যজুর্বেদ ৩৬/১২ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

24 December, 2023

যজুর্বেদ ৩৬/১২

शन्नो॑ दे॒वीर॒भिष्ट॑य॒ऽआपो॑ भवन्तु पी॒तये॑। शंयोर॒भि स्र॑वन्तु नः॥ 

ও৩ম্ শন্নো দে॒বীর॒ভিষ্ট॑য়॒ऽআপো॑ ভবন্তু পী॒তয়ে॑।

শংয়োর॒ভি স্র॑বন্তু নঃ ॥ যজুর্বেদ ৩৬।১২ ॥

পদার্থঃ- হে জগদীশ্বর বা বিদ্বন্ ! যেমন (অভিষ্টয়ে) ইষ্ট সুখের সিদ্ধি হেতু (পীতয়ে) পান করিবার জন্য (দেবীঃ) দিব্য উত্তম (আপঃ) জল (নঃ) আমাদেরকে (শম্) সুখকারী (ভবন্তু) হউক (নঃ) আমাদের জন্য (শংয়োঃ) সুখের বৃষ্টি (অভি, স্রবন্তু) সব দিক দিয়া করুক সেইরূপ উপদেশ কর ॥
মহর্ষি দয়ানন্দকৃত কৃত আধিভৌতিক ভাষ্যঃ যে সব মনুষ্য যজ্ঞাদি দ্বারা শুদ্ধ জলাদি পদার্থের সেবন করে তাহাদের উপর সুখরূপী অমৃতের বর্ষা নিরন্তর হইতে থাকে ॥

যজুর্বেদ ৩৬/১২

বৈদিক বিজ্ঞানী আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক জী কৃত আধিদৈবিক ভাষ্যঃ 👇

(শম্, নঃ, দেবীঃ, অভিষ্টয়ে, আপঃ, ভবন্তু, পীতয়ে) প্রাণ, অপান আর ব্যানের মধ্যে বিদ্যমান কণা বা রশ্মি এই ছন্দ রশ্মির ঋষি রশ্মির সঙ্গে সবদিক দিয়ে সঙ্গত হয়ে পরস্পর অবশোষিত করার জন্য সুষম ঊর্জাযুক্ত হয়। এর অর্থ হল সেইসব কণা বা রশ্মি না তো অধিক বিক্ষুব্ধ হয় আর না শিথিল হয়, বরং সেগুলো সুষম ঊর্জাযুক্ত হয়। এইজন্য সেই কণা বা রশ্মির সংযোগ-প্রক্রিয়া সমৃদ্ধ হতে থাকে। এইসব সংযোজ্য কণা পরস্পর ক্রীড়া করতে করতে চকমক করে একে-অপরের প্রতি বিভিন্ন ক্রীড়া করে আকর্ষণাদি যুক্ত হয়। যখন এইসব গুণ সুষম অবস্থা প্রাপ্ত করে, তখনই সেগুলো য়জনীয় কর্মে সক্ষম হয়। এখানে "আপঃ" পদের ভাব "দেবীঃ" দর্শাচ্ছে।
এখানে "অভিষ্টয়ে" পদের মধ্যে "ঈকার" কে "ইকার" ছান্দস প্রয়োগ আছে। এই পদ এই দশায় যে কণার সংযোগ প্রক্রিয়া সর্বদা সম্মুখে উপস্থিত অথবা সম্মুখে গতি করা কণার মাঝেই হয়। একইসঙ্গে "অভি" উপসর্গের প্রয়োগ "সব দিকে" অর্থতেও হয়। এরদ্বারা এটাও স্পষ্ট হল যে য়জনের এই প্রক্রিয়া সর্বত্রই হয়। এখানে "পীতয়ে" পদের প্রয়োগ এটা দর্শায় যে এইসব সংযোগ প্রক্রিয়াকে সুরক্ষিত করার জন্য ঊর্জার সুষম হওয়াটা অনিবার্য, অন্যথা সংযুক্ত কণা উৎপন্ন হতেই বিখণ্ডিত হতে পারে।

