বৈদিক বিবাহে সিঁদুর দান - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

28 January, 2025

বৈদিক বিবাহে সিঁদুর দান

বৈদিক বিবাহে সিঁদুর দান
'বিবাহ' শব্দটি 'বি' উপসর্গপূর্বক 'বহ প্রাপণে' ধাতুতে 'ঘঅ্' প্রত্যয় যোগ করে গঠিত এবং 'উদ' উপসর্গ হতে পর্যায়বাচী 'উদ্ভাহ' শব্দ তৈরি হয়। বিবাহের অর্থ হলো বিধিপূর্বক একে অপরকে বৈধভাবে গ্রহণ করা এবং পারস্পরিক দায়িত্ব পালন করা। শাস্ত্র অনুসারে এটি একটি সামাজিক আইন তথা সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন। এতে, পুরুষ এবং মহিলা তাদের আরাম এবং সুবিধার জন্য গৃহকর্তার কর্তব্য পালনের জন্য দম্পতি হিসাবে একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সময়ের সাথে সাথে, তারা প্রজননের মাধ্যমে মানব জাতির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
'বিবাহ' শব্দটি সরাসরি বেদে পাওয়া যায় না, তবে বিবাহের জন্য মূলে যে মন্ত্রটি পাঠ করা হয়, তাতে 'হস্তম গৃহ্নামি' পদ স্পষ্টভাবে বিবাহের তাৎপর্যের বোধক। এর অর্থ হল স্বামী সারা জীবন তার স্ত্রীর হাত ধরে থাকবে এবং তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবে। বিয়েতে হাত ধরা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে 'পাণিগ্রহণ' (ঋ০ ১০।৮৫।৩৬ "हस्तं॒ मया॒ पत्या॑ ज॒रद॑ष्टि॒र्यथास॑:") কে বিবাহের পর্যায়বাচী (সমার্থক শব্দ) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও অন্যান্য অনেক জাতি বৈদিক ধর্মকে তার মূল রূপে পরিত্যাগ করেছে, তবুও তাদের কিছু আচার-অনুষ্ঠানে বৈদিক রীতিনীতির প্রভাব এখনও দৃশ্যমান হয়। যেমন পার্সিয়ানদের মধ্যে বিয়ের সময় বর কনের হাত ধরে, তারা এই বিবাহ পদ্ধতিকে 'হাথবরো' বলে। রোমান মহিলারাও বিয়েতে বরের ডান হাতের উপর তার ডান হাত রাখেন, এর বিস্তারিত বিবরণ Encyclopaedia of Religion-এর "বিবাহ" শিরোনামে দেখা যাবে।
বৈদিক বিবাহ সংস্কারে বধূর বেণী খুলে দেওয়ার পর অর্থাৎ কেশ মোচন ক্রিয়া সম্পাদনের পর "সপ্তপদী" বিধি আরম্ভ হয়। এটি বৈদিক বিবাহ অনুষ্ঠানের শেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা সম্পন্ন হওয়ার পরে বৌধানিক দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হয়েছে বলে বিবেচিত হয়। এই সময় বরের উপবস্ত্রের (উত্তরীয়) সাথে বধূর উত্তরীয়কে গাঁঠ দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় যা 'গ্রন্থি বন্ধন' বা 'গাঁঠছড়া' বলা হয়; এটি কোনও শাস্ত্রীয় বিধান নয়, কিন্তু বেদাবিরুদ্ধ তথা পরম্পরাগত লোকাচার (লোক রীতিনীতি) হওয়ায় এতে কোন আপত্তি নেই; তথা এক সময় হতে চলে আসছে। মহা কবি কালিদাসের রঘুবংশের সময় হতে নিশ্চিত করে যে এই প্রথাটি কমপক্ষে আড়াই হাজার বছর হতে চলে আসছে বলা যায়।

