যোগ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 July, 2023

যোগ

যে কেউ ঈশ্বরের উপাসনা করতে চান, তিনি যেন ইচ্ছানুসারে কোন অনুকূল ও একান্ত স্থানে মনকে শুদ্ধ ও আত্মাকে স্থির করে, সমগ্র ইন্দ্রিয় ও মনকে সেই সচ্চিদানন্দাদি লক্ষণযুক্ত অন্তর্যামী, সর্বব্যাপক ও ন্যায়কারী পরমাত্মার স্বরূপে সম্যক্‌ স্থিত করে, এবং তাঁরই বিষয় মনন ও চিন্তন করে, সেই পরমাত্মাতেই নিজ আত্মাকে নিযুক্ত করবেন। তৎপরে সেই পরমাত্মার বারম্বার স্তুতি, প্রার্থনা ও উপাসনায় প্রবৃত্ত হয়ে আপনাপন আত্মাকে পরব্রহ্মের স্বরূপে যেন সম্যক্ প্রকারে মগ্ন বা ধ্যান যুক্ত করেন। বস্তুতঃ যিনি যোগসাধনায় রত থাকেন তাঁকে যোগী বা যোগিনী বলা হয়। যেমন ব্রহ্মচর্য পালনকারীকে ব্রহ্মচারী এবং স্ত্রী ব্রহ্মচর্য পালনকারীকে ব্রহ্মচারিনী বলে। এই উপাসনা যোগের কার্যরীতি পতঞ্জলি ঋষি কৃত যোগদর্শনে ও ঐ দর্শন শাস্ত্রের মহর্ষি ব্যাসদেব কৃত ভাষ্যে প্রমাণ সহকারে লিখিত আছে যথাঃ-

শ্রীকৃষ্ণ কি যোগী ছিলেন ?
য়োগশ্চিত্তবৃত্তিনেরোধঃ[যোগদর্শন সমাধি পাদ ২]

(যোগশ্চিত্ত০) অর্থাৎ চিত্তের বৃত্তি সকলকে মন্দ বিষয় হইতে নিবৃত্ত করিয়া,গুণাগুণ ও শুভবিষয়ে স্থির করে পরমেশ্বরের সমীপে (স্বরূপে) মোক্ষ বা মুক্তি প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাকে যোগ বলে। বস্তুতঃ চিত্তের বৃত্তি নিরুদ্ধ হয়ে যাওয়াকে যোগ বলে। পুনশ্চ পরমেশরের আজ্ঞাবিরূদ্ধ মন্দাচরণে বদ্ধ হয়ে, পরমাত্মার সমীপ বা স্বরূপ হতে দূর বা পৃথক হওয়াকে বিয়োগ বলে। চিত্ত তিন প্রকারের সভাব যুক্ত হয়ে থাকে প্রকাশশীল(সত্ত্বগুণ বহুল হলে), গতিশীল (রজোগুণ বহুল হলে) ও স্থিতিশীল (তমগুণ বহুল হলে); চিত্ত এবং মন দুটি একই বস্তু, কার্য ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামরকণ করা হয়েছে।

বস্তুত চিত্ত নির্মাণে সত্ত্বগুণের অধিকতা থাকে এবং রজোগুণ ও তমোগুণ মিশ্রিত থাকে । পরন্তু সেই সত্ত্ব বহুল চিত্তে যখন রজোগুণ ও তমোগুণের প্রধানতা ঘটে তখন সেই মনুষ্যকে ঐশ্বর্য এবং বিষয় প্রিয় লাগতে থাকে । এই অবস্থাকে 'ক্ষিপ্তাবস্থা' বলা হয় ।

সেই সত্ত্ব বহুল চিত্তে যখন তমোগুণের প্রধানতা ঘটে তখন সেই মনুষ্যকে অধর্ম, অজ্ঞান, অবৈরাগ্য এবং অনৈশ্বর্য প্রিয় লাগতে থাকে। এই অবস্থাকে 'মূঢ়াবস্থা' বলা হয় । 

