প্রশ্নঃ পৃথিবীতে
বিভিন্ন ধর্ম্ম নিয়ে এতো বিভেদ দেখা যায় ! প্রকৃত অর্থে ধর্ম্ম ও অধর্মের পরিভাষা
কি ?
আর্য কি বহিরাগত ?
উত্তরঃ বাস্তবে পৃথিবীতে অনেক ধর্ম্ম দেখা যায় না এগুলো
বিভিন্ন মত-পথ-সম্প্রদায় যেমন- হিন্দু, বৈষ্ণব, খ্রীষ্টান, ইসলাম আদি। ধর্ম্ম তো সমস্ত
মনুষ্যের জন্য এক তা হলো সনাতন বৈদিক ধর্ম্ম। সমাজকে, প্রজা
সাধারণকে ধারণ করে রাখে যা তাই ধর্ম্ম, এটা এমন এক সদাচার যা
ধারণ করলে আত্মার উন্নতি, জাগতিক কল্যাণ ও মোক্ষ প্রাপ্তির
পথ সুগম হয় ও সমাজ ব্যবস্থা ঠিক থাকে। অর্থাৎ যে যে ব্যবহারে
নিজের ও অন্যের হানি হয় তাকে অধর্ম এবং যে যে ব্যবহারে নিজের ও অন্যের উপকার হয় তাকে
ধর্ম বলা যায়
(মহাভারত শান্তিপর্ব ১০৯।১১)। বেদশাস্ত্রে সর্বজ্ঞ পরমেশ্বর মনুষ্যের জন্য যে যে
কার্ষের আজ্ঞা প্রদান করেছেন, তাই ধর্ম্ম (পূ০মী০১।২) যে যে
কার্য্য করতে প্রেরণা করেন নাই, তাকেই অধর্ম বলা যায়। ধর্ম্মঃ সনাতনঃ (মনু০৪।১৩৮)। মনু মহারাজ ধর্ম্মের মূলতঃ ১০টি লক্ষণ সম্বন্ধে বলেছেন যথাঃ
ধৃতি (ধারণা করা স্মরণ রাখার শক্তি), ক্ষমা, দম, অস্তেয়, শৌচ, ইন্দ্রিয়নিগ্রহ, ধী, বিদ্যা,
সত্য, অক্রোধ (মনুস্মৃতি
৬।৯২)। সাধারণত এই সদাচার গুলো ধারণ করেই মনুষ্য মাত্রের উচিত
বৈষ্ণব, খ্রীষ্টান, মুসলমান না হয়ে, ঈশ্বরের
উপদেশ মতো মানুষ হওয়া এবং অন্য মনুষ্যদের দেবতা তৈরী করা-“মনুর্ভব
জনয়া দৈব্যং জনম্” (ঋগ্বেদ০ ১০।৫৩।৬)। মনুষ্যকে
বেদানুগামী হয়ে সত্য গ্রহণ ও অসত্য কে পরিত্যাগ করে সমস্ত ভেদভাব ত্যাগপূর্বক
প্রেমের সাথে একে অপরের ভুল সংশোধন করার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকা উচিত (অথর্ববেদ
৩।৩০।১) । বেদে ঈশ্বরের নির্দেশ “কৃণ্বন্তো
বিশ্বমার্যম” (ঋ০ ৯।৬৩।৫) সকল বিশ্বকে
অর্থাৎ সকল মনুষ্যকে আর্য (ধার্ম্মিক) তৈরী
করো। আর্য শব্দের আর এক অর্থ “ঈশ্বর পুত্র”
(নিরুক্ত ৬।২৬) । যাঁরা
অহিংসা, সত্য, পবিত্রতা ও পরোপকার ব্রত
পালন করেন তাঁদের আর্য বলা হয় (ঋ০১০।৬৫।১), অতঃ "আর্য আক্রমণ
" ও "আর্যরা বহিরাগত" তত্ত্ব কাল্পনিক ॥
প্রশ্নঃ হিন্দু, বৈষ্ণব,
খ্রীষ্টান, ইসলাম আদি যে “মত-সম্প্রদায়” তার প্রমান কি ?
উত্তরঃ প্রকৃতপক্ষে ভারতবর্ষে বসবাসকারী আর্য্যের
নামান্তর হিন্দু, এটা কোন ধর্ম্মের নাম নয়। ধর্ম্ম একটি সম্পূর্ন
বাক্য, আমাদের ধর্ম্মের নাম "ধর্ম্ম"! এর পূর্বে ব্যবহৃত শব্দ বৈশিষ্ট
বাচক, যা সময় বিশেষে কখনো ব্রাহ্মণ্যধর্ম্ম, চিরাচরিত ধর্ম্ম, সনাতন ধর্ম্ম।
জৈন, বৌদ্ধ,
বৈষ্ণব, খ্রীষ্টান, ইসলাম
আদি কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিশেষ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মত-পথ,
যা তাঁর প্রবর্তকের পূর্বে ছিলো না, যা পরিবর্তনশীল।
বেদের
মধ্যে মনুষ্যের মুক্তির কেবল মাত্র একটিই মার্গের কথা বলা হয়েছে-"নান্যঃ
পন্থা বিদ্যতেऽয়নায়" (যজুর্বেদ০
৩১।১৮)। পাদশ্রী অভয়চরণারবিন্দ শ্রীমদ্ভাগবতের ১০।১০।৩৮ শ্লোকের
তাৎপর্যে লিখেছেন-"যত মত তত পথ আদি প্রবাদ মূর্খের মতবাদ"॥ অতঃ সর্ব্বধর্ম্মসমন্বয়কারী
হতে সাবধান!!
