শাস্ত্রার্থের পূর্বে
পাঠকদের জ্ঞাত হবে যে মহর্ষি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী জীর দেহাবসানের পশ্চাৎ ব্রহ্মচারী শ্রী স্বামী নিত্যানন্দ জী মহর্ষির উদ্দেশ্য পূর্তিতে নিজের আয়ু সমর্পিত করে দেন আর নিরন্তর তিরিশ বছর ধরে বৈদিক ধর্মের প্রচার করেন আর ভারতীয় নরেশদের বিশেষরূপে সদুপদেশ করেন। ব্রহ্মচারী জী যে অনেক শাস্ত্রার্থ আর শঙ্কা সমাধান করেছেন তারমধ্যে ব্রহ্মচারী জীর ১০১ তম জয়ন্তী যেটা ভাদ্রপদ শুক্ল ১৪ সম্বৎ ২০১৯ বিক্রমী বৃহস্পতিবার ১৩-৯-১৯৬২ তারিখে, তার উপলক্ষে শ্রী ব্রহ্মচারী নিত্যানন্দ জী আর পৌরাণিকদের মধ্যে শাস্ত্রার্থ হয়, সেই "নরসিংহগঢ় শাস্ত্রার্থ"টি সহৃদয়ে সপ্রেমে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই শাস্ত্রার্থের প্রভাব এমন পড়ে যে মহারাজা নরসিংহগঢ় সহিত পাঁচশোর অধিক জাগীরদার কণ্ঠী পরিবর্তন করে যজ্ঞোপবীত ধারণ করেন। সিহোর (মধ্যপ্রদেশ) থেকে শ্রী স্বামী নিত্যানন্দ জী নরসিংহগঢ়ে আসেন আর নগরের বাইরে মহাদেব মন্দিরে ওঠেন। যখন নগরে স্বামী জীর আগমনের সংবাদ ছড়িয়ে যায় তখন অনেক মানুষ আসতে থাকে, স্বামী জীর বিদ্বতার খ্যাতি সারা নগরে ছড়িয়ে যায়, রাজ পণ্ডিত আসেন আর বার্তালাপের পশ্চাৎ সংস্কৃত পড়া প্রারম্ভ করে দেন, স্বামী জীর নরসিংহগঢ় আগমনের সংবাদ "নরসিংহগঢ়াধীশ মহারাজা প্রতাপসিংহ জী"র কাছে গিয়ে পৌঁছায় আর তিনি স্বামী জীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার করতে আসেন। এক ঘন্টার অধিক সেখানে থাকেন আর বার্তালাপ করে অতি প্রসন্ন হন আর তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত মিত্র ঠাকুর মেহরসিংহ জীকে আজ্ঞা দেন যে স্বামী জীকে কিলেতে নিয়ে এসে চাতুর্মাস পর্যন্ত রাখা হোক। ঠাকুর সাহেবের বিচার আর্য সামাজিক ছিল আর তিনি মহারাজা সাহেবের হৃদয়গ্রাহী মিত্র ছিলেন। অতঃ তিনি স্বামী জীকে অনেক আদর সৎকার আর সমারোহের সঙ্গে কিলেতে নিয়ে যান আর যাত্রার জন্য হাতি পাঠিয়ে দেন। সেখানে স্বামী জী প্রায় চার মাস পর্যন্ত থাকেন আর মহারাজা সাহেবের সঙ্গে প্রতিদিন দুই বেলা আর্য ধর্মের উপর বার্তালাপ করেন। মহারাজা আর মহারানী জী উভয়ই বল্লভ সম্প্রদায়ের শিষ্য ছিলেন। তাঁরা যখন স্বামী জীর কথা শোনেন তখন তাঁরা খিলচীপুর নিবাসী বিদ্বান পণ্ডিত যমুনাদাস জীকে আমন্ত্রিত করেন আর শাস্ত্রার্থের আয়োজন (প্রবন্ধ) করেন। মহারাজা সাহেব শাস্ত্রার্থের নিমিত্ত একটা দরবার করেন আর উভয় (আর্য আর পৌরাণিক) পক্ষের কাছে আটটা প্রশ্নের উত্তর জানার ইচ্ছা প্রকট করেন, শুরুতে মহারাজা সাহেব বলেন -
শ্রী মহারাজা প্রতাপসিংহ জী -
বর্তমান সময়ে আমরা যেদিকে চোখ তুলে তাকাই তো এই সংসারে অনেক মত দেখতে পাই আর প্রত্যেক মতের অনুগামী নিজের মতকে সত্য আর অন্যের মতকে মিথ্যা বলে। এরমধ্যে বেদও হচ্ছে একটা মত (যার অনুগামী হল সব আর্য অর্থাৎ সব হিন্দু), কিন্তু এই হিন্দুদের মধ্যেও অনেক মত আছে, যেমন কেউ শৈব, কেউ শাবত, কেই বৈষ্ণবাদি। এদের মধ্যেও এরা নিজেদের মধ্যে ঈশ্বরের রূপ ভিন্ন-ভিন্ন বর্ণনা করে, যেমন কেউ শিব, কেউ বিষ্ণু, কেউ গণেশ, কেউ শক্তি, কেউ সূর্য আদি আর এদের স্থানও পৃথক-পৃথক বলে, অর্থাৎ কেউ গোলোক, কেউ বৈকুণ্ঠ, কেউ ক্ষীর সমুদ্র, কেউ কৈলাশাদি। এখন এইসব মতাবলম্বীদের মধ্যে কার কথাকে সত্য মানবো? আমি ভাবছি দেব য়োগ দ্বারা এই সময় শ্রীমান স্বামী বিশ্বেশ্বরানন্দ জী, স্বামী নিত্যানন্দ জী আর শ্রীমান পণ্ডিত যমুনাদাস জী এই বিদ্বানরা উপস্থিত হয়েছেন, তো আমি এই বিজ্ঞোদের নিকট ঈশ্বরের স্বরূপ তথা ঈশ্বরের স্থান নির্ণয় করতে ইচ্ছুক, আমি এই নিম্ন আটটা প্রশ্নের দ্বারা সত্য আর অসত্যকে ঠিক-ঠিক জেনে নিবো। সেই আটটা প্রশ্ন হল -
শাস্ত্রার্থ বিষয়ক আটটা প্রশ্ন -
(১) গুরুমন্ত্র কি একটা নাকি অনেক? যদি অনেক হয় তাহলে তারমধ্যে সত্য কোনটা?
