মূর্তি পূজা শাস্ত্রার্থ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

18 February, 2024

মূর্তি পূজা শাস্ত্রার্থ

 

মূর্তি পূজা শাস্ত্রার্থ

🍁 শাস্ত্রার্থ আরম্ভ 🍁
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
সজ্জনগণ! আজকের বিষয় হল মূর্তি পূজা। মূর্তি পূজার ফলে যা-যা হানি হয় সেই সব পেশ করছি, আশা করি পণ্ডিত জী জবাব দেওয়ার কৃপা করবেন। মূর্তি পূজার ফলে সবথেকে বড় হানি হল সেটা আমাদের পরমেশ্বর থেকে নির্ভীক করিয়ে পাপ করা শেখায়, যেমন পুরাণের মধ্যে বর্ণনা আছে যে একবার এক শিব পূজক মরে যায়, সে ছিল পাপী তো তাকে ধরার জন্য এইদিক থেকে যমদূত আসে আবার ওইদিক থেকে শিবদূত আসে, উভয়ের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। অবশেষে শিবদূতের বিজয় হয়, সে আদেশ দেয় যে - "যারা ত্রিপুণ্ড ভস্ম আর রুদ্রাক্ষ ধারণ করবে তাহলে সে যতই পাপী হোক না কেন তুমি তাকে ধরবে না।" এখন ভাবুন, যদি কেউ সরকারি পোশাক পরে কোনো ভালো মানুষকে হত্যা করে তাহলে সরকার তাকে কখনো ক্ষমা করবে না, কিন্তু পুরাণের এই কথন শিবপূজককে পাপ করার জন্য খোলা আজ্ঞা দিয়ে দিচ্ছে, প্রশ্ন হল - ন্যায়কারী সর্বশক্তিমান পরমাত্মার বিষয়ে কি এটা সম্ভব হতে পারে? আরও শুনুন, একটা ভিখারী চাণ্ডাল কন্যা একদিন ভিক্ষে না পাওয়ার কারণে বিবশ হয়ে না খেয়ে থাকে। ভিক্ষে চাওয়াতে কোনো এক মানুষ উপহাস করে তার হাতে একটা বেল পত্র দেয়, তো সেই কন্যা সেটা ছিড়ে ফেলে দেয় আর ভাগ্যক্রমে সেই বেল পত্রটা নিকটস্থ শিবলিঙ্গের উপরে গিয়ে পড়ে। ক্ষুধাতুর হওয়ার কারণে সে সারারাত ঘুমোতে পারেনি, যেদিন এই ঘটনাটা ঘটে ভাগ্যক্রমে সেই দিনটা শিবরাত্রি ছিল, ব্যস! তারপর আর কি! এটা অসহায় হয়ে ক্ষুধার্ত থাকাকে তার উপবাস ধরা হয়েছে, তথা আবর্জনার মতো বিরক্তিকরভাবে ফেলে দেওয়া বেল পত্র পূজন হয়ে গেছে, আর খিদে আর শীতের কারণে রাতে ঘুম না আসা, জাগরণ হয়ে গেছে, আর সেই ভিক্ষারিন এই পুণ্যের কারণে সোজা শিবলোকে চলে গেছে। এরপর শুনুন, এইরকমই কথন শ্রীমদ্ভাগবতের মধ্যে "অজামিল পাপী"র লেখা আছে। সে জন্ম থেকে মাতাল, জুয়ারী, ব্যভিচারী ছিল কিন্তু অন্তিমে মরার সময় নিজের ছেলে নারায়ণকে একবার মাত্র ডাকার জন্য ভগবান্ নারায়ণ প্রসন্ন হয়ে যান আর তিনি তার সব পাপ ক্ষমা করে বৈকুণ্ঠে নিয়ে চলে যান। পদ্ম পুরাণ উ০ অ০ ২৭২ এরমধ্যে কথন আছে যে - যখন রামচন্দ্র জীর রাজ্যাভিষেক হয় তখন অনেক মুনি তাঁর সুন্দর রূপ দেখে মোহিত হয়ে যায় আর