য়স্ত্বিত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । নিচৃদনুষ্টুপ্ ছন্দঃ । গান্ধারঃ স্বরঃ ॥
য়স্তু সর্বা॑ণি ভূ॒তান্যা॒ত্মন্নে॒বানু॒পশ্য॑তি ।
স॒র্ব॒ভূ॒তেষু॑ চা॒ত্মানং॒ ততো॒ ন বি চি॑কিৎসতি ॥ ৬ ॥
পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! (ত্বা) যে বিদ্বান্ (আত্মন্) পরমাত্মার ভিতর (এব) ই (সর্বাণি) সকল (ভূতানি) প্রাণী-অপ্রাণী সকলকে (অনুপশ্যতি) বিদ্যা, ধর্ম ও যোগাভ্যাস করিবার পশ্চাৎ সমীক্ষা করে (তু) এবং যে (সর্বভূতেষু) সব প্রকৃত্যাদি পদার্থ সকলে (আত্মানম্) আত্মাকে (চ) ও দেখে সে বিদ্বান্ (ততঃ) তদনন্তর (না) নয় (বি, চিকিৎসতি) সংশয়কে প্রাপ্ত হয়, এইরকম তুমি জান ॥ ৬ ॥
ভাবার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! যাহারা সর্বব্যাপী ন্যায়কারী সর্বজ্ঞ সনাতন সকলের আত্মা অন্তর্য্যামী সকলের দ্রষ্টা পরমাত্মাকে জানিয়া সুখ-দুঃখ, ক্ষতি-লাভে স্বীয় আত্মার তুল্য সকল প্রাণিদিগকে জানিয়া ধার্মিক হয়, তাহারাই মোক্ষ লাভ করিয়া থাকে ॥ ৬ ॥
য়স্মিন্নিত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । নিচৃদনুষ্টুপ্ ছন্দঃ । গান্ধারঃ স্বরঃ ॥
য়স্মি॒ন্ৎসর্বা॑ণি ভূ॒তান্যা॒ত্মৈবাভূ॑দ্বিজান॒তঃ ।
তত্র॒ কো মোহঃ॒ কঃ শোক॑ऽএক॒ত্বম॑নু॒পশ্য॑তঃ ॥ ৭ ॥
পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! (য়স্মিন্) যে পরমাত্মা জ্ঞান, বিজ্ঞান বা ধর্মে (বিজানতঃ) বিশেষ করিয়া ধ্যানদৃষ্টি দ্বারা দর্শনকারীকে (সর্বাণি) সকল (ভূতানি) প্রাণীমাত্র (আত্মা, এব) নিজের তুল্যই সুখ-দুঃখ সম্পন্ন (অভূৎ) হয় (তত্র) সেই পরমাত্মা আদিতে (একত্বম্) অদ্বিতীয় ভাবকে (অনুপশ্যতঃ) অনুকূল যোগাভ্যাস দ্বারা সাক্ষাৎ দেখিয়া যোগিদেরকে (কঃ) কে (মোহঃ) মূঢ়াবস্থা এবং (কঃ) কে (শোকঃ) শ্লোকযুক্ত বা ক্লেশ হয় অর্থাৎ কিছুই নহে ॥ ৭ ॥
ভাবার্থঃ- যে সব বিদ্বান্ সন্ন্যাসীগণ পরমাত্মার সহচর প্রাণিমাত্রকে স্বীয় আত্মার তুল্য জানেন অর্থাৎ যেমন নিজের হিত কামনা করেন সেইরূপ অন্যদের সঙ্গেও আচরণ করেন, এক অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের শরণ প্রাপ্ত হইয়া থাকেন তাহাদের মোহ, শোক ও লাভাদি কদাচিৎ প্রাপ্ত হয় না । এবং যাহারা নিজের আত্মাকে যথাবৎ জানিয়া পরমাত্মাকে জানেন তাঁহারা সর্বদা সুখী হইয়া থাকেন ॥ ৭ ॥