(২) ঈশ্বর পদার্থটা কি আর কোথায় থাকে? সেটা সাকার নাকি নিরাকার? যদি সাকার হয় তাহলে চতুর্ভুজ বা ত্রিনেত্র বা বক্ততুণ্ডাদির মধ্যে কোন প্রকারের?
(৩) চারটা সম্প্রদায় দাদুপন্থী, কবীর পন্থী আদি মতের মধ্যে কোন মতটা সত্য?
(৪) ঈশ্বরের অবতার ১০ টা নাকি ২৪ টা? আর বেদের মধ্যে কয়টা লেখা আছে?
(৫) আমাদের নিত্য কি কি কর্ম করা উচিত?
(৬) এই সংসারের কর্তা কে? আর কিভাবে সে এই সংসারটাকে বানিয়েছে?
(৭) মুক্তি কি? এটা কি কোনো স্থান বিশেষ অথবা অন্য কিছু? আর কি কি কর্মের দ্বারা সেটা প্রাপ্ত হয়?
(৮) ঈশ্বরের উপাসনা কিভাবে হয়?
ব্যস্! এই বিষয়গুলোর উপর আমি সত্যাসত্যের নির্ণয় জানতে চাই, পণ্ডিতগণ বেদানুসারে আমার এই প্রশ্নের উপর বাদ-বিবাদ করে সঠিক নীর-ক্ষীর করবেন।
"প্রতাপসিংহ"
(নরসিংহ গঢ়াধীশ)
প্রথম দিনের শাস্ত্রার্থ আরম্ভ
শ্রী পণ্ডিত যমুনা দাস জী -
সজ্জনগণ! সর্বপ্রথম আমরা মহারাজা জীর প্রথম প্রশ্নের উপর চর্চা করবো, পশ্চাৎ ক্রমে-ক্রমে বাকি সাতটা প্রশ্নের উপর শাস্ত্রার্থ হবে। আপনাকে "ব্রহ্ম গায়ত্রী মন্ত্রে"র জপ করা উচিত, আর যে গুরু আপনাকে মন্ত্র দিবে সেটা গায়ত্রী মন্ত্রই হবে।
ব্রহ্মচারী শ্রী স্বামী নিত্যানন্দ জী -
আপনি লিখেছেন যে - "ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের জন্য ব্রহ্ম গায়ত্রীর উপদেশ হওয়া উচিত।" তাহলে আপনি "ক্লীম্ কৃষ্ণায় গোপীজনবল্লভায় স্বাহা" ইত্যাদি বেদ বিরুদ্ধ গুরু মন্ত্রের উপদেশ কেন করেন? "শ্রী কৃষ্ণঃ শরণম্ মম্" ইত্যাদি মন্ত্র যদি বেদানুকূল হয় তাহলে আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি, এই মন্ত্র কোন বেদের, কোন অধ্যায়ের আর কোন সূক্তের মধ্যে লেখা আছে? আর এইভাবে অন্য সম্প্রদায়ের মন্ত্রও আপনাকে বেদের মধ্যে দেখাতে হবে, কারণ আপনি নিয়ম পত্রের মধ্যে শঙ্কর মত সহিত চার সম্প্রদায়ের সব গ্রন্থকে প্রমাণ মানেন এটা স্বীকার করেছেন।
শ্রী পণ্ডিত যমুনা দাস জী -
বেদ আর মনুর অনুকূল সময়ের যারা ক্ষত্রিয় জাতকর্মাদিক সংস্কার যুক্ত হয়ে শ্রদ্ধাপূর্বক উপনয়ন করে তাদের উপনয়ন সময়ে বেদোক্ত মন্ত্রোপদেশ করা হয়। আর উপদেশ যোগ্য যাবত্ কর্মে বেদোক্ত মন্ত্র সম্পূর্ণ বেদাধ্যয়ন আর বেদের অর্থ বিচার ক্ষত্রিয় সম্বন্ধীয় প্রজাপালনাদি কর্মে উপযোগী সব সদ্ গ্রন্থ অধ্যয়ন করা উচিত আর যে ক্ষত্রিয়াদি জাতি বেদ মনুর উক্ত সময়ে সংস্কার রহিত হয়েছে আর যাদের কূলে নিজেদের ক্ষত্রিয়াদিক কর্ম পরম্পরা