এখন যোগের অঙ্গগুলির গণনা করা যাক-
য়মনিয়মাসনপ্রাণায়ামপ্রত্যাহারধারণাধ্যান-সমাধয়োষ্টাবঙ্গানি।। যোগসূত্র-২।২৯
পদ০-য়মনিয়মাসনপ্রাণায়ামপ্রত্যাহারধারণাধ্যানসমায়ঃ। অষ্টৌ। অঙ্গানি।
পদার্থ-(যমনিয়মাসন০) যম,নিয়ম,আসন,প্রাণায়াম,প্রত্যাহার,ধারণা,ধ্যান এবং সমাধি এই ( অষ্টৌ) আট ( অঙ্গানি) যোগের অঙ্গ।
ভাষ্য-প্রথম পাদে যে অভ্যাস, বৈরাগ্য, শ্রদ্ধা, বীর্য মিত্র আদি যোগের সাধনের কথা বলা হয়েছে সে সকল এদের অন্তর্গত অর্থাৎ অভ্যাসের সমাধিতে, বৈরাগ্যের তৃপ্তিতে, শ্রদ্ধা, বীর্য আদির তপ, স্বাধ্যায় আদিতে এবং মিত্র আদিদিগের ধারণাদিতে অন্তর্ভাব হয় এইজন্য পূর্বোত্তর বিরোধ নয়।।
এখন যমের নিরুপণ করা যাক-
অহিংসাসত্যাস্তেয়ব্রহ্মচর্য়াপরিগ্রহা য়মাঃ।।
যোগসূত্র-২/৩০
পদ০-অহিংসা। সত্যাস্তেয়ব্রহ্মচর্য়াপরিগ্রহাঃ। য়মাঃ।
পদার্থ-( অহিংসাসত্যা০) অহিংসা,সত্য,অস্তেয়,ব্রহ্মচর্য্য,অপরিগ্রহ এই পাঁচ ( য়মাঃ) যম।
ভাষ্য-মন,বাণী এবং শরীর দ্বারা অনিষ্টচিন্তন,কঠোর ভাষণ তথা পীড়া দ্বারা প্রাণিমাত্রকে দুঃখ দেওয়ার নাম "হিংসা" এবং সর্বপ্রকার থেকে সর্বকালে কাউকেও দুঃখ না দেওয়ার নাম "অহিংসা"। যথার্থভাষণ অর্থাৎ যেমন দেখা বা অনুমান করা হয়েছে শুনা বা তাকে তেমনই কথন্ করার নাম "সত্য"। ছল,কপট,বিশ্বাসঘাতকতা আদি যে কোনো প্রকারও অন্য পুরুষের ধনকে গ্রহণ না করার নাম "অস্তেয়"। সর্ব ইন্দ্রিয়াদির নিরোধপূর্বক উপস্থ ইন্দ্রিয়ের নিরোধের নাম "ব্রহ্মচর্য্য"। দোষদৃষ্টি থেকে বিষয়ের পরিত্রাণের নাম "অপরিগ্রহ"। এই পাঁচটি অনুষ্ঠান দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইন্দ্রিয়ের নিজ-নিজ বিষয় থেকে বড় হওয়া এই কারণে তার নাম "যম"। এর মধ্যে অহিংসা সুখ এবং অন্য সকল এর নির্মলতা তথা পুষ্টির জন্য হওয়া গর্বিত। একই কথাকে সাংখ্যভাষ্যতে পঞ্চ- শিখাচার্য্যে এই প্রকার স্পষ্ট করা হয়েছে যেঃ-স খল্বয়ম্ ব্রাহ্মণো পথা য়থা ব্রতানি-বহূনি সমাদিস্ততে,তথা তথা প্রমাদকৃতেভ্যো হিংসানিদানেভ্যো নিবর্ত্তমানস্তামেবাদদাতরূপামহিংসাম্ করোতি=সেই বেদবেত্তা যোগি যেমন-যেমন যম নিয়মের অনুষ্ঠান করেন তেমন-তেমনই প্রমোদ দ্বারা যুক্ত হিংসার কারণে মিথ্যা ভাষণাদি থেকে নিবৃত্ত হয়ে অহিংসা কে নির্মল করে। এই পাঁচটি যম যোগের বিরোধি হিংসা,মিথ্যাজ্ঞান, স্তেয় তথা স্ত্রীসঙ্গম আদির নিবৃত্তি করে যোগকে সিদ্ধ করতে হয় এইজন্য যোগের অঙ্গ হয়।
এ বিষয়ে পাতঞ্জলসূত্রে বলা হয়েছে-
‘বিতর্কবাধনে প্রতিপক্ষভাবনম্’। (পাতঞ্জলসূত্র-২/৩৩)
‘বিতর্কা হিংসাদয়ঃ কৃতকারিতানুমোদিতা লোভমোহাক্রোধপূর্ব্বিকা মৃদুমধ্যাধিমাত্রা দুঃখাজ্ঞানানন্তফলা ইতি প্রতিপক্ষভাবনম্’। (পাতঞ্জলসূত্র-২/৩৪)
‘অহিংসা প্রতিষ্ঠায়াং তৎসন্নিধৌ বৈরত্যাগঃ’। (পাতঞ্জলসূত্র-২/৩৫)
