ঋগ্বেদ ১/২৫/১৮ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

18 October, 2024

ঋগ্বেদ ১/২৫/১৮

 আজীগর্ত্তি শুনঃশেপ ঋষিঃ। বরুণঃ ( বিদ্বান্) দেবতা। গায়ত্রী-ছন্দঃ। ষড়জ-স্বরঃ।।

দর্শ নু বিশ্বদর্শতম্ দর্শ রথমধি ক্ষমি।
এতা জুষত মে গিরঃ।।
ঋগ্বেদ-১/২৫/১৮

পদ০-দর্শম্। নু। বিশ্বऽদর্শাতম্। দর্শম্। রথম্। অধি। ক্ষমি। এতাঃ জুষত মে গিরঃ। ১৮

>পদার্থঃ-( দর্শম্) পুনঃ পুনর্দ্রষ্টুম ( নু) অনুপৃষ্টে ( বিশ্বদর্শতম্) সর্বৈর্বিদ্বদ্ভির্দ্রষ্টব্যম্ জগদীশ্বরম্ ( দর্শম্) পুনঃ পুনঃ সংপ্রেক্ষিতুম্ ( রথম্) রমণীয়ম্ বিমানাতিযানম্ ( অধি) উপরিভাবে ( ক্ষমি) ক্ষাম্যন্তি=সহন্তে জনা যস্মিন্ তস্মিন্ স্থিত্বা।অত্র কৃতো বহুলম্ ইত্যধিকরণে কি্বপ্। বা ছন্দসি সর্বে বিধযো ভবন্তি ইতি অনুনাসিকস্য কি্বব্ ঝলোঃ ইতি দীর্ঘো ন ভবতি ( এতাঃ) বেদবিদ্যাসুশিক্ষা- সংস্কৃতাঃ ( জুষত) সেবধ্বম্ ( মে) মম্ ( গিরঃ) বাণীঃ।।

>সমাণার্থ-( ক্ষমি) এখানে "কৃতো বহুলম্" ( অ০ ৬/৬/১১৩) এই বার্ত্তিক সূত্রে অধিকরণ কারকে "কিবপ্" প্রত্যয় রয়েছে ( ক্ষম+কিবপ্+,সু+ক্ষম+ঙি=ক্ষমি)
। এবং "বা ছন্দসি সর্বে বিধযো ভবন্তি" ( অ০ ১/৪/৬) এই পরিভাষা থেকে "অনুনাসিকস্য কিবব্ঝলোঃ" ( অ০ ৬/৪/১৫) এই সূত্রে প্রাপ্ত দীঘত্ব হয় না।।

>অন্বয়ঃ-হে মনুষ্যা যূযমধি ক্ষমি স্থিত্বা বিশ্বদর্শতম্ বরুণম্ পরেশম্ দর্শম্ রথম্ নু দর্শম্ মে মমৈতা গিরো বাণীর্জুষত নিত্যম্ সেবধ্বম্।।

>স্বপদার্থান্বয়ঃ-হে মনুষ্যা! যূযমধি উপরি ক্ষমি ক্ষাম্যন্তি= সহন্তে জনা যস্মিন্ ব্যবহারে তস্মিন্ স্থিত্বা বিশ্বদর্শতম্ সর্বৈর্বিদ্বদ্ভির্দ্রষ্টব্যম্ জগদীশ্বরম্ বরুণম্=পরশেম্ দর্শম্ পুনঃ পুনর্দ্রষ্টু রয়ম্ রমণীয়ম্ বিমানাদিযানম্ নু দর্শম্ পুনঃ পুনঃ সম্প্রেক্ষিতুম্ মে=মমৈতাঃ বেদবিদ্যাসুশিক্ষাসংস্কৃতাঃ গিরঃ=বাণীর্জুষত=নিত্যম্ সেবধ্বম্।।

