রাজা শুদ্ধোদন পুত্রের মনের কথা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে পুরোহিত-ব্রাহ্মণকে ডেকে বলিলেন-"হে মহাব্রাহ্মণ, যাও কপিলবস্তু মহানগরে। ব্রাহ্মণী হউক, ক্ষত্রিয়া হউক, বৈশ্যা হউক বা শূদ্রী হউক, যার মধ্যে এই রকম গুণ আছে সেই কন্যাকে কুমারের জন্য ব্যবস্থা কর। কুল বা গোত্র সম্বন্ধে আমার পুত্রের কোন আপত্তি নাই। যাহার মধ্যে গুণ, সত্য এবং ধর্ম' আছে সেই রকম নারীই কুমারের কাম্য।”
"ব্রাহ্মণীং ক্ষত্রিয়াং কন্যাং বৈশ্যাং শূদ্রীং তথৈবচ।
যস্যা এতে গুণাঃ সন্তি তাং কন্যাং মে প্রবেদয়॥
ন কুলেন ন গোত্রেণ কুমারো মম বিস্মিতঃ।
গুণে সত্যে চ ধর্মে চ তত্রাস্য রমতে মনঃ॥"-ললিতবিস্তর (দ্বারভাঙ্গা) পৃঃ ১০৯
রাজা মন্ত্রীকে বললেন- “সব চেয়ে সুন্দরী মেয়ের খোঁজ করতে ভাল ঘটক পাঠিয়ে দিন। সমস্ত রাজ্য খুঁজে তিনি পরমাসুন্দরী একটি মেয়ে আনবেন।” মন্ত্রী বললেন- “তার চেয়ে অশোক-উৎসবের অনুষ্ঠান করে রাজ্যের যত সুন্দরী কুমারীদের নিমন্ত্রণ করুন। ঐ দিন কুমার স্বহস্তে তাঁদের অশোক-ভাণ্ড উপহার দেবেন-সৌন্দর্য্যের পুরস্কার হিসাবে। তা হলেই রাজপুত্র তাদের কারুর রূপ দেখে বিয়ে করতে চাইবেন। তখন আর ভাবনার কিছু থাকবে না।”-"গৌতম বুদ্ধ" লেখক ত্রিভঙ্গ
অশোক অষ্টমী ওড়িশার একটি মহা উৎসব। যা বেশিরভাগই পূর্ব ওড়িশার ভুবনেশ্বরে পালিত হয়। অশোক অষ্টমীর দিনটি ভগবান রাম, ভগবান শিব এবং দেবী পার্বতীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত। তাদের সাথে, এই দিনে অশোক গাছের পূজা করা হয় কারণ এটি ভগবান শিবের অনুগ্রহ লাভ করে। এখনও এটি চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয়। এটি চৈত্র নবরাত্রির উৎসবের সাথে মিলে যায়। এটি অশোক রোহিণী বা ভবানী অষ্টমী নামেও পরিচিত। ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দিরে এটি একটি মহা উৎসব। এটি সাত দিন ধরে পালিত হয়। অশুভ শক্তির উপর ভগবান রামের বিজয় উদযাপনের জন্য মানুষ অশোক অষ্টমীর আয়োজন করে। এই দিনটিকে ভগবান লিঙ্গরাজের যাত্রা হিসেবে পালন করা হয়। মানুষ ভগবান শিব এবং দেবী পার্বতীর আরাধনা করে তাদের আশীর্বাদ লাভ করে। প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যও এই দিনটি পালিত হয়। অশোক গাছের পূজা করা দেবতার পূজার সমতুল্য। তাই মানুষ শান্তি ও সুখ পেতে এবং তাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য অশোক গাছের পূজা করে।
কথিত আছে যে অশোকষ্টমী এসেছিল ভারতীয় উপমহাদেশের শাসনকারী রাজা অশোকের কাছ থেকে। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর তিনি তার মহান যোদ্ধা জীবন পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বৌদ্ধধম্ম গ্রহণ এবং অহিংসা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অশোক অষ্টমীর এই দিনে, অবশেষে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
যাইহোক একটা ভাল দিন দেখে ঐ রকম ব্যবস্থাই হলো। রাজ্যে যত সুন্দরী কুমারী ছিল-ভাল করে সেজেগুজে একে একে এসে সিদ্ধার্থের কাছে উপহার নিয়ে গেল। ক্রমে ক্রমে অশোক-ভাণ্ড যা ছিল, সব শেষ হয়ে এলো।
সব শেষে এলো একটি মেয়ে-মেয়ে তো নয়, যেন চাঁদের কণা! কী সুন্দর গঠন যে সেই মেয়েটির, তা কী বলবো! কাঁচা সোনার মত তার গায়ের রঙ, পদ্মফুলের মত সুন্দর মুখখানি, কালো চোখ দুটি হরিণীর মতই টানা টানা। একরাশ কোঁকড়া কোঁকড়া কালো চুল রেশমের মত নরম।
