গীতা ৮/২৫ ও ৮/২৬ শ্লোকের বৈদিক বিশ্লেষণ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

25 September, 2023

গীতা ৮/২৫ ও ৮/২৬ শ্লোকের বৈদিক বিশ্লেষণ

 ধূমো রাত্রিস্তথা কৃষ্ণঃ যণ্মাসা দক্ষিণায়নম্।

তত্র চান্দ্রমসং জ্যোতির্যোগী প্রাপ্য নিবর্ততে।।গীতা৮।২৫।। [কর্মের দশা]

এই শ্লোকের তাৎপর্য এই যে, কেবল কর্মকালে যে যোগী প্রয়াণ করেন তিনি ধূম রাত্রি কৃষ্ণপক্ষের সমান অজ্ঞানরূপ অন্ধকার প্রাপ্ত হন। যেমন দক্ষিণায়নের সময় উত্তর মেরুর নিকট ঘোর অন্ধকার থাকে, বস্তুত যোগী উত্তরায়ণ কিংবা দক্ষিণায়ণে শরীর ত্যাগ করে....কৃষ্ণ পক্ষ কিংবা শুক্লপক্ষ যে কোন সময় প্রাণ ত্যাগ করে যদি শুভ কর্ম, সাধনাদি করে থাকে কিন্তু ঐ সময় সে মুক্ত অবস্থায় না থেকে সকাম যোগী থাকেন তখন কর্মানুষ্ঠানী সকাম কর্ম্ম যোগী চন্দ্রমার ন্যায় জ্যোতি প্রাপ্ত হয়ে ভোগরূপী আনন্দ প্রপ্ত হওয়ায় পুনঃ জন্ম গ্রহণ (শরীরপ্রাপ্ত) করে ফিরে আসেন। অতঃ এই ধারণা মিথ্যা উত্তরায়ণে যে দেহ ত্যাগ করে সে আবার জন্মায় না এবং যে দক্ষিণায়ণে দেহ ত্যাগ করে সে আবার জন্মগ্রহণ করে। এই বিষয়ে ঋগ্বেদ ১।২৫।১৩ নম্বর মন্ত্রে নির্দেশ রয়েছে..সূর্য নিজেই একটি আলোর রূপ, তাই এটি রাতরে অন্ধকারকে ধ্বংস করে তার আলো সবাই কে দান করে, একইভাবে বিদ্যানেরা বেদের জ্ঞান এবং তার উৎকৃষ্ট শিক্ষা প্রদান করে অজ্ঞতাকে ধ্বংস করে এবং সমস্ত মানুষ কে আলোকিত করে সুখ প্রদান করে। মোক্ষের সম্বন্ধ কেবল বৈদিক শুভকর্ম, যজ্ঞ এবং যোগ অনুশীলনের উপর ভিত্তি করে..বেদ অধ্যয়ন, পণ্ডিতদের সঙ্গ, ধর্মচর্চা, যজ্ঞ, নাম স্মরণ এবং অষ্টাঙ্গ যোগ অনুশীলন ইত্যাদির মতো অনেক শুভকামনা করার সময় একজন যোগী যদি অসম্প্রজ্ঞাত সমাধি লাভ করেন তবে তিনি মোক্ষ লাভের অধিকারী হন। উত্তরায়ণ, শুক্লপক্ষ ইত্যাদির সময় সে তার জীবন ত্যাগ করুক বা দক্ষিণায়ণ কৃষ্ণপক্ষের সময় দেহ ত্যাগ করুক। তিনি সবসময় একজন মুক্ত জীবিত পুরুষ। মনুষ্যের মূল উদ্দেশ্য হল যজুর্বেদ (৪০।১২) মন্ত্র অনুসারে সৎকর্ম করে পরমেশ্বরকে জানা, এবং তবেই মোক্ষ লাভ হয়..