প্রশ্নঃ
ঈশ্বর কে ও কার উপাসনা করা দরকার ?
উত্তরঃ সব সত্যবিদ্যা এবং যা পদার্থবিদ্যা দ্বারা জানা
যায় সে সবের আদিমূল পরমেশ্বর। ঈশ্বর সচ্চিদানন্দস্বরূপ, নিরাকার,
সর্বশক্তিমান, ন্যায়কারী, দয়ালু, অজন্মা, অনন্ত,
নির্বিকার, অনাদি, অণুপম,
সর্বাধার, সর্বেশ্বর সর্বব্যাপক, সর্বান্তর্যামী, অজর, অমর,
অভয়, নিত্য, পবিত্র ও
সৃষ্টিকর্তা। একমাত্র তারই উপাসনা করা
উচিত (ঋগ্বেদ ১০।৪৮।৫)।– (দিগ্বিজয়ী
পণ্ডিত মহর্ষি দয়ানন্দকৃত আর্য সমাজের ২নং মূলনীতি) ॥
প্রশ্নঃ ঈশ্বর সাকার না
নিরাকার ?
“অহং ব্রহ্মাস্মীতি” বা “অহং ব্রহ্মাস্মি” বাক্যের অর্থ কি ?
উত্তরঃ ঈশ্বর নিরাকার। যা সাকার অর্থাৎ শরীর বিশিষ্ট তা
ঈশ্বর নয়। কারণ তা হলে তিনি পরিমিত শক্তিসম্পন্ন, দেশ-কাল-বস্তু সমূহে পরিচ্ছিন্ন
এবং ক্ষুধা-তৃষ্ণা-ছেদন-ভেদন, শীততোষ্ণ ও জ্বরপীড়াদি যুক্ত
হতেন। সাকার হলে তিনি ব্যাপক হতেন না। ব্যাপক না হলে সর্বজ্ঞত্বাদি গুণও তাঁর
সম্ভব হত না। কারণ পরিমিত বস্তুর গুণ-কর্ম-স্বভাবও পরিমিত সুতরাং ঈশ্বর নিশ্চয়
নিরাকার। একস্থানে থাকলে তিনি সর্ব্বান্তর্যামী, সর্বজ্ঞ,
সর্বনিয়ন্তা সকলের স্রষ্টা ও প্রলয়কর্তা হতে পারবেন না ঈশ্বরের অসীমত্ব,
সর্ব্বান্তর্য্যামিত্ব ক্ষুন্ন হবে। যে স্থানে
কর্ত্তা নেই,
সে স্থানে তাঁর ক্রিয়া অসম্ভব। তাঁর কোন লিঙ্গ (চিহ্ন) বিষেশ,
প্রতীক নেই (শ্বেত০৬।৮, বেদান্তদর্শন
৪|১|৪)। পরমাত্মা নিরাকার
ও সর্বন্দ্রিয়বিবর্জিত ( যজু০ ৪০।৮, কঠ০২।৩।৮, শ্বেতা০উ ৩।১৯, গীতা ১৩।১৫)।
ঈশ্বর
দ্বৈতরহিত "অদ্বৈত", তিনি জগৎ ও জীবগুণ হতে পৃথক বলে
"নির্গুণ" এবং সর্বজ্ঞত্বাদিগুণ যুক্ত বলে "সগুণ"॥ "অহং ব্রহ্মাস্মি" শব্দের অর্থ অহং ব্রহ্মস্থ
অস্মি অর্থাৎ আমি সর্বব্যাপক ব্রহ্মেই অবস্থিত এইরূপ বোঝা উচিৎ॥
প্রশ্নঃ ঈশ্বরের নিবাস
স্থান কোথায় ? তিনি কি সপ্তম আসমানের উপর বা অন্যত্র রয়েছেন ?
উত্তরঃ পরমেশ্বর সর্বব্যাপক (ঋগ্বেদ
১।২৩।১৪) । শাস্ত্র মতে অবিদ্যাদি
ক্লেশ, পাপ-পুণ্য আদি কর্ম এবং তার ফল, বাসনা হতে পৃথক
পুরুষ অর্থাৎ সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে শয়নরত অর্থাৎ ব্যাপ্ত বিরাজমান চেতন
তত্ত্বকে ঈশ্বর বলে (যোগ০১।২৪)। অর্থাৎ তিনি কোন
নির্দিষ্ট স্থানে নয়, সমস্ত পদার্থের ভেতরে ও বাইরে সর্বত্র বিরাজমান
(মুন্ডকোপনিষদ ২|১|২)। তিনিই সমগ্র সৃষ্টির একমাত্র নিপেক্ষ কর্ত্তা (সাখ্য০
৩।৫৬) ॥
প্রশ্নঃ পরমেশ্বর সর্বত্র
বিরাজমান তবে মূর্ত্তিতে তাঁর পূজা, উপাসনা সম্ভব নয় কেন ?