অর্থাৎ :
যোগবিঘ্ন হিংসা প্রভৃতি বিতর্ক নিবারণ করতে হলে যোগের অনুকূল অবিতর্ক অহিংসা প্রভৃতির যাতে স্ফূরণ হয়, তারই চেষ্টা করতে হয় (পাতঞ্জল-২/৩৩)। লোভ, মোহ এবং ক্রোধ বশতই নিজ ইচ্ছাক্রমে অন্য কারো অনুরোধে অথবা নিজ অনুমোদনের দ্বারা হিংসা প্রভৃতি বিবিধ বিতর্ক সম্পাদিত হয়ে থাকে। ঐ লোভ, মোহ এবং ক্রোধ, মৃদু, মধ্য অথবা উগ্রভাবে উৎপন্ন হয়। মৃদুভাবে লোভ, মোহ কিংবা ক্রোধের উদয় হলে হিংসা প্রভৃতি বিতর্কও মৃদু হয়। ঐগুলি মধ্যভাবে উদিত হলে হিংসা প্রভৃতি বিতর্কও মধ্য হয়। আর সেগুলি উগ্রভাবে উদিত হলে হিংসা প্রভৃতি বিতর্কও উগ্র হয়। হিংসা প্রভৃতি বিতর্কবৃত্তি যেভাবেই স্ফূরিত হোক না কেন, তারা দুঃখ অজ্ঞান এবং ঐ উভয়ের অনন্ত ফল উৎপন্ন করে, এইভাবে ভাবনার নামই প্রতিপক্ষভাবনা। এই প্রতিপক্ষভাবনাবলে হিংসা বিতর্কসমূহের দোষ অনুসন্ধানে সেইসব থেকে যেসব দুঃখ হয়, তাদের আলোচনায় সমস্ত বিতর্কেরই নিবৃত্তি হয় (পাতঞ্জল-২/৩৪)। যে মহাপুরুষ সম্পূর্ণ হিংসাশূন্য হয়েছেন, তাঁর কাছে হিংস্র বন্য জন্তুরাও হিংসা পরিত্যাগ করে, তিনি হিংস্র জন্তুদের সহবাসেও নিরাপদে অবস্থান করতে পারেন (পাতঞ্জল-২/৩৫)।
এখন যে প্রকারের যম যোগের অনুষ্ঠেয় হয় তার কথন করা হচ্ছে-
জাতিদেশকালসময়ানবচ্ছিন্নাঃ সর্বভৌমা মহাব্রতম্।।
যোগসূত্র-২/৩১
পদ০-জাতিদেশকালসময়ানবচ্ছিন্নাঃ। সার্বভৌমা। মহাব্রতম্।
পদার্থ-( জাতিদেশকালসময়ানবচ্ছিন্নাঃ) জাতি,দেশ,কাল,তথা সময় দ্বারা অসংকুচিত এবং ( সার্বভৌমাঃ) জাতি আদি উক্ত সর্বভূমিতে ব্যভিচাররহিত যমের নাম ( মহাব্রতম্) মহাব্রত।
ভাষ্য-মৎস্যাতিরিক্তম্ ন হনিষ্যামি=মৎস্য জাতির অতিরিক্ত এবং কোনো জাতির হনন করবো না,গুরুকূলে ন হনিষ্যামি=গুরুকূলে কাউকে হত্যা করবো না,পূর্ণমাস্যাম্ ন হনিষ্যামি=পূর্ণমাসীর দিন হত্যা করবো না, ফেনচিদকারিতো বা ন হনিষ্যামি=প্রেরণা তথা সাধু=ঠিক এমন অনুভূতি ব্যতীত হত্যা করবো না। এই প্রকার অহিংসাতে জাতি আদি দ্বারা হতে সংকোচের নাম "অবচ্ছেদ"। এবং কখনও কোথাও কারো কোন ক্ষতি করবো না, এই প্রকার অজিংসাতে জাতি আদির দ্বারা হতে অসংকোচের নাম "অনবচ্ছেদ"। যেমন অহিংসাতে জাতি আদির দ্বারা অবচ্ছেদ তথা অনবচ্ছেদের প্রকার কথন করা হয়েছে তেমনেই সত্য,অস্তেয়,ব্রহ্মচর্য্য অপরিগ্রহতেও জানা উচিত্। যে যম উক্ত জাতি আদির দ্বারা সংকোচিত নয় এবং জাতি,দেশ,কাল তথা সময়রূপ ভূমিতে নিরন্তর অনুষ্ঠান করা হতো অথার্ৎ উক্ত ভূমিতে যাদের অনুষ্ঠানের কদাপি ব্যভিচার না হতো তাকে "মহাব্রত" বলা হয়,এই মহাব্রত যোহিগণ যোগসিদ্ধির জন্য করতেন।।
( ভাষ্য-মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত আর্যমুনি পরিব্রাজক)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