সেই সত্ত্ব বহুল চিত্তে যখন রজোগুণের প্রধানতা ঘটে তখন সেই মনুষ্যকে ধর্ম, জ্ঞান, বৈরাগ্য এবং ঐশ্বর্য অধিক প্রিয় লাগতে থাকে । এই অবস্থাকে 'বিক্ষিপ্তাবস্থা' বলা হয় । 

যখন চিত্তে কেবল সত্ত্বগুণের প্রধানতা ঘটে এবং রজোগুণ ও তমোগুণ হইতে পৃথক হয়ে যায় তখন সে নিজ স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বুদ্ধি ও পুরুষের পৃথকতার জ্ঞানের সহিত যুক্ত হয়ে ( সম্প্রজ্ঞাত সমাধির অবস্থা ) ধর্মমেঘ নামক সমাধিকে প্রাপ্ত করে। এই অবস্থাকে যোগীরা 'পরম্ প্রসংখ্যান' বলেন । এই সমাধিতে বস্তুর স্বরূপের যথার্থ ভাবে পরিজ্ঞান হয়ে থাকে। এটি চিত্তের 'একাগ্রাবস্থা' । এই সকল পরিবর্তন চিত্তে ঘটে, জীবাত্মাতে নয়। তার কারণ হল চিত্ত পরিবর্তনশীল, সেটি উৎপন্ন হয় এবং নষ্টও হয়। পরন্তু জীবাত্মা অপরিবর্তনশীল, না উৎপন্ন হয়; না নষ্ট হয়। ধর্মমেঘ সমাধিতে বুদ্ধি এবং জীবাত্মার স্বরূপের পৃথক্তার জ্ঞান হয়ে থাকে এই জ্ঞানকে 'বিবেকখ্যাতি বলা হয় । পরন্তু এই জ্ঞান হইতে জীবাত্মা ভিন্ন । যখন যোগী ধর্মমেঘ সমাধিকে প্রাপ্ত করে তখন সে বিবেকখ্যাতিতেও দোষ দেখতে থাকে অর্থাৎ চেতন পুরুষ পরিনাম হইতে রহিত, নির্লেপ, বিষয়ের দ্রষ্টা, পবিত্র এবং নাশ রহিত হয় । পরন্তু, সত্ত্বগুন যুক্ত এই বিবেকখ্যাতি জীবাত্মা হইতে অত্যন্ত বিরুদ্ধে স্বভাব যুক্ত হয় । এই জন্য সেই বিবেকখ্যাতির প্রতিও বিরক্ত হয়ে তাকে নিরুদ্ধ করে দেয় এবং তার থেকেও বৈরাগ্য হয়ে যায় । এই বৈরাগ্যকে 'পরবৈরাগ্য' বলা হয় । এটি অসম্প্রজ্ঞাত সমাধির নিকটতম সাধন । অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিতে যোগী নিজ স্বরূপে এবং পরমাত্মার স্বরূপে অবস্থান করে। এই পরবৈরাগ্যের দ্বারা চিত্তের সমস্ত বৃত্তির নিরুদ্ধ হয়ে যায় এবং অসম্প্রজ্ঞাত সমাধির সিদ্ধি লাভ হয়ে থাকে । অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিকে 'নির্বীজ সমাধি'ও বলা হয় । এটি চিত্তের 'নিরুদ্ধাবস্থা' । যেখানে সাংসারিক বিষয় সম্বন্ধী কোনও জ্ঞান থাকে না তাকে 'অসম্পুজ্ঞাত সমাধি' বলা হয় । এই চিত্তবৃত্তি নিরোধ যোগ দুই প্রকারের হয় সমাধি, অসম্প্ৰজ্ঞাত সমাধি ৷৷

