মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেহপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ।
স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেহপি যান্তি পরাং গতিম্॥ গীতা ৯।৩২॥
অর্থঃ হে পৃথা পুত্র অর্জুন! স্ত্রী, বৈশ্য, শূদ্র এবং পাপযোনি জন্ম অর্থাৎ পাপ-যুক্ত যাদের জন্ম তাঁরা আমার শরণে এসে পরম গতি লাভ করে॥
ভাবার্থঃ শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ প্রস্তুত শ্লোকে প্রত্যেক বর্ণ এবং স্ত্রী আদি কে বিদ্যানদের শরণে গিয়ে বৈদিক শুভকর্ম করে সুখী জীবন ব্যতীত করে মোক্ষ সুখ লাভের বৈদিক উপদেশ দিয়েছেন। বেদ-শাস্ত্র, উপনিষদ, গীতা, মনুস্মৃতি আদি কোন গ্রন্থেই জাতপাতের কোন চিহ্ন নেই। সুবিধাবাদী, স্বার্থপর, পাষণ্ড ব্যক্তিবর্গের তৈরী বর্ণবাদ দেশের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
যজুর্বেদ ৩১।১১ পড়লে ঈশ্বরীয় বর্ণব্যবস্থার বর্ণনা পাওয়া যায়। বর্ণ জন্ম দ্বারা নির্ধারিত হয় না, গুণ ও কর্ম দ্বারা নির্ধারিত হয়। একইভাবে, বেদে সকল নারীকে বেদ শোনার, পাঠ করার, যোগাভ্যাস করার এবং ভক্তি আদি করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। অথর্ববেদ ১১।৫।১৮ নং মন্ত্রে এই বিষয়ে পরমেশ্বর উপদেশ দিয়েছেন। যজুর্বেদ ২৬।২ মন্ত্রে উপমালঙ্কার আছে ।
য়থে॒মাং বাচং॑ কল্যা॒ণীমা॒বদা॑নি॒ জনে॑ভ্যঃ ।
ব্র॒হ্ম॒রা॒জ॒ন্যা᳖ভ্যাᳬশূ॒দ্রায়॒ চার্য়া॑য় চ॒ স্বায়॒ চার॑ণায় ।
প্রি॒য়ো দে॒বানাং॒ দক্ষি॑ণায়ৈ দা॒তুরি॒হ ভূ॑য়াসম॒য়ং মে॒ কামঃ॒ সমৃ॑ধ্যতা॒মুপ॑ মা॒দো ন॑মতু ॥
এখানে পরমাত্মা সকল মনুষ্যদিগের প্রতি এই উপদেশ করেন যে, "সেই চারিবেদরূপ কল্যাণকারিণী বাণী সকল মনুষ্যদিগের হিতের জন্য আমি উপদেশ করিয়াছি, ইহাতে কাহারও অনধিকার নেই।"
এই সমস্ত বৈদিক মন্ত্রগুলি প্রমাণ করে যে একজন স্ত্রীর সম্পূর্ণরূপে ভক্তি, উপাসনা করার অধিকার রয়েছে এবং এই অধিকারটি গত তিন যুগে উপযোগ করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ বাল-ব্রহ্মচারীণী গার্গী, জনকের প্রধানাচার্যা ছিলেন এবং একইভাবে সমস্ত বিদূষী নারী পূজনীয় ছিলেন। আজ বেদ অধ্যয়নের অভাবের কারণে নারী ও শূদ্রদের উপর অত্যাচার করার জন্য মানুষ তার নিজস্ব নিয়ম তৈরি করেছে। এই পাপ বৈদিক-বিদ্যা জ্ঞান শ্রবণ করলেই দূর করা যায়। অন্যথায় বেদের বিরুদ্ধাচরণকারী পাপী সাধুরা সমগ্র মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের মায়াজালে ফাঁসিয়ে মানুষের দেহ, মন ও সম্পদ বিনষ্ট করে দিবে। তাই যতক্ষণ না প্রাণী সত্যযুগ, দ্বাপর, ত্রেতা যুগের ন্যায় বেদ এবং যোগ বিদ্যার জ্ঞাতা দের কাছে গিয়ে বৈদিক জ্ঞান অর্জন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বৈদিক বিরোধী মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ব্রাহ্মণ, সাধু প্রভৃতি হয়ে মানুষকে লুঠ করতেই থাকবে। এই বিষয়ে, পূর্বের ৯।২৯ এবং ৯।৩০ শ্লোকে, বৈদিক মন্ত্রের প্রমাণ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে আজও মানুষ বেদ ও যোগের জ্ঞানীদের কাছে গিয়ে নিজে পণ্ডিত হতে পারে। এই অনাদি কাল থেকে চলে আসা বৈদিক পরম্পরা দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ জী এই শ্লোকে জ্ঞান দিচ্ছেন যে হে অর্জুন। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, কন্যা, নারী অথবা পাপী, যে কেউ আমার (দ্বাপরে কৃষ্ণ জীর) শরণে এসে বৈদিক জ্ঞান লাভ করবেন তিনি পরমগতি অর্থাৎ সংসারী (জাগতিক) ও আধ্যাত্মিক সুখ অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করবেন। বেদ এবং যোগ বিদ্যার জ্ঞাতার শরণে এসে পাপযুক্ত প্রাণীও দ্বিজ হয় এবং জ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে স্বয়ং বিদ্যান হন এবং অন্যদেরও উদ্ধার করেন॥
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