রামচন্দ্র জীর কাছে প্রার্থনা করে যে আপনি আমাদের সঙ্গে সঙ্গ করুন, এর উত্তরে তিনি বলেন যে এই অবতারে আমি এমনটা করতে পারবো না। তবে হ্যাঁ! দ্বাপর যুগে তোমরা গোপী হবে আর আমি কৃষ্ণ হয়ে তোমাদের ইচ্ছা পূরণ করবো, আর সেইরকমই করা হয়। শ্রীমদ্ভাগবতের মধ্যে স্পষ্ট লেখা আছে যে কাম দ্বারা বা ক্রোধ দ্বারা যারা ভগবানকে স্মরণ করে, তারও কল্যাণ হয়, যেমনটা কামাসক্ত গোপীদের আর ক্রোধী শিশুপালের হয়েছিল। এখন বলুন পণ্ডিত জী! আপনার ওখানে যখন এই ধরণের শিক্ষা বিদ্যমান আছে, তাহলে কেউ কিভাবে নিজের সদাচার পালন করতে পারবে? (জনতার মধ্যে নিস্তব্ধতা)
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
সজ্জনগণ! আপনারা সবাই জানেন যে আজকের শাস্ত্রার্থের বিষয় হল মূর্তিপূজা। কিন্তু আমার সামনে আমার প্রতিপক্ষী কি ব্যাখ্যা করছেন সেটা আপনারা শুনলেন। মহাশয় জী! আজকের বিষয়টা হল মূর্তিপূজা। যারমধ্যে আর্য সমাজকে বেদের প্রমাণ দ্বারা এটা সিদ্ধ করা উচিত যে - "ঈশ্বরের মূর্তি হতে পারে না অথবা বেদের মধ্যে মূর্তিপূজা না করার আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।" কিন্তু আমার প্রতিপক্ষী যতগুলো প্রশ্ন করেছেন তারসঙ্গে মূর্তিপূজার দূর-দূর পর্যন্ত কোনো সম্বন্ধ নেই। কারণ আপনি পুরাণের কিছু কথন নিজের মন মতো ঢংয়ে শুনিয়ে কেবল এটা সিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন যে মূর্তিপূজার ফলে অমুক-অমুক হানি হয়। মহাশয় জী! যদি পুরাণের শাস্ত্রার্থে এই প্রশ্ন উপস্থিত করতেন তাহলে উচিত হতো। গতকাল আমি আর্য সমাজের এমন সব প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেই দিয়েছি, যেগুলোকে আপনি হাওয়াতে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। যদি এই প্রশ্নেরও ইচ্ছা বাকি ছিল তো গতকাল বা তার আগের দিন ইচ্ছে মতো পুরাণের উপর শাস্ত্রার্থ করতে পারতেন, অথবা আজই যদি সভা অধ্যক্ষ আজ্ঞা করেন আর মহাশয় জী মূর্তিপূজার বিষয়ে শাস্ত্রার্থ করা নিজের অসক্ষমতা প্রকট করেন তাহলে আমি প্রসন্নতাপূর্বক এইসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। কিন্তু মূর্তিপূজার বিষয় জারি রেখে এই ধরণের প্রশ্ন করা সরাসরি বিষয়ান্তরে যাওয়া হবে। যদি আজ কোনো বিদ্বান শাস্ত্রার্থের মধ্যস্থ হতো তাহলে তিনি মহাশয় জীর প্রশ্ন শোনামাত্র বিষয়ান্তর দোষের কারণে আর্য সমাজের পরাজয় ঘোষণা করে দিতেন। অস্তু, আমি জনতার ধ্যান এইদিকে আকৃষ্ট করার পর এখন মহাশয় জীর প্রশ্নের উত্তর