(শম্য়োঃ, অভি, স্রবন্তু, নঃ) [শম্য়োঃ = শম্য়ুঃ সুখয়ুঃ। (নি০ ৪/২১), অথাপি শম্য়ুর্বার্হস্পত্য উচ্যতে। (নি০ ৪/২১), বৃহস্পতিঃ= এষ (প্রাণঃ) উ এব বৃহস্পতিঃ। (শ০ ১৪/৪/১/২২), অথ য়স্সোऽপান আসীত্ স বৃহস্পতিরভবত্। (জৈ০ উ০ ২/২/৫), বৃহতাম্ পালকঃ সূত্রাত্মা। (ম০ দ০ য়০ ভা০ ৩৯/৬)]
এইসব ঋষি রশ্মিতে উপস্থিত বা বিদ্যমান বিভিন্ন কণার উপর প্রাণ, অপান এবং সূত্রাত্মা বায়ু এই তিন রশ্মির মিশ্রিত রূপ দ্বারা উৎপন্ন বিশেষ প্রকারের রশ্মির বৃষ্টি সব দিক থেকে হতে থাকে। এই কারণে সেইসব সংযোজ্য কণা পারস্পরিক সংযোগ হেতু সুখদ স্থিতি প্রাপ্ত করে। [সুখম্ = সুখম্ কস্মাত্? সুহিতম্ খেভ্যঃ। (নি০ ৩/১৩)] এখানে সুখদ স্থিতির অর্থ হল সেইসব সংযোজ্য কণা একে-অপরের পরিধিরূপের মধ্যে বিদ্যমান আকাশ তত্ত্বকে উচিত রীতিতে ধারণ করতে সক্ষম হয় বা হতে থাকে। এরফলে সৃষ্টির মধ্যে নানা প্রকারের য়জনীয় ক্রিয়া সমৃদ্ধ হতে থাকে।
এই মন্ত্রের ঋষি হল দধ্যঙ্, যা অথর্বা থেকে উৎপন্ন। এর বিষয়ে ঋষিগণ লিখেছেন - "বাগ্বৈ দধ্যঙ্ঙাথর্বণঃ" (শ০ ৬/৪/২/৩), "বাগ্বা অনুষ্টুপ্" (ঐ০ ১/২৮)। এর অর্থ হল এই ছন্দ রশ্মির উৎপত্তি কিছু বিশেষ প্রকারের অনুষ্টুপ্ ছন্দ রশ্মি থেকে হয়েছে। এর দেবতা হল "আপঃ"।
[আপঃ = মেধ্যা বা আপঃ (শ০ ১/১/১/১), অন্নম্ বাऽআপঃ (শ০ ২/১/১/৩), বজ্রো বা ऽআপঃ (শ০ ১/১/১/১৭), আপো হি য়জ্ঞঃ (শ০ ৩/১/৪/১৫), পশবো বা এতে য়দাপঃ (ঐ০ ১/৮), দেবীঃ = প্রাণো বা অপানোব্যানস্তিস্রো দেব্যঃ (ঐ০ ২/৪)]
এর ছন্দ হল গায়ত্রী, এই কারণে এর দৈবত এবং ছান্দস প্রভাব দ্বারা আকাশে বিদ্যমান বিভিন্ন সংযোজ্য কণা, ছন্দ বা মরুদ্ রশ্মি এবং বজ্র রশ্মি আদি পদার্থ, যা দেবীসঞ্জক প্রাণ, অপান আর ব্যান দ্বারা সংযুক্ত হয়, শ্বেতবর্ণীয় তেজযুক্ত হতে থাকে তথা বিদ্যুৎ বলের বৃদ্ধি হতে থাকে।