স পর্য়্যগাদিত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । স্বরাড্জগতী ছন্দঃ । নিষাদঃ স্বরঃ ॥
স পর্য়॑গাচ্ছু॒ক্রম॑কা॒য়ম॑ব্র॒ণম॑স্নাবি॒রꣳ শু॒দ্ধমপা॑পবিদ্ধম্ ।
ক॒বির্ম॑নী॒ষী প॑রি॒ভূঃ স্ব॑য়॒ম্ভূর্য়া॑থাতথ্য॒তোऽর্থা॒ন্ ব্য᳖দধাচ্ছাশ্ব॒তীভ্যঃ॒ সমা॑ভ্যঃ ॥ ৮ ॥
পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! যে ব্রহ্ম (শুক্রম্) শীঘ্রকারী সর্বশক্তিমান্ (অকায়ম্) স্থূল সূক্ষ্ম ও কারণশরীর রহিত (অব্রণম্) ছিদ্ররহিত এবং ছিদ্র করিবার যোগ্য নহে (অস্নাবিরম্) নাড়ি আদি সহ সম্বন্ধরূপ বন্ধন হইতে রহিত (শুদ্ধম্) অবিদ্যাদি দোষ হইতে রহিত হওয়ায় সর্বদা পবিত্র এবং (অপাপবিদ্ধম্) যিনি পাপযুক্ত, পাপকারী এবং পাপে প্রীতিকারী কখনও হয়না (পরি, অগাৎ) সব দিক দিয়া ব্যাপ্ত, যিনি (কবিঃ) সর্বজ্ঞ (মনীষী) সকল জীবদের মনোবৃত্তিকে জানেন (পরিভূঃ) দুষ্ট পাপীদেরকে তিরস্কারকারী এবং (স্বয়ম্ভুঃ) অনাদি স্বরূপ যাহার সংযোগ হইতে উৎপত্তি, বিয়োগ হইতে বিনাশ, মাতা, পিতা, গর্ভবাস, জন্ম, বৃদ্ধি ও মরণ হয় না সেই পরমাত্মা (শাশ্বতীভ্যঃ) সনাতন অনাদি স্বরূপ নিজ নিজ স্বরূপে উৎপত্তি ও বিনাশরহিত (সমাভ্যঃ) প্রজাদিগের জন্য (য়াথাতথ্যতঃ) যথার্থ ভাবপূর্বক (অর্থাৎ) বেদ দ্বারা সকল পদার্থকে (ব্যদধাৎ) বিশেষ করিয়া নির্মাণ করে । (সঃ) সেই পরমেশ্বর তোমাদের উপাসনা করিবার যোগ্য ॥ ৮ ॥
ভাবার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! যিনি অনন্ত শক্তিযুক্ত অজন্মা, নিরন্তর, সদা যুক্ত, ন্যায়কারী, নির্মল, সর্বজ্ঞ, সকলের সাক্ষী, নিয়ন্তা, অনাদিস্বরূপ ব্রহ্ম কল্পের আরম্ভে জীবদেরকে স্বকথিত বেদ হইতে শব্দ, অর্থ এবং তাহার সম্বন্ধকে জানাইবার বিদ্যার উপদেশ না করেন তাহা হইলে কেহই বিদ্বান্ হইবে না এবং না ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষের ফল ভোগ করিতে সক্ষম হয়, এইজন্য এই ব্রহ্মের সর্বদা উপাসনা কর ॥ ৮ ॥
অন্ধতম ইত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । অনুষ্টুপ্ছন্দঃ । গান্ধারঃ স্বরঃ ॥
