আত্মার বৈশিষ্ট্য লক্ষণ বলা হয়েছে-
প্রাণাপাননামেষুন্মেষজীবনমনোগতীন্দ্রিয়ান্তরবিকারাঃ সুখদুঃখেচ্ছাদ্বেষপ্রযত্নাশ্চাত্মনো লিঙ্গানি।।
বৈশেষিকসূত্র-৩/২/৪
সূত্রার্থ-প্রাণ-অপান-অপান,নিমেষ-উন্মেষ,জীবন,মন,গতি,ইন্দ্রিয় এবং অন্তর বিকার,সুখ-দুঃখ,ইচ্ছা-দ্বেষ,প্রযত্ন আদি এই আত্মার লিঙ্গ।
ভাষার্থ-( প্রাণাপাননামেষুন্মেষজীবনমনোগতীন্দ্রিয়ান্তরবিকারাঃ সুখদুঃখেচ্ছাদ্বেষপ্রযত্নাঃ-চ আত্মন-লিঙ্গাতি) এই যা প্রসিদ্ধ আছে যে জ্ঞান আত্মার লিঙ্গ হয়, এটি একমাত্র লিঙ্গ নয় তার আরও লিঙ্গ রয়েছে। কিন্তু এই সূত্রে পড়া প্রাণ আদি যা ধর্ম আছে তাও আত্মার লিঙ্গ, চক্র দ্বারা বলা হয়েছে। জ্ঞান আত্মার স্বরূপ লিঙ্গ,( জ্ঞান আত্মার স্বরূপ) যে আত্মা জ্ঞাতা। পরন্তু প্রাণ আদি তার বিশিষ্ট লিঙ্গ তার কারণে যোগ্য হয় এবং পরীক্ষার জন্য রয়েছে,আত্মা আছে বা নেই। তার জন্য এই সমস্ত লক্ষণ স্বীকার করা হয়েছে।
আত্মা থেকে অধিকৃত পিণ্ডে প্রাণ আদি সবার সব কিছুই এই নিয়ম নয় (সমস্ত শরীরে সমস্ত লিঙ্গ হবে এই আবশ্যক নয়) কারো শরীরে সমস্ত লক্ষণ হয়, এবং কারো শরীরে মনুষ্য শরীরের অপেক্ষা কম হয়। যেমন পশু পক্ষীর শরীরে কম হয়, কিছু-কিছু স্থানে তো খুব কমই হয় দুই বা তিনই হয়। যেমন টিকটিকি-কৃমি-কীটেে সমস্ত লক্ষণ না হয় এবং কেন এমন হবে যাতে কেবল মাত্র জীবন লক্ষণ হবে যেমন বনস্পতি বর্গে একটি লিঙ্গ দৃশ্যমান হয়, জীবিত আছে শ্বাস নেয় সেই জীব। এবং যেখানে জীব হয় সেখানে জীবন হয়। যেখানে জীবন হয় সেখানে জীবন থেকে আত্মা সিদ্ধ হওয়া উচিত। সেই লিঙ্গগুলিতে যে প্রাণ এবং অপান আছে এটি শরীরের অন্তঃ স্থিত বায়ুর গমন এবং আগমন ( এমন শক্তি যা দ্বারা প্রাণ আসা এবং যাওয়া করে তারা প্রাণ-অপান) বাইরে নিক্ষেপকারী যে শক্তি তা অপান এবং ভিতরের দিকে টানা শক্তি প্রাণ,প্রাণের অপগমন ভিতরকে বাইর করার প্রবৃত্তি শক্তি প্রাণ এবং যা ভিতরে টানার শক্তি তা অপান। যেখানে এই উভয় প্রাণ এবং অপান চলে সেখানে আত্মা আছে নিশ্চয় থেকে অনুমান দ্বারা জানা যায়।
নিমেষ এবং উন্মেষ নেত্র পক্ষের যা সংযোজন,পলকের সংযোগ জানা নিমেষ এবং তার খোলা জানা উন্মেষ। যে শরীরে এই উভযই থাকে,আত্মার শক্তি থেকেই ঊভয় কার্য হয়,যেখানে আহার গ্রহণ হয় এবং আহার থেকে পুষ্টি প্রাপ্তি হয়,বিবিধ অঙ্গের বিকাশ হয় বীজ থেকে বীজের নিজ জাতির সমান,অন্য পিণ্ডের সন্ততির বিস্তার হয়,এ সব ব্যতীত জীবন সম্ভব নয়। মন মনন করার সাধন অন্তঃকরণ এও আত্মার লিঙ্গ। যেমন দেখার সাধন নেত্র তার দ্রষ্টা আত্মা। একই প্রকার মনন করার সাধন মন দ্বারা মননকারী আত্মারও অনুমান করে নেওয়া উচিত,একটি কার্যকে করতে, মাঝে ছেড়ে অন্য কার্যের আরম্ভ করে দেওয়া,সেই থেকে মনের দ্বারা মননকর্ত্তা আত্মার সিদ্ধি হয়। গদি কোন পিণ্ড বাহ্য প্রেরণা ব্যতীত স্থির অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় সহসা উঠে চলে যায় সেই গতি দ্বারা আত্মা সেই পিণ্ডে আছে,এই প্রকার জানা যায়। ইন্দ্রিয়ান্তর বিকার কখনও একই ইন্দ্রিয় জিহ্বা দ্বারা স্বাদ গ্রহণ করে কমলালেবুর ফল বা পাকা আমকে পুনঃ দেখে সেই রসের স্মৃতির কারণ জিহ্বার উপর সেই রসের আভাস বিকার উৎপন্ন হয়ে যায়,এই থেকে ইন্দ্রিয় বিষয়কে জেনে স্বরণকারী আত্মার অনুমান হয়। যা এই উভয় ইন্দ্রিয়ের থেকে ভিন্ন। সুখ-দুঃখ আদি আভ্যন্তরীণ অনুভূতি গুণ,জড়ের থাকে না, তাদের জ্ঞানে হওয়া চেতনের দ্বারা অনুভূতির কারণ,ওই গুণ কারও আশ্রিত হয় এই সেই আশ্রয় চেতন আত্মা।
[ভাষ্যকার-স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক]
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