থেকে আলাদা হয়ে গেছে মনুস্মৃতিতে তাদের সাবিত্রীপতিত বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুটো ভেদ আছে, যারা সাবিত্রীপতিত হয়ে পরে পরিতাপ করে আর তাদের এমন অভিলাষা হবে যে আমরা পরে ক্ষত্রিয় ধর্ম অঙ্গীকার করবো, তাদের স্মৃতির অনুকূল প্রায়শ্চিত্ত দিয়ে শুদ্ধ ক্ষত্রিয়াদির সব সংস্কারাদি করা হবে। আর বেদাধ্যনের অধিকার তাদের হবে, আর এমন অনেক ক্ষত্রিয়াদির দৈববশে এমন কুব্যবহার পড়েছে যে শুদ্ধ ধর্ম সম্পূর্ণভাবে ছুটে গেছে, তাদের পিছনের শুদ্ধ ধর্ম সিদ্ধ হওয়া অতি কঠিন, এইজন্য তাদের সাধারণ ঈশ্বরের নামের উপদেশ করা হয়, এরজন্য মহাভারত শঙ্কর ভাষ্য আদিতে "হরির্নামৈব নামৈব" প্রমাণ আছে।
শাস্ত্রার্থের দ্বিতীয় দিন
ব্রহ্মচারী শ্রী স্বামী নিত্যানন্দ জী -
প্রথমত - আমি যেটা খণ্ডন করেছি তার উত্তর পণ্ডিত জী দেন নি। কারণ, বলার এটাই ছিল যে, চার বেদের মধ্যে আপনি এমন বলুন যে সাম্প্রদায়িক মন্ত্রের উপদেশ ক্ষত্রিয়াদিকে দেওয়া উচিত। বেদের মধ্যে তো আপনি কোথাও বলেন নি। আমার কথার বিরুদ্ধ উত্তর আপনি দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত - যে ক্ষত্রিয় ধর্ম থেকে পতিত হয়েছে, তার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিয়ে গায়ত্রী মন্ত্রই দেওয়া উচিত। অথচ পণ্ডিত জী বলেছেন যে - যারা ক্ষত্রিয় ধর্মে আসতে পারবে না, তাদের জন্য সাধারণ ঈশ্বর নামাদিক দেওয়া উচিত। এর উপর আমার প্রশ্ন হল, যে ক্ষত্রিয়াদিক সধর্মে আসতে পারবে না, তার জন্য সাম্প্রদায়িক মন্ত্রের উপদেশ করতে হবে, এটা কোন বেদে বা কোন স্মৃতির মধ্যে লেখা আছে? তৃতীয়ত - যে শ্লোকটা পণ্ডিত জী দেখিয়েছেন সেটা বেদ বিরুদ্ধ। কারণ এই শ্লোকের অর্থ হল - "কেবল হরির নাম দ্বারাই মুক্তি হয়।" কিন্তু বেদের মধ্যে তো লেখা আছে - "নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেऽয়নায়" যার অর্থ হল - পরমাত্মার জ্ঞান বিনা মুক্তি হয় না, এইজন্য মহাভারতের প্রমাণ বেদ বিরুদ্ধ হওয়ার জন্য মানা যেতে পারে না, যেমনটা মনুস্মৃতির মধ্যে লেখা আছে যে "য়া বেদ বাহ্যাঃ স্মৃতয়ো" অর্থাৎ বেদ বিরুদ্ধ কোনো গ্রন্থ মানা উচিত নয়। চতুর্থ - ঈশ্বরের নাম কি গায়ত্রী নয়? পতিত ক্ষত্রিয়কে গায়ত্রীর উপদেশ না করা, এটা পণ্ডিত জী বলেছেন। তো এই কথা কোন বেদ বা কোন স্মৃতির মধ্যে লেখা আছে যে পতিত ক্ষত্রিয়কে গায়ত্রী মন্ত্রের উপদেশ না করিয়ে সাম্প্রদায়িক মন্ত্রের উপদেশ করা উচিত?
