নিয়োগ কি এবং কেন ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 May, 2024

নিয়োগ কি এবং কেন ?

নিয়োগ কি এবং কেন ?


বৈদিক সমাজে নিয়োগ ব্যবস্থা, শুধুমাত্র জরুরী অবস্থার জন্য সহজে গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা। পরিবারের সুখ, পরিপূর্ণতা এবং বংশ রক্ষা ও অগ্রগতির জন্য এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। প্রাচীনকাল থেকে পুরাণ পর্যন্ত এর প্রমানও পাওয়া যায়। পাঁচ পাণ্ডব, ধৃতরাষ্ট্র, বিদুর এবং কয়েক জন প্রাচীন রাজা, ঋষিমুনি ছিলেন নিয়োগজ সন্তান। স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে বা স্বামী বা স্ত্রী যখন দুরারোগ্য রোগে ভুগেন তখন শিশুদের জন্য এই পদ্ধতিটি গৃহীত হয়েছিল যা পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর একটি কার্যকর উপায় ছিল। আরও অনেক বিশেষ কারণ আছে, প্রাচীন রাজতন্ত্রগুলো বিভিন্ন সময়ে অনেক যুদ্ধ চালিয়েছিল, এবং হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা হয়েছিল। একবার মহামারীতে নগরের পর নগর ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।সেক্ষেত্রে গৃহস্থালি বা নারী-স্বার্থের অন্য কোনো উপযোগী ব্যবস্থা না থাকা ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হওয়ায়, নিয়োগ ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়।

নিয়োগ মহর্ষি দয়ানন্দ জীর উদ্ভাবিত কোনো প্রথা বা বিচার নয়। মহর্ষি দয়ানন্দ বেদ এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ দ্বারা নির্দেশিত বৈদিক অনুশীলনকে কেবল উপস্থাপন এবং সমর্থন করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি খুব একটা জোরালো ছিলেন না। তিনি উপদেশ মঞ্জরীতে স্পষ্টভাবে লিখেছেন যে "আমি বিধবা বিবাহ প্রত্যাখ্যান করতে চাই না" (উপদেশ ১২)। একই নির্দেশ অনুসারে, আর্য সমাজ বিধবা বিবাহের সমর্থনে আন্দোলন শুরু করে এবং বিধবা বিবাহ শুরু করলেও পৌরাণিক শ্রেণীর লোকেরা এর তীব্র বিরোধিতা করে ছিলো। এই ধরনের লোকদের সমালোচনা করার আগে সামাজিক মনোবিজ্ঞান এবং ইতিহাস বিবেচনা করা উচিত।

সত্যার্থ প্রকাশের ১৩ সমুল্লাসে মহর্ষি দয়ানন্দ জী উত্পত্তি পর্বের খণ্ডন সময়ে, এবং বাইবেলের ব্যবস্তা বিবরণে নিয়োগ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই প্রমাণগুলি দেখায় যে ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে 'দেবর' দ্বারা নিয়োগ এবং 'দেবর' দ্বারা বিবাহের ঐতিহ্যগুলি বাধ্যতামূলক ছিল এবং সেগুলি বাইবেলে নির্ধারিত রয়েছে। উপরোক্ত বিবরণে বর্ণিত দুটি পরম্পরার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা পাঠককে বুঝতে হবে। 

