অপাণিপাদো জবনো গ্রহীতা পশ্যত্যচক্ষুঃ স শূণোত্যকর্ণঃ।
স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা তমাহুরগ্র্যং পুরুষং মহান্তম্ ॥শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ-৩/১৯।।
পদার্থঃ (সঃ) সেই পরমাত্মা (অপাণিপাদঃ) হস্ত-পদাদি রহিত হয়েও (গ্রহীতা) নিজের অনন্ত শক্তি দ্বারা সবকিছু গ্রহণ অর্থাৎ ধারণ করেন [এবং] (জবনঃ) সর্বব্যাপক হওয়ার কারণে সর্বাধিক বেগবান (অচক্ষুঃ) চক্ষু-রহিত হয়েও (পশ্যতি) যথাযথ দর্শন করেন (অকর্ণঃ) কর্ণ- রহিত হয়েও (শৃণোতি) সবই শ্রবণ করেন (সঃ) তিনি (বেদ্যং) সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় (বেত্তি) জানেন (চ) অথচ (তস্য) তাঁর (বেত্তা) জ্ঞাতা (ন অস্তি) কেউ নেই। [এজন্য জ্ঞানিগণ] (তম) তাঁকে (অগ্রগ্র্যম) সর্বাগ্রণী (মহান্তম) সর্বাপেক্ষা মহান (পুরুষম) পুরুষ (আহুঃ) বলেন ॥১৯॥
সরলার্থঃ সেই পরমাত্মার হাত নেই, তবুও নিজের অনন্ত শক্তি দ্বারা তিনি সবকিছু গ্রহণ অর্থাৎ ধারণ করেন। তাঁর পা নেই, তবুও তিনি সর্বব্যাপক হওয়ার কারণে সর্বাধিক বেগবান। তাঁর চক্ষু নেই, তবুও তিনি সবকিছু দর্শন করেন। তাঁর কর্ণ নেই, তবুও তিনি সবই শ্রবণ করেন। তিনি সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় জানেন, অথচ তাঁকে কেউ সম্পূর্ণরূপে জানে না। এজন্য জ্ঞানিগণ তাঁকে সর্বাগ্রণী, সর্বাপেক্ষা মহান পুরুষ বলেন ॥১৯॥
ব্যাখ্যাঃ এই শ্রুতিবাক্যে স্পষ্টভাবে পরমাত্মার ইন্দ্রিয়ের প্রতিষেধ করা হয়েছে। পরমেশ্বর চক্ষু-কর্ণাদি জ্ঞানেন্দ্রিয় ও হস্ত-পদাদি কর্মেন্দ্রিয়ের সাহায্য ছাড়াই গ্রহণ, দর্শন, শ্রবণাদি কার্য সিদ্ধ করতে পারেন, আর এটিই তাঁর সর্বশক্তিমত্তা। সংসার সাগরে নিমজ্জিত অল্পজ্ঞ মানব সেই সর্বজ্ঞ ব্রহ্মকে জানতে পারে না। কিন্তু বৈরাগ্য-প্রাপ্ত, শ্রদ্ধাবান, ধার্মিক মনুষ্যগণ ব্রহ্মবিদ্যার চর্চা ও ধ্যানাদি যোগাভ্যাস দ্বারা তাঁকে জানতে সমর্থ হন। কিন্তু সেই বাক্যমনাতীত ব্রহ্মকে কেউ পূর্ণরূপে জানতে পারে না (কেন০ ২।৩ দ্রষ্টব্য)। তাই বর্তমান শ্রুতিতে বলা হয়েছে, তাঁর জ্ঞাতা কেউই নেই। এজন্য জ্ঞানিগণ সেই জগদীশ্বরকে সর্বাগ্রণী, সর্বাপেক্ষা মহান পুরুষ বলেন ॥১৯৷
টীকাঃ এই শ্রুতির ব্যাখ্যায় মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন- "পরমেশ্বরের হস্ত নেই, কিন্তু তিনি নিজের শক্তিরূপ হস্ত দ্বারা সমস্ত রচনা এবং গ্রহণ করেন। তাঁর চরণ নেই, কিন্তু তিনি ব্যাপক হওয়ার কারণে সর্বাপেক্ষা অধিক বেগবান। তাঁর চক্ষুগোলক নেই, কিন্তু তিনি সমস্ত যথাবৎ দর্শন করেন। তাঁর শ্রোত্র নেই, তবুও তিনি সকলের কথা শ্রবণ করেন। তাঁর অন্তঃকরণ নেই, কিন্তু তিনি সমস্ত জগৎকে জানেন। তাঁকে সম্পূর্ণরূপে জানতে পারে, এমন কেউ নেই। সনাতন, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বত্র পূর্ণ হওয়ার কারণে তাঁকে 'পুরুষ' বলা হয়। তিনি ইন্দ্রিয় ও অন্তঃকরণ ব্যতীত সব কর্ম নিজের অনন্ত সামর্থ্য দ্বারা করেন। (সত্যার্থ প্রকাশ, ৭ম সমুল্লাস)” ॥১৯॥
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