অ॒ন্ধন্তমঃ॒ প্র বি॑শন্তি॒ য়েऽস॑ম্ভূতিমু॒পাস॑তে ।
ততো॒ ভূয়॑ऽইব॒ তে তমো॒ য়ऽউ॒ সম্ভূ॑ত্যাᳬ র॒তাঃ ॥ ঌ ॥
পদার্থঃ- যাহারা পরমেশ্বরকে ত্যাগ করিয়া (অসম্ভূতিম্) অনাদি অনুৎপন্ন সত্ব, রজ ও তমোগুণময় প্রকৃতিরূপ জড় বস্তুকে (উপাসতে) উপাস্যভাবপূর্বক জানে তাহারা (অন্ধম্, তমঃ) আবরণকারী অন্ধকারকে (প্রবিশন্তি) উত্তম প্রকার প্রাপ্ত হয় এবং (য়ে) যাহারা (সম্ভূত্যাম্) মহত্ত্বাদি স্বরূপ দ্বারা পরিণাম প্রাপ্ত সৃষ্টিতে (রতাঃ) রমণ করে (তে) তাহারা (উ) বিতর্ক সহ (ততঃ) তাহা হইতে (ভূয়, ইব) অধিক যেমন সেইরূপ (তমঃ) অবিদ্যারূপ অন্ধকার প্রাপ্ত হয় ॥ ঌ ॥
অন্যদিত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ । গান্ধারঃ স্বরঃ ॥
অ॒ন্যদে॒বাহুঃ স॑ম্ভ॒বাদ॒ন্যদা॑হু॒রস॑ম্ভবাৎ ।
ইতি॑ শুশ্রুম॒ ধীরা॑ণাং॒ য়ে ন॒স্তদ্বি॑চচক্ষি॒রে ॥ ১০ ॥
পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! যেমন আমরা (ধীরাণাম্) মেধাবী যোগী বিদ্বান্দিগের নিকট হইতে যে বচন (শুশ্রুম্) শুনি (য়ে) সেই সব লোক (নঃ) আমাদের প্রতি (তৎ, বিচচক্ষিরে) ব্যাখান পূর্বক বলেন, তাহারা (সম্ভবাৎ) সংযোগ জন্য কার্য্য হইতে (অন্যৎ, এব) অন্য কার্য্য বা ফল বলেন (অসম্ভবাৎ) উৎপন্ন না হওয়ার কারণ হইতে (অন্যৎ) অন্য (আহুঃ) বলেন (ইতি) এই কথাকে তোমরা শুন ॥ ১০ ॥
ভাবার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! যেমন বিদ্বান্গণ কার্য্যকারণরূপ বস্তু হইতে ভিন্ন-ভিন্ন বক্ষ্যমাণ উপকার গ্রহণ করে বা করাইয়া থাকে এবং সেই কার্য্যকারণের গুণসমূহ জানিয়া বলেন, এইরকমই তোমরা নিশ্চয় কর ॥ ১০ ॥
সম্ভূতিমিত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ । গান্ধারঃ স্বরঃ ॥
সম্ভূ॑তিং চ বিনা॒শং চ॒ য়স্তদ্বেদো॒ভয়॑ꣳ স॒হ ।
বি॒না॒শেন॑ মৃ॒ত্যুং তী॒র্ত্বা সম্ভূ॑ত্যা॒মৃত॑মশ্নুতে ॥ ১১ ॥
পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! (য়ঃ) যে বিদ্বান্ (সম্ভূতিম্) যাহাতে সকল পদার্থ উৎপন্ন হয় সেই কার্য্যরূপ সৃষ্টি (চ) এবং তাহার গুণ, কর্ম, স্বভাবকে তথা (বিনাশম্) যাহাতে পদার্থ নষ্ট হয় সেই কারণরূপ জগৎ (চ) এবং তাহার গুণ, কর্ম, স্বভাবকে (সহ) এক সঙ্গে (উভয়ম্) উভয় (তৎ) সেই সব কার্য্য ও কারণ স্বরূপকে (বেদ) জানে সেই বিদ্বান্ (বিনাশেন) নিত্যস্বরূপ জানা কারণসহ (মৃত্যুম্) শরীর ত্যাগ হওয়ার দুঃখ হইতে (তীর্ত্বা) উত্তীর্ণ হইয়া (সম্ভূত্যা) শরীর, ইন্দ্রিয় এবং অন্তঃকরণরূপ উৎপন্ন কার্য্যরূপ ধর্ম্মে প্রবৃত্তকারিণী সৃষ্টি সহ (অমৃতম্) মোক্ষসুখকে (অশ্নুতে) প্রাপ্ত হয় ॥ ১১ ॥
ভাবার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! কার্য্যকারণরূপ বস্তু নিরর্থক নয় কিন্তু কার্য্যকারণের গুণ, কর্ম ও স্বভাব জানিয়া ধর্মাদি মোক্ষের সাধনে সংযুক্ত করিয়া নিজের শরীরাদি কার্য্যকারণকে নিত্যত্বপূর্বক জানিয়া মরণের ভয় ত্যাগ করিয়া মোক্ষের সিদ্ধি কর । এই প্রকার কার্য্যকারণ হইতে অন্যই বল সিদ্ধ করা উচিত । এই কার্য্যকারণের নিষেধ পরমেশ্বরের স্থান উপাসনা প্রকরণে জানা উচিত ॥ ১১ ॥
অন্ধন্তম ইত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । নিচৃদনুষ্টুপ্ ছন্দঃ । গান্ধারঃ স্বরঃ ॥
অ॒ন্ধন্তমঃ॒ প্র বি॑শন্তি॒ য়েऽবি॑দ্যামু॒পাস॑তে ।
ততো॒ ভূয়॑ऽইব॒ তে তমো॒ য়ऽউ॑ বি॒দ্যায়া॑ᳬ র॒তাঃ ॥ ১২ ॥
পদার্থঃ- (য়ে) যে সব মনুষ্য (অবিদ্যাম্) অনিত্যে নিত্য, অশুদ্ধে শুদ্ধ, দুঃখে সুখ এবং অনাত্মা শরীরাদিতে আত্মবুদ্ধিরূপ অবিদ্যা অর্থাৎ জ্ঞানাদি গুণরহিত কারণরূপ পরমেশ্বর হইতে ভিন্ন জড় বস্তুর (উপাসতে) উপাসনা করে তাহারা (অন্ধম্, তমঃ) দৃষ্টি প্রতিহিতকারী অন্ধকার এবং অত্যন্ত অজ্ঞানকে (প্র, বিশন্তি) প্রাপ্ত হয় এবং (য়ে) যাহারা স্বীয় আত্মাকে পন্ডিত স্বীকারকারী (বিদ্যায়াম্) শব্দ, অর্থ ও ইহার সম্পর্ক জানিবা মাত্র অবৈদিক আচরণে (রতাঃ) রমণ করে (তে) তাহারা (উ) ও (ততঃ) তাহা হইতে (ভূয়, ইব) অধিকতর (তমঃ) অজ্ঞানরূপী অন্ধকারে প্রবেশ করে ॥ ১২ ॥
ভাবার্থঃ- এই মন্ত্রে উপমালঙ্কার আছে । যাহা যাহা চেতন জ্ঞানাদি গুণযুক্ত বস্তু, উহা জ্ঞাতা, যাহা অবিদ্যারূপ উহা জানিবার যোগ্য এবং যাহা চেতন ব্রহ্ম তথা বিদ্বানের আত্মা উহা উপাসনার যোগ্য যাহা ইহা হইতে ভিন্ন, উহা উপাস্য নহে কিন্তু উপকার লইবার যোগ্য । যে সব মনুষ্য অবিদ্যা, অস্মিতা, রাগ, দ্বেষ ও অভিনিবেশ নামক ক্লেশের সহিত যুক্ত তাহারা পরমেশ্বরকে