দিবো, যদিও বিষয়ে থেকে মহাশয় জীর বিষয়ান্তরস্থ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার উপর কোনো উত্তরদায়িত্ব নেই তথাপি কিছু অপঠিত ব্যক্তি কিংবা স্বয়ং মহাশয় বুদ্ধদেব জীকেও নিজের নিস্সার প্রশ্নের ভারী হওয়ার গর্ভ যেন বাকি না থাকে এইজন্য এই প্রচেষ্টা, শুনুন - মহাশয় জী মূর্তিপূজার উপর প্রথম আক্ষেপ করেছেন যে মূর্তিপূজার ফলে ঈশ্বর থেকে ভয় চলে যায় আর নির্ভীক হয়ে পাপ কর্ম করতে থাকে। উদাহরণে আপনি চারটা কথন পেশ করেছেন, আপনার এই দাবি একদম মিথ্যা। কারণ উদাহরণের আধারে আপনি আপনার পক্ষের পুষ্টি করতে চান, উল্টো সেই উদাহরণ আপনার পক্ষকে ফেলে দেয়। জনতা ভালো করে জানে যে বেদাদি শাস্ত্রের মধ্যে রোচক, ভয়ানক আর যথার্থ এই তিন প্রকারের বচন পাওয়া যায়। এইসব কথনও রচক প্রণালীর অনুসারে মানুষকে ঈশ্বরের ভক্ত হওয়ার জন্য প্রেরিত করে, তো সেটা কিভাবে? এইসব কথন দ্বারা এটা দর্শানো হয়েছে যে যদি ভুলবশত ঈশ্বর ভক্তির এই ফল প্রাপ্ত হয় তাহলে সত্য নিষ্ঠার সঙ্গে সেই পরম পিতা পরমাত্মার ভক্তি যদি করা হয় তাহলে অবশ্যই উদ্ধার হবে। পুরাণকে বোঝার জন্য বুদ্ধির আবশ্যকতা আছে! তারমধ্যে অলঙ্কার রূপে সমস্ত বিদ্যা বিদ্যমান আছে।
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
মূর্তিপূজার ফলে বিশেষ করে এই হানি হয় যে সেটা আমাদের আসল পরমাত্মার উপাসনা থেকে সরিয়ে জড় বস্তুর উপাসক বানিয়ে দেয়, যা করার ফলে আমরা গভীর অন্ধকারে পড়ে যাই। দেখুন বেদের মধ্যে কি বলা হয়েছে - "অন্ধম্তমঃ প্রবিশন্তি য়েऽসম্ ভূতিমুপাসতে" অর্থাৎ যারা জড় প্রবৃত্তি থেকে তৈরী পদার্থের উপাসনা করে তারা গভীর অন্ধকারের গর্তে পড়ে যায়। এইজন্যই বিদেশিরা আমাদের উপহাস করে যে - দেখো যে পরমাত্মা সমস্ত সংসারটা বানিয়েছে, এই মূর্তিপূজক হিন্দু সেই পরমাত্মাকেও বানানোর হিম্মত করে। (জনতার মধ্যে হাসি)
দ্বিতীয়ত, মূর্তিপূজার মধ্যে যেসব মূর্তির পূজা করা হয়, পুরাণের মধ্যে তাদের আচরণ খুবই ভ্রষ্ট লেখা আছে, এইজন্য উপাস্য দেবতার দুরাচারের প্রভাব উপাসনাকারীর চরিত্রের উপর অবশ্যই পড়বে আর তারাও সেই দেবতার মতো পাখণ্ডি আর দুরাচারী হবে। উদাহরণ অনুসারে শুনুন, দেবতাদের নিয়ে তো কি আর বলবো তার আগে দেবগুরুর কথন শুনুন, বৃহস্পতির ভাবজ অতি সুন্দর ছিল, বৃহস্পতি তার ধর্ষণ করে, সে গর্ভবতী ছিল, ভিতরে বসে থাকা বাচ্চা বলে যে চাচা এমন করো না, এখানে পেটে আর স্থান নেই, এত কিছুর পরেও যখন বৃহস্পতির মন্দ উদ্দেশ্য যায় নি তখন