যখন একজন পুরুষ কারো স্ত্রী থেকে একটি সন্তান উৎপাদন করে এবং সেই সন্তানটিকে সেই মহিলা এবং তার স্বামীর বংশের বলে বলা হয়, তখন তাকে 'নিয়োগ' বলা হয়। যখন তাকে একই সঙ্গম পুরুষের বংশের সন্তান বলা হয় তখন তাকে বলা হয় 'পুনর্বিবাহ'। পুনর্বিবাহ এবং নিয়োগের মধ্যে প্রভেদ রয়েছে; যেমনঃ (প্রথমতঃ) বিবাহ হলে যেমন কন্যা পিতৃগৃহ ছেড়ে পতিগৃহে গমন করে, পিতার সহিত তাঁর বিশেষ সম্বন্ধ থাকে না সেইরূপ বিধবা স্ত্রী বিবাহিত পতির গৃহেই অবস্থান করে। (দ্বিতীয়তঃ) সেই বিবাহিতা স্ত্রীর পুত্র সেই বিবাহিত পতির উত্তরাধিকারী হয়ে থাকে কিন্তু বিধবা স্ত্রীর পুত্র বীর্য্যদাতার পুত্র হয় না, তাঁর গোত্রীয়ও হয়না, পুত্রের উপর তাঁর কোন স্বত্ব থাকেনা। কিন্তু সে বিধবার মৃত পতিরই পুত্ররূপে পরিগণিত হয় এবং তাঁরই গোত্রীয় ও তাঁরই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে তাঁরই গৃহে বাস করে। (তৃতীয়তঃ) বিবাহিত স্ত্রীপুরুষের পক্ষে পরস্পরের সেবা এবং পালন করা অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু নিযুক্ত স্ত্রীপুরুষের কোন সম্বন্ধই থাকেনা। (চতুর্থতঃ) বিবাহিত স্ত্রীপুরুষের আমরণ সম্বন্ধ থাকে, কিন্তু নিযুক্ত স্ত্রীপুরুষের সম্বন্ধ কার্য্যান্তে ছিন্ন হয়ে যায়। (পঞ্চমতঃ) বিবাহিত স্ত্রীপুরুষ পরস্পর মিলিত হয়ে গৃহকৰ্ম্ম সম্পাদনে পরস্পর যত্নবান্ হয়ে থাকে কিন্তু নিযুক্ত স্ত্রীপুরুষ নিজ নিজ গৃহকৰ্ম্ম করতে থাকে।

বিবাহ এবং নিয়োগের নিয়মেও কিঞ্চিত প্রভেদ আছে, তদ্ব্যতীত বিবাহিত স্ত্রীপুরুষ একপতি এবং এক স্ত্রী মিলিত হয়ে দশটি সন্তান উৎপন্ন করতে পারে। কিন্তু নিযুক্ত স্ত্রীপুরুষ চারিটির অধিক সন্তান উৎপন্ন করতে পারে না। অর্থাৎ কুমার ও কুমারীর বিবাহের ন্যায় বিপত্নীক পুরুষ এবং বিধবা স্ত্রীর নিয়োগ হয়ে থাকে। কুমার এবং কুমারীর নিয়োগ হয় না। বিবাহিত স্ত্রীপুরুষ সর্বদা সঙ্গে থাকে কিন্তু নিযুক্ত স্ত্রীপুরুষের ব্যবহার সেইরূপ নয়। তাঁরা ঋতুদানের সময় ব্যতীত (অন্য সময়ে) একত্র হবেনা। যদি স্ত্রী নিজ প্রয়োজনে নিয়োগ করে, তবে দ্বিতীয় গর্ভস্থিতির দিন হতে তাহার সহিত নিযুক্ত পুরুষের সম্বন্ধ ছিন্ন হয়ে যায়। পুরুষ নিজের জন্য নিয়োগ করলেও দ্বিতীয় গর্ভস্থিতির পর হতে সম্বন্ধ থাকেনা। কিন্তু সেই নিযুক্ত স্ত্রী দুই তিন বৎসর পর্যন্ত সন্তানগুলিকে লালন পালন করে নিযুক্ত পুরুষকে দিবে। এইরূপে এককালে বিধবা স্ত্রী নিজের জন্য দুইটি এবং অন্য চারিজন নিযুক্ত পুরুষের প্রত্যেকের জন্য দুইটি দুইটি করে সন্তান উৎপন্ন করতে পারে। একজন বিপত্নীক পুরুষও নিজের জন্য দুইটি এবং অন্য চারি বিধবার জন্য দুইটি করে পুত্র উৎপন্ন করিতে পারে। এইরূপে মোট দশটি সন্তান উৎপত্তির আজ্ঞা বেদে আছে, যথাঃ-

ঋগ্বেদ ১০।৮৫।৪৫📕

ইমাং ত্বমিন্দ্র মীঢ্ব : সুপুত্রাং সুভগাং কৃণু। 

দশাস্যাং পু্ত্রতানাধেহি পতিমেকাদশং কৃধি॥

ভাবার্থঃ হে (মীঢ্ব , ইন্দ্র) বীর্য্যসিঞ্চনে সমর্থ ঐশ্বর্য্যশালী পুরুষ! তুমি এই বিবাহিতা স্ত্রী বা বিধবা স্ত্রীকে শ্রেষ্ঠ পুত্রের মাতা এবং সৌভাগ্যবতী কর।বিবাহিতা স্ত্রীতে দশ পুত্র উৎপন্ন কর এবং স্ত্রীকে একাদশ বলিয়া মনে কর (ঋ০১০।৮৫।৪০)। হে স্ত্রী ! তুমিও বিবাহিত বা নিযুক্ত পুরুষ কর্ত্তৃক দশটি সন্তান উৎপন্ন কর এবং পতিকে একাদশ বলিয়া মনে কর॥ [মহর্ষি দয়ানন্দকৃত ভাষ্যের বাংলা অনুবাদ]