তদা দ্রষ্টুঃ স্বরূপেৎবস্থানম্।।পা০১সূ০৩।।

বৃত্তিসারূপ্যমিতরত্র।।পা০১।০৪।।

(তদা দ্র০) যেরূপ জলের প্রবাহ বা স্রোতকে একদিকে দৃঢ়ভাবে বদ্ধ করলে, ঐ জল বা স্রোত নিম্ন ভূমিতে প্রবাহিত হয়ে, একস্থানে স্থির হয়ে যায়, তদ্রূপ মনের বৃত্তি সকলকে যখন বাহ্য বিষয় হইতে রুদ্ধ করা হয়, তখন তাহা (সেই বৃত্তি গুলি) পরমাত্মার স্বরূপে স্থিত হয়, অর্থাৎ অবস্থান করে, এবং এটাই চিত্তবৃত্তি নিরোধ করবার এক প্রধান প্রয়োজন। চিত্তবৃত্তি নিরোধ করণের দ্বিতীয় প্রয়োজন এই যে, উপাসক যোগী এবং সাংসারিক বদ্ধ জীব যখন ব্যবহারে অর্থাৎ ব্যবহারিক কার্য্যে প্রবৃত্ত হন, তখন যোগীর চিত্ত নিগৃহীত হওয়ায় তা সকল প্রকার হর্ষ – শোক রহিত আনন্দে প্রকাশিত হয়ে, উৎসাহ ও আনন্দসহকারে অবস্থান করে, অর্থাৎ আনন্দ ও উৎসাহে পূর্ণ থাকে । এইরূপে সাংসারিক মনুষ্যের বৃত্তি সকল, ব্যবহারিক কার্য্যে প্রবৃত্ত হলে তাঁদের চিত্ত নিগৃহীত না হওয়ায়, সদা হর্ষশোকযুক্ত দুঃখ সাগরে মগ্ন অর্থাৎ উপাসক যোগীগণের চিত্তবৃত্তি সদা গুণরূপ প্রকাশে অধিকতর প্রকাশযুক্ত হতে থাকে, এবং সাংসারিক মনুষ্যের বৃত্তি সকল সদা অন্ধকার বা তমোগুণে বদ্ধ হয়ে পড়ে। যোগসূত্র ১/৩ এই মূত্রে যোগের মুখ্য ফলেরর বর্ণনা হয়েছে। যখন সাধক অসম্প্রজ্ঞাত স্থিতিকে প্রাপ্ত করে নেয় তখন তিনি নিজের স্বরূপকে ঠিক-ঠিক জেনে নেয়। যদিও সম্প্রজ্ঞাত সমাধিতেও জীবাত্মা নিজের স্বরূপকে জেনে নেয় পরন্তু অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিতে সম্প্রজ্ঞাত সমাধির অপেক্ষা জীবাত্মাকে নিজের স্বরূপের অধিক স্পষ্ট জ্ঞান হয়। অর্থাৎ আমি সত্বব,রজস,তমস্=রূপ প্রকৃতি এবং এতে উৎপত্তি শরীর,ইন্দ্রিয় আদি কার্য দ্বারা পৃথক হই, এমনই জেনে নেয়। সেই সময় তিনি প্রকৃতি অথবা প্রাকৃতিক পদার্থের উপাসনাকে ছেড়ে ঈশ্বরের স্বরূপে মগ্ন হয়ে যান। এই শরীরে থাকা সমস্ত ক্লেশাদি থেকে ছুটে যায় এবং মোক্ষানন্দের অনুভব সেই প্রকার করেন,যে প্রকার মুক্তাত্মা মোক্ষে অনুভব করেন। এই সূত্র ভাষ্যে মহর্ষি ব্যাসজী লিখেছেন যে-"স্বরূপপ্রতিষ্ঠা তদানীম্ চিতিশক্তির্য়থা কৈবল্যে"। মোক্ষাবস্থায় জীবাত্মা যে প্রকার নিজের শুদ্ধ স্বরূপকে জানেন পরমাত্মার আনন্দেরর অনুভব করেন,এই প্রকার যোগী এই শরীরে নিজের বিশুদ্ধ স্বরূপকে জেনে ঈশ্বরে মগ্ন থেকে এতে আনন্দের অনুভব করেন। এই অনুসারে জীবাত্মা নিজের স্বরূপে তথা ঈশ্বরের স্বরূপে স্খিতি হয়। অর্থাৎ এই স্থিতিতে জীবাত্মা নিজের তথা ঈশ্বরের স্বরূপকে যথাবত্ জানেন। এখানে এই বলা ধাতব্য যে, সূত্রের মুখ্যার্থ জীবাত্মার পরমেশ্বরে স্বরূপে  স্থিতি হওয়া কেবল নিজের স্বরূপে স্থিতি হওয়া যে নয়। কারণ কেবল নিজের স্বরূপে স্থিতি হওয়ায় জীবের সমস্ত ক্লেশের নিবৃত্তি এবং নিত্যানন্দের প্রাপ্তি না হতে পারে।  বেদেও এই কথার উল্লেখ রয়েছে-

