স॒বি॒তা প্র॑থ॒মেऽহ॑ন্ন॒গ্নির্দ্বি॒তীয়ে॑ বা॒য়ুস্তৃ॒তীয়॑ऽআদি॒ত্যশ্চ॑তু॒র্থে । চ॒ন্দ্রমাঃ॑ পঞ্চ॒মऽঋ॒তুঃ ষ॒ষ্ঠে ম॒রুতঃ॑ সপ্ত॒মে বৃহ॒স্পতি॑রষ্ট॒মে মি॒ত্রো ন॑ব॒মে বর॑ুণো দশ॒মऽইন্দ্র॑ऽএকাদ॒শে বিশ্বে॑ দে॒বা দ্বা॑দ॒শে ॥
[যজুর্বেদ ৩৯।৬]
পদার্থ :- হে মনুষ্যগণ ! এই জীব [প্রথমে] শরীর ত্যাগ করার প্রথম [অহন্] দিন [সবিতা] সূৰ্য [দ্বিতীয়ে] দ্বিতীয় দিন [অগ্নিঃ] অগ্নি [তৃতীয়ে] তৃতীয় দিন [বায়ু] বায়ু [ চতুর্থে ] চতুর্থ দিন [আদিত্য] মাস [পঞ্চমে] পঞ্চম দিন (চন্দ্রমাঃ) চন্দ্র [ ষষ্ঠ ] ষষ্ঠ দিন [ ঋতুঃ] বসন্তাদি ঋতু [সপ্তমে] সপ্তম দিন [ মরুতঃ] মনুষ্যাদি প্রাণী [অষ্টমে] অষ্টম দিন [বৃহস্পতিঃ] সূত্রাত্মা বায়ু [নবমে] নবম দিনে [ মিত্রঃ] প্রাণ [দশম] দশম দিনে [বরুণঃ] উদান [একাদশে] একাদশ দিনে [ইন্দ্রঃ] বিদ্যুৎ এবং [দ্বাদশে] দ্বাদশতম দিন [বিশ্বে] সমস্ত (দেবাঃ) উত্তম গুণ প্ৰাপ্ত করে।
পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! এই জীবকে (প্রথমে) শরীর ত্যাগ করিবার প্রথম (অহন্) দিন (সবিতা) সূর্য্য (দ্বিতীয়ে) দ্বিতীয় দিন (অগ্নিঃ) অগ্নি (তৃতীয়ে) তৃতীয় (বায়ু) বায়ু (চতুর্থে) চতুর্থে (আদিত্য) মাস (পঞ্চমে) পঞ্চমীতে (চন্দ্রমাঃ) চন্দ্রমা (ষষ্ঠে) ষষ্ঠীতে (ঋতুঃ) বসন্তাদি ঋতু (সপ্তমে) সপ্তমীতে (মরুতঃ) মনুষ্যাদি প্রাণী (অষ্টমে) অষ্টমীতে (বৃহস্পতিঃ) গুরুজনদের রক্ষক সূত্রাত্মা বায়ু (নবমে) নবমীতে (মিত্রঃ) প্রাণ (দশমে) দশমীতে (বরুণঃ) উদান (একাদশে) একাদশীতে (ইন্দ্রঃ) বিদ্যুৎ এবং (দ্বাদশে) দ্বাদশতম দিন (বিশ্বে) সমস্ত (দেবাঃ) দিব্য উত্তম গুণ প্রাপ্ত হয় ॥
ভাবার্থ - যখন আত্মা দেহ ত্যাগ করে পৃথিবী আদি সহ সকল পদার্থে ভ্রমণ করে, স্বীয় কর্মানুসারে পরমাত্মার বিধিঅনুসারে জন্ম লাভ করে, সুপ্রসিদ্ধ হয়।
মূলত এই মন্ত্রের দ্বারা অনেকেই ভাবেন যে আত্মা শরীর ত্যাগ করার পর সূর্য, জল, বায়ু আদি পদার্থ হতে শক্তি প্রাপ্ত করে তারপর নতুন দেহ ধারণ করে। যদিও উক্ত মন্ত্রে বলা হয় নি শক্তি গ্রহণের পর আত্মা গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে । আত্মা যখন পুরাতন দেহ ত্যাগ করে বাইরে আসে, তখন তার পক্ষে প্রকৃতির কোন কিছু ভোগ করা সম্ভব নয়, কারণ তখন আত্মার নিকট স্থুল দেহ থাকে না। এই সম্পর্কে সাংখ্যদর্শনে বলা হয়েছে -
ন কিঞ্চিদপ্যনুশয়িনঃ
( সাংখ্য -৫/১২৫)
ন বুদ্ধ্যাদিনিত্যত্বমাশ্রয়বিশেষেহপিবিহ্নিবৎ। ( সাংখ্য - ৫/১২৬)
আশ্রয়াসিদ্ধেশ্চ।
( সাংখ্য - ৫/১২৭)
