মুক্তিতে সূক্ষ্ম শরীর - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

04 January, 2024

মুক্তিতে সূক্ষ্ম শরীর

মুক্তিতে সূক্ষ্ম শরীর


 ভাবম্ জৈমিনির্বিকল্পামননাত্।। ব্রহ্মসূত্র ৪/৪/১১


পদ০-ভাবম্। জৈমিনিঃ। বিকল্পামননাত্।।

পদার্থ-( বিকল্পামননাত্) বিকল্পের উপলব্ধতা থেকে ( জৈমিনিঃ) জৈমিনি আচার্য ( ভাবম্) মুক্তিতে সূক্ষ্ম শররীরের ভাব মানতেন।

ভাষ্য-"স একধা ভবতি দ্বিধা ভবতি ত্রিধা ভবতি" ছান্দো০ ৭/২৬/২=মুক্ত পুরুষ স্বস্বরূপে এক প্রকারের,সংকল্প থেকে দুই প্রকারের এবং একই প্রকার স্বসামর্থ্য থেকে তিন প্রকারের হয়,ইত্যাদি মুক্ত পুরুষের সামর্থ্য বিষয়ক বিকল্প থেকে স্পষ্ট যে,তার সাথে সূক্ষ্ম শরীর তথা ইন্দ্রিয়াদির সদ্ভাব বন্ধ থাকে,এই অভিপ্রায় থেকে "প্রতিষেধাদিতি চেন্ন শারীরাত্" ব্র০ সূ০ ৪/২/১৩ তে জীবের পরিবর্তন বর্ণনা করতে গিয়ে দেবযান মার্গ দ্বারা মুক্তিকে প্রাপ্তকারী জীবের সাথে লিঙ্গশরীরের পরিবর্তন বলা হয়েছে যে,"ন তস্মাত্প্রাণা উতক্রামন্তি" বৃ০ মাধ্য০ ৪/৪৮=সেই মুক্ত পুরুষ থেকে প্রাণ পৃথক না হয় অর্থাৎ তার সাথেই লিঙ্গশরীর গমন করে,এইাই জৈমিনি আচার্য্যের অভিমত।।

এখন উক্তে অর্থে "বাদরায়ণাচার্য্য" স্বসিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছেন-
দ্বাদশাহবদুভয়বিদম্ বাদরায়ণোऽতঃ।। ব্রহ্মসূত্র ৪/৪/১২

পদ০-দ্বাদশাহবত্। উভয়বিদম্। বাদরায়ণঃ। অতঃ।।

পদার্থ-( বাদরায়ণঃ) বাদরায়ণ আচার্য্যের অভিমত যে ( দ্বাদশাহবত্) দ্বাদশা যজ্ঞের মতো ( অতঃ) উক্ত উভয় কারণ থেকে ( উভয়বিদম্) মুক্তিতে শরীরের ভাবাভাব রয়েছে।।

ভাষ্য-বাদরায়ণাচার্য্য বলছেন যে, যেপ্রকার একই দ্বাদশা যজ্ঞের "অহীন" তথা "সত্র" সংজ্ঞা হয় একই প্রকার শরীর তথা অশরীর বোধক বাক্য থেকে মুক্তিতে শরীরের ভাব তথা অভাব উভয়ই হয় অর্থাৎ শুদ্ধ সামর্থ্যযুক্ত স্বরূপের উপস্থিতিতে শরীরের ভাব এবং ভৌতিক শরীরের না উপস্থিতি থেকে অনুভূতি হয়, এইজন্য কোন বিরোধ নেই।। ( ভাষ্য-মহামহোপাধ্যায় আর্যমুনি পরিব্রাজক)

অভাবম্ বাদরিরাহহ্যেবম্।।
ব্রহ্মসূত্র-৪/৪/১০

পদ০-অভাবম্। বাদরিঃ। আহ। হি। এবম্।

পদার্থ-( বাদরিঃ) বাদরি আচার্য মুক্তিতে শরীরেের ( অভাবম্) অভাব মানতেন ( হি) কারণ শ্রুতিবাক্য থেকে ( এবম্) এমনি ( আহ) পাওয়া যায়।

ভাষ্য-"বাদরি" আচার্য বলছেন যে "অশরীরম্ বাব সন্তম প্রিয়াপ্রিয়ে ন স্পৃশতঃ" ছা০ ৮/১২/১= শরীর থেকে রহিত হয়ে মুক্ত পুরুষ বিষয় সম্বন্ধী সুখ দুঃখ দ্বারা লিপ্ত না হন "মনসৈতান্কামান্পশ্যনৃরমতে" ছা০ ৮/১২/৫= মন থেকে সব কামনাদিকে প্রাপ্ত হয়ে রমন করেন,ইত্যাদি বাক্য দ্বারা স্পষ্ট যে,মুক্ত পুরুষের শরীর না হয় সে নিজ দিব্য সামর্থ্য দ্বারা মুক্তির ঐশ্বর্য ভোগ করেন। ( ভাষ্য-শ্রী পণ্ডিত আর্যমুনি পরিব্রাজক)

যে অবস্থায় বৃত্তির নিরোধ হয়ে যায় সেই অবস্থায় আত্মার স্থিতি কোথায় হয়?