ত্যাগ করিয়া ইহা ভিন্ন জড় বস্তুর উপাসনা করিয়া মহান্ দুঃখসাগরে মগ্ন হয় এবং যাহারা শব্দ অর্থের অন্বয়মাত্র সংস্কৃত পড়িয়া সত্যভাষণ পক্ষপাতরহিত ন্যায়ের আচরণরূপ ধর্ম করে না, অভিমানে আরূঢ় হইয়া বিদ্যার তিরস্কার করিয়া অবিদ্যাকেই মানে তাহারা অত্যন্ত তমোগুণরূপ দুঃখসাগরে নিরন্তর পীড়িত হইতে থাকে ॥ ১২ ॥
অন্যদিত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ । গান্ধারঃ স্বরঃ ॥
অ॒ন্যদে॒বাহুর্বি॒দ্যায়া॑ऽঅ॒ন্যদা॑হু॒রবি॑দ্যায়াঃ ।
ইতি॑ শুশ্রুম॒ ধীরা॑ণাং॒ য়ে ন॒স্তদ্বি॑চচক্ষি॒রে ॥ ১৩ ॥
পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! (য়ে) যে সব বিদ্বান্গণ (নঃ) আমাদের জন্য (বিচচক্ষিরে) ব্যাখ্যাপূর্বক বলিতেন (বিদ্যায়াঃ) পূর্বোক্ত বিদ্যার (অন্যৎ) অন্যই কার্য্য বা ফল (আহুঃ) বলিতেন, (অবিদ্যায়াঃ) পূর্ব মন্ত্র দ্বারা প্রতিপাদিত অবিদ্যার (অন্যৎ, এব) অন্য ফল (আহুঃ) বলেন (ইতি) এই প্রকারের সেইসব (ধীরাণাম্) আত্মজ্ঞানী বিদ্বান্দিগের হইতে (তৎ) সেই বচনকে আমরা (শুশ্রুম) শুনিতাম, এইরকম জানিবে ॥ ১৩ ॥
ভাবার্থঃ- জ্ঞানাদি গুণযুক্ত চেতন দ্বারা যাহা উপযোগ হওয়ার যোগ্য উহা অজ্ঞানযুক্ত জড় দ্বারা কদাপি নহে এবং যাহা জড় দ্বারা প্রয়োজন সিদ্ধ হয় উহা চেতন দ্বারা নহে । সকল মনুষ্যদিগকে বিদ্বান্দিগের সঙ্গ, যোগ, বিজ্ঞান ও ধর্মাচরণ দ্বারা এই উভয়ের বিবেক করিয়া উভয় দ্বারা উপযোগ গ্রহণ করা উচিত ॥ ১৩ ॥
বিদ্যামিত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । স্বরাডুষ্ণিক্ ছন্দঃ । ঋষভঃ স্বরঃ ॥
বি॒দ্যাং চাবি॑দ্যাং চ॒ য়স্তদ্বেদো॒ভয়॑ꣳ স॒হ ।
অবি॑দ্যয়া মৃ॒ত্যুং তী॒র্ত্বা বি॒দ্যয়া॒মৃত॑মশ্নুতে ॥ ১৪ ॥
পদার্থঃ- (য়ঃ) যে বিদ্বান্ (বিদ্যাম্) পূর্বোক্ত বিদ্যা (চ) এবং তাহার সম্পর্কীয় সাধন উপসাধনগুলি (অবিদ্যাম্) পূর্ব কথিত অবিদ্যা (চ) এবং ইহার উপযোগী সাধনাসমূহকে এবং (তৎ) সেই ধ্যানগম্য মর্ম (উভয়ম্) এই উভয়কে (সহ) সাথেই (বেদ) জানে, সে (অবিদ্যা) শরীরাদি জড় পদার্থ সমূহ দ্বারা কৃত পুরুষার্থ দ্বারা (মৃত্যুম্) মরণ দুঃখের ভয়কে (তীর্ত্বা) উল্লঙ্ঘন করিয়া (বিদ্যয়া) আত্মা ও শুদ্ধ অন্তঃকরণের সংযোগে যে ধর্ম তাহা হইতে উৎপন্ন হওয়া যথার্থ দর্শনরূপ বিদ্যা দ্বারা (অমৃতম্) নাশরহিত নিজের শরীর অথবা পরমাত্মাকে (অশ্নুতে) প্রাপ্ত হয় ॥ ১৪ ॥