>ভাবার্থঃ- যস্মাত ক্ষমাদিগুণসহিতৈর্মনুষ্যৈঃ প্রশ্নোত্তর- ব্যবহারেণানুষ্ঠানেন বিনেশ্বরম্ শিল্পবিদ্যাসিদ্ধানি যানানি চ বেদিতুম্ নু শক্যানি, তত্র যে গুণাস্তেऽপি চ; অস্মাদেতেষাম্ বিজ্ঞানায সর্বদা প্রযতিতব্যম্।

>ভাষার্থ-হে মনুষ্য্! তুমি ( অধি) উচ্চ ( ক্ষমি) ক্ষমা= ব্যবহারে স্থিত হয়ে ( বিশ্বদর্শতম) সকল বিদ্বানদের দ্বারা জানার যোগ্য ( বরুণম্) জগদীশ্বরকে ( দর্শম্) বার-বার জানার জন্য তথা ( রথম্) রমণীয় বিমান আদি যানকে ( নু, দর্শম্) বার-বার জানার জন্য ( মে) আমার ( এতাঃ) বেদের বিদ্যা এবং সুশিক্ষা দ্বারা পবিত্র হয়ে( গিরঃ) বাণীর ( জুষত) নিত্য সেবন করবে।।

>ভাবার্থ-যার কারণে ক্ষমা আদি গুণের দ্বারা যুক্ত মনুষ্য- প্রশ্ন উত্তর ব্যবহারের অনুষ্ঠানের ব্যতীত ঈশ্বর এবং শিল্পবিদ্যা দ্বারা সিদ্ধ হওয়া যানবাহন জানতে পারে না এবং তাদের যে গুণ আছে তাদেরও অতএব তারা বিজ্ঞানের জন্য সদা প্রযত্ন করবে।।

>ভাষ্যসার-মনুষ্য কি কি করবে-মনুষ্য উচ্চকোটির ক্ষমা- ব্যবহারে স্থিত হয়ে,সকল বিদ্বানদের দ্বারা দর্শনীয় জগদীশ্বরকে দর্শন করবে। রমণীয় বিমানাদি যানের সম্প্রেক্ষন করবে। এই উদ্দেস্যের জন্য বেদের বিদ্যা এবং সুশিক্ষা দ্বারা পবিত্র বাণীকে নিত্য সেবন করবে।।

>সমীক্ষা-এই মন্ত্রের সায়ণ ভাষ্যে এই প্রকার আছে- "সকলে দেখার যোগ্য আমাদের উপর অনুগ্রহ করার জন্য এই প্রকট হওয়া বরুণকে আমি নিস্চয়ই থেকে বরুণকে দেখেছি। পৃথিবীতে বরুণসম্বন্ধী রথকে অধিকতা দ্বারা দেখেছি। পৃথিবীতে বরুণসম্বন্ধী রথকে অধিকতা দ্বারা দেখেছি। এই আমার উক্ত স্তুতিকে বরুণ সেবন করেছেন।

আচার্য-সায়ণ বরুণকে এখানে সকলে দেখার যোগ্য মনে করে অর্থ করেছেন যে বরুণ আমাদের উপর কৃপা করার জন্য প্রকট হন। এই কীরূপ বিচিত্র কল্পনা? সকল জীবের আয়ু বৃদ্ধি করেন সর্বদৃষ্টা তথা সর্বত্র ব্যাপক বরুণ= পরমেশ্বরের শরীর ধারণ করে প্রকট হওয়া কিভাবে সম্ভব? যাঁকে বেদ মন্ত্রে স্পষ্টরূপে "স পর্য়॑গাচ্ছু॒ক্রম॑কা॒য়ম॑ব্র॒ণম॑স্নাবি॒রꣳ" ( যজু০ ৪০/৮) শরীর রহিত বলা হয়েছে,যার ব্যাখ্যাতে স্বামী শঙ্করাচার্যও স্থূল, সূক্ষ্ম তথা কারণ শরীর হতে রহিত বলেছেন। সেই পরমেশ্বর শরীররূপে কিভাবে প্রকট হতে পারেন? মহর্ষি এর অর্থ "বিদ্বান্ পুরুষ দ্বারা দর্শনীয়=জানার যোগ্য করেছেন। এই অর্থ সঠিক আছে। কারণ যদি বরুণ= পরমেশ্বর সকলের দর্শনীয় হন,তাহলে এতে প্রত্যক্ষ বিরোধ হয়।