শ্রী পণ্ডিত যমুনা দাস জী -
স্বামী জী বলেছেন, ঈশ্বরের নাম ক্ষত্রিয়কে সেবন করা উচিত, এতে বেদের প্রমাণ চাই - "সোऽমৃতা অমৃতস্যেতি ভূরি নাম অনামহে" এই বচন মনুষ্য মাত্রকে ঈশ্বরের নাম সেবনের অধিকার সিদ্ধ করে, এটা উৎসর্গ বচন। আর তিন বর্ণকে বেদ মন্ত্র দ্বারা ঈশ্বরের সেবনাদি করা এটা অপবাদ বচন। এখন শুদ্ধ তিন বর্ণ থেকে বাকি য়াবত্ মনুষ্যকে সাধারণ নামের সেবনাদির অধিকার আছে।
ব্রহ্মচারী শ্রী স্বামী নিত্যানন্দ জী -
পণ্ডিত জী বলেছেন, সাবিত্রী পতিত ক্ষত্রিয়াদিকে ঈশ্বরের নামের অধিকার আছে। আর বেদ স্মৃতির অনুকূল সংস্কারের সহিত ক্ষত্রিয়াদিকে গায়ত্রী মন্ত্রের অধিকার আছে। এরমধ্যে পণ্ডিত জী বলেছেন যে, একটা উৎসর্গ হয় আর আরেকটা অপবাদ হয়। পণ্ডিত জীর এমন বলা ঠিক নয়, কারণ যেখানে অপবাদ প্রবৃত্ত হয় সেখানে উৎসর্গ প্রবৃত্ত হয় না আর আমরা দেখি যে অনেক ব্রাহ্মণাদিক গায়ত্রীর উপদেশ দিয়ে পিছন থেকে কৃষ্ণ মন্ত্র দেয় আর গুসাই জী আদি ব্রাহ্মণাদিকে কৃষ্ণাদিক মন্ত্রের উপদেশ করে, এটা পণ্ডিত জীর কথনের বিরুদ্ধ। আর শাস্ত্রের এটা নিয়ম যে যেখানে অপবাদ প্রবৃত্ত হয়ে যায় সেখানে উৎসর্গ প্রবৃত্ত হয় না।
শ্রী পণ্ডিত যমুনা দাস জী -
যে ব্রাহ্মণাদিকে বেদের কর্মের পূর্ণ অধিকার আছে, অর্থাৎ স্নান সন্ধ্যা ব্রহ্মযজ্ঞাদির পূর্ণ অধিকার আছে, তাকে মহাত্মা পুরুষ গায়ত্রীর জপ আর গায়ত্রীর অর্থানুসন্ধানেরই দৃঢ় উপদেশ করবে আর কোনো সাম্প্রদায়িক মন্ত্রের উপদেশ করবে না।
(শাস্ত্রার্থের তৃতীয় দিন)
ব্রহ্মচারী শ্রী স্বামী নিত্যানন্দ জী -
পণ্ডিত জী এখন একথা তো স্বীকার করেছেন যে যেসব ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়াদিকে উপনয়ন সংস্কার অর্থাৎ ব্রহ্ম গায়ত্রীর উপদেশ করা হয়েছে, সেইসব ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়াদিকে বল্লভাদি যেসব মন্ত্র আছে সেই মন্ত্রগুলোকে নেওয়া উচিত নয়। এখন বাকি রইলো, যেসব পতিত ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়াদি আছে তাদের প্রায়শ্চিত্ত করিয়ে পুনঃ উপনয়ন সংস্কার করানো উচিত, এটা মনুস্মৃতির মধ্যে মনু জী মহারাজ একাদশ অধ্যায়ের মধ্যে বলেছেন। এখন কথা হচ্ছে এই বিধি কোথাও পাওয়া যায় না যে যেসব পতিত ক্ষত্রিয়াদি আছে তাদের প্রায়শ্চিত্ত না করিয়ে আর উপনয়ন সংস্কার না করিয়ে সাম্প্রদায়িক মন্ত্রের উপদেশ দেওয়া উচিত। যদি পণ্ডিত জী এইরকম বলেন যে যেসব পতিত ক্ষত্রিয়াদি আছে তারা কোনো ভাবেই স্বধর্মে আসতে পারবে না। তাহলে একথা একদম মিথ্যা হবে, কারণ তিন কৃচ্ছ্র ব্রত প্রত্যেক মানুষ করতে পারে, এতে কোনো খরচও হয় না। এখন যদি কোনো মানুষকে জিজ্ঞেস করা হয় যে তুমি তিন কৃচ্ছ্র ব্রত করলে নিজের আসল বর্ণে ফিরে আসবে আর যদি না করো তাহলে পতিত (অর্থাৎ পাপী) হয়ে থাকবে। আর তোমার সঙ্গে কোনো জাতের কোনো সম্বন্ধ থাকবে না, এমনটা মনু জী দ্বিতীয় অধ্যায়ে লিখেছেন, তো তুমি কোনটা স্বীকার করবে? তাহলে সেই মানুষটা এটাই বলবে যে তিন কৃচ্ছ্র ব্রত করে নিজের পূর্ব বর্ণে আরুঢ় হয়ে যাবো। আর সে এমন মোটেও বলবে না যে আমি সাম্প্রদায়িক মন্ত্রওয়ালাদের মন্ত্রকে নিয়ে পতিত হয়ে থাকবো আর নিজের এই লোক আর পরলোকের অর্থ, ধর্ম, কাম আর মোক্ষরূপী ফল থেকে রহিত হয়ে মনুষ্য জন্মকে নষ্ট-ভ্রষ্ট করবো, কারণ গীতার (১৮/৪৫) মধ্যে লেখা আছে - "স্বে স্বে কর্মণ্যভিরতঃ সম্সিদ্ধিম্ লভতে নরঃ" অর্থাৎ নিজের-নিজের বর্ণাশ্রমের কর্মকে যারা করে তাদের কল্যাণ হয়, অন্যথা নয়। আর আমি পূর্বে পণ্ডিত জীর কথনের যেসব খণ্ডন করেছি, পণ্ডিত জী তার একটাও উত্তর দেন নি। তাই এখন পণ্ডিত জীর উচিত যে তিনি যেন সেগুলোর উত্তর দেন।
