গীতা কি ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

17 September, 2023

গীতা কি ?

 যখন আমরা একজন প্রবচনকর্তার মুখ থেকে শুনি যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় এই কথা বলেছেন, তখন একটি বিষয় নিশ্চিত হই যে গীতার বক্তৃতাটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দিয়েছিলেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের পৌরাণিক মান্যতা অনুসারে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন স্বয়ং পরমাত্মা পরমেশ্বর। গীতায় কৃষ্ণজী ও নিজেকে পরমাত্মা বলে অর্জুনকে উপদেশ করেন। অতঃ এই উপদেশ পরমাত্মার দেওয়া বলেই মনে করা হয়। এটাই গীতার লোকপ্রিয়াতার মূখ্য আধার।

গীতার লোকপ্রিয়াতার আর একটি কারণ হল, এতে প্রায় সব সম্প্রদায়ের বিচার পাওয়া যায়। তারা সকলেই গীতায় নিজেদের কথা দেখে মুগ্ধ হয় এবং গীতার প্রশংসক হয়ে যায়। এই কারণে অনেক লোকপ্রসিদ্ধ বিদ্যান গীতার উপর তাঁদের ভাষ্য প্রস্তুত করেছেন। আর্য সমাজের পণ্ডিত ও এর থেকে বাদ নেই। এতগুলি ভাষ্য দেখে মনে হয় যে এই ভাষ্যগুলির মধ্যে কিছু শূন্যস্থান ছিল যা এখন পূরণ করা হচ্ছে বা তারা তাদের নিজস্ব আদর্শ উপস্থাপন করার জন্য গীতার জনপ্রিয়তার আশ্রয় নিচ্ছেন। গীতাপ্রেমীরা অবাক হবেন যে গীতা ব্যাসদেবের রচনা নয়, ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরও নয় এটা প্রচার মাত্র, সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে এটাই প্রমাণিত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনের ভ্রম হওয়ার ঘটনাটিও কাল্পনিক। আমরা কখনই বলতে চাই না যে গীতা পড়া উচিত নয়, গীতাতে অনেক কিছু ভালো উপদেশ রয়েছে। উপনিষদ থেকে যে বিচারগুলি নেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই উচ্চকোটির কিন্তু ভেজাল পণ্য যেমন লাভজনক নয়, তেমনি মিশ্রিত বিচার উপযোগী হয় না। মনে রাখবেন প্রতিটি চকচকে বস্তু সোনার হয় না।

লক্ষণীয় যে গীতার শুরুতে স্বজনদের দেখে অর্জুনের মত মহাবীরের মোহ হয়ে গিয়েছিলো তিনি এনাদের কি ভাবে নিধন করবেন ভেবে হতাসায় ভুগছিলেন। গীতা অনুসারে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিথিল হতে লাগল, মুখ শুকিয়ে যেতে লাগল, ত্বক জ্বলতে লাগল, শরীর কাঁপতে লাগল এবং হাত থেকে ধনুক পড়ে গেল। এমতাবস্থায় তিনি অস্ত্র ত্যাগ করে রথের পিছনে বসলেন। অতঃপর কৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধ করার যে উপদেশ দিয়েছেন তা গীতায় উপস্থাপিত হয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের মধ্যে সংলাপ হিসেবে। আবার তিনি (অর্জুন) ইতিমধ্যেই বিরাটপর্বে বর্ণিত যুদ্ধে বিপেক্ষের প্রায় সমস্ত বড় বড় যোদ্ধাদের ধুলো চাটিয়েছিলেন। তাঁদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য বারো বছর ধরে অস্ত্র, সৈন্য সংগ্রহ করেছিলেন তাদের দেখে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়ালেন, অস্ত্র নামিয়ে রাখলেন !! অর্জুন কাপুরুষ ছিলেন না ! তিনি কি এত তাড়াতাড়ি মহারানী দ্রৌপদীকে দেওয়া বচন (প্রতিশ্রুতি) ভুলে গিয়েছিলেন !? মাতা কুন্তীকে দেওয়া আশ্বাসন কি ভুলে গিয়েছিলেন ?! যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনের মোহগ্রস্থ হওয়া কল্পনা মাত্র, এই সময় বীর যোদ্ধাদের হাত ছটপট কারার কথা।