মেয়েটির নাম গোপা। রাজপুত্র অবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে রইলেন। এত রূপ রাজকুমার কখনো দেখেননি। ধীরে ধীরে এসে ফুলের মত নরম হাত দুটি যোড় করে গোপা বললেন-"রাজপুত্র, আমার পুরস্কার কই?" নিজের আঙুল থেকে মণিময় অঙ্গুরি খুলে সিদ্ধার্থ গোপার আঙুলে পরিয়ে দিলেন। যারা সেখানে ছিল, রাজার কাছে গিয়ে সব বললে। রাজা কতকটা নিশ্চিন্ত হলেন।
গোপার পিতা দণ্ডপাণির কাছে শুদ্ধোদন দূত পাঠালেন-গোপার সঙ্গে সিদ্ধার্থের বিবাহের প্রস্তাব করে।দণ্ডপাণি বললেন-"আমার মেয়েকে অনেক রাজপুত্রই বিয়ে করতে চান। কিন্তু তাঁদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে ভাল তীর ছুড়তে, ঘোড়ায় চড়তে বা তলোয়ার খেলতে পারবেন, তাঁর সঙ্গেই আমি গোপার বিয়ে দেবো।”
রাজা চিন্তিত হলেন-আদরে পালিত সুকুমার সিদ্ধার্থ কি সবাইকে হারিয়ে দিতে পারবে? সব শুনে সিদ্ধার্থ বললেন- “বাবা, আমি যুদ্ধের প্রতিযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি, আপনি নগরে ঘোষণা করে দিন।"
ঠিক হলো, সপ্তাহপরে কপিলবস্তুর রঙ্গভূমিতে কুমারদের প্রতিযোগিতার যুদ্ধ হবে। যিনি জয়ী হবেন-তিনি গোপাকে বিবাহ করবেন।
কপিলবস্তুর রঙ্গভূমি লোকে লোকারণ্য। কত দেশ-বিদেশ থেকে রাজকুমারেরা এসেচেন প্রতিযোগিতা করতে। রাজপুরী হতে মেয়েরাও এসেচেন দেখতে। নিদ্দিষ্ট সময়ে দামামার আওয়াজ খেলার আরম্ভ জানিয়ে দিলে। বিপুল উৎসাহে কুমারেরা খেলা সুরু করলেন। প্রথমে তাঁর-ছোড়ার পরীক্ষা। মস্ত বড় একটা ধনুকে ছিলা পরিয়ে তীর ছুড়ে একটা লক্ষ্য বিধতে হবে। লক্ষ্যটা হবে খুব একটা ছোট জিনিষ, আর সেটা থাকবে খুব দূরে। তীর-ছোড়া তো দূরের কথা-অনেক রাজপুত্র ধনুকে ছিলা পরাতে গিয়ে ছিটকে পড়লেন দশ হাত দূরে। মেয়েরা তো হেসেই খু ন!
অনেক কষ্টে দেদত্ত, নন্দ আর অর্জুন সেটাতে ছিলা পরালেন। ছয় রশি দূর হতে নন্দ, আর আট রশি দূর হতে দেবদত্ত ও লক্ষ্য বিধলেন। তারপর সিদ্ধার্থের পালা। তিনি ধনুখানায় এমনি জোরে গুণ দিলেন যে, সেটার দুই দিক্ এক জায়গায় এসে ঠেকলো। হেসে সিদ্ধার্থ বললেন- "এ ধনুটা তো একটা খেলার জিনিষ।এর চেয়ে ভাল ধনু শাক্যবংশের যোদ্ধারা কি যোগাড় করতে পারেননি?"
এখন, দেবদত্ত ছিলেন সিদ্ধার্থের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। হিংসায় জ্বলে উঠে তিনি আর তাঁর দলের লোকেরা বললেন-"ঐ মন্দিরে শাক্য-বংশের পূর্ব্বপুরুষ সিংহহমুর বিখ্যাত ধনু আছে-যেটাতে ছিলা পরাতে পারে এমন বীর আজকাল শাক্যবংশে কেউ নেই। ওখানাই কুমার সিদ্ধার্থকে এনে দেওয়া হোক।" সিংহহমুর ধনুখানা ছিল ভয়ানক ভারি তার সমস্তটা লোহা দিয়ে তৈরী, আর তার ওপর সোনার তার জড়ানো। চারজন লোকে হিমসিম খেয়ে সেখানা এনে সিদ্ধার্থের সামনে রাখলে।
তখন দেবদত্ত ও আরো অনেক রাজপুত্র সেখানায় ছিলা পরাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু ছিলা পরাবেন ধনুটা নোয়াতে পারলে তো? প্রাণপণ চেষ্টা করেও কেউ সেটা নোয়াতেই পারলেন না। লজ্জায় রাজকুমারদের মুখ লাল হয়ে উঠলো। মাথা হেঁট করে সবাই বসে পড়লেন আপন আপন জায়গায়। সবশেষে সিদ্ধার্থ ধনুকটার মাঝখানে হাঁটুর ভর দিয়ে সহজেই.... (এই অংশ পড়ে পাঠকের রামায়ণ মহাভারতের কথা মনে পড়তে পারে)। >>>চলবে
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