(ইমাং ত্বমিন্দ্র) এই মন্ত্র দ্বারা স্ত্রী একাদশ পুরুষ পর্যন্ত নিয়োগ করতে পারে, সেইরূপ পুরুষও একাদশ স্ত্রী পর্য্যন্ত নিয়োগ করতে পারে। কিন্তু একাদশ শব্দদ্বারা দশ পুত্র এবং পতিকে একাদশ গণনা করা হবে না কারন যদি এইরূপ অর্থ করা হয়, তবে "বিধবেব দেবরম্ "দেবরঃ কম্মাদ্ দ্বিতীয়ো বর উচ্যতে," "অদেবৃঘ্নি" এবং "গন্ধর্ব্বো বিবিদ উত্তর" ইত্যাদি বৈদিক প্রমাণ সমূহের বিরুদ্ধ অর্থ হবে। প্রথম পতি বা স্ত্রী + সন্তান প্রয়োজনে অধিকতম দশ জন নিয়োগ পুরুষ বা স্ত্রী।

দেবরাদ্বা সপিণ্ডাদ্বা স্ত্রিয়া সম্যঙ্ নিযুক্তয়া। 

প্রজেপ্সিতাধিগন্তব্যা সন্তানস্য পরিক্ষয়ে॥ মনু০ ৯।৫৯ 

জ্যেষ্ঠো যবীয়সো ভার্য্যাং যবীয়াস্বাগ্রজন্দ্রিয়ম্। 

পতিতৌ ভবতো গত্বা নিযুক্তাবপ্যনাপদি ॥ মনু০ ৯।৫৮ 

ঔরসঃ ক্ষেত্রজশ্চৈব॥ মনু০ ৯।১৫৯)

মনু মহারাজ এইসব লিখেছেন যে "সপিণ্ড” অর্থাৎ পতির ছয় পুরুষের মধ্যে, পতির কনিষ্ঠ বা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, অথবা স্বজাতীয় এবং নিজ অপেক্ষা উচ্চ জাতিস্থ পুরুষের সাথে বিধবা স্ত্রীর নিয়োগ হওয়া উচিত। যদি বিপত্নীক পুরুষ এবং বিধবা স্ত্রী সন্তান কামনা করে, তবে তাঁর নিয়োগ হওয়া উচিত। সর্বথা সন্তানের অভাব হলে নিয়োগ হবে। আপৎকাল অর্থাৎ সন্তান কামনা ব্যতীত, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রীর সহিত কনিষ্ঠ ভ্রাতার অথবা কনিষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রীর সহিত জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার নিয়োগ হলে এবং সন্তানোৎপত্তির পরেও নিযুক্তগণ সমাগম করিলে পতিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ এক নিয়োগের সীমা দ্বিতীয় সন্তানের গর্ভধারণ পর্য্যন্ত। তার পর সমাগম করবে না। যদি উভয়ের প্রয়োজনে নিয়োগ হয়, তবে চতুর্থ গর্ভ পর্য্যন্ত অর্থাৎ পূর্ব্বোক্ত রীতি অনুসারে দশ সন্তান পর্য্যন্ত হতে পারে। তদনন্তর তা বিষয়াসক্তি বলে গণ্য হয়। তাতে তাঁরা পতিত বলে গণ্য হয়। বিবাহিত স্ত্রীপুরুষও দশম গর্ভের পরে সমাগম করলে কামুক বলে নিন্দিত হয়। অর্থাৎ বিবাহ বা নিয়োগ সন্তানের জন্য, পশুবৎ কাম ক্রীড়ার জন্য নয়।