বৈদিক বিবাহ পদ্ধতি অনুসারে, মধুপর্ক, পানি-গ্রহণ, প্রধানহোম, লাজাহোমা আদি প্রধান বিধির পরেও, সপ্তপদী ছাড়া বিবাহ সম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হয় না। সপ্তপদীর আচার সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথেই বিবাহের সম্পর্ক আইনগত এবং ধর্মীয়ভাবে নিশ্চিত হয়ে যায়। বিবাহ রীতি অনুসারে, সপ্তপদীর পরেও কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করা বাকি থাকে, সেগুলোর বিশেষ কোনও গুরুত্ব নেই। সপ্তপদীর পর বিবাহ বন্ধন অটুট হয়ে যায়। অন্য কথায়, আমরা বলতে পারি যে বিবাহ অনুষ্ঠান ঈশ্বর, নিজের আত্মা এবং গুরুদের সাক্ষ্যে পরিচালিত হয়, যাতে দম্পতির মধ্যে আজীবন সম্প্রীতি এবং একে অপরের সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
তেমনই বাংলা তথা বেশকিছু অঞ্চলে সিদুর বর্ত্তমানে বিবাহিতা নারীর প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা বিবাহের একটি অংশে লোকাচার হিসেবে চলে আসছে। যদিও এই সিদুর দেওয়া বা সিদুর পরা কোন শাস্ত্রীয় বিধি নয়। এই সিদুর দান বৈদিক বিবাহের মধ্যেও আজ কিছু অঞ্চলে চলে তবে এটা মহর্ষি দয়ানন্দকৃত সংস্কার বিধিতেও উল্লেখ নেই। যা লেখা পাওয়া যায় তা 'সংস্কারবিধি' বাংলা সংস্করণে বাংলার আচার হিসেবেই লেখা রয়েছে।

 অনেকের ধারনা পারস্কর গৃহসূত্রে সিঁদুর দান বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, যেটা হরিদত্ত শর্মাজী মানতেন। নীচে পারস্কর গৃহসূত্র ১/৮/৯ দেখানো হলঃ

পারস্কর গৃহসূত্র ১/৮/৯
পারস্কর গৃহসূত্র ১।৮।৯


পারস্কর গৃহসূত্র ১/৮/৯


অথৈনামভিমন্ত্রয়তে সুমঙ্গলীরিয়ং বধূরিমাং সমেত পশ্যত। সৌভাগ্যমস্যৈ দত্ত্বা যাথাস্তং বিপরেতনেতি। [পা০ গৃ০ ১।৮।৯] -------অর্থাৎ, (অথ) হৃদয়স্পর্শের পশ্চাতে (এনাম্) এই বধূকে (অভিমন্ত্রয়তে) অভিমন্ত্রিত করা হয়, সামনে রেখে উপস্থিত সকলকে সম্বোধন করা হয় (সুমঙ্গলীঃ ইতি) এই মন্ত্র বলে। এখানে সুমঙ্গলী অর্থাৎ উত্তম মঙ্গলময় অর্থ করা হয়েছে( বেদ রত্ন ড.সত্যব্রত রাজেশ কৃত ভাষ্যে)। এর ভাবর্থের পরে লিখেছেন ড. হরিদত্ত শর্মা এটাকে সিঁদুর দান বিধি মানতেন।

সিঁদুর দান নিয়ে মহেন্দ্র কুমার শাস্ত্রী এবং হরিদত্ত শর্মা জী উক্ত মন্ত্র যা মন্ত্র ব্রাহ্মণম্_১।২।১৪। গোভিল গৃহ্যসূত্র_২।১।১৪। আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র _১।৮।৭। জৈমিনী গৃহ্যসূত্র_১।৮।৭ এ পরিলক্ষিত হয়। সিঁদুর দান বিষয় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু  যুধিষ্ঠির মীমাংসক জী স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী লিখিত সংস্কারবিধির সম্পাদন করার সময় ব্রহ্মমুনি জীর ন্যায় "মঙ্গলময়ী" আশির্বাদ অর্থ করেছেন।

ব্রহ্মমুনি জী এই মন্ত্রের ভাষ্য নিম্নরূপ করেছেনঃ

सु॒म॒ङ्ग॒लीरि॒यं व॒धूरि॒मां स॒मेत॒ पश्य॑त ।

सौभा॑ग्यमस्यै द॒त्त्वायाथास्तं॒ वि परे॑तन ॥ 

पदार्थान्वयभाषाः - (इयं वधूः सुमङ्गलीः) यह नवविवाहिता वधू शुभमङ्गलवाली है (इमां पश्यत समेत) हे इसके सम्बन्धी जनो तथा हितचिन्तको ! इसका दर्शन करो और सम्यक् आलिङ्गन करो (अस्यै सौभाग्यं दत्त्वाय) इसके लिए “सौभाग्य हो” यह आशीर्वाद देकर (अथ) पुनः (अस्तं विपरेतन) अपने-अपने घर को जाओ ॥

भावार्थभाषाः -वधू घर में मङ्गल का सञ्चार करनेवाली है। सम्बन्धी और हितचिन्तक सौभाग्य का आशीर्वाद दें और स्नेह से मिलें ॥        