"তমেব বিদিত্বাতি মুত্যুমেতি নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেऽয়নায়।। যজু০ ৩১/১৮।। সেই পরম পুরুষ ঈশ্বরকেই জেনে জীবাত্মা মৃত্যু আদি দুঃখ থেকে মুক্ত হয়ে যায়।

বৃত্তয়ঃ পঞ্চতয়্যঃ ক্লিষ্টাব্লিষ্টাঃ ।।পা০১।৫।।

প্রমাণবিপর্যয়বিকল্পনিদ্রাস্মৃতয়ঃ।।পা০১।৬।।

তত্ৰ' প্রত্যক্ষানুমানাগমাঃ প্রমাণানি।।পা০১।৭৷৷ 

বিপর্যয়ো মিথ্যাজ্ঞানমতদ্রূপপ্রতিষ্টম্।।পা০১।৮।।

শব্দজ্ঞানানুপাতী বস্তুশূন্যো বিকল্পঃ।।পা০১।৯।

অভাবপ্রত্যয়ালম্বনা বৃত্তিনিদ্রা ।।পা০১।১০।।

অনুভূতবিষয়াসংপ্রমোষঃ স্মৃতিঃ।।পা০১।১১।। 

অভ্যাসবৈরাগ্যাভ্যাং তন্নিরোধঃ।।পা০১।১২।।

ঈশ্বরপ্রণিধানাদ্বা ।।পা০১।১৩।।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী স্বামী "সত্যার্থ প্রকাশ" গ্রন্থে সন্ন্যাবিধিতে সন্ন্যাসাশ্রম বিষয়ে ব্রাহ্মণ গ্রন্থের বচন উদ্ধৃতি করে বলেছেন যেদিন মনুষ্যের বৈরাগ্যলাভ হবে, সেইদিন গৃহ বা বন হতে সন্ন্যাস গ্রহণ করবে। যে ব্যক্তি দুরাচার হতে বিরত হয়নি, যার শান্তি নেই, যার আত্মা যোগী নয় এবং যার মন শান্ত নয়, সে ব্যক্তি সন্ন্যাস গ্রহণ করেও প্রজ্ঞান দ্বারা পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হয় না [কঠ০ ২।২৩] এখানে যার আত্মা যোগী নয় বলতে নিশ্চয়তঃ এখানে যোগী অর্থে যিনি সম্পূর্ণ যোগদর্শন অনুয়ায়ী সিদ্ধ যোগী তাঁর কথা বলেন নি ! এছাড়াও মহর্ষি দয়ানন্দ জী পঞ্চম সমুল্লাসে (পৃঃ১৩৩) মুণ্ড০ ২।৬ এর ব্যাখ্যাতে সন্ন্যাস যোগের বর্নানা করেছেন।