ভাবার্থঃ- যে মনুষ্য বিদ্যা ও অবিদ্যাকে ইহার স্বরূপ দ্বারা জানিয়া ইহার জড় চেতন সাধন এমন নিশ্চয় করিয়া সকল শরীরাদি জড়পদার্থ এবং চেতন আত্মাকে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষের সিদ্ধি হেতু সঙ্গে প্রয়োগ করিয়া থাকে, তাহারা লৌকিক দুঃখকে ত্যাগ করিয়া পরমার্থের সুখকে প্রাপ্ত হয় । যদি জড় প্রকৃতি আদি কারণ বা শরীরাদি কার্য্য না হয় তাহা হইলে পরমেশ্বর জগতের উৎপত্তি এবং জীব কর্ম্ম, উপাসনা ও জ্ঞান করিতে কেমন করিয়া সক্ষম হইবে? ইহাতে না কেবল জড়, না কেবল চেতন দ্বারা অথবা না কেবল কর্ম দ্বারা তথা না কেবল জ্ঞান দ্বারা কোন ধর্মাদি পদার্থের সিদ্ধি করিতে সক্ষম হয় ॥ ১৪ ॥
বায়ুরিত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । স্বরাডুষ্ণিক্ ছন্দঃ । ঋষভঃ স্বরঃ ॥
বা॒য়ুরনি॑লম॒মৃত॒মথে॒দং ভস্মা॑ন্ত॒ꣳ শরী॑রম্ ।
ও৩ম্ ক্রতো॑ স্মর । ক্লি॒বে স্ম॑র । কৃ॒তꣳ স্ম॑র ॥ ১৫ ॥
পদার্থঃ- হে (ক্রতো) কর্মশীল জীব । তুমি শরীর ত্যাগ করার সময় (ও৩ম্) এই নামবাচ্য ঈশ্বরকে (স্মর) স্মরণ কর, (ক্লিবে) নিজের সামর্থ্য হেতু পরমাত্মা এবং নিজের স্বরূপের (স্মর) স্মরণ কর (কৃতম্) নিজের কৃত কর্ম্মের (স্মর) স্মরণ কর । এই সংস্কারের (বায়ুঃ) ধনঞ্জয়াদিরূপ বায়ু (অনিল) কারণরূপ বায়ুকে, কারণরূপ বায়ু (অমৃতম্) অবিনাশী কারণকে ধারণ করে (অথ) (ইদম্) এই (শরীরম্) নষ্ট হইবার সুখাদির আশ্রয় শরীর (ভস্মান্তম্) অন্তে ভস্ম হইয়া যায়, এইরকম জানিবে ॥ ১৫ ॥
ভাবার্থঃ- মনুষ্যদিগের উচিত যে, যেমন মৃত্যু সময়ে চিত্তের বৃত্তি হইয়া থাকে এবং শরীর হইতে আত্মার পৃথক হইয়া থাকে সেইরূপ এই সময়কেও জানিবে । এই শরীর দাহ পর্য্যন্ত ক্রিয়া করিবে । দাহ করিবার পশ্চাৎ কোন সংস্কার করিবে না । বর্ত্তমান সময়ে এক পরমেশ্বরেরই আজ্ঞা পালন, উপাসনা এবং স্বীয় সামর্থ্যের বৃদ্ধি করিবে । কৃত কর্ম্ম নিষ্ফল হয় না এমন মানিয়া ধর্মে রুচি এবং অধর্মে অপ্রীতি করিতে থাকিবে ॥ ১৫ ॥
