সীতার জন্ম রহস্য - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

সীতার জন্ম রহস্য

 রাজা জনক জমিতে লাঙ্গল চালানোর ফলে ভূমির ভেতরে ফালের আঘাত তথা এর দ্বারা এক কন্যার জন্ম হওয়া এবং তাহারই নাম সীতা রাখা আদি অসম্ভব হওয়ার কারণে তা সম্পূর্ণতই প্রক্ষিপ্ত। এই বিষয়ে এক প্রসিদ্ধ পৌরাণিক বিদ্বান্ স্বামী করপাত্রী জী স্বরচিত 'রামায়ণ মীমাংসা' এর মধ্যে লিখেছেন -" পুরাণকাররা কোনো ব্যক্তির নাম বুঝানোর জন্য কাহিনী গড়ে নেয়। তারা জনক পুত্রী মাতা সীতার নাম কে স্পষ্ট করার জন্য বৈদিক সীতা (=হলকৃষ্ট ভূমি) এর সাথে সমন্ধ জুড়ে তার জন্মই ভূমি হইতে হয়েছে বলে দেন।" (পৃষ্ঠা ৮৯)

অথবা এটা হতে পারে যে- কেহ কোনো কারণ বশতঃ এই কন্যাকে ক্ষেতে ফেলে গেছেন এবং সংযোগ বশতঃ রাজা জনক তাকে খুঁজে পান অথবা কেহ ক্ষেতে দাবিদারহীন কন্যাকে পেয়েছেন বলে রাজা জনকের কাছে হস্তান্তরিত করেছেন এবং তিনি তাকে লালন পালন করেন। মহর্ষি কণ্ব এই ভাবেই শকুন্তলাকে পেয়েছিলেন। এবং প্রাপ্তির সময় পক্ষী দ্বারা সংরক্ষিত এবং পালিত (না কি প্রসুত) হওয়ায় তার নাম শকুন্তলা রাখা হয়েছিলো।
ভূমি উদ্ভেদ করে উউত্থিত হয় তাহাদিগের জন্য 'উদ্ভিজ্জ' সংজ্ঞা । তৃণ,ওষধি, তরু, লতা আদিকে উদ্ভিজ্জ বলা হয়। মনুষ্য,পশ্বাদি জরায়ুজ, অণ্ডজ এবং স্বেদন প্রাণীর অন্তর্গত। মনুষ্য বর্গ হওয়ার কারণে মাতা সীতার উৎপত্তি ভূমি হইতে হওয়া প্রকৃতি বিরুদ্ধ হওয়ায় অসম্ভব।
মাতা সীতার উৎপত্তি ভূমি হইতে কিভাবে মানা যায়, যখন বাল্মীকি রামায়ণের অনেক স্থানে তাঁকে রাজা জনকের আত্মজা ও ঔরস কন্যা তথা উর্মিলার সহোদরা বলা হয়েছে- বর্ধমানাং মমাত্মজাম্ (বালকাণ্ড-৬৬/১৫) জনকাত্মজে (যুদ্ধকাণ্ড-১১৫/১৮); জনকাত্মজা ( রঘুবংশ-১৩/৭৮)।
মহাভারতে লেখা আছে - বিদেহরাজো জনকঃ সীতা তস্যাত্মজা বিভো (৩/২৭৪/৯)।
অমরকোশ (২/৬/২৭) এ 'আত্মজ' শব্দের অর্থ এই প্রকার লেখা হয়েছে আত্মনো দেহাজ্জাতঃ আত্মজঃ অর্থাৎ যে নিজের শরীর থেকে জন্ম নিয়েছে,তাকে আত্মজ বলা হয়। আত্মা ক্ষেত্র (স্ত্রী) পর্যায়বাচী; ক্ষেত্র এবং শরীর পর্যায়বাচী। ক্ষীয়তে অনেন ক্ষেত্রম্। স্ত্রীকে ক্ষেত্র এই জন্য বলা হয়েছে যে স্ত্রী সন্তানকে কে জনন করায় ক্ষীণ হয়ে যায়। পুরুষ বীজরূপ হওয়ার কারণে ক্ষীণ হয় না। রঘুবংশ সর্গ ৫, শ্লোক ৩৬ এ লেখা রয়েছে-
ব্রহ্ম মুহ কিল তস্ম দেবী কুমারকল্পং সুষুবে কুমারম্ ।
অতঃ পিতা ব্রহ্মণ এব নাম্না তমাত্মজন্মানমজং চকার ॥
মহামনা পণ্ডিত মদনমোহন মালবীয় এর প্রেরণায় সংবত্ ২০০০ এ বিক্রমদ্বিসহস্রাব্দীর অবসরে সংস্থাপিত অখিল ভারতীয় বিক্রম পরিষদ্ দ্বারা নিয়ুক্ত কালিদাস গ্রন্থাবলীর সম্পাদক মণ্ডল এর প্রমুখ সাহিত্যাচার্য পণ্ডিত সীতারাম চতুর্বেদী উক্ত শ্লোকে আসা 'আত্মজন্মানম্' এর অর্থ রঘু এর রানীর গর্ভজাত অর্থাৎ গর্ভ হইতে উৎপন্না করেছেন। তখন জনক এর 'আত্মজা' শব্দের অর্থ ভূমি হইতে উৎপন্ন কিভাবে হতে পরে? ব্রহ্ম মুহূর্তে জন্ম নেওয়ার কারণে রঘু তাঁর পুত্রের নাম অজ (অজ ব্রহ্মের পর্যায়বাচী,কারণ ব্রহ্মারও জন্ম হয় না) রাখেন। কোনো মূর্খই বলতে পারে যে অজ এর নাম এই জন্যই রাখা হয়েছিলো,কারণ সে জন্ম গ্রহণ করে নি। আত্মজ বা আত্মজা তাকেই বলা হয় যে স্ত্রী-পুরুষের রজ-বীর্য দ্বারা স্ত্রীর গর্ভ থেকে উৎপন্ন হয়, এর মধ্যে সামবেদ ব্রাহ্মণ প্রমাণ- অঙ্গদঙ্গাৎ সম্ভবসি হৃদয়াদধিজায়তে...আত্মাসি পুত্র ১১/৫/১৭