সু॒ম॒ঙ্গ॒লীরি॒য়ং ব॒ধূরি॒মাং স॒মেত॒ পশ্য॑ত।
সৌভা॑গ্যমস্যৈ দ॒ত্ত্বায়াথাস্তং॒ বি পরে॑তন॥ [ঋগ্বেদ ১০। ৮৫। ৩৩] / অথর্ববেদ ১৪।২।১।২৮

(ইয়ং বধূঃ সুমঙ্গলী) এই বধূ মঙ্গলময়ী। (অতঃ ইমাং কন্যাং) এই কন্যাকে (সমেত) সম্মিলিত হয়ে (পশ্যত) মঙ্গলদৃষ্টি দ্বারা অবলোকন কর। (অস্যৈ এই কন্যাকে সৌভাগ্যং) সৌভাগ্য অর্থাৎ মঙ্গলময় আশীর্বাদ (দত্ত্বা) দান করে (অস্তং) স্ব স্ব স্থানে (যাত) গমন কর। (ন বিপরেতনেতি) বিমুখ হয়ো না। 

পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী জী উক্ত মন্ত্রের ভাষ্য করেছেনঃ "সুমঙ্গলীঃ=বড়ে মঙ্গলবালী হৈ" সকল জ্ঞানী পুরুষদের একসাথে আশীর্বাদ করা উচিত যে কনে যেন তার স্বামীর জীবনদাতা হয় এবং সর্বদা সুখে থাকে এবং কখনও কষ্ট না পায়। অর্থাৎ সকল জ্ঞানী ব্যক্তিদের একসাথে আশীর্বাদ করা উচিত যে কনে তার স্বামীর প্রাণ এবং সর্বদা সুখী থাকে। পরে ত্রিবেদী জী লিখেছেন, এই মন্ত্র মহর্ষি দয়ানন্দের দ্বারা সম্পাদিত "সংস্কার বিধি"-তে আশীর্বাদ প্রদানের জন্য প্রয়োগ করা হয়েছে।

पदार्थान्वयभाषाः -[हे विद्वानो !] (इयम्वधूः) यह वधू (सुमङ्गलीः) बड़े मङ्गलवाली है, (समेत) मिलकर आओ और (इमाम्) इसे (पश्यत) देखो। (अस्यै) इस [वधू] को (सौभाग्यम्) सुभागपन [पति की प्रीति] (दत्त्वा) देकर (दौर्भाग्यैः) दुर्भागपनों से [इस को] (विपरेतन) पृथक् रक्खो॥२८॥

भावार्थभाषाः -सब विद्वान् लोग मिलकरआशीर्वाद देवें कि वधू पति की प्राणप्रिया होकर सदा आनन्द से रहे और कभी कष्ट नउठावे ॥२८॥यह मन्त्र कुछ भेद से ऋग्वेद में है−१०।८५।३३, और महर्षिदयानन्दकृतसंस्कारविधि विवाहप्रकरण में आशीर्वाद देने के लिये विवाह में आये लोगों केबुलाने में विनियुक्त है ॥

टिप्पणी:२८−(सुमङ्गलीः) छान्दसो विसर्गः। बहुमङ्गलवती (इयम्)दर्शनीया (वधूः) (इमाम्) (समेत) समेत्य आगच्छत (पश्यत) अवलोकयत (सौभाग्यम्)सुभगत्वम्। पतिप्रियत्वम्। बह्वैश्वर्यवत्वम् (अस्यै) (वध्वै) (दत्त्वा) (दौर्भाग्यैः)दुर्भगत्वैः। ऐश्वर्यराहित्यैः। पतिस्नेहशून्यकर्मभिः (विपरेतन)अन्तर्गतण्यर्थः। विपरागमयत। पृथक् कुरुत ताम् ॥

মন্ত্র ব্রাহ্মণের অন্তর্গত, এই মন্ত্রটি সায়ণাচার্য ভাষ্য করেছেনঃ সুমঙ্গলীরিত্যেষা বধূদর্শনার্থমাগতানাং যোষিতাং দর্শনে বিনিযুক্তা।তথা চোক্তম্---বধূং দ্রষ্টুমাগতাঃ সুমঙ্গলীঃ স্ত্রিয়ো বীক্ষমাণীঃ সুমঙ্গলীরিতি জপেত্। পাঠস্তু সুমঙ্গলীরিয়মিতি।অনুষ্টুবিয়ম্।দ্রষ্ট্র্যো যোষিতো দেবতাঃ। হে দ্রষ্টৃযোষিতঃ।সুমঙ্গলীঃ শোভনমঙ্গলবতীঃ যুষ্মানিয়ং বধূঃ পশ্যতি অত ইমাং সমেত সঙ্গতা ভবত।সঙ্গত্যৈতাঃ পশ্যত।দৃষ্টা চ সৌভাগ্যং সুভগত্বম্ অস্যৈ বধ্বৈ দত্ত্বায় দত্ত্বা।অথ অনন্তরম্।অস্তং---গৃহনামৈতত্--স্বগৃহং বিবিধং পরেতন পরেত গচ্ছত।তপতনবিত্যাদিনা তনাদেশঃ। অস্তি হোমানন্তরং বধূবরয়োরসেবকঃ---অপরেণাগ্নিমৌদকো গত্বা পাণিগ্ৰাহং মূর্ধন্যবসিঞ্চেদ্বধূং চেতি সূত্রিতত্বাত্।।