শ্রী পণ্ডিত যমুনা দাস জী -
স্বামী জী যেমন লিখেছেন সেটা আমি স্বীকার করছি না। স্বামী জী লিখেছেন যে - ব্রহ্মগায়ত্রীর উপদেশ যে নিয়েছে তাকে সাম্প্রদায়িক মন্ত্র দেওয়া উচিত নয়। আমি এটা লিখিনি। আমি এটাই লিখেছি যে - যারা ব্রাহ্মণাদিক বর্ণজাত কর্ম সংস্কারযুক্ত হবে আর সংকল্প ব্রহ্মকর্মাদি আচরণ করবে, সেইসব ব্রাহ্মণাদিকে মহাত্মা পুরুষ গায়ত্রীর অর্থানুসন্ধানের উপদেশ করবে। স্বামী জী লিখেছেন - "পণ্ডিত জী বলেছেন যারা সাবিত্রী পতিত ক্ষত্রিয়াদি হবে তাদের প্রায়শ্চিত্ত পূর্বক উপনয়ন করিয়ে সাম্প্রদায়িক মন্ত্র নেওয়া উচিত, যেসব সাবিত্রী পতিত ক্ষত্রিয়াদি কোনো ভাবেই স্বধর্মে আসতে পারবে না তাদের সাম্প্রদায়িক মন্ত্র নেওয়া উচিত।" আর স্বামী জী লিখেছেন যে - "এটা মিথ্যা। তিন কৃচ্ছ্র ব্রত প্রত্যেক মানুষ করতে পারে।" আর তিন কৃচ্ছ্রের অর্থ স্বামী জী লেখেন নি।
এখন এখানে আমার কথা হল, নিজের ধর্মের প্রতি পূর্ণ সাধনের নিশ্চয় যে ক্ষত্রিয়াদিকের আছে, তাদের আমরা কখনো থামাতে পারবো না। তিন কৃচ্ছ্র ব্রত কি কি, এতে আমার বড় শঙ্কা আছে। মনু জী অনেক ধরণের কৃচ্ছ্র লিখেছেন, তারমধ্যে তিন কৃচ্ছ্র কোনগুলো? মনুস্মৃতি দ্বারা বলা উচিত। আর সাবিত্রী পতিতকে তিন ব্রতের মাধ্যমে প্রায়শ্চিত্ত হওয়ার দ্বারা সশুদ্ধ হয়, এটাও মনুবাক্য বলা উচিত, আপনি যেমনটা বলেছেন তেমনটা মনু জী লেখেন নি। আর লেখা আছে যে পতিতকে সাম্প্রদায়িক মন্ত্রের বিধান আছে তো এর উত্তর উৎসর্গ বাক্যের প্রথমে বলে দিয়েছি আর এই কাজটা তিন ব্রতের দ্বারা হয় না, আরও কিছু করতে হয় আর প্রায়শ্চিত্তের পর স্বধর্ম করতে হয়, তবেই ক্ষত্রিয়াদিক বর্ণ হয়। এখন কোনো ক্ষত্রিয়কে সরাসরি নিজের ধর্ম শুনিয়ে প্রায়শ্চিত্ত শুনিয়ে সন্মুখ করে দেখান যে এই গ্রামের মধ্যে কতজন সেটা স্বীকার করে? আর কারা সেটা আজন্ম করবে? প্রত্যক্ষ দেখুন, প্রমাণ হয়ে যাবে। স্বামী জী লিখেছেন - "আমার প্রশ্নের উত্তর দেন নি", এর জবাবে আমি বলবো যে - আমি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আপনি জিদ ধরে আছেন অথবা বোঝেন নি, দৃষ্টান্ত বুদ্ধিমানদের বলা হয়। ইতি।।
Note - এইভাবে তিনদিনে এই শাস্ত্রার্থ (লিখিত রূপে) সমাপ্ত হয়। উপরোক্ত কথন পণ্ডিত জীর অন্তিম কথন ছিল, এরপর স্বামী জী ওনার কথনের পূর্বাপর বিরোধ বলেন আর সেটা লিখে সভাকে সম্বোধিত করে পণ্ডিত জীর কাছে পাঠিয়ে দেন। সেই সময় এই শাস্ত্রার্থটা খুবই প্রসিদ্ধ হয়েছিল। প্রিয় পাঠক! আপনারা এর অন্তিমে "শাস্ত্রার্থের পরিণাম" নামক পাঠে সেটা দেখে নিবেন, এই শাস্ত্রার্থের পরেই "বুন্দি রাজ্যে স্বামী নিত্যানন্দ জী মহারাজ শাস্ত্রার্থ করেছিলেন" সেটা অত্যধিক প্রসিদ্ধ হয়েছিল, যার সম্বন্ধে শ্রী পণ্ডিত গুরুদত্ত জী বিদ্যার্থী আর শ্রী পণ্ডিত নরদেব জী শাস্ত্রী বলেছিলেন যে - "মহর্ষি দয়ানন্দের পশ্চাৎ এমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো শাস্ত্রার্থ আর্যসমাজ করেনি।" এখন আপনারা এই শাস্ত্রার্থের উপসংহার রূপে শ্রী স্বামী নিত্যানন্দ জীর অন্তিম নিবেদন পড়ুন।
