এখন মুক্ত পুরুষের ঐশ্বর্যের মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে-
জগদ্ব্যাপারবর্জম্ প্রকরণাদসন্নিহিত্বাচ্চ।।
ব্রহ্মসূত্র ৪/৪/১৭
পদ০-জগদ্ব্যাপারবর্জম্। প্রকরণাত্। অন্নিহিত্বাত্। চ।
পদার্থ- ( জগদ্ব্যাপরবর্জম্) জগতের উতপত্তি আদি বিষয়কে ছেড়ে মুক্ত পরুুষের নিজ ঐশ্বর্যে আত্মবিশ্বাস থাকে, কারণ ( প্রকরণাত্ ) মুক্তির প্রকরণে ( চ) এবং ( অন্নিহিত্বাত্) সৃষ্টি প্রসঙ্গে মুক্তের নাম না হওয়াতে এমনিই পাওয়া য়ায়।
ভাষ্য-মুক্ত পুরুষের ঐস্বর্য এতই বিশাল হয় যে,সে সব লোক-লোকান্তরেরের মধ্যে স্বচ্ছন্দ বিচরণতা করে নিজ সত্যসংকল্প থেকেই শব্দাদি দিব্য বিষয়ের উপভোগ করতে পারে,যেমন "শৃণ্বন্ শ্রোত্রম্ ভবতি"=যখন শ্রবণ করতে চায় তখন সে সংকল্প থেকেই শ্রবণ ইন্দ্রিয় রচনা করে নেয়, ইত্যাদি বাক্যে স্পষ্ট হয় পরন্তু এত ঐশ্বর্য অর্জন করার পরও জগতের উৎপত্তি আদির সামর্থ্য তার না হয়,কারণ সেই কর্ম একমাত্র পরমাত্মার স্বাবাভিক জ্ঞান বল দ্বারা সাধ্য হয় এবং এই কথায় মুক্ত পুরুষের প্রকরণে এমনিই পাওয়া যায় যে সৃষ্টি আদির রচনার বিষয়কে ছেড়ে বাকী ঐশ্বর্যে মুক্ত পুরুষ যথাটা সক্ষম হয়,যেমন ব্র০ সূ০ ৪/৪/১০ এর ভাষ্যে স্পষ্ট করে এসেছে,দ্বিতীয় বিষয় এই যে, যেখানে সৃষ্টির প্রকরণ এসেছে সেখানে পরমাত্মাই সৃষ্টির কর্ত্তা হর্ত্তা বলা হয়েছে ঐশ্বর্য প্রাপ্ত মুক্ত পুরুষ নয়। যেমন "যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে" তৈ০ উ০ ৩/১ ইত্যাদি বাক্য দ্বারা প্রথমই ব্র০ সূ০ ১/১/২ এর ভাষ্যে স্পষ্ট করে এসেছে,যদি মুক্ত পুরুষের ঐশ্বর্যে সৃষ্টি আদির উৎপন্ন করা শাস্ত্রের অভিপ্রায় হত তবে একমাত্র পরমাত্মাকেই সৃষ্টির কর্ত্তা হর্ত্তা প্রতিপাদন না করা যায় কিন্তু করা হয় এতে সিদ্ধ হয় যে,সৃষ্টির আদি বিষয়ে অতিরিক্ত ঐশ্বর্যে মুক্ত পুরুষ স্বতন্ত্র হয়।। ( পণ্ডিত-আর্যমুনি পরিব্রাজক)
এখন "বাদরি" আচার্যের মতে মুক্ত পুরুষের শরীরের অভাব বলেছেন-
অভাবম্ বাদরিরাহহ্যেবম্।।
ব্রহ্মসূত্র-৪/৪/১০
পদ০-অভাবম্। বাদরিঃ। আহ। হি। এবম্।
পদার্থ-( বাদরিঃ) বাদরি আচার্য মুক্তিতে শরীরেের ( অভাবম্) অভাব মানতেন ( হি) কারণ শ্রুতিবাক্য থেকে ( এবম্) এমনি ( আহ) পাওয়া যায়।