উত্তরঃ সাকার মূর্ত্তি জড় হওয়ায় তার পূজা কিংবা উপাসনা
সম্ভব নয় (বেদান্ত সূত্রঃ ৪।১।৪) । ব্রহ্ম ব্যাপক তার
অর্থ সমস্ত কিছু ব্রহ্ম নয়, যেমন সমুদ্রে মাছ থাকলেও জল ও মাছ আলাদা।
"পূজা"
শব্দের অর্থ সৎকার করা, সৎকার বা সেবা চেতন পদার্থের সম্ভব এবং "উপাসনা" অর্থ সন্নিকটস্থ হওয়া, পরমেশ্বর সর্বত্র
ব্যাপক এর অর্থ জড় মূর্ত্তির মধ্যেও রয়েছে কিন্তু জড়-মূর্তি পরমেশ্বর
নন। জড় মূর্তির মধ্যে চেতন তত্ত্ব জীবাত্মা বা উপাসকের
অভাব থাকে,
তাই জড় মূর্ত্তিতে উপাসনা সম্ভব নয়। একমাত্র জীবাত্মা বা উপাসকের
শরীরের মধ্যে তিন পদার্থ একত্রিত বা সন্নিকটস্থ হওয়ায় আত্মা শুদ্ধি বা যোগের
মাধ্যমেই উপাসনা সম্ভব। গীতার ৯।১১ ও ৭।২৪
শ্লোকে মূর্তিপূজকদের মূঢ় (মূর্খ) বলে ধিক্কার করা হয়েছে। যা ব্রহ্ম হতে
ভিন্ন সূর্য-অগ্নি আদি জড় পদার্থ আছে, তাদের উপাসনা করো না (কেনোপনিষদ্ ১।৬)। "এই
মূর্ত্তি পূজা আমাদের সকল শাস্ত্রেই অধমাধম বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে"-(স্বামী বিবেকানন্দ বাণী ও রচনা খণ্ড ৫, "সব প্রতিমা
ভেঙ্গে ফেল"-ঐ বাণী ও রচনা খণ্ড ৭) ॥
প্রশ্নঃ পরমেশ্বরের
স্তুতি,
প্রার্থনা এবং উপাসনা করা সঙ্গত কিনা ? এ
সকলের অর্থ কি ?
উত্তরঃ সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরেরই
উপাসনা করা উচিত। গুনগান, গুণকীর্ত্তন এবং গুণশ্রবনের নাম স্তুতি।
স্তুতি দ্বারা ঈশ্বরপ্রীতি জন্মে, তাঁর গুণ-কর্ম-স্বভাব
দ্বারা নিজ গুণ-কর্ম-স্বভাবের সংশোধন হয়। যে জ্ঞান-বিজ্ঞানাদি নিজের শক্তির অতীত,
কিন্তু ঈশ্বরের সাথে যোগবশতঃ প্রাপ্ত হওয়া যায়, ঈশ্বরের কাছে তা যাজ্ঞা করাকে প্রার্থনা বলে। প্রার্থনা দ্বারা নিরভিমানতা,
উৎসাহ ও সাহায্য লাভ হয়। ঈশ্বরের গুণ-কর্ম-স্বভাবের মতো নিজের
গুণ-কর্ম-স্বভাব পবিত্র করা এবং ঈশ্বর সর্বব্যাপক, আমি তাঁর
নিকটে এবং তিনি আমার নিকটে আছেন, এইরূপ জ্ঞান সহকারে
যোগাভ্যাস দ্বারা ঈশ্বর সাক্ষাৎকার করার নাম উপাসনা। উপাসনা দ্বারা পরম ব্রহ্মের
সাথে মিলন ঘটে এবং তাঁহার সাক্ষাৎকার লাভ ও জ্ঞানোন্নতি হয় (তথ্য
সূত্রঃ মহর্ষি দয়ানন্দকৃত “সত্যার্থ প্রকাশ”-গ্রন্থ)। পরমেশ্বর সকল জীবের
নিপেক্ষ কর্মফলদাতা (সাখ্য০ ৫।২)॥
প্রশ্নঃ জীবাত্মা, পরমাত্মা
[ব্রহ্ম] ও প্রকৃতির মধ্যে কি বিভেদ রয়েছে ?
সকাম কর্ম ও নিষ্কাম কর্ম কি ?