গর্ভস্থ বাচ্চা নিজের পা দিয়ে বাঁধা দেয়, বৃহস্পতি ক্রোধিত হয় আর সেই বাচ্চাকে অন্ধ হওয়ার অভিশাপ দেয়। তদনুসারে "দীর্ঘতমাঃ জন্মান্ধ" জন্ম হয়, এই কথা মহাভারতের আদি পর্বের মধ্যেও বিদ্যমান আছে। আরও শুনুন, যে সূর্যের আপনারা নবগ্রহ পূজন করার সময় মূর্তিপূজা করেন, একটু তারও লীলা শুনুন, সূর্যের ভাগ্নির স্বয়ম্বর হয়, ভাগ্নি নিজের চাচাকেই পছন্দ করে নেয়, সূর্য বললো ভাগ্নির সঙ্গে বিবাহ করা পাপ। তখন ভাগ্নি বললো - ব্রহ্মা নিজের কন্যা আর নাতনীর সঙ্গে, বিষ্ণু নিজের মায়ের সঙ্গে আর শিব জী নিজের বোনের সঙ্গে বিবাহ করেছেন যারফলে তারা শ্রেষ্ঠ হয়ে গেছেন। ব্যস! সূর্যের কাছে এর কোনো জবাব ছিল না, আর দুইজনের বিবাহ হয়ে যায়। বলুন, এইসব মূর্তিপূজার কারণেই তো হয়, যদি আমরা সেই সর্বজ্ঞ নিরাকার পরমপিতা পরমাত্মার পূজা করা আরম্ভ করি তাহলে এইসব দুরাচারী দেবী দেবতাদের ছুট্টি হয়ে যাবে। অন্যথা যতদিন এই কলঙ্ক আমাদের মাথার উপরে থাকবে ততদিন পর্যন্ত কারও উদ্ধার হবে না। যখন এইসব দেবী দেবতা যাদের পূজা করা হয় তারা স্বয়ংই পথভ্রষ্ট হয়েছে তথা সারাজীবন খারাপ কর্ম করে গেছে তাহলে এরা কিভাবে উপাস্য দেব হতে পারে? অথচ বেদের মধ্যে সহস্র প্রমাণ আছে যে সেই পরমপিতা পরমাত্মার কোনো মূর্তি হয় না। এইসব দেশকে বর্বাদ করার দায়িত্ব আপনার মতো ছাপ তিলক কারীরাই নিয়েছে। (সনাতন ধর্ম সমুদায়ের মধ্যে কোলাহল)
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
আপনার দাবি হল, যেসব দেবতাদের পূজা করা হয় পুরাণের মধ্যে তাদের চরিত্র অতীব ভ্রষ্ট লেখা আছে, যারফলে উপাসকও দুরাচারী হয়। যদি আমরা ক্ষণ মাত্রের জন্য এই দাবি সত্য বলে মেনে নিই তাহলে মূর্তিপূজা সিদ্ধান্তের উপর কোনো দোষই আসে না, কারণ আপনি আমাদের অন্য যেসব দেবতার সম্বন্ধে ভ্রষ্ট চরিত্র লেখা নেই তাদের পূজা করুন, যেমন বিশ্বক সৈন, ভগবান্ রামচন্দ্র জী আদি। তেত্রিশ কোটি দেবতার মধ্যে আপনি পাঁচ-দশটাও ঠিক চরিত্রের দেখতে পান নি? যদি দেখে থাকেন তাহলে বাকি গুলোকে ছেড়ে দিয়ে তাদের পূজা আরম্ভ করে দিন। আর যদি তাও না পারেন তাহলে স্বামী দয়ানন্দ জীর সংস্কার বিধির নামকরণ সংস্কার প্রকরণের মধ্যে ২৭ নক্ষত্র আর ১৫ তিথির দেবতা লেখা আছে, তাদেরই উপাসনা করুন। আপনি দুই-তিনটা উদাহরণ দিয়ে দেবী-দেবতার উপর দুর্নীতির ব্যর্থ আরোপ লাগিয়েছেন। যদি আপনি পুরাণকে সঠিকভাবে তার সারসংক্ষেপকে বুঝতেন তো আজ এই দিন দেখতে হতো না। আপনি বলেছেন যে বেদের মধ্যে নিরাকার পরমেশ্বরের