ঈশ্বর কি সূক্ষ্ম-সূক্ষ্ম কণা, কোয়ান্টা আদির থেকে শুরু করে বড়-বড় লোক লোকান্তরের ঘূর্ণন ও পরিক্রমণ, তাদের ধারণ, আকর্ষণ, প্রতিকর্ষণ বলের প্রত্যক্ষ কারণ? না, ঈশ্বর সূর্যাদি লোক ও ইলেকট্রন্স আদি কণাগুলোকে ধরে ঘোড়ায় না বা চালায় না, বরং এইসব পদার্থ সেই বিভিন্ন বল, যাকে বর্তমান বিজ্ঞান জানে বা জানার চেষ্টা করছে, তাদের দ্বারা নিজ-নিজ কাজ করছে।
তবে হ্যাঁ, এইসব বলের উৎপত্তি যেসব প্রাণ ও ছন্দাদি পদার্থ দ্বারা হয়েছে, বর্তমান বিজ্ঞান তাদের এতটুকুও জানে না। এই কারণে বর্তমান বিজ্ঞান দ্বারা মান্যতা এমন মূলবলের উৎপত্তি এবং ক্রিয়াবিধির সমুচিত ব্যাখ্যা করতে এই বিজ্ঞান অক্ষম। এই মূলবলের উৎপত্তি এবং নিয়ন্ত্রণ এই বিবিধ প্রকারেরই প্রাণ ও ছন্দাদি রশ্মির দ্বারা হয়।
কথা এখানেই শেষ নয়, এই প্রাণ ও ছন্দাদি রশ্মিগুলোও মন এবং সূক্ষ্ম বাক্ তত্ত্বের মিথুন দ্বারা উৎপন্ন ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কারণে মন এবং সূক্ষ্ম বাক্ তত্ত্বের স্বরূপ ও ব্যবহারকে না জেনে প্রাণ ও ছন্দাদি রশ্মিগুলোর এবং তারথেকে উৎপন্ন বিভিন্ন কথিত মূলবলগুলোর (গুরুত্ব, বিদ্যুৎ চুম্বকীয়, নাভিকীয় বল এবং দুর্বল বল) স্বরূপ ও ক্রিয়াবিজ্ঞানের যথাযত বোধ হওয়া সম্ভব নয়।
ধ্যাতব্য হল যে, মন ও বাক্ তত্ত্বও জড় হওয়ার কারণে স্বয়ং কোনো কাজের মধ্যে প্রবৃত্ত হওয়ার সামর্থ্য রাখে না। এদের প্রবৃত্তকারী সকলের মূল তত্ত্ব হল চেতন ঈশ্বর। তিনিই এই মন এবং সূক্ষ্ম বাক্ তত্ত্বকে প্রেরিত করেন। এদের মাঝে একটা কাল তত্ত্বও থাকে কিন্তু সেটাও জড় হওয়ায় ঈশ্বর তত্ত্বের দ্বারা প্রেরিত হয়ে কাজ করে। এইভাবে কাজ করতে কিংবা প্রেরক এবং প্রেরিত পদার্থ, নিয়ামক ও নিয়ম্য তত্ত্বের শৃঙ্খলা হচ্ছে এই রকম -
চেতন ঈশ্বর তত্ত্ব কাল তত্ত্বকে প্রেরিত করে। কাল তত্ত্ব মন-বাক্ তত্ত্বকে প্রেরিত করে, পুনঃ মন এবং বাক্ তত্ত্ব প্রাণ ও ছন্দাদি রশ্মিগুলোকে প্রেরিত করে। তারপর সেই প্রাণ ও ছন্দাদি রশ্মি আধুনিক কথিত চার প্রকারের মূলবলকে উৎপন্ন ও প্রেরিত করে, তার পশ্চাৎ সেই চারটা বল (বস্তুতঃ বলের সংখ্যা অনেক অধিক আছে, যা সকল প্রাণাদি রশ্মির কারণেই উৎপন্ন হয়) সমস্ত সৃষ্টিকে উৎপন্ন ও সঞ্চালিত করতে সহায়ক হয়।
এইভাবে ঈশ্বর তত্ত্ব প্রত্যেক ক্রিয়ার সময় কেবল কাল বা ওম্ ছন্দ রশ্মিকেই প্রেরিত করে, সেটা অগ্রিম প্রক্রিয়াকে আগে বাড়িয়ে দেয়। এই তত্ত্ব এতই সূক্ষ্ম যে মানুষ কখনও এটাকে কোনোরূপ প্রয়োগ পর্যবেক্ষণ দ্বারা জানতে পারবে না। কেবলমাত্র উচ্চ কোটির য়োগীই এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে জানতে ও বুঝতে পারবে। এই গ্রন্থে মহায়োগী মহর্ষি ঐতরেয় মহীদাস এরকম সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে নিজের মহান্ য়োগ বল দ্বারা বুঝে নিয়ে এই মহান্ রহস্যপূর্ণ গ্রন্থের মধ্যে বর্ণিত করেছেন। পরমাত্মার অসীম দয়ায় আমি এই গ্রন্থকে জানতে সফল হয়েছি। এরমধ্যে স্থানে-স্থানে ঈশ্বর তত্ত্বের ভূমিকার বর্ণনা কিংবা তাঁর ক্রিয়াবিজ্ঞানের সাংকেতিক বর্ণনা আছে, যাকে পাঠক গ্রন্থের অধ্যয়ন করেই জানতে পারবেন। সারাংশতঃ ঈশ্বর কাল, ওম্ রশ্মি ও প্রকৃতিকে প্রেরিত করে সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে প্রারম্ভ ও সম্পাদিত করেন। তিনি কোনো ক্রিয়ার মধ্যে জীবাত্মার মতো এরকম অংশীদার হন না যে তাঁকে নিজের কর্মের ফল ভুগতে হবে। তিনি হলেন সর্বদা অকাম। কেবলমাত্র জীবদের জন্যই সবকিছু করেন, এই কারণে তিনিই কর্তা আর তিনিই অকর্তা। তিনি হলেন সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ। ঈশ্বর কিভাবে প্রেরিত করেন? সেই প্রেরণা বা জাগরণের ক্রিয়াবিজ্ঞানটা কি? এইসব বিষয় নিয়ে আমি পরবর্তী কাল তত্ত্ব প্রকরণের মধ্যে সংক্ষিপ্ত রূপে বোঝাবো, পাঠক সেখানেই দেখতে পারবেন∆।
____________________________________________
∆এই বিষয়টি আপনি বেদ বিজ্ঞান আলোক গ্রন্থে পড়তে পারেন
📖 Buy VedVigyan-Alok (A Vaidic Theory Of Universe): https://www.thevedscience.com
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