নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী ও বেদে মাংসাহার - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

29 February, 2024

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী ও বেদে মাংসাহার

প্রাণীমাত্রের হিতৈষী বৈদিক ধর্মের মহান সংশোধক ভগবান্ দয়ানন্দ জী মহারাজ বলেছেন “এই পশুদের হত্যাকারীরা সব মানুষ্যের হত্যাকারী জানবে"। “যখন থেকে বিদেশী মাংসাহারী এই দেশে এসে গাভী আদি পশুদের হত্যাকারী মদ্যপায়ী রাজ্যাধিকারী হয়, তখন থেকে ক্রমশঃ আর্যদের দুঃখের সীমা বাড়তে থাকে।”- (সত্যার্থ প্রকাশ - দশম সমুল্লাস)

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী


য়ঃ স্যাদহিম্সাসম্পৃক্তঃ স ধর্ম ইতি নিশ্চয়। (শান্তিপর্ব অ০ ১০০|১২)॥

অর্থাৎ - যেটা অহিংসায় যুক্ত হবে, সেটা নিশ্চয়ই ধর্ম হবে।


অহিম্সা সর্বভূতেস্যো ধর্মেভ্যো জ্যায়সীনতা॥-(শান্তিপর্ব অ০ ২৬৫|৬)

অর্থাৎ - সমস্ত প্রাণীদের জন্য অহিংসাই হল সবার বড়


সুরা মত্স্যা মধু মাম্সমাসবম্ কৃষরৌদনম্।

ধূর্তঃ প্রবর্তিত হয়েতন্নৈতদ্ বেদেষু কল্পিতম্।-(শান্তিপর্ব অ০ ২৬৫|৯)

অহিংসা সকলো ধর্মঃ। (শান্তিপর্ব অ০ ২৭২|২০)

অর্থাৎ - মদ্য, মাংস আদির যজ্ঞে আহুতি দেওয়াটা হল বেদ বিরুদ্ধ তথা এটা ধূর্তদের দ্বারা চালানো হয়েছে। অহিংসাই হল সম্পূর্ণ ধর্ম।


বীজৈর্য়জ্ঞেষু য়ষ্টব্যমিতি বৈ বৈদিকী শ্রুতিঃ।

অজ সম্জ্ঞানি বীজানি চ্ছাগ নো হন্ত্তমর্হথ।

নৈষ ধর্মঃ সতাম্ দেবা য়ত্র বধ্যেত বৈ পশুঃ।।

(শান্তিপর্ব অ০ ৩৩৭|৪,৫)

অর্থাৎ - যজ্ঞ বীজ (অন্ন আদি) দ্বারা করা উচিত, এটাই হল বৈদিক বিধান। এই বীজগুলোকে অজ বলা হয়। ছাগ (ছাগল) মারা উচিত নয়। যেখানে পশুবধ হবে, সেটা বিদ্বানদের ধর্ম নয়। মহাভারতে অনেকত্র অহিংসা পরমোধর্মের ঘোষণা রয়েছে। পিতামহ ভীষ্মের উপদেশের মধ্যে মাংসাহারের প্রচণ্ড নিন্দা বিস্তারে করা হয়েছে। এতেও যদি কেউ বিশ্বাস না করে, তবে মহাভারতের অনুশাসন পর্ব স্বয়ংই পড়ে নিবেন। 


অযোধ্যা "হিম্সাভিরভিবর্জিতঃ"-অর্থাৎ অযোধ্যা হিংসা হতে পূর্ণ মুক্ত ছিল (অযোধ্যাকাণ্ড ১০০ সর্গ, শ্লোক ৪৪)॥


"বর্জয়েন্মধুমাম্সম্ চ" (মনু ৬|১৪)

অর্থাৎ - সব মদকারী মদ্য, ভাঙ্গ আদি পদার্থ তথা মাংস হল নিষেধ।


"য়ো বন্ধন বধক্লেশান্ প্রাণিনাম্ ন চিকীর্ষতি।

স সর্বস্য হিতপ্রেপ্সুঃ সুখমত্যন্ত মশ্নুতে।।" (মনু ৫|৪৬)

"না কৃত্বা প্রাণিনাম্ হিম্সা মাম্সমুত্পদ্যতে ক্বচিত্।

ন চ প্রাণিবধঃ স্বর্গ্যস্তস্মান্মাম্সম্ বিবর্জয়েত্।।" (মনু ৫|৪৮)

"সমুত্পত্তি চ মাম্সস্য বধবন্ধৌ চ দেহিনাম্।

প্রসমীক্ষ্য নিবর্তেত সর্বমাম্সস্য ভক্ষণাত্।। (মনু ৫|৪৯)