উত্তরঃ পরমাত্মা, জীবাত্মা
ও প্রকৃতি তিন পদার্থ পারমার্থিক নিত্য, অনাদি তত্ত্ব
(শ্বে০উ০ ৪।৫)। যাঁর কোন আদিকারণ বা কাল
নেই, তাঁকে অনাদি বলা হয়। জীবাত্মা একদেশী, অল্পজ্ঞ,
অল্প সামর্থ্য বিশিষ্ট (সাখ্য০ ১।৯৭)। পরমাত্মা
সর্বব্যাপক,
সর্বশক্তিমান (ঋগ্বেদ ২।৪৩।২), সর্বজ্ঞ, সর্বান্তর্যামী , সচ্চিদানন্দস্বরূপ
আর প্রকৃতি জড় এবং চেতনতত্ত্ব ব্যাতিত স্বয়ং কাজ করতে অক্ষম। পরমেশ্বর
জগতের নিমিত্ত কারণ, উপাদান কারন নয় এবং প্রকৃতি উপাদান কারন।
অনাদি
জীব অনাদি প্রকৃতি ভোগ বশতঃ আসক্ত হয়, কিন্তু পরমাত্মা তা ভোগও করেন না এবং এতে
আসক্তও হয়েন না । ঈশ্বর সকল পদার্থের
মধ্যে ও বাইরে ওতপ্রোত ভাবে ব্যাপক (সাখ্য০ ১।৯২)। এই সম্পূর্ণ সৃষ্টির নানা
ক্রিয়াগুলো সেই ব্রহ্মের প্রশাসন দ্বারাই সম্পন্ন হয় (ব্রহ্মসূত্র০
১।৩।১১)। প্রকৃতি ও পুরুষ অতি সূক্ষ্মের কারনে প্রত্যক্ষ হয়
না (সাখ্য০১।১০৯)। সাংসারিক কর্ম সকাম
কর্ম। পরোপকার ভাবনা যুক্ত কর্ম, মোক্ষ প্রাপ্তি নিমিত্ত কর্ম নিষ্কাম
কর্ম॥
প্রশ্নঃ পরমাত্মা বা পরমেশ্বরের
অসংখ্য নামের মধ্যে মূখ্য নাম কি ? পরমাত্মা এক না অনেক রয়েছেন ?
উত্তরঃ ওঙ্কার শব্দ পরমেশ্বরের সর্ব্বোত্তম ও নিজ নাম (যজু০ ৪০।১৭)। ব্রহ্মা, বিষ্ণু,
শিব, গনেশ, লক্ষ্মী আদি
পরমেশ্বরের গুণগত ও কর্মগত নাম। উদাঃ পরমেশ্বর সমস্ত জগৎ সৃষ্টি করেছেন বলে
"ব্রহ্মা", সর্ব্বত্র ব্যাপক বলে
"বিষ্ণু" কল্যাণকারী বলে পরমেশ্বরের নাম "শিব"। যখন পরমেশ্বরের
বিশেষণ হয় তখন "দেব" আর যখন স্ত্রীলিঙ্গে (চিতির) বিশেষণ হয় তখন
"দেবী", পরমেশ্বরের নাম তিন লিঙ্গেই রয়েছে।
পরমাত্মা
এক, তিনি ছাড়া কেউ দ্বিতীয় বা ততোধিক ঈশ্বর হয় না (অথর্ব০
১৩।৪।১৬-১৮)॥
প্রশ্নঃ ঈশ্বরে কি অবতার
সম্ভব ?
অর্থাৎ ঈশ্বর কি মনুষ্যরূপে জন্মগ্রহণ করেন ? তিনি
কি স্বেচ্ছায় স্বয়ং স্বীয় শরীর নির্ম্মাণ করেন ?
উত্তরঃ না, ঈশ্বর বিভু ও সর্বশক্তিমান হওয়ায় ঈশ্বরে
অবতার সিদ্ধ হয় না। শরীরধারী জীব ব্রহ্ম নয় (ব্রহ্মসূত্র ১।২।৩)।
অবতার
অর্থাৎ এক স্থান হতে অবতরণ হওয়া বা নামা বোঝায়, তিনি তো আকাশবৎ সর্বব্যাপক চেতন
সত্ত্বা। যদি এক স্থান থেকে অন্যত্র আসেন সিদ্ধ হয়, তবে তিনি
পরমেশ্বর হবেন না এতে তাঁর সর্বব্যাপকত্ব ধর্ম নষ্ট হবে। জীবাত্মা সর্বশক্তিমান না
হওয়ায় কর্মানুসারে শরীর ধারণ করেন (সাখ্য০ ৩।৩)।
প্রকৃতি
ও জীবের গুণ-কর্ম-স্বভাব হতে পরমাত্মা পৃথক (সাংখ্য০ ১।১৬০)।
মনুষ্যগর্ভে
ঈশ্বর শরীর ধারন করেন না (যজু০৫।৩৩)। পরমেশ্বর স্বয়ম্ভূঃ, নাড়ি
আদির বন্ধনরহিত (যজু০ ৪০।৮)। নির্মিত পদার্থ
সংযোগ হতে উৎপন্ন হয়, এবং তাঁর নিরাকার ও চেতন সংযোগকর্তা অবশ্য কেউ থাকবে।
শরীর নির্মানের পূর্বে অবশ্যয় তিনি নিরাকার ছিলেন প্রমাণ হয়। তিনি নিরাকার,
এইজন্য সমগ্র জগৎকে সূক্ষ্ম কারণ হতে স্থুলকার করে নির্মাণ করেছেন।
স্থূল
শরীর প্রাপ্ত হলেই ত্রিবিধ দুঃখের অধীন হতে হয় (সাখ্য০ ৩।২৭) যা পরমেশ্বরে সম্ভব
নয়। পরমেশ্বর পরিণামশীল দেহ নিয়ে জন্মায় না।
বিঃদ্রঃ
একান্ন পীঠস্থান স্বার্থান্বেষীদের কল্পিত সৃষ্ট; সতীর দেহ যোগাগ্নিতে প্রজ্জ্বলিত
হয় (ভাগবত৪।৪।১৭) ॥
প্রশ্নঃ পরমেশ্বরে যদি
অবতার সিদ্ধ না হয় তাহলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আদি কে ছিলেন ?
