ্ণো) ব্যাপক (বেষ্পঃ) পৃথিবী ইত্যাদি সব পদার্থে প্রবর্ত্তমান ও (অসি) আছেন তথা (অগ্নেঃ) ভৌতিক অগ্নির (জিহ্বা) জিহ্বারূপ (অসি) হয়েন অথবা (দেবেভ্যঃ) বিদ্বান্দিগের জন্য (ধাম্নে ধাম্নে) যাহাতে সেই সব বিদ্বান্ সুখরূপ পদার্থগুলি প্রাপ্ত হয়েন যাহা তিনটি ধাম অর্থাৎ স্থান, নাম ও জন্ম সেই সব ধর্মের প্রাপ্তির তথা (য়জুষে য়জুষে) যজুর্বেদের মন্ত্র-মন্ত্রের তাৎপর্য্য প্রকাশিত হওয়ার জন্য (সূহ্ব) যাহা শ্রেষ্ঠতাপূর্বক স্তুতি করিবার যোগ্য এই প্রকার (ত্বা) আপনাকে আমি (অদব্ধেন) প্রেমসুখযুক্ত (চক্ষুষা) বিজ্ঞান দ্বারা (উর্জ্জে) পরাক্রম (অদিত্যৈ) পৃথিবী তথা (দেবেভ্যঃ) শ্রেষ্ঠ গুণ সকল বা (ধাম্নে ধাম্নে) স্থান, নাম ও জন্মাদি পদার্থ সকলের প্রাপ্তি তথা (য়জুষে য়জুষে) যজুর্বেদের মন্ত্র-মন্ত্রের তাৎপর্য্য জানিবার জন্য (ত্বা) আপনাকে (অবপশ্যামি) জ্ঞান রূপী নেত্র দ্বারা দর্শন করি, আপনিও কৃপা করিয়া (মে) আমাকে বিদিত ও আমার পূজন প্রাপ্ত (ভব) হউন । ইহা এই মন্ত্রের প্রথম অর্থ হইল ॥ এখন দ্বিতীয় বলা হইতেছে ॥ যে কারণে এই যজ্ঞ (অদিত্যৈ) অন্তরিক্ষের সম্পর্কযুক্ত (রাস্না) রসাদি পদার্থের ক্রিয়ার কারণ (অমি) হয় (বিষ্ণোঃ) যজ্ঞসম্পর্কীয় কার্য্যের (বেষ্পঃ) ব্যাপক, (অগ্নেঃ) ভৌতিক অগ্নির (জিহ্বা) জিহ্বারূপ, (দেবেভ্যঃ) তথা দিব্যগুণ (ধাম্নে ধাম্নে) কীর্ত্তি, স্থান ও জন্ম ইহাদের প্রাপ্তি অথবা (মে) আমার জন্য (য়জুষে য়জুষে) যজুর্বেদের মন্ত্র-মন্ত্রের তাৎপর্য্য জানিবার জন্য (সুহূঃ) সম্যক্ প্রকার প্রশংসা করিবার যোগ্য (ভব) হয় । এই কারণে (ত্বা) সেই যজ্ঞকে আমি (অদব্ধেন) সুখপূর্বক (চক্ষুষা) প্রত্যক্ষ প্রমাণ সহ নেত্র দ্বারা (অবপশ্যামি) দর্শন করি তথা (ত্বা) উহাকে (অদিত্যৈ) পৃথিবী ইত্যাদি পদার্থ (দেবেভ্যঃ) উত্তমোত্তম গুণ (উর্জ) পরাক্রম (ধাম্নে ধাম্নে) স্থানে-স্থানে তথা (য়জুষে য়জুষে) যজুর্বেদের মন্ত্র-মন্ত্র দ্বারা হিত হওয়ার জন্য (অবপশ্যামি) ক্রিয়ার কুশলতা পূর্বক দর্শন করি ॥ ৩০ ॥