অর্থাৎ - যে ব্যক্তি প্রাণীদের বন্ধনে রাখতে, হত্যা করতে, তাদের কোনো রূপ কষ্ট দিতে চায় না, সে সকল প্রাণীর হিতৈষী অত্যন্ত সুখকে প্রাপ্ত করে। প্রাণীদের হিংসা না করে মাংস কখনও প্রাপ্ত হয় না আর জীবের হত্যা করা সুখদায়ক নয়। এই কারণে মাংস খাওয়া উচিত নয়। মাংসের উৎপত্তি যেভাবে হয়, তাতে প্রাণীর হত্যা আর বন্ধনের কষ্টকে দেখে সব প্রকারের মাংস ভক্ষণ থেকে দূরে থাকবে।


ধর্মোপদেষ্টা ভগবান্ মনু মাংসাহারে একটা নয় বরং আঠ পাপী বলেছেনঃ-


"অনুমন্তা বিশসিতা নিহন্তা ক্রয়বিক্রয়ী।

সম্স্কর্তা চোপহর্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতকাঃ।"-(মনুস্মৃতি ৫।৫১)

অর্থাৎ - যে হত্যার অনুমতি (পরামর্শ) দেয়, যে মাংস কাটে, যে পশুহত্যা করে, যে পশুকে হত্যার জন্য লইয়া যায় ও বিক্রয় করে, যে মাংস রন্ধন করে, যে মাংস পরিবেশন করে ও যে মাংস ভক্ষণ করে সেই সমস্ত ব্যক্তিই ঘাতক হিংসক, ইহারা সকলেই পাপী। এই হল আট প্রকারের ঘোর পাপী। যখন মানব ইতিহাসের প্রারম্ভ বেদজ্ঞান ও মনুর উপদেশ দ্বারা প্রারম্ভ হয়েছে, তো সেখানে মাংসাহারের স্থান কিভাবে পেতে পারে ? 


বেদ ভগবান কি নির্দেশ করেছেন দেখুনঃ

"মা স্ত্রেত" (ঋগ্বেদ ৭|৩২|৯)

অর্থাৎ - হিংসা করো না।

"মা নো হিম্সিষ্ট দ্বিপদো মা চতুষ্পদ দঃ।" (অথর্ববেদ ১১|২|১)

অর্থাৎ - আমাদের মনুষ্য আর পশুদের নষ্ট করো না।


ভিডিওতে স্বামী সমর্পণানন্দ জী ও তাঁর অজ্ঞতা ও মূর্খতা দেখুন 👇

 https://www.facebook.com/reel/7333303350026493

বামমার্গী নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী তাঁর অজ্ঞতা ও মূর্খতার প্রমাণের জন্য বেশকিছু ভিডিও প্রাকাশ করে চেলেছেন। ভিডিওর বিষয় গুলো লক্ষ্য করার মতো। তিনি এই সমস্ত ভিডিওর দ্বারা কি সন্দেশ দিচ্ছেন তা বুদ্ধিমান দর্শক ও শ্রোতা অবশ্যই বুঝতে পারছেন !!
একটি ভিডিওও তে তিনি খুব অনন্দ প্রকাশ করে বলছেন তিনি বাঙালী তিনি মাছ খান এবং তাঁর প্রভু বা আরাধ্য অর্থাৎ ভগবান রামচন্দ্রও মাছ খেতেন সে কারনে তিনি খুব খুশি আদি আদি......। কখনো একটি কাগজের দিকে তাকিয়ে গল্পের আকারে বলে চলেছেন, লক্ষণ জী মাছ শিকার করছেন আরো অনেক কিছু। তিনি কোন রাময়ণ পড়েছেন বোঝা মুশকিল; আমরা মহর্ষি বাল্মীকি রচিত রামায়ণে দেখি শ্রীরামচন্দ্রে জন্য মহর্ষি "ধর্মাত্মা" শব্দ ব্যবহার করেছেন [কিষ্কিন্ধাকাণ্ড অষ্টাত্রিংশ সর্গ ১৯নং শ্লোক] এবং যখন মহাত্মা ভরত জী চিত্রকুটে শ্রীরাম জীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন, তখন শ্রীরাম জী দেখার সঙ্গেই কুশলক্ষেরম জিজ্ঞেস করার সঙ্গে রাজনীতির উপদেশ করেছিলেন। সেখানে এক বিন্দু আসে, যেখানে অযোধ্যা "হিম্সাভিরভিবর্জিতঃ" বলেছেন। অর্থাৎ - অযোধ্যা হিংসা হতে পূর্ণ মুক্ত ছিল (অযোধ্যাকাণ্ড ১০০ সর্গ, শ্লোক ৪৪)॥
রামায়ণ ও মহাভারতে অনেকত্র শিকার খেলার বর্ণন এসেছে। ভাদুড়ীর জানা উচিৎ এরকম সব প্রসঙ্গগুলো মধ্যকালীন মাংসভোজীদের দ্বারা প্রক্ষিপ্ত করা হয়েছে। "বঙ্গভাষা ও সাহিত্য" পুস্তকে লেখক দিখিয়েছেন রামায়ণের অনেক প্রকারভেদ রয়েছে ও প্রক্ষিপ্ত অংশ রয়েছে। এর পশ্চাৎ হেতু হল এই যে, শ্রীরাম অথবা সেই সময়ের ক্ষত্রিয় ও অন্য মনুষ্যদের ধর্মাত্মা, বেদব্রতী ও অহিংসক বলা হয়েছে, তারা বেদবিরুদ্ধ অন্যায় কর্ম কিভাবে করতে পারবেন ?
অযোধ্যাকাণ্ড ৬৩|২১ শ্লোকে "মৃগম্" তথা শ্বাপদ শব্দ এসেছে অর্থাৎ এখানে সামান্য অর্থ নিয়ে দেখলে পরে মহিষ, হাতী, মৃগ (যদি হরিণ মানা হয়) তবে অহিংসক রয়েছে। অন্যদিকে শ্বাপদ অর্থাৎ বাঘ হল হিংসক পশু, তাহলে এদের পরস্পর সমান্তা বসে না। এই কারণে এই চারকেই হিংসক মানতে হবে। মহিষ - জংলী মোষ উপদ্রবী হয়েই থাকে, হাতীও মদোন্মত হতে পারে, কিন্তু হরিণকে উপদ্রবকারী মানা যেতে পারে না, তাহলে মৃগের অর্থ বাঘ সমীচীন হবে। যাইহোক মনু জী বলেছেন - মাংসাহারে একটা নয় বরং আঠ পাপীঃ
"অনুমন্তা বিশসিতা নিহন্তা ক্রয়বিক্রয়ী।
সম্স্কর্তা চোপহর্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতকাঃ।" [মনুস্মৃতি ৫।৫১]