ব্রহ্মচারী শ্রী স্বামী নিত্যানন্দ জী -
বুদ্ধিমান সজ্জনগণ! এখন আপনারা পণ্ডিত জীর বিদ্যা আর বুদ্ধিকে দেখুন যে ওনার কথনে কত পূর্বাপর বিরোধ আছে? প্রথমত - পণ্ডিত জী লিখেছেন যে - ক্ষত্রিয়াদিকে ব্রহ্মগায়ত্রী মন্ত্রেরই উপদেশ দেওয়া উচিত আর তারপর লিখেছেন - যেসব ক্ষত্রিয় জাত কর্ম সংস্কার যুক্ত হয়ে শ্রদ্ধাপূর্বক উপনয়ন করে, তাদের বেদোক্ত মন্ত্রের উপদেশ করা হয়। তারপর লিখেছেন - যে ক্ষত্রিয় নিজের ধর্মে আসতে পারে না, তাদের জন্য আমরা ঈশ্বরের নাম অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক মন্ত্রের উপদেশ করি। তো একথার দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে অধর্মীদের জন্য সাম্প্রদায়িক মন্ত্রের উপদেশ হয়। এটা পণ্ডিত জী দারুন লিখেছেন আর পণ্ডিত জী নিজে লিখেছেন যে পতিত ক্ষত্রিয়দের জন্য ঈশ্বরের নামের উপদেশ করা উচিত। এটা নাকি মহাভারত আর শঙ্কর ভাষ্যতে লেখা আছে, তো এরদ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় যে পণ্ডিত জী মহাভারত আর শঙ্কর ভাষ্যের দর্শন পর্যন্ত করেন নি। কারণ মহাভারত আর শঙ্কর ভাষ্যের মধ্যে এমন কথা কোথাও লেখা নেই যে পতিত ক্ষত্রিয়কে সাম্প্রদায়িক মন্ত্র দেওয়া উচিত। আবার এটাও দেখুন - পণ্ডিত জীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে একটা আর তিনি উত্তর দিয়েছেন আরেকটা, যেমন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে - "পতিত ক্ষত্রিয়াদিকে সাম্প্রদায়িক মন্ত্রের উপদেশ করানো উচিত এটা কোন বেদ বা স্মৃতির মধ্যে লেখা আছে?" এর উত্তরে পণ্ডিত জী লিখেছেন যে - "ব্রহ্মচারী জী বলেছেন যে ক্ষত্রিয়াদিকে ঈশ্বরের নাম সেবন করানো এতে বেদের প্রমাণ চাই।" এখন দেখুন পণ্ডিত জীর কাছে কি জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আর কি উত্তর পাওয়া গেল? এবার পণ্ডিত জীর উল্টো বুদ্ধি দেখুন, পণ্ডিত জী লিখেছেন - "যে ব্রাহ্মণাদির স্নান সন্ধ্যা ব্রহ্মযজ্ঞাদির অধিকার আছে, তাদের মহাত্মা পুরুষ গায়ত্রী মন্ত্রের উপদেশ করাবে।" এখন আপনারা মন দিয়ে ভাবুন - এমন কোন মানুষটা আছে যার স্নানের অধিকার নেই? আর দেখুন, শাস্ত্রের তো এটাই আজ্ঞা যে প্রথমে সকলকে গায়ত্রী মন্ত্রের উপদেশ করে তারপর তাদের সন্ধ্যা ব্রহ্মযজ্ঞের অধিকার হয়। অথচ পণ্ডিত জী উল্টো বলছেন যে - "যখন সন্ধ্যা ব্রহ্মযজ্ঞের অধিকারী হয়ে যাবে তখন তাকে গায়ত্রী মন্ত্র দেওয়া উচিত।" ধন্য পণ্ডিত জীর বিদ্যা আর বুদ্ধিকে! এখন পণ্ডিত জীর এই মিথ্যাটাও দেখুন, পণ্ডিত জী স্পষ্টভাবে লিখেছেন যে সাম্প্রদায়িক মন্ত্র দেওয়া উচিত আর পণ্ডিত জী বলছেন যে - "আমি এটা বলি নি।" তাহলে উৎসর্গ অপবাদ দ্বারা কি সিদ্ধ হল? বাঃ! পণ্ডিত জী!! আপনার মিথ্যা লীলাকে দেখে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা হাসবে। আর পণ্ডিত জী লিখেছেন যে - "তিন কৃচ্ছ্র ব্রত কি কি?" আর পতিত, তিন কৃচ্ছ ব্রত করলে শুদ্ধ হয়। এটা মনুস্মৃতিতে কোথাও লেখা নেই বরং পণ্ডিত জী স্বয়ং বলেছেন। এখন পণ্ডিত জীর এই প্রশ্নের উত্তর দিবো, কিন্তু এই প্রশ্নের দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে তিনি মনুস্মৃতিও পড়েন নি। এখন প্রমাণ দিচ্ছি -