আচার্য সায়ণ মন্ত্রার্থে বরুণ=সম্বন্ধী রখকে দেখার কথা লিখেছেন তবে আশ্চর্যই সৃষ্টি করেছেন। যথার্থে সায়ণ লৌকিক রূঢ় অর্থের আশ্রয় করেন "ক্ষমি=পৃথিবীর উপর" "রথম্=রথ" অর্থ করার কারণ মন্ত্রার্থকে না বুঝা। মন্ত্রে দুই বার "দর্শম্" পদ পঠিত,যা থেকে স্পষ্ট হয় যে,দুই বস্তুকে জানার জন্য মন্ত্রে উপদেশ করা হয়েছে। এক বরুণ= পরমেশ্বরকে, দ্বিতীয় বরুণ রথম্=রমণের সাধন যিমানাদি- যানকে। সায়ণ এই ণমুল্ প্রত্যয়ান্ত "দর্শম্" পদের ব্যাখ্যা লুঙ্ লকার মনে করেছেন। এখানে সায়ণ ব্যাকরণ- স্বরসম্বন্ধী জ্ঞানেরও ভুল করেছেন । একই প্রকার মন্ত্রে "জুষত" ক্রিয়া" লোট্ লকারের,তারও ব্যাখ্যান্ লঙ্ লকারে করে যেখানে ব্যাকরণের উপেক্ষা করেছেন,সেখানে মন্ত্রে নিজের কল্পিত-কথার আগ্রহের কারণে মিথ্যা ব্যাখ্যা করেছেন।

সায়ণ-ভাষ্যে "ক্ষমি=পৃথিবীর উপর" অর্থও সংগত নয়। রথ-বিমানাদিযান তৈরী তথা বরুণ=পরমেশ্বরকে জানার জন্য যেখানে বেদ-জ্ঞানকে জানা পরমাবশ্যক,সেখানে বিদ্বানদের পরস্পর সহনশীল ব্যবহারও পরমাবশ্যক হয়। বিদ্বান্ পরস্পর মিলে সহনশীতার কারণই জ্ঞান-বিজ্ঞানকে প্রাপ্ত করতে পারেন। এই তথ্যকে মন্ত্রে "ক্ষমি" পদে সহনার্থক ধাতু দ্বারা স্পষ্ট করা হয়েছে। এই প্রকার পরমেশ্বর মনুষ্যকে নিজের বেদ-বিদ্যাকে জানার স্পষ্ট উপদেশ করেছেন। যাকে না বুঝে সায়ণ "শুনঃশেপের বাণীকে বরুণ সেবন করেছেন" ব্যাখ্যা করেছেন। এটি সায়ণের ব্যাখ্যা থেকে বেদ-জ্ঞান পরমেশ্বরের কখনও সিদ্ধ হতে পারে না। পাশ্চাত্য বিদ্বানদের বেদ সম্বন্ধে ভ্রান্তির কারণ এই সায়ণ ভাষ্যই। যদি সায়ণ বেদকে ঈশ্বরীয় জ্ঞান মান্য করতেন,পুনরপি এমন পরস্পর বিরোধী ব্যাখ্যা সায়ণ কি করতেন? এর কারণ স্পষ্ট যে,তাঁর পর্বাগ্রহই তাঁকে সত্যার্থ করা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে।।

( ভাষ্য-মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর সংস্কৃত ভাষ্যের আধারে)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