ভাবার্থঃ এই গায়ত্রী ছন্দ রশ্মির কারণে যেকোনো সংযোজ্য কণা, ছন্দ, মরুদ্ এবং বজ্র রশ্মি সংযোগের পূর্বে সুষম ঊর্জাযুক্ত হয় অর্থাৎ না বিক্ষুব্ধ হয় আর না শিথিল। একইসঙ্গে এই রশ্মি সংযোগের প্রক্রিয়াকে সুরক্ষিতও রাখে। সৃষ্টিতে যেখানেই সংযোগ হয়, সেখানে ভারসাম্যের এই প্রক্রিয়া অনিবার্যরূপে হয়। বিভিন্ন সংযোজ্য কণার উপর প্রাণ, অপান আর সূত্রাত্মা বায়ু থেকে উৎপন্ন এক বিশেষ রশ্মির বৃষ্টি সব দিক থেকে হওয়ার কারণে সেগুলো নিজের চারিদিকে বিদ্যমান আকাশ তত্ত্বকে ধারণ করতে সক্ষম হয়, যারফলে য়জনীয় ক্রিয়া সমৃদ্ধ হয়।
অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক জী কৃত আধ্যাত্মিক ভাষ্যঃ
(দেবীঃ, আপঃ) হে সকল দিব্য গুণযুক্ত আর সকলকে দিব্য গুণ প্রদানকারী, সুখস্বরূপ আর সুখ প্রদানকারী, সম্পূর্ণ সৃষ্টির নির্মাতা আর নিয়ন্ত্রক, সকল মানুষকে জগতের বিভিন্ন ব্যবহারের শিক্ষা বেদ দ্বারা প্রদানকারী সর্বব্যাপক পরমেশ্বর! (নঃ, অভিষ্টয়ে, পীতয়ে) আমাদের অভীষ্টরূপ মোক্ষ সিদ্ধির জন্য এবং সকল দুর্গুণ আর দুঃখ আদি হতে আমাদের রক্ষার জন্য, পরমানন্দ পান করানোর জন্য (শম্, ভবন্তু) আপনি কল্যাণকারী হউন। (নঃ, শম্য়োঃ, অভি, স্রবন্তু) হে পরমেশ্বর! আপনি আমাদের য়োগসাধনার উপর সব দিক থেকে নিরন্তর পরম সুখের বর্ষণ করুন। এখানে সুখের তাৎপর্য হল - "সুহিতম্ খেভ্যঃ" (নি০ ৩/১৩) অর্থাৎ আমাদের আত্মা, মন এবং ইন্দ্রিয়কে উত্তম প্রকারে ধারণ করে অর্থাৎ সেগুলো একাগ্র করে সমাধিকে প্রাপ্তকারী হোক।
ভাবার্থঃ হে দিব্য গুণযুক্ত সর্বব্যাপক পরমেশ্বর! দুর্গুণ আর দুঃখ আদি থেকে আমাদের রক্ষা করে মোক্ষ সিদ্ধির জন্য কল্যাণকারী হউন আর আমাদের উপর পরম সুখের বর্ষণ করুন, যাতে আমাদের আত্মা সমাধিকে প্রাপ্ত করতে সক্ষম হয়।
আচার্য অগ্নিব্রত জী কৃত আধিভৌতিক ভাষ্যঃ
(দেবীঃ, আপঃ) দিব্যগুণে ব্যাপ্ত অর্থাৎ সকল দিব্যগুণ সম্পন্ন রাজা, আচার্য অথবা পিতরজন (নঃ) আমাদের (অভিষ্টয়ে) [এই পদ অভি পূর্বক "য়জ দেবপূজা সম্গতিকরণদানেষু" ধাতু দ্বারা সিদ্ধ হয়েছে।] আমাদের অর্থাৎ প্রজাজন, শিষ্যগণ অথবা সন্তানকে দেবত্ব প্রদান করে তাদের কর্তব্যবোধ করানোর জন্য, তাদের পরস্পর একটা লক্ষ্য বানিয়ে সংগঠিত করার জন্য এবং এদের মধ্যে ত্যাগের ভাবনা উৎপন্ন করার জন্য (পীতয়ে) এদের দুর্গুণ, দুর্ব্যসন, দুঃখ আদি থেকে রক্ষা করার জন্য (শম্, ভবন্তু) [শম্ = শম্ সুখনাম। (নি০ ৩/৬)] সুখকারী হবে, যাতে আমাদের প্রজাজন আদির উপর রাজা, আচার্য আদি (শম্য়োঃ) শান্তি আর সুখের (অভি, স্রবন্তু) বর্ষণ সবদিক থেকে করবে, যারদ্বারা যেকোনো রাষ্ট্র, সমাজ বা পরিবার সবার মধ্যে সুখ আর শান্তির সাম্রাজ্য বজায় থাকে।