অর্থাৎ - যে হত্যার অনুমতি (পরামর্শ) দেয়, যে মাংস কাটে, যে পশুহত্যা করে, যে পশুকে হত্যার জন্য লইয়া যায় ও বিক্রয় করে, যে মাংস রন্ধন করে, যে মাংস পরিবেশন করে ও যে মাংস ভক্ষণ করে সেই সমস্ত ব্যক্তিই ঘাতক হিংসক, ইহারা সকলেই পাপী। এই হল আট প্রকারের ঘোর পাপী।
পাপী, মাংস খোর, মাংসাশী নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী নিজের পাণ্ডিত্য দেখাতে গিয়ে আর্যপুত্র (অরণ্য০৪৩।১০) পুরুষশ্রেষ্ঠ (অযো০১১১।৮), নরশ্রেষ্ঠ রঘুনন্দন (অযো০ ১১১।১৮), ধর্মজ্ঞ, সত্যনিষ্ঠ, প্রজা কল্যাব্রতী, যশস্বী, জ্ঞানী, পবিত্র, জিতেন্দ্রিয় এবং যোগসমাধিমান পুরুষ... ভগবান রামচন্দ্র জী যিনি চোদ্দো বর্ষ পর্যন্ত জটা ধারণ করে আর ফল-মূলই আহার করে ছিলেন (বাল্মীকি রা০ অয়োধ্যা কা০ ১১২|২৩-২৪) যিনি সত্যপালনে দ্বিতীয় ধর্মের ন্যায় (আদিকাণ্ড, প্রথম সর্গ) তাঁকে মাংসাশী, অধর্মী দেখানোর প্রয়াস করে চলেছেন সেই জঘন্য মানসিক বিকারগ্রস্ত নৃসিংহপ্রসাদের বিরুদ্ধে সমস্ত ভারতবাসীর প্রতিবাদ করা দরকার ও আইনত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার॥

স্বামী সমর্পণানন্দ

রামকৃষ্ণ মিশেনের অশাস্ত্রীয় ফণ্ডিত স্বামী সমর্পণানন্দ জীর বক্তব্য "

শরীর চালোনার জন্য মাছ, মাংস খাওয়াকে হিংসা বলে না !" ওনার একবার পড়ে দেখা উচিত, মহর্ষি মনু মনুস্মৃতি ৫।৪৮ শ্লোকে প্রাণীদের হিংসা না করে মাংস কখনও প্রাপ্ত হয় না আর জীবের হত্যা করা সুখদায়ক নয়। এই কারণে মাংস খাওয়া উচিত নয় বলেছেন।
"না কৃত্বা প্রাণিনাম্ হিম্সা মাম্সমুত্পদ্যতে ক্বচিত্।
ন চ প্রাণিবধঃ স্বর্গ্যস্তস্মান্মাম্সম্ বিবর্জয়েত্॥" [মনু০৫।৪৮]
বিঃদ্রঃ অশাস্ত্রীয় স্বামী সমর্পণানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন, বেলুড় মঠের একজন লেখক এবং সন্ন্যাসী। বর্তমানে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রাচীন এবং আধুনিক ধর্মগ্রন্থ পড়ান। এবং বেদের ওপর Stream Talk Series শুরু করেছেন। যিনি মনুস্মৃতি ঠিক করে অধ্যয়ন করেননি তিনি বেদ বিষয়ে মানুষকে কি জ্ঞান দেবেন আর তা কতটা সমাজের কল্যাণ হবে ?? !!!

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