অগ্নে নয়েত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । নিচৃৎ ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ । ধৈবতঃ স্বরঃ ॥
অগ্নে॒ নয়॑ সু॒পথা॑ রা॒য়েऽঅ॒স্মান্ বিশ্বা॑নি দেব ব॒য়ুনা॑নি বি॒দ্বান্ ।
য়ু॒য়ো॒ধ্য᳕স্মজ্জু॑হুরা॒ণমেনো॒ ভূয়ি॑ষ্ঠাং তে॒ নম॑ऽউক্তিং বিধেম ॥ ১৬ ॥
পদার্থঃ- হে (দেব) দিব্যস্বরূপ (অগ্নে) প্রকাশস্বরূপ করুণাময় জগদীশ্বর! যদ্দ্বারা আমরা (তে) আপনার জন্য (ভূয়িষ্ঠাম্) অধিকতর (নমউক্তিম্) সৎকারপূর্বক প্রশংসার (বিধেম) সেবন করি ইহাতে (বিদ্বান্) সকলের জ্ঞাতা আপনি (অস্মৎ) আমাদের হইতে (জুহুরাণম্) কুটিলতারূপ (এনঃ) পাপাচরণকে (য়ুয়োধি) পৃথক করুন, (অস্মান্) আমাদের জীবদেরকে (রায়ে) বিজ্ঞান, ধন বা ধন হইতে হওয়া সুখের জন্য (সুপথা) ধর্মানুকূল মার্গ দ্বারা (বিশ্বানি) সমস্ত (বয়ুনানি) প্রশস্ত জ্ঞানকে (নয়) প্রাপ্ত করুন ॥ ১৬ ॥
ভাবার্থঃ- যাহারা সত্যভাবপূর্বক পরমেশ্বরের উপাসনা করে, যথাশক্তি তাহার আজ্ঞার পালন করে এবং সর্বোপরি সৎকারের যোগ্য পরমাত্মাকে মানে, তাহাদেরকে দয়ালু ঈশ্বর পাপাচরণমার্গ হইতে পৃথক করিয়া ধর্মযুক্ত মার্গে চালনা করিয়া বিজ্ঞান দিয়া ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ সিদ্ধ করিবার জন্য সক্ষম করে । ইহাতে এক অদ্বিতীয় ঈশ্বরকে ত্যাগ করিয়া কাহারও উপাসনা কদাপি করিবে না ॥ ১৬ ॥
হিরণ্ময়েনেত্যস্য দীর্ঘতমা ঋষিঃ । আত্মা দেবতা । অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ । গান্ধারঃ স্বরঃ ॥
হি॒র॒ণ্ময়ে॑ন॒ পাত্রে॑ণ স॒ত্যস্যাপি॑হিতং॒ মুখ॑ম্ ।
য়ো॒ऽসাবা॑দি॒ত্যে পু॑রুষঃ॒ সো᳕ऽসাব॒হম্ । ও৩ম্ খং ব্রহ্ম॑ ॥ ১৭ ॥
পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! যে (হিরন্ময়েন) জ্যোতিঃস্বরূপ (পাত্রেণ) রক্ষক আমার দ্বারা (সত্যস্য) অবিনাশী যথার্থ কারণের (অপিহিতম্) আচ্ছাদিত (মুখম্) মুখের তুল্য উত্তম অঙ্গের প্রকাশ করা হয় (য়ঃ) যে (অসৌ) তিনি (আদীত্য) প্রাণ বা সূর্য্য মন্ডলে (পুরুষঃ) পূর্ণ পরমাত্মা (সঃ) সেই (অসৌ) পরোক্ষরূপ (অহম্) আমি (খম্) আকাশতুল্য ব্যাপক (ব্রহ্ম) সর্বাপেক্ষা গুণ, কর্ম্ম ও স্বরূপ করিয়া অধিক (ও৩ম্) সকলের রক্ষক আমি তাহার (ও৩ম্) এইরকম নাম জানিবে ॥ ১৭ ॥