সাংসারিক বিচারকে রোধ করে দ্রষ্টার (জীবাত্মার) ঈশ্বরীয় বিচারে নিজের স্থিতি যোগ। অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিতে জীবাত্মা নিজের স্বরূপের সাধে সাধে পরমাত্মার স্বরূপ কেও সুষ্পষ্ট রূপে জানতে পারেন। সম্প্রজ্ঞাত সমাধিতে দ্রষ্টা (জীবাত্মা) নিজের স্বরূপে অবস্থান করেন। সাংখ্যদর্শনে যে অন্তঃকরণ কে মহত্তত্ত্ব অথবা বুদ্ধিতত্ত্ব বলা হয়েছে, যোগদর্শনে তাকেই "চিত্ত" নাম দেওয়া হয়েছে; চিত্তের বৃত্তির নিরোধ যোগের স্বরূপ [যোগদর্শন ১।২ "য়োগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধঃ"] ।।

বেদবেদাঙ্গবিজ্ঞানং বলং চাভ্যধিকং তথা৷
নৃণাং লোকে হি কোঽন্যোঽস্তি বিশিষ্টঃ কেশাবাদৃতে||
দানং দাক্ষ্যং শ্রুতং শৌর্য় হীঃ কীর্তির্বুদ্ধিরুত্তমা ৷
সন্নতিঃ শ্রীর্ধৃতিস্তুষ্টিঃ পুষ্টিশ্ব নিয়তাচ্যুতে||
[মহাভারত-সভাপর্ব-অর্ঘাভিহরণপর্ব- অধ্যায় ৩৮/শ্লোক ১৮,২০]
[গীতাপ্রেস,গোরখপুর]


অর্থাৎ- বেদ,বেদাঙ্গের বিজ্ঞান তথা সব প্রকারের বলের দৃষ্টিতে মনুষ্য লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সমান আর দ্বিতীয় আর কেউ নেই৷ দান, দক্ষতা, বেদজ্ঞতা, শুরবীরতা, লজ্জা, কীর্তি, উত্তম বুদ্ধি, বিনয়, শ্রী, ধৈর্য, তুষ্টি (সন্তোষ) এবং পুষ্টি এসব সদগুণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে নিত্য বিরাজমান৷

মহর্ষি দয়ানন্দ জী শ্রীকৃষ্ণ জী কে আপ্তপুরুষাদৃশ্য বলেছেন "আপ্তোপদেশঃ শব্দঃ"__ন্যায় দর্শন ১।১।৭ ও সাংখ্য শাস্ত্রকার মুনি কপিল সূত্র ১।৬৬ বলেছেন__আপ্ত অর্থাৎ পূর্ণ বিদ্বান, ধর্মাত্মা পরোপকারপ্রিয়, সত্যবাদী পুরুষার্থী এবং জিতেন্দ্রিয় পুরুষ, নিজের আত্মাতে যেরূপ জ্ঞাত হয়েন, এবং যাতে সুখলাভ করেন, তাহারই কথনেচ্ছায় প্রেরিত হয়ে সমস্ত মনুষ্যবর্গের কল্যাণার্থ উপদেষ্টা হয়েন, অর্থাৎ পৃথিবী হইতে পূর্ণ আপ্ত পরমেশ্বর পর্য্যন্ত সমস্ত পদার্থের জ্ঞানলাভ করিয়া উপদেষ্টা হয়েন। তাদৃশ পুরুষের উপদেশ, এবং পূর্ণ আপ্ত পরমেশ্বরের উপদেশরূপ (বেদ) কেই শব্দপ্রমাণ বলা হয়।

মহর্ষি দয়ানন্দ জী ঋগ্বেদ ১।৬।১ এর আধিভৌতিক ভাষ্য করতে গিয়ে বলেন প্রাণই সকল পদার্থের সিদ্ধির মুখ্য হেতু স্বরূপ। এই প্রাণকে অর্থাৎ প্রাণ বায়ুকে প্রাণায়ামের রীতি অনুসারে অত্যন্ত প্রীতির সহিত যোগীরা পরমাত্মায় যুক্ত করেন এবং এইরূপ করিয়া তিনি মোক্ষ প্রাপ্ত হইয়া সদা আনন্দের সহিত বিদ্যমান থাকেন।