হে পুত্র! তুমি অঙ্গ-অঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়েছো, আমার বীর্য থেকে এবং হৃদয় থেকে উৎপন্ন হয়েছো, এই জন্যই তুমি আমার আত্মা। ক্ষেত থেকে উৎপন্ন হলে তো তৃণ, ঔষধি, বনস্পতি, বৃক্ষ, লতা আদি সমস্ত আত্মজ এবং আত্মজা হয়ে যাবে এবং বাবা-দাদার সম্পত্তিতে অংশীদার হয়ে যাবে।
'জনী প্রাদুর্ভাবে' হইতে জননী শব্দ নিষ্পন্ন হয়। এতে জন্ম দানকারীকেই জননী বলা হয়। পালন-পোষণ কারী যশোদা মাতাকে 'যশোদা মাতা' বলা হতো, পরন্তু জন্ম দেওয়ার কারণে দেবকীকেই জননী বলা হতো। বনবাস কালে অত্রি মুনির আশ্রমে অনসূয়ার সাথে হওয়া কথোকথনে মাতা সীতা বলেছিলেন-
পাণিপ্রদানকালে চ যৎপুরা বাগ্নিসন্নিধৌ।
অনুশিষ্টং জনন্যা মেং বাক্যং তদপি মে ঘৃতম্ ॥অযোকাণ্ড-১১৮/৮-৯
বিবাহের সময় আমার জননী অগ্নির সামনে আমাকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন, তার মধ্যে কিঞ্চিৎ ভুলিনি। সেই উপদেশগুলোকে আমি হৃদয়ঙ্গম করেছি।
এখানে কি বিবাহের সময় উপদেশ প্রদানকারী 'জননী' ভূমি হতে পারে? আর কন্যাকে বিদায় করার সময় ভূমি কি ঘেঙ্গিয়ে-ঘেঙ্গিয়ে কান্না করতে পরে? এখানে মাতাকেই জননী বলে স্মরণ করা হয়েছে, ক্ষেতকে, ভূমিকে জননী কখনো বলা হয় নি। তুলসীদাস জী তো মাতা=জননীর নাম এই চৌপাঈতে= লিখেছেন–
জনক বাম দিসি সোহ সুনয়না ।
হিমগিরি সঙ্গ বনী জিমি মৈনা ॥
রামচরিতমানস বালকাণ্ড ৩৫৬/২
(বিবাহ বেদীতে) সুনয়না (মহারানী) মহারাজা জনকের বাম পাশে এমনই শোভায়মান ছিল, যেনো হিমাচল এর সাথে ময়না (পার্বতীর মাতা) বিরাজমান। জলগ্রহন সংস্কারের সময় যে প্রকার রামচন্দ্র জীর পূর্বপুরুষ দের বর্ণনা করা হয়েছে সেই প্রকার মাতা সীতারও ২২ পূর্বপুরুষ এর বর্ণনা করা হয়েছে। যদি সীতার উৎপত্তি পৃথিবী থেকে হতো তাহলে পৃথিবীর আগে তার পূর্বপুরুষ কি ভাবে তৈরি হতো? একে শাখোচ্চার বলা হয়। রাজস্থানে বিবাহের সময় দুই পক্ষের পুরোহিত আজও শুধু ২২ নয়,৩০-৪০ পূর্বপুরুষের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করে। সাধারণত ১০০ বছরে ৪ পূর্বপুরুষ পর্যন্ত বুঝতে পারেন। এই প্রকার ৪০ পূর্বপুরুষ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বৎসর হয়। অর্থাৎ সর্বসাধারণ মানুষও মুখে মুখে শত বৎসরের পারিবারিক জ্ঞান রাখতে পারে। যার ২২ পূর্বপুরুষের ক্রমিক ইতিহাস জ্ঞাত সে পোকা-মাকর বা গাছ-পালার মতো পৃথিবী থেকে উৎপন্ন হয়েছে এটা মানা যায় না। বস্তুত মাতা সীতার পৃথিবী/ভূমি হইতে উৎপন্ন হওয়ার গল্পের স্রোত বিষ্ণু পুরাণ, অংশ ৪,অধ্যায়৪,বাক্য ২৭-২৮ যাকে বাল্মীকি রামায়ণে প্রক্ষেপ করে দেওয়া হয়েছে। জন্ম ভূমি হইতে মেনে নিয়ে মাতা সীতার অন্তও পৃথিবীতে/ভূমিতে বিলীন হওয়ার কল্পনা করেই করা হয়েছে।
রামায়ণ অনুসারে রাজা জনক তাঁর পিতা এবং রামচরিতমানস অনুসারে সুনয়না তার মাতার নাম ছিলো। অতঃ ভূমি হইতে মাতা সীতার জন্ম কাহিনী অপ্রামাণিক ও অগ্রহণীয়।
লেখক : স্বামী বিদ্যানন্দ সরস্বতী

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