এখানে দেবী পদ "দিবু ক্রীডাবিজিগীষাব্যবহারদ্যুতিস্তুতিমোদমদস্বপ্ন কান্তিগতিষু" ধাতু দ্বারা ব্যুত্পন্ন হয়েছে। মহর্ষি য়াস্ক "দেবঃ" পদের ব্যাখ্যা এইভাবে করেছেন - "দেবো দানাদ্বা, দীপনাদ্বা, দ্যোতনাদ্বা, দ্যুস্থানো ভবতীতি বা" (নি০ ৭/১৫)। এইসবের অর্থ হল - শান্তি আর সুখ প্রদানকারী রাজা, আচার্য বা পিতরজন তারাই হতে পারবে, যারা স্বয়ং ত্যাগী-তপস্বী, জিতেন্দ্রিয়, নিজের জ্ঞান আর সদ্ গুণ দ্বারা প্রকাশিত আর এরদ্বারা প্রজাজন আদিকেও প্রকাশিত করে, সকলের জন্য কমনীয় ব্যবহার করে আর সর্বদা গতিশীল অর্থাৎ পুরুষার্থী হয়।
ভাবার্থঃ শান্তি আর সুখ প্রদানকারী, ত্যাগী, জ্ঞান আদি সদ্ গুণ দ্বারা প্রজাজন আদির প্রকাশক আর সবার জন্য কমনীয় রাজা প্রজাজনকে সংগঠিত করতে আর তাদের রক্ষাকারী হবে, যাতে প্রজার উপর সুখ আর শান্তির বৃষ্টি সবদিক থেকে হতে থাকে। শিষ্যগণকে কর্তব্যবোধ করিয়ে তথা নিজের জ্ঞান আর সদ্ গুণ দ্বারা তাদের প্রকাশিত করে এইরূপ আচার্য নিজের শিষ্যের মধ্যে ত্যাগের ভাবনা উৎপন্ন করতে তথা তাদের দুর্গুণ, দুর্ব্যসন আদি থেকে রক্ষাকারী হবে, যাতে সমাজে সবদিকে সুখ শান্তি বজায় থাকে। জিতেন্দ্রিয় আর পুরুষার্থী পিতরজন নিজের সন্তানদের দেবত্ব প্রদান করে, তাদের তপস্বী বানিয়ে তাদের সব প্রকারের দুঃখ থেকে রক্ষাকারী হবে, যাতে পরিবারে সবদিক থেকে সুখ আর শান্তির বৃষ্টি হতে থাকে।
এই মন্ত্র থেকে সাধক এই শিক্ষা প্রাপ্ত করে যে সে সর্বদা নিজের উপর পরমাত্মার কৃপাদৃষ্টির অনুভব করে শান্ত আর প্রসন্নচিত্ত থাকার চেষ্টা করবে। একইসঙ্গে নিজের সম্পর্কে আসা মানুষের সঙ্গে শান্ত আর সৌম্য ব্যবহারই করবে তথা ক্রোধ আদিকে সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করবে।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