অ॒ন্ধন্তমঃ॒ প্র বি॑শন্তি॒ য়েऽবি॑দ্যামু॒পাস॑তে ।

ততো॒ ভূয়॑ऽইব॒ তে তমো॒ য়ऽউ॑ বি॒দ্যায়া॑ র॒তাঃ ॥ যজু০ ৪০।১২ ॥

অর্থাৎ যে সকল নর-নারী বেদ-বিদ্যা না শোনার কারণে অজ্ঞ, তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে। তাহলে এখানে বলা হলো না যে অজ্ঞ সে কখনই সূর্যের আলোয় বা বিদ্যুতের আলোতে আসে না, সর্বদা কোন গভীর অন্ধকার কুয়া বা জঙ্গলে গিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করে দেয়। এখানে অন্ধকার মানে অজ্ঞতা ও অবিদ্যা এবং অবিদ্যা গ্রহণের কারনে সে পাপ কাজ করবে এবং অসুর গর্ভে প্রবেশ করবে। একইভাবে, দক্ষিণায়ন ও কৃষ্ণপক্ষ আদির ভাব হল কর্মানুষ্ঠানে রত সকামী যোগী যিনি পুনঃ পুনঃ জন্ম লাভ করেন এবং উত্তরায়ণ ও শুক্লপক্ষের অর্থ হল সেই সাধারনত যোগী যিনি মোক্ষ লাভ করেছেন এবং দেহ ত্যাগের পর পুনর্জন্ম গ্রহণ করছেন না। শ্রীকৃষ্ণ জী উক্ত শ্লোকে স্পষ্ট ভাবে বলতে চেয়েছেন দেবযান মার্গ অথবা পিতৃযান মার্গের অনুসারী উভয় যোগীর কোন মোহ প্রাপ্তি হয় না অর্থাৎ তাঁদের জীবন ত্যাগপূর্ণ হয় এবং তাঁরা সংসারের সমস্ত পদার্থ যজুর্বেদ ৪০।১ মন্ত্রানুসারে ত্যাগপূর্বক ভোগ করেন.. মোহ করেন না..

শুক্লকৃষ্ণে গতী হ্যেতে জগতঃ শাশ্বতে মতে। 

একয়া যাত্যনাবৃত্তিমন্যয়াবর্ততে পুনঃ।।গীতা৮।২৬।। [কর্মমার্গ এবং জ্ঞানমার্গের উপসংহার]

 ___অর্থাৎ শুক্ল ও কৃষ্ণ এইদুই মার্গ সনাতন মার্গ.. শুক্ল অর্থাৎ দেবযান মার্গ পুনঃ আবগমন অর্থাৎ পুনঃ জন্ম-মৃত্যু না হওয়া অন্যটি অর্থাৎ দ্বিতীয় কৃষ্ণ পক্ষ অর্থাৎ পিতৃযান মার্গ যেখানে যোগী শুভ কর্ম যজ্ঞ, ঈশ্বর নাম কির্তন, যোগাভ্যাস এবং গৃহস্থের শুভ কর্ম করে থাকেন কিন্তু মোক্ষ প্রাপ্ত হয় না অতঃ পুনারবৃত্তি করে জন্মমৃত্যুর বন্ধনে ততক্ষন থাকেন যতক্ষন না বৈরাগ্য প্রাপ্ত হয়ে ঈশ্বরকে প্রাপ্ত স্বরূপ মোক্ষ লাভ করে..বাকী ঋগ্বেদ ১০।৮৬।১৯ এবং ১০।৮৬।২১ মন্ত্রের ন্যায় কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্ল পক্ষ বিজ্ঞান জানা উচিৎ..

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মনুস্মৃতি প্রথম অধ্যায়

  মনুস্মৃতি অধ্যায় ১ (সৃষ্টি ও ধর্ম্ম উৎপত্তি বিষয়) মনুমেকাগ্রমাসীনমভিগম্য মহর্ষযঃ । প্রতিপূজ্য যথান্যাযমিদং বচনমঅব্রুবন্ ।। মনু ১।১ (महर्षय...

Post Top Ad

ধন্যবাদ