ভাবার্থঃ- সকল মনুষ্যদিগের প্রতি ঈশ্বর উপদেশ করেন যে, হে মনুষ্যগণ ! আমি এখানে আছি, সেই অন্যত্র সূর্যাদি লোকে, অন্যস্থান সূর্যাদি লোকে আছি তাহাই এখানে আছি, সর্বত্র পরিপূর্ণ আকাশ তুল্য ব্যাপক আমা হইতে ভিন্ন কেউ বড় নয়, আমিই সর্বাপেক্ষা বড় । আমার সুলক্ষণ দ্বারা যুক্ত পুত্রতুল্য প্রাণপ্রিয় আমার নিজ নাম “ও৩ম্” ইহা । যে আমার প্রেম ও সত্যাচরণ ভাবপূর্বক শরণ গ্রহণ করে তাহার অন্তর্য্যামীরূপে আমি অবিদ্যার বিনাশ, তাহার আত্মা প্রকাশিত করিয়া শুভ গুণ, কর্ম, স্বভাবযুক্ত করিয়া সত্যস্বরূপের আবরণ স্থির করিয়া যোগ দ্বারা হওয়া শুদ্ধ বিজ্ঞান দিই এবং সকল দুঃখ হইতে পৃথক করিয়া মোক্ষসুখ প্রাপ্ত করাই । ইতি ॥ ১৭ ॥
এই অধ্যায়ে ঈশ্বরের গুণ বর্ণন, অধর্ম ত্যাগের উপদেশ, সর্বকালে সৎকর্ম্মের অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা, অধর্মাচরণের নিন্দা, পরমেশ্বরের অতিসূক্ষ্ম স্বরূপের বর্ণন, বিদ্বান্কে জানিবার যোগ্য হওয়া, অবিদ্বানের অজ্ঞেয়তা হওয়া, সর্বত্র আত্মা জানিয়া অহিংসা ধর্মের রক্ষা, তাহার মোহ-শোকাদি পরিত্যাগ ঈশ্বরের জন্মাদি দোষরহিত হওয়া, বেদবিদ্যার উপদেশ, কার্য্যকারণরূপ জড় জগতের উপাসনার নিষেধ, সেই কার্য্যকারণ দ্বারা মৃত্যুর নিবারণ করিয়া মোক্ষাদি সিদ্ধ করা, জড় বস্তুর উপাসনা নিষেধ, চেতনের উপাসনার বিধি, সেই জড়-চেতন উভয়ের স্বরূপকে জানিবার আবশ্যকতা শরীরের স্বভাবের বর্ণন, সমাধি দ্বারা পরমেশ্বরকে নিজ আত্মায় ধারণ করিয়া শরীর ত্যাগ করা, দাহ করিবার পরে অন্য ক্রিয়ার অনুষ্ঠানের নিষেধ, অধর্মের ত্যাগ এবং ধর্মকে বৃদ্ধি করানোর জন্য পরমেশ্বররের প্রার্থনা, ঈশ্বরের স্বরূপ বর্ণন এবং সব নাম অপেক্ষা “ও৩ম্” এই নামের উত্তমতা প্রতিপাদন করা হইয়াছে । ইহাতে এই অধ্যায়ে কথিত অর্থের অর্থ সহ সঙ্গতি আছে, এইরূপ জানিবে ।
ইতি শ্রীমৎপরমহংসপরিব্রাজকাচার্য়্যাণাং শ্রীপরমবিদুষাং বিরজানন্দসরস্বতীস্বামিনাং শিষ্যেণ শ্রীমদ্দয়ানন্দসরস্বতীস্বামিনা নির্মিতে সংস্কৃতার্য়্যভাষাভ্যাং সমন্বিতে সুপ্রমাণয়ুক্তে য়জুর্বেদভাষ্যে চত্বারিংশত্তমোऽধ্যায়ঃ সমাপ্তঃ
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