শূদ্রের বেদ পাঠের অধিকার ও উপনয়ন সংস্কার - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

18 March, 2024

শূদ্রের বেদ পাঠের অধিকার ও উপনয়ন সংস্কার

শূদ্রের উপনয়ন
যতক্ষণ পর্যন্ত শিশুরা ছোট হয় বা বিদ্যাধ্যায়ন শেষে তাদের নিজস্ব বর্ণ নির্ধারণ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের যাবতীয় আচার-অনুষ্ঠান পারিবারিক পরিবেশ অনুযায়ী হয়। দ্বিজদের গৃহে সমস্ত সংস্কার যথাবৎ চলতে থাকে, তাই তাদের পারিবারিক পরম্পরা অনুসারে তারা যথাসময়ে উপনয়ন অনুষ্ঠান করে গুরুকুলে অধ্যয়নের জন্য পাঠাবে। শূদ্র, অতীশূদ্র আদি সাধারণত অশিক্ষিত হয়। পরিণামতঃ তাদের সন্তানের ব্রাহ্মণদের সন্তানদের মতো বিকাশ হয় না। তাদের গৃহে কোন কর্ম্মকাণ্ড হয় না। তাই সেখানে বিধিবত উপনয়ন সংস্কার হতে পারে না, পরন্তু এ কারণে তাকে লেখা-পড়ার সুযোগ না দেওয়াও যুক্তিযুক্ত নয়। তাই উপনয়ন না করেও তাকে পড়াশোনার জন্য গুরুকুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী জী সত্যার্থ প্রকাশের দ্বিতীয় সমুল্লাসে বলেছেন, সকল পিতা মাতা গৃহে নানা বিষয়ে যতটা পারবে জ্ঞান দিবে। পুস্তক না পড়াতে পারলে অন্যভাবে যদি কোন কিছু স্মরণ থাকে তা থেকে। "যতদিন গৃহকর্ম্মের ভার নিয়ে আমরা জীবিত আছি, ততদিন তোমাদের বিদ্যালাভ এবং শরীরের বলবৃদ্ধি সাধন করা কর্ত্তব্য", এইরূপ এবং অন্যান্য শিক্ষা সন্তানকে পিতা মাতার দেওয়া কর্ত্তব্য বলে "মাতৃমান্ মিতৃমান্" এই দুই শব্দ শতপথ ব্রাহ্মণে পাওয়া যায়। অর্থাৎ পঞ্চম বর্ষ পর্যন্ত মাতা এবং ষষ্ঠ হতে অষ্টম পর্যন্ত পিতা, বালক কে শিক্ষাদান করবেন। নবমবর্ষের প্রারম্ভে দ্বিজ নিজ পুত্রের উপনয়ন দিয়ে আচার্য্যকুলে পুত্র ও কন্যাকে প্রেরণ করবেন। কেবল শূদ্র তার সন্তানদের উপনয়ন নিজে করাতে পারবেন না।

শূদ্রের উপনয়ন বিষয়ে বিদ্যানন্দ সরস্বতী জী "সত্যার্থ ভাস্কর" গ্রন্থে শঙ্কা করেছেন। সেই শঙ্কা থেকে প্রতিত হয় গুরুকূলে আচার্য বর্ণউচ্চারণ ব্যাকরণ আদি শিক্ষা দেওয়ার সময় সকল বালক বালিকার যোজ্ঞপবীত করান, পরে যদি কেও শূদ্রত্য প্রাপ্ত হয় তবে সে যজ্ঞোপবীত ধারন করে থাকতে পারবে না। অর্থাৎ সুযোগ পাওয়ার পরও যদি সে কিছু না গ্রহণ করতে পারে তবে তাকে শূদ্র বলে গণ্য করা হবে, অন্যথা দ্বিজ সন্তান তার গুণ-কর্ম-প্রকৃতি অনুসারে পরীক্ষোপরান্ত তার বর্ণ ঘোষণা করা হবে।