যুজ্ঞন্তি ব্রধ্মমরুষং চরন্তং পরিতস্থুষঃ।
রোচন্তে রোচনা দিবি।।____ ঋগ্বেদ ১।৬।১

প্রদ্যুম্নের জন্ম


শ্রীকৃষ্ণ নিজ পত্নী রুক্মিণীর সাথে হিমালয়ে ১২ বছরের মহান ঘোর ব্রহ্মচর্য ব্রত ধারন করে তপস্যা করেছিলেন। দুইজনে সনত্ কুমারের ন্যায় তেজস্বী পুত্র প্রদ্যুম্ন নামক পুত্র উৎপন্ন করেছিলেন।" (মহাভারতঃ সৌপ্তিক পর্ব, অধ্যায় ১২, শ্লোক ৩০-৩১) ভগবান শিব উবাচ- ক্ষমাশীল,জিতেন্দ্রিয়,ক্রোধবিজয়ী,ধর্মনিষ্ঠ,অহিংসক এবং ধর্মপরায়ণ মনুষ্যই ধর্মকে জানতে এবং ফল প্রাপ্ত করতে সক্ষম হন[মহাভারত- অনুশাসন পর্ব- ৪২ অধ্যায়]।

শ্রুতবন্তো দয়াবন্তঃ শুচয়ঃ সত্যসম্গরাঃ৷
স্বৈরর্থৈঃ পরিসন্তুষ্টাস্তে নরা স্বর্গগামিনঃ ||
[মহাভারত অনুসাশন পর্ব- দানপর্ব- অধ্যায় ১৪৪]
[গীতাপ্রেস প্রকাশনী]
অর্থ- ভগবান শিব বলছেন, যিনি বেদাদি শাস্ত্রের জ্ঞাতা,দয়ালু,মনসাবাচাকর্মণা পবিত্র,সত্যের আচরণকারী, আর যিনি নিজের ধনেই সন্তুষ্ট,অর্থাৎ পরের ধনে যিনি কখনো লোভ করেন না,তিনি স্বর্গ প্রাপ্ত হয়৷

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে পিতামহ ভীষ্ম জীর কথন-
[মহাভারত/সভাপর্ব/৩৮ অধ্যায়/ ১৯,২০ শ্লোক]
বেদ বেদাঙ্গ বিজ্ঞানম্ বলম্ চাভ্যধিকম্ তথা।
নৃণাম্ লোকে হি কোঽন্যোঽস্তি বিশিষ্টঃ কেশাবাদৃতে।।
দানম্ দাক্ষ্যম্ শ্রুতম্ শৌর্য়ম্ হ্রী কীর্তির্বুদ্ধিরুত্তমা।
সন্নতিঃ শ্রীর্ধৃতিস্তুষ্টিঃ পুষ্টিশ্চ নিয়তাচ্যুতে।
বেদ, বেদাঙ্গ, বিজ্ঞান তথা সমস্ত প্রকারের শক্তির দিক দিয়ে এই মনুষ্যলোকে শ্রীকৃষ্ণের সমতুল্য আর কে আছে ? দান, দক্ষতা, বেদজ্ঞতা, শূরতা, লজ্জা, কীর্তি, উত্তম বুদ্ধি, বিনয়, শ্ৰী, ধৈর্য, তুষ্টি(সন্তোষ) এবং পুষ্টি আদি সকল গুণ শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে বিদ্যমান আছে।
ঋষি দয়ানন্দের মতে শ্রীকৃষ্ণ একজন আপ্ত পুরুষ ছিলেন, যিনি কখনোই অধর্ম আচরণ বা ভুল কর্ম করেননি৷
[সত্যার্থ প্রকাশ, একাদশ সমুল্লাস]

অসম্পূর্ণ লেখা চলছে >>

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