মন্ত্র ব্রাহ্মণের অন্তর্গত, এই মন্ত্রটির আচার্য সামশ্রমী জী ভাষ্য করছেনঃ

হে ঈক্ষকাঃ! 'ইয়ং' পরিণীতা 'বধূঃ' সুমঙ্গলী সুমঙ্গলা কল্যাণী অস্তি;যূয়ম্ 'সমেত' সমাগচ্ছত্;এত্য চ 'ইমাং' বধূং 'পশ্যত' কিঞ্চ 'অস্যৈ' 'সৌভাগ্যং' 'দত্ত্বা'(আশীর্ভিরিতি যাবত্) 'অস্তং' স্বগৃহং 'বিপরেতন যাথ' প্রত্যাবৃত্তং গচ্ছত।

এবং প্রাচীন আচার্য গুণবিষ্ণু জী ভাষ্য করেছেনঃ- অনুষ্টুবিয়ং বিবাহেক্ষকজনপ্রতিমন্ত্রণে বিনিযুক্তাশীর্বাদপরাশাস্যমানদৈবতা। হে ঈক্ষকাঃ সুমঙ্গলীঃ প্রশস্তমঙ্গলা ইয়ং বধূঃ পরিণীতা যতঃ অতঃ যূয়ম্ এনাং সমেত সংগচ্ছত পশ্যত চ আলোকয়ত।কিঞ্চ সৌভাগ্যম্ সুভগত্বম্ অস্যৈ দত্ত্বায় দত্ত্বা অথ অনন্তরম্ অস্তং গৃহং বিপরেতন যূয়ং গচ্ছতেত্যর্থঃ।।

অর্থাৎ, মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর লিখিত সংস্কারবিধি, মহাপণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসক জীর ব্যাখ্যা, প্রাচীন টীকাকার গুণবিষ্ণু, বিখ্যাত ভাষ্যকার আচার্য সায়ণ, আচার্য সত্যব্রত সামশ্রমীর ভাষ্য, পারস্কর গৃহ্যসূত্র ও অন্যান্য গৃহ্যসূত্র গুলোতেও কোথাও সিঁদুর দানের প্রসঙ্গ নেই।

বৈদিক বিবাহে সিঁদুর দান
কেবল মহেন্দ্র কুমার শাস্ত্রী জীর লেখা "বৈদিক বিবাহ সংস্কার বিধিঃ" পুস্তকে লেখক নিজের মন থেকে বিবাহ প্রকরনে বর-বধুর মস্তকে হাত রেখে মাঙ্গ সিঁদুরে ভরানোর কথা লিখে মহর্ষি দয়ানন্দ জীর সংস্কার বিধিরই সংস্কার করে দিয়েছেন।

পারস্কর গৃহসূত্র ১।৮।১১-১৩ ব্যখ্যাকার জগদীশচন্দ্র মিশ্রের মতে গ্রামের বয়স্ক মহিলারা যা বলবেন তা সামাজিক রীতিনীতি হিসেবেই অনুসরণ করা উচিত, কারণ স্মৃতিতে বলা হয়েছে যে শাস্ত্রীয় রীতিনীতির পাশাপাশি, পরিবারের বয়স্ক মহিলাদের কথা বিবাহের ক্ষেত্রে এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। অর্থাৎ সিঁদুর দান প্রক্রিয়াটি যদি সেই রীতি অনুযায়ী ধার্য হয় তবে মানা যেতে পারে। বৈদিক ব্যখ্যাকার সত্যব্রত রাজেশ জীর মতে "শাস্ত্রীয় বচন ব্যতীত অন্য কোন প্রথা, কুল পরম্পরায় প্ৰচলিত থাকলে তা অনুসরণ করা যায়"- পা০১|৮|১১॥

বৈদিক বিবাহে সিঁদুর দান
পারস্কর গৃহসূত্র ১।৮।১১-১৩
(ব্যখ্যাকার জগদীশচন্দ্র মিশ্র)

