সন্দেহাত্বক গৌতম বুদ্ধ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

29 July, 2024

সন্দেহাত্বক গৌতম বুদ্ধ

সর্ব্বস্য সংসারস্য দুঃখাত্মকত্বং সর্ব্বতীর্থঙকরসন্মতম্ (সর্বদর্শন সংগ্রহ, বৌদ্ধদর্শন পৃ০৪২) বৌদ্ধ এবং জৈন উভয়েই জিনকে তীর্থঙ্কর বলে মানে এবং এরা এবিষয়ে এক।

বাস্তবে কি গৌতম বুদ্ধ ছিলেন ?
National Museum, New Delhi

বৌদ্ধ এবং জৈনদের মত প্রায় এক, অল্প পরিমাণে পৃথক পৃথক হওয়াতে ভিন্নভাব হয়ে যায়।

বৌদ্ধদের মতানুসারে গৌতম বুদ্ধ হলেন ২৮তম বুদ্ধ [Baroni 2002, পৃ. 230।] গৌতম বুদ্ধকে কল্পিত ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী বিষ্ণুর অবতার বলা হয়েছে [Srimad Bhagavatam Canto 1 Chapter 3 Verse 24] ত্রিপিটকে "বুদ্ধবংস" নামক গ্রন্থে গৌতম বুদ্ধের জীবনীও পাওয়া যায় এছাড়া দ্বিতীয় শতাব্দীতে [Fowler 2005, পৃ. 32] অশ্বঘোষ দ্বারা রচিত বুদ্ধচরিত [Beal 1883] নামক মহাকাব্যটিতে বুদ্ধের প্রথম পূর্ণ জীবনী পাওয়া যায়। অশ্বঘোষ (সম্ভবত ৮০ খ্রিঃ - ১৫০ খ্রিঃ) কুষাণ সম্রাট কণিষ্কের সভাকবি ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি ব্রাহ্মণ হলেও পরে ধর্মান্তরিত হয়ে বৌদ্ধ হন ও সাকেতের বলাকারাম বিহারের প্রধান পুরোহিত শ্রীমৎ ধর্মসেন মহাস্থবিরের কাছে গিয়ে উপসম্পদা গ্রহণ করেন। যতদূর জানা যায়, তিনি তার কাকা ভিক্ষু শুভগুপ্তকে দেখেই এ' বিষয়ে প্রথম আকৃষ্ট বোধ করেন (চাকমা, জ্যোতিস্বী. বৌদ্ধ পণ্ডিত অশ্বঘোষ এবং নাগার্জুনের জীবন ও সাহিত্যকর্ম)। বুদ্ধঘোষের রচিত পদ্যচূড়ামণি গ্রন্থেও বুদ্ধের জীবনী পাওয়া যায় [Pali Atthakatha sahitter itibritto,Dilip Kumar Baruya Adorn Publication, page186] 

গৌতম বুদ্ধ বিষয়ে অনুসন্ধান করার আগে জৈনদের তীর্থঙ্কর বিষয়ে জানা প্রয়োজন। বিভিন্ন সূত্র থেকে অনুমান করা যায় জৈন আর বৌদ্ধ দুটো এক পর্য্যায়বাচী শব্দ। জিন যা হতে জৈন শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে এবং বুদ্ধ যা হতে বৌদ্ধ শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে এই দুইই পর্য্যায়বাচী শব্দ। বর্ণা, দীপবংশ ইত্যাদি পুরাতন বৌদ্ধগ্রন্থে শাক্যমুনি গৌতম বুদ্ধকে অকশর ও মহাবীর নামে লেখা হয়েছে। জৈন বিশ্বাস অনুযায়ী চতুর্বিংশ তীর্থংকর মহাবীর খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দ নাগাদ জন্মগ্রহণ করেন। জৈন ও বৌদ্ধগণ বিশ্বাস করে যে অনাদিসিদ্ধ ইশ্বর নেই। এ বিষয়ে রাজা শিবপ্রসাদ মহোদয় ইতিহাস-তিমিরনাশক (তৃতীয় খণ্ড পৃ০ ১০৯) গ্রন্থে লিখেছেন, প্রথম জৈন ও দ্বিতীয় বৌদ্ধ এই দুই নামই পর্য্যায়বাচী (সত্যার্থ প্রকাশ; মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)। পরন্তু বৌদ্ধদের মধ্যে বামমার্গী ও মদ্যমাংসাহারী বৌদ্ধ রয়েছে এর সাসথে জৈনদের মতবিরোধ রয়েছে। স্বামী শঙ্করাচার্য্যের টীকা হতে জানা যায় তিনি তাঁর পুস্তকে জৈন না লিখে গৌতমের মতাবলম্বীকে বৌদ্ধ লিখেছেন। উক্ত রাজা শিব প্রসাদ মহোদয় তাঁর "ইতিহাস-তিমিরনাশক" গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে লিখেছেন স্বামী শঙ্করাচার্য্যের পূর্বে জিনের ভূতপূর্ব কূল এক সহস্র বৎসর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠার সহিত কালাতিপাত করেছিল এবং সমগ্র ভারতবর্ষে বৌদ্ধ ও জৈন মত বিস্তৃত ছিল। অমর কোষে দেখুনঃ👇