অর্থাৎ - যে আত্মা পূর্বতন শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীর ধারণ হেতু যাত্রা করে তাকে অনুশয়ী আত্মা বলে। এই অনুশয়ী আত্মার কোন প্রকার চৈতন্য তথা সুখ দুখঃ ইত্যাদির জ্ঞান থাকে না । তাই আত্মা এই সম্পর্কে সম্পুর্ন অজ্ঞ থাকে যে সে কোথায় যাচ্ছে, কি হেতু গমন করছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত আত্মা স্থুল শরীরকে প্রাপ্ত না করে ততক্ষন পর্যন্ত আত্মার চৈতন্য হয় না। সুক্ষ্ম শরীরে আত্মা সুখ দুখঃ আদির জ্ঞান লাভ করতে পারে না।
এ সম্পর্কে গীতার একটা শ্লোক উদাহরণ হিসাবে দেওয়া যেতে পারে -
নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ। ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ॥
( গীতা -২/২৩)
অনুবাদঃ আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পুড়ানো যায় না, জলে ভেজানো যায় না, অথবা হাওয়াতে শুকানো যায় না।
অর্থাৎ আত্মার উপর জল, বায়ু, তাপ আদি কোন কিছুর প্রভাব পড়ে না। যখন আত্মা স্থুল শরীরে অবস্থান করে তখন তাপ, জল, বায়ু ইত্যাদির প্রভাব মূলত স্থুল শরীর ভোগ করে। আত্মা মূলত দেহের মাধ্যমেই শক্তি প্রাপ্ত করে, সুখ ভোগ করে, কষ্ট ভোগ করে। সুতরাং গীতার শ্লোকানুসারেও আমরা দেখতে পাচ্ছি আত্মার স্থুল শরীর ব্যাতিত শক্তি প্রাপ্ত করা অসম্ভব।
তদ্যথা তৃণজলায় কা তৃণস্যান্তং গত্বাহন মারুনমারুন্যাত্মানম,পসংহর তার মেবায়মাত্মেদং শরীরং নিহ ত্যাঽবিদ্যাং গময়িত্বাহ নামারুমমারুম্যাত্মানম,প সংহরতি
[বৃহদারণ্যক ৪/৪/৩ ]
অর্থাৎ - যেরূপে জোঁক একটি তৃণের শেষ প্রান্তে গিয়ে অপর তৃণকে আশ্রয় করে নিজেকে তার উপর উঠিয়ে নেয় তেমনি আত্মাও দেহত্যাগ করিয়া অবিদ্যা দূর করে অন্য একটি দেহকে আশ্রয় করে ও সেখানে গমন করে।
উপনিষদের উক্ত শ্লোকের উদাহরণকে একটু গভীর ভাবে দেখলে বুঝা যায় যে আত্মা দেহ ত্যাগের করে সাথে সাথেই অন্য দেহ ধারণ করে ফেলে। জোঁক যেরকম একটা তৃণের শেষ প্রান্তে এসে আবার অন্য তৃণকেই আশ্রয় করে তার উপর গমন করে সেভাবে আত্মাও । এখানে জোঁক হচ্ছে আত্মা আর তৃণ হচ্ছে আত্মার সেই স্থুল দেহ৷ অর্থাৎ দ্বাদশতম দিন পর্যন্ত আত্মার ভ্রমণের উল্লেখ এখানেও নেই।
মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে আত্মাকে সেই পরমাত্মাই তার নিয়মানুসারে ও আত্মার কর্মানুসারে বিভিন্ন যোনি বা লোকে নিয়ে যান। এই সম্পর্কে উপনিষদের বেশ কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়, কিন্তু কোথাও আত্মা পুরাতন দেহ ত্যাগ করার পর নতুন দেহ ধারণের আগে ১২ দিন ভ্রমণ করে এরূপ উল্লেখ পাওয়া যায় না।