উত্তরঃ চোখের যে সব
বিষয় আছে, যা এর (চোখের) দ্বারা দেখা জানা যায় তথা চোখের দ্বারা দৃষ্ট যে
পদার্থসমূহের উপাসনা করা হয়, তা ব্রহ্মের যথার্থ রূপ নয় (শ্বেতা০ ৪।২০) । যোগীরাজ
শ্রীকৃষ্ণ ঐতিহাসিক মহাপুরুষ ছিলেন সন্মানার্থে ভগবান (ভজনযোগ্য) বলা হয়। বেদে ঈশ্বরকে
"অজ একপাৎ" বলা হয়েছে (যজু০ ৩৪।৫৩) অর্থাৎ
ঈশ্বর কখনও জন্ম নেন না, যিনি অসীম, অনন্ত,
সর্ব্বব্যাপী পরমাত্মা, তাঁর পক্ষে একটি
ক্ষুদ্র গর্ভাশয়ে আসা অসম্ভব। শ্রীকৃষ্ণ জীর চিন্ময়
শরীর ক্ষনস্থায়ী ও তিনি অর্থাৎ অনাদি জীবাত্মা জন্মরহিত তবুও তাঁর বহুজন্ম অতীত
হয়েছে (গীতা ৪।৫-৬) অর্থাৎ শরীর প্রাপ্ত হয়েছেন । ঈশ্বর
বিষয়ে তিনি বলেছেন "ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি" (গীতা
১৮।৬১) । শ্রীকৃষ্ণ জী
বেদবিজ্ঞান-বলসম্পন্ন (মহা০সভাপর্ব ১৯।২০), তাঁর কি যোগৈশ্চর্য্য, শৌর্য্য-বীর্য্য, সমাজনীতি, সমরনীতি
এবং রাষ্ট্রনীতির কূট কৌশল, কি গার্হস্থ-নীতির মহত্তম আচরণ;
তাই সকলের নিজ আচরণে ধারন করার প্রয়াস করা আবশ্যক।
ঈশ্বরে
অবতার সিদ্ধ হয় না (যজু০ ৩২।৩, ৪০।৮)। সংস্কার মুক্ত
মন নিয়ে পারস্পর্যক্রমে বিচার করে দেখবেন এই অবতারবাদের মূলে কতখানি অজ্ঞতা, কুৎসিৎ
স্বার্থবোধ আর অন্ধ বিশ্বাস আছে॥
প্রশ্নঃ ঈশ্বর
সর্বশক্তিমান ! হওয়ায় তিনি কেন শরীরধারী হবেন না ? তিনি
ইন্দ্রিয় রহিত হওয়ায় কাজ কিরূপে করতে পারেন ?
উত্তরঃ সর্বশক্তিমান হওয়ার কারনে পরমেশ্বর যদি সাকার ও
নিরাকার দুই হয়ে থাকেন! তাহলে তিনি কি আত্মহত্যা করতে পারবেন? তিনি কি বহু ঈশ্বর সৃষ্টি করতে পারবেন
? পরমেশ্বর কি চুরি ও ব্যভিচারাদি পাপকর্ম করে দুঃখী বা মূর্খ
হতে পারেন ? ঈশ্বর সর্বশক্তিমান শব্দের অর্থ তিনি স্বকার্য্য
সাধনের জন্য অন্যের সহায়তা গ্রহণ করেন না, তিনি নিজ সামর্থ্য
দ্বারা স্বকার্য্য সম্পন্ন করেন (মুণ্ড০উ০ ২।১।২)। পরমেশ্বরের
ভৌতিক ইন্দ্রিয় গোলক ও হস্ত-পদাদি অবয়ব নাই। তাঁর হস্ত নাই, কিন্তু
তিনি নিজ শক্তিরূপ হস্ত দ্বারা সমস্ত রচনা এবং গ্রহণ করেন। তাঁর চরণ নাই, কিন্তু তিনি ব্যাপক (যজুর্বেদ ৩২।৮) বলে সর্বপেক্ষা অধিক বেগবান। তাঁর চক্ষুগোলক নাই, কিন্তু
সমস্ত যথাযথরূপে দেখেন। শোত্র নাই, তথাপি তিনি সকলের কথা
শ্রবণ করেন। তাঁর অন্তঃকরণ নাই, কিন্তু তিনি সমস্ত জগৎকে
জানেন (শ্বেতা০ ৩।১৯, ৬।৮)॥
প্রশ্নঃ স্তুতি প্রভৃতি
করলে কি ঈশ্বর নিজ নিয়ম ভঙ্গ করে স্তুতি-প্রার্থনাকারীর পাপমোচন করে থাকেন ?