বর্ণনা আছে। কোনো এক-দুটো মন্ত্র তো পেশ করুন, কেবল মুখ দিয়ে বলে দিলেই সেটা মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু এতে আপনার কোনো দোষ নেই, কারণ যখন এমন কোনো মন্ত্রই নেই যারদ্বারা পরমেশ্বর নিরাকার সিদ্ধ হবে তাহলে আপনি বলবেন কোথা থেকে? আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
মূর্তিপূজা করার ফলে মানুষের বিচার পঙ্গু হয়ে যায় আর তার মধ্যে পরস্পর নিন্দা করার স্বভাব আসে। শিব পুরাণ, লিঙ্গ পুরাণ তথা শৈব পুরাণের মধ্যে বিষ্ণুর উপাসকদের নিন্দা লেখা আছে, এমন কি যে বৈষ্ণব হয়ে শিবের পূজা করে সে বিষ্ঠার (মল) পোকা হয়। ঠিক এইভাবে ভাগবত আর পদ্ম পুরাণ আদি বৈষ্ণব পুরাণের মধ্যে শিবের উপাসকদের নিন্দা আছে, সেখানে লেখা আছে যে শিবের উপাসক (ভক্ত) নরকে পড়বে, তেমনই অবস্থা অন্যান্য দেবী দেবতার উপাসকদের নিয়ে লেখা আছে। এইরকম স্থিতিতে সমস্ত পুরাণের সমন্বয় করলে পরে সিদ্ধান্ত এটাই স্থির হয় যে - এইসব মূর্তিপূজকরা নরকে যাবে। এইভাবে মূর্তিপূজা করার ফলে আরও অনেক ধরণের হানি আছে যার উল্লেখ পরবর্তীতে করবো। বেদের মধ্যে মূর্তিপূজার নিষেধ স্থানে-স্থানে পাওয়া যায়, আমাদের পূজারী শ্রী মাধবাচার্য জীর বড় অভিযোগ যে বেদের প্রমাণ দেওয়া হয়নি, তো দেখুন - "স পর্য়গাচ্ছুক্রমকায়ম্, অব্রণম্ অসনোবিরম্ শুদ্ধম পাপ বিদ্ধম্" তথা "ন তস্য প্রতিমা অস্তি" অর্থাৎ সেই পরমাত্মার কোনো মূর্তি নেই, সেই পরমাত্মা ছিদ্র রহিত, শরীর রহিত, শুদ্ধ আর পাপ রহিত। এরথেকে স্পষ্ট আর পরিষ্কার কি ধরণের প্রমাণ আপনি চান, এমনকি আপনার মান্য গ্রন্থ তথা পুরাণের মধ্যেও মূর্তি পূজকদের অধর্মী, নরক গামী, গাভীর চারা বহনকারী গাধা আর না জানি কি কি বলা হয়েছে? কিন্তু সেগুলো দেখবে কে? আমার বিশ্বাস যে যদি আপনি নিষ্পক্ষ হয়ে একটা বারের জন্য এইসব গ্রন্থের অধ্যয়ন করেন তাহলে পুরাণের লীলা সেই সময়ই ত্যাগ করে দিবেন।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
সজ্জনগণ! পণ্ডিত জীর এই চতুর্থ আর অন্তিম আক্ষেপ আপনারা শুনলেন। ইনি এরমধ্যে কোনো বুদ্ধিমানের কথা বলেছেন কি? কি উত্তর দিবো? তবুও যেহেতু জিজ্ঞেস করেছেন, জবাব তো দিতেই হবে তাই শুনুন, পুরাণের এই সমস্ত কথা ইনি নিন্দা যুক্ত মনে করেন কিন্তু স্বামী দয়ানন্দ যে নিজের গ্রন্থের মধ্যে ছুরি, পটেলা, ঊখল-মূসল আর উস্তরের পূজা করা লেখা আছে, সেগুলোকে এনার বৈদিক মনে হয়? সেগুলো নিন্দা যুক্ত মনে করেন না, একটু লজ্জা থাকা উচিত...