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে শ্লেষালঙ্কার আছে । সব মনুষ্যদিগকে যেমন এই জগদীশ্বর বস্তু-বস্তুতে স্থিত তথা বেদের মন্ত্রে মন্ত্রে প্রতিপাদিত এবং সেবা করিবার যোগ্য সেইরূপই এই যজ্ঞ বেদের প্রতি মন্ত্রে ভাল প্রকার সিদ্ধ, প্রতিপাদিত, বিদ্বান্দিগের দ্বারা সেবিত, সব প্রাণিদিগের জন্য প্রতি পদার্থে পরাক্রম ও বল পৌঁছাইবার যোগ্য হয় ॥ ৩০ ॥ 

সবিতুস্ত্বেত্যস্য ঋষিঃ স এব । য়জ্ঞো দেবতা সর্বস্য । পূর্বার্দ্ধে জগতী ছন্দঃ । নিষাদঃ স্বরঃ । তেজোऽসীত্যস্যাऽনুষ্টুপ্ ছন্দঃ । গান্ধারঃ স্বরঃ ॥

স॒বি॒তুস্ত্বা॑ প্রস॒বऽ উৎপু॑না॒ম্যচ্ছি॑দ্রেণ প॒বিত্রে॑ণ॒ সূর্য়॑স্য র॒শ্মিভিঃ॑ । 

স॒বি॒তুর্বঃ॑ প্রস॒বऽ উৎপু॑না॒ম্যচ্ছি॑দ্রেণ প॒বিত্রে॑ণ॒ সূর্য়॑স্য র॒শ্মিভিঃ॑ । 

তেজো॑ऽসি শু॒ক্রম॑স্য॒মৃত॑মসি॒ ধাম॒ নামা॑সি প্রি॒য়ং দে॒বানা॒মনা॑ধৃষ্টং দেব॒য়জ॑নমসি ॥ ৩১ ॥

পদার্থঃ- যে যজ্ঞ (সবিতুঃ) পরমেশ্বরের (প্রসবে) উৎপন্ন কৃত সংসারে (অচ্ছিদ্রেণ) নিরন্তর (পবিত্রেণ) পবিত্র তথা (সূর্য়্যস্য) প্রকাশময় সূর্য্যের (রশ্মিভিঃ) কিরণদিগের সহিত মিলিত হইয়া সব পদার্থকে শুদ্ধ করে । (ত্বা) সেই যজ্ঞ বা যজ্ঞকর্তা কে আমি (উৎপুনামি) উৎকৃষ্টতা সহ পবিত্র করি । এই প্রকার (সবিতু) পরমেশ্বরের (প্রসবে) উৎপন্ন কৃত সংসারে (অচ্ছিদ্রেণ) নিরন্তর (পবিত্রেণ) শুদ্ধিকারক (সূর্য়্যস্য) যাহা ঐশ্বর্য্য হেতুর প্রেরক প্রাণের (রশ্মিভিঃ) তাৎপর্য্য প্রকাশকারী গুণ উহা দ্বারা (নঃ) তোমাদিগকে তথা প্রত্যক্ষ পদার্থগুলিকে যজ্ঞ করিয়া (উৎপুনামি) পবিত্র করি । হে ব্রহ্মণ ! যে কারণে আপনি (তেজোঽসি) স্বয়ং প্রকাশবান্ (শুক্রমসি) শুক্র (অমৃতমসি) নাশরহিত (ধামাসি) সব পদার্থের আধার (নামাসি) বন্দনা করিবার যোগ্য (দেবানাম্) বিদ্বান্দিগের (প্রিয়ম্) প্রীতিকারক (অনাধৃষ্টম্) তথা কাহারও ভয়ে ভীত না হওয়ার যোগ্য অথবা (দেবয়জনমসি) বিদ্বান্দিগের পূজা করিবার যোগ্য । ইহাতে আমি (ত্বা) আপনারই আশ্রয় করি ॥ ইহা এই মন্ত্রের প্রথম অর্থ হইল ॥ যে কারণে এই যজ্ঞ (তেজো সি) প্রকাশ ও (শুক্রমসি) শুদ্ধির হেতু (অমৃতমসি) মোক্ষ সুখ প্রদান করিবার তথা (ধামাসি) সব অন্নাদি পদার্থ সকলের পুষ্টি করিবার অথবা (নামাসি) জলের হেতু (দেবানম্) শ্রেষ্ঠ গুণ সকলের (প্রিয়ম্) প্রীতি করাইবার তথা (অনাধৃষ্টম্) কাহাকেও খন্ডন করিবার যোগ্য নহে অর্থাৎ অত্যন্ত উৎকৃষ্ট এবং (দেবয়জনম্) বিদ্বান্দিগের পরমেশ্বর পূজনকারী (অসি) হয়েন, এই কারণে এই যজ্ঞ দ্বারা আমি (সবিতুঃ) জগদীশ্বরের (প্রসবে) উৎপন্ন কৃত সংসারে (অচ্ছিদ্রেণ) নিরন্তর (পবিত্রেণ) অতি শুদ্ধ যজ্ঞ বা (সূর্য়্যস্য) ঐশ্বর্য্য উৎপন্নকারী পরমেশ্বরের গুণ অথবা ঐশ্বর্য্য উৎপন্নকারী সূর্য্যের (রশ্মিভিঃ) বিজ্ঞানাদি প্রকাশ বা কিরণ দ্বারা (বঃ) তোমাদিগকে বা প্রত্যক্ষ পদার্থ সকলকে পবিত্র করি ॥ ইহা দ্বিতীয় অর্থ হইল ।

ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে শ্লেষালঙ্কার আছে । পরমেশ্বর যজ্ঞ বিদ্যার ফল জানাইয়া থাকেন যে, যাহা তোমাদের দ্বারা অনুষ্ঠিত যজ্ঞ উহা সূর্য্য কিরণ সহ থাকিয়া স্বীয় নিরন্তর শুদ্ধ গুণ দ্বারা সব পদার্থগুলিকে পবিত্র করে তথা উহা তাহার দ্বারা সব পদার্থগুলিকে সূর্য্যের কিরণ দ্বারা তেজবান শুদ্ধ উত্তম রস যুক্ত সুখকারক প্রসন্নতার হেতু দৃঢ় এবং যজ্ঞ করাইবার পদার্থগুলিকে উৎপন্ন করিয়া তাহাদের ভোজন, বস্ত্র দ্বারা শরীরের পুষ্টি, বুদ্ধি ও বলাদি শুদ্ধ গুণগুলিকে সম্পাদন করিয়া সব জীবকে সুখ প্রদান করে ॥ ৩১ ॥


ঈশ্বর এই অধ্যায়ে মনুষ্যদিগকে শুদ্ধ কর্মের অনুষ্ঠান দোষ এবং শত্রুদের নিবৃত্তি, যজ্ঞক্রিয়ার ফল জানিবার, ভাল মতো পুরুষার্থ করিবার, বিদ্যা বিস্তার করিবার, ধর্মানুকূল প্রজা পালন করিবার, ধর্মের অনুষ্ঠানে নির্ভয়তাপূর্বক স্থির হইবার, সকলের সহিত মিত্রতা সহ ব্যবহার করিবার, বেদ হইতে সব বিদ্যা গ্রহণ করিবার এবং করাইবার জন্য শুদ্ধি তথা পরোপকার হেতু প্রচেষ্টা করিবার আজ্ঞা প্রদান করিয়াছেন সুতরাং ইহা সব মনুষ্যদিগের অনুষ্ঠান করিবার যোগ্য ॥


ইতি শ্রীমৎপরিব্রাজকাচার্য়েণ শ্রীয়ুত মহাবিদুষাং বিরজানন্দ সরস্বতী স্বামিনাং
শিষ্যেণ দয়ানন্দসরস্বতী স্বামিনা বিরচিতে সংস্কৃতার্য়্যভাষাভ্যাং বিভূষিতে
সুপ্রমানয়ুক্তে য়জুর্বেদ ভাষ্যে প্রথমোऽধ্যায়ঃ পূর্ত্তিমগাৎ ॥

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