উত্তরঃ না, অবশ্যমেব ভোক্তব্যং কৃতং কর্ম শুভাশুভম্।
শুভাশুভ
কর্মের ফল তো প্রাপ্ত করিতেই হইবে (অথর্ব০৪।১৯।১৬)।
পরমেশ্বর
ভগবান জীবের পাপ অথবা পুণ্য কিছুই গ্রহণ করেন না; অজ্ঞানের দ্বারা প্রকৃত জ্ঞান আবৃত
হওয়ার ফলে জীবসমূহ মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে (গীতা ৫।১৫
অভয়চরণারবিন্দ ভাষ্য)। পাষাণাদি মূর্ত্তির পূজা
সর্বথা পরিত্যাগ করে মাতাপিতা প্রভৃতি মূর্ত্তিমান দেবতাদের সেবা কল্যাণজনক ॥
প্রশ্নঃ
"হরেকৃষ্ণ" কি মহামন্ত্র ? এটা উচ্চারণ করে কি ঈশ্বরের উপাসনা
হয় ? "হরিনাম" কি ঈশ্বরের স্তুতি করা ?
উত্তরঃ ঋষিদের ভাষায় মন্ত্র বলতে যা দ্বারা বিশ্বের
সমস্ত বিষয়ে জ্ঞানলাভ হয় আর সংসার বন্ধন হতে মুক্ত হওয়া যায়। মন্ত্র বলতে আরও
বোঝায়-বিচার-যুক্তি-উপায়, বেদের সংহিতা অংশ মন্ত্র বা ছন্দ।
গায়ত্রীমন্ত্র
কে মহামন্ত্র বলা যায়। "হরেকৃষ্ণ" বা "টরেকৃষ্ণ" জপের মাধ্যমে
বৃথা পাপক্ষয়ের প্রচেষ্টা, এর দ্বারা স্তুতি ও উপাসনা হয় না (তথ্যসূত্রঃ “আলোকতীর্থ” পুস্তক)।
বর্ণাত্বক
নাম "কৃষ্ণ-কৃষ্ণ", কালী-কালী, রাম রাম,
জপ বৃথা। শ্রীকৃষ্ণজী ব্রহ্ম-মুহূর্তে অগ্নিহোত্র
করেই পরমেশ্বরের উপাসনা করতেন (মহাভারত উদ্যোগপর্ব ৯৪।৬,
শ্রীমদ্ভাগবত ১০,৭০) । তিনি
গীতায় (৮।১৩) ওম্ এই ব্রহ্মরূপ একাক্ষর উচ্চারণের নির্দেশ
করেছেন। গীতায় বলা হয়েছে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যেভাবে আচরণ করেন, সাধারণ
মানুষেরা তার অনুকরণ করেন (গীতা০ ৩।২১), তাই করা
যুক্তিযুক্ত। গীতায় যোগীরাজ
শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছেন তার উদ্দেশ্য ছিল ক্লৈব্যগ্রস্ত অর্জুনকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করা
(গীতা ২।৩)। অর্থাৎ ঘরে বসে মালা
জপতে বা খোল করতাল নিয়ে নাচানাচি করে হরিকৃষ্ণ কীর্তন করার জন্য তিনি কাউকে উপদেশ
করেননি। নাম কীর্তন অর্থাৎ গুণীর গুণকীর্তন করা তাঁর নাম লক্ষবার উচ্চারণ
নয়। "হরের্নাম" বলতে হরির নাম কীর্তন
'হরি' এই বর্ণাত্বক কথাটা নয়।
"হরেকৃষ্ণ" শব্দে সন্বোধন করাও উচিৎ নয়।
"নমস্তে" শব্দ প্রয়োগ দ্বারা সন্বোধন উচিত; উদাঃ গীতা ১১।৩৯, অথর্ব০ ১১।২।১৫ ॥
প্রশ্নঃ শ্রীকৃষ্ণ ও
রাধা জী কি এক না অলাদা ?
উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণের জীবনকে কলুষিত করার জন্য কাল্পনীক রাধা
চরিত্র সৃষ্টি করা হয়েছে। এক এক সম্প্রদায় তাদের সম্প্রদায় সিদ্ধির এবং মত-পথ
স্থাপনের জন্য,
বেদ উপনিষদের ও ঋষিদের নাম দিয়ে অনেক অলীক কল্পীত গ্রন্থ রাচনা
করেছেন (আলোক-তীর্থ, পৃ০১৮০) । মহাভারতের
সভাপর্বে শ্রীকৃষ্ণ জীকে সত্য ধর্ম্মন্যায়পরায়ণ বলা হয়েছে। বৈষ্ণবপ্রাণ
ভাগবতে, বিষ্ণুপুরাণে, এমনকি মহাভারতের কোথাও রাধার নাম নাই।
গীতার মধ্যেও রাধার নাম নেই (উদাঃ গীতা ১০।৩৪)।
যে পুরাণে রাধার নাম রয়েছে সেখানে শ্রীকৃষ্ণ-রাধার নানা সম্পর্ক লেখা রয়েছে যেমন
বল্লভাচার্যকৃত ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, ব্রহ্মখণ্ডে রাধাকে শ্রীকৃষ্ণের কন্যা বলা
হয়েছে (৫।২৫-২৬), ঐ পুরাণের
প্রকৃতিখণ্ডে রাধা শ্রীকৃষ্ণের মামী রয়েছে (৪৯।৩৯, ৪২)। শৈশবেই শ্রীকৃষ্ণ শেষ বারের
মত বৈষ্ণব কল্পিত বৃন্দাবন ত্যাগ করেছিলেন অতঃ রাসলীলাদির মত ব্যভিচার মিথ্যা, মহর্ষি
দয়ানন্দ সরস্বতী তাঁর অমরসৃষ্টি "সত্যার্থপ্রকাশ" গ্রন্থে মহাভারত
অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ জী কে আপ্তপুরুষ সাদৃশ্য বলেছেন। ব্রহ্মতর জীব
সৃষ্টিকর্ত্তা নয় (ব্রহ্মসূত্র ১।১।১৬) অতঃ মহাযোগৈশ্বর্য্যশালী ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ
কে ঈশ্বর-অবতার প্রমাণ করার চেষ্টা ছলনা মাত্র ! (পুস্তকঃ আলোক তীর্থ) ॥
প্রশ্নঃ বেদ কি ? স্ত্রী
এবং শূদ্রদের কি বেদ পাঠে অধিকার নেই ?