শতং চৈকা চ হৃদয়স্য নাড্যস্তাসাং মূর্ধানমভিনিঃসৃতৈকা। তয়োমায়ন্নমৃতত্বমেতি বিষন্যা উৎক্রমণে ভবন্তি৷৷
[ কঠোপনিষদ - ২/৩/১৬ ]
পদার্থ - [ হৃদয়স্য ] হৃদয়ের [শতম্ চ একা চ] একশ এক [নাড়্যঃ] নাড়ি আছে [ তাসাম্] তাদের মধ্যে [একা ] একটি [মূর্ধানম্] মস্তকের দিকে [অভিনিঃসৃতা ] বেরিয়েছে (একে সুষুম্না বলে) [ তথা ] তার দ্বারা [ ঊর্ধ্বম্ ] ঊর্ধ্বলোকে [আয়ন্] গিয়ে (মানুষ) [অমৃতত্বম্] মোক্ষ [এতি] প্রাপ্ত হয় [অন্যাঃ] অপর একশত নাড়ি দ্বারা [উৎক্রমণে] মৃত্যুকালে জীবকে [ বিষন্যা] নানাবিধ যোনিতে নিয়ে যাওয়া [ভবন্তি] হয়।
অথৈকয়োর্ধ্ব উদানঃ পুণ্যেন পুণ্যং লোকং নয়তি পাপেন পাপমুভাভ্যামেব মনুষ্যলোকম্॥
[প্রশ্ন উপনিষদ - ৩/৭]
পদার্থ - [অথ] তথা [একয়া] আর একটি নাড়ি আছে, তার দ্বারা [ উদানঃ ঊর্ধ্বঃ ] উদানবায়ু উপরের দিকে গমন করেন [ সঃ পুণ্যেন] তিনি পুণ্যকর্মের দ্বারা (মনুষ্যম) মানুষকে [পুণ্যম্ লোকম্] পুণ্য লোকে [নয়তি] নিয়ে যান [পাপেন] পাপকর্মহেতু [পাপম্ (নয়তি) ] পাপযোনিতে নিয়ে যান।[উভাভ্যাম্ এব] পাপ এবং পুণ্য উভয়বিধ কর্ম দ্বারা (জীবকে) [ মনুষ্যলোকম্] মনুষ্য শরীরে নিয়ে যান৷
যচ্চিত্তস্তেনৈষ প্রাণমায়াতি প্রাণস্তেজসা যুক্তঃ সহায়না যথাসংকল্পিতং লোকং নয়তি।
[প্রশ্নোপনিষদ -৩/১০]
পদার্থ - [এষঃ] এই জীবাত্মা [যচ্চিত্তঃ] যে সংকল্পবান হন [তেন ] সেই সংকল্পের সাথে [ প্রাণম্] মুখ্য প্রাণে [আয়াতি] স্থিত হয়ে যান [প্রাণঃ] মুখ্য প্রাণ [ তেজসা যুক্তঃ] তেজ যুক্ত [আত্মনা সহ ] জীবাত্মাকে [যথাসঙ্কল্পিত] সংকল্পানুসারে [লোকম্] ভিন্ন ভিন্ন লোক অথবা যোনিতে [ নয়তি ] নিয়ে যায়।
উপনিষদের উক্ত শ্লোকগুলোতে মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে জীবাত্মার অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে। উক্ত শ্লোক সমূহ হতে স্পষ্ট যে জীবাত্মা পুরাতন দেহ ত্যাগ করার পর ঈশ্বর সেই আত্মাকে আর কর্মানুসারে দেহ প্রাপ্ত করান, এখানে আত্মার ভ্রমণের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে আত্মার গতি সম্পর্কে সেকল শ্লোক আছে সেগুলোর মাঝে উক্ত শ্লোকগুলোরই ভাবার্থের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে, উক্ত শ্লোক সহ কোথাও আত্মার ১২ দিনের ভ্রমণের উল্লেখ পাওয়া যায় না।