(জনতার মধ্যে কোলাহল) ... মহাশয় জী! মুখে লীপাপোতী করে কাজ চলবে না, আমার কাছে গুরুকুল কাঙরীর স্নাতক পণ্ডিত রামগোপাল বিদ্যালঙ্কারের ভাষা টীকা যেটা তিনি সংস্কার বিধির উপর করেছেন এখানে উপস্থিত আছে, যারমধ্যে উস্তরেকে নমস্কার, ছুরির সামনে মাথা নত করা, আদি-আদি সব বিদ্যমান আছে। জড়োপাসনার আক্ষেপ আমাদের উপর নয় বরং আপনাদের উপর হবে, তা নাহলে এই যে ঋষি দয়ানন্দের চিত্র আছে, এটা আপনাদের কোনো উপাস্য দেব নয়, তো এর উপর জুতা মেরে দেখিয়ে দিন, তাহলে আমি জানবো যে আপনি জড়োপাসনা করেন না।
Note - পণ্ডিত মাধবাচার্য এই উপরোক্ত বাক্য এমন হাব-ভাব আর উগ্র উত্তেজক ভাবে বলেন যে পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী সেটা শুনে অত্যন্ত ক্রোধিত হয়ে যান আর আবেশে এসে বলেন -
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
নিন আমি আপনার সামনে এই কাগজের টুকরোকে জুতা মেরে দিচ্ছি। আমরা জড়ের উপাসক নই, আমরা কেবল চেতন স্বরূপ সেই নিরাকার পরমেশ্বরেরই ধ্যান করি... (বিঘ্ন)
🔴 সভাধ্যক্ষ, শ্রীমান সেঠ হরনাথ জী রাঠী -
আমি এমন অনুচিত কাজ নিজের অধ্যক্ষতার মধ্যে তথা নিজের সামনে হতে দিবো না, স্বামী দয়ানন্দ জী মহারাজ সন্ন্যাসী ছিলেন, ত্যাগী, তপস্বী বিদ্বান ব্রাহ্মণ ছিলেন, এই কারণে তিনি আমাদেরও পূজ্য।
Note - পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কারের এই কুকৃত্যতে সকল জনতা ক্রোধিত হয়ে ওঠে আর জনতার মধ্যে চতুর্দিকে কোলাহল শুরু হয়, সেটা অনেক চেষ্টা করার পরেও শান্ত হয়নি, অবশেষে সভাধ্যক্ষ বিচার বিনিময়ের পর চতুর্থ দিনের শাস্ত্রার্থ নিরস্ত করে দেন।
🍁 [উপরোক্ত শাস্ত্রার্থের বিষয়ে আমার বিচার] 🍁
হায়দ্রাবাদ (দক্ষিণ) নিজাম রাজ্যতে চারটা শাস্ত্রার্থ -
হায়দ্রাবাদে দিনাঙ্গ ৩ থেকে ৬ জুলাই ১৯৩৫ সালে চারটা শাস্ত্রার্থ হয়েছিল। প্রথম শাস্ত্রার্থ ৩ তারিখে "বর্ণ ব্যবস্থার" উপর তথা দ্বিতীয় দিন "পুরাণ কি বেদানুকূল" এই বিষয়ের উপর এবং তৃতীয় দিন "স্বামী দয়ানন্দ কৃত গ্রন্থ কি বেদানুকূল?" এই বিষয়ের উপর তথা চতুর্থ শাস্ত্রার্থ "মূর্তিপূজা"র উপরে ছিল, এর বিষয় ছিল "মূর্তিপূজা কি বেদানুকূল?" তথা শাস্ত্রার্থের প্রধান "শ্রী পণ্ডিত গোপালরাব সাহেব (উকিল) ছিলেন। সেইদিন শাস্ত্রার্থকর্তা আর্য সমাজের পক্ষ থেকে "শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার" ছিলেন তথা সনাতন ধর্মের পক্ষ থেকে "শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী" নিযুক্ত হোন।
.
শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী খুব চতুর ছিলেন, তিনি নিজের চতুরতা দিয়ে পণ্ডিত বুদ্ধদেব জীকে বিষয়ান্তরে টেনে নিয়ে যান আর বলে দেন যে - "আপনি যদি মূর্তিপূজা না মানেন তাহলে স্বামী দয়ানন্দের ছবির উপর জুতা মেরে দিন", পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী যোগ্য পণ্ডিত ছিলেন এতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু তিনি জোশে হুশ রাখেন নি, শুনেছি যে সনাতন ধর্মের প্রধান যিনি এই শাস্ত্রার্থে নিযুক্ত ছিলেন তিনিও স্বামী দয়ানন্দের চিত্রের উপর জুতা মারতে বারণ করেন আর বলেন যে "তিনি আমাদেরও পূজ্য তাঁর চিত্রে এমন প্রহার আমি অনুচিত মনে করি, আমি বলছি - এটা হওয়া কখনও উচিত নয়।" কিন্তু পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী সেই চিত্রকে একটা কাগজের টুকরো বলে তার উপর জুতা মেরে দেন। আর্য সমাজের মধ্যে এর যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সেটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। "মহাশয় কৃষ্ণ" জী তার সাপ্তাহিক পত্র "প্রকাশে"র মধ্যে পণ্ডিত বুদ্ধদেব জীর বিরুদ্ধে অনেক বড়-বড় ব্যাখ্যা লেখেন। মহাত্মা হংসরাজ জীকে কেউ কখনও ক্রোধিত হতে দেখেন নি, কিন্তু এই খারাপ সংবাদ শুনে তিনিও ক্রোধিত হন, আর তিনি রেগে বলেন - "সেখানে কি কোনো আর্য সমাজী ছিল না, যে তার (বুদ্ধদেব) থুতনি ভেঙে দিতো!"