উত্তরঃ পরমাত্মা প্রকাশিত মন্ত্র সংহিতার নাম বেদ। বেদ
মন্ত্রভাগ এবং ব্রাহ্মণ ব্যাখ্যাভাগ (নি০৫।৩।৪, অষ্টাধ্যায়ী ৪।২।৬৬)।
বেদ
মহাজাগতিক;
সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ক ধর্ম্ম গ্রন্থ (যজু০
২৩।৫৯-৬০)। বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান অর্থাৎ
সব সত্যবিদ্যার পুস্তক। বেদ ছন্দের রূপ (গোপথ ব্রাহ্মণ ১।৩২) , বেদে
কোন রূঢ় অথবা রূঢ়ি শব্দ নেই। বেদ নিত্য হওয়ায় কোন মনুষ্য আদির ইতিহাস নেই, বেদে "কৃষ্ণ", "রাধা" শব্দ বাস্তবে
"কৃষ্ণ" অন্ধকার, কালো রাত্রি বা আকর্ষণ অর্থে
প্রয়োগ হয়েছে, এবং "রাধা" ধন বা ঐশ্বর্য অর্থে
ব্যবহৃত হয়েছে (নিরুক্ত ৮।৮) উদাঃ
যজুর্বেদ ২৫।১ নং মন্ত্র দ্রষ্টব্য। বেদ বিরুদ্ধ শাস্ত্র
অপ্রামানিক (বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ১২।৯৫)। বেদ সর্ব্বজ্ঞ ঈশ্বর
কর্তৃক উপদিষ্ট;
অতএব বেদই ধর্ম্মসম্বন্ধে মুখ্য প্রমাণ (বৈ০দ০
১।১।৩)॥ সমস্ত স্ত্রী এবং পুরুষের অর্থাৎ মনুষ্য মাত্রেরই বেদ
পড়বার অধিকার আছে (যজুর্বেদ ২৬।২, অথর্ববেদ ১১।২৪।৩,
মনু০ ৭।১৫২)॥
প্রশ্নঃ বেদে কি পশু
হত্যা বা বলির নির্দেশ রয়েছে ? পুরুষোত্তম শ্রী রামচন্দ্র জী কি মাংসাহার
করতেন ?
উত্তরঃ বেদে পশুসমূহকে রক্ষা করতে বলা হয়েছে (যজুঃ
৬।১১)। এবং বেদের কোথাও বলির নির্দেশ নেই, যজমানদের
পশু রক্ষা করতে নির্দেশ করা হয়েছে (যজু০১।১)। ধর্মোপদেষ্টা
ভগবান্ মনু মাংসাহারের সাথে যুক্ত ক্রয়-বিক্রয় সহঃ আঠজনকেই ঘোর-পাপী বলেছেন
(মনুস্মৃতি ৫।৫১)। প্রাণীদের হিংসা না করে মাংস কখনও প্রাপ্ত হয় না আর জীবের
হত্যা করা সুখদায়ক নয়। এই কারণে মাংস খাওয়া উচিত নয় (তথ্যঃ মনুস্মৃতি ৫।৪৮)।
মাংস মনুষ্যের ভোজন নয়। বেদে ‘মাম্সম্’
পদের অর্থ প্রাণীদের মাংস কখনও হয় না (সূত্রঃ "বেদ-বিজ্ঞান
আলোক"-গ্রন্থ )। সংস্কৃতে “মাশ”
শব্দের অর্থ উচ্চ প্রটিন যুক্ত উরদ বা মাসকালাই ডালও হয়।
বেদ
পক্ষপাতরহিত হয়ে সমস্ত জীব দেহধারী মাত্রই পরস্পর অত্যন্ত প্রীতি সহকারে থাকতে
বলেছেন (যজু০ ৩৬।১৮)। "মা
স্ত্রেত" (ঋগ্বেদ ৭|৩২|৯) হিংসা
করো না॥ ধর্মাত্মা (অযো০১১১।২৭) রামচন্দ্র
জী মাংসাহার করতেন না (তথ্যঃ অযো০২০।১৮,২৯,৩১), তিনি সমস্ত প্রাণীদের, নিজের
চরিত্রের এবং নিজ ধর্মের রক্ষক (বাল্মীকী রামায়ণ ৩৫।১)।
বালকাণ্ডের প্রথম সর্গেই পুরুষোত্তম রাম বিষয়ে বলা হয়েছে তিনি সকল প্রাণীর ও
ধর্মের সংরক্ষক ছিলেন। রামায়ণে রামজীকে আর্যপুত্র (অরণ্য০ ৪৩।১০) বলে সন্বোধন
করা হয়েছে। অযোধ্যা হিংসা হতে পূর্ণ
মুক্ত ছিল (অযো০ ১০০ সর্গ, শ্লোক ৪৪)। * রামায়ণে
প্রক্ষিপ্ত রয়েছে (বঙ্গভাষা ও সাহিত্য)॥
প্রশ্নঃ তেত্রিশ কোটি
[প্রকার] দেবতা কি কি ? স্বর্গ ও নরক কোথায় ?