বাস্তবে কি গৌতম বুদ্ধ ছিলেন ?
এখানে দেখুন বুদ্ধ ও জিন এবং বৌদ্ধ ও জৈন একের নাম

মহাবীর ছিলেন জৈনদের চব্বিশতম তীর্থংকর (সর্বোচ্চ প্রচারক)। তিনি ছিলেন তেইশতম তীর্থংকর পার্শ্বনাথের আধ্যাত্মিক উত্তরসূরি [ হিহস ২০০২, পৃ. ৯০] খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথমার্ধে প্রাচীন ভারতের এক ক্ষত্রিয় রাজপরিবারে মহাবীর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মা ছিলেন ত্রিশলা ও বাবা ছিলেন সিদ্ধার্থ। তাঁরা ছিলেন পার্শ্বনাথের গৃহী ভক্ত। প্রায় ৩০ বছর বয়সে সকল বিষয়সম্পত্তি পরিত্যাগ করে আধ্যাত্মিক জাগরণের উদ্দেশ্যে মহাবীর গৃহত্যাগ করে কৃচ্ছব্রত গ্রহণ করেন। সাড়ে বারো বছর গভীর ধ্যান ও কঠোর কৃচ্ছসাধনার পর মহাবীর "কেবলজ্ঞান" (সর্বজ্ঞতা) অর্জন করেন। তারপর ৩০ বছর ধর্মপ্রচারের পর খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতেই তিনি মোক্ষলাভ করেন। তাঁর মোক্ষলাভের বছরটি নিয়ে জৈনদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। গৌতম বুদ্ধ অর্থাৎ সিদ্ধার্থের জন্ম বৃত্তান্তে একই ধরনের গল্প পাওয়া যায়। এছাড়া বুদ্ধের গল্পে যীশুর গল্পের ন্যায় অলৌকিক ঘটনাও রয়েছে, যেমন তার মা একটি হাতি দ্বারা গর্ভধারণ করেছিলেন। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থগুলিতে বলা হয়েছে, বুদ্ধ ও মহাবীর ছিলেন সমসাময়িক। অনেক প্রাচীন বৌদ্ধসাহিত্যও এই মতটিকে সমর্থন করে (ডুন্ডাস ২০০২, পৃ. ২৪)। মহাবীরের জন্ম ও মৃত্যুর সময়কালও নিশ্চিত করে বলা যায় না। একটি মতে বলা হয় যে, মহাবীরের জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০ অব্দে এবং মৃত্যু খ্রিস্টপূর্ব ৪৪৩ অব্দে।

অনুমান করা যায় প্রাচীন ভারতে জৈনমতের পুনরুজ্জীবন ও প্রচারকারী মহাবীর গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক হলেও তাঁর থেকে বয়সে বড়ো ছিলেন। এই সিদ্ধার্থ গৌতম আলাদা নাকি মহাবীরের প্রধান শিষ্য ইন্দ্রভূতি গৌতম যিনি তাঁর শিক্ষাগুলিকে জৈন আগমের আকারে লিপিবদ্ধ করে রেখে ছিলেন তা বলা মুশকিল। বলা হয়ে থাকে  এই গ্রন্থগুলি জৈন সাধুদের দ্বারা মৌখিক পরম্পরায় সঞ্চারিত হত। জৈনরা মনে করেন, খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর মধ্যেই মহাবীরের মূল উপদেশাবলির অনেকাংশই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। জৈন বিশ্বাসে মহাবীরের মৃত্যুর পর গণধরেরাই তাঁর উপদেশাবলি স্মরণ করে রেখেছিলেন এবং মুখে মুখে শিষ্য পরম্পরায় প্রচার করেছিলেন। এই গণধরের মধ্যে উল্লেখ্য ইন্দ্রভূতি গৌতম। জৈন বিশ্বাস অনুযায়ী যে সব রাজন্যবর্গ মহাবীরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিম্বিসার ও অজাতশত্রু। 

বিম্বিসার (৫৫৮ খ্রিঃপূঃ – ৪৯১ খ্রিঃপূঃ)[Rawlinson, Hugh George. (1950) A Concise History of the Indian People, Oxford University Press. p. 46] হর্য্যঙ্ক রাজবংশের রাজা ছিলেন,[Stearns, Peter N. (2001) The Encyclopedia of World History, Houghton Mifflin. pp. 76-78] (জন্ম: ৫৬৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ মৃত্যু: ৪৯২ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ যিনি ৫৪২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪৯২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মগধ শাসন করেন।
বাস্তবে কি গৌতম বুদ্ধ ছিলেন ?