য়েষাম্ দ্বিজানাম্ সাবিত্রী নানূচ্যেত য়থাবিধি। তাম্শ্চারয়িত্বা ত্রীন্কৃচ্ছ্রান্যথাবিধ্যুপনায়য়েত্।।
(মনুঃ ১১/১৯১)
এর অর্থ হল - যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যদের নিজের-নিজের উচিত সময়ে অর্থাৎ ব্রাহ্মণকে আট থেকে ষোলো বছর পর্যন্ত গায়ত্রী মন্ত্র আর যজ্ঞোপবীত দেওয়া হয়নি তাকে তিন কৃচ্ছ্র ব্রত করিয়ে পুনঃ গায়ত্রী মন্ত্র দেওয়া উচিত। আর ক্ষত্রিয়কে এগারো থেকে বাইশ বছর পর্যন্ত আর বৈশ্যকে বারো থেকে চব্বিশ বছর পর্যন্ত যাদের গায়ত্রী আর যজ্ঞোপবীত করানো হয়নি, তাদের তিন কৃচ্ছ্র ব্রত করিয়ে যজ্ঞোপবীত করানো উচিত।
এখন তিনি জিজ্ঞেস করেছেন যে কোন কৃচ্ছ্র করানো উচিত? তো মনু জী তো এর নিয়ম করেন নি যে সেই কৃচ্ছ্রই করানো উচিত, কিন্তু টিকাকার মেধাতিথি আদি তিন প্রজাপতি কৃচ্ছ্র লিখেছেন। এখন পণ্ডিত জীর কথা হল - কোনো ক্ষত্রিয়কে নিজের ধর্ম শুনিয়ে ধর্ম পথে চলা মঞ্জুর করুন। এই নগরে কতজন ক্ষত্রিয় নিজের ধর্ম পথে চলতে স্বীকার করবে? এখন পণ্ডিত জীর কথা হল সব ধর্ম ক্ষত্রিয় পালন করলে তবেই তাকে যজ্ঞোপবীত আর গায়ত্রী মন্ত্র দেওয়া উচিত। এর উত্তরে আমি বলবো - ব্রাহ্মণাদিও যখন সব ধর্মের পালন করবে তখনই তাকে যজ্ঞোপবীত আর গায়ত্রী মন্ত্র দেওয়া উচিত। ব্রাহ্মণের যেমন এটা কর্ম -
শমো দমস্তপঃ শৌচম্ ক্ষাম্তিরার্জবমেব চ।
জ্ঞানম্ বিজ্ঞানমাস্তিক্যম্ ব্রহ্মকর্ম স্বভাবজম্।। (ভাগবতগীতা ১৮/৪২)
মনকে জেতা, চক্ষু আদি ইন্দ্রিয়কে জেতা, ব্রহ্মচর্যাদি তপ করা, বাইরে-ভিতরে শুদ্ধ থাকা, নম্রতা থাকা, বাহ্য জ্ঞান হওয়া, শিল্প, বিদ্যা, কলা কৌশলের জ্ঞান আর আস্তিক্য হওয়া এইসব কর্ম হল ব্রাহ্মণের।
এখন পণ্ডিত জীর কথানুসারে এই কর্ম যেসব ব্রাহ্মণ করে না সেই ব্রাহ্মণদেরও যজ্ঞোপবীত আর গায়ত্রীর উপদেশ দেওয়া উচিত নয়, আর এমনই অবস্থা পণ্ডিত যমুনা দাস জীরও আছে। কারণ পণ্ডিত জী যদি ব্রাহ্মণ ধর্মের উপর আচরণ করতেন তাহলে গোকুলিয় গোসাইয়ের চেলা কেন হতেন? কারণ পণ্ডিত জী প্রথমে লিখেছেন যে পতিত তিন বর্ণকে সাম্প্রদায়িক মন্ত্র নেওয়া উচিত। এখন পণ্ডিত জী সাম্প্রদায়িক মন্ত্র নিয়ে স্বয়ংও পতিত হয়েছেন আর অন্যদেরও পতিত করছেন, এটা বড় শোকের কথা। এখন বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা সত্যাসত্যের নির্ণয় স্বয়ংই করবেন, আর বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের এটাও ধ্যানে রাখা উচিত যে শাস্ত্রার্থের নিয়মে একটা নিয়ম এমনও আছে যে - যে বিষয়ের শাস্ত্রার্থ হবে সেই বিষয়টা সমাপ্ত হলে তবেই অন্য বিষয় ধরা উচিত, এই নিয়মের বিরূদ্ধে গিয়ে পণ্ডিত জী নিজের প্রতিজ্ঞার হানি করেছেন।
শ্রী পণ্ডিত যমুনা দাস জী -
বেদের মধ্যে রাজাদের কথা আছে, আর ব্রহ্মচারী জী বলছেন যে - "বেদের মধ্যে তো কোনো মানুষের নাম নেই।" এইজন্য স্বামী জী বেদ জানেন না।
শ্রী মহারাজা প্রতাপসিংহ জী -
যে শাস্ত্রার্থটা চলছে সেটা সমাপ্ত হওয়ার পর এই শাস্ত্রার্থ করবেন যে "বেদের মধ্যে কোনো মানুষের নাম আছে নাকি নেই?"