গুরুকুল থেকে স্নাতক হওয়ার সময়ই তা নির্ধারণ করা হবে- এমন নির্দেশনা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী জী সত্যার্থ প্রকাশের চতুর্থ সমুল্লসে দিয়েছেন। অনেকেই আক্ষেপ করেন শূদ্রের সন্তানের যজ্ঞোপবিতের অধিকার নেই, কিন্তু এমন টা ঠিক নয়। যজ্ঞোপবীত ব্যতীত গুরুকুলে বাস করলে শূদ্রের সন্তান নিজের প্রতি হীনমন্যতায় ভুগবে এবং যজ্ঞোপবীত পরিহিত দ্বিজকুলোৎপন্না সহধ্যায়ীও তাকে ঘৃণার চোখে দেখবে। কোন শিক্ষার্থী যজ্ঞোপবীত রাখার অধিকার তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে।

মনুস্মৃতি ১০।৬৫ মনুমহারাজ বলেছেনঃ
শূদ্যো ব্রাহ্মণতামেতি ব্রাহ্মণশ্চৈতি শূদ্রতাম্।
ক্ষত্রিয়াজ্জাতবেমস্তু বিদ্যাদ্ বৈশ্যাত্তথৈব চ।।

_____যদি কেউ শূদ্রকূলে উৎপন্ন হয়ে ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্যের গুণ-কর্ম স্বভাব বিশিষ্ট হয় তবে সে শূদ্র, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্য হবে। সেইরূপ, কেউ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, অথবা বৈশ্যকূলে জন্মগ্রহণ করেও শূদ্রের গুণ-কর্ম স্বভাব বিশিষ্ট হলে সে শূদ্র হবে। এইরূপ কেউ ক্ষত্রিয় বৈশ্যকূলে জন্ম গ্রহণ করে ব্রাহ্মণ অথবা শূদ্র সদৃশ হলে, ব্রাহ্মণ অথবা শূদ্রই হয়ে যায় । অর্থাৎ যে পুরুষ বা স্ত্রী, চারি বর্ণের মধ্যে যে বর্ণের সদৃশ হবে, সে সেই বর্ণেরই হবে।

সকলের যে বেদাদি শাস্ত্র পড়বার অধিকার আছে তা বেদে প্রমাণ পাওয়া যায় যথা যজুর্বেদ-২৬।২
য়থেমাং বাচং কল্যাণীমাবদানি জনেভ্যঃ।
ব্রহ্মরাজন্যাভ্যাশূদ্রায় চার্য়্যায় চ স্বায় চারণায়।। যজুর্বেদ-২৬।২

পরমেশ্বর সঙ্কেত করেছেন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, (অর্য়্যায়) বৈশ্য, ( শূদ্রায়) শূদ্র এবং (স্বায়) নিজের ভৃত্য বা স্ত্রী আদি এবং ( অরণয়) অতি শূদ্রাদির জন্যও বেদ প্রকাশ করিয়াছি। অর্থাৎ সকল মনুষ্য বেদের পঠন এবং শ্রবণ-শ্রাবণ দ্বারা বিজ্ঞান বৃদ্ধি করিয়া সদ্বিষয় গ্রহণ এবং অসদ্বিষয় বর্জ্জন পূর্ব্বক দুঃখ হইতে বিমুখ হইয়া আনন্দ লাভ করুক।
যজ্ঞোপবীতের তিন ধাগা পরমাত্মা, জীবাত্মা এবং প্রকৃতি- এই তিন অনাদি সত্ত্বার জ্ঞান প্রাপ্তির সংকেত প্রদান করে। মাতৃমান্ পিতৃমানাচার্য্যবান্ পুরুষো বেদ [শত০ব্রা০ ১৪।৬।১০]___যদি বালক পাঁচ বর্ষ বয়স পর্য্যন্ত মাতার, পাঁচ হতে আট পর্য্যন্ত পিতার, আট হতে আটচল্লিশ, কন্যার আট হতে চব্বিশ বয়স পর্য্যন্ত আচার্য্যের নিকট শিক্ষা প্রাপ্ত, তবেই পুরুষ বিদ্যাম বা বিদুষী হয়ে ধর্মার্থ, কাম ও মোক্ষ লাভে সূচতুর হয়।