যাইহোক অবিবাহিত মেয়েরা সিঁথিতে সিদুর পরে না, কপালে টিপ পরে। বিধবাদের সিঁদুর ব্যবহার নেই তথা নিষিদ্ধ। বিবাহিতা বাঙালি হিন্দু মেয়েদের সিঁদুর দেওয়ার প্রচলন মুসলমানদের অত্যাচারের ফলে বৃদ্ধি পেয়ে আজ অনেক স্থানেই দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে মেয়েদের সিঁথিতে রাসায়নিক সিদুর (লেড অক্সাইড) ব্যবহার হলেও, অরগ্যানিক সিদুর বিক্সা ওরেলানা গাছ বা সিদুর গাছ হতেও পাওয়া যায়।
পৌরাণিক মতে যে পুস্তক হতে বিবাহাদি ক্রিয়া সম্পাদন করা হয় সেই পুরোহিত দর্পণেও "আচার বশতঃ জামাতা বধূর সীমন্তে সিন্দুর তিলক দিয়া অবগুণ্ঠন দেওয়া হয়।" বলে বর্ননা পাওয়া যায় (পুরোহিত দর্পন; তৃতীয় খণ্ড ৪৪৮ পৃ০)। বর্ত্তমান সময়ে বেশ কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে সিঁদুর-দান বা বিবাহে সিদুর পরানোর বিরোধীতা করার বিষয় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। বস্তুতঃ বৈদিক মন্যতার ছেলে মেয়েরাই বৈদিক বিবাহে সিদুর নিয়ে প্রশ্ন তুলছে মনে হলেও, বাস্তবে বিবাহে সিদুর পরানো নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করছে না! যারা এর বিরূদ্ধে প্রচার করছে তারা বলতে চাইছে বৈদিক রীতিতে সিদুর দানটা বিবাহ সংস্কারের অংশ নয়। এটা বেদে লেখা নেই এমনকি মহর্ষি দয়ানন্দ স্বামীও বৈদিক সংস্কার বিধির মধ্যে উল্লেখ করেন নি; তাই "বৈদিক বিবাহ সংস্কার অনুষ্ঠান" ক্যাপশন ব্যবহার করে বৈদিক বর-বধূর সিঁদুর দেওয়ার ছবি দেওয়া বৈদিক আচার নয়। আর যারা এর পক্ষে কথা বলছেন তারা এমন ভাব দেখাচ্ছেন যে তারা সংস্কার বিধি ও বেদ হতে প্রমাণ দেখিয়ে ডিবেট করবেন আর্য সমাজের অন্য পণ্ডিতবর্গের সাথে। সাথে গৃহসূত্রাদি হতে বৃথা প্রমান দেখানোর চেষ্টা করছেন সমাজিক আচার হিসেবে বিধান রয়েছে। কারন সমস্ত সামাজিক রীতিকে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। যাইহোক, এই ধরনের গোলযোগ শুরু হওয়ায় যারা নতুন বৈদিক মতে আসছেন এবং পৌরাণিক মহলেও সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে ! এতে সমাজের কোথায় ভালো হচ্ছে ? মহর্ষি দেব দয়ানন্দ আর্য সমাজের ৬নং নিয়মে লিখেছেন সংসারের উপকার করা এই সমাজের মুখ্য উদ্দেশ্য অর্থাৎ শারীরিক, আত্মিক ও সামাজিক উন্নতি করা এবং সকলের সঙ্গে প্রীতিপূর্বক ধর্মানুসারে যথাযোগ্য ব্যবহার করা উচিত। সাথে মহর্ষি ১০নং নিয়মে বলেছেন সব মানুষকে সামাজিক সর্বহিতকারী নিয়ম পালনে পরতন্ত্র থাকতে এবং প্রত্যেক হিতকারী নিয়মে সবাইকে স্বতন্ত্র থাকতে। আর্যসমাজীরাকি আর্যসমাজের মূলনীতি ও বিশ্বাসকে টাটা বাই-বাই করছেন ?!!! আমাদের প্রত্যেককে সামাজিক সর্বহিতকারী নিয়ম যেমন বিবাহে সিঁদুরদান বা সিঁদুর পরার নিয়ম পালনে পরতন্ত্র থাক উচিৎ॥

1 comment:

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্য ও য়জ্ঞোপবীত

একাদশ অধ্যায় মেখলা প্রাচীনকালে গুরুকুলগুলোতে বেদের বিদ্বান বেদসংজ্ঞক আচার্য য়জ্ঞোপবীত সংস্কার করাতেন আর তারপর তারা বেদারম্ভসংস্কারের সময়...

Post Top Ad

ধন্যবাদ