সোমঃ প্রথমো বিবিদে গন্ধর্ব্বো বিবিদ উত্তরঃ। 

তৃতীয়ো অগ্নিষ্টে পতিস্তুরীয়স্তে মনুষ্যজাঃ ॥ ঋঃ। ১০।৮৫।৪০॥

হে স্ত্রি! (তে) তোমার যে (প্রথমঃ) প্রথম বিবাহিত (পতিঃ) পতি তোমাকে (বিবিদে) প্রাপ্ত হয় তাহার নাম (সোমঃ) সুকুমারতা প্রভৃতি গুণযুক্ত বলিয়া সোম। যে দ্বিতীয়বার নিয়োগ দ্বারা তোমাকে (বিবিদে) প্রাপ্ত হয় সে (গন্ধর্ববঃ) এক স্ত্রীর সহিত সম্ভোগ করিয়াছে বলিয়া গন্ধর্ব্ব। যে (তৃতীয় উত্তরঃ) দুই পতির পরবর্তী তৃতীয় পতি সে (অগ্নিঃ) অতি উষ্ণতাযুক্ত হওয়ায় অগ্নিসংজ্ঞক, এবং যাহারা (তে) তোমার (তুরীয়ঃ) চতুর্থ হইতে একাদশ পর্য্যন্ত নিযুক্ত পতি তাহারা (মনুষ্যজাঃ) মনুষ্য নামে অভিহিত হয়। 

যে স্ত্রীপুরুষের পাণিগ্রহণ সংস্কার মাত্র হয়েছে, কিন্তু সংযোগ হয়নি, অর্থাৎ স্ত্রী অক্ষতযোনি এবং পুরুষ অক্ষতবীর্য্য তাঁদের অন্য পুরুষ এবং স্ত্রীর সাথে পুনর্বিবাহ হওয়া উচিত। শূদ্রবর্ণে পূনর্বিবাহ হতে পারে কিন্তু ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য বর্ণের মধ্যে ক্ষতযোনি স্ত্রী এবং ক্ষতবীর্য্য পুরুষের পুনর্বিবাহ হওয়া উচিত নয় (মনুস্মৃতি ৯।১৭৬)।

অর্থাৎ দ্বিজদের মধ্যে পুনর্বিবাহ বা বহুবিবাহ কখনও হওয়া উচিত নয় (সত্যার্থ প্রকাশ; চতুর্থ সমুল্লাস)। যদি স্ত্রীপুরুষ ব্রহ্মচর্য্যে স্থির থাকতে ইচ্ছাকরে তবে স্ত্রীপুরুষ ব্যভিচারাদি কর্ম করে গর্ভপাতাদি কুকর্ম বা সন্তানোৎপত্তি বিষয়ে কোন উপদ্রব হবে না। যদি বংশ পরম্পরা রক্ষার জন্য স্বজাতির কোন বালক বালিকাকে পোষ্যগ্রহণ করা হয়, তবে তাতে বংশরক্ষা হবে এবং ব্যভিচার হয় না। আর ব্রহ্মচর্য্য রক্ষা করতে না পারলে নিয়োগ দ্বারা সন্তানোৎপত্তি করার বিধান রয়েছে। মূলতঃ নিয়োগ সন্তাৎনোৎপত্তির জন্য ব্যবস্তা মাত্র। সন্তানের সর্ব্বপ্রকারে অভাব হলে নিয়োগ করার বিধান অন্যথা নয়।

ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী সত্যার্থ প্রকাশে শাস্ত্রীয় প্ৰমাণ সহকারে এবং তর্ক দ্বারা নিয়োগ বিষয়ে বেদ, মনুস্মৃতি আদির প্রমান দিয়েছেন, যার ইতিহাসে অনেক প্রমান রয়েছে, যেমন মহাভারতের আদিপর্ব অধ্যায় ১১৯ , শ্লোক ৩৬,৩৭।
দেবরাদ্বা সপিণ্ডাদ্বা স্ত্রিয়া সম্যক্ নিয়ুক্তয়া।
প্রজেপ্সিতাধিগন্তব্যা সন্তানস্য পরিক্ষয়ে ৷৷ মনুস্মৃতি ৯।৫৯।।
জ্যেষ্ঠো য়বীয়সো ভার্য়াং য়বীয়ান্ বাগ্রজস্ত্রিয়ম্।
পতিতৌ ভবতো গত্বা নিয়ুক্তাবপ্যনাপদি৷৷ মনুস্মৃতি ৯।৫৮।।
পতির দ্বারা সন্তান উৎপন্ন না হওয়ার কারণে, সন্তান রহিত অবস্থায় পতির মৃত্যু কারণে অথবা কোনো কারণে সন্তানের অভাব হওয়াতে আত্মীয়স্বজনদের দ্বারা শাস্ত্রোক্ত বিধি দ্বারা নিয়োগের জন্য নিযুক্ত হওয়া স্ত্রী দেবর=বর্ণস্থ অথবা নিজের চেয়ে উত্তম বর্ণের পুরুষ অথবা পতির ছয় পুরুষের মধ্যে পতির কনিষ্ঠ ভ্রাতা অথবা জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতার দ্বারা নিয়োগ করে সন্তান প্রাপ্ত করা উচিত।
মনুস্মৃতি এই দুই শ্লোকের ব্যাখ্যায় ঋষি দয়ানন্দ লিখেছেন- ''সপিণ্ড অর্থাৎ পতির ছয় পুরুষের মধ্যে, পতির কনিষ্ঠ বা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, অথবা স্বজাতীয় এবং নিজ অপেক্ষা উচ্চ জাতিস্থ পুরুষের সহিত বিধবা স্ত্রীর নিয়োগ হওয়া উচিত। যদি বিপত্নীক পুরুষ এবং বিধবা স্ত্রী সন্তান কামনা করে,তবে তার নিয়োগ হওয়া উচিত। সর্বথা সন্তানের অভাব হলে নিয়োগ হবে। আপতকালে অর্থাৎ সন্তান ব্যতীত, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রীর সহিত কনিষ্ঠ ভ্রাতার অথবা কনিষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রীর সহিত জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার নিয়োগ হলে এবং সন্তানোৎপত্তির পরেও নিযুক্তগণ পরস্পর সমাগম করলে পতিত বলে গণ্য হবে।'' অর্থাৎ বলা যায় যে এই নিয়োগের শুধুমাত্র আপত্কালে সন্তান উৎপত্তির জন্য এক প্রকার বিধিব্যবস্থা, উক্ত শ্লোক থেকে এটাও প্রমাণ হলো নিয়োগ গুরুজন আদির সম্মতিতেই করা হয়ে থাকে কিন্তু কেউ যদি আপত্কালে ব্যতীত এইরূপ সমাগম করে তাহলে সেটা ব্যভিচার বলেই গণ্য হবে।

বিবাহের ন্যায় নিয়োগও প্রসিদ্ধি সহকারে হওয়া উচিত। বিবাহের ন্যায় নিয়োগেও ভদ্র পুরুষদের অনুমতি এবং বরকন্যার প্রসন্নতা থাকা আবশ্যক। অর্থাৎ যখন স্ত্রীপুরুষের নিয়োগ হয়, তখন তাঁরা স্বীয় আত্মীয় কুটুম্ব স্ত্রী পুরুষদের সমক্ষে (প্রকাশ করবে) "আমরা উভয়ে সন্তানোৎপত্তির জন্য নিয়োগ করছি, নিয়োগের নিয়ম পূর্ণ হলে আমরা আর সংযুক্ত হবো না। যদি এর বিরুদ্ধ কার্য্য করি, তবে পাপী এবং জাতি বা রাষ্ট্রের নিকট দণ্ডনীয় হব। প্রতিমাসে একবার গর্ভাধানকৃত্য করিব এবং গর্ভস্থিতির পর এক বৎসর পর্য্যন্ত পৃথক থাকব।" বিবাহ এবং আপৎকালে নিয়োগ অবশ্য কর্ত্তব্য। এতে ব্যভিচার হ্রস প্রায় এবং প্রেম বশতঃ উত্তম সন্তান উৎপন্ন হওয়াতে মনুষ্যজাতরি উন্নতি হয়। গর্ভপাত সর্ব্বপ্রকার নিবারিত হয়। নীচ পুরুষের সাথে উত্তম স্ত্রীর এবং বেশ্যাদি নীচ স্ত্রীর সাথে উত্তম পুরুষের ব্যভিচার রূপ কুকর্ম্ম সৎকুলের কলঙ্ক, বংশোচ্ছেদ,স্ত্রী পুরুষের সন্তাপ এবং গর্ভহত্যাদি কুকর্ম বিবাহ ও নিয়োগ দ্বারা নিবারিত হয়। এই নিয়োগ করা কর্ত্তব্য।