উক্ত প্রমাণ অনুসারে ঋষিগণ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তার সারাংশ এই যে - আত্মা শরীর ত্যাগ করে, পৃথিবী আদি পদার্থে ভ্রমণ পূর্বক পরমাত্মার ব্যাবস্থা অনুযায়ী স্বীয় কর্মানুসারে দেহ প্রাপ্ত করে। এবং দেহ পরিত্যাগ করে তৎক্ষণাৎ নতুন দেহে গমন করে।
এখানে অনেকে ভাবেন আত্মা যেহেতু ক্ষণকাল ভ্রমণ করে সেহেতু সেই সময়টাই হচ্ছে ১২ দিন কিন্তু -
পাঠকবৃন্দ লক্ষ করুন - যখন আত্মা পূর্বের শরীর ত্যাগ করে তখন পরমাত্মাই তাকে নতুন দেহ ধারণের জন্য নিয়ে যান, সেই ক্ষণে আত্মার নিকট কেবল সুক্ষ্ম শরীর থাকে। স্থুলশরীর থাকে না। এখন যদি আত্মার ১২ দিন ভ্রমনের বিষয় স্বীকার করা হয় তবে প্রশ্ন আসে, কে তাকে ভ্রমণ করাবেন? এখন যদি এই প্রশ্নের উত্তরে যদি বলা হয় ঈশ্বর, তবে আবার প্রশ্ন আসবে কেন ঈশ্বর এই কার্য করবেন? যেখানে কোন উদ্দেশ্যই থাকে না, কারণ পূর্বেই দর্শন শাস্ত্র তথা গীতার শ্লোক হতে প্রমাণ দিয়ে দেখানো হয়েছে যে আত্মা তখন সুক্ষ্ম শরীরে অবস্থান করে যার ফলে তার জ্ঞান থাকে না, আর আত্মার সুক্ষ্মশরীরের উপর সূর্য, জল, বায়ু আদি পদার্থের কোন প্রভাবই পড়ে না, সুতরাং ১২ দিনের ভ্রমণ করে কি লাভ? কি উদ্দেশ্য ১২ দিন আত্মাকে ভ্রমণ করানো হবে?। যেহেতু সুক্ষ্ম আত্মার উপর প্রকৃতির কোন প্রভাব পড়ে না সেহেতু ১২ দিন ভ্রমণ করানো অর্থহীন কর্ম হয়ে যায়। আর পরমাত্মা কখনোই অর্থহীন কর্ম করেন না। সুতরাং পরমাত্মা কদাপি আত্মাকে ১২ দিন সূর্য, বায়ু, জল আদি পদার্থে ভ্রমণ করান না।
তাহলে আত্মা কি করে পুরাতন দেহ ত্যাগের পর ১২ দিন অগ্নি, জল, বায়ু, সূর্য আদি পদার্থ হতে শক্তি লাভ করে? বা ১২ দিনে তাৎপর্য কি?
এই কথা সত্য যে আত্মা ১২ দিন পর্যন্ত অগ্নি, জল, বায়ু, সূর্য আদি পদার্থ হতে শক্তি প্রাপ্ত করে, কিন্তু সেটা ১২ দিন ভ্রমনের মাধ্যমে নয়। যখন মাতৃগর্ভে ভ্রুণের সৃষ্টি হয় ও আত্মার জন্য স্থুল শরীরের জন্ম হয়, তখন সেই স্থুল শরীরের মাধ্যমেই আত্মা গর্ভাবস্থায়, অগ্নি, বায়ু, জল, সূর্য আদি পদার্থের হতে শক্তি গ্রহণ করে। কারণ তখন সেই শক্তি গ্রহণ করার মত তথা ভোগ করার উপযোগী স্থুল শরীর সৃষ্টি হয়।
সুতরাং তর্ক তথা শাস্ত্রীয় প্রমাণাদি হতে আমরা এই সিন্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে , আত্মা ১২ দিন ভ্রমণ করে না। বরং এক দেহ ত্যাগ করে তৎক্ষনাৎ নতুন দেহে গমন করে, এবং গর্ভাবস্থায় স্থুলশরীরের মাধ্যমে ১২ দিন পর্যন্ত সূর্য, জল, বায়ু আদি পদার্থ হতে শক্তি গ্রহন করে।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