ব্রহ্মচারী শ্রী স্বামী নিত্যানন্দ জী -
পণ্ডিত জী ! আপনি খারাপ পাবেন না, আপনি না তো ব্যাকরণ পড়েছেন আর না ছয় শাস্ত্রের মধ্যে কোনো শাস্ত্র পড়েছেন আর আপনি বেদও পড়েন নি। আপনি যদি বেদ পড়েছেন তাহলে একটা বেদ মন্ত্র বলছি, আর আপনি বলুন এটা কোন বেদের মন্ত্র? মন্ত্রটা হল - "বেনস্তত্পশ্যন্নিহিতম্..."
Note - এটা য়জুর্বেদ ৩২ অধ্যায়ের অষ্টম মন্ত্র, যার জবাবে পণ্ডিত জী বলে দেন যে এটা বেদের মন্ত্র নয় বরং উপনিষদের বচন। তখন ব্রহ্মচারী শ্রী স্বামী নিত্যানন্দ জী বলেন - পণ্ডিত জী! আপনি লিখে দিন যে এটা বেদের মন্ত্র নয়।
শ্রী পণ্ডিত যমুনা দাস জী -
স্বামী জী! আপনিও লিখে দিন যে বেদের মধ্যে রাজাদের নাম নেই।
ব্রহ্মচারী শ্রী স্বামী নিত্যানন্দ জী -
(লিখে দেওয়ার সঙ্গে) এই নিন পণ্ডিত জী! আমি লিখে দিচ্ছি যে - বেদের মধ্যে কোনো রাজার কথা নেই। কারণ বেদ হচ্ছে অনাদি। এখন আপনি লিখুন যে আমার দ্বারা বলা বচন বেদ মন্ত্র নয়।
Note - বার-বার আগ্রহ করার পরেও পণ্ডিত জী লিখলেন না, যখন চারিদিক থেকে বলা হল তখন মৃদু সুরে বললেন যে - "এটা বেদের মধ্যেও আছে তথা উপনিষদের মধ্যেও আছে"... (চারিদিক থেকে হাসি)।
.
এইভাবে মহারাজা সাহেবের করা প্রথম প্রশ্নের সমাধান করতে গিয়েই পণ্ডিত যমুনা দাস জী তিন দিন লাগিয়ে দেন আর নিজের পক্ষের নীর্বলতার পুরো প্রমাণ দিয়ে দেন, আর পরবর্তী বাকি সাতটা প্রশ্নের সমাধান করতে সরাসরি অস্বীকার করে দেন। শেষে স্বামী জী প্রত্যেক প্রশ্নের উপর বক্তৃতা দিয়ে দরবারে উপস্থিত সকল সজ্জনদের সন্তুষ্টি করেন।
শাস্ত্রার্থের পরিণাম
এই শাস্ত্রার্থের পরিণাম স্বরূপ মহারাজা আর তাঁর শ্রদ্ধালু প্রজাদের বৈদিক ধর্ম সত্যতার উপর নিশ্চয় হয়ে যায় আর আনুমানিক ৫০০ ক্ষত্রিয় সহিত, যাদের মধ্যে জাগিরদার বিশেষ ছিলেন, শ্রাবণী পূর্ণিমা ১৯৪৫ বিক্রমী সন ১৮৮৮ ই০, মহারাজা "পাতালপানী" নামক রমণীয় স্থানে খুব ভক্তি আর প্রেম সহিত তিন দিন ব্রত রেখে বৃহৎ যজ্ঞ করে যজ্ঞোপবীত ধারণ করেন। নরসিংহগঢ়ে আর্য সমাজের স্থাপনা খুব ধুমধাম আর সমারোহের সঙ্গে হয়। অন্তিমে মহারাজা খুব প্রেম সহিত স্বামী জীকে পুনঃ শীঘ্র আসার আগ্রহ করে বড় সম্মান আর ভক্তির সঙ্গে বিদায় করেন। ইতি।।
(মূল কপি থেকে)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