উত্তরঃ পৃথিবী সূর্যলোকাদি দেব (ঋগ্বেদ
১।১৬৪।৩৯)। তেত্রিশ দেব অর্থাৎ ৮ বসু, ১১ রুদ্র,
১২ আদিত্য, ইন্দ্র ও প্রজাপতি।
এই সমস্ত কিছু দিব্য গুণযুক্ত থাকায় তেত্রিশকোটি দেব (নিরুক্ত ৭।১৫) বলা হয় (শতপথ ব্রাহ্মণ
চতুর্দ্দশ কান্ড)। পরমেশ্বর ত্রিকালাবাধ্য
তিনি পৃথিবী ও যাবতীয় লোক ধারণ করে আছেন (ঋ০১০।৮৫।১)। স্বর্গ-নরক কোন স্থান
বিশেষের নাম নয়, সুখ অবস্থার নাম স্বর্গ আর দুঃখ বিশেষ অবস্থার
নাম নরক॥
প্রশ্নঃ মূর্ত্তিপূজা
কোথা হতে প্রচলিত হয়েছে ?
উত্তরঃ নিজেদের মূর্খতা হতে জৈনদের দ্বারা পাষাণাদি
মূর্ত্তির পূজা প্রচলিত হয়েছে। খৃঃপূঃ ২য় শতাব্দীর শেষ
পর্য্যন্ত আর্য্যাবর্ত্তবাসিগণের মধ্যে মূর্ত্তি পূজো ছিলো না। বুদ্ধদেবের
দেহান্তে বৌদ্ধ ভিক্ষু-ভিক্ষুণীদের মধ্যে ব্যাভিচারের কারণে বৌদ্ধ তান্ত্রিক
উৎপত্তি হয় তার থকেই বামমার্গী গ্রন্থের মাধ্যমে যোনি-লিঙ্গ পূজা
আদি ও সর্ববনাশা তন্ত্রমতের প্রচলন হয়। পরে পরে শৈব, শাক্ত,
বৈষ্ণবাদি সম্প্রদায়ের বেদশ্রুতি বহির্ভূত জড় মূর্ত্তি পূজা (শীতলা,
কালী, মনসা ইত্যাদি) এবং 'অপ্রাকৃত' লীলায় প্রকৃত ধর্ম্মতত্ত্ব রসাতলে যেতে
বসেছে। রাজা ভোজের দেড়শত বৎসর পরে বৈষ্ণব মতের সূত্রপাত হয়
(তথ্যঃ সত্যার্থ প্রকাশ)। যারা ব্রহ্মের স্থানে
অসম্ভূতি অর্থাৎ অনাদি প্রকৃতিরূপ কারণের উপাসনা করে, তারা
অন্ধকার অর্থাৎ অজ্ঞানতা এবং দুঃখসাগরে নিমগ্ন হয় (যজু০ ৪০।৯)।
পরমাত্মাই
আমাদের উপাস্য, মূর্তিগড়ে নানরকম ছং ভং সহ পুতুল খেলা মুক্তিলাভের দুরাশা মাত্র॥
প্রশ্নঃ পাষণ্ডীর লক্ষন
কি ?
অবিদ্যা কি ? নাস্তিক কারা ?
উত্তরঃ ধর্মানুষ্ঠান না করা প্রতারক, সর্বদা
লোভযুক্ত, কপটী, যে প্রাণিঘাতক এবং
অপরের প্রতি বৈরবুদ্ধিকারক ধূর্ত্ত। মিথ্যা কথা হলেও নিজের আগ্রহ কখন ত্যাগ করে না
এবং সাধুতাপ্রদর্শকারী লক্ষণ বিশিষ্ট পাখণ্ডী (মনু০৪। ১৯৫,
১৯৬)। বৈদিক শাস্ত্র মতে
যে ভ্রান্ত,
স্বয়ং না জেনেও অপরের কথা গ্রাহ্য করেনা, কুতর্কী
বেদবিরূদ্ধ আচরণকারী নাস্তিক (মনু০২।১১) তার সৎকার করা উচিৎ নয় (মনু০ ৪।৩০)॥
অনিত্য
বস্তুতে নিত্যজ্ঞান, অশুদ্ধিতে শুচি জ্ঞান, দুঃখে সুখ
জ্ঞান, অনাত্মায় (জড় পদার্থে) আত্মজ্ঞান কে অবিদ্যা বলা হয়;
অর্থাৎ যে বস্তু যা নয়, তাকে সেইরূপে জানাই
হলো অবিদ্যা (পাতঞ্জলসূত্র ২।৪)। মনুষ্য মাত্রকে
সত্য গ্রহণে ও অসত্য পরিত্যাগে সদা উদ্যত থাকা উচিৎ (মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)॥
ওম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ
Vaidic Mission ॥
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