সবর্ণে অথবা সবর্ণ অপেক্ষা উত্তম বর্ণের পুরুষের সাথে অর্থাৎ বৈশ্যার ক্ষত্রিয় এবং ব্রাহ্মণের সহিত, ক্ষত্রিয়ার ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণের সহিত এবং ব্রাহ্মণীর ব্রাহ্মণের সহিত নিয়োগ হতে পারে। তাৎপর্য্য এই যে বীৰ্য্য সমান অথবা উত্তম বর্ণের হওয়া উচিত, নিজ অপেক্ষা নিম্ন বর্ণের হওয়া উচিত নহে। ধৰ্ম্ম অর্থাৎ বেদোক্ত রীতি অনুসারে বিবাহ অথবা নিয়োগ দ্বারা সন্তানোৎপত্তি স্ত্রী পুরুষ সৃষ্টির প্রয়োজনে। পূর্বে বলা হয়েছে যে দ্বিজগণের মধ্যে স্ত্রী পুরুষের একবার মাত্রই বিবাহ হওয়া সঙ্গত, দ্বিতীয়বার নয়, বেদাদি শাস্ত্রে লেখা রয়েছে। কুমারের সাথে কুমারীর বিবাহ সঙ্গত। বিধবার সাথে কুমারের এবং কুমারীর সাথে বিপত্নীকের বিবাহ ন্যায় বিরুদ্ধ অর্থাৎ অধৰ্ম্ম। বিবাহিত পুরুষ যেমন বিধবাকে বিবাহ করতে ইচ্ছা করে না, সেইরূপ যে পুরুষ স্ত্রী সমাগম করেছে তাকেও কুমারী বিবাহ করতে ইচ্ছা করে না। কুমারী কন্যা বিবাহিত পুরুষকে এবং কুমার বিধবা স্ত্রীকে বিবাহ করতে ইচ্ছা না করলে স্ত্রী পুরুষের নিয়োগের প্রয়োজন হবে। যে ব্যক্তি যেমন তাঁর সথে তেমন ব্যক্তিরই সম্বন্ধ হওয়া উচিত এবং তাহাই ধৰ্ম্ম।

বিবাহ বিষয়ে যেমন বেদাদি শাস্ত্রে প্রমাণ আছে নিয়োগ বিষয়েও সেইরূপ প্রমাণ আছে; যথাঃ

ঋগ্বেদ ১০।৪০।২ কুহস্বিদ্দোষা কুহ বস্তোরশ্বিনা কুহাভিপিত্বং করতঃ কুহোষতুঃ। কো বাং শয়ুত্রা বিধবেব দেবরং মর্য্যং ন যোষা কৃণুতে সধস্থ আ॥ ঋগ্বেদ ১০।১৮।৮ উদীর্ঘ নার্য্যভিজীবলোকং গতাসুমেতমুপ শেষ এহি। হস্তগ্রাভ্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমুভি সং বভূথ॥
-হে (অশ্বিনা) স্ত্রীপুরুষ! যেমন (দেবরং বিধবেব) বিধবা দেবরের সহিত এবং (যোষা মর্য্যঙ্গঃ) বিবাহিতা স্ত্রী স্বীয় পতির সহিত (সধস্থে) এক স্থান ও শয্যায় একত্র হইয়া সন্তান (আ, ক্বণুতে) সর্বপ্রকারে উৎপন্ন করে, সেইরূপ তোমরা উভয়ে স্ত্রী পুরুষ (কুহখিদ্দোষাঃ) কোথায় রাত্রিতে এবং (কুহ বস্তুঃ) কোথায় দিবসে একত্র বাস করিতেছিলে ? (কুহভিপিত্বম্) কোথায় পদার্থ লাভ (করতঃ) করিয়াছিলে? এবং (কুহোবতুঃ) কোন সময়ে কোথায় বাস করিতেছিলে? (কো বাং শযুত্রা) তোমাদিগের শয়নস্থান কোথায়? তোমরা কে এবং কোন দেশবাসী? এতদ্দ্বারা সিদ্ধ হইল যে দেশ বিদেশে স্ত্রী পুরুষ সঙ্গেই থাকিবে এবং বিধবা স্ত্রীও নিযুক্ত পতিকে বিবাহিত পতির ন্যায় গ্রহণ করিয়া সন্তানোৎপত্তি করিবে। বিধবার দ্বিতীয় পতিকে দেবর বলে (নিরুক্ত ৩।১৫)।
যার সাথে নিয়োগ হবে তারই নাম দেবর।

নিয়োগ মিমাংসা পিডিএফ পড়ুন



 

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