যখন দুই সৈন্য পরস্পর মুখোমুখি হয় এবং যুদ্ধের শিঙা বাজানো হয়, তখন সাতশত শ্লোককে গীতা বলা যায় না, বলার কোনো যৌক্তিকতাও নেই। এত অবসর কোথায় ছিল। এই উপদেশের জন্য কমপক্ষে কয়েক ঘন্টার প্রয়োজন। গীতার ১৬ অধ্যায় যোগের বর্ণনায় পূর্ণ এবং যুদ্ধের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কৃষ্ণজী অর্জুনের রথকে দুই বাহিনীর মধ্যে দাঁড় করিয়ে তাঁর প্রনচন দেন, তা কেবল অর্জুনই শুনতে পাচ্ছিলেন..এটাই স্বাভাবিক। এই অবস্থায় অপর পক্ষ দাঁড়িয়ে দেখবে এবং বলবে না যে তারা যুদ্ধ করতে এসেছে প্রবচন শুনতে নয়, এটাই স্বাভাবিক কারন বিপক্ষে মহারথী দুর্যোধনের মত চঞ্চল যোদ্ধা ছিলেন। এই ঘটনা যুদ্ধক্ষেত্রের এটা বিশ্বাস যোগ্য নয়।

গীতা মহাভারতের একটি অংশ হিসাবে গৃহীত হয়, কিন্তু গীতা নিজেই একটি পৃথক গ্রন্থ হওয়ার সাক্ষ্য দেয়। ভীষ্ম পর্বের ২৫তম থেকে ৪২তম অধ্যায়ের অংশটিকে গীতা বলা হয়। ৪৩ তম অধ্যায়ে প্রথম ৬টি শ্লোক পর্যন্ত গীতার মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যে কোন লেখক গ্রন্থের শেষে তার ফলশ্রুতি লেখবেন এটাই স্বাভাবিক। মহাভারতে যেখানে গীতা শুরু হয়েছে, সেখানে প্রত্যেক অধ্যায়ের শুরুতে শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্পষ্টভাবে লেখা আছে। উপরন্তু, আপনি যদি গীতা ভালোভাবে দেখেন, সেখানে দেখবেন যে  প্রথম অধ্যায়ের শেষে "ॐ তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষ্তসুব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জ্জুন সংবাদেऽর্জুন-বিষাদযোগ নাম প্রথমোऽধ্যায়ঃ" লেখা রেয়েছে যা অন্যান্য অধ্যায়গুলির ভিত্তিতে মুদ্রিত হয়েছে। এই প্রকারে অন্য অধ্যায়ে সন্ন্যাস যোগের ন্যায় বর্ণিত হয়েছে। যথাযত গীতার প্রথম অধ্যায়ের শেষে "বিষাদ যোগ নামক শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার প্রথম অধ্যায়ের ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য সমাপ্ত" লেখা পাবেন এতে মহাভারতের অংশ হওয়ার কোন সংকেত পাবেন না।

এতে স্পষ্ট প্রতীত হয় যে এটা একটি পৃথক গ্রন্থ যা পরে মহাভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং উপনিষদের ন্যায় প্রচারিত করার জন্যই রচনা করা হয়েছিল। যদি আমরা গীতার প্রকরণ মহাভারত থেকে আলাদা করে দেখি তবেও মহাভারতের তারতম্য (ধারাবাহিকতা) নষ্ট হবে না এই ভাবে সমস্ত গীতা প্রক্ষিপ্ত মনে করা যায়। মহাভারতের অংশ হলে গীতা অবশ্যয় ব্যাসদেব দ্বারা রচিত প্রমাণ হয়, কিন্তু ব্যাস জীর ন্যায় গম্ভীর লেখকের কাজ বলে সিদ্ধ হয় না।

আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি দয়ানন্দ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ সত্যার্থপ্রকাশের একাদশ সমুল্লাসে লিখেছেন:"দেখ! শ্রীকৃষ্ণ জীর ইতিহাস মহাভারতে অতি উত্তম। ওনার গুণ,কর্ম্ম,স্বভাব এবং চরিত্র আপ্ত পুরুষের ন্যায়। তিনি জন্ম থেকে মরণপর্যন্ত কোন অধর্মের আচরন করেন নি। তিনি নিষ্কলঙ্ক সত্যবাদী আপ্তপুরুষ ছিলেন স্বামী জী ও ব্যাসদেব জী তা মানতেন। যেখানপ মহাভারতের কৃষ্ণ একটি আদর্শ চরিত্রের একজন মহান ব্যক্তি, সেখানে গীতার শ্রীকৃষ্ণ হলেন একজন অবতারী পৌরাণিক দেবতা, যিনি নিজেকে উপনিষদীয় কৌশলে "আমি" শব্দে কখনো পরমাত্মা আবার কখন মনুষ্যের ন্যায় কথন করেছেন...চলবে>>   

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