উত্তরঃ- তদা দ্রষ্টুঃ স্বরূপেऽবস্থানম্।। যোগসূত্র-১/৩

পদ০-তদা। দ্রষ্টুঃ। স্বরূপে। অবস্থানম্।।

পদার্থ-( তদা) সেই অবস্থায় ( দ্রষ্টুঃ,স্বরূপে) পরমাত্মার স্বরূপে ( অবস্থানম্) স্থিতি হয়।
ভাষ্য-যথন সর্ববৃত্তিয়াদির নিরোধ হয়ে চিত্ত নিজ কারণে প্রকৃতিতে লীন হয়ে যায় তখন এই জীবাত্মার প্রকৃতি তথা প্রাকৃতিক পদার্থের সাথে সম্বন্ধ থাকে না,ওই অবস্থায় সে নিজ চেতন স্বরূপ দ্বারা পরমাত্মার আনন্দ কে ভোগ করে তাঁর মধ্যে স্থিতি হয় কেননা পরমাত্মাই সর্ব জীবের আশ্রয়।

একই বিষয় মহর্ষি কপিল সাংখ্যশাস্ত্রে এই প্রকার বর্ণনা করেছেন যে-

"সমাধিসুষুপ্তিমোক্ষেষু ব্রহ্মরূপপতা" সাং০ ৫/১১৬

অর্থঃ- সমাধি, সুষুপ্তি এবং মোক্ষতে পুরুষ কে ব্রহ্মের ন্যায় সদৃশ অর্থাৎ তার স্বরূপে স্থিত হয়,এর অর্থ কে "স্বরীপপ্রতিষ্ঠা তদানীম্ চিতিশক্তির্য়তা কৈবল্যে" এই ব্যাসভাষ্যতে এই প্রকার স্পষ্ট করা হয়েছে যে কৈয়ল্য=মুক্তিতে প্রকৃতি তধা প্রাকৃতিক পদার্থের সম্বন্ধ থেকে মুক্ত হয়ে চেতনশক্তি পুরুষ পরমাত্মার স্বরূপে স্থিত হয়,একই প্রকার চিত্তবৃত্তি নিরোধ কালে তার পরমাত্মাতে স্থিত হয়। এবং যে আধুনিক টীকারগণ এই সূত্রে "দ্রষ্টুঃ" শব্দ থেকে জীবাত্মার গ্রহণ করে এটা ঠিক নয়,কারণ এই কথন্ প্রথমতো ব্যাসভাষ্য থেকে বিরুদ্ধ যেমন উপরে লিখা আছে,দ্বিতীয় যোগ সিদ্ধান্তে জীবাত্মাকে কখনও মুখ্য দ্রষ্টা মান্য নয় কিন্তু বুদ্ধির সম্বন্ধ থেকে দ্রষ্টা মান্য যেমন-"দ্রষ্টা হশিমাত্রঃ শুদ্ধোऽপি প্রত্যমানুপুরুষঃ" যো০ ২/২০। অর্থ-জ্ঞানস্বরূপ পরুষ নিজ স্বরূপ দ্বারা জ্ঞানের অনাশ্রয় হওয়ার কারণে শুদ্ধ অর্থাৎ অদ্রষ্টা হয়েও বুদ্ধির স্বরূপ দ্বারা দ্রষ্টা। তৃতীয় বেদ [ অর্থাৎ বেদের তিন শৈলীতে ] এবং উপনিষদেও মুখ্যতয়া পরমাত্মাকেই দ্রষ্টা নিরুপণ করেছেন

যেমন-দ্বা সুপর্ণা সয়ুজা সখায়া সমানং বৃক্ষং পরিষস্বজাতে।
তয়োরন্যঃ পিপ্পলং স্বাদ্বত্ত্যনশ্নন্নন্য অভিচাকশীতি।।
ঋগ্বেদ-২/৩/১৩।

অর্থঃ- প্রকৃতিরূপী বৃক্ষের জীব এবং ঈশ্বর দুই পক্ষী নিবাস করে যা একে অপরের মধ্যে চেতন হওয়ার কারণে সখা অর্থাৎ সমান ধর্মযুক্ত এবং সেব্য সেবক,তার থেকে একজন কর্মফলের ভোক্তা এবং দ্বিতীয়জন সাক্ষী অর্থাৎ দ্রষ্টা। নান্যোऽতোऽস্তি দ্রষ্ট্র" বৃ০ দা০ ৩/৮/১১। অর্থ-সেই পরমাত্মা থেকে ভিন্ন দ্বিতীয় কোনো দ্রষ্টা নেই। এবং এমন মান্যতা থেকে "মুখ্যামুখ্যযোর্মুখ্যে কার্যসম্প্রত্যয়ঃ"=মুখ্য এবং অমুখ্যের প্রাপ্তি হওয়ার পর মুখ্যের গ্রহণ হয়। এই ন্যায়ও সঙ্গত হয়ে যায়। অতএব এখানে দ্রষ্টা পদ দ্বারা ঈশ্বরই গ্রহণ হয়ে থাকে জীবের নয়।।
( ভাষ্যকার-আর্যমুনি পরিব্রাজক)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