হরিচাঁদ গোষ্ঠির মতে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সঠিক অবতার কেঃ-
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু এই বঙ্গের সর্বজনীন অবতার পুরুষ। তাঁর প্রধান লীলাগ্রন্থ শ্রীচৈতন্যভাগবতে লেখা আছে, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু আরো দুইবার জন্মগ্রহণ করবেন।
এই লেখাকে ভিত্তি করে পরবর্তী যুগের অনেকেই নিজনিজ সম্প্রদায়ের গুরুকে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর অবতার বানাতে চায়। যেমন, রামকৃষ্ণ মিশন বলছে: শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর অবতার। সৎসঙ্গীরা বলছে: শ্রীঅনুকূল চন্দ্র গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর অবতার; ইত্যাদি ইত্যাদি। আরো অনেক রয়েছে।
তাহলে, সাধারণ মানুষেরা- কীভাবে সঠিক অবতারকে খুঁজে বের করবেন! শ্রীচৈতন্যভাগবত ও শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে সেটাও স্পষ্ট লেখা আছে।
এখানে শাস্ত্র প্রমাণ দেওয়া হলো। এই প্রমাণ যদি কারো সাথে মিলে যায়, তবেই তাঁকে বিনাবাক্যে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর অবতার হিসেবে মেনে নিবেন।
মহাপ্রভু বলেছেন সংকীর্ত্তন আরম্ভে আরো দুটি অবতার হবেন। স্বয়ং মহাপ্রভু নিজেই সংকীর্ত্তন আরম্ভে এসেছেন।
সংকীর্ত্তন আরম্ভে আমার অবতার।
উদ্ধার করিমু সর্ব পতিত সংসার।।
👉চৈতন্যভাগবত/অন্ত্যখন্ড/৪অধ্যায়।
আরো দুই জন্ম এই সঙ্কীর্তন আরম্ভে।
হইব তোমার পুত্র আমি অবিলম্বে।।
এইমত তুমি আমার মাতা জন্মে জন্মে।
তোমার আমার কভু ত্যাগ নহে মর্ম্মে।।
👉চৈতন্যভাগবত/মধ্যখন্ড/২৬ অধ্যায়।
যিনি কেবলমাত্র হরিনাম সংকীর্ত্তন করেন, তিনিই সংকীর্ত্তন আরম্ভের অবতার। সুতরাং, গৌরহরির ভবিষ্যত দুই অবতারকেও অবিকল তাঁর মতোই- কেবলমাত্র সংকীর্ত্তন ধর্ম প্রচার করতে হবে।
অবতারদ্বয়ের কাজ কেমন হবে, তাও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে__
এই জন্মে তুমি সব যেন আমা সঙ্গে।
নিরবধি আছ সঙ্কীর্তন সুখ রঙ্গে।।
যুগে যুগে আমার অনেক অবতার।
সে সকলে সঙ্গী সবে হয়েছ আমার।।
এইমত আরো আছে দুই অবতার।
কীর্তন আনন্দ রূপ হইবে আমার।।
তাহাতেও তুমি সব এইমত রঙ্গে।
কীর্তন করিবা মহাসুখে আমা সঙ্গে।।
👉চৈতন্যভাগবত/মধ্যখন্ড/২৬ অধ্যায়।
অর্থাৎ, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু যেমনভাবে সংকীর্ত্তন করতেন, তাঁর ভবিষ্যত অবতারেরাও অবিকল সেইভাবেই সংকীর্ত্তন করবেন। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু হরিনাম সংকীর্ত্তন ছাড়া আর কোনো সাধনভজনকেই কোনোরকম গুরুত্ব দেন নি: তার অবতারেরাও ঐরকম হবেন।
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর শরীরে বত্রিশ লক্ষন ছিল। সেইসাথে শ্রীনারায়ণের চিহ্ন ছিল হাত-পায়ে। অর্থাৎ হুবহু নারায়ণের শরীর। শুধুমাত্র বর্ণ ভিন্ন (কারণ নারায়ণ শ্রীকৃষ্ণ রাধার কান্তি ধারণ করেই গৌর হয়েছেন), আর সমস্ত কিছুই এক।
প্রমাণ_________
"বত্রিশ লক্ষন মহাপুরুষ ভূষণ।
এই শিশু অঙ্গে দেখি সেসব লক্ষন।।
নারায়নের চিহ্ন যুক্ত শ্রীহস্ত চরণ।
এই শিশু সর্বলোকে করিবে তারণ।।"
👉চৈতন্য চরিতামৃত/অদিলীলা/১৪ পরিচ্ছেদ
এই শারীরিক লক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রী চৈতন্য চরিতামৃতে অবতার নির্ণয় পদ্ধতি বর্ণিত আছে, সরাসরি শ্রীগৌরসুন্দরের ভাষ্যে।
"অবতার নাহি কহে আমি অবতার।
মুনিসব জানি করে লক্ষন বিচার।।
স্বরূপ লক্ষন আর তটস্থ লক্ষন।
এই দুই লক্ষনে বস্তু জানে মুনিগন।।
আকৃতি,প্রকৃতি, স্বরূপ_স্বরূপ লক্ষন।
কার্যদ্বারা জ্ঞান_এই তটস্থ লক্ষন।।
অবতার কালে হয় জগতের গোচর।
এই দুই লক্ষনে কেহ জানেন ঈশ্বর।।
সনাতন কহে,_যাতে ঈশ্বর লক্ষন।
পীতবর্ণ, কার্য-প্রেমদান সঙ্কীর্তন।।
কলিকালে সেই কৃষ্ণ অবতার নিশ্চয়।।"
👉শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত/মধ্য/২০ পরিচ্ছেদ।।
অর্থাৎ কলিযুগে শ্রীকৃষ্ণের অবতারের অবশ্যই এসব লক্ষণ থাকতে হবে।
১) মহাপুরুষের ৩২ লক্ষন এবং নারায়ণের চিহ্নযুক্ত হাত-পা ও শরীর।
২) গায়ের রং পীত(উত্তপ্ত গলিত সোনার মত বা রেশমবর্ণ)
৩) শ্রী হরিনাম সংকীর্ত্তন,প্রেমদান।
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর পরবর্তীতে দুইজনের মধ্যে এই লক্ষনগুলো পাওয়া যায়। তাঁরা হচ্ছেন শ্রীনিবাস আচার্য ও শ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর। তাই চৈতন্য চরিতামৃত অনুযায়ী এনারাই গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর দুই অবতার।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