অজাতশত্রু হর্য্যঙ্ক রাজবংশের রাজা ছিলেন, যিনি ৪৯২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মগধ শাসন করেন। অনেকের মতে ৪৯১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গৃহবন্দী অবস্থায় বিম্বিসারের মৃত্যু ঘটে। এই সময় দেবদত্তের প্ররোচনায় তিনি গৌতম বুদ্ধকে হত্যার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ ৪৯১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিদ্ধার্থ গৌতম বেঁচে থাকার কথা। কিন্তু সেই সময়ের কোন ঐতিহাসিক প্রমান পাওয়া যায় না। অনেকের মতে গ্রিকো ইন্ডিয়ানরা জৈন ও গ্রিকদের অনুকরনে গৌতম বুদ্ধের চরিত্র তৈরী করেছেন। এবং গ্রিকদের ভাস্কর্যের সাথে জৈন ও বৌদ্ধ ভাস্কর্যের মিল রয়েছে। গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল এবং বিন্দুসারের পুত্র  সম্রাট অশোক (খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩-খ্রিস্টপূর্ব ২৩২) সিদ্ধার্থ গৌতমের প্রায় এক শতাব্দী পরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দীপবংস (দীপবংশ) ও মহাবংস (মহাবংশ) গ্রন্থদ্বয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অশোক গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর ২১৮ বছর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং ৩৭ বছর শাসন করেন। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞগণ বুদ্ধের মৃত্যু ৪৮৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে হয়েছিল বলে ধারণা করেন (Thapar। ১৯৬১। পৃষ্ঠা ১৩–১৪)। অশোকাবদান গ্রন্থানুসারে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করার পরেও অশোক হিংসা ত্যাগ করেননি। এছাড়া জৈন ধর্মাবলম্বীদের তিনি হত্যা করেন বলেও কথিত রয়েছে। যদিও ঐতিহাসিকদের মতে, এই ঘটনাগুলির সত্যতা সম্বন্ধে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
বাস্তবে কি গৌতম বুদ্ধ ছিলেন ?

বৌদ্ধদের গল্প থেকে পাওয়া যায় সিদ্ধার্থ গৌতম ছিলেন শাক্য বংশের নির্বাচিত নেতা শুদ্ধোধনের পুত্র, যা শেষ পর্যন্ত প্রাচীন কোশল রাজ্যের অধীন ছিল। সিদ্ধার্থ গৌতমের পিতা শুদ্ধোধন একজন নির্বাচিত গোষ্ঠীপতি ছিলেন, যার ওপর রাজ্যশাসনের দায়িত্ব ছিল (Gombrich 1988, পৃ. 49)। বৌদ্ধমতানুসাসরে সিদ্ধার্থের জন্মের সময় বা সপ্তম দিনে মায়াদেবীর জীবনাবসান হয়। মাতার মৃত্যুর পর তিনি বিমাতা মহাপজাপতি গোতমী কর্তৃক লালিত হন (Narada 1992, পৃ. 14)। অনুমান করা হয়ে থাকে এই গৌতমী থেকে পরে গৌতম নামটি তৈরীকরা হয়ে থাকে। অনুমান করা হয় জৈনদের জাতক গল্পগুলি থেকে গৌতম বুদ্ধ তথা শাক্যমুনির জীবন চরিত্র নির্মান করা হয়েছে।
বাস্তবে কি গৌতম বুদ্ধ ছিলেন ?
Scenes from the Bhuridatta Jataka in a paper folding book containing extracts from the Tipitaka in Pali language in Khmer script. Central Thailand, 19th century. Source: British Library (Public domain)


Scenes from the Suvannasama Jataka in a paper folding book containing extracts from the Tipitaka in Pali language in Khmer script. Central Thailand, 18th century. Source: British Library (Public domain)


Scenes from the Mahajanaka Jataka in a paper folding book containing extracts from the Tipitaka in Pali language in Khmer script. Central Thailand, 18th century. Source: British Library (Public domain)


Archaeology of Indian Buddhism pdf






চলবে>>





No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