গুরুকূলে যেদিন উপনয়ন সংস্কার হয় সেদিনই বেদারম্ভ সংস্কার হয়। যদি কোন কারন বশত সেদিন সংস্কার না হয় তবে পরদিন বা অন্যদিন হয় যদি অন্যদিনও অনুকূল না হয়, তবে এক বৎসরের মধ্যে যে কোন দিন হয়। ব্রাহ্মণ বালকের বসন্তে, ক্ষত্রিয়ের গ্রষ্মে এবং শরৎ ঋতুতে বৈশ্যের যোজ্ঞপবীত সংস্কার করবে অথবা যে কোন ঋতুতেই করতে পারে এবং প্রাতঃকালই সঠিক সময় (শত০ ব্রা০)।
যে হেতু যোজ্ঞপবীতের সূত্রটি দ্বীজদের ব্রহ্ম-তত্ত্ব এবং বৈদিক জ্ঞানের সূচনা তাই একে ব্রহ্মসূত্র বলা হয়। একই ভাবে যজ্ঞ-সূত্র, সাবিত্রী-সূত্র, জনেউ, পরিবীত ও ভাসও বলা হয়। উপনয়ন কোন বয়সে হওয়া দরকার তার জন্য বিভিন্ন বর্ণের জন্য আলাদা আদেশ রয়েছে। যথাঃ-
अष्टवर्षं ब्राह्मणमुपनयेत् गर्भाष्टमं वा, एकादश बर्ष राजन्यं, द्वादशवर्षं वैश्यम (পারস্কর গৃহসূত্র ২।২।১-৩) ব্রাহ্মন বালকের উপনয়ন অষ্টম বর্ষে অথবা গর্ভ থেকে অষ্টম বর্ষে, ক্ষত্রিয়ের একাদশ বছরে এবং বৈশ্যের দ্বাদশ বছরে করা উচিৎ। যদি কোন বিশেষ কারণ বশতঃ উক্ত সময়ে যোজ্ঞপবীত করানো না যায় তবে তার থেকে দ্বিগুণ অর্থাৎ ব্রাহ্মণ বালকের জন্য ১৬, ক্ষত্রিয়ের জন্য ২২ এবং বৈশ্যের জন্য ২৪ বর্ষ নির্ধারন করা হয়েছে। মনু জী বলেছেনঃ-
आषोऽशाद् ब्राह्मणस्य सावित्री नाति वर्तते।
आद्वाविशात्क्षत्रबन्धोरा चतुविशतेविंशं: (মনুস্মৃতি ২।৩৮)
__ ষোল বছরের ঊর্ধ্বে একজন ব্রাহ্মণের, বাইশ বছরের ঊর্ধ্বে একজন বৈশ্য এবং 64 বছরের ঊর্ধ্বে একজন ক্ষত্রিয়র যজ্ঞের অনুষ্ঠান হওয়া উচিত নয়। এর পরেও যদি সংস্কার না হয় তবে সে পতিত হয়ে যায় এবং "প্রাত্য" সজ্ঞা প্রাপ্ত হয়।
বৈদিক ধর্ম অনুযায়ী যজ্ঞোপবীত একটি অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক এবং মহত্বপূর্ণ সংস্কার। আচার্য বা গুরু যজ্ঞোপবীত দেওয়ার সময় এবং যজ্ঞোপবীত পরিবর্তন করার সময় যে মন্ত্র পাঠ করেন তা থেকে যজ্ঞোপবীতের মহিমা স্পষ্ট হয়____
ओ३म् यज्ञोपवीतं परमं पवित्रं प्रजापतेर्यत् सहजं पुरस्तात्।
आयुष्यमग्रधं प्रतिमुञ्च शुभ्रं यज्ञोपवीतं बलमस्तु तेजः ॥
यज्ञोपवीतमसि यज्ञस्य त्वा यज्ञोपवीतेनोपनह्यामि ॥
[पारकस्करगृह्यसूत्र २ । २ । ११]
পরমপবিত্র, আয়ুবর্ধক, অগ্রণীয়তার বর্ধক, শ্বেতবর্ণের যজ্ঞোপবীত, প্রজাপতি পরমাত্মা প্রত্যেক শিশুকে সহজ-স্বভাবভাবে, গর্ভ থেকে, জরায়ু (গর্ভ ঝিল্লি) আকারে প্রদান করেন, তাই মনুষ্যকে ধারন/পরিধারন করা দরকার। এই যজ্ঞোপবীত বল ও তেজদায়ক। এই যজ্ঞোপবীত আমি যজ্ঞের যজ্ঞপবীততার সাথে পরিধান করছি।