ভাষ্য-"বাদরি" আচার্য বলছেন যে "অশরীরম্ বাব সন্তম প্রিয়াপ্রিয়ে ন স্পৃশতঃ" ছা০ ৮/১২/১= শরীর থেকে রহিত হয়ে মুক্ত পুরুষ বিষয় সম্বন্ধী সুখ দুঃখ দ্বারা লিপ্ত না হন "মনসৈতান্কামান্পশ্যনৃরমতে" ছা০ ৮/১২/৫= মন থেকে সব কামনাদিকে প্রাপ্ত হয়ে রমন করেন,ইত্যাদি বাক্য দ্বারা স্পষ্ট যে,মুক্ত পুরুষের শরীর না হয় সে নিজ দিব্য সামর্থ্য দ্বারা মুক্তির ঐশ্বর্য ভোগ করেন।
( ভাষ্য-শ্রী পণ্ডিত আর্যমুনি পরিব্রাজক)
ভাবম্ জৈমিনির্বিকল্পামননাত্।।
ব্রহ্মসূত্র-৪/৪/১১
পদ০-ভাবম্। জৈমিনিঃ। বিকল্পামননাত্।।
পদার্থ-( বিকল্পামননাত্) বিকল্পের উপলব্ধতা থেকে ( জৈমিনিঃ) জৈমিনি আচার্য ( ভাবম্) মুক্তিতে সূক্ষ্ম শররীরের ভাব মানতেন।
ভাষ্য-"স একধা ভবতি দ্বিধা ভবতি ত্রিধা ভবতি" ছান্দো০ ৭/২৬/২=মুক্ত পুরুষ স্বস্বরূপে এক প্রকারের,সংকল্প থেকে দুই প্রকারের এবং একই প্রকার স্বসামর্থ্য থেকে তিন প্রকারের হয়,ইত্যাদি মুক্ত পুরুষের সামর্থ্য বিষয়ক বিকল্প থেকে স্পষ্ট যে,তার সাথে সূক্ষ্ম শরীর তথা ইন্দ্রিয়াদির সদ্ভাব বন্ধ থাকে,এই অভিপ্রায় থেকে "প্রতিষেধাদিতি চেন্ন শারীরাত্" ব্র০ সূ০ ৪/২/১৩ তে জীবের পরিবর্তন বর্ণনা করতে গিয়ে দেবযান মার্গ দ্বারা মুক্তিকে প্রাপ্তকারী জীবের সাথে লিঙ্গশরীরের পরিবর্তন বলা হয়েছে যে,"ন তস্মাত্প্রাণা উতক্রামন্তি" বৃ০ মাধ্য০ ৪/৪৮=সেই মুক্ত পুরুষ থেকে প্রাণ পৃথক না হয় অর্থাৎ তার সাথেই লিঙ্গশরীর গমন করে,এইাই জৈমিনি আচার্য্যের অভিমত।।
এখন উক্তে অর্থে "বাদরায়ণাচার্য্য" স্বসিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছেন-
দ্বাদশাহবদুভয়বিদম্ বাদরায়ণোऽতঃ।।
ব্রহ্মসূত্র-৪/৪/১২
পদ০-দ্বাদশাহবত্। উভয়বিদম্। বাদরায়ণঃ। অতঃ।।
পদার্থ-( বাদরায়ণঃ) বাদরায়ণ আচার্য্যের অভিমত যে ( দ্বাদশাহবত্) দ্বাদশা যজ্ঞের মতো ( অতঃ) উক্ত উভয় কারণ থেকে ( উভয়বিদম্) মুক্তিতে শরীরের ভাবাভাব রয়েছে।।
ভাষ্য-বাদরায়ণাচার্য্য বলছেন যে, যেপ্রকার একই দ্বাদশা যজ্ঞের "অহীন" তথা "সত্র" সংজ্ঞা হয় একই প্রকার শরীর তথা অশরীর বোধক বাক্য থেকে মুক্তিতে শরীরের ভাব তথা অভাব উভয়ই হয় অর্থাৎ শুদ্ধ সামর্থ্যযুক্ত স্বরূপের উপস্থিতিতে শরীরের ভাব এবং ভৌতিক শরীরের না উপস্থিতি থেকে অনুভূতি হয়, এইজন্য কোন বিরোধ নেই।। ( ভাষ্য-মহামহোপাধ্যায় আর্যমুনি পরিব্রাজক)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