সেই শাস্ত্রার্থের মধ্যে পৌরাণিক শাস্ত্রার্থ মহারথী শ্রীকৃষ্ণ জী শাস্ত্রীও বিদ্যমান ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ জী শাস্ত্রী তখনই সেই কাণ্ডের পর একটা ছোট্ট পুস্তক ছাপিয়ে দেন যার নাম ছিল - "দয়ানন্দের চিত্রের উপর পণ্ডিত বুদ্ধদেবের জুতা", পৌরাণিকদের মধ্যে সেই পুস্তক খুব বিক্রি হয়। পণ্ডিত শ্রীকৃষ্ণ জী শাস্ত্রী মাধবাচার্য জীর এই বাক্যকে অমোঘ শস্ত্র মনে করে এটা শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরীর সঙ্গে মিয়ানীতে (সরগোধা, বর্তমান পাকিস্তান) হওয়া শাস্ত্রার্থের মাঝখানে খুব জোশের সঙ্গে বলে দেন যে - "যদি আপনি মূর্তিপূজা না মানেন তাহলে স্বামী দয়ানন্দের চিত্রের উপর জুতা মেরে দিন।" ঠাকুর অমর সিংহ জী হাসেন আর বলেন - শাস্ত্রী জী! আজকে ভাং ভবানীর অধিক সেবন করে এসেছেন নাকি? চিন্তা ভাবনা করে কথা বলুন। আজ আপনার সম্মুখে ঠাকুর আছে, আপনার ইষ্ট দেব "যে ঠাকুরদের পূজা আপনার পূর্বক সহস্র বছর ধরে করে আসছে", আজ সেই ঠাকুরদের মধ্যে একটা আপনার সম্মুখে আছে। এখন উত্তর শুনুন, আমরা মুসলিম না, যারা মূর্তিকে বানানো পাপ মনে করে। আমরা তো মূর্তি বানাই আর সঙ্গে রাখি কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত হল মূর্তি কেবল মূর্তিমানেরই হওয়া সম্ভব, অমূর্ত - নিরাকার পরমেশ্বরের নয়। মূর্তিমান মানুষের মূর্তি-চিত্র বানানো, নিজের ঘরে লাগানো আর সেই চিত্রকারীর চরিত্রকে স্মরণে রাখাটা কর্তব্য, চিত্র দেখো আর তাদের চরিত্রকে স্মরণ করো। মূর্তি যেকোনো মূর্তিমানের হোক, সেটা খায় না, ঘুমায় না, জাগে না। এখন কান খুলে শুনুন - "মূর্তির উপর জুতা মারা আর ফুল চরানো এই দুটোই মূর্খতাপূর্ণ।" আর দ্বিতীয় কথা হল - যার পূজা হবে না তাকে জুতা মারা, এটা আপনি কেন মনে করেন? আপনার মাথার উপরে যে পাগড়ী বাঁধা আছে, এটা কারো ইষ্টদেব নয়, আপনি এটা মেঝের উপর রেখে পাঁচটা জুতা মেরে দিন আর এখনই নগদ পাঁচ টাকা নিন। এর উপর এমন ভাবে অট্টহাসি হয় যে তারপর শ্রীকৃষ্ণ শাস্ত্রী জমতেই পারেন নি, শাস্ত্রার্থ এর উপরেই সমাপ্ত হয়ে যায়, পৌরাণিকরাও স্বীকার করে নেয় যে - প্রশ্নটা মূর্খতাপূর্ণ ছিল আর তার উত্তর ছিল অদ্ভুত বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ!
আমাকে শাস্ত্রার্থের জন্য যখন নিমন্ত্রণ আসে তো আমি লিখে দিই যে - "শাস্ত্রার্থ করাতে চান তো শ্রী ঠাকুর অমর সিংহ জীকে ডাকুন।" ভীড় ভড়ক্কা করতে হলে আমিও এসে যাবো। সেই হায়দ্রাবাদের প্রশ্নের উপর কি সুন্দর যুক্তি-যুক্ত আর প্রভাব যুক্ত উত্তর আছে। শ্রী ঠাকুর অমর সিংহ (অমর স্বামী সরস্বতী) জী আমার কাছে ছয় মাস (আগ্রা মুসাফির বিদ্যালয়ে) পড়েছেন। পরমেশ্বর "শ্রী অমর স্বামী জী"কে অদ্বিতীয় বিলক্ষণ তর্ক বুদ্ধি তথা অদ্ভুত স্মরণ শক্তি প্রদান করেছেন আর তাঁর শাস্ত্রার্থ নিপুণতার প্রশংসা তো মাধবাচার্যের মতো বিপক্ষীয় পণ্ডিতও করেছেন। এই ছিল হায়দ্রাবাদ শাস্ত্রার্থের কাহিনী। কিমধিকম্ লেখেন্!!
নিবেদক -
"বিহারীলাল শাস্ত্রী, কাব্যতীর্থ"
(বরেলী)
🍁 শাস্ত্রার্থ সমাপ্ত 🍁

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