এখানে যজ্ঞপবীতকে বল এবং তেজ প্রদানকারী বলা হয়েছে যজ্ঞোপবীতের তিনটি তারের (সূতোর) মধ্যে বল এবং তেজ দ,ষ্টিগোচর হয় না, পরন্তু যিনি এই তারের রহস্যকে হৃদয়ঙ্গম করে নিতে পারেন, তাঁর মধ্যে বল ও তেজের সঞ্চার হয়ে যায়। যেমন ভারতের জাতীয় পতাকার তিনটি রঙের একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান রয়েছে, মাঝে একটি চক্রেরও উদ্দেশ্য রয়েছে একই ভাবে যজ্ঞোপবীতেরও রহস্য রয়েছে। যজ্ঞোপবীতে তিনটি তার, নয়টি তন্তু এবং পাঁচটি গিঁট থাকে। কেন এই তিন তার রেয়েছে ?!

যজ্ঞোপবীতে তিনটি সুতোর (তার) বৈজ্ঞানিক রহস্য রয়েছে। তিনটি সংখ্যা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সত্বঃ,রজঃ এবং তম-গুণ তিন, পৃথিবী, অন্তরিক্ষ ও ধূ-লোক তিন, গার্হপত্য, আহবনীয়, দক্ষিন-অগ্নি তিন [শ্রৌতাগ্নি তিন প্রকার। গার্হপত্য, আহবনীয় ও দক্ষিণাগ্নি। সকল শ্রৌতকর্মের অনুষ্ঠানে গার্হপত্য, আহবনীয় ও দক্ষিণাগ্নি এই তিন ধরনের শ্রৌতাগ্নির প্রয়োজন হয়।] ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এই তিন যজ্ঞপবীতের অধিকারী; অতঃ যজ্ঞপবীতে তিন ধাগা (সূতো) থাকা সামঞ্জস্যপূর্ণ। ব্রহ্মচর্য, গৃহস্থ ও বানপ্রস্থ এই তিন আশ্রমে যজ্ঞোপবীত ধারণ করা হয়। যখন কেউ চতুর্থ আশ্রম সন্ন্যাসে প্রবেশ করে তখন যজ্ঞোপবীত খুলে দেওয়া হয়। তিন আশ্রমে ধারণ করার অর্থেও এতে তিনটি সুতো থাকে। এই সংসার ত্রিগুণাত্মক- সত্ত্বঃ, রজঃ ও তমঃ দ্বারা সমস্ত প্রাণী আবদ্ধ। এই সংসার থেকে বের হওয়া আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যজ্ঞোপবীতের এই তিন ধাগা। সন্ন্যাসী সংসারের মোহ, মায়া এবং মমতা হতে মুক্ত হয়ে যায়, তাই সন্ন্যাস আশ্রমে যজ্ঞপবীত খুলে দেওয়া হয়।
এই তিন দণ্ড মন, বচন এবং কর্মের একতা শেখায়। মন, বাণী ও কর্মে ঐক্য থাকলেই মনুষ্য মহাত্মা হন, তা নাহলে দূরাত্মা হয়ে যায়। এই তিন ধাগার আর একটি অভিপ্রায় এটা যজ্ঞের কায়কাণ্ড [শারীরিক শৃঙ্খলা], বাগদণ্ড [মৌখিক শৃঙ্খলা] ও মাণোদণ্ড [মানসিক শৃঙ্খলা] অর্থাৎ শরীর, বাণী ও মনের সংযম। শরীরের সংযম দ্বারা ব্রহ্মচর্য পালন, গুরুদের আদর ও সৎকার, অহিংসা ও তপস্যা; বাণীসংয়ম দ্বারা সত্য, উপকারী এবং মিষ্টিভাষী তথা স্বাধ্যায়। মনের (চিত্তের) সংযমের দ্বারা মনের বিকার দূর করে তা শুদ্ধ, পবিত্র ও শিবসংকল্পযুক্ত ঈশ্বর চিন্তন যুক্ত বানানো আবশ্যক। যজ্ঞোপবীত ধারণকারীর জন্য শরীর, মন এবং বাণীর সংযম অপরিহার্য। সত্ত্বঃ, রজঃ, তমঃ [প্রোটন, ইলেকট্রন, নিউট্রন] এই তিন গুণ সংকেত করে এই গুণগুলির উপরে গিয়ে ত্রিগুণাতীত হওয়ার।
মাতা, পিতা, আচার্য্য-এই তিন গুরু। এনাদের সেবা, আদর-সন্মান করা দরকার। প্রাতঃসবন, মাধ্যন্দিনসবন ও সায়ংসবন এই তিন সবন [সোমের সেবন] যথাসময় করা কর্তব্য।
যজ্ঞোপবীত এবং গায়ত্রীর পরস্পর ঘনিষ্ট সম্বন্ধ রয়েছে। এখানে পরমপিতার সর্বশ্রেষ্ঠ নাম "ওম্" এর মধ্যেও তিন অক্ষর রয়েছে [অ,উ এবং ম]। মহাব্যাহৃতি ও তিন_ ভুঃ, ভুবঃ এবং স্বঃ। গায়ত্রী মন্ত্রে তিন পাদ বিদ্যমান_তৎসবিতুর্বরেণ্যং, ভর্গোদেবস্য ধীমহি, ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
মনুষ্য শরীরে বাত, পিত্ত এবং কফ এই তিন ধাতু বিদ্যমান। এই ত্রিধাতুর মধ্যে সমানতা রাখা অত্যাবশ্যক। বাত, পিত্ত এবং কফ, যেগুলি সব একসাথে শরীরের ক্যাটাবোলিক ও এ্যানাবোলিক রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই তিনটি দোষগুলির প্রধান কাজ হল শরীরের হজম হওয়া পুষ্টির উপজাত দ্রব্য শরীরের সমস্ত স্থানে পৌঁছে কোষ পেশী ইত্যাদি তৈরীতে সাহায্য করা। এই দোষগুলির জন্য কোন গোলযোগ হলেই তা রোগের কারণ হয়। আয়ুর্বেদ অনুসারে, শরীরের সুস্থ থাকা নির্ভর করে বায়ু, পিত্ত এবং কফ, এই তিনটি বিষয়ের ভারসাম্যের উপর।
স্থুল, সূক্ষ্ম এবং কারণ-শরীরও তিন, এই শরীরের বিবেক দ্বারা আত্মাকে জানতে হয়। দুঃখও তিন প্রকার [ত্রিবিধ]- আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক; এই তিন দুঃখ থেকে নিবৃত হওয়া দরকার। ত্রিবিধ দুঃখের অত্যন্ত নিবৃত্তিই পরমপুরুষার্থ অথবা মোক্ষ প্রাপ্ত। জ্ঞান, কর্ম্ম এবং উপাসনা ও তিন- এদের রসহ্যকে জেনে এবং তদানুসার আচরণ করে পরমাত্মা প্রাপ্তি হয়।

এই তিন ধাগার (সুতো) আরো একটি সংকেত, সংসারে তিন প্রকারের ঐশ্বর্য বিদ্যমান সত্য, যশ ও শ্রী। যোজ্ঞোপবীত পরিধানকারীকে এই তিনটির মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়। ব্রাহ্মণের পক্ষে সত্য প্রধান, বাকি দুটি গৌণ। যদি ব্রাহ্মণ হতে চান তবে আপনাকে শীর্ষস্থানীয় সত্যবাদী ব্রাহ্মণ হতে হবে, যেমন-তেমন নয়। একজন ক্ষত্রিয় হতে হলে যশস্বী (খ্যাতিমান) এবং চূড়ান্ত খ্যাতিমানও হতে হয়। যুদ্ধে পিঠ না দেখানো ক্ষত্রিয় কিন্তু একই সঙ্গে জীবনে সত্যবাদী ও মহিমান্বিত বিশিষ্ট হতে হয়। আপনি যদি বৈশ্য হতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই একজন সাধারণ অর্থবান নয় বরং একজন শীর্ষ ব্যক্তি হতে হবে। কুবের ও ভামাশাহ ছিলেন ভারতের উচ্চমানের বিত্তবান পুরুষ। অর্থোপার্জনের সত্যের সাথে করা উচিত এবং যশ শ্রীদের রক্ষা করাও আবশ্যক